হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-১২+১৩

0
358

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে — [১২]
#নিহা (মুনিয়া)
______________________

-‘ কি খুঁজছিস ওরম করে? কোনো কিছু হারিয়ে গেছে?’

-‘ না তো। হারায়নি। খুঁজে পেয়েছি আমি।’

উনার কাছ থেকে যথা সম্ভব দূরে চলে গেলাম। এখন কাছে থাকলে উনি একশো একটা প্রশ্ন করতেন যার জন্য আমার ধরা খাওয়ার আশংকা ছিলো। আমি চুপচাপ রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করতে লাগলাম। এক পর্যায়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় ঘুমালাম। আমার পাশেই আহান শুয়ে আছে। আজকে উনি কোলবালিশ সরিয়ে আমার কাছে আসেনি। আমিও সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে চুপ করে শুয়ে আছি।
(আমি ব্যতীত আমার গল্প অন্য কোনো গ্রুপ বা আইডিতো পোস্ট করা নিষিদ্ধ)

-‘ নুড়ি পাথর তুই কি আমাকে নিজের স্বামী হিসাবে মেনে নিয়েছিস এখনো অব্দি?’

উনার প্রশ্নে অবাক হলাম। চক্ষুজোড়া বন্ধ করে ফেললাম। কি উত্তর দিবো আমি? উত্তর দিবো যে আমি উনাকে ভালোবাসি? কিন্তু উনি তো বাসেন না। কঠোর হলাম। গলায় বেশ দৃঢ় কন্ঠস্বর আনলাম।

-‘ সেটা আপনার দেখতে হবে না নিশ্চয়ই? আমি আপনাকে স্বামী হিসাবে মেনে না নিলেও আপনি তো নিলাকে ভালোবাসেনই তাহলে এতো কথা কেনো বলছেন? ‘

-‘ ইচ্ছে হলো বলতে। যতোই হউক এই যে আমরা একসঙ্গে থাকছি, ঘুমাচ্ছি সেটা তো কেবল এই স্বামী, স্ত্রীর সম্পর্কের রেশ ধরেই। যেদিন এই সম্পর্ক থাকবে না তখন তো তুই আমার কেউ নস আমিও তোর কউ থাকবো না। ঠিক না বল?’

উনার কথায় মনঃক্ষুণ্ন হলো। কষ্টরা দলা পাকিয়ে কান্না রুপ নিয়ে অশ্রু কনা দু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। মানে উনার কাছে এই সম্পর্কের কোনো মূল্যই নেই? আসলে তঁ এই সম্পর্কটা তো নাম মাত্র সম্পর্ক এর বাহিরেও কিছু নেই ভেতরেও কিছু নেই। হয়তো আশা আমিই করছি।
_________________

মৃদুলা ঘুমিয়ে আছে বেশ উল্টো ভাবে। মাথার চুলগুলো তেল দেয় না যার দরুন চুলগুলো খোঁপা থেকে খুলে গিয়েছে। প্লাজুটা একটু উপরে ওঠে গেছে বেশ। সোজা হয়ে না শুয়ে কেমন টেরা ব্যাকা ভাবে শুয়ে আছে। আহান বেশ ভালো করেই মৃদুলাকে পর্যবেক্ষন করছে।

-‘ মৃদুলা রানী! কবে যে বুঝবে তুমিই আমার মিলা। আর তোমাকেই আমি পাঁচ বছর ধরে ভালোবেসে আসছি। এখনো অব্দি তো কিছুই বুঝলে না। নিলাকে দিয়ে কতো কিছু করেছি যাতে তোমার মন বুঝতে পারি আফসোস তাও পারছি না! না জানি যখন বুঝো তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। শেষ মেষ না হারিয়ে চাইতে হয় তোমাকে।’

আহান চলে যায় মৃদুলাকে রেখে।

ঘুম ভেঙে ওঠতেই নিলা নামক বি’ষা’ক্ত মানুষটিকে নিজের চোখের সামনে দেখতে পেয়েই মনে হচ্ছিলো যেনো উনাকে একেবারে উপরে পাঠিয়ে দিই! কি আছে এমন এই মেয়ের মধ্যে যার জন্য আহান আমার দিকে ফিরেও তাকায় না? এসব ভাবনা বাদ দিলাম। কিন্তু এই সাত সকালে এই মানবীর এখানে কি?

-‘ কিরে ঘুম ভেঙেছে তোর?’

