দোটানা ২ পর্ব-২৫+২৬

0
557

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৫

আয়ান সায়ান দুজনই একই ধরনের নীল দুটি ডিজাইন করা পাঞ্জাবি পরেছে,ওদের গায়ের মাপ অনুযায়ী ফিট করা,দুজনকেই আর্কষণীয় লাগছে খুব।এখানে আসা মেয়েদের নজর এই দুজনের দিকেই।চৌধুরী বাড়ির দুই সুদর্শন যুবকের স্ত্রীদের জায়গা কেই বা নিতে চাইবে না,অনেক মেহমানেরাই নিজেদের মেয়েদের আলাদা করে নিয়ে আসার একটাই কারন যদি এই দুই সুপুত্রের নজরে কেউ ধরা দেয়।তবে এদের নজর অন্য কারো উপরই নেই।ওদের দৃষ্টি অটল আছে আরুশির পথে চেয়ে। কখন সে নামবে আর কখন ওদের তৃষ্ণার্ত আঁখি জোরা ভরে উঠবে।অবশেষে ওদের অপেক্ষার অবসান ঘটলো।আরুশি নেমে এলো দুই মাকে নিয়ে।তবে আরুশিকে দেখে দুজন যতোটা না খুশি হলো ততোটাই ব্যাথীত হলো।আরুশি নীল রঙের শাড়ি পরলেও ওদের দেওয়া কোনো শাড়ি পরে নি।তবে আরুশিকে এই প্রথম শাড়ি পরনে দেখে দুজনই নিজেদের ব্যাথাভরা অনুভুতি অল্পতে একপাশ করতে সক্ষম হলো।বর্তমানে দুজন আরুশিকে অপলকে দেখতে ব্যস্ত।নীল শাড়ির সাথে হালকা সাজ উপর থেকে চুল ছেড়ে দিয়েছে আরুশি।দুজন ওর রুপের নেশার নেশাগ্রস্ত হলো।চোখ যেনো আরুশিকে ছাড়া আর কিছুই দেখছে না ওদের।এদিকে নিধী কথাকে নীল শাড়িতে আর সুন্দর এক সাজে দেখে আবারও যেনো নতুনভাবে প্রেমে পরলো নিহান নিরব।ঘোরলাগা নয়নে দেখছে দুজন দুজনের প্রিয়সীদের।এদিকে প্রিয়তমদের অমন চাহনি নিধী কথা দুজনকেও অনেক লজ্জায় ফেললো,তাই লজ্জামাখা হাসি দুজনেরই মুখে শোভা পেলো।আরুশি দুজনকে এনে দুই বাবার দুপাশে খাড়া করলো তারপর বললো।

হয়েছে হয়েছে এবার বাবারা আপনারা বন্ধ করেন আমার মায়েদের ওভাবে দেখা।নজর লাগবে তো উনাদের। কথাটা বলে আরুশি ফিক করে হেসে দিলো।সবাইও হেসে দিলো ওর সাথে।নিরব বললো।

যাক আমাদের চারজনের পছন্দে আরুশি মাকে মানিয়েছে খুব।

তা আর হবার নয়?চার বাবা মা মিলে আমার জন্য একটা শাড়ি পছন্দ করেছে।এখানে চারজনেরই ভালোবাসা আছে যা মোটেও তো কম হবার নয়।

আয়ান সায়ান দুজনই এবার বুঝতে পারলো আরুশি বাবা মায়েদের দেওয়া শাড়ি পরেছে।দুজনই নিরাশ হলো তাতে।অনুষ্ঠান শুরু হলো।বড় একটা কেক নিহান নিধী আর নিরব কথা মিলে কাটলো।অতঃপর ডান্স শুরু হলো।মিউজিকের তালে কেউ কেউ ডান্স করছে আর কেউ কেউ বিভিন্ন প্রকার জুস নিয়ে গল্পগুজবে ব্যস্ত। চৌধুরী ম্যানশনে তবে কোনো প্রকার মদ্য কখনো আসে না।আরুশি একপাশে দাঁড়িয়ে কিছু মেয়েদের সাথে গল্প করছে।আয়ান সায়ানের নিজেদের বন্ধুরা আসলেও কাউকেই সঙ্গ দিচ্ছে না ওরা দুজন দুই ধারে দাঁড়িয়ে আরুশিকে দেখে যাচ্ছে।কয়েকটা ছেলে আরুশির দিকে বেশ কয়েকবার তাকালে আয়ান সায়ান দুজনেরই গা জ্বলে উঠলো তাতে।নিজেদের অনেক কষ্টে স্বাভাবিক রাখছে দুজন।

এই ছেলেরা কি আর অন্য পেয়ে পাচ্ছে না এখানে,আরুশির দিকেই তাকাতে হবে এদের!আর ওই আয়ানও কম না।আমাদের আরুশি ছাড়া না কি অন্য মেয়ের দিকে তাকাতেও মন চায় না তার।ডং করে সব,এভাবে তাকাচ্ছে যেনো আরুশিকে গিলে খাবে।

