শুধু তোমারই জন্য পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0
967

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৩২
#Ornisha_Sathi

–“এ্ একি আপনি সা্ সামনে আসছেন কেন এভাবে?”

–“আজ সারাটাদিন তুমি তুষারের সাথে এভাবে চিপকে ছিলে কেন?”

–“আমার লাইফ আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো তাতে আপনার কি?”

–“আমার কি?”

–“হ্যাঁ আপনার কি?”

–“তুমি পুরোটাই তো আমার।”

–“আজ্ঞে না। আমি আপনার না।”

–“অভিয়েসলি তুমি আমার।”

–“সেজন্যই তো বন্ধুর কথায় ছেড়ে দিয়েছিলেন তাই না? আপনার যখন যা খুশি আপনি তাই করতে পারবেন। আর আমি কিছু করলেই দোষ তাই না?”

–“হ্যাঁ দোষ। সবকিছু বিবেচনা করেই আমি তখন বলেছিলাম তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবো না। তখন যদি ফাইয়াজের কথা না শুনতাম তাহলে হিতে বিপরীত হতো।”

–“এখন ফাইয়াজ ভাইয়ার উপর সব দোষ চাপাবেন না একদম। আমাকে আর এখন আপনার ভালো লাগে না তাই তো ওরকম বলেছিলেন।”

–“আরে গাধী বুঝো না কেন? ফাইয়াজ ভেবেছে আমি তোমায় ভালোবাসি না। কারন আগেও অনেক সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম। তাই ওর মনে কিছুটা ভয় কাজ করেছে যদি ওদের মতো আমি তোমাকেও ছেড়ে দেই। সেজন্য ও আমাদের এই সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি সেসময়। তখন যদি ওকে হাজারও বুঝাতাম ও বুঝতো না। তাই ওর কথায় আমি সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিলাম। আর ভেবেছিলাম বিয়ে শেষে বাসায় ফিরেই আম্মুকে রাজি করিয়ে ভাইয়া আর আম্মুকে পাঠাবো তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে।”

–“বিশ্বাস করি না আমি আপনাকে। যদি এমনই হতো তাহলে আপনি আমায় আগে বললেন না কেন? শুধু শুধু আমি কেঁদে কেটে নিজের বেহাল অবস্থা করেছি।”

–“ভেবেছিলাম বলবো কিন্তু সময় আর সু্যোগ পেলাম কোথায়? তুমি তো সেই যে রুমে গিয়ে দরজা লক করেছিলে। আর তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে ফাইয়াজও সবটা মেনে নিলো। বুঝতে পারলো আমরা দুজন দুজনকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবো না। আর এই সবটাই সম্ভব হয়েছে তন্ময়ের জন্য। ফাইয়াজও নিজে রিয়ালাইজ করতে পেরেছে কিছুটা। তবে বেশি সম্ভব হয়েছে তন্ময়ের জন্য।”

–“শুনুন আমি এত কিছু শুনতে চাই না। কাঁদিয়েছেন তো আপনি আমাকে। সুতরাং আপনাকে চাই না আমি। তুষার ভাইয়ার মনে আমার জন্য কিছু একটা আছে। তুষার ভাইয়া কাল বলেছে আমায় কিছু একটা বলতে চায়। কাল তো শুনতে পারিনি আজ শুনবো। আর আমি সিউর আমাকে প্রপোজ করবে আর আমিও সাথে সাথেই এক্সেপ্ট করে নিবো।”

–“পারবে না তুমি।”

–“অবশ্যই পারবো।”

–“চ্যালেঞ্জ?”

–“ওকেহ।”

এইটুকু বলে আনিতা চলে আসতে নিলেই আহিয়ান ওর হাত টেনে ধরে রেলিঙের সাথে আটকে দেয়। আনিতার কোমড় চেপে ধরে একদম নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,

–“পায়ের কি অবস্থা এখন?”

–“ভ্ ভালো।”

–“ব্যাথা করছে না?”

–“একটু আধটু আছে। সেটা ব্যাপার না।”

–“এরপর থেকে কেয়ারফুলি হাঁটবা।”

–“হুম। এখন দূরে সরে দাঁড়ান প্লিজ।”

আহিয়ান আনিতাকে ছাড়ার বদলে আরো ভালোভাবে ধরলো। এদিকে আনিতার বেহাল অবস্থা। এই ছেলের সাথে চোখাচোখি হলেই আনিতার হার্টবিট মিস হয়ে যায়। আর এখন এতটা কাছে। ভাবা যায় এসব? আনিতার রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি অবস্থা। আনিতার এহেন অবস্থায় আহিয়ানের বেশ মজা লাগছে। দরজার খটখট আওয়াজে আনিতা আহিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। আহিয়ান মুচকি হেসে মাথা চুলকে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো দরজা খুলতে। আহিয়ান দরজা খুলে সরে দাঁড়াতেই রাতুল ওরা সকলে ছাদে ঢুকে বলে,

–“জানতাম তোরা দুজনে এখানেই থাকবি। তাই কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার জন্য চলে এলাম সবাই মিলে।”

রাতুল যে ঠিক কি মিনিং করে কথাটা বলেছে আনিতা তা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে নিলো। জেরিন আরোহী রোদেলা আর তাসকিয়া সবাই মিলে আনিতার ওখানে চলে গেলো। রোদেলা গিয়ে আনিতাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–“বেইব ফাইয়াজ ভাইয়া তো সবটা মেনে নিয়েছে সো সেই খুশিতে এই রাতের বেলা ছাদের দরজা লক করে রোমান্স কেমন করলা দুজনে?”

রোদেলার কথায় জেরিন আর তাসকিয়া হেসে দিলেও আরোহী হাসলো না। আরোহী আনিতার দিকে তাকিয়ে বলল,

–“রোমান্স টোমান্স বাদ দেও। আমার তো মনে হয় আহিয়ান ওকে এখানে এনে বেশ ঝেড়েছে।”

–“কেন রোমান্স করার মতো এত সুন্দর পরিবেশ পেয়েও রোমান্স না করে ঝাড়বে কেন?”

তাসকিয়ার কথায় জেরিন ও একমত প্রকাশ করে। আরোহী ভাবলেসহীন ভাবে বলে,

–“বাহ রে! আহিয়ানের সামনেই যদি তুষারের সাথে রংঢং করে বেরায় তাহলে ওকে ঝাড়বে না তো কি চুম্মা দিবে?”

–“উনি আমাকে ঝাড়লে তোর বুঝি বেশ মজা লাগে তাই না?”

–“অবশ্যই মজা লাগবে। তোরে বলছিলাম আমি বেশি রাগাস না। শেষে তুই পস্তাবি বাট শুনলি না তো। এবার ওর ঝাড়ি শুনে ভালো লেগেছে না?”