-‘ ঘুম না ভাঙলে কি ওঠে বসতাম না কি? ‘

কথাটা বেশ রে’গেই বললাম। উত্তরটাও দেয়নি সোজাভাবে। কি করবো এই নিলাকে দেখলে তো কোনো কিছুই ঠিক থাকে না আমার!

-‘ সকাল সকালই হাওয়া গ’রম?’

-‘ বাজে কথা বলবেন না। আমাকে আরো একটু আগে ডাক দিতে পারতেন? ‘

-‘ তুই ঘুমাচ্ছিলিস তাই। ইদানীং তো তোকে রাত্রেবেলা কোনো ডির্স্টাবই করি না তাও তোর এত্তো ঘুম!’

আহানের কথা শুনে নিলার কাশি ওঠে গেলো। আমি নিলার এরূপ হঠাৎ কাশির মানে বুঝতে অক্ষম হলাম।

-‘ আর কথা বাড়াস না প্লিজ। এবার ওঠে রেডি হবি তো নাকি ভার্সিটি যেতে হবে।’

-‘ বাজার করে এনেছেন তো?’

-‘ সবকিছুই করা আছে। কিন্তু তুই যদি এখন রান্না করতে যাস তো দেরি হয়ে যাবে। আমি জ্যাম পাউরুটি খেয়েছি তুইও আপাততো ওটাই খেয়ে নে।’

এতোক্ষণ খেয়ালই ছিলো না নিলা এখানে উপস্থিত আছো? আসলে আমি আর আহান কথা বলতে বলতে এতো কথা বলি যে বেচারি নিলার কথা ভুলেই গেছি! তুমি বসো আমি তোমাকেও জ্যাম পাউরুটি দিচ্ছি। ‘

-‘ আমার ওসব কিছু লাগবে না। আমি আহানের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম তো এখন চলে যাচ্ছি। ‘

নিলার কথা বলার ধরন আমার মোটেও সুবিধার মনে হলো না। কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে যখনি আসে। আমি আপাততো সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চললাম।
_________________

-‘ ওদের এই সবসময় একসঙ্গে চিপকে থাকা এসব কিন্তু আমার বেশিদিন সহ্য হচ্ছে না! তুমি কি কিছু করবে নাকি আমিই এর ব্যবস্থা নিবো?’

ফোনের ওপাশ থেকে কালো জ্যাকেট পরা এক লোক প্রতুউত্তর করলো।

-‘ বেশি দিন তো নয় আর তো মাত্র দেড় মাস আছে তারপরই দেখি মৃদুলা কি সত্যিই আহানকে বিয়ে করে নাকি তোমার হাতে তুলে দেয়।’

-‘ আমার হাতে তুলে দিতে যাবে কোন দুঃখে? কি বলছো কি তুমি?’

-‘ আরে তুমি কি প্ল্যান সবকিছু ভুলে গেলে নাকি বলোতো? আহানের প্ল্যান হলো সে তোমার কথা বলে মৃদুলাকে জে’লা’সি ফিল করিয়ে বুঝবে মৃদুলা তাকে আদৌ ভালোবাসে নাকি সেই পাঁচ বছর আগের মতনই ফিরিয়ে দিবে! আহানের এটা প্ল্যান কিন্তু মৃদুলার কাছে তো তুমি আহানের ভালোবাসা। আহান তো মিলাকে পাঁচটা বছর ধরে ভালোবাসে কিন্তু মৃদুলাকেই যে মিলা বলে সেটা তো মৃদুলা বুঝতে পারেনি। আহান যে পাঁচ বছর ধরে মৃদুলাকেই ভালোবাসে এটা তো ঘুনাক্ষরেও এতোদিন বুঝতে পারলো না মৃদুলা। মৃদুলার কাছে তো তুমিই আহানের ভালোবাসা। আর ওর যা ভাব ভঙ্গি দেখছি ও আহানকে ভালোবাসে না! দেড় মাস পরে দেখবে ঠিক ও তোমার হাতেই তুলে দিবে আহানকে।’

নিলার মুখে তৃপ্তির হাসি। যেনো এই কথাগুলোই শোনার জন্য সে এতোদিন অপেক্ষা করে এসেছে।

