#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৩৪
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
ভাই এবারের মতো মাফ করে দেন আর বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে গাড়ি ভাঙ্গার মধ্যে দেয়নি। রাস্তা সত্যি ভাঙ্গা ছিলো। আর আমি গাড়ি অনেক স্লো চালাইছি তিন সত্যি ও ভাবি ভাইকে একটু বলেন।
আরে আমি আপনাকে আর কতবার বলবো রিফাত ভাইয়ার এখানে কোনো রকম দোষ নেই। ওনি অনেক সাবধানেই গাড়ি চালাচ্ছিলো। এমনকি আস্তের থেকেও আস্তে আস্তে চালাচ্ছিলো ঠেলা গাড়ি ও হয়ত এতো আস্তে চলে নাহ। আমিই অন্যমনষ্ক ছিলাম তাই পড়ে গেছি। আপনি রিফাত ভাইকে ওখান থেকে চলে আসতে বলুন। আর ভাইয়া আমি বলছি আপনি চলে আসুন।
নাহ ভাবি আমি আসলে ভাই মারবে।
কি এক ঝামেলা মেহরাব ভাই অনাকারণে রিফাত ভাইকে রোদের মধ্যে বাইকে বসায়ে রাখছে। বেচারা ঘেমে নেয়ে একাকার আমি যে এতো করে বলছি ছায়ায় আসতে কিন্তু সে কিছুতেই আসবে না। আর আমিও গিয়ে ওনাকে আনতে পারছি না কেননা মেহরাব ভাই আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। অভ্র ভাইয়া আর ঈশিতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখন ওরা অভ্র ভাইয়ার বাসায় যাবে তারপর বিকেলে মেহরাব ভাইয়ার অফিস শেষে সবাই মিলে একবারে মেহরাব ভাইদের বাসায় যাবে। আর যাওয়ার আগে ছোট মামাকেও ফোন করে জানিয়ে দিবে মেহেরাব ভাই।
তুই এতোদিন ধরে বাইক চালাস তাও তোর হুশ থাকে না কেনো? আজকে ভালো মতো বাইক চালানো শিখে তারপর যাবি।
আমি কখনোই চাইনা আমার জন্য কোনো নির্দোষ মানুষ কষ্ট পাক৷ আমার পরে যাওয়ার জন্য কোনো ভাবেই রিফাত ভাইয়া দোষী নয় কিন্তু সেটা এই লোককে কে বোঝাবে। অনেক কষ্টে আমার হাত ওনার থেকে ছাড়িয়ে রিফাত ভাইয়ার দিকে এগিয়ে যেতে গেলাম কিন্তু তার আগেই ওনি খপ করে ধরে ফেলল। আজকে যদি পায়ে বেথ্যা না পেতাম তাহলে দেখিয়ে দিতাম মাহিকে ধরা ওতো সহজ নয়৷
এমন লাফালাফি করছিস কেনো? আমি যখন বলেছি তখন চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি নয়ত যে পা টা ভালো আছে ওটাও ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো।
ও আপু তুমি কিছু বলছো না কেনো তোমার ভাই কে আর আপনার না অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে জানতো যলদি যান ।
আমার অফিস আমাকেই বুঝতে দে।
এবার মেঘলা আপু মুখ খুললেন, ভাইয়া হচ্ছে কি মাহি তো বলছে রিফাত ভাইয়ার কোনো দোষ নেই। আর এটা একটা এক্সিডেন্ট তুই ভাইয়াকে চলে আসতে বল।
কিন্তু কে শোনে কার কথা মেঘলা আপুর কথা যেনো ভাইয়া শুনতেই পাইনি এমন ভাব ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নাহ এবার আর সয্য করা যাচ্ছে না৷ আচ্ছা রিফাত ভাইয়া আপনি না আমায় ভাবি ডাকেন তো আমি বলছি আপনি ছায়ায় চলে আসুন কেউ আপনাকে কিচ্ছু বলবে নাহ। আমার কথায় রিফাত ভাইয়া বাইক থেকে নেমে সামনে আসতে গিয়ে আবার মেহরাব ভাই এর দিকে তাকিয়ে দৌড়ে আবার বাইকের উপর গিয়ে বসে বলল, নাহ ভাবি আমি এখানেই ঠিক আছি।