আরোহীর কথায় আনিতা ভেঙচি কেটে বলে,

–“রংঢং করছি বেশ করছি আরো বেশি করে করবো। আহিয়ানকে আমি ভয় পাই নাকি?”

–“একদমই না। আপনি আমাকে কেন ভয় পাবেন? উলটো আমি তো ভয় পাই আপনাকে।”

আনিতার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আহিয়ান কথাটা বলল। আহিয়ানের কথায় সকলে মুখ টিপে হাসছে। সেসময় ছাদে এন্ট্রি নেয় তুষার। তুষার এক কোনে দাঁড়িয়ে আনিতাকে ডাকে। আনিতা যাওয়ার আগে আহিয়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

–“ও যদি এখন আমায় প্রপোজ করে না তাহলে আমি আপনারই চোখের সামনে ওকে এক্সেপ্ট করে আপনাকে দেখিয়ে দিবো।”

–“আমিও দেখি তুমি কিভাবে এই চ্যালেঞ্জে জিতো।”

–“জাস্ট চ্যালেঞ্জ না মিস্টার আহিয়ান আদৃত। আপনাকে আমার আর চাই না সেটাও এখন দেখে নিবেন আপনি। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

এইটুকু বলেই আনিতা তুষারের ওদিকে চলে গেলো। তন্ময় আহিয়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তন্ময় আনিতার দিকে তাকিয়ে আহিয়ানকে প্রশ্ন করলো,

–“আনিতা যাওয়ার আগে বিড়বিড় করে কি বলে গেলো রে?”

–“আমাকে তার লাগবে না। সে এখন তুষারের প্রপোজাল এক্সেপ্ট করবে।”

কথাটা শুনে ওরা সকলে বিস্ময় নিয়ে একবার আহিয়ান তো একবার আনিতার দিকে তাকায়৷ রাতুল অবাক হয়ে বলে,

–“কিইহ? আর তুই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ওকে যেতে দিলি?”

–“আমিও দেখি না ও কিভাবে তুষারকে এক্সেপ্ট করে।”

আহিয়ানের কথা শুনে আরোহী হতাশ দৃষ্টিতে আনিতার দিকে তাকালো। মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরোহী বলে,

–“আনিতা আজ তো তুই শেষ। তোকে আজকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না রে।”

আরোহীর কথায় জেরিন রোদেলা আর তাসকিয়া অসহায় চোখে তাকায় আনিতার দিকে। আনিতা আর তুষার ওদের থেকে ছয় সাত হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা দুজনে কি বলছে সব কথাই ওরা সকলে শুনতে পাচ্ছে। আহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে আনিতার দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মধ্যে আবার রক্তচক্ষু নিয়ে তুষারের দিকেও তাকাচ্ছে। আনিতা একবার আহিয়ানের দিকে তাকালো। মূহুর্তেই আবার চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে চাপা হাসলো। আহিয়ানের ফেস রিয়্যাকশন নিয়ে আনিতার যদিও বা বেশ মজা লাগছে কিন্তু আবার মনের ভিতর ভয়ও কাজ করছে। আনিতা একপলক আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে তুষারকে বলে,

–“কিছু একটা বলবেন বলেছিলেন।”

–“হ্যাঁ বলার জন্যই এখানে ডেকেছি।”

–“হুম তো বলুন কি বলবেন।”

–“আসলে আনিতা কিভাবে শুরু করবো ভেবে___”

–“আরেহ এত ভাবাভাবির কিছু নেই তো। নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন।”

–“আসলে বলতে চাচ্ছিলাম__”

–“হ্যাঁ বলুন না বলুন আমি শুনছি।”

–“বলে ফেলি তাহলে?”

–“অবশ্যই বলুন আপনার কথা শোনার জন্যই তো আমি এখানে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছি।”

আনিতা মুখে এই কথাটা বললেও মনে মনে বেশ বিরক্ত হচ্ছে। সেই কখন থেকে একই কথা বলে যাচ্ছে। অসহ্য লাগছে জাস্ট। ভিতরে ভিতরে খুব বিরক্ত হলেও বাইরে সেটা প্রকাশ করলো না আনিতা। খুব হাসিমুখেই তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তুষার একটা ঢোক গিলে বলে,

–“মানে বলছিলাম___”

–“আরেহ ধুর মিয়া রাখেন তো আপনার আসলে নকলে। আপনি এখানে যেটা বলতে এসেছিলেন সেটা বলেন।”

আনিতার আর তুষারের এমন কথায় ওরা সকলেই মুখ টিপে হাসছে। বিশেষ করে আনিতার কান্ডে। বেচারি না পারছে মুখে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। ভিতরে ভিতরে যে আনিতা বিরক্তিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেটা ওরা সকলেই বেশ বুঝতে পারলো। তুষার বুঝতে পেরেছে কিনা কে জানে। তন্ময় রাতুল আরহান শুভ ওরা চারজনে একবার আনিতার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে মজা নিচ্ছে। বিশেষ করে তন্ময় আর রাতুল ওরা দুজনে বেশ মজা পাচ্ছে আহিয়ানকে দেখে। ওরা দুজনে মোটামুটি সিউর আজকে এখানে কিছু একটা ঘটবে। তাই চুপচাপ নিরব দর্শকের মতো সবটা দেখে যাচ্ছে আর মজা নিচ্ছে। ওরা আহিয়ানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে আপাতত তুষার আর আনিতার দিকে তাকালো। আনিতা এবার বেশ বিরক্তি নিয়ে বলে,

–“কি হলো? চুপ করে আছেন যে?”

–“ব্ বলছি। দু মিনিট টাইম দাও নিজেকে একটু প্রস্তুত করে বলছি সবটা।”

–“জাস্ট দু মিনিট কেন? আপনার যত সময় লাগে নিজেকে প্রস্তুত করতে আপনি তত সময়ই নেন আমি নিচে যাচ্ছি। আপনার নিজেকে প্রস্তুত করা হয়ে গেলে নিচে গিয়ে আমায় বলে আসবেন কেমন?”

