বৃষ্টি তোমাকে দিলাম পর্ব-১৩+১৪

0
349

#বৃষ্টি_তোমাকে_দিলাম
পর্ব-১৩

অবশেষে আমার মন থিতু হলো। ঠিক করতে পারলাম আমি আসলে কী চাই। সত্যি বলতে, এতদিন দুজনের মাঝে পড়ে থাকতে থাকতে নিজেরও অসহ্য লাগছিল। সত্যিকারের নদীতে ছুটে চলা দুই নৌকোর মাঝে পিষে যাওয়ার মতো।

তবে স্বপক্ষে কিছু বলারও আছে আমার। দু’জনের সাথেই আমি কথা বলতাম বন্ধু হিসেবে। বেশি কিছু নয়। তাই আমি তাদের ঘোরাচ্ছি কথাটা একেবারেই সত্যি নয়। এখন আমাকে রাশিক বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, এবার সঠিকভাবে ভাবার একটা পথ পাওয়া গেছি। তবে পথটা পেয়েছি উল্টোদিকে। মানে রাশিকের পথ ধরে সঠিক পথটা চিনেছি, যেটা বর্ষণের পথ।

শুরু থেকে বলি।

সেদিন বর্ষণের সাথে ঝগড়া মিটে যাওয়ার পর আবার আগের মতো কথা হতে শুরু করল। দেখতে দেখতে কুরবানির ঈদ চলে এলো। আমি আবার ছুটিতে বাড়ি ফিরলাম। বাড়ির কাছাকাছি এসে দেখি বর্ষণ তার বোনদুটোকে দুই কান ধরে নিয়ে যাচ্ছে। দেখেই হেসে ফেললাম৷ ওদের সামনে গিয়ে রিকশা ছেড়ে দিয়ে নেমে পড়লাম।

জিজ্ঞেস করলাম, “ঘটনা কী?”

বর্ষণ রিনির কান ছেড়ে নিজের কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, “দুটোই ক্লাসে সব পরীক্ষায় ফেল করেছে। খাতায় লেখেইনি, পাশ করবে কেমন করে? জিজ্ঞেস করাতে এখন বলে লিখতে নাকি ইচ্ছে হয়নি। এখন ওদের নিয়ে যাচ্ছি স্কুলের মাঠে সবার সামনে বেঁধে রাখব।”

দুটিতে তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিল। বর্ষণও একটু অন্যমনষ্ক হয়ে পড়েছিল, সেই সুযোগে এক দৌড়ে কোথায় চলে গেল দুটিতে আর দেখা পাওয়া গেল না।

আমি একটু সৌজন্য বিনিময় শেষে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

হঠাৎ মনে হলো, আমার খুব শান্তি লাগছে, আনন্দ লাগছে। অনেকদিনের অস্থিরতা দূর হয়েছে। বর্ষণকে কতদিন পর দেখলাম! কতদিন পর! মনটা এতদিন কোথায় যেন আটকে পড়েছিল। আমি মুক্তি পেলাম এবার।

ঈদের দিন বিকেলে বাড়িতে বলে দু’জন ঘুরতে গেলাম। সারাদিন সে গরু কাটাকুটির কাজ করেছে বলে একটু ক্লান্ত৷ তবু আমাকে নিয়ে বের হয়েছে। আমরা আজ গেলাম স্কুলের মাঠের দিকে। পিচঢালা নির্জন পথটা চলে গেছে অনেকদূর। একধারে ঘন ঝোপঝাড়।

আমার বেশ লাগছিল! আমি বর্ষণকে বললাম, “একটা কথা বলব তোমায়।”

সে বলল, “বলো।”

“ফেসবুকে একজনের সাথে আমার অনেক কথা হয়। সে আমাকে প্রপোজ করেছে।”

আমি স্পষ্ট খেয়াল করলাম বর্ষণের মুখ কালো হয়ে গেছে। বেশ ক্ষুন্ন গলায় বলল, “তুমি কী বললে?”

