#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৪০
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
আমি তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে সাবধানতার সঙ্গে রান্নাঘর থেকে ওনার জন্য খাবার নিয়ে আসলাম।ততক্ষণে ওনিও ফ্রেশ হয়ে গেছেন আমি ওনাকে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়েছি কেননা ওনার হাততো ছিলে গেছে। খাওয়া শেষে ব্যানকণিতে গিয়ে পাশাপাশি দুটো চেয়ারে ওনার এক হাত জড়িয়ে ধরে ওনার কাঁধে মাথা রেখে বসে আছি। হুম সবি তো শুনলাম কিন্তু আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে এসবের পিছনে মিষ্টার নেহালই জড়িত। আমি শিওর বাজে লোক একটা।
কিন্তু আমার মনে হয়না এসবের পিছনে নেহাল জড়িত থাকতে পারে। ও হয়ত আমার মতো কনফিউজড ওকে কেউ ফোন করে এই ফেক নিউজ টা দিয়েছে। সাথে কিছু ফেক প্রমাণ কেউ ইচ্ছে করে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে। আর যে এটা করছে সে খুবি ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে এসব করছে।
মেহরাব এর কথা শুনে আমি পুরো অবাক হয়ে গেছি ওনি এসব কি বলছে৷ এসবের পিছনে যদি নেহাল না থাকে তাহলে কে থাকবে? এমন কে আছে যে আমাদের ক্ষতি চাই৷ আচ্ছা আপনি কি করে বুঝলেন যে এই সবের পিছনে মিস্টার নেহাল নেই অন্য কেউ আছে।
বোকার মতো কথা বলিস নাহ মাহি যেটা জানিস না সেটা বলবি নাহ। আমি নেহাল কে যতটুকু চিনি ও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে আর ও হয়ত তোকে পছন্দ করে কিন্তু তার জন্য ও এতো বাজে একটা পরিকল্পনা করবে নাহ। আচ্ছা থাক এখন আমায় যেতে হবে।
কোথায় যাবেন আপনি?
প্রমাণ খুঁজতে আর এর পিছনে কে আছে সেটা জানতে।
আবার কবে দেখা হবে? এভাবে আর কতদিন মেহরাব। কখনো কি এই সবকিছু আবার আগের মতো ঠিক হবে নাহ? আমার কথা শুনে ওনি দুহাতে আমার মুখটা ধরে কপালে গভীর ভাবে একটি চুমো দিয়ে বললেন, খুব শীঘ্রই এই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে আর আমরা আবার এক হবো। ততদিন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আর তুই কিন্তু ভুলেও কাউকে বলবি না যে আমি এসেছিলাম।
আমাকে কি আপনার পাগল মনে হয়? আমি খামখা এসব কিছু বলতে যাবো কেনো? ওনি মুচকি হেসে যেভাবে এসেছিলো আবার সেভাবে চলে গেলো৷ আমি ওনার যাওয়ার পথে ততক্ষণে চেয়ে ছিলাম যতক্ষণ অবধি ওনাকে দেখা যায়। এখন মনটা অনেক হালকা লাগছে অনেক ভালো লাগছে এবার একটা লম্বা ঘুম দিতে হবে তাহলে শরীল মন সব ফ্রেশ লাগবে৷
,,,,,,,
ভোরের আলো ফুঁটতে শুরু করেছে জানালা ভেদ করে এক চিলতে রোদ নেহালের মুখে পরতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আড়মোড়া ভেঙে পাশে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল আটটা বেজে গেছে তড়িঘড়ি করে উঠে বসল৷ আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে রাতে দেরি করে ঘুমানোর জন্য হয়ত। নেহাল উঠে বাথরুমে চলে গেলো। কালকে রাতে যে মীরা এখানে এসেছে আর ওর পাশের রুমে আছে সেটা বেমালুম ভুলে