-‘ তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে আমারও পাঁচ বছরের সাধনা পূর্ন হবে! আহান মৃদুলার কাছ থেকে প্র’ত্যা’খান হয়ে আমাদের এখানে এসেছিলো যখন তখন আমিই ওকে সামলিয়েছি, বুঝিয়েছি। এক সময় ওকে বোঝাতে বোঝাতে ওর সঙ্গে থাকতে থাকতে ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি ওর প্রতি। কখনো প্রকাশ করিনি ওর সঙ্গে। আহান তো আমাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে! ভেবেছিলাম বাংলাদেশে এসে আমরা বিয়ে করে সেটেল হবো কিন্তু যখন দেখলাম বাংলাদেশে ওর পুরনো ক্ষ’ত আবারো তাজা হয়েছে মানে মৃদুলাকে আবারো মনে জায়গা দিয়েছে তখন ভাবলাম এক হয়ে যাক ওরা দু’জন। কিন্তু আমি এটা ভাবলেও বাস্তবে মেনে নিতে পারিনি। আমি মৃদুলার সঙ্গে আহানকে কোনো দিনই মেনে নিতে পারবো না। তোমার কথা অনুযায়ী যদি মৃদুলা নিজ থেকে সরে যায় তো ভালো নয়তো ওকেই সরিয়ে****

-‘ ভুলেও এসব চিন্তা করবে না আর বাস্তবে করার কথা তো ভুলেও না বুঝেছো? মৃদুলাকে পাবার জন্য আমি এতোকিছু।’

ফোনের অপর প্রান্তের থাকা লোকটির কথা শুনে নিলা ঘাবড়ে যায়। আমতা আমতা করে ঠিকআছে বলে ফোন রেখে দেয়। অপেক্ষা করতে থাকে কবে দেড় মাস পূর্ন হবে আর ঠিক কবে আহানকে নিজের করে পাবে। ____________________________

ভার্সিটি থেকে এসে একটু এগিয়ে আহানের জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু তার তো কোনো পাত্তাই নেই! এদিকে এই কাঠফাটা রোদ্রে দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্ট কর হয়ে ওঠছে। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সামাদ। আমাকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়লেন।

-‘ মৃদুলা নতুন বাইক কিনেছি চলো তোমাকে ছেড়ে দিই বাসায়? ‘

-‘ আপনি ভুল করছেন। আমি তো এখন আর বাপের বাড়ি থাকি না। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে থাকি।’

-‘ কিচ্ছু হবে না তুমি ঠিকানা বলে দাও আমি তোমাকে সেইখানেই পৌঁছে দিচ্ছি। এই রৌদ্রে আর কতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে বলো?’

সত্যিই তো এই রৌদ্রে আর কতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো আমি। সামাদ যখন এসেছে তখন চলে যাই ওর সঙ্গে না হয় একদিন।

মৃদুলা যেই না সিটে বসতে যাবে ওমনি একজন মৃদুলার হাত ধরে টান দিলো! টান সামলাতে না পেরে মৃদুলা গিয়ে বলিষ্ঠ লোকটির গায়ের উপর পড়লো। মৃদুলা বেশ ভালো করেই দেখতে পেলো লোকটা আহান!

-‘ আমার বউকে সাহায্য করতে চেয়েছেন তাই অশেষ ধন্যবাদ। কিন্তু কি বলুন তো? বউটা তো আমার তাই আমি আমার বউকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো আপনি যেতে পারেন। ‘

সামাদ কিছু না বলে আহানের দিকে এক প্রকার তাকিয়ে চলে গেলো। আহান মৃদুলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

-‘ আমার জন্য একটু অপেক্ষা করলে কি হতো তোর?’

-‘ একটু কই? পুরো আধ ঘন্টা যাবত এই রৌদ্রের মধ্যে অপেক্ষা করেছি আমি।’

-‘ তো কি হয়েছে? আমি আসিনি বলে তুই ওই ছেলের বাইকে বসবি? গাড়িতে হলে না হয় কথা ছিলো কিন্তু বাইকে?’

বুজলাম উনি রে’গে গেছে,,

-‘ আরে বাইক কি গাড়ি নয় নাকি আজব তো?’

-‘ গাড়িতে আলাদা সিট আছে বাইকে আছে তোর আলাদা সিট? চিপকে বসতে হতো ওই লোকের সঙ্গে।’

বুঝতে পারলাম উনার জে’লা’সি হচ্ছে! হউক এবার উনিও বুঝেন যখন নিলার সঙ্গে উনি এরকম করে তখন আমার কিরকম লাগে। উনাকে ক্ষে’পা’তে আরো একটু বললাম….