“কিছু বলিনি এখনো।”

“কী বলতে চাও?”

“জানি না।”

“তার মানে মানা করবে না?”

ওর অস্থিরতা দেখে আমি হেসে ফেললাম। “না করব কেন? আমার তো কোনো পিছুটান নেই।”

বর্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, “নেই?”

“আছে?”

“তুমি বড্ড নিষ্ঠুর ধারা! করো যা খুশি।”

“তুমি আমাকে কী করতে বলো?”

“কিচ্ছু না। তোমার লাইফে আমি কী বলব?”

“ছেলেটার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে না?”

“আগ্রহ নেই। তোমার কি ওকে খুব পছন্দ?”

“মানুষ হিসেবে পছন্দ, তবে সারাজীবন থাকতে পারব কি না জানি না।”

এতক্ষণে তার মুখের অন্ধকার দূর হলো। বলল, “তাকেই বিয়ে করা উচিত যে তোমাকে সারাজীবন ভালো রাখবে।”

“এমন কাউকে কোথায় পাব?”

সে উত্তর না দিয়ে সোজা হাঁটতে লাগল। আমি গেলাম পিছু পিছু। আকাশটা একটু আঁধার করে আসছে। ভালো বাতাস দিচ্ছে। সে পথের পাশ থেকে একটা জংলি ল্যান্টানার গোলাপী রঙের ফুল ছিঁড়ে আমার হাতে দিয়ে বলল, “চোখ থাকলে সব চেনা যায়৷ চিনতে শেখো।”

“তুমি কি আমাকে প্রপোজ করছ বর্ষণ?” বুঝলাম বলতে বলতে রক্তাভ হয়ে গেছে আমার মুখ।

সে অসম্ভব গভীর গলায় বলল, “প্রেম নিবেদন সবসময় করতে হবে তা নয়। চোখে চোখে অনেক কথা হয়ে যায় যা মুখের কথার চাইতেও অনেক স্পষ্ট।”

দুজনের থেকেই ফুল পেলাম। কি অদ্ভুত কান্ড! অবশ্য অত বেশি অবাক হবারও কিছু নেই। চিরকাল এটাই হয়ে আসছে, ছেলেরা মেয়েদের ফুল দেবে।


রাতে রাশিককে বললাম তাকে আমি বিয়ে করতে পারব না। বলতে খুব খারাপ লাগল, কিন্তু আমার আর কিছুই করার নেই।

রাশিক একবারের জন্যও হয়তো ভাবেনি আমি তাকে মানা করে দেব। সে অনেকক্ষণ পর বলল, “আপনি কি ভেবে বলছেন?”

“হ্যাঁ। আপনার কথা রাখতে পারছি না বলে আমি দুঃখিত।”

রাশিক আবারও জিজ্ঞেস করল, “আর ইউ শিওর? মজা করছেন না তো?”

জোর দিয়েই বললাম, “না।”

“ওহ।” আবার কিছু সময়ের জন্য বাক্যহারা হয়ে গেল রাশিক। আবছাভাবে বলল, “সেদিন আমি কি ভুল কিছু করেছি?”

“না সেটা নয়। আসলে আমার অন্য একজনকে পছন্দ।”

রাশিক এই কথাটা শুনে আরও বেশি অবিশ্বাসের সুরে বলল, “সত্যিটা বলুন! আপনার প্রেমিক থাকলে সেদিন আমার সাথে সারাদিন ঘুরলেন কেন? আর আপনি জানতেন আমি আপনাকে পছন্দ করি। তাহলে আমি কিছু বলার আগে একটা হিন্টস পর্যন্ত দিলেন না যে আপনি অন্য কাউকে পছন্দ করেন?”

