#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Ahmed_Priya
#পর্বঃ১৯
_______________________
হামিদ আর ফাতেমার সাথে বেশ অনেকদিন যাবতই থেকে এসেছে চারু। এরই মাঝে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা সে দিয়ে দিয়েছে। রেজাল্ট অবশ্য এখানো আসেনি। হামিদের সাথে সম্পর্ক আগের মতো হলেও ফাতেমার সাথে তার সম্পর্ক তিক্ত হতে খুব একটা সময় লাগেনা। চারুর আত্মসম্মানবোধ একটু বেশি তাই ফাতেমা বারবার তাকে অবহেলা করার পর সেও আর ফাতেমার ধারের কাছে চাপে না। যতটা সম্ভব দুরত্ব বজায় রাখে। হামিদের বেতন এখন গিয়ে বারো হাজারে ঠেকেছে। মাঝেমধ্যে অভারটাইম করলে পনেরো হাজার টাকা পাওয়া যায়। বেশ ভালোই চলার কথা তিনজনের। চলেও ভালোই তবে ফাতেমা চারুর লেখাপড়ার বিষয়টা এখনো সহ্য করতে পারেনা। বিশেষ করে পরীক্ষা আগের রাত গুলো। চারু যখন রাত জেগে পড়াশুনা করতো তখন হামিদও মাঝেমধ্যেই এসে ওকে দেখে যেতো। এইটা সেইটা খাবার বানিয়ে দিতো। চারু মাঝেমধ্যেই অবাক হয়, হামিদের এত পরিবর্তনে। বিশেষ করে রান্নার ক্ষেত্রে। হামিদ যে রান্নাও করতে পারে সে ধারণা ছিলো না চারুর। খেতে অবশ্য খুব একটা খারাপ হয়না তবে মজার ব্যাপার হামিদ নিজের রান্না নিজেই খেতে পারেনা। হামিদ রাত জেগে রান্না করে চারুকে খাওয়াচ্ছেও এইটা ফাতেমার সহ্য হয়না। হামিদের সাথে সম্পর্ক আগের থেকে অনেকটাই ভালো হয়েছে ফাতেমার। ফাতেমার মনে হয় চারু না থাকলেই বোধহয় তাদের সম্পর্ক আরো ভালো করে এগোতো কিন্তু বোকা ফাতেমা জানলোও না হামিদের এই ভালো আচরণ চারুর জন্য। সেদিন যদি চারু হামিদকে সেই কথাগুলো না বলতো তবে হামিদ কখনো ফিরেও তাকাতো না তার দিকে। ফাতেমা তখন তিন মাসের গর্ভবতী, রাতের বেশিরভাগ সময়ই হামিদ চারুকে পড়ায় সাহায্য করতো। কোনো পড়া হয়ে গেলে সেগুলো ধরতো, নোটস লিখে সাহায্য করতো ইত্যাদি পক্ষান্তরে ফাতেমার সাথে এতটা সময় কাটানো হতো না। এই নিয়েও অভিযোগের শেষ ছিলোনা ফাতেমার কিন্তু এমন নয় হামিদ ফাতেমাকে সময় দেয়না। আগে যেমন ওভারটাইম করতো, প্রেগন্যান্সির পরে আর ওভারটাইম করতো না। যা খেতে চাইতো সাধ্যের মধ্যে সবই এনে দিতো প্রায়। পরীক্ষার মাঝেও চারু নিজ দায়িত্বে সকল কাজ করতো। হামিদও যথাসম্ভব সাহায্য করতো তাকে। সেও চাইতো না এই সময়ে ফাতেমা বেশি কাজ করুক। ফাতেমা কোনো কাজই করতো না শুধু বসে বসে চারুর কাজের খুত ধরাই ছিলো তার কাজ। মানুষের ধৈর্যেরও একটা সীমা থাকে। পরীক্ষার টেনশনে আর ফাতেমার এমন গা জ্বালানো কথায় চারু একদিন প্রচন্ড রেগে গিয়ে দুটো কথা শুনিয়ে দেয়। এই নিয়ে ফাতেমার কথার শেষ নেই। হামিদ আসার পর তার কাছে নালিশ তো করলোই সাথে সাথে এটাও বললো দুটো টাকা কামাই করে নাকি চারু নিজেকে সংসারের প্রধান মনে করছে। এই সংসারে থাকতে হলে চারু আর কাউকে পড়াতে পারবেনা। ওহ, বলাই তো হয়নি, ফাতেমা কথায় কথায় চারুকে টাকা নিয়ে কথা শোনাতো বলে চারু দুটো টিউশনি নিলো। কম টাকায় ভালো পড়াতো বিধায় ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করলো। আয়ও বেশ ভালোই হতো। চারু অবশ্য সেটা নিজের কাছে রাখতোনা। নিজের লেখাপড়ার খরচটুকু রেখে পুরোটাই ফাতেমার হাতে তুলে দিতো। হামিদকে দিলে সে নিতো না বিধায় ফাতেমাকে দেওয়া। প্রথম প্রথম ফাতেমা এতে বেশ খুশি হলেও দুদিন পর থেকেই শুরু হয় নতুন কাহিনি। নিজের বিবেকে নাড়া দেয় হামিদ রোজকার করে, চারু রোজকার করে তারমানে এই পরিবারে একমাত্র অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তি সে। এই কথাটা মানতে পারেনা সে। ফাতেমা সরাসরি চারুকে পড়াতে নিষেধ করে দিলেও চারু শোনেনি তার কথা। চারু নিজেও মাঝেমধ্যে তার বোকা বোকা কথায় অতিষ্ট হয়ে যায়। ফাতেমা ব্যাপারটা হামিদের কাছেও বলে কিন্তু হামিদ সেসবে পাত্তা দেয়নি। ফাতেমা হিংসুটে সেটা হামিদ আগে থেকেই জানে তাই পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেনি সে।