এবার আমার রাগ উঠে গেলো আমি রেগে মেহরাব ভাই কে বললাম, আপনি রিফাত ভাইয়া কে ছায়ায় আসতে বলবেন নাকি আমি কান্না করবো বলুন৷ আমার কথায় ওনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে আবার রিফাত ভাইয়ার দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, এদিকে আয়৷
নাহ ভাই আমি এখানেই ঠিক আছি৷ কি সুন্দর রোদ আমি ঠিক আছি।
তোর কি এটা শীতের সিজন মনে হচ্ছে যে রোদ ভালো লাগছে৷ আমি আসতে বলছি আয় আর তুই তোর উচিত ছিলো বাইকে বসে শক্ত করে ধরে রাখা। কিন্তু তুই তা না করে রাজ্যের চিন্তায় মগ্ন ছিলি মনে চাচ্ছে তোকেও রিফাতের মতো রোদের মধ্যে দাঁড় করায়ে রাখি৷
এভাবে এতো মানুষের সামনে এভাবে কেউ বলে? সবাই কীভাবে আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতেছে। আমি রাগে অভিমানে ওনার থেকে হাত ছাড়িয়ে পাশের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। আসার আগে ঠিকি শুনতে পেলাম ওনি বিরবির করে আমায় ড্রামা কুইন বলছে।
আচ্ছা তাহলে আমি যাচ্ছি আর অভ্র তোকে যেমনটা বলেছি তেমনটাই কর। ছোট মামাকে আমি চিনি তাই তোর এভাবে যাওয়া ঠিক হবে নাহ৷ তুই বরং এখন বাড়ি গিয়ে আংকেল আন্টিকে বোঝা তোর সাথে নাহিদ রিফাত আর বাকি সবাইও যাবে। ওনাদের বোঝানো হলে সন্ধ্যার দিকে আমি ফিরলে তারপর একসাথে আমার বাসায় যাবো অকে? তাহলে এখন যাওয়া যাক? আর মেঘলা তুই মাহিকে নিয়ে বাড়ি যা আমি মেঘকে বলে দিয়েছি ও একবারে সন্ধ্যায় যাবে।
ওনি সবাইকে কথাগুলো বোঝায়ে দিয়ে আমার কাছে আসলো৷ আমি এখনো মুখ ফুলায়ে বসে আছি ওনি আমার সামনে এসে বসে পড়লেন আমি মুখ ঘুরায়ে নিলাম৷ জোর করে আমার থুতনি ধরে মুখ ওনার দিকে নিলো৷ আমি যাচ্ছি সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে আর মেঘলার সাথে চুপচাপ বাসায় চলে যা সাবধানে যাবি।
ওনার কথায় আমি কিছু বললাম নাহ সেভাবেই মুখ ফুলায়ে রাখলাম ওনি আশে পাশে একবার সর্তক দৃষ্টি দিয়ে টুপ করে আমার ডান গালে একটা চুমু দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, আচ্ছা সরি পিচ্চি আর ভালোবাসি তো। কথাটা বলেই আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল তাহলে গেলাম আমি তোরাও সাবধানে যা। ওনিতো চলে গেলো কিন্তু আমি এখনো বেক্কল হয়ে বসে আছি৷ দিন দিন ওনার লজ্জা শরম সব কোথায় বেঁচে দিয়ে আসছে কে জানে ওনার কাজ কর্ম দেখে তো মনে হচ্ছে ওনার ভিতরে আর লজ্জা শরমের বালাই নেই। নিলর্জ্জ লোক।
পুরো ডয়িং রুম জুড়ে পিনপিনে নিরবতা। ছোট মামা সোফায় বসে দু হাত কছলাচ্ছে রাগে পুরো মুখ লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঈশিতাকে হাতের কাছে পেলে হয়ত মেরেই ফেলত। বড় মামা খুবি শান্ত শিষ্ঠ আর বিচক্ষণ মানুষ আম্মুর কাছ থেকে শুনেছি ছোট মামা ছোট বেলা থেকেই অনেক রাগী তবে মনটা অনেক ভালো। ঈশিতা মেঘলা আপুকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও আপুর সাথেই দাঁড়িয়ে আছি৷ অভ্র ভাইয়ার মা বাবাও এসেছে ওনারাও সোফায় বসে আছে। সব নিরবতা ভেঙ্গে বড় মামা বলল, দেখ যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে এখন এতো রাগ করার কী আছে আর তাছাড়া ওরা তো বিয়েও করে নিয়েছে।