আমি কী বলব বুঝতে পারলাম না। রাশিক এত রেগে যাবে সেটাও ভাবিনি। ঠান্ডা গলায় বোঝানোর চেষ্টা করলাম, “আসলে আমি সেদিনও বুঝিনি যে আমি বর্ষণকে পছন্দ করি…”

রাশিক ফোন কেটে দিল। একটু পর তার নাম্বার থেকে একটা এসএমএস এলো, “একটা মিথ্যে ঈদের দিন উপহার দেবার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা ধারা। আশা করি ভালো থাকবেন পছন্দের মানুষকে নিয়ে।”

আমার মন প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেল। আমি কি তবে বিশ্বাস ভঙ্গ করলাম? খুব কষ্ট দিলাম রাশিককে? কিন্তু আমি তো কোনো কমিটমেন্ট করিনি তার কাছে। তাহলে জবাবদিহি কেন করব? নিজের কাছেই যুক্তি, পাল্টা যুক্তি দিতে দিতে রাত পার করে দিলাম।

তখন যদি জানতাম পরদিন এত বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমার জন্য!

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু

#বৃষ্টি_তোমাকে_দিলাম
পর্ব-১৪

ঈদের পর আমরা সবসময় গ্রামের বাড়িতে যাই। সবুজ ঘেরা বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত আর ঝিরঝির করে বয়ে চলা সরু নদীর পাশের চমৎকার একটা গ্রামে আমাদের পৈতৃক বাড়ি। সেখানে আগে বাবা চাচা ফুপুরা সবাই থাকতেন। দাদা দাদী মারা গেছেন আগেই। এখন শুধু ছোটো চাচা বাস করেন। তার গঞ্জে কাপড়ের দোকান আছে।

কুরবানীর ঈদের পরের সময়টা সবাই গ্রামে আসে। আমরা, মেজো চাচারা, ফুপুরা সবাই। এবারও চললাম। কেমন যেন খারাপ লাগছিল এবার যেতে। না গেলে হয়তো বর্ষণের সাথে কিছুটা সময় কাটানো যেত। বোধহয় এই প্রথমবার গ্রামে যাওয়ার উৎসাহে খানিকটা ভাটা পড়েছে।

ভোরে রওনা দিয়ে আমরা পৌঁছুলাম দুপুরের পর। দূর থেকে ইটের বাড়িটা হাতছানি দিয়ে ডাকছিল যেন৷ বাড়িতে ঢুকে মনটা শীতল হয়ে গেল। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম।

আজ আবহাওয়া মোটামুটি। বৃষ্টি হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। মিঠে বাতাস দিচ্ছে। আমার প্রচুর কাজিন। তাদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি, সাথে চাচীর হাতের পিঠে খাচ্ছি অজস্র। বেশ লাগছে!

হঠাৎ বিকেলের দিকে শুনলাম কারা যেন আসছে। কারা আসছে সেই উত্তর আমি কোথাও পেলাম না। জানার চেষ্টাও করলাম না, মেতে আছি নিজের মতো। সন্ধ্যার দিকে যখন আকাশে লালচে আলোর খেলা চলছে, উঁচু তালগাছের মাথাটা আবছা হয়ে আসছে, তখন বাড়িতে কিছু লোকজন এলো।

আমি ঘর থেকে বের হলাম পরিচিত দুটি কন্ঠস্বর শুনে। দুটো ছোট্ট মেয়ে এসে আমার হাত ধরে বলল, “তুমি কেমন আছো?”

মেয়েদুটো চিনি-রিনি। ওরা এখানে এলো কেমন করে? তখনই বর্ষণের দেখা পেলাম। লাজুক মুখে হাসছে। ওর মা বাবাও এসেছে।

কিছু বুঝে ওঠার আগে আমি জানতে পারলাম বর্ষণের সাথে আমার বিয়ে। তাও সেটা আজই। ওকে আমি পছন্দ করি সত্যি, কিন্তু হুট করে বিয়ে হবে এটা কেমন কথা?