এই বলে আনিতা চলে আসতে নিলেই তুষার ওর হাত চেপে ধরে। বলা নেই কওয়া নেই এভাবে হাত চেপে ধরাতে আনিতা বেশ অবাক হয়। আর ওদিকে আহিয়ান তো রেগে গিয়েছে প্রচুর। আহিয়ানের যতটা না তুষারের উপর রাগ হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি আনিতার উপর রাগ হচ্ছে। তন্ময় আহিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে রাতুলকে বলে,

–“মামা খেলা তো পুরো জমে ক্ষীর।”

–“হুম সেটাই তো দেখছি মামা।”

রাতুল আহিয়ান আর আনিতার দিকে পরপর তাকিয়ে কথাটা বলল। আনিতা তুষারের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো তাড়াতাড়ি। আহিয়ানের এমন চাহনি দেখে আনিতা ভিতরে ভিতরে বেশ ভয় পেয়ে গেলেও বাইরে যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। তুষার আনিতার দিকে একটা গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

–“আনিতা আই লাভ ইউ। যেদিন থেকে ক্লাস ফাইভে পড়া ছোট্ট তোমাকে দেখেছিলাম সেদিন থেকেই তোমার প্রতি আমার মনে একটা জায়গা তৈরি হয়। তখনো বুঝিনি ওটা ঠিক কি ছিলো। তখন তোমাকে সত্যিই ভালোবেসেছিলাম কিনা আমি জানি না। তখন ভেবেছিলাম এটা জাস্ট অল্প বয়সের একটা আবেগ। তাই তোমাকে ভুলে গিয়ে নিজের লাইফে ফোকাস করার জন্য আন্টির বাসায় থেকে পড়াশোনা করেছি। তোমার থেকে দূরে থেকেছি। তবুও তোমায় ভুলতে পারিনি আমি। প্রতিনিয়ত তোমার কথা ভাবতাম। তোমার সেসময়ের একটা ছবি ছিলো আমার কাছে। যখনই তোমার কথা মনে হতো তখনই তোমার ছবির সাথে আমার অনুভূতির কথাগুলো শেয়ার করতাম। হাজার চেয়েও ভুলতে পারিনি তোমাকে। লাস্ট তিনবছর আগে যখন গ্রামে আসি তখন আবার তোমাকে দেখে নতুন ভাবে তোমার মায়ায় ডুব দিয়েছি আমি। এতদিনে তোমাকে চেয়েও সবকিছু বলতে পারিনি আমি। তাই ভেবেছিলাম নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে তারপরই তোমার সামনে দাঁড়াবো আমি। তোমার কাছেই তোমাকে চাইবো আমি সারাজীবন আমার হওয়ার জন্য। আই রিয়েলি লাভ ইউ আনিতা। উইল ইউ বি মাইন?”

কথাগুলো শুনে আনিতা স্তব্ধ হয়ে গেলো। এই ছেলে বলে কি? গত সাত বছর যাবত ভালোবাসে আনিতাকে? যে সময় আনিতা ভালোবাসার মানেটাই বুঝতো সেসময় থেকেই নাকি তুষার ওকে ভালোবাসে। আনিতা এটা বিশ্বাস করতে পারছিলো না। আনিতার সাথে সাথে বাকী সবাইও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর আহিয়ানের তো রাগের ফলে ঘাড়ের আর কপালের রগ ফুলে উঠেছে। আনিতা এবার ভয়ে ভয়েই তাকালো আহিয়ানের দিকে। আহিয়ানের দিকে তাকাতেই আনিতার তখনকার নেওয়া চ্যালেঞ্জের কথা মনে পড়ে গেলো। তুষার তখনো আনিতার উত্তরের আসার তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে। আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো আনিতা। তারপর তুষারকে একপলক দেখে আহিয়ানের দিকে তাকালো। আহিয়ানের দিকে তাকিয়েই আনিতা তুষারের দিকে ধীর গতিতে হাত কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

–“আমি রা___”

এইটুকু বলতেই আহিয়ান তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর হাতে ক্যামেরা আর ক্যামারার ব্যাগটা কাঁধে ঝুলানো। আহিয়ান তন্ময়ের কাঁধ থেকে ব্যাগটা নিয়ে আনিতার দিকে ছুড়ে মারতেই আনিতা লাফ দিয়ে সরে যায় ওখান থেকে। আনিতা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো ঠিক সেখানেই ব্যাগটা গিয়ে পড়লো। তুষার অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান দৌড়ে আনিতার দিকে আসতেই নিলেই আনিতা দুই হাতে লেহেঙ্গার নিচের পার্ট উঁচু করে ধরে ওখান থেকে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে যায়। আনিতার পিছু পিছু আহিয়ানও দৌড় লাগায়। ওদের দুজনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শুভ আরোহী আরহান তাসকিয়া রোদেলা তন্ময় রাতুল জেরিন সকলেই উচ্চস্বরে হেসে দেয়। আর এদিকে বেচারা তুষার কোনোকিছুই বুঝতে না পেরে বোকাবোকা চোখে আনিতা আর আহিয়ানের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাতুল ওদের দিকে তাকালো।



চলবে।

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৩৩
#Ornisha_Sathi

রুমে ঢুকেই আনিতা দরজা লক করে দেয়। রুমে চলে যাওয়াতে আহিয়ান আর এদিকটা আসেনি। বিয়ে বাড়িতে নানান লোকজন রয়েছে এভাবে আনিতার পিছু ছুটলে অনেকে অনেক কিছু ভাবতে পারে। তাই আহিয়ান আর আনিতার পিছু নেয়নি। তবে ওকে এত সহজে ছাড়বে না এটাও ঠিক করলো আহিয়ান। বাহিরে নাচ গান হচ্ছে তাই রোদেলা ওরা সবাই মিলে ছাদ থেকে নেমে লেহেঙ্গা চেঞ্জ করে নরমাল ড্রেস পরে নাচ গানের ওখানে গেলো। সবাই গিয়ে একসাথে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।

রাত পোহালেই ছেলের বাড়ির অনুষ্ঠান। সবাই বসে একসাথে নাচ গান দেখলেও ফাইয়াজ কাজে কিছুটা ব্যস্ত। তাই আহিয়ান ওদের তেমন একটা সময় দিতে পারছে না ফাইয়াজ। মিনিট দশেক বাদে ফাইয়াজ এসে আহিয়ানের পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। ক্লান্ত থাকায় শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসলো। আরোহী উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিতেই ফাইয়াজ একদমে পুরোটা পানি শেষ করে ফেলল। মিনিট পাঁচেক এর মতো জিড়িয়ে নিয়ে আহিয়ান ওদের সাথে আড্ডায় মশগুল হলো। ঘন্টা খানেক আগে ছাদে ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছুই তন্ময় ফাইয়াজকে বলল। সেসব শুনে ফাইয়াজ শব্দ করে হেসে দিলো। আহিয়ান ফাইয়াজের দিকে রাগী চোখে তাকাতেই ফাইয়াজ হাসি থামিয়ে বলে,

–“ওকে আর হাসছি না। রাগতে হবে না এভাবে।”

এই বলে ফাইয়াজ আবার তন্ময়ের দিকে ঘুরে বলে,

–“জানিস বেচারা তুষারের জন্য আমার বড্ড মায়া হচ্ছে। এতগুলো বছর ধরে ভালোবেসেও ভালোবাসি কথাটা বলতে দেরি করে ফেলল। সেই সাথে আনি বুড়ির কপালটাও খানিকটা পুড়লো। আনিতার ভাগ্যে তুষারের মতো এত ভালো ঠান্ডা মেজাজের শান্তশিষ্ট একটা ছেলে রেখে আহিয়ানের মতো এমন রাগচটা জেদী ঘাড়ত্যাড়া টাইপ ছেলেই পড়লো?”