চারুর সেদিনের ওই দুটো কথা শোনানোর অপরাধে ফাতেমা অনেক বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ে আর বারবার বলতে থাকে চারু যেনো আর কাউকে না পড়ায়। হামিদ ও চায়নি এ অবস্থায় ফাতেমা অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ুক তাই বাধ্য হয়েই চারুকে কাউকে পড়াতে মানা করে দেয়। সেদিনই চারু বুঝেছিলো হামিদের অপারগতা। ফাতেমার সাথে চারুর কোনোদিনও মিলবে না। দুইজন দুই মেরুর মানুষ। হামিদও নিজের স্বকীয়তা হারাচ্ছে। যদি এমনভাবে চলতে থাকে তাহলে খুব দ্রুত হামিদের সাথেও মতের অমিল হবে তার। ফলাফলস্বরূপ, হামিদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হবে। এই পৃথিবীতে এক ভাই ছাড়া আর কে আছে তার? চারু কখনোই চায়না হামিদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হোক তার। চারু শুধু আয় করার জন্যই নয় সময় কাটানোর জন্যেও টিউশনি টা বেছে নিয়েছিলো। একা সময় কাটানো টা খুবই কষ্টকর। বারবার সেই বিভীষিকাময় অতীতটা মনে পড়ে যায়। বারবার চেয়েও সেটা ভোলা যায়না। বারবার মস্তিষ্কে চিন্তাধারা আসে এই লোকগুলোকে আমার খু*ন করতে হবে। করতেই হবে। গল্পের আসল লেখিকা স্নেহা ইসলাম প্রিয়া।
চারু যথাসম্ভব নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে চায়। এইসব ভুলে থাকতে চায় কিন্তু সম্ভব হচ্ছেনা ফাতেমার জন্য। চারু হামিদকে বলেছিলো সে কলেজে সবার সাথে হোস্টেল গিয়ে থাকতে চায়। হামিদ সরাসরি সেটা মানা করে দিয়েছে। চারুকে খুজে পেতে তার কতটা কষ্ট হয়েছে সেটা শুধু ও নিজেই জানে। ও আবারও এমন কিছু করতে চায়না। চারু যতদিন অবধি থাকবে ওর কাছেই থাকবে এইটা হামিদের বক্তব্য। কিন্তু, ফাতেমার কারণে খুব একটা সম্ভব হচ্ছেনা সেইটা। সে চারুকে বিদায় করতে চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। প্রেগন্যান্সি কালীন ফাতেমার সকল কথাই হামিদ মেনে চলছে। সম্ভবত এটাও মেনে নেবে। ভালোই হবে, দূরত্ব যত থাকবে সম্পর্কও তত ভালো থাকবে। ফাতেমা অবশ্য দ্রুতই চারুর বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছে। সে অবশ্য জানেনা চারু বিবাহিত। চারু আর হামিদ ছাড়া কেউই সেটা জানেনা। এমনকি কলেজে ফর্ম ফিলড আপ করার সময় যখন বৈবাহিক অবস্থার অপশনটা আসলো চারু একবার হামিদের দিকে তাকিয়েছিলো। কিছু বলতে হয়নি তাকে হামিদ নিজেই ধরতে পেরেছিলো চারুর প্রশ্ন। সে নিজেই ফর্মটা নিয়ে সেখানে অবিবাহিত সিলেক্ট করেছিলো। কলেজ থেকে বের হওয়ার পরে হামিদ তাকে বলেছিলো নিজের অতীত ভুলে গিয়ে জীবনটা নতুন করে সাজাতে। অতীত জীবনের ছিটেফোঁটাও সে চারুর জীবনে আসতে দেবেনা। চারু সর্বাত্মক চেষ্টা করছে অতীত ভুলে যাওয়ার কিন্তু সেটা বোধহয় অসম্ভব! তাদের পাওনা শাস্তি তো তাদের পেতেই হবে।
★
কিছু বইখাতা কেনা বাকি ছিলো। ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট এখনো অবধি চিনে উঠেনি চারু। হামিদও খুব একটা প্রয়োজন না হলে তাকে একা বের হতে দেয়না। হামিদের যেনো এখনো মায়ের কোলের সেই বাচ্চা মেয়েটিই মনে করে চারুকে। চারুর অবশ্য খারাপ লাগেনা। লাগার কথাও না। কেউ একজন খেয়াল রাখলে ভালোই লাগে। যথারীতি চারুর সাথে বই কিনতে গেলো হামিদ। বেশ লম্বা লিষ্ট! দুজন মিলেও বইগুলো নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রথম গাড়ি থেকে নামতেই চারু বইগুলো নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হামিদও সাহায্য করছিলো তাকে কিন্তু সামনের দোকানে গিয়েই চারুর চোখ আটকে গেলো। সেখান থেকেই কিছু জিনিসপত্র কিনছে জামাল হোসেন। চারুর চোখেমুখে জ্বলে উঠলো প্রতিশোধের আগুন। খু*ন করতে হবে এই লোকটিকে। সে এখনো চারুকে দেখেনি। দেখলেও চেনার কথা নয় কারণ চারু এখন বোরকা পরহিতা অবস্থায় আছে। চারুকে আনমনা দেখে তাকে ডেকে উঠলো হামিদ।
– কি রে কি হইছে?
– সামনের দোকানে দেখো। জামাল হোসেন
হামিদ একবার সামনের দোকানে দেখলো। এই সেই নরপিশাচ যে চারুর মতো পবিত্র ফুলটির জীবন নষ্ট করতে চেয়েছিলো। ইচ্ছে করছে তাকে টুকরো টুকরো করে ফেলতে। চারুর বিভীষিকাময় সেই অতীত আর অজানা নয় হামিদের। অনেক হিসাব নিকাশ বাকি আছে এদের সাথে।
– তুই একটু এইহানে দাঁড়া। এই শু*য়ারের বাচ্চারে আইজ আমি শেষ কইরাই ছাড়মু।
– রাস্তার মধ্যে বাজে দৃষ্টিপট সৃষ্টি করোনা। এখন আমি এদের দৃষ্টিসীমার আড়ালে আছি। এমন কিছু করলে সম্ভবত ধরা পড়ে যাবো।
– তো এই কু*ত্তার বাচ্চারে আমি এমনেই ছাইড়া দিমু? এত সহজে?