এই সায়ান কখনোই শুধরানোর না।হাজারটা মেয়ে দিয়েও হয় না ওর।এদিকে দেখো কিভাবে আরুশির দিকে তাকাচ্ছে। আর এই ছেলেগুলোও।ইচ্ছে তো করছে সায়ানের সাথে এদের সবাইকে এক রুমে বন্ধ করে ধোলাই দেই।

অনেক ছেলে এসে এসে আরুশিকে ডান্সের জন্য অফার করে গেলেও আরুশি ওদের মানা করে দিলো।এবার আয়ান সায়ান এগিয়ে এলো ওর দিকে।আয়ানের আগে সায়ান এসে আরুশির দিকে হাত বাড়িয়ে বললো।

ডান্স।

তুমি জানো সায়ান আমার ছেলেদের সাথে ডান্স করার কোনো আগ্রুহ নেই।

আমার সাথেও করবে না ডান্স?

আপনি কি কোনো ছেলে না মি.স্যার?

কথাটা শুনে আয়ান নিরাশাগ্রস্ত হলো।আরুশি আর ওদের কিছু বললো না নিজে একাই স্টেজে গিয়ে গান চালু করলো।ওর মা বাবাদের বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে একটা গান চালালো আর সে অনুযায়ী মা বাবাদের নিয়ে নাচতে শুরু করলো।আয়ান সায়ান দুজন স্টেজের নিচে দাঁড়িয়ে সবার নাচ দেখে যাচ্ছে অসহায় দৃষ্টিতে। তখন দুজনের দুই ধারে দুজন এসে খাঁড়া হলো আয়ানের পাশে দাড়ালো সুইটি আর সায়ানের ধারে আরোহী।ওরা ওদের কাঙ্ক্ষিত মানুষ মনে করে ভুল জনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে তবে তা ওরা জানে না কারন আয়ান সায়ান একই ধরনের পাঞ্জাবি পরেছে আর দুজন তো দেখতেও একই তাই এমন ভুল হওয়া বড় কিছু না।আরোহী সায়ানকে আয়ান বলে ডাকলো আর সুইটি আয়ানকে সায়ান দুজনই ঘাড় ঘুরিয়ে এই দুজনকে নিজেদের পাশে দেখে চমকে উঠলো। চমকে উঠার আরেকটা কারন ওদের দেওয়া আরুশিকে সেই একই ধরনের শাড়ি পরে আছে দুজন।দুজন অবাকত্ব নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

এই শাড়ি তুমি কোথায় পেলে?
প্রশ্নটা আয়ান আরোহীকে আর সায়ান সুইটিকে উদ্দেশ্য করে করলো।

কেনো আয়ান তুমিই তো আমাকে শাড়িটা দিলে আরুশির মাধ্যমে।ওই আমি পর্যন্ত পৌঁছালো এটা।তুমি এতোটা রোমান্টিক আমি আগে জানতাম না।কথাটা বলে হালকা লজ্জা পাওয়ার ভান ধরলো আরোহী সায়ানকে কথাটা বলে।এবার সুইটি আয়ানকে বললো।

সায়ান বেবি ব্রেক আপ বলে এতো সুন্দর স্যারপ্রাইজ রাখবে আমার জন্য ভাবি নি।আরুশিকে দিয়ে আমাকে এখানে ডাকালে আর তার উপর এই শাড়িটাও…..তুমি না সবসময়ই আমার চিন্তার বাইরে।কথাটা বলার পর।
আরোহী সুইটি দুজন আয়ান সায়ানকে জড়িয়ে ধরতে গেলে দুজনই সরে যায় নিজেদের জায়গা থেকে।

একদম পাশে আসবে না।একসাথে বলে উঠলো দুজন,আরোহী সুইটি আশাহত হলো।তখনি আরুশি হাসতে হাসতে আয়ান সায়ানের মধ্যে এসে দাঁড়ালো।ও এতোসময় ধরে ওদের কান্ড লক্ষ্য করছিলো।এবার কোনোরকম হাসি থামিয়ে বললো।

আরে আরোহী উনি তোমার আয়ান নন সায়ান,আর সুইটি ইনি হলেন দ্যা গ্রেট সায়ান চৌধুরী। কথাটা শুনে দুজনই মাথা চুলকে নিজেদের সাইড বদলালো।আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো।

তুমি আমাদের সনাক্ত করলে কিভাবে এতো সহজে?