-‘ তো বসলে আমি বসতাম আপনার কি? আপনার তো নিলা আছে। সে তো বসেনি আর।’

-‘ তুই আমার বউ হস! আমার বউ অন্যের বাইকে চিপকে বসতে যাবে কেনো? আর মিলার কথা বলছিস ও তো চব্বিশ ঘন্টাই আমার চোখের সামনে থাকে। ওর সঙ্গে যখন খুশি যা ইচ্ছে সব করতে পারি।’

-‘ তো যান উনার কাছে যান!’

এ তো দেখছি হিতে বিপরীত হয়ে গেলো। কোথায় উনাকে রা’গা’বো এখন দেখছি আমারই রা’গ ওঠে যাচ্ছে! উনার সঙ্গে রা’গ করে হেঁটে চললাম খোলা রাস্তায়!

#চলবে?

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে –[১৩]
#নিহা (মুনিয়া)
___________________

দেখতে দেখতে সময় কেটে গেছে দুই মাস। আহান এই দুই মাসে বিভিন্ন ভাবে মৃদুলার পরিক্ষা নিয়েছে। দেখেছে মৃদুলার মনে তার জন্য কোনো ভালোবাসা আছে কিনা কিন্তু মৃদুলা প্রতিবারই এরকম করেছে আহান দ্বিধায় পড়ে যায় আদৌও মৃদুলা আহানকে ভালোবাসে নাকি ভালোবাসে না! এর মাঝখান দিয়ে মৃদুলার পরিক্ষাও ছিলো যার দরুন আহান আর ঘাটায়নি মৃদুলাকে। আগের মতন ভার্সিটি, বাসা, পড়াশোনা এভাবেই দিন কেটেছে মৃদুলা আর আহানের। তবে মৃদুলার পরিক্ষা শেষ হয়েছে কালকে। আহানের পরিবার বিয়ের জন্য চা’প দিচ্ছিলো। কিন্তু কালকে উনারা বললো আর কিছুদিন পরেই নাকি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান! সবমিলিয়ে মৃদুলা আর আহানের অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার যে সময় ছিলো অলরেডি সরই সময় থেকে এক মাস দেরি হয়ে গিয়েছে। ওদের বিয়ের বয়স চার মাস চলছে। ওদিকে আহান আকুপাকু করছে মৃদুলার মুখ থেকে সত্যি টা জানার জন্য। নিলা কে দিয়ে এতোকিছু করেও যখন মৃদুলা কিছুইতে কিছু স্বীকার হচ্ছে না তখন আহান সিদ্ধান্ত নিলো সে এমনিতেই সরাসরি সবটা বলে দিবে। সেই মতনই মৃদুলার ফেরার অপেক্ষা করছে।

ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে আহানের কথা মতন বাকিটুকু পথ উনার সঙ্গে করেই যায়। তাই আজকেও রিক্সা থেকে নেমে উনার সঙ্গে যাবো বলে নেমেছি।

-‘ আহান তুমি এখনো সত্যিই কি ওকে আগের মতনই ভালোবাসো বলো?’

-‘ স’ন্দে’হ আছে? আমি ভালোবাসি এবং ভালোবেসেছি আজীবন ভালোই বেসে যাবো। চাইলেও এই ভালোবাসা আমি আটকাতে পারবো না কারন আমি যে বড্ডই বেশি ভালোবাসি। ‘