– এদের সাথে হিসাব নিকাশ পরে হবে। এখন এইখান থেকে চলো।
হামিদ চারুর কথা মেনে নিলেও মন থেকে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা। তার মাথায় খু*ন চেপেছে। এতদিন মনে হচ্ছিলো ব্যাপারটা ঝিমিয়ে এসেছে কিন্তু আজ জামাল হোসেনকে দেখে মাথার রক্ত আবারও গরম হয়ে উঠেছে। এই অসুরদের বিনাশ অপরিহার্য।
বই কিনে বাড়ি ফিরে এসেছে হামিদ ঠিকই কিন্তু কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা। ফাতেমার মনে হচ্ছে এই গরমে দূর থেকে আসার কারণে বোধহয় হামিদের মাথা গরম আছে তাই সে একগ্লাস ঠান্ডা শরবত করে দিলো তাকে কিন্তু হামিদ এই শরবতে ঠান্ডা হবেনা। তার ঠান্ডা হওয়ার জন্য প্রয়োজন জামাল হোসেনের তাজা গরম র*ক্ত। কিন্তু এখন সে পরিবেশ নেই। এর জন্য সর্বপ্রথম আলাদা একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
– ফাতেমা।
– হ্যাঁ।
– প্রেগন্যান্সির সময় তো মাইয়ারা লম্বা একটা সময় বাবার বাড়ি গিয়া থাকে। তুমি কি যাইবা?
– ঘুরতে যাওয়া যায় কিন্তু লম্বা সময়ের জন্য হইলে যামুনা। ভাবিটা ভালা না। খালি কাম করায়। এই অবস্থায়ও কাম করাইতে পারে।
– তাইলে আর যাওয়ার দরকার নাই। তুমি একখান প্রবাদ বাক্য শুনছো? ইংরেজি প্রবাদ বাক্য। “রিভেঞ্জ অব নেচার।” প্রকৃতির প্রতিশোধ। আসলে প্রকৃতির কোনো প্রতিশোধ নাই। মুলত ব্যাপার হইলো আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছাইড়া দেন না। তুমিও যেমন এহন সুযোগ পাইয়া সব কাম চারুরে দিয়া করাইতাছো তোমার ভাবিও ঠিক একই কাজ তোমারে দিয়া করাইতো। আমার মায়েরে দেখছি চারুরে পেটে নিয়া সব কাম করছে। ধান ভাঙছে, সিদ্ধ করছে, আরো কত কী। আর তুমি? ভারি কাম না করো, হালকা পাতলা কামে তো চারুর সাহায্য করতেই পারো কিন্তু তুমি কি? সুযোগ নিয়া পুরাটাই চারুর উপর চাপায়া দিছো। বাচ্চা মাইয়া কতদিক সামলাইবো?
– আপনের কি মনে হয় আমি আপনের বইনেরে দিয়া সব কাম করাই?
– মনে হইতে হইবো ক্যান? চোখ নাই আমার? যাই হোক তোমার সাথে তর্ক করতে চাইতাছি না। ভাত দাও। তুমি দিবা নাকি এইটাও চারুরেই বলবা?
ফাতেমা হামিদের খোচাটা ধরতে পারলো না। সে চারুকেই বললো খাবার দিতে। বাইরে থেকে এসে মাত্র একটু শুয়েছিলো চারু। প্রবল ক্লান্তি নিয়েই উঠে গেলো হামিদকে খাবার দিতে।
★
– এইহান থেইকা তোর কলেজে যাইতে অসুবিধা হয়?
– একটু তো হয়ই।
– কলেজের সামনাসামনি বাসা নিয়া থাকবি?
চারু বেশ অবাক হলো। হামিদের রাজি হওয়া কিংবা এভাবে নিজে থেকে কথা শুরু করা কোনোটাই স্বাভাবিক নয়। ফাতেমা কি কিছু বলেছে? বলতেও পারে। অসম্ভব কিছুই নয়। হামিদও এখন ফাতেমার কথা বেশ মেনে চলে। ভালো গুণ।
– দেখো তুমি। পাওয়া গেলে সেখানে যাওয়াই ভালো হবে।
হামিদ সেদিন কথা বাড়ায়নি। সপ্তাহ দুয়েক পরেই নতুন ঘর খোজার জন্য চারুকে সাথে নিয়ে গিয়েছে। হামিদ অবশ্য মিথ্যে বলেই ঘরটা নিয়েছে। বাড়িওয়ালাকে বলেছে, বউ প্রেগন্যান্ট তাই বাবার বাড়িতে থাকবে এখন ও আর ওর বোন এই বাড়িতে থাকবে। বাড়িওয়ালারা মূলত এমন কাউকে ঘর ভাড়া দিতে চায়না। দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে একই বাড়িতে থাকবে। তারা আসলেই ভাই বোন কি না সেটা কে যাচাই করতে যাবে? তাই শোনার আগেই সবাই না করে দিতো তাই মূলত হামিদ এইবার চারুকে নিয়ে এসেছে। ওদের দেখলেই সবাই বুঝতে পারবে এরা আসলেই ভাই বোন। হলোও তাই। বাড়িওয়ালা ঘর দিতে রাজি হয়ে গেলো।