বসে আছে। নেহাল ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে ভাবল একটা কফি বানিয়ে খাইতে খাইতে রেডি হবে তারপর বাইরে থেকে কিছু খেয়ে নেওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ টাওয়ালটা খাটের উপর ছুঁড়ে মেরে রুমের বাইরে চলে গেলো। পাশের রুমের দিক চোখ পড়তেই মনে পড়ল কালকে রাতে মীরা এখানে এসেছে৷ নেহাল কয়েকবার দরজায় টোকা দিয়ে মীরাকে ডাকল কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলো নাহ। বেশ কয়েকবার ডাকার পরেও যখন কোনো সারা শব্দ এলো নাহ তখন নেহালের একটু কেমন সন্দেহ হলো। মীরার কিছু হলো নাতো? এটা ভেবে ভিড়িয়ে রাখা দরজাটা খুলে ভিতরে চলে গেলো দেখল মীরা কথা মুঁড়ি দিয়ে শুয়ে আছে৷ এই গরমে কেউ কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমালে একটু সন্দেহ তো হবেই৷ নেহাল মীরার কাছে গিয়ে আরো বেশ কয়েকবার ডাকল কিন্তু মীরা উঠল না একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো৷ এবার নেহাল এর বেশ রাগ হলো এতোবার ডাকার পরেও কেউ কোনো উত্তর না দিলে রাগ হওয়ারই কথা। নেহাল টেনে মীরার মুখের উপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নিলো মীরার কপালের সাথে নেহাল এর হাত লাগতেই দেখল মীরার শরীল গরম জ্বরে গাঁ পুরে যাচ্ছে।
ওহ সিট এতো দেখি অনেক জ্বর কি বিপদে পড়লাম৷ একে থাকতে দিয়ে তো দেখছি এখন আমারি বিপদ হয়ে গেলো। এদিকে আমার অফিসের ও দেরি হয়ে যাচ্ছে কি যে করি। নেহাল কোনোকিছু না ভেবে বাটিতে করে পানি এনে মীরার কপালে জলপট্টি দিতে লাগল। সাথে থানায় ফোন করেও বলে দিলো আজকে আসতে একটু দেরি হবে।
,,,,
আপনি হঠাৎ আমার বাসায় কি মনে করে? কিছু বলবেন?
ছাঁদে বসে ছিলাম তখনি মনির এসে আমাকে বলল আমার সাথে নাকি কেউ দেখা করতে এসেছে। আমিতো অবাক আমার সাথে আবার কে দেখা করতে আসবে মনির কে জিগাস করতেই বলল ও নাকি চেনে নাহ। তাই আমিও আর কথা না বাড়িয়ে নিচে গেলাম কে এসেছে সেটা দেখতে। এসে দেখি মেহরাব এর অফিসের সেদিনের সেই মেয়েটি এসেছে কি জানো নাম হ্যাঁ মিস সিমি আমি ওনার কাছে গিয়ে জিগাস করতেই ওনি বলল, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে কিছু মনে না করলে তোমার রুমে গিয়ে কথাগুলো বলতে পারি?
আমিও কিছু বললাম নাহ হয়ত কোনো দরকারী কথা হবে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে ওনাকে নিয়ে আমার রুমে আসলাম ওনি আমার রুম ভালোভাবে দেখে বিছানায় বসে বলল, তা মেহরাব এর সাথে কথা হয়েছে?
জি ঠিক বুঝলাম নাহ।
আব মানে আমি বলতে চাইছি যে মিস্টার মেহরাব এর সাথে তোমার লাস্ট কথা কবে হয়েছে? এই আর কি আসলে আমি এখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না যে মেহরাব এর মতো একটা মানুষ এমন কিছুর সাথে জড়িত থাকতে পারে।
আপনি তো ওনার সাথে বেশ অনেকদিন ধরেই কাজ করেন তা আপনার ও তাই মনে হয় যে মেহরাব ভাই সত্যি এমন কিছু করতে পারে।
দেখো আমার মনে হওয়ার সাথে তো আর কিছু যায় আসে নাহ যেটা চোখের সামনে দেখছি সেটাই তো বিশ্বাস করতে হবে বলো?