রিক্সা থেকে নেমেই আহানের এরূপ ভালোবাসি ভালোবাসি শুনতে পেলাম। আর সামনে থাকা ব্যাক্তিটি উনার নিলা! আমি উনার পেছনে আছি তাই উনি আমাকে দেখতে পেলেন না কিন্তু নিলা ঠিকই দেখতে পেলেন। আমাকে দেখেই তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো নিমিষেই….! আহান সঙ্গে সঙ্গে আমার দিক ফিরে তাকালো! আমি রা’গ, কষ্ট দু’টো মিলিয়ে যেনো পাথর হয়ে গেছি সত্যি সত্যি! এতোই ভালোবাসেন উনি নিলা আপুকে? আমি সেদিন ডির্ভোস পেপার রেডি করিয়ে রেখেছিলাম আমার এক বন্ধুকে দিয়ে। ও রেডি করে পেপারও দিয়ে দিয়েছে আমার হাতে কিন্তু আমি সই করিনি আর না আহানকে জানিয়েছি এ সম্পর্কে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো উনি বিয়েটাকে মেনে নিবেন। তখন রা’গের বশে ডির্ভোস পেপার করে রেখেছিলাম ভেবেছি লাগবে না কিন্তু এখন তো দেখছি ডির্ভোস পেপারগুলো কাজে আসবে। অনেক হয়েছে আর মেনে নিতে পারছি না আমি! এই কয়েক মাসে উনার আর আমার মধ্যে কোনো উন্নতি হয়নি বরং উনি সবসময়ই আ’ঠার মতন লেগে ছিলো নিলার পিছু পিছু…. সারাদিন ভার্সিটি করে এসে বিকেলের নিলার সঙ্গে আড্ডা দিতো বা ঘুরতে যেতো নিয়ম করে। আমি সবটা দেখতাম আর উনিও এরম করতেন যেনো সবটা আমাকে দেখিয়েই করাতো চায়। তারপর রাত্রিবেলা এসে পাশে শুয়ে পড়তো শেষ কাহিনী এভাবেই দিনগুলো কাঁটিয়েছেন উনি! কই নিলা আসার আগে বিয়ের তিন চার দিন তো উনি আমাকে হুটহাট করে জড়িয়ে ধরতেন সেগুলোও এখন করেন না!
পুরাটাই বদলে গেছে আহান। আমি তো ভেবেছিলাম বিয়ের মতন বন্ধনে যখন বাঁধা পড়েছি সেই বাঁধন থেকে এতো সহজে ছাড়া পাওয়া যাবে না। কিন্তু যার মনে এখনো অন্য কেউ বিচরন করছে তার সঙ্গে থেকে কি করবো আমি? নিজে মুখ ভে’ঙে উনাকে কখনো কিছু বলিনি কারন উনি নিলাকে ভালোবাসতেন বলে কিন্তু বোঝানোর চেষ্টা করেছি যখন উনি নিলার সঙ্গে থাকতো। হয়তো উনি বুঝেনি! নিজেকে স্বাভাবিক করলাম।

আমি আহানের সামনে যেতেই উনি জিগেস করলেন

-‘ তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো বলতো? কিছু শুনেছিস?’

-‘ হুম শুনেছি তো! যা শোনার সবটা শুনেছি আমি। ভালোবাসিও শুনেছি! আমি বাড়ি যাচ্ছি আর কিছু বলার নেই আমার। আপনারা নিজেদের মতন করে টাইম স্পেন করুন।’

কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে এলাম রিক্সায় করে। আর তো বাকি নেই কোনো কিছুর! আজকেই সব মিটমাট হবে। তারপরে উনাকে আর বাঁধা দেবার কেউই থাকবে না!

ওদিকে আহান দাঁড়িয়ে আছে! বুঝতে পারছে না ঠিক কি হলো। মৃদুলা কি তাকে ভুল বুঝলো?..

-‘ আহান তুমি এতো চিন্তা করো না তো। কিচ্ছু হবে না।’

-‘ এবার অনেক হয়েছে নিলা। এবার থামা উচিত। জানিনা মৃদুলা কি শুনছে ও যদি উল্টোটা ভাবে? আর ক’দিন পর আমাদের বিয়ে। আমাদের এবার থামা উচিত। অনেক হয়েছে এবার থেকে এই যে তুমি আমার মিলা যাকে আমি পাঁচ বছর ধরে ভালোবাসছি এই নাটকটা বন্ধ করা উচিত। মৃদুলা আমাকে ভালোবাসুক আর নাই বাসুক আমি তো ওকে ভালোবেসে এসেছি এটাই যথেষ্ট। আমি ঠিক ওকে আপন করে নিতে পারবো। তুমি আর আমাদের মাঝখানে এসো না। ‘

আহান চলে গেলো মৃদুলার কাছে। বাড়িতে গিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজলো কিন্তু মৃদুলাকে পেলো না। ওদিকে মৃদুলা বাড়িতে না গিয়ে নদির পাড়ে বসে রয়েছে। নদীতে মাঝিরা নৌকা নিয়ে বসে আছে। মৃদুলা পাড়ে বসে হাত দিয়ে পানিগুলো ছুঁইয়ে দিলো। কিছুক্ষণ নিথর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আচমকাই কাঁদতে লাগলো।

-‘ কেনো এরকম টা হলো আমার সঙ্গে? এই নদীর সচ্ছ পানির মতন আমার জীবনটা কেনো সচ্ছ হলো না? কি করবো আমি? চলে যাবো ওদের একা ছেড়ে? কিন্তু আহানের সঙ্গে তো এখনো আমার শেষ বোঝাপড়া টা বাকি রয়ে গেছ। ‘