ভেতরের ঘটনা জানলাম রাতে বিয়ে পড়ানোর একটু আগে। সব আয়োজন আগেই করা ছিল। আমি মা বাবার সাথে রাগ দেখিয়ে একটা ঘরে গোজ হয়ে বসেছিলাম।

তখন তরী এসে বলল, “আপা তুমি রেগে আছ কেন?”

তরী ছোটো চাচার মেয়ে। কলেজে পড়ে। বয়সের তুলনায় অনেক পরিপক্ব, সব বোঝে। বললাম, “ওরা আমাকে কিচ্ছু জানায়নি কেন? আমি কি গ্রামের ছোট্ট মেয়ে যে জোর করে যা খুশি করা যাবে?”

তরী নিজেই যে গ্রামের মেয়ে সেটা খেয়াল হতেই চুপ হয়ে গেলাম। ও কিছুই মনে করল না। হেসে বলল, “গ্রামের মেয়েরা এখন শহরের মেয়েদের থেকে বেশি অ্যাডভান্স, বুঝলে? তোমাকে জানায়নি কারন সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল।”

“এত জঘন্য সারপ্রাইজ মানুষ কিভাবে দিতে পারে?”

“এটার বুদ্ধি কিন্তু তোমার হবু বরের দেয়া।”

“সে আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।”

“ওমা সারপ্রাইজ কি জিজ্ঞেস করে দেয় নাকি? তাছাড়া সে বলেছে তোমার সাথে নাকি কথা হয়েছে। তুমি এমনিতেই বিয়েতে রাজি। আপাতত বিয়ে পড়িয়ে রাখবে। বাড়ির সবাই এখন একত্র হয়েছে, এটা ভালো সময়। দেরি করলে দেরি হতেই থাকবে। পরে একসময় দিনক্ষণ ঠিক করে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করা যাবে। মিয়া বিবি রাজি হলে বিয়ে ফেলে রাখতে হয় না।”

আমি তরীর কান টেনে বললাম, “পাকা বুড়ি হয়েছিস তুই! দাদীর মতো কথা বলছিস।”

তরী হেসে বলল, “মনে করো আমিই তোমার দাদী।”

“আমার ভালো লাগছে না রে তরী।”

“তুমি কি ওনাকে পছন্দ করো না?”

“করি।”

“তাহলে?”

“জানি না। ভয় লাগছে।”

তরী বুঝল না কিসের ভয়। বলল, “ওনার সাথে কথা বলবে? লুকিয়ে ডেকে আনি?”

“কথা বলবার হলে মোবাইলেই বলতে পারি। ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই।”

তরী শঙ্কিত গলায় বলল, “তুমি কি বিয়ে করবে না?”

“করব।”

“আচ্ছা। তাহলে ওঠো, ওরা অনেক কিছু এনেছে। সব দেখবে চলো। সাজতেও তো হবে। শাড়ি আমি পরিয়ে দেব। দেখো কত সুন্দর করে পরাতে পারি।”

কাবিননামায় সই করতে গিয়ে হঠাৎ সবকিছু কেমন বদলে গেল। আগের অনুভূতিগুলো শূন্যে মিলিয়ে গিয়ে নতুন চিন্তা ভর করল। গা ভর্তি শাড়ি গয়না আর চারদিকে লোকজন নিয়ে বসে থেকেও আমি এক মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেলাম৷ এক পৃথিবী থেকে আরেক পৃথিবীতে পা দিলাম, যেখান থেকে আগের জায়গায় আর কোনোদিন ফেরত আসা যায় না। আমার পরিচিত জনেরা, বন্ধুরা, আমার প্রিয় ঘর, প্রিয় কৃষ্ণচূড়া গাছ, কেউ জানল না, আমি পর হয়ে গেছি।

এখন আমার সবচেয়ে আপন মানুষ সে, যার সাথে আমার পরিচয় অল্পদিনের। তাকে আমি ভীষণ পছন্দ করি, তবু কোথায় একটা কিন্তু কি থেকেই গেছে?