সব সময় কিছু চোখে যা দেখি তা সত্যি হয় নাহ৷ কিছু কিছু সময় আমরা নিজের চোখেও ভুল দেখি সত্যি কে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্যি দেখি।
আচ্ছা তুমি তো দেখছি খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারো। আসলে আমি এমনি বললাম আর কি শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে? তাও আবার পুলিশের সঙ্গে তা দাওয়াত কি আমি পাবো?
ওনার কথা শুনে এবার সত্যি আমার খুব বিরক্ত লাগছিলো কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলছেন ওনি। তবুও মুখে হাসি এনে বললাম, আসলে আপনি হয়ত ভুল জানেন আমার বিয়ে ঠিক হয়নি শুধু কথা হয়েছিলো আর কি। কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন? আপনাকে কে বলল?
ওইতো হলো আর কি বিয়ের কথা হওয়া আর বিয়ে ঠিক হওয়া একি তো ব্যাপার। আর আমাকে কে বলল? আসলে কালকে রাতে মিস্টার মেহরাব আমার কাছে এসেছিলো ওই অফিসের কাজের ব্যাপারে কথা বলতে আর এই যে মিথ্যা কথাটা যে ছড়িয়েছে সেটার সম্পর্ক আমি কিছু জানি কিনা সেটা শুনতে৷ তখনি এক কথায় দুই কথায় ওনিই আমাকে বলল আরো অনেক কিছুই বলেছে যেটা তোমার জানা উচিত। ওনি বলছিলো এখন তো ওনার যে অবস্থা এই অবস্থায় তোমার সাথে প্রতিদিন যোগাযোগ করা তো সম্ভব নয়। আবার ওনি যে নির্দোষ সেটা প্রমাণ করতে কতদিন লাগবে সেটা কেউ জানে নাহ৷ তাই তোমার দেখে শুনে অন্য কোথাও বিয়ে করে নেওয়া ঠিক মানে ওনি এমনটা বলছিলো আর কি আসলে তুমি ছোট তো আর তোমাকে বললে যদি তুমি কষ্ট পাও তাই ওনি আমাকে বলল তোমাকে যেনো আমি সবটা বুঝায়ে বলে দিই৷ চিন্তা করো না সবাই তো আর সবার ভালোবাসার মানুষকে পাই নাহ বলো।
আমি ওনার কথা শুনে পুরো অবাক হয়ে গেছি মেহরাব ভাই এইগুলো বলেছেন? কিন্তু ওনি তো রাতে আমার কাছে ছিলো তাহলে? আমি কি ওনাকে বলবো যে রাতে মেহরাব আমার সাথে ছিল। না থাক মেহরাব ভাই তো বলতে নিষেধ করেছে হয়ত আমার এখান থেকে যাওয়ার পর ওনার ওখানে গেছে। আর আমি এই বিষয়ে ওনাকে কিছু বললাম নাহ ওনি আরো কিছুক্ষণ বসে তারপর চলে গেলেন।
চলবে……
#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৪১
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
আমাকে এখানে এভাবে কেনো ডেকেছেন মিস্টার নেহাল?
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তোমাকে এভাবে ডাকার জন্য কিন্তু না ডেকেও পারলাম নাহ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
বলুন আমি শুনছি। আর যা বলবেন যলদি বলেন এভাবে আপনার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখলে মানুষ আমায় খারাপ ভাববে।
তুমি বিশ্বাস করবে কিনা আমি জানি নাহ আর বিশ্বাস করার কথাও নাহ। কিন্তু তবুও আমি বলবো আসলে মেহরাব ভাই এর এমন হওয়ার পিছনে আমার কোনো হাত নেই সত্যি বলছি আমি। তুমি হয়ত আমার উপর রেগে আছো কিন্তু আমি কি করবো বলো আইনের মানুষ আইন তো মেনে চলতেই হবে। আর মেহরাব দোষী হোক বা নিদোর্ষ হোক তবুও উপর থেকে যদি আমার ওকে আরেষ্ট করার অর্ডার আসে তাহলে আমি অর্ডার পালন করতে বাধ্য৷ আমিও জানি আর তুমিও জানো মেহরাব ভাই নিদোর্ষ। আমি প্রমাণ খুঁজতে ওকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য কিন্তু ও পালিয়ে গিয়ে সবটা এলোমেলো করে দিলো৷ আমি জানি ও প্রমাণ খোঁজার জন্যই পালিয়েছে কিন্তু ও প্রমাণ খোঁজার জন্য যে পথটা বেঁছে নিয়েছে সেটা নিতান্তই ভুল। তোমাকে আমি অনুরোধ মেহরাব যদি তোমার সাথে দেখা করতে আসে তাহলে তুমি ওকে বলো ও যেনো নিজেকে পুলিশের হাতে ধরা দেয়।
হয়েছে? আপনার আর কিছু বলার না থাকলে আমি কি যেতে পারি?