আপনি কি বলছেন ভাইয়া আমি কিছুতেই এই বিয়ে মানবো নাহ৷ আর ওর সাহস কি করে হয় বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার ওকে তো আমি। ছোট মামা তেড়ে ঈশিতার কাছে আসতে গেলে আম্মু মামার হাত ধরে সোফায় বসায়ে দিলে বলল, কি করছিস কি ভাইয়া তুই কি এখন এতো বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলবি? শান্ত হ আমরা সবাই আছি তো।
মামা কিছু মনে করবেন নাহ আপনাদের বড়দের মাঝে কথা বলছি। আমি মানছি ঈশিতা ভুল করেছে ওর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ঠিক হয়নি। কিন্তু মামা ভুল তো এখানে আপনার ও আছে আপনি যখন ব্যাপারটা জানতে পেরেছেন তখন ঠান্ডা মাথায় ঈশিতাকে জিগাস করতেন। অভ্রর ব্যাপারে খোঁজ করতেন। আর শহরে সব ছেলেই খারাপ হয় নাহ আমিও তো শহরে থাকি আর আমি কেমন সেটা তো আপনি জানেন মামা। অভ্র আমার বন্ধু বলে বলছিলা ওকে আমি অনেক বছর ধরে চিনি যেমনটা ভরসা করে মেঘ এর হাতে আমার ছোট্ট বোনটাকে তুলে দিয়েছিলাম তেমন করে একবার আমাকে বিশ্বাস করে ঈশিতাকে অভ্রর হাতে তুলে দেন আমি বলছি মামা ঈশিতা ভালো থাকবে।
আমি মুগ্ধ হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি কি সুন্দর করে সবাইকে বোঝাচ্ছে। ইস কত ঙ্গানি কে বলবে এই ছেলেটাই আমাকে কতটা ভালোবাসে। অবশ্য আমিও তো কম ভালোবাসি না হায়! কি এতো সুন্দর কেনো আপনি?
অবশেষে সবটা ঠিক হলো তবে ছোট মামা বলল এখনি বিয়ে হবে নাহ৷ ঈশিতা যেমন ছিলো তেমনি থাকবে আগে ঈশিতা অর্নাস ২য় বর্ষে উঠুক তারপর বিয়ে হবে। এই কথায় ফাইনাল হলো একে একে সবাই চলে গেলো খাওয়া দাওয়া করে তবে ছোট মামা কাল সকালে যাবে আর ঈশিতা কয়দিন এখানে থাকবে নয়ত বলা যায় না ছোট মামা যে রাগী বাড়ি গিয়ে কি করবে কে জানে। মেঘ ভাইয়া এসে আপুকে নিয়ে গেছে এখন আমি আম্মু আর ঈশিতা বাড়ি যাবো। আব্বু আগেই চলে গেছে।
আম্মু তোমরা একটু দাঁড়াও আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি৷ তারপর দৌড়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলাম দরজাটা যেই বন্ধ করতে যাবো তার আগেই ফট করে মেহরাব ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। একি আপনি? বের হন কেউ দেখলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
কেউ দেখবে নাহ আর আমার এখানে একটা কাজ আছে সেটা করেই চলে যাবো।
আজব তো আপনার রুমেও তো বাথরুম আছে সেখানে না গিয়ে এখানে আসলেন কেনো?
ওই যে বললাম আমার কাজ আছে৷ এই বলে ওনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আমার গলায় গভীর ভাবে ওনার ঠোঁট স্পর্শ করলেন। আমি যে স্তব্ধ হয়ে গেছি আমি ভাবতেও পারিনি ওনি এমন কিছু করবে। মিনিট খানিক পর ছাড়লেন তবে ছাড়ার আগে আলতো করে কাঁমড়ে দিলো। আমি নিশ্চিত জায়গাটা লাল হয়ে দাগ বসে গেছে ওনি আমার কানে ফিসফিস করে বলল, সকালে কাজী অফিসে অনেক লোভ হচ্ছিল ওখানে মানুষ ছিলো জন্য শুধু ফুঁ দিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে নিজেকে এতোটা সময় ধরে রেখেছি তাই সুযোগটা মিস করলাম না কাজে লাগিয়ে দিলাম। কথাটা বলেই ওনি চলে গেলো আর আমি বরাবরের মতো হা করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
চলবে….