পরেরদিনই বাসায় কিছু নতুন জিনিসপত্র কেনা হলো। কেনা হলো বলতে একটা চৌকি আরেকটা পড়ার টেবিল। আর রান্নাবান্নার জন্য কিছু হাড়ি, প্লেট, চামচ, গ্লাস ইত্যাদি। হামিদ ওই বাসাতেই থাকবে। এখানে থাকবে সেটা বলার কারণ আজকাল মেয়েরা কোথাও সুরক্ষিত নয়। এখন সবাই ভাববে মেয়েটা একা থাকেনা। হামিদও প্রতিদিনই এসে দেখে যেতো চারুকে। প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলা, বাড়ি ভাড়া দেওয়া সব হামিদ নিজের হাতেই করতো। হামিদ সারাদিন কাজ করে রাতে বাসায় ফিরতো। স্বাভাবিকই মনে হতো বাসায় দুজন। রাত কিছুটা গভীর হলেই সবার অগোচরে হামিদ চলে যেতো। এ অবস্থায় ফাতেমাকে একা রাখা একদমই ঠিক না। সত্যিই এমন আজব বুদ্ধি বোধহয় কেবল হামিদের মাথায়ই আসা সম্ভব। গল্পের আসল লেখিকা স্নেহা ইসলাম প্রিয়া। একসপ্তাহ সব স্বাভাবিকই চলেছে। তবে হামিদ নিজের প্ল্যানের ছক কষা শুরু করেছিলো সে বাসায় আসার এক সপ্তাহ পরে। চারুও সেদিন বুঝেছিলো হামিদ কেনো আলাদা বাসা নিয়েছে। তবে প্ল্যানটা সঠিকভাবে সফল করাটা অর্থ সাপেক্ষ ব্যাপার। এত টাকা হামিদের নেই। হামিদ অবশ্য দমে গেলো না। অভারটাইম বাড়িয়ে দিলো। চারু বাসায় আসার পরের মাস থেকে পড়ানো শুরু করলো। এই এলাকায় শিক্ষিত মেয়ে খুব একটা নেই তাই কিছুটা রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা চারুকেই বেছে নিতো তাদের মেয়েকে পড়ানোর জন্য। প্রতিমাসেই চারু আর হামিদ নিজের খরচ চালিয়ে বেশ কিছু টাকা রেখে দিতো আলাদা করে। বেশি সময় লাগলো না নির্ধারিত পরিমাণ টাকা হতে। হামিদ এবং চারুর প্রথম লক্ষ্য জামাল হোসেন।
হামিদ নিজের আগের ইলেক্ট্রেসিয়ানের কাপড়টা পড়ে নিলো। এইবার তাকে একজন ইলেক্টেশিয়ানের মতোই লাগছে। তাকে যদি জামাল হোসেন চিনে থাকে তবে বেশ অনেকটাই সমস্যা হয়ে যাবে। প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হবেনা তাই মুখে কালো এক ধরনের মেইক আপ করে নিলো। বুদ্ধিটা অবশ্য চারুর। হামিদকে চিনলেও হঠাৎ করে দেখলে ধরতে পারবেনা আর না চিনলে তো কথাই নেই। মাথায় বেশ বড়সড় একটা ক্যাপ পড়ে নিলো। ব্যাগের মধ্যে নিয়ে নিলো নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। চারুকে নিয়েই বেড়িয়ে পড়লো চারুর পরিচিত সেই অভিশপ্ত গ্রামে। যেই গ্রাম থেকেই সম্পূর্ণ জীবন নষ্ট হয়েছিলো তার। চারু কি জানে, তার জন্মের আগে থেকেই তার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রামে কি আসে যায়?
হামিদ জামাল হোসেন বাড়ির দরজায় কড়া নাড়লো একজন ইলেক্টিসিয়ান হিসেবে। তবে দরজা খুলে দিলো সবুজ আলী। চারু এখনো হামিদের ভাড়া করা গাড়িতেই বসে আসে।
– কে আপনে?
– হ্যালো স্যার। আমি একজন ইলেক্টিসিয়ান। আজ সকালেই আমাদের কম্পানিতে কল করা হয়েছিলো এই বাসায় নাকি কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সমস্যা আছে।
– কই আমরা তো কাউরে ফোন করি নাই।
– কিন্তু আমাদের কম্পানিতে তো ফোন এসেছিলো স্যার।
– না আমরা কেউরে ফোন করি নাই। আপনে চইলা যান।
– কিন্তু স্যার! ঠিক আছে, ফোন না করেন, কোনো সমস্যা থাকলে দেখিয়ে নিতে পারেন। আমাদের সার্ভিস খুবই ভালো।
– ফ্যান ঠিক করতে পারেন?
হামিদ সম্মতি জানিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকলো। ঘরে যেতেই মদের গন্ধ পাওয়া গেলো অর্থাৎ এরা আগে থেকেই মাতাল। কাজটা সহজ হবে। হামিদ ফ্যানটা ঠিক করলো। সুইচ দিতেই আওয়াজ করে পাখাগুলো ঘুরে উঠলো।
– কত ট্যাকা?
– কোনো টাকা দিতে হবেনা স্যার। আমাদের কম্পানিটা নতুন। শুধু সেটার কথা সবাইকে জানালেই হবে। আপনাদের জন্য একটা পুরষ্কারও আছে।
– কি পুরষ্কার?
