অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ২৮
#তাসনিম_রাইসা
– সেদিন রাতে রাজের আর ঘুম হলো না। সারারাত অধরার স্মৃতিগুলো মনে করে কান্না করলো। যে মানুষটা কাল তার বুকে ছিল আজ মানুষটা কতটা দূরে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে আসলো। সত্যিই ভালোবাসা বড় অদ্ভূত।
এদিকে সকাল হতেই ঠিকানা নিয়ে অধরা যে বাসায় থাকে সেখানে চলে যায়। রাজ অধরার বাসায় গিয়েই দেখতে পারে তিয়াস আর অধরা একে অপরের পাশাপাশি বসে আছে।
– অধরা আর তিয়াসকে দেখে রাজের বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে!
– রাজ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই অধরা সিকুয়েটিকে ইশারা দিয়ে বলে রাজ থামাতে।
– একটা মেয়ে রাজের সামনে এসে দাঁড়ায়।
– এই তুমি সামনে এসে দাঁড়ালে কেন?
-ম্যাডাম পারমিশন দিয়েছে। সেজন্য দাঁড়িয়ে আছি।
– সরো আমার সামনে থেকে। জানো তোমার ম্যাডাম আমার কে?
– আপনি ম্যাডামের কি হোন তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
– সরবে তুমি? তোমার ম্যাডাম আমার স্ত্রী। আমি কার কাছে যাবো না যাবে সেটা তোমাকে বলতে হবে?
– রাজ মেয়েটা ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়ে অধরার সামনে আসতেই অধরা বললো,’ আপনি কি ভদ্রতা শিখেননি? ভদ্র লোকের বাড়িতে এসে কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন না? আপনাকে না বাসায় আসতে নিষেধ করেছিলো তবুও কেন আসলেন?
– অধরা প্লিজ এভাবে বলো না। আমি আমার স্ত্রীর কাছে আসছি। তুমিই বলো স্ত্রীর কাছে আসতে স্বামীর কি অনুমতি লাগে?
– বাহ রাজ আপনি কাল ডির্ভোস দিছেন সেটা কী ভুলে গেছেন? নাকি ডির্ভোস পেপার দেখাতে হবে? আর কি চান আপনি? কত কষ্ট দিতে চান? শান্তিতে দেশ ছাড়বো তাও কি যেতে দিবেন না?
– অধরা প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। তুমি ছাড়া আমার পৃথিবীতে কেউ নেই।
– ওলে বাবুতা তাই বুঝি? তা আজ তো আপনার আনিসাকে বিয়ে করার কথা। আচ্ছা আপনার জানেমন কোথায়? তারে নিয়ে আসেননি?
– অধরা এসব বলো না। আমি সহ্য করতে পারি না?
– বাহ শুনতেই এতো খারাপ লাগছে? তা রাত কাটাতে খারাপ লাগে না! জানো রাজ যেদিন সমুদ্রের পাড়ে আনিশা তোমাকে জড়িয়ে ধরে তখন আমার কেমন লেগেছিল তা তুমি কি ভেবে দেখেছো? আচ্ছা আমি যদি এখন তিয়াসকে জড়িয়ে ধরি তোমার কেমন লাগবে?
– ওহ্ তোমার তো কিছু লাগবে না! আচ্ছা তোমাকে অন্যরুমে রেখে যদি আমি আর তিয়াস যদি একসাথে রাত কাটায় তোমার কেমন ফিলিংস হবে?