#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৩৫
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
পুরো ডয়িং রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে কালকে নেহালের ওই কথার এই মানে। আজকে সকালে নেহাল ওর বাবা মাকে নিয়ে হাজির হয়েছে তবে ওদের সাথে মেঘলা আপু বা মেঘ ভাইয়া নেই। এখানে নেহাল কে দেখে যতটানা অবাক হয়েছি তার থেকে হাজার গুণ বেশি রাগ হচ্ছে মেহরাব এর উপর। কেননা আমি ওনাকে এতো বার করে কল দিলাম কিন্তু ওনি একবার ও রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করেনি এতোটাই ব্যাস্ত ওনি। আব্বু আম্মু প্রথমে নেহাল আর ওনার বাবা মাকে দেখে ভেবেছে হয়ত মামাদের বাসায় এসেছে তাই আমাদের বাসায় বেড়াতে আসছে। কিন্তু পরে ওনাদের সাথে কথা বলার পর জানতে পারলাম ওনারা আসলে আমাদের বাসায় এসেছে।যেহেতু ওনারা কুটুম মানুষ তাই আব্বু ওনাদের কথা মেনে নিয়েই আমাকে ওনাদের সামনে বসায়ে ছিলো। পুরোটা সময় আমি মাথা নিচু করে ছিলাম ভিতরে ভিতরে যে আমি রেগে ফেঁটে পড়ছি সেটা মোটেও ওনাদের বুঝতে দেওয়া যাবে নাহ।
মাহিকে তো আমাদের সেই প্রথম দিন থেকেই পছন্দ আমি ওইদিনই আমার নেহাল এর জন্য ওকে পছন্দ করেছি। তবে কাউকে আর বলার সাহস করে উঠিনি আসলে একি ঘরে আপনারা কুটুম করবেন কি না তাই ভেবে আর প্রস্তাবটা রাখিনি। তবে নেহাল যখন বলল তখন আর না করতে পারলাম নাহ সাহস করে কথাটা বলেই ফেললাম। এবার বাকিটা আপনাদের হাতে ভাই।
নেহালের মায়ের কথায় আব্বু ঠিক কি জবাব দিবে সেটাই ভাবছে৷ কেননা আমি দূর থেকেও আব্বুর মুখ দেখে ঠিকি বুঝতে পারছি আব্বু অনেক চিন্তিত নতুন কুটুম যদি কোনো ভাবে তাদের অসম্মান হয় তাহলে ব্যাপার টা মোটেও ভালো দেখাবে নাহ। তবুও আব্বু মুখে হাসি রেখে বলল, দেখুন ভাই মেয়ে যখন আছে তখন তো বিয়ে দিতেই হবে। মেয়েও বড় হয়েছে তবে আমরা জানি নেহাল বাবা অনেক ভালো ছেলে ভালো চাকরি করে নিঃসন্দেহে আমার মেয়ে ওখানে সুখী থাকবে৷ কেননা আমাদের এক মেয়েকে তো দিয়েছি তাই জানি তারপরেও আমরা কিছুটা সময় চাই একটু ভাবার জন্য। প্লিজ কিছু মনে করবেন না ভাই আসলে একটা মাত্র মেয়েতো বোঝেনই তো।
আরে না না আমরা কিছু মনে করবো কেনো আপনার জায়গায় আপনি ঠিকিই আছেন৷ মেয়ের বাবার অনেক দায়িত্ব থাকে অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। নেহালের বাবার কথার পিঠে নেহাল বলল,আপনার কোনো তাড়া নেই আংকেল আপনি সময় নেন তারপর ভেবে আমাদের জানাবেন আমরা অপেক্ষা করবো। শেষের কথাটা নেহাল আমার দিকে তাকিয়ে বলল ওনার তাকানো দেখেই আমি সরে গেলাম তারপর ওখানে কি কথা হয়েছে আমি জানি নাহ। পরে অনেক সময় পর যখন আমি কোনো সাড়া শব্দ পাইনি তখন বাইরে গিয়ে দেখি ওনারা চলে গিয়েছে।