হামিদ ব্যাগের মধ্যে থাকা ম*দের বোতলটা বের করলো। আগে থেকেই ড্রা*গস মেশানো ছিলো এতে।
– আপনারা আমাদের লাকি কাষ্টমার। এইটা আপনাদের জন্য।
ম*দের বোতল পেয়ে জামাল হোসেন এবং সবুজ আলী দুজনের আত্মহারা হয়ে গেলেন। আগে থেকেই দুজন মাতাল ছিলো বিধায় পুরোপুরি সব বুঝে উঠতে পারছিলো না। হামিদকে ভেতরে রেখেই তারা আবার মদ খাওয়া শুরু করলো। ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো।
★
জামাল হোসেন আর সবুজ আলী দুজনেই বাধা ছিলো একটি অর্ধ পরিপূর্ণ বিল্ডিং এর ছাদে। চারু আর হামিদের জন্মের আগে থেকেই সম্ভবত এই বিল্ডিংটা এমন অর্ধেক তৈরি। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই এইটা এখানে দেখে আসছে। জামাল হোসেনের জ্ঞান ফিরলো আগে। অতঃপর সে চিৎকার চেচামেচি করে সবুজ আলীকে জাগালো। দুজনে জেগে উঠতেই দেখা গেলো দুটো চেয়ার তাদের মুখোমুখি রয়েছে। সেখানে কেউই নেই কিন্তু বেধে রাখা হয়েছে তাদের। তারা মনে করার চেষ্টা করছে আসলে কি হয়েছিলো।
চারিদিকে শুনশান নিরবতা। রাত এখন প্রায় তিনটা বাজে। এই বিল্ডিংয়ের আশেপাশে কেউ থাকেনা তাই বোধহয় কেউ এই জায়গাটা বেছে নিয়েছে। একটা লাল রঙের বাতি জ্বলছে। জামাল হোসেন চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলো,
– কোন কাপুরুষের বাচ্চা আমারে এইহানে আনছোস? সামনে আয়।
চিৎকার করে কথাটা বলা মাত্রই লাল রঙের আলো ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করলো চারু। দুজনেই অবাক নেত্রে তাকিয়ে রইলো চারুর দিকে। তারা এখানে চারুকে একদমই আশা করেনি। র*ক্তলাল বর্ণের একটি শাড়ি পরে আছে সে। লম্বা চুলগুলো খোপা করা আর কানের পাশে গোজা রয়েছে একটি রক্তজবা। ঠোটেও রয়েছে লাল রঙের লিপষ্টিক। সাধারণ এই সাজও যেনো অসাধারণ করে তুলছে তাকে। সুন্দর সাজগোজের সাথে সাথে রয়েছে প্রতিশোধ স্পৃহা। কাউকে খু*ন করার জন্য এই সাজটাই বোধহয় মারাত্মক সুন্দর।
– কেমন আছো জামাল হোসেন?
– তুমি!
– কেনো আশা করোনি আমাকে এখানে? শুধু আমি একাই নয় আরো একজন আছে আমার সাথে। কে বলো তো।
– হামিদ?
– একদম ঠিক কথা। তোমাদের কেনো এখানে এনেছি বুঝতে পারছো? প্ল্যানে অবশ্য কিছুটা পরিবর্তন এনেছি। একটাকে টার্গেটে রেখেছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে দুটো জা*নোয়ারকেই একসাথে পেয়ে গেছি।
হামিদ ঘরে ঢুকতেই চারুর পাশে থাকা চেয়ারে বসে পড়লো।
– কি করবো এদের?
– এদের একটাই শাস্তি। মৃ*ত্যুদ*ণ্ড!
– আমাগো ছাইড়া দাও। পরে আফসোস করবা কিন্তু। আমাগো মাথার উপর বসের হাত আছে।
– তোর বসের হাত, পা, মাথাও আমরা কা*টবো। চিন্তা করিস না।(হামিদ)
– অনেক বড় ভুল করতাছো তোমরা। বসে তোমাগো ছাড়বো না।
চারুর চোখে জ্বলছে আগুন। অন্তর দগ্ধ হচ্ছে তার। নৃসং*শ থেকে নৃশং*স মৃ*ত্যু সেই নরপিশাচদের প্রাপ্য। হামিদ একবার চারুর দিকে তাকালো। এই তাকানোর অর্থ আমি কি শুরু করবো?
– করো। আগে এদের জীব দুটো কা*টো। অনেক পাপ করেছে ওদের এই অর্গানটি।
হামিদ কিছু না বলে ধারালো ছু*ড়ি হাতে নিলো। সর্বপ্রথম কেটে নিলো সবুজ আলীর জিহ্বা। যন্ত্রণায় চিৎকার করছলো সে আর জামাল হোসেনের চোখে ছিলো ভয়। তাদের দুজনের চোখের এই ভয় দেখে আত্মার প্রশান্তি পাচ্ছে চারু আর হামিদ। এইবার হামিদ এগিয়ে গেলো জামাল হোসেনের দিকে। তাকে কষ্ট দেওয়ার অনেক বেশি ইচ্ছে তার। হামিদ ইচ্ছে করেই তার জীবে পে*রেক ঠুকে দিলো। যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলো জামাল হোসেন। ভীষণ আত্মতৃপ্তি হচ্ছে সামনে বসে থাকা এই দুজন সুন্দর ছেলেমেয়েদের। কা*টা জায়গায় খুব যত্নে লবণ মরিচের প্রলেপ লাগিয়ে দিলো হামিদ। লাইটার দিয়ে জীবে আগু*নের ছ্যাকা দিতে ভুললো না সে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরানো জামাল হোসেনকে দেখে তৃপ্তির হাসি হেসে হামিদ এইবার ছু*ড়িটা চালিয়ে দিলো তার জিহ্বায়।
চারুর হঠাৎই কিছু একটা মনে আসতেই সে হামিদকে চিৎকার করে বললো থেমে যেতে কিন্তু ততক্ষণে খুব দেরি হয়ে গেছে। হামিদ কে*টে ফেলেছে জামাল জিহ্বা।
বিঃদ্রঃ কে জানে কখন ভায়োলেন্সে পড়ে যাই। সঠিকভাবে বর্ণনা গুলো দিতে পারছিনা। আবার বারবার (*) এই চিহ্নটি ব্যাবহার করায় লেখার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আশা করি লেখায় একটু অসামঞ্জস্য আসলেও আপনাদের পাশে পাবো।
#স্নেহা_ইসলাম_প্রিয়া
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)
To Be Continued….
#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Ahmed_Priya
#পর্বঃ২০
_______________________
– কি হইলো?