যে জায়গায় ওরা আমাদের অনেক আগ থেকে চেনে?সায়ানও বললো।

আরে কাউকে সনাক্ত করতে গেলে তার সাথে কতোদিনের পরিচয় সেটা ফ্যাক্ট করে না।সবকিছুই মনের খেলা আপনারা বুঝবেন না।

কথাটা বলে আরুশি চলে গেলো।তখন সুইটি আরোহী আবারও সায়ান আয়ানের ধার নিতে গেলে।সায়ান সুইটিকে বললো।

দেখো সুইটি আরুশি মজা করে এমনটা করেছে,এই শাড়ি আমি ওকে দিয়েছিলাম।তোমাকে নিয়ে আমার মনে আলাদা কোনো টান নেই।আজকের পর থেকে আমার সামনেও আসবে না।

এবার আয়ান আরোহীর উদ্দেশ্য বললো।

তুমি ভাবলে কি করে আরোহী শাড়িটা আমি তোমাকে দিবো।এই শাড়িটা আমি আরুশিকে দিয়েছি কিন্তু ও তো ও ই কোনো জিনিস সোজা মতো হতে দিবে না।দেখো আরোহী আমার তোমাকে সহ্য হয় না।আমার ধার প্রান্তে কম ঘেষো।

অতঃপর দুজন প্রস্থান করলো। দুজনই মনে মনে কষাকষি করতে লাগলো।

আজ ওই সায়ানের জন্যই আরুশি আমার দেওয়া শাড়ি পরে নি।

ওই আয়ান একই শাড়ি গিফ্ট না করলে আজ আরুশি আমার দেওয়া শাড়িই পরতো।কি যে করি এই আয়ানকে নিয়ে।

আয়ানের একটা ফ্রেন্ড এসেছে থেকে আরুশির উপর নজর গেরে বসে আছে।অনেকক্ষণ বিষয়টা খেয়াল করার পর আয়ান ওর পাশে গেলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো।

আয়াস এসেছিস থেকে দেখছি আরুশির উপর নজর গেরে বসে আছিস।এখানে অন্য মেয়েরাও আছে ওদের দেখ,ওর দিকে ওভাবে কেনো তাকাচ্ছিস?

আরে ভাই হ্যাঁ এখানে অনেক মেয়ে আছে তবে এর মতো আর একটা নেই।সেটিং করে দে না ভাই।এই প্রথম কোনো মেয়েকে দেখে বিয়ে করার ইচ্ছে মাথায় ভর করলো।নয়তো খেলা করে ছেড়ে দিতেই মজা পাই জানিস তো।

সাথে সাথেই আয়াসের এক হাত ওর পিছনেই মুড়ে ধরলো আয়ান।আর দাঁতে দাঁত চেঁপে বলতে লাগলো।
দেখ তোর সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক অনেক ভালো ছিলো কিন্তু সেদিন থেকে তোর সঙ্গ ছেড়েছি যেদিন থেকে তোর নোংরা নেচার সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আজ তুই এখানে এসেছিস কারন তোর বাবার সাথে আমার বাবার বন্ধুত্ব আর সে পরিচয়ে একটু সময় এখানে থেকে চলে যা।আরুশির দিকে চোখ তুলে তাকানোর কথা দ্বিতীয়বার ভাবিস না চোখ উপরে ফেলবো তোর।

কথাটা বলে আয়ান আয়াসকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে চলে গেলো।আয়াস মুখে শয়তানি হাসি বাঁকা করে ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।

আয়ান আরুশির হাত ধরে টেনে এক পাশে নিয়ে গেলো।

কি করছেন আপনি?এভাবে হাত ধরে টেনে এখানে নিয়ে আসলেন কেনো?

তুমি বাইরে যাবে না আর।এমনিতেই পার্টি শেষ হতে চলেছে।আর এখানকার ছেলেরা তোমাকে চোখে গিলে খাচ্ছে তাই তোমার এখন এখানে না থাকাই ভালো।রুমে একা ভালো লাগবে না তোমার।আমার সাথে চলো তোমাকে বাইরে কোথাও থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো ততক্ষণে পার্টি শেষ হয়ে যাবে।

ও হ্যালো মি.এ্যরোগেন্ট আমি আপনার বিয়ে করা বউ না যে এভাবে হুকুম জারি করছেন।যার ইচ্ছে তাকাক আমার দিকে আমি তো তাকাচ্ছি না।আর কেউ আমার দিকে তাকালে আপনার কি?

আরুশিকে আয়ানের এভাবে টেনে আনা দেখে পিছনে আসলো সায়ানও যেহেতু ও আরুশির উপর নজর রেখেই ছিলো।আরুশি ওকে দেখতে পেয়ে বললো।

ওই চলে আসছে আরেকজন।আল্লাহ রহম করুন আমার উপর।পার্সোনাল গার্ডও এভাবে কারো পিছন থাকে না যেভাবে আপনারা দুজন আমার পিছন থাকেন।আমার কি মনে হয় জানেন আপনারা দুজন আমার জন্য চলন্ত সিসিটিভি ক