আচ্ছা মাহি আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় নাহ? আমি কিন্তু ইচ্ছে করলে তোমাকে বিয়ে করতে পারি কিন্তু আমি সেটা করবো নাহ কেননা জোর করে আর যায় হোক না কেনো ভালোবাসটা হয় নাহ। আমি তোমাকে সময় দিয়েছি তোমার থেকে দূরে থেকেছি তোমার যেনো কোনো সম্যসা নাহ হয় এই জন্য৷ আমি কি খুব খারাপ? একটু ভালোবাসলে কি হয়।
নেহালের কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি ওনি এসব কি বলছে। তবুও নিজেকে সংযত রেখে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম৷ আচ্ছা ভালোবাসা কি কোনো খেলার জিনিস? মানে আমার তো মনে হয় আপনার কাছে সেটাই। আপনার কথা শুনে এমন মনে হচ্ছে যেনো ভালোবাসা কোনো খেলনা আজকে একে ভালোবাসলাম তো কালকে আরেকজন কে। আপনি আমাকে কতদিন ধরে চেনেন? ১ বছর? আচ্ছা মানলাম যে আপনি আমায় ১ বছর ধরেই ভালোবাসেন কিন্তু আমি সেই যখন থেকে ভালোবাসা কি এটাও বুঝতাম না তখন থেকে মেহরাব ভাই কে ভালোবাসি। আপনি মাত্র ১ বছর ভালোবেসেই এমন করছেন তাহলে ভাবুন আমার এখন ঠিক কি করা উচিত। মিস্টার নেহাল প্লিজ রাগ করবেন নাহ আপনাকে একটা কথা বলি আপনি যে বলছেন আমাকে ভালোবাসেন আসলে এটা ভালোবাসা নয় এক প্রকার ভালোলাগা। ভালোবাসা তো তাকে বলে যাকে দেখলে মনের মধ্যে প্রশান্তি পাওয়া যাই। যদি সে সামনে থাকে তাহলে চারপাশে বাকি সব ফ্যাকাশে লাগে। আমি আপনাকে বলছি আপনার জীবনেও একদিন এমন কেউ আসবে যে আপনাকে ভালোবাসার আসল মানে কি সেটা বোঝাবে। তখন যদি আপনি বুঝতে পারেন আর এতোকিছুর পরেও এখন যদি আপনি বলেন যে আপনি আমাকেই বিয়ে করবেন। তাহলে আর আমার কিছু বলার নেই আপনি আমায় বিয়ে করতেই পারেন। আমি কিছু বলবো নাহ এমনকি আমিও আপনাকে বিয়ে করবো কিন্তু তারপর? এর ভবিষ্যৎ টা কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন কি যে আপনি যাকে বিয়ে করেছন তার মনে আপনি নয় আরেক জন এর বসবাস। আর এটা সারাজীবনের জন্য আপনি শুধু মাত্র একটা শরীলের সঙ্গে সংসার করবেন। আমি জানি আপনি হয়ত এটা চাইবেন নাহ। যাগগে আমার আর কিছু বলার নেই অনেক কিছু বলে ফেলাছি আমার মনেহয় আপনারও কিছু বলার নেই আমি তাহলে আসছি৷ এটা বলেই চলে আসলাম নেহাল এক ধ্যানে মাহির যাওয়ার দিকে ব্যাথিত চোখে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর কিছু একটা মনে পরতেই চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখা দিলো।
,,,,,