চারুর কণ্ঠে প্রকাশ পাচ্ছে আকাশসম রাগ আর চোখে টলমল করছে জল। টেবিল থেকে জলভর্তি কাচের গ্লাসটি ছুড়ে পারলো মেঝেতে। গ্লাসটা কয়েক টুকরো হয়ে গেলো। রাগান্বিত ও কান্নারত কণ্ঠেই বললো,
– বস নামক সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিটির কথাই তো জিজ্ঞেস করা হলোনা।
হামিদ এক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলো। আসলেই তো বসের পরিচয় জানা হয়নি। চারু নাহয় ছোট তার মনে ছিলো না কিন্তু ও কি করে ভুলে গেলো? এই সবকিছুর পেছনেই মাস্টারমাইন্ড কে সেটাই তো মূখ্য বিষয়। হামিদ রাগ সামলানোর চেষ্টা করলো না। আরো একটা পে*রেক নিয়ে সেটা ঠুকে দিলো জামাল হোসেনের হাতে। চিৎকার করে উঠলো জামাল হোসেন। হামিদের এখন বেশ আনন্দ হলো। সে আবারও বেশ কয়েকবার একই কাজ করলো। যা হওয়ার হয়ে গেছে। দোষী এই লোকেরাও কিছু কম ছিলো না। জামাল হোসেনের এই করুণ অবস্থা দেখে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে সবুজ আলী। তার এই ভয়টাকেও দারুণ উপভোগ করছে হামিদ। হামিদ সিদ্ধান্ত নিলো সে এক পিশাচকে আরো শা*স্তি দেবে এবং অন্য পিশাচের চোখে ভয় দেখবে। হামিদ এইবার যত্ন সহকারে হাতের পেরে*কগুলো খুলে দিলো। একেকটা পে*রেক খোলার সময় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলো পিশাচটি। পে*রেক খোলা শেষ হতেই জামাল হোসেনের হাত র*ক্তে মাখামাখি হয়ে গেলো। হামিদ ভালো করে আবারও সেখানে লবণ মরিচের প্রলেপ লাগালো। কতটা শান্তি লাগছে হামিদ নিজেও হয়তো বর্ণনা করতে অক্ষম। হাতুড়ি টা দিয়ে জামাল হোসেনের হাতের কবজিতে খুব জোরে একটা আঘাত করলো হামিদ। জিহ্বা হীন জামাল হোসেন আবারও চিৎকার করে উঠলো নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে। কণ্ঠনালি অবধি ছিড়ে যাওয়ার যোগান। হামিদ এবার পরপর কয়েকবার দু’হাতে এভাবে আঘাত করে গেলো। করতেই থাকলো। খুব দ্রুত নিজের সর্বশক্তি দিয়ে। মনে হচ্ছে যেনো হামিদ কারো হাতের হাড় নয় লোহার কোনো দেওয়াল ভাঙার প্রচেষ্টায় আছে। হামিদ চারুর দিকে ঈশারা করলো,
– ওই মাইয়াটারে দেখ। ওই মাইয়াটা আমার কলিজা। তার গায়ে একটা আচরও আমি সহ্য করতে পারিনা আর তুই তোর এই জঘন্য হাত দিয়া আমার ফুলের মতো বইনটার জীবন নষ্ট করছোস। তোর এই হাত আইজ আমি কয়েকশো টুকরা করমু।
হামিদ আবারো আঘাত করতে শুধু করলো দুহাতের কবজিতে। এত শান্তি খুব কমই পেয়েছে সে। হামিদ জানে, এইটাই সে হাত যে হাত চারুর জীবন নষ্ট করেছে বারংবার। এইটাই সে হাত যে হাত চারুকে আটকে সবুজ আলীকে ধর্ষ*ণ করার কাজে সাহায্য করেছে। এইটাই সে হাত যে দিনের পর দিন চারুকে কষ্ট দিয়েছে। এইটাই সে হাত যে বস নামক লোকটার কাছে চারুকে পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু নাহ! হামিদ ভুল জানে। এইটা সে হাত নয় যে বসের কাছে চারুকে নিয়ে গেছে বরং এইটা সে হাত যে বসের প্রতি নিজের আনুগত্যের পুরষ্কার স্বরূপ চারুকে গ্রহণ করেছিলো। জামাল হোসেনের অনেক আগেই যে বসের নজর পড়েছিলো চারুর প্রতি।
হামিদ এইবার একটা লোহার রড বের করলো। হাতে একটা কাপড় পেচিয়ে আধা প্রস্তুত সেই বিল্ডিংয়ে লাইটারের সাহায্য আগুন ধরালো। সে আগুনে লাল হয়ে যাওয়ার মতো গরম না হওয়া অবধি গরম করলো রডটাকে। প্রথমেই পিশাচটির পায়ে সেটি লাগালো। শা*স্তির পালা এইবার শুরু হলো সবুজ আলীরও। একইসাথে একইভাবে দুজনকে আঘাত করতে শুরু করলো হামিদ। এরা দুই পিশাচ তো সবসময়ই একইসাথে থাকে তাহলে এদের শাস্তি ভিন্ন হবে কেনো? ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে তাদের সম্পূর্ণ শরীরেই হামিদ রডটিকে লাগিয়ে দিলো। হামিদ যে এতটা নৃশং*স হতে পারে হামিদের নিজেরই সে ধারণা ছিলো না। গল্পের আসল লেখিকা স্নেহা ইসলাম প্রিয়া। হামিদের মাথায় এইবার নতুন এক ভিন্ন পদ্ধতিতে এদের শা*স্তি দেওয়ার কথা মাথায় এলো। ছোটবেলায় একবার উলঙ্গ থাকা অবস্থায় ভুলবশত মরিচের গুড়ো লেগে গিয়েছিলো গোপনাঙ্গে। যেই যন্ত্রণা আজও ভুলে যায়নি হামিদ। পিশাচ দুটো সামনে আছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ লঙ্কা গুড়োও আছে। হামিদ দ্রুত তাদের শরীর থেকে জামাকাপড় খুলে নিলো। চারু এতক্ষণ সমস্ত ঘটনাই প্রত্যক্ষ করছিলো। বেশ শান্তিও পাচ্ছিলো সে। যতটা কষ্ট তারা ওকে দিয়েছিলো তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি কষ্ট হামিদ তাদের শুধে আসলে ফেরত দিচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ করে হামিদের এ আচরণ বুঝতে পারলোনা সে।
– কি করছো তুমি?