বাইরে রোজকার মতো আজকেও কাঁটফাটা রোদ বৃষ্টির দেখা নেই বেশ কয়েকদিন হলো। হাতে থাকা ছোট্ট পার্সটাই অনবরত ফোনটা বেজেই চলেছে। আমি জানি কে ফোন দিয়েছে দরকারের সময় যখন ওনাকে পাওয়া যায় না তখন এখন ওনাকে কোনো প্রয়োজন নেই। রিক্সা থেকে নেমে সোজা হেঁটে চলেছি উদ্দেশ্য মেহরাব এর অফিস যদিও এভাবে যাওয়া ঠিক নয় তবুও কোনো উপায় নেই। গেট পেরিয়ে বড় অফিসটাই ঢুকতেই রিসিপশন ডেস্কে গিয়ে মেয়েটাকে জিগাস করতেই ওনি মেহরাব এর কেবিন দেখিয়ে দিলো। হাজার অস্সতি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি কেননা অফিসে থাকা সকল স্টাফ কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে হয়ত অচেনা বলে তাই। কাঁচের দরজাটা একটু খুলে ভিতরে গিয়ে দেখি ওনি একটা মেয়ের সাথে বসে কথা বলছে হয়ত কাজ করছে তবে সেটা এই মুহূর্তে আমার মাথায় ঢুকলো নাহ৷ মাথার মধ্যে শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ওনি এখানে একটা মেয়ের সাথে বসে গল্প করতে পারে অথচ আমার ফোন ধরার সময় ওনার যত ব্যাস্ততা। হয়ত ওনার কাছে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে সত্যি কি তাই? না না ওনি এমনটা কিছুতেই আমার সাথে করতে পারে নাহ। মনকে বুঝিয়ে কাঁচের দরজাটা টুকা দিয়ে বললাম, আসতে পারি?
আরে তুই এখানে? হঠাৎ কোনো সমস্যা হয়েছে? এমন দেখাচ্ছে কেনো? আর ফোন ধরছিলি না কেনো? ফোন কোথায় রাখিস তুই? কি এমন হয়েছে যে সোজা অফিসে চলে আসতে হলো।
এখানে এসে বুঝি আপনাকে সমস্যায় ফেলে দিলাম? ওকে ঠিক আছে চলে যাচ্ছি তাহলে। আমি রেগে পিছন ফিরতেই ওনি আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল, এসব কেমন ব্যবহার মাহি তুই কি এখনো বাচ্চা আছিস? আর আমি কি তোকে যেতে বলেছি? আয় আমার সাথে।
ওনি আমাকে ওনার সাথে করে ভিতরে নিয়ে গেলো তারপর সেখানে থাকা মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, মিস সিমি এই হলো মাহি আমার পুরো পৃথিবী আপনি তো ওকে চিনবেন।
ওহ তাহলে তুমিই মাহি সত্যি তুমি অনেক মিষ্টি আর সেদিনকার ব্যবহারে জন্য সরি। আমি আসলে ওভাবে কথা বলতে চাইনি কাজে ছিলাম বোঝোই তো অফিসে কত কাজ থাকে। ওহ তুমি তো আবার অফিস করোনা তুমি কীভাবে বুঝবে আমিও নাহ। আচ্ছা আমি তাহলে এখন আসি? বাকি কাজ না হয় তুমি যাওয়ার পরেই করবো।
কথাগুলো বলে মিস সিমি চলে গেলেন তবে কেনো যেনো ওনার কথা বলার ধরন দেখে আমার মোটেও ভালো লাগিনি। আমার এসব ভাবনার মাঝেই পিছন থেকে মেহরাব আমায় জড়িয়ে ধরল আমি ওনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আরে কি হয়েছে? এতো রেগে আছিস কেনো? ওহ ফোন ধরতে পারিনি তাই? আচ্ছা সরি বাবু তোকে তো বলেছি একটা প্রজেক্ট নিয়ে অনেক ব্যাস্ত তাই ধরতে পারিনি প্লিজ রাগ করিস নাহ।
হ্যাঁ আমিতো সব সময় শুধু রাগই করি আমিতো কিছুই পারি নাহ সব সময় শুধু আপনাকে কল দিয়ে বিরক্ত করি৷ ওকে ঠিক আছে এখন থেকে আর করবো নাহ কেননা আমি তো আর থাকবোই নাহ তাহলে বিরক্ত করবো কীভাবে।
আমার কথায় মেহরাব এর মুখ মুহুর্তেই রাগে লাল হয়ে গেলো। ওনি আমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ঝাঁকিয়ে বলল, এসব কেমন কথা মাহি সামান্য ফোন ধরেনি বলে তুই এভাবে কথা বলছিস কেনো? আমিতো সরি বলছি।
হ্যাঁ আপনি শুধু সরি বলবেন আচ্ছা সরি বললেই কি সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে? কালকে যদি আমি মরে যাই তারপর আপনি আমার লাশের সামনে এসে সরি বলবেন তাহলে দেখবো আ, বাকিটা আর বলতে পারলাম নাহ ওনি জোরে ধমক দিয়ে পাশের দেওয়ালে একটা ঘুষি মারলেন। ওনার ধমকে দরজায় সবাই চলে এসেছে ওনি জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু ঠান্ডা করে সবাইকে চলে যেতে বলল। তারপর আমার সামনে এসে আমাকে আলতো করে জরিয়ে ধরে ওনার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। আমি রীতিমতো ভয়ে কাঁপছি সাথে কান্নাও করছি তবে নিঃশব্দে কেননা ওনার এমন রূপ আমি আগে কখনো দেখিনি।