আজকে সকালেই সিমির কাছে একটা কার্ড দিয়ে গেছে হ্যাঁ কার্ডটা মাহিই দিয়ে গেছে ওতে লেখা আজকে সন্ধ্যায় মাহি আর নেহালের আংটি বদল হবে। এতে যেনো সিমি খুবি খুশি হয়েছে কার্ডটা নিয়ে কিছুক্ষণ নাচানাচি করে অবশেষে রেডি হতে বসল। সুন্দর করে একটা শাড়ি পরে চুল গুলি ছেড়ে মুখে ভারি মেকাপ করল যেনো আজকে তারই বিয়ে। সাজুগুজু শেষে ফোনটা হাতের পার্সের ভিতর পুরে বেরিয়ে পরল। গাড়িতে বসেই মনে মনে অনেক গুলো প্ল্যান করে ফেলল সিমি এর পর কি হবে আর কি কি করতে হবে। গাড়িটা এসে মাহিদের বাসার সামনে থামল সিমি গাড়ি থেকে নেমে অবাক চোখে চারিদিকে তাকাল। এই বাড়িতে অনুষ্ঠান অথচ বাইরে থেকে দেখে মনেই হচ্ছে নাহ। সবকিছু কেমন নিস্তব্ধ কোনো মেহমান এর আনাগোনা নেই৷ তবুও কোনো কিছুকে পাত্তা না দিয়ে সিমি ভিতরে চলে গেলো৷ দরজাও খোলা শুধু ভিড়ানো রয়েছে। সিমি আস্তে করে দরজাটা খুলে ভিতরে চলে গেলো বাইরে অমন থাকলেও ভিতরটা বেশ ভালো ভাবেই সাজানো দেখে সিমির মুখে হাসি ফুটে উঠল। তবে পুরো ডয়িং রুম ফাঁকা কেউ নেই তবে বাড়িটা যেহেতু সাজানো তখন অনুষ্ঠান তো হবেই। এটা ভেবেই আবারও নিজে নিজেই হেসে উঠল কিন্তু হাসিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো নাহ কেননা কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো ডয়িং রুমের আলো অফ হয়ে গেলো৷ আর পুরো ডয়িং রুমে কেউ নেই সিমি বিচলিত হয়ে মাহিকে ডাকতে লাগল কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ এলো নাহ। হঠাৎ করে উপর থেকে একটা আলো এসে সিমির মুখের উপর পড়ল আলোটা মুখে পড়তেই একহাত মুখের সামনে দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করল৷ হঠাৎই পাশে প্রজেক্টটরে কিছু ছবি ভেসে উঠল সেটা দেখেতো সিমির হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে গেলো। কেননা ছবিতে দেখা যাচ্ছে সিমি একটা লোককে টাকা দিচ্ছে তারপর একটা কয়েক মিনিটের ভিডিও যেটাতে দেখা যাচ্ছে সিমি লোকটাকে বলছে কি করতে হবে। কীভাবে মেহরাব কে ফাঁসাতে হবে আর কীভাবে ওর অফিসে নেশার জিনিস রাখতে হবে। ভিডিও টা শেষ হতেই পুরো ডয়িং রুমে আলো জ্বলে উঠল ততক্ষণে সিমির অবস্থা পুরো কাহিল ঘেমে নেয়ে একদম একাকার অবস্থা।সিঁড়ির দিকে তাকাতেই দেখল সিঁড়ি বেঁয়ে একে একে সবাই নেমে আসছে। সিমি আরো বেশি অবাক হলো ওদের সাথে মেহরাব কে দেখে মেহরাব মাহির হাত ধরে সিঁড়ি বেঁয়ে নামছে। দুজনের গায়েই রঙিন পোশাক আর ওদের পিছনেই নেহাল ও আছে। এটা দেখে সিমির অবস্থা আরো বেশি খারাপ টিসু দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে হয়ত এক বক্স টিসু শেষই করে ফেলছে। মেহরাব মাহির হাত ধরে নেমে এসে সিমির সামনে দাঁড়িয়ে বলল, কি হয়েছে মিস এসি চলছে তো তার পরেও এতো ঘামছেন কেনো? মাহি তোদের এসিটা এবার সত্যি বদলাতে হবে রে দেখছিস না মিস সিমি কীভাবে ঘামছে।