– দেখা না কি করি। এমন থেরাপি দিমু, ম*রার আগ পর্যন্ত মনে রাখবো। অবশ্য এরা বাচবোই আর কতক্ষণ?
হামিদ এইবার তাদের গোপ*নাঙ্গে লঙ্কা গুড়ো লাগাতে লাগাতে বললো, ছোটকালে রান্নাঘরে একবার গিয়া আমারও লঙ্কাগুড়া লাগছিলো। বিশ্বাস কর জীবনটা শেষ হইয়া গেছিলো। তহন আমার চাইর বছর। এর পর থেইকা কোনোদিন রান্নাঘরে ঢুকি নাই। একবার ভাব কতটা ব্যথা হইছে যে আমার এহোনো মনে আছে। এমন সিরিয়াস মোমেন্টেও হামিদের কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো চারু। তবে লঙ্কাগুড়ো লাগতেই পিশাচ দুটো যন্ত্র*ণায় চিৎকার করছে।
– হাসিস না তো। যার লাগে নাই হে এই যন্ত্রণা বুঝবো না। এই পিশাচ গুলারে জিজ্ঞেস কর কেমন লাগে। অবশ্য এরা তো এহন বোবা হইয়া গেছে।
চারুর চোখমুখ হঠাৎই শক্ত হয়ে উঠলো। সে এগিয়ে গেলো দুটো পিশাচের সামনে। তারা হাত জোর করে চারুর কাছে ক্ষমা চাইলে শুরু করলো। মুখে না বলতে পারলেও তাদের ঈশারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো।
– বাহ! মাফও চাইতে পারিস তোরা? দেখ তো চিনিস নাকি আমাকে? আমি চারুলতা। আমি সেই চারুলতা যে আজ তোদের মৃত্যু নিয়ে তোদের সামনে দাঁড়িয়েছে। আমি সেই চারুলতা যাকে তোরা দুর্বল ভেবে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়েছিস। কি ভেবেছিলি আমার কোনো অভিভাবক নেই তাই যা খুশি করা যাবে আমার সাথে? দেখ জানো*যারের বাচ্চা, ভালো করে তাকিয়ে দেখ। আমার অভিভাবক আছে। আর এমন একজন আছে যে হাজার অভিভাবকের দায়িত্ব একা পূরণের ক্ষমতা রাখে। কি কোনো অভিভাবক কি তোদের এইভাবে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখতো? আমি চারুলতা আর আমার ভাই হামিদ! ভালো করে দেখ, চিনতে পারছিস তো নিজের মৃ*ত্যুদুতকে?
ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে আছে দুজন। চোখের সামনে দেখছে নিজেদের মৃ*ত্যুদুতকে। সুন্দরী ভয়ংকরী এই চারুলতাই আজ তাদের মৃ*ত্যুদুত। বারবার প্রাণ ভিক্ষা চাইছে চারুর কাছে কিন্তু চারুর বিন্দুমাত্র মায়া হচ্ছেনা তাদের উপর। আজ এই চারুলতা নিজের তৃপ্তি মিটিয়ে খু*ন করবে এদের। হামিদ এগিয়ে এলো পিশাচ দুটোর দিকে। তারা এখনো চারুর সামনে অনুনয় করতে ব্যস্ত। হামিদ প্রথমে গিয়েই জামাল হোসেনের নক তু*লতে শুরু করলো। জামাল হোসেনের গগনবিদারী চিৎকা*রেও মন গললো না এই দুজন সুন্দর মানুষের। এর জন্যই কি বলে সুন্দর মানুষের হৃদয়ে মায়া কম? নাহ কখনোই না, এরা এই শা*স্তির প্রাপ্য। চারুর এই নক উঠানোর ব্যাপারটা বেশ পছন্দ হলো তাই এইটা সে হামিদকে করতে দিলোনা। নিজেই যত্ন করে হাতের একেকটা নক তুলতে শুরু করলো। তারপর আবার পা। অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে। কোনো নক তোলার সময় যদি মনে হয় চিৎকার কম হয়েছে তখন সেখানে লঙ্কা গুড়ো দিয়ে বাকি চিৎকারও আনন্দের সহিত শুনে নেয় চারু। জামাল হোসেন চারুর পায়ে ধরলো। এইটা দুটো কারণে হতে পারে। প্রথমটা ছেড়ে দিতে বলছে আর দ্বিতীয়টা নিজের মৃত্যু কামনা করছে সে। চারু লাথি মেরে পিশাচ টির অপবিত্র হাত সরিয়ে দিলো নিজের পা থেকে।
নক উঠানোর পরেই হামিদ একটা ছু*ড়ি তুলে নিলো হাতে। জীবন্ত অবস্থায় হামিদ জামাল হোসেনের পায়ের চামড়া খুলতে শুরু করলো যেভাবে জ*বাই করা গরুর চামড়া খোলা হয়।
– ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। আমিও করবো।
– না তুই পারবিনা। আমারে করতে দে। দুই নাহয় লবণ লাগানোর কামটা কর।
মনোরমা ছোটবেলায় রেগে গেলেই দুজনকে বলতো, “আইজ আমি তোদের পিঠের চামড়া তুইলা লবণ লাগামু” কিন্তু আসল ব্যাপারটা যে এতটা মজাদার হতে পারে তা কল্পনাও করেনি ওরা দুজন। দুইপায়ের সম্পূর্ণ চামড়া তোলা শেষ হতেই চারু বলে উঠলো,
– এখন থেমে যাও। কিছুক্ষণের মাঝেই ফজরের আজান পড়বে। এর আগেই আমাদের এখান থেকে যেতে হবে।