ওনি আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, সরি এগেইন আমি তোমাকে এভাবে বলতে চাইনি। প্লিজ ভয় পেও নাহ এই যে আমি কান ধরছি সরিতো বাবা আচ্ছা প্রমিজ আর কখনো এমন হবে নাহ। এবার থেকে তোমার সব ফোন রিসিভ করবো এবার তো রাগটা কমাও।
আমি ওটা নিয়ে ররাগ ককরেনি। ভয়ে আমার কথা জড়িয়ে যাচ্ছিলো।
তাহলে?
আজকে সকালে নেহাল ওনার বাবা মাকে নিয়ে এসেছিলো তারপর আমি ওনাকে সবটা খুলে বললাম।মেহরাব সবটা শোনার পর রাগে চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে হাতে মুটো শক্ত করে সামনে তাকিয়ে আছে। যেটা কিনা সামনে বড় কোনো ঝড়ের পৃর্বাভাস।
চলবে….
#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৩৬
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
ব্যাস্ত রাস্তা দুপাশ থেকে সাঁই সাঁই করে গাড়ি চলছে তার নিজ গন্তব্য। আর রাস্তার পাশেই দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একটা পুলিশের অপরটা কার।নেহাল নিজের গাড়ির থেকে একটু দূরে বিচলিত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আর মেহরাব ওর গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকে দুহাজ গুজে দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে তুই মানবি না বলছিস?
এখানে মানা না মানার কি আছে মেহরাব ভাই তুমি তো আমাকে আগে বলোনি তাই আমিও এখন পিছনে যাবো নাহ।
তোকে বলার প্রয়োজন মনে করিনি তাই বলিনি। আর তুই কে যে তোকে বলে আমার সবকিছু করতে হবে। আমি যখন তোকে বলেছি মাহির থেকে দূরে থাকবি তখন দূরেই থাকবি এটাই ফাইনাল।
এতোদিন মাহি আমার ভালোবাসা ছিলো ওকে সময় দিয়েছি বিরক্ত হবে এটা চিন্তা করে আমার মনের কথা প্রকাশ কিরিনি প্রায় এক বছর ধরে ওকে ভালোবাসি আর আজ তুমি বলবে আর আমি ওকে ভুলে যাবো? সেটা হবে নাহ মেহরাব ভাই তোমার কথা শুনে আমি এটাই ফাইনাল করলাম যে আমি শুধু আর শুধু মাহিকেই বিয়ে করবো। এখন থেকে ও শুধু আমার ভালোবাসা নয় সাথে জেদ ও দেখি তুমি কি করো।
নেহাল এর কথায় মেহরাব এর রাগ হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে বলল, জেদ? আসলে তুই মাহিকে ভালোইবাসিস না ও শুধু তোর জেদই। আর কি বললি তুই ওকে এক বছর ধরে ভালোবাসিস? আরে এই হাতে ওকে ছোট বেলা থেকে মানুষ করেছি বুক দিয়ে আগলে রেখেছি আর তুই ভেসে আসা মেঘের মতো এসে বলবি মাহিকে চাই আর আমি ওকে দিয়ে দেবো? বড্ড বোকারে তুই। তাই ভালো ভাবে বলছি তুই ওকে ভুলে যা।
আসলে কি জানোত মেহরাব ভাই তুমি তোমার মধ্যে মাহিকে বন্দি করে রেখেছো তাই ও তোমার কাছে আছে৷ ওকে ছেড়ে দাও মুক্ত আকাশে দেখবে ও তোমার থাকবে নাহ। আসলে ও তোমাকে সম্মান করে তাই তুমি যেটা বলো ও সেটাই মেনে নেয়৷ আচ্ছা ওকি তোমাকে কখনো বলেছে যে ও তোমাকে ভালোবাসে? বলিনি তো তাহলে এতো জোর পাও কোথা থেকে তুমি?
তুই আসলেই বোকা ভালোবাসা কি সেটা তুই এখনো বুঝিসনি। কিছু অব্যক্ত কথা থাকে যেগুলো বলে দিতে হয় না বুঝে নিতে হয়৷ আর আমি তোকে কেনো এসব বলছি তোকে শেষ বারের মতো বলছি মাহির থেকে দূরে থাকবি।
আমিও তোমাকে শেষ বারের মতো বলছি মেহরাব ভাই তুমি মাহির জীবন থেকে সরে যাও৷ ওকে আকাশে মুক্ত করে দাও দেখবে আমি ঠিক ওকে মানিয়ে নিজের করে নেবো। নেহাল এর কথা শেষ হতেই মেহরাব আর নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারলো নাহ সোজা গিয়ে নেহাল এর মুখ বরাবর একটা ঘুষি মারল। মার টা এতোটাই জোরে ছিলো যার দরুন নেহাল এর ঠোঁট ফেঁটে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে নাকেও লেগেছে। নেহাল হেসে বা হাতের বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে ঠোঁটের রক্তটা মুছতে মুছতে বলল, একটা অন ডিউটি পুলিশ অফিসার এর গায়ে হাত তোলার অপরাধে আমি তোমাকে এখনি অনায়াসে আ্যারেস্ট করতে পারি মেহরাব ভাই। কিন্তু করবো নাহ কেননা আমি তোমাকে সম্মান করি নিজের বড় ভাইয়ের আসনে তোমাকে বসিয়েছি তাই কিছু বললাম নাহ। তবে দ্বিতীয় বার আর এই ভুলটা করো নাহ তাহলে আমি ভুলে যাবো তুমি আমার ভাইয়ের বন্ধু।
তোর যা করার আছে তুই করে নে আমিও দেখি তুই ঠিক কি করতে পারিস। আর এখন তো শুধু ঠোঁট কেটেছে পরের বার যদি মাহির আশেপাশে দেখি তাহলে আমিও ভুলে যাবো তুই মেঘ এর ভাই। কথাটা বলেই মেহরাব গাড়ি নিয়ে সাঁ করে চলে গেলো।
আমিও দেখি তুমি কীভাবে আমার থেকে মাহিকে আলাদা করো৷ মাহিকে তো আমি নিজের করবোই তার জন্য আমার যা করতে হয় আমি করবো। কথাটা বলেই নেহাল ও গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
মেহরাব ভাই এর অফিস থেকে এসে সেই যে শুয়েছি এইমাত্র উঠলাম মাথাটা ভীষণ ধরেছে এক কাপ কফি হলে ভালো হতো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ কেউ আমাকে ডাকিনি অবধি বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আব্বু হাতে কফির মগ নিয়ে রুমে আসলো।
কিরে ঘুম হলো? চল আজকে বাপ বেটি মিলে গল্প করবো। তোর মা রান্না করছে তারপর রান্না হলেই দুজনে একসাথে ডাইনিং টেবিলে যাবো। আগে হাত থেকে কফির মগটা নে তো ডান হাতেরটা তোর।
আপনি কষ্ট করে আনতে গেলেন কেনো আমাকে বললে আমিই কফিটা বানিয়ে দিতাম। আব্বুর হাত থেকে কফির কাপটা নিতে নিতে বললাম।
আরে কফিটা তো তোর মা বানিয়েছে আমি শুধু রুম অবধি আনলাম মাত্র। চল বারান্দায় যায় আকাশ দেখতে দেখতে কফি খাবো। আব্বুর কথায় ভারি অবাক হলাম অনেকদিন হলো এভাবে আব্বুর সাথে গল্প করা হয়না হয়ত বড় হয়ে গেছি তাই। আব্বু আর আমি বারান্দায় চেয়ারে বসে আছি আব্বু পাশের চেয়ারে বসে মগে চুমুক দিতে দিতে বলল, নেহাল কে তোর কেমন লাগে?
আচমকা আব্বুর এহেন কথায় চমকে উঠলাম কফিটা গরম ছিলো অসাবধানতায় ঠোঁট টা হয়ত কিঞ্চিৎ ঝলছেও গেছে৷ কিরে চুপ করে আছিস কেনো?
কেমন আবার লাগবে আব্বু ভালোই ওনাকে তেমন ভাবে চিনি না শুধু মেঘ ভাইয়ার অসুস্থর দিন হসপিটালে একবার দেখেছিলাম আর বিয়েতে দেখেছি। এতে আমার ওনাকে দেখে ভালোই মনে হয়েছে তবে মানুষ চেনা তো খুব কঠিন কেননা তাদের উপরে এক আর ভীতরে আরেক তবে আমি বলছিনা নেহাল খারাপ ওনিও হয়ত ভালো।
আমার কথাশুনে আব্বু খুশিই হলো হয়ত, বাহ আমার মেয়েতো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে৷ এই তুই কবে কবে এতো বড় হয়ে গেলিরে? সেদিনও তো বলতি আব্বু পাঁচ টা টাকা দেন আইসক্রিম খাবো৷ আব্বুর কথায় লজ্জা পেলাম তবে সাথে সাথে বাপ বেটি দুজনেই হেসে উঠলাম। এভাবে প্রায় অনেক সময় গল্প হলো নানান বিষয় নিয়ে। ভাবলাম এবার সাহস করে মেহরাব ভাই এর কথাটা আব্বু কে বলেই দিই। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো মেহরাব ভাই তো এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলেননি তাহলে আব্বু কে কীভাবে বলব। আমার ভাবনার মাঝেই আব্বু বলল, জানিস নেহাল কে আমার বেশ লাগে কি সুন্দর করে কথা বলে আবার কত ভালো চাকরিও করে। আমাদের মেঘ ও তো কত ভদ্র আর হবে বাই না কেনো যার বন্ধু আমাদের মেহরাব তাকে তো ভদ্র হতেই হবে।
আব্বুর কথায় মনের মধ্যে কিঞ্চিৎ আশার আলো জেলে উঠল তারমানে আব্বু ও মেহরাব ভাই কে পছন্দ করে। মুহুর্তেই আমার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল আমি খুশি হয়ে বললাম। মেহরাব কে আপনার কেমন লাগে আব্বু ?
আরে মেহরাব তো আমাদের ছেলে কত ভদ্র এই বয়সেই কতটা পরিশ্রমী আবার বড়দের কত সম্মান করে৷ দেখলি না সেদিন কত সুন্দর করে ঈশিতার ব্যাপারটা তোর ছোট মামাকে বোঝায়ে দিলো। ছেলেটা লাখে একটা।
আমার মনে তো লাড্ডু ফুটছে আব্বু মেহরাব ভাই কে এতো পছন্দ করে ভাবতেই মনটা খুশি খুশি হয়ে গেলো।
আচ্ছা শোন আমি কখনোই তোর উপর কিছু চাপিয়ে দেবো নাহ৷ কেননা আমার মেয়ের উপর আমার যথেষ্ট বিশ্বাস আছে। আমি জানি না নেহালদের কি বলবো তবে তুই যেটা বলবি সেটাই হবে। নেহাল ছেলেটা কিন্তু মন্দ নয় বল? আচ্ছা আমি উঠি নইলে তোর মা আবার রেগে বোম হয়ে যাবে তুই ও আয় খাওয়ার হয়ে গেছে বোধহয়।
আব্বু চলে গেছে কিন্তু আব্বু আমাকে ঠিক কি বলে গেলো? বিয়েতে রাজি হয়ে যা নাকি তোকে বিয়েটা করতে হবে৷ কিছুই তো বুঝলাম নাহ তবে আব্বুর কথায় বুঝলাম মিস্টার নেহাল কে আব্বুর বেশ পছন্দ হয়েছে। নাহ আর দেরি করা যাবে নাহ এই ব্যাপারটা নিয়ে মেহরাব ভাই এর সাথে কথা বলতে হবে।
চলবে…..