অঅঅ তা মিস সিমি জেলে কিন্তু কোনো এসি নেই তাহলে কি হবে? আমার তো আপনার কথা ভেবেই ভীষণ খারাপ লাগছে। না এবার সরকারের কাছে আবেদন করে দেখি আপনার জন্য একটা এসির ব্যবস্হা করতে পারি কিনা। নেহালে কথা শুনে সবাই হেসে দিলো সিমি ভয়ে ভয়ে বলল, এ এসব কি মিস্টার মেহরাব আমাকে এভাবে এখানে ডেকে এনে এভাবে হেনস্তা করার মানে কি। মাহি কি হচ্ছে এসব আমাকে এভাবে ডাকার মানে কি?
মাহি কি বলবে বলবো তো আমি না না করবো হাতে হেনকাপ পরিয়ে সোজা জেলে পুরে দিবো। উফ মেহরাব ভাই মিস সিমি কে একটু বুঝাই বলো নাহ বেচারি বোধহয় সব কিছু বুঝেও না বোঝার ভান করছে। নেহালের কথা শুনে মেহরাব বলল, তা মিস সিমি প্ল্যান টা তো ভালোই করেছিলেন কিন্তু কি বলুন তো আপনি না বড্ড কাঁচা খেলোয়ার আপনার সাথে খেলে মজা পেলাম নাহ। অল্পতেই ধরা পড়ে গেলেন।
এসব কি বলছেন কি মিস্টার মেহরাব আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি নাহ। আমি গেলাম আর মিস্টার নেহাল আপনি একজন আইনের লোক হয়েও আসামী সামনে থাকা সত্বেও আরেষ্ট করছেন না কেনো? সিমির কথা শুনে নেহাল রেগে সিমির দিকে তেড়ে গিয়ে বলল, কাকে আরেষ্ট করা উচিত আর কাকে বাইরে রাখা উচিত সেটা আমি খুব ভালো ভাবেই জানি মিস সিমি।
কেনো করলেন এমনটা মিস সিমি? আমি তো আপনাকে একজন ভালো মেয়ে বলে জানতাম কিন্তু আপনি এমনটা করলেন কেনো? বলুন। কেনো করেছেন? মেহরাব রেগে জোরে বলল সিমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কাঁদতে কাঁদতে চেঁচিয়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ আমিই এসব করেছি আমিই আপনাকে মিথ্যা বলে ফাঁসিয়েছি। আর আমি এসব জেনে বুঝে ইচ্ছে করেই করেছি কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি তাই৷ কিন্তু আপনি তো সেটা বোঝেনই নাহ। কতবার কতভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু আপনি তবুও আমার দিকে ফিরেও তাকাননি কেনো? প্রথমে ভেবেছি আমি আপনার থেকে বড় এই জন্য হয়ত আপনি আমাকে ভালোবাসতে পারছেন নাহ। তবে পরে দেখলাম নাহ আপনি আসলে এই মাহিকে ভালোবাসেন তাই। আর সেদিন আমি ইচ্ছে করেই ফোনে মাহিকে কথা শুনিয়েছি আর আপনার ফোনে তো মাহির নাম্বার মাই জান বলে সেভ করা সেদিনই আমার সন্দেহ হয় তারপর আপনাদের ফলো করতে থাকি। পরে জানতে পারি নেহাল মাহিকে ভালোবাসে বিয়ে করতে চাই। তাই আমিও একটা প্ল্যান বানিয়ে ফেললাম ভাবলাম আপনি কারাগারে থাকবেন ওদিকে নেহাল আর মাহির বিয়ে হয়ে যাবে তারপর আমি আপনাকে নির্দোষ প্রমাণ করে বের করে আনবো। তারপর আপনাকে আমার করতে আর কোনো বাঁধায় থাকবে নাহ। কিন্তু পুরোটা গোলমেলে হয়ে গেলো যে কীভাবে এটাই বুঝতে পারছি নাহ।