হামিদ থেমে গেলো। চারু ঠিকই বলেছে। গ্রামে ফজরের আজানের পরপরই মানুষজন উঠে পড়ে। হামিদ ছু*ড়িটা চারুর হাতে তুলে দিলো। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী চারু তাছাড়া তাদের মা*রার আগে আউটবুক থেকে আরো কিছু তথ্য সে সংগ্রহ করেছে। কিভাবে কাটলে এদের মরার সম্ভাবনা কম সেটা চারু জানে। সে অনুযায়ী দুটো কো*প বসিয়ে দিলো চারু। যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলো দুজনে। চারুর শান্তি হলো না। সে আবারও ছু*ড়ি চালিয়ে দিলো। বের করে আনলো জামাল হোসেনের কলি*জা। কলিজা বের করে আনতেই মৃ*ত্যুর কোলে ঢলে পড়লো জামাল হোসেন। একইভাবে সবুজ আলীর কলিজাও বের করে আনলো। দুটো কলিজা এখন চারুর দুহাতে। তাও কেনো যেনো চারুর তৃপ্তি হচ্ছেনা। চারু বারবার ছু*ড়ির আঘাত করতে শুরু করলো দুজনকে। এলোপাথাড়ি দুজনকেই আঘাত করছে। মনের আশ মিটিয়ে আঘাত করছে। যদিও কিছুটা জীবন বায়ু বেঁচে থাকে তাও এত আঘাতে বেড়িয়ে গেছে। কিন্তু আঘাতে সম্পূর্ণ শরীর ক্ষতবি*ক্ষত করে দেওয়ার পরেও চারুর তৃপ্তি হলো না। চারু কলিজা দুটোর দিকে তাকালো। অদ্ভুত এক নেশা গ্রাস করলো তাকে। সে জামাল হোসেনের কলিজায় একটা কামড় বসিয়ে দিলো। হামিদ স্তব্ধ হয়ে গেলো। এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা সে। এতটাই অবাক হলো যে চারুকে আটকানোর চিন্তা মাথায়ও এলো না। হামিদের হঠাৎই অনুভব হলো তার বমি আসছে। চারু সম্পূর্ণ দুটো কলিজা খেয়ে হামিদের দিকে তাকিয়ে একটা তৃপ্তির হাসি দিলো। গল্পের আসল লেখিকা স্নেহা ইসলাম প্রিয়া। হামিদ আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। কিছুটা দুরেই গিয়েই বমি করতে শুরু করলো সে। চারু পানির বোতল এগিয়ে দিলো তার দিকে। হামিদ ভয়ে ভয়ে নিলো সেটা। চারু হামিদের কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
– ঠিক আছো তুমি?
হামিদ একটা শুকনো ঢোক গিলে নিজের কাধ থেকে চারুর হাত সরিয়ে দিলো।
– কি হলো?
– তু তুই ওইটা কি করলি? ক্যামনে কলিজা দুইটা খাইলি?
– কেনো? ডায়নি মনে হচ্ছে নাকি আমাকে? আমার এই কলিজা খাওয়া নিয়ে দুনিয়ার সবাই হয়তো আমাকে ডায়নি ভাববে। ভাবুক, কিচ্ছু যায় আসেনা আমার। কিন্তু তুমি ভেবো না। আমি চারু। দেখো আমার দিকে, আমি সত্যিই চারু।
চারুলতা জড়িয়ে ধরলো হামিদকে। চারুর জড়িয়ে ধরায় হামিদের বুকের মধ্যে আলাদা একটা প্রশান্তি কাজ করলো। নাহ! এ কোনো ডায়নি নয়। হতে পারেনা। এইটা চারু। ছোটবেলায় মায়ের কোলে দেখা ছোট্ট পবিত্র সেই চারু।
★★★
চারুর খু*নের বর্ণনা শুনে হিমেলের মুখে দেখা গেলো তৃপ্তির হাসি। সীমার মুখটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও সেও যে আনন্দিত সেটা তার চেহারাই স্পষ্ট বলে দিচ্ছে। আসলেই এদের সাথে এমনটাই হওয়া উচিত ছিলো। তবে কঠোর মুখে বসে আছে সাজিদ। চারুর কথা শেষ হতেই সে প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ করলো চারুর
প্রতি,
– পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখেছি আমি। কই খু*ন তো এমনভাবে হয়নি।
– রিপোর্ট বদলে দিয়েছিলাম।
– অসম্ভব।
– হ্যাঁ ডাক্তারের কাছে থাকা অবস্থায় অসম্ভব কিন্তু থানায় কিছু টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট বদলে গিয়েছিলো। গ্রামের পুলিশ স্টেশন বলে কথা।
– রিপোর্ট বদলেছিলেন কেনো?
– যেনো ধরা না পড়ে যাই।
– তাহলে আত্মসমর্পণ করলেন কেনো?
চারু উত্তর দেয়না। সাজিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, বাংলাদেশের আইন ব্যাবস্থা সত্যিই শুধুমাত্র টাকার উপর নির্ভরশীল।
বিঃদ্রঃ গল্পটা ছোট হয়ে গেলো কি? ছোটই পড়েন। বড় করে দিলে ভায়োলেন্সে পড়ে যেতে পারি। তখন ছোট বড় কোনোটাই পড়তে পারবেন না। চিন্তায় আছি খুব। কে জানে কখন ভায়োলেন্সে পড়ে যাই। গল্পের শেষ পর্যায়ে আছি কিন্তু। সবাইকে দেখতে চাই।
#স্নেহা_ইসলাম_প্রিয়া
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)
To Be Continued….