কথাটা বলে ফাইয়াজ তন্ময়কে চোখ মারলো। তন্ময় বুঝতে পারলো আহিয়ানকে রাগানোর জন্যই ফাইয়াজ কথাগুলো বলল। তাই তন্ময়ও ফাইয়াজের সাথে তাল মিলিয়ে বলে,

–“যা বলেছিস। আসলেই আনিতা দেড় বছর যাবত আহিয়ানের রাগ জেদ ঘাড়ত্যাড়ামি এসব কিভাবে সহ্য করতেছে এটাই বুঝতে পারছি না।”

ফাইয়াজ আর তন্ময়ের কথা শুনে আহিয়ান যথারীতি রেগে যায়। ফাইয়াজের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

–তো তুষারের সাথেই তোর বোনের বিয়ে দে। তাহলে তো আর কপাল পুড়ে না। তুষার খুব ভালো ছেলে তোর বোনকে খুব সুখে রাখবে।”

–“তা যা বলেছিস তুষার সত্যিই খুব ভালো ছেলে। তবে তোর মতো করে কেউ আনি বুড়িকে ভালোবাসতে পারবে না। ও তোর কাছেই সব থেকে বেশি ভালো থাকবে। তাই তুষারের না আনি বুড়ি তোরই হবে।”

–“নেক্সট টাইম যদি আনিতার সাথে তুষারকে জড়িয়ে কোনো কথা বলেছিস না তাহলে তোদের দুই ভাই বোনকেই আমি জানে মেরে দিবো।”

আহিয়ানের কথায় ওরা সকলেই ফিক করে হেসে দেয়। আহিয়ান সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে পকেট থেকে ফোন বের করে আনিতাকে ম্যাসেজ করলো,

–“কোথায় আছো তুমি?”

আহিয়ান ম্যাসেজ সেন্ড করার মিনিট পাঁচেক পর আনিতার রিপ্লাই আসে,

–“বলবো না।”

–“কথা বাড়িও না যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।”

–“আছি ফ্রেন্ডদের সাথে।”

–“কোন ফ্রেন্ড?”

–“রোদেলা ওদের সাথে।”

–“বোকা পাইছো তুমি আমারে? রোদেলা ওরা আমাদের সাথেই আছে। মেজাজ গরম না করিয়ে বলো কোথায় আছো।”

আহিয়ানের ম্যাসেজ দেখে আনিতা দাঁত দিয়ে জিব কাটে। ইশ্ ধরা পড়ে গেলাম। মনে মনে কথাটা ভেবেই আবারো রিপ্লাই করলো আনিতা,

–“আমি কোথায় তা জেনে আপনি কি করবেন?”

–“মাথায় তুলে আছাড় মারবো।”

–“এজন্যই তো আমি বলবো না কোথায় আছি।”

–“আমি নিজে থেকে খুঁজে বের করলে কিন্তু সত্যি সত্যি মাথায় তুলে আছাড় মারবো।”

–“পারবেন না।”

–“কেন?”

–“আপনি যখন আমাকে মাথায় তুলে আছাড় মারার জন্য আমার সামনে আসবেন তখন আমি আপনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো। তাহলেই আপনি আমাকে আর মাথায় তুলে আছাড় মারতে পারবেন না।”

–“সামনা-সামনি জড়িয়ে ধরলে তো তোমার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়। আর এখন ম্যাসেজে বড্ড সাহস দেখানো হচ্ছে তাই না? ফাজিল মেয়ে।”

–“এই এই আপনি আমাকে ফাজিল বললেন কেন?”

–“ফাজিলকে ফাজিল বলবো না তো কি বলবো আর?”

–“কেন সুন্দর ভাবে কিউট করে আনি পিচ্চিপাখি বউ এসব বলতে পারেন না?”

–“আচ্ছা এসব বলতে হবে তাহলে?”

–“হুম।”

–“আনিতা__”

–“বলুন।”

–“আসবো?”

–“কোথায়?”

–“তোমার কাছে।”

–“আপনি জানেন আমি কোথায় আছি?”

–“নাহ তবে জানতে বেশি সময় লাগবে না।”

–“খুঁজে পাবেন না আমায়।”

–“সেকেন্ডের মধ্যে খুঁজে বের করে ফেলবো।”

–“আচ্ছা পারলে আসুন তাহলে।”

–“ওকে সত্যি সত্যিই তাহলে আসছি আমি।”

–“এই না। একদম আসবেন না আপনি।”

–“এখন হাজার বারন করলেও শুনছি না বউ। রেডি থাকো আমি আসছি। টাটা।”

লাস্ট এই ম্যাসেজটা সেন্ড করেই আহিয়ান ফোন আবার পকেটে ঢুকিয়ে নিলো। আনিতার রিপ্লাই এর অপেক্ষা করলো না আর। আহিয়ান ফোন রেখে ফাইয়াজ ওদের দিকে ঘুরতেই তন্ময় বলে,

–“প্রেম করা শেষ?”

–“সাময়িক সময়ের জন্য অফ রেখেছি।”

তন্ময়ের প্রশ্নের জবাবে আহিয়ান দাঁত কেলিয়ে হেসে উপরের কথাটি বলল। আহিয়ানের কথা শুনে ফাইয়াজ আহিয়ানের পিঠে একটা থাপ্পড় মেরে বলে,

–“শালা লজ্জা করে না তোর? আমার সামনে বসেই আমার বোনের সাথে প্রেম করছিস এই কথা বলিস।”

–“বাহ রে! ভালোবাসার কথা বলতে লজ্জা কিসের? প্রেম ভালোবাসায় লজ্জার কোনো স্থান নেই। এখন চল তো আমার সাথে।”

এইটুকু বলেই আহিয়ান ফাইয়াজের হাত টেনে ধরে দাঁড়ালো। ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে বলে,

–“কোথায়?”

–“তোর বোনের কাছে।”

–“মানে?”

–“মানে হলো তোর বোন আমার ভয়ে কোথাও একটা লুকিয়ে আছে। আমার মনে হয় ও ওর রুমেই থাকবে। আর আমি গিয়ে ডাকলে তো দরজা খুলবে না। তাই তুই ডেকে দরজাটা খুলে দিবি। বাকিটুকু আমি করে নিবো।”

–“তোর কি মনে হয় আমি এখন তোর সাথে যাবো? এই তোর কি একদমই লজ্জা করে না? গার্লফ্রেন্ড এর বড় ভাইকেই বলছিস বোনের সাথে দেখা করিয়ে দিতে।”

–“লজ্জা জিনিসটা ঠিক আমার সাথে যায় না। সেটা তোরা সবাই জানিস। এখন চল তো।”

এই বলেই আহিয়ান ফাইয়াজকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে টেনে নিয়ে চলে গেলো। আনিতার রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় ফাইয়াজ আর আহিয়ান। কিন্তু আনিতার রুমের দরজা তো খোলা। আর ভিতরে আনিতার মামি আর আন্টিরা বসে গল্প করছে। আনিতার ছোট খালামনি ফাইয়াজকে দেখে বলে,

–“কাউকে খুঁজছো ফাইয়াজ?”