সিমির কথা শেষ হতেই মাহি ঠাস করে সিমির গালে একটা চড় মেড়ে দিলো। ওদিকে নেহাল নিজের গালে হাত রেখে মনে মনে বলছে, ওরে বাপরে এতো দেখি ধানি লঙ্কা আমিও তো কত বলেছি মেহরাব ভাই কে ভুলে যেতে ভাগ্যিস চড় টা আমার গালে পড়েনি। তবে আমি নিশ্চিত আমার গালেও এমন একটা পড়ত যদি আমিও ফালতু বেশি বাড়াবাড়ি করতাম তহলে।
আপনার সাহস কি করে হয় এমন যঘন্য একটা প্ল্যান করার নেহাল ভাইয়া একে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যান। আর এমন ব্যবস্হা করুন যাতে সহজে বেরোতে না পারে।
আরে মাহি এতো তাড়া কিসের আগেতো ওনাকে জানতে হবে কীভাবে ওনার এতো সুন্দর প্ল্যানে আমরা পানি ঢেলে দিলাম। মিস সিমি আপনি প্রথমেই একটা বড় ভুল করে ফেলেছেন তা হলো আপনি এটা ভুলে গেছিলেন যে অফিসে সিসি ক্যামেরা আছে। আর আপনি বোকার মতো আপনার কেবিনে লোকটাকে টাকা দিলেন। আর ২য় ভুল মাহিকে ওইসব ভুলভাল বলে আমাকে মাহির কাছে খারাপ বানানোর চেষ্টা করা। আর মেহরাব ভাই বাকিটা আমি বলছি তারপর নেহাল বলতে শুরু করল। আমাকে ফোনটাও আপনি করেছিলেন সেটা অবশ্য আমি পরে জানতে পেরেছিলাম। মাহি যদি আমাকে সেদিন ওই ভাবে কথাগুলো না বলতো আমি হয়ত নিজের ভুলটা বুঝতেই পারতাম নাহ। আমি সত্যি ভুল ছিলাম কতটা বোকা ছিলাম ফালতু ফালতু বাবা মা ভাইয়া বউমণি সবাইকে কষ্ট দিয়েছি সবাই আমাকে মাফ করে দিও।আর মেহরাব ভাই তুমিও। আচ্ছা তারপর আমি মাহির কাছে ক্ষমা চেয়ে মাহিকে বলি ও যেনো মেহরাব ভাই কে বলে আমার সাথে দেখা করতে। তো মেহরাব ভাই দেখা করলে আমাদের সব ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয় দেন আমরাও একটা প্ল্যান করি তার প্ল্যানটা হলো আপনাকে ফাঁসানো আর আপনি ফেঁসেও গেলেন।
তারপর নেহাল ফোন করতেই লেডি পুলিশ অফিসার এসে সিমিকে নিয়ে গেলো। তারপর সবাই সবার সাথে কথা বলছিলো তখনি নেহালের মনে পড়ল বাসায় মীরা একা আছে। এই ভেবে নেহাল কাউকে কিছু না বলে ফুরুত করে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। আর বাকি সবাই নেহালের যাওয়ার পথে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল কেননা কেউ জানে না নেহাল এভাবে কেনো হঠাৎ করে দৌড়ে চলে গেলো। কি এমন হলো যে নেহাল এভাবে দৌড়ে চলে গেলো কোনোত কারণ আছে। সবাই এটাই ভাবতে লাগল কি কারণ থাকতে পারে।
চলবে…..