– রাজ অধরার মুখে এ কথা শুনে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো।
– বাসার সবাই হা করে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
-বাহ রাজ বাহ আমার প্রতি তো আপনার কোন অধিকার নেই তবুও অন্যজনের সাথে রাত কাটানোর কথা শুনে চড় দিলেন? আর আপনি যে পুরো একটা রাত আনিশার সাথে কাটিয়েছেন আমার কেমন লাগছে? জানেন কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছিল আপনাকে আর আনিশাকে এক রুমে থাকতে দেখে। সারাটা রাত আমি চোখের চলে বুক ভাসিয়েছি। আপনার একটু সহানুভূতি হয়নি আমি চাইলে আপনার প্রতিটি চড়ের জবাব এখন দিতে পারি। কিন্তু না আপনাকে আমি ঘৃণা করি। একসময় যার মুখটা একবার দেখার জন্য পাগল ছিলাম। আজ তারই মুখ দেখতে আমার ঘৃণা হয়। প্লিজ আপনি আর আমার সামনে আসবেন না। এর পর আমার সামনে আসার চেষ্টা করলে দাঁড়োয়ান ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।
– রাজ মাথা নিচু করে অধরার সব কথা শুনছি! তবুও কিছু বলতে পারছে না।
– এমন সময় তিয়াস বললো,’ অধরা তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। যদি কিছু মনে না করো তাহলে বলি।
– হ্যাঁ বলো।
– অধরা সত্যি বলতে আমি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। মানুষ নিজের জীবনকে যতটা ভালোবাসে আমি তোমাকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসি। কেন এতটা ভালোবাসি জানি না। যেদিন তোমাকে প্রথমবার দেখি রাতের আবছা আলোয়। সেদিনই তোমার ভয়াত মুখের মায়ায় পড়ে যায়।
– অধরা কিছু বলছে না মুগ্ধ হয়ে তিয়াসের কথা শুনছে। তিয়াস আবারো বলতে লাগলো, ‘ জানো অধরা প্রতিটা মানুষ চাই তার প্রিয় মানুষটি সুখে থাকুক। তেমনি আমিও চায় আমার ভালোবাসার মানুষটি যেন সুখে থাকে সবসময়। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না। তুমি মুখে যতই বলই তোমার মন শুধু রাজকেই চায়। তাই আমি বলতে চাচ্ছিলাম রাজ ভাইয়া এখন উনার ভুল বুঝতে পারছে। তাই উনাকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের করে নেন। এতে দু’জনেই সুখী হবেন। আমি না হয় আপনাদের ভালো থাকার মাঝেই নিজের ভালো থাকাটা খুঁজে নিব। প্লিজ অধরা না করো না। কথাগুলো বলতে গিয়ে তিয়াসের চোখের কার্ণিশ বেয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
– অধরা তিয়াসের কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,’ তাই বুঝি তিয়াস আমি রাজকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নিলি তুমি হ্যাপি?
– সত্যি তুমি রাজ ভাইয়াকে ক্ষমা করে দিবে?
– অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে।
– অধরা তিয়াসের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে,’ আর কতে সেক্রিফাইজ করতে চাস তুই? আমি মনে হয় কিচ্ছু জানি না? আমার জন্য কতগুলো মেয়েকে রিজেক্ট করেছিস তুই? কেন অন্যের বউয়ের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে দশলাখ টাকা দিয়ে কিডন্যাপারদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেছিস? কেন আড়ালে কাঁদস? আমি মরে হয় বুঝি না তাই না? আর কাকে তুই ক্ষমা করে বুকে টেনে নিতে বলছিস? যে নিজের স্ত্রীকে পতিতা বলতে কাপর্ণ্য করেনি? যে নিজের সন্তানকে অস্বীকার করে জারজ বলতে পিছপা হয়নি তাকে?
– যে গর্ভবতী স্ত্রী রেখে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটায় তাকে? যে নরপিশাচটা আমার কলিজার টুকরাকে পৃথিবীর আলো দেখানোর আগে মেরে ফেলতে চায় তাকে কি তুই মেনে নিতে চাস? আর কেমন ভালোবাসিসস তুই আমারে? যার কারণে একটা চরিত্রহীনের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিস?
-তিয়াস কিছু বলছে না শুধু ফ্যাল-ফ্যাল করে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। অধরার চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে রাগে!