–“আন্টি আনিতা কোথায়?”

–“ও তো তোমাদের বাসায় গিয়েছে।”

–“আচ্ছা আন্টি তাহলে আমি আসছি।”

এই বলে ওরা দুজনে ওখান থেকে চলে এলো। ফাইয়াজ ওদের বাসায় যেতেই ফাইয়াজের আম্মু বের হলো বিল্ডিং থেকে। ফাইয়াজ ওর আম্মুকে বলে,

–“আনি বুড়ি কই আম্মু?”

–“আধ ঘন্টা আগে তোর রুমে গিয়ে দরজা লক করেছে। কেন?”

–“নাহ এমনি একটু দরকার ছিলো।”

–“আচ্ছা।”

ফাইয়াজের আম্মু চলে যেতেই ওরা দুজনে ভিতরে ঢুকে গেলো। ফাইয়াজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহিয়ান আর ফাইয়াজ। আহিয়ান বার বার ফাইয়াজকে বলছে আনিতাকে ডাকতে। বাট ফাইয়াজ চুপচাপ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একপর্যায়ে আহিয়ানের জোরাজোরিতে অতিষ্ট হয়েই ফাইয়াজ আনিতাকে ডেকে দরজা খুলতে বলে। ফাইয়াজের ডাকে আনিতা বিছানা থেকে নেমে যায়। আনিতা ভাবেনি যে আহিয়ানও আছে সাথে। তাই ফাইয়াজ একবার দরজা খুলতে বললেই আনিতা দরজা খুলে দেয়।

আনিতা দরজা খুলে রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই আহিয়ান আনিতার হাত ধরে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে ফাইয়াজকে বলে,

–“থ্যাংকস দোস্ত। আপাতত এই রুমে কাউকে আসতে দিস না।”

–“ওই শালা বের হ বলছি। এটা কিন্তু কথা ছিলো না। তোর সাথে আমার কথা হয়েছে আমি আনিতাকে রুম থেকে বের করে দিবো। কিন্তু তুই তো সরাসরি ওকে নিয়ে দরজা অফ করে দিলি।”

–“আমার বউকে নিয়েই তো রুমে ঢুকেছি। অন্যকোনো মেয়ে তো না।”

–“তোর বউ এখনো হয়নি।”

–“হয়নি কিন্তু হয়ে যাবে। সেটা ব্যাপার না।”

–“তুই রুম থেকে বের হ।”

–“তুই যা আমি আসছি।”

–“বেশি সময় নিবি না কিন্তু।”

–“ওকে।”

ফাইয়াজ আর কিছু না বলে চলে গেলো ওখান থেকে। আর একা একাই মুচকি হাসলো। আহিয়ানের পাগলামি দেখে। আহিয়ানকে ওখানে দেখে আনিতা ভয়ে লাফিয়ে উঠেছিলো। আহিয়ান দরজা লাগিয়ে পিছনে ঘুরে আনিতার দিকে এগিয়ে যায়। আনিতা পেছাতে পেছাতে একসময় বিছানার সাথে লেগে বিছানার উপর ধপাস করে পড়ে যায়। তা দেখে আহিয়ান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। আনিতা ওঠে এসে আহিয়ানের সামনে আঙুল উঁচু করে ধরে বলে,

–“আমি পড়ে গেলাম কোথায় আপনি আমাকে ধরবেন তা না করে উলটো হাসছেন?”

আহিয়ান খপ করে আনিতার আঙুল ধরে নিয়ে বলে,

–“এখন কোথায় পালাবে তুমি? এখানে কিন্তু তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই। আর তোমার পালানোরও কোনো রাস্তা নেই।”

–“দে্ দেখুন__”

আহিয়ান আনিতার দিকে ঝুকে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

–“কি দেখাবে? সামথিং স্পেশাল?”

আহিয়ানের কথায় আনিতা বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। আহিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে বলে,

–“অসভ্য একটা।”

–“অসভ্যতামিটা শুধু তোমার সাথেই করি।”

কথাটা বলেই আহিয়ান আনিতার হাত ধরে এক টান দিয়ে ওকে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নেয়৷ শক্ত করে আনিতার কোমড় চেপে ধরে বলে,

–“তুষারের প্রপোজাল এক্সেপ্ট করবা তাই না? তাহলে এক্সেপ্ট না করে ওভাবে পালিয়ে এলে কেন?”

–“আ্ আপনার জন্যই তো পারলাম না।”

–“আমার জন্য পারলে না তাই না?”

–“হ্যাঁ আমি তো এক্সেপ্ট করতে যাচ্ছিলামই কিন্তু মাঝখান থেকে আপনিই তো ব্যাগ ছুড়ে মারলেন তার উপর আবার তাড়া করলেন আমাকে।”

–“খুব শখ ওর বউ হওয়ার তাই না?”

–“হ্যাঁ তো শখ হবে না? বেচারা এতগুলো বছর ধরে আমাকে ভালোবাসে। এতগুলো বছর আমার থেকে দূরে থেকেও আমায় ভুলতে পারেনি। দূর থেকেই ভালোবেসে গিয়েছে আমাকে। জাস্ট ভাবুন একবার তুষার ভাইয়া আমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে।”

–“তুষারই জাস্ট ভালোবাসে? আর আমি ভালোবাসি না তাই তো? ওকে যাও তুষারের কাছেই যাও। আর আটকাবো না তোমায়।”

এইটা বলে আহিয়ান আনিতাকে হাল্কা ভাবে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো। আনিতা ঠোঁট কামড়ে ধরে হেসে বলে,

–“সত্যি যাবো তো?”

–“হ্যাঁ যাও।”

–“ওকে আপনি যেহেতু চাচ্ছেন আমি তুষার ভাইয়ার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে নিই। তাহলে তাই হবে।”

এই বলে আনিতা চলে আসতে নিলেই আহিয়ান আনিতাকে টেনে নিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। একহাতে শক্ত করে আনিতার বাহু চেপে ধরে আর অন্য হাতে আনিতার কোমড়। আনিতার বাহু আরো শক্ত ভাবে ধরে বলে,

–“এখান থেকে পা এগোবে তো পা ভেঙে রুমে বসিয়ে রাখবো।”

–“বাহ রে! আপনিই তো বললেন তুষার ভাইয়ার কাছে যেতে।”

–“একদম রাগাবা না আমাকে বলে দিলাম। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। তুমি শুধু আমার। শুধুই আমার অন্য কারো হওয়ার কথা মাথায় আনবা তো খুন করে ফেলবো। উপরওয়ালা তোমাকে শুধু আমার জন্য পাঠিয়েছেন। আর আমাকে #শুধু_তোমারই_জন্য। মাথায় রেখো কথাটা।”

এইটুকু বলে আহিয়ান আনিতাকে ছেড়ে দিতেই আনিতা শক্ত করে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। আহিয়ান রাগে কিছু সময় আনিতাকে না ধরলেও একটু বাদে আহিয়ানও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আনিতাকে। কিছুক্ষণ বাদে আহিয়ান আনিতাকে ছেড়ে দেয়। আনিতার দু গালে হাত রেখে আনিতার মুখ কিছুটা উঁচু করে আনিতার কপালে কপাল ঠেকিয়ে আহিয়ান বলে,

–“ভালোবাসো তো আমায়?”

–“হুম খুব।”

–“আনিতা কেন জানি না আজকাল তোমায় হারাবার ভয় পাই। বড্ড ভয় পাই। যদি তুমি হারিয়ে যাও।”

আহিয়ানের কথায় আনিতার বুক কেঁপে উঠে। মূহুর্তেই চোখের কোনে পানি জমা হয়। আনিতা আবারো শক্ত করে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–“হারাবো না। আমি কোত্থাও হারাবো না। আপনার কাছে থাকবো, আপনার হয়ে।”

আহিয়ান আনিতাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। আহিয়ান একহাতে শক্ত করে আনিতার কোমড় খামচে ধরে। আর অন্যহাতে আনিতার মাথার পিছনের চুল মুঠো করে ধরে আনিতার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায়। আহিয়ানকে এভাবে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে কেঁপে উঠে আনিতা। সারা শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। হার্টবিট ক্রমশ দ্রুত থেকে দ্রুততম ভাবে বেড়ে চলছে। এক অন্যরকম ভালোলাগার জগতে চলে যায় আনিতা। আহিয়ানের এতটা কাছে আসায় চোখজোড়া বন্ধ করে নেয় আনিতা। চোখ বন্ধ রেখেই ভারী নিঃশ্বাস নিচ্ছে। হঠাৎই নিজের ঠোঁটের উপর আহিয়ানের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে তড়িৎ গতিতে চোখ মেলে তাকায় আনিতা। হুট করেই যেন আনিতার হার্টবিট মিস হয়ে গেলো। আহিয়ান শক্ত করে একহাতে আনিতার চুল আর অন্যহাতে আনিতার কোমড় খামচে ধরে গভীরভাবে আনিতার ঠোঁটে চুমু খেতে ব্যস্ত।



চলবে।

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৩৪
#Ornisha_Sathi

আনিতা প্রথমে আহিয়ানের শার্ট খামচে ধরে রাখলেও পরে যখন শ্বাস নিতে পারছিলো না তখন আহিয়ানকে কিছুটা জোরেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আহিয়ানের থেকে দুই হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আনিতা বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আহিয়ান বিছানায় বসে আনিতাকে লক্ষ্য করছে। আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকাতেই আহিয়ান বাঁকা হাসে। তা দেখে আনিতা যেন আরো বেশি লজ্জা পায়। লজ্জায় আহিয়ানের চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারছে না ও। আহিয়ান উঠে আনিতার দিকে এগোতে নিলেই আনিতা উলটো ঘুরে দরজা খুলে দৌড়ে বের হয়ে আসে রুম থেকে। আনিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে হেসে দিলো।

রাত তিনটা বেজে চুয়াল্লিশ মিনিট। নাচ গান শেষ হয়েছে আরো ঘন্টা খানেক আগে। এতক্ষণ ওরা সবাই মিলে গোল হয়ে চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ করেই আনিতা সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আনিতাকে এভাবে সেন্সলেস হয়ে যেতে দেখে ওরা সকলেই বেশ ঘাবড়ে যায়। আহিয়ান তড়িঘড়ি করে আনিতাকে কোলে তুলে নিতেই চমকে উঠে। জ্বরে গাঁ পুড়ে যাচ্ছে আনিতার। ফাইয়াজ আহিয়ানকে বলে,

–“আমার রুমে নিয়ে চল। সবাই খুব ক্লান্ত এখন আনিতার এ অবস্থা দেখলে আবার চিন্তা করবে। আমাদের বাসা ফাঁকা আছে ওখানেই চল।”

ফাইয়াজের কথামতো আহিয়ান আনিতাকে নিয়ে ফাইয়াজদের বাসায়ই গেলো। ফাইয়াজের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আনিতার চোখমুখে পানি ছিটা দেওয়ার কিছুক্ষণ বাদেই ওর জ্ঞান ফিরলো। প্রচন্ড জ্বরে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো আনিতা। আহিয়ান আনিতার পায়ের ব্যান্ডেজে নজর দিতেই দেখলো ব্যান্ডেজ লাল হয়ে আছে। পরক্ষণেই মনে হলো ওরা সবাই মিলে একসাথে স্টেজে উঠে নেচেছিলো। নাচের মাঝে হঠাৎ করেই আনিতা স্টেজ থেকে নেমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ছিলো কিছুটা সময়। পরপরই আহিয়ান আনিতার কাছে গিয়ে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করে ওর কি হয়েছে। কিন্তু তখন কিছুই বলেনি। এখন সবটা বুঝতে পারলো আহিয়ান। সম্ভবত পায়ের ক্ষতস্থানে ব্যাথা পেয়েছিলো। সেখানে থেকেই রক্ত বের হয়েছে। ব্যাথায় জ্বর এসে সেন্সলেস হয়ে যায় ও। আহিয়ানের নিজের উপর বেশ রাগ হচ্ছে এখন। ও তখন যদি আর একটু জোরদার ভাবে জিজ্ঞেস করতো তাহলে এটা হতো না। আহিয়ানের এসব ভাবনার মাঝেই ফাইয়াজ এসে আনিতাকে জ্বরের ঔষধ খাইয়ে দিলো। রুমাল ভিজিয়ে কপালে পানি পট্টি দিতে দিতে বেশ ক্ষানিকটা বাদে আনিতার জ্বর ছেড়ে দেয়।

ফজরের আজান দিলো মাত্র। আনিতা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। আহিয়ান আনিতার কোমড়ের কাছে বসে আনিতার একহাত ধরে বসে আছে। বেশ ক্ষানিকটা বাদে রান্নাবান্নার ওখান থেকে ফাইয়াজ নিজের রুমে এসে দেখে আহিয়ান এখনো আনিতার পাশে ওর হাত ধরে বসে আছে। চোখে ঘুম অথচ ঘুমোচ্ছে না। ফাইয়াজ গিয়ে আহিয়ানের কাঁধে হাত রাখতেই আহিয়ান ফাইয়াজের দিকে তাকালো। ফাইয়াজ আহিয়ানের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে বলে,

–“এত করে ঘুমোতে যেতে বললাম তবুও না ঘুমিয়ে এখানে বসে আছিস?”

–“ঘুম আসছিলো না।”

–“কেন মিথ্যে বলছিস? তোর চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”

বিনিময়ে আহিয়ান মৃদু হাসলো। ফোন বের করে সময় দেখে নিলো একবার। পাঁচটা বেজে তেইশ মিনিট। ফাইয়াজ আনিতার কপালে হাত দিয়ে দেখলো এখন জ্বর নেই। ফাইয়াজ আহিয়ানের পাশে বসে বলে,

–“খুব ভালোবাসিস তাই না?”

–“বড্ড বেশি ভালোবাসি এই পিচ্চিটাকে।”

–“হুম বুঝলাম। এখন তো আর তোর পিচ্চির শরীরে জ্বর নেই। তুই যা গিয়ে ঘুমা কিছুক্ষণ।”

–“সকাল তো হয়েই গিয়েছে। একটু পর চারিপাশের অন্ধকার কেটে পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঘুম আসবে না আর।”

–“তুই যা ঠিক ঘুম আসবে।”

ফাইয়াজ একপ্রকার জোর করেই আহিয়ানকে ঘুমোতে পাঠিয়ে দিলো। আহিয়ান তবুও যেতে চাইছিলো না। একপর্যায়ে ফাইয়াজের জোরাজোরিতে বাধ্য হয়েই ঘুমোতে গেলো।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে আনিতার ঘুম ভাঙে। উঠে বসতেই একে একে কাল রাতের কথা মনে পড়ে ওর। এখন শরীরটা বেশ হালকা লাগছে আনিতার। বিছানা ছেড়ে উঠে ওদের বাসায় চলে যায় আনিতা। উঠোনে প্যান্ডেল করার ফলে মানুষে গিজগিজ করছে। সকালের খিচুড়ি খেতে সকলেই এসে পড়েছে। আনিতা সোজা নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে টি-শার্ট আর প্লাজু পালটে একটা কূর্তি পড়ে নিলো। ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিলো। ওড়না গায়ে জড়িয়ে পিছন ঘুরতেই রোদেলা ওরা সকলে ওর রুমে এলো।

ওরা সবাই মিলে টেবিলে বসেছে খিচুড়ি খাওয়ার জন্য। এখানে সবাই থাকলেও আহিয়ান নেই। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে ওকে কোথাও দেখা গেলো না। আনিতা খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে। বেশ কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পরও যখন আহিয়ান এলো না তখন আনিতা তন্ময়কে জিজ্ঞেস করে,

–“তন্ময় ভাইয়া তোমার বন্ধু কোথায়? উনি খেতে এলো না?”

তন্ময় খেতে খেতেই উত্তর দিলো,

–“ঘুমোচ্ছে বেশ কয়েকবার ডেকেছি। বলল পরে উঠে খেয়ে নিবে।”

–“ন’টার বেশি বাজে। আর উনি এখনো ঘুমোচ্ছে?”

–“তুই সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার পর সারাটা সময় তো তোর পাশেই বসে ছিলো। ছয়টার দিকে ফাইয়াজ ভাইয়া জোর করে ঘুমোতে পাঠিয়েছে।”

রোদেলার কথা শুনে আনিতার বেশ খারাপ লাগলো। ওর জন্য না ঘুমিয়ে বসে ছিলো? মনে মনে নিজেকে হাজারটা গালি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো আনিতা। আনিতাকে খাবার ছেড়ে উঠে যেতে দেখে আরোহী বলে,

–“কিরে খাবি না?”

–“আহিয়ানের সাথেই খাবো।”

এই বলে আনিতা এক প্লেটেই বেশি করে খিচুড়ি নিয়ে ফাইয়াজদের বাড়ি চলে গেলো। আনিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সবাই মৃদু হাসলো। দুজনেই পাগল। কেউ কাউকে ছাড়া কিচ্ছুটি বোঝে না। ওরা সবাই খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

আহিয়ান যে রুমে ঘুমিয়েছে আনিতা সে রুমে গিয়ে দরজা খানিকটা চাপিয়ে দিলো। খাবারের প্লেটটা বেড সাইড টেবিলে রেখে আহিয়ানকে ডাকলো বেশ কয়েকবার। কিন্তু আহিয়ান নড়েচড়ে আবারো ঘুমিয়ে পড়লো। আহিয়ানের পাশে বসে আনিতা আহিয়ানের কাঁধে হাত রেখে দু/তিনবার ডাকতেই আহিয়ান চোখ মেলে তাকালো। আনিতাকে পাশে বসে থাকতে দেখে আহিয়ান উঠে আনিতার কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কিনা। আনিতা আহিয়ানের হাতের উপর হাত রেখে বলে,

–“জ্বর নেই। এখন একদম ঠিক আছি আমি। এখন আপনি উঠুন তো। ফ্রেশ হয়ে আসুন তাড়াতাড়ি খিচুড়ি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

–“তুমি খেয়েছো?”

–“উঁহু।”

–“কেন? ক’টা বাজে? এখনো খাওনি কেন?”

–“আপনার সাথে খাবো তাই।”

আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতার কপালে একটা চুমু দিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো। দশ মিনিট বাদে আহিয়ান ফ্রেস হয়ে এসে আনিতার সামনে আসাম দিয়ে বসলো। আনিতা হাত ধুয়ে এসে প্লেট হাতে নিয়ে এক লোকমা আহিয়ানকে খাইয়ে দিলো। প্রথমবার আহিয়ানকে খাইয়ে দেওয়াতে আনিতার বেশ লজ্জা লাগছে। আর এক লোকমা দিতেই তন্ময় রাতুল ওরা সকলে রুমে প্রবেশ করে। ওরা এসেই আনিতাকে টিচ করতে শুরু করে। আনিতা যেন আরো বেশি লজ্জা পেয়ে যায়। খাবার প্লেট পাশে রেখে উঠে যেতে নিলেই আহিয়ান আনিতার হাত টেনে ধরে বসায় ওর পাশে। আহিয়ান খেতে খেতেই ওদেরকে বলে,

–“ভাই প্লিজ এখন বিরক্ত করিস না। দেখছিস প্রথমবার খাইয়ে দিচ্ছে। এমনিতেই ও লজ্জা পাচ্ছে তোরা আর লজ্জা দিস না। পরে আমাকে না খাইয়ে দিয়েই উঠে যাবে। আমি এই মুহূর্তটা একদমই মিস করতে চাইছি না।”

–“বা বা বাহ! এখন দেখছি আনিতাকে পেয়ে আমাদেরকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস। আমরা বিরক্ত করছি তাই না?”

আহিয়ানের কথায় রাতুল রাগী চোখে তাকিয়ে উপরের কথাটা বলে। আহিয়ান মুচকি হেসে বলে,

–“না ভাই তোরা একদমই বিরক্ত করছিস না। কিন্তু আমরা বিরক্তবোধ করছি বিশ্বাস কর। তোরা এখানে থাকলে ও আমাকে খাইয়ে দিবে না।”

–“ওকে ওকে। যাচ্ছি আমরা।”

তন্ময় কথাটা বলে ওদের সবাইকে বের হয়ে যাওয়ার ইশারা করলো। ওরা বের হয়ে যেতে নিলেই আহিয়ান পিছু ডেকে বলে,

–“এদিকটা একটু খেয়াল রাখিস। কেউ যাতে না আসে। আর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যা।”

–“যথা আজ্ঞা জনাব।”

আহিয়ানের কথায় তন্ময় উপরের কথাটা বলল। ওরা সকলেই মৃদু হেসে দরজা আটকে দিয়ে বের হয়ে এলো রুম থেকে। আনিতা বেশ কয়েকবার আহিয়ানকে খাইয়ে দেওয়ার পর আহিয়ান এবার নিজে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে আনিতাকে খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষে আনিতা প্লেট নিয়ে চলে আসতে নিলেই আহিয়ান আনিতার হাত টেনে ধরে বলে,

–“আজও পার্লারে যাবে?”

–“হ্যাঁ কেন?”

–“যেতে হবে না। তোমাকে এমনিতেই সুন্দর লাগে বেশ।”

–“আচ্ছা যাবো না।”

–“মন খারাপ হয়ে গেলো তাই না?”

–“আরেহ না পাগল। মন খারাপ হওয়ার কি আছে? দুদিন তো পার্লারে সেজেছি। আজ না সাজলে কি এমন হবে? কিছুই না।”

আহিয়ান উঠে এসে আনিতাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–“তোমাকে এমনিতেই বেশ সুন্দর লাগে। তার উপর সাজলে তো আর কোনো কথাই নেই। সব ছেলেরা হা করে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে। ওটা আমার একদম সহ্য হয় না।”

–“সব ছেলেরা আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমি কিন্তু আপনার দিকেই তাকিয়ে থাকি জনাব।”

–“হ্যাঁ এটা জানি।”

–“তাহলে চিন্তা কিসের? আমি তো আপনারই আছি। আর আপনারই থাকবো।”

–“হুম।”

–“এখন তাহলে ছাড়ুন। আমি যাই?”

আহিয়ান আনিতাকে আরো ভালোভাবে আকড়ে ধরে বলে,

–“ওকে যাও।

–“আপনি তো ছাড়ার বদলে আরো ভালোভাবে আকড়ে ধরছেন। তাহলে যাবো কি করে?”

–“না ছাড়লে হয় না?”

–“একদমই না।”

–“ছাড়তেই হবে?”

–“হ্যাঁ ছাড়তে হবে তো। নয়তো পরে কেউ দেখে ফেললে তখন কি বলবেন?”

–“বলবো আমি আনিতাকে ভালোবাসি আর বিয়ে করতে চাই।”

–“হুম আর অমনি সবাই মেনে নিবে তাই না?”

–“আমি মানিয়ে নিবো।”

–“আচ্ছা নিয়েন। এখন ছাড়ুন প্লিজ।”

–“ওকে।”

আহিয়ান গোমড়া মুখে কথাটা বলে আনিতাকে ছেড়ে দাঁড়ালো। আনিতা ছাড়া পেতেই উলটো ঘুরে দেখে আহিয়ান মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে আনিতা মুচকি হাসে। আনিতা এগিয়ে গিয়ে পা দুটো উঁচু করে আহিয়ানের ডান গালে হাত রেখে বা গালের চাপ দাঁড়িতে চুমু দিয়ে উলটো ঘুরে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আহিয়ান হা করে আনিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভাবতে পারেনি আনিতা চুমু দিবে ওকে। কি হয়ে গেলো এটা? আহিয়ান ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই বা গালে হাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হেসে দিলো।

কিছুক্ষণ বাদে আহিয়ানও ঘর থেকে বের হয়ে তন্ময় ওদের কাছে চলে গেলো। সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে সাড়ে বারোটা বেজে গিয়েছে। তাই তন্ময় ওরা সবাই চলে এলো গোসল করে নামাজ পড়তে যাবে। দুইটার দিকে নামাজ পড়ে এসেও আহিয়ান আনিতাকে দেখতে পেলো না। সকালেও দেখেনি। সেই যে খাইয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়েছে এরপর আর একবারের জন্যও আহিয়ানের সামনে পড়েনি। এদিক ওদিক তাকিয়ে ছাদে চোখ যেতেই আহিয়ান দেখলো আনিতা আর আরোহী দুজনে ছাদে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আনিতার একপাশটা দেখা যাচ্ছে। পুরোটা দেখা যাচ্ছে না। আনিতা কালো একটা কূর্তি পড়েছে। সাথে কালো জিন্স আর কালো ওড়না। বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়ছে। আহিয়ানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তন্ময় আনিতাকে ডাক দিলো। তন্ময়ের ডাক শুনে আনিতা পাশ ঘুরে সোজা ভাবে আহিয়ান ওদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালো৷ কিনারে সিথি কেটে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়েছে আনিতা এতেই যেন একদম অপ্সরাদের মতো লাগছে। কালো ড্রেসে আনিতাকে দেখে আহিয়ানের যেন বার কয়েক হার্টবিট মিস হয়ে গেলো। তন্ময় আনিতাকে ডেকে বলে,

–“ওখানে কি করছো? খাবে না?”

–“একটু পরে খাই? তোমরা খেয়ে নাও সকলে।”

–“তোমাকে ছাড়া আমরা খাচ্ছি না। এক্ষুনি নিচে এসো।”

–“খেয়ে নিন প্লিজ। এখন খেতে পারবো না। পেট ভরা আমার।”

–“তোমাকে ছাড়া আমরা খেলেও তোমার উনি খাবে না কিন্তু। এখন তুমিই বলো তুমি কি চাও আহিয়ান না খেয়ে থাকুক?”

তন্ময়ের কথায় আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকালো। আনিতা ইশারায় আহিয়ানকে খেয়ে নিতে বললেই আহিয়ান চোখ গরম করে তাকায় আনিতার দিকে। তা দেখে আনিতা আরো করুন ভাবে তাকালে আহিয়ান আরো কড়া ভাবে তাকায়। বুঝে গিয়েছে আনিতা। ওকে ছাড়া আহিয়ান খাবে না। তাই আনিতা মৃদু হেসে বললো,

–“ওকে আসছি।”



চলবে।

[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]