হাত ব্যাগ থেকে আহানের নম্বরে ফোন দিলো মৃদুলা একবার রিং হবার পরেই আহান ফোন রিসিভ করলো। রিসিভ করেই হন্তদন্ত হয়ে গেলো।

-‘ নুড়ি পাথর কোথায় তুই? বাড়িতে যাস নি কোথায় গেলি? আমাকে সবটা বলার সুযোগ দে একবার। ‘

-‘ আজকে আপনি নন। বলবো আমি। যদি শুনতে চান তাহলে বাড়িতে চলে আসুন। আমি বাড়ি আসছি। ‘

মৃদুলা ফোন কেটে দেয়। বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। নদির ঘাটটা বাসা থেকে মিনিট দশেকের দুরত্বে ছিলো যার দরুন মৃদুলা আহানের আগে বাড়িতে পৌঁছে যায়। বাড়িতে পৌঁছেই মৃদুলা ড্রয়ার থেকে ডির্ভোস পেপার টা বের করে। সই করার জন্য কলম নেয় হাতে। কিছু একটা ভেবে সই না করেই পেপারটা হাতে নিয়ে বসে রইলো আহানের অপেক্ষায়। আহানও বাড়িতে ঢুকেই দেখে মৃদুলা খাটের উপর বসে রয়েছে স্থির হয়ে।

-‘ নুড়ি পাথর তুই ভুল বুঝছিস আমাকে। আমিতো ওই কথাগুলো নিলাকে বলছিলাম*

আহানকে থামিয়ে মৃদুলা বলা শুরু করলো….

-‘ হ্যাঁ আমি জানি তো আপনি ওগুলো নিলাকে বলছিলেন। ঠিক পাঁচ বছর আগের রাত্রে যেমন করে নিলাকে কথাগুলো বলে আমার কাছে মিথ্যা ভালোবাসা নিয়ে এসেছিলেন ঠিক তেমন করে আজকেও এসেছেন ভুজুম ভাজুম বোঝাতে। ‘

মৃদুলার কথায় আহানের রা’গ ওঠলেও পরিস্থিতি বুঝে আহান শান্ত রইলো।

-‘ সেদিন রাত্রে তোকে যা বলেছিলাম কিচ্ছু ভুল ছিলো না। তুই সেদিনও আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিস নি আজকে অন্ততো বলার সুযোগ টা দে। ‘

-‘ সবকিছু শুনেছি আমি আহান! পাঁচ বছর আগেও শুনেছি আর এখনো একটু আগে শুনেছি।’

-‘ শোনা আর বোঝার ক্ষেত্রেও কিন্তু ভুল হতে পারে নুড়ি পাথর। ‘

-‘ স্পষ্ট করে বলুন।’

-‘ বলবো কিন্তু তার আগে তুই আজকে সোজা সাপ্টা উত্তর দে তুই আমাকে ভালোবাসিস কিনা? অনেক হয়েছে এই নিলার কাহিনী! এতে ভুল আমারই আমি ওকে এনে ভুল করেছি তবে ভুল শোধরানোর সুযোগ দে এবার, আমাকে বোঝানোর সুযোগ দে দয়া করে। পাঁচ বছর আগের কাহিনী পুনরাবৃত্তি ঘটাস না। আগের বার ফিরে এসেছি এবার আমি কিন্তু আর ফিরবো না! তাই বলে দে সোজাসুজি। তুই আমাকে ভালোবাসিস? সামনে তিন চারদিনের দিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে। সেই অনুযায়ী টুকটাক কাজও শুরু করে দিয়েছে চাচ্চুরা। তুই সেই বিয়েটা করবি তো? আমার সঙ্গে থাকবি তো? আমাকে ভালোবাসে তো আমার নুড়ি পাথর? ‘

আহানের কথা শুনে সমস্ত রা’গ উবে গেলো। উনার কথা শুনে মনে হচ্ছে না উনি আদৌও নিলাকে ভালোবাসেন! কারন উনার পুরো কথা জুড়ে শুধু উনার নুড়ি পাথরই আছে। কি জবাব দিবো আমি? বলে দিবো যে ভালোবাসি উনাকে? নাকি নিজের কানে শোনা, চোখে দেখা জিনিশটা ভুল? অন্যের ভালোবাসা কে’ড়ে নিবো? আদৌও কি বলবো “আপনার নুড়ি পাথর ও আপনাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে?’

#চলব