– এই রাজ তুই কেন যাচ্ছিস না? আর কি চাস আমার কাছে? নাকি আমার বাবার টাকা দেখে তোর মনে প্রেমের উদয় হলো? যখন শুনছিস কোটি টাকার মালিক তখন দৌড়ে কুকুরের মতো এসে পড়লি।
– রাজ কিছু বলছে না। মাথাটা নিচু করে আছে। তার কিছু বলার নেই। যতই ভালোবাসুক না কেন অধরাকে তার ভালোবাসা তার কাছে অভিনয় মনে হবে।
– এই বললাম না চলে যেতে তোর মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে না আমায়। আর কিভাবে বলবো?
– এদিকে ইশু এসে বললো,’ আপু আমাদের ফ্লাইট রাত আটটায়। আমি সবকিছু রেডি করে রাখবো। তুমি রেডি হয়ে নাও।
– অধরার যাওয়ার কথা শুনে রাজের বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো। মনে হলো কলিজাটা কেউ ছিড়ে ফেলছে। চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারছে না। তবুও বললো,’ অধরা তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। তুমি আমাকে যতো ইচ্ছা অপমান করো। যা ইচ্ছা তাই করো। দরকার পড়লে তোমাকে যতগুলো চড় দিয়েছি সবগুলো সবার সামনে আমাকে দাও। তবুও প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। আমি যে তোমাকে ছাড়া সত্যি মরে যাবো।
– অধরা রাজকে আর কিছু বললো না।সোজা উপরে চলে গেল। যাওয়ার আগে তাকে গার্ড দেওয়া মেয়েগুলোকে ইশারা দিয়ে বললো,’ রাজকে যেন বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়।”
– অধরা চলে গেলে রাজকে তারা বাসা থেকে বের করে দেয়।
– রাজ বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় যায় না। অধরার বাসার সামনেই বসে থাকে শুধু মাত্র একটি আশায় অধরা যদি তার মুখের দিকে চেয়ে সিদ্ধান্ত বদলায়।
– অধরা তার বাসার বেলকণীতে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকাতেই চমকে গেল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে এখনো রাজ বাহিরে বসে আছে। অধরা সেদিকে ভ্রক্ষেপ না করে রেডি হয়ে সাতটায় বাসা থেকে বের হতেই রাজ পথ আগলে দাঁড়ালো অধরার।
– অধরা আমি তোমাকে যেতে দিবো না।
– রাজ প্লিজ পাগলামী করো না। সামনে থেকে সরে যাও বলছি।
– আশ্চর্য! তুমি যাবে না কি পুলিশ ডাকবো?
– যা ইচ্ছা করো।
– অধরা রাজের পাশ কাটিয়ে গাড়িতে উঠতে গেলে, ‘ রাজ অধরার হাতটি ধরে ফেলে!
– অধরা রাগে সহ্য করতে না পেয়ে ঠাস করে রাজের গালে চড় বসিয়ে দেয়। একচড় দিয়ে পরে আরেক চড় দিতে গেলে তিয়াস অধরার হাতটা ধরে ফেলে!
– অধরা কি করছো এসব? রাজ ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে। আমি প্রমিজ করছি আজকের পর থেকে আমাকে আর তোমাদের মাঝে দেখবে না।
– রাজ চোখ বন্ধ করে আছে। সকলের সামনে অধরা রাজের গালে চড় বসিয়ে দেয়। চড়টা যেন রাজের গালে নয় কলিজায় লেগেছে।
– হঠাৎঅধরার ফোনটা বেজে উঠে! অধরা ফোনটা রিসিভ করতেও ওপাশ থেকে মেয়ে তিয়াসের নামে কি যেন বলে। অধরার হাতটা কাঁপতে কাঁপতে ফোনটা মাটিতে পড়ে যায়। অধরা তিয়াসের শার্টের কলার ধরে বলতে লাগে,’ এই তুই আমাকে রাজের ”’
চলবে”””