গ্রামেরই কিছু নিকটাত্মীয় এসেছিলেন। সবাই যেতে যেতে বেশ রাত হয়ে গেল। আমার তখন কথাটা মনে হলো। বর্ষণদের কোনো আত্মীয়ই তো আসেনি। তাদের কি জানানো হয়নি? এর উত্তর অবশ্য পেয়েছি অনেক পরে।

রাতে শুয়েছি পাশাপাশি। বর্ষণ চুপচাপ পড়ে আছে। কথাবার্তা বলছে না৷ বাইরে জোর হাওয়া বইছে। টিনের চালে গাছের ডাল বাড়ি খাওয়ার শব্দ আসছে। জানালার একটা পাল্লা খোলা। অদ্ভুত এক রাত! এমন রাত আর কখনো আসেনি। হয়তো আসবেও না৷ আমি নিজে কথা বলছি না৷ অপেক্ষা করছি সে কথা বলবে৷ এখানে আসা অবধি সে একটা শব্দও বলেনি আমার সাথে।

অপেক্ষার প্রহর খুব দীর্ঘ হলো না। বর্ষণ বলল, “স্যরি! আমি তরীর কাছে শুনলাম তোমার খুব মন খারাপ।”

“বাদ দাও, যা হবার হয়ে গেছে। আগের কথা তুলে লাভ নেই।”

“নতুন জীবন শুরু করার আগে পুরানো হিসেব মিটিয়ে ফেলা ভালো।”

“কোনো হিসেব বাকি নেই বর্ষণ। সব ঠিকই আছে। আমি হঠাৎ বিয়ে মেনে নিতে পারছিলাম না। কিন্তু হলো তো। এটা নিয়ে বেশি ভেবে কাজ নেই।”

“শীত লাগছে তোমার?”

“না তো।”

“তাহলে কাঁপছ কেন?”

“কোথায়?”

“তোমার হাত পা কাঁপছে অল্প অল্প।”

“কী যেন!”

বাতাসের সাথে পানির ঝাপটা আসতে শুরু করল। বৃষ্টি পড়ছে। বর্ষণ উঠে গিয়ে জানালা আটকে দিয়ে এলো। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। ঘরে কয়েকটা মোমবাতি এমনি জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়েছিল বাচ্চাগুলো। সেগুলোর আলোয় ঘর আলোকিত।

আমি বর্ষণের মুখের দিকে তাকালাম। মনে হলো বহু যুগের পরিচিত মুখ। আলোয় উদ্ভাসিত সেই মুখের দিকে তাকিয়ে অনায়েসে অজানা কোনো পথের দিকে পাড়ি দেয়া যায়।

কী সব যে ভাবছি! নিজেরই আজব লাগছে। গা শিরশির করছে। হাত পা কাঁপছে এখনো।

কয়েকটা চাচাতো বোন ফিসফিস করছিল বিয়ের আগে। বরকে তাদের পছন্দ হয়নি৷ ছেলেমানুষ এত ফরসা হলে মেয়েলি ভাব চলে আসে। তার ওপর এই ছেলে লজ্জা পায় অতিরিক্ত। আড়াল থেকে শুনে খুব বিরক্ত লাগছিল আমার।

এখন বর্ষণের চেহারা মোমের আলোয় ভীষণ লাজুক দেখাচ্ছে। টকটকে গায়ের রঙ, এলোচুল আর চোরা চাহনির মানুষটাকে দেখে যে কেউ প্রেমে পড়তে পারে। আমি বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, “শোবে না?”

সে হাসল। দুই গালে টোল পড়ল। আমি বাক্যহারা হয়ে তাকিয়ে রইলাম৷ টিনের চালে ঝমঝমিয়ে পড়া বৃষ্টির মতো প্রেমে পড়লাম আমি। বহু আকাঙ্ক্ষিত প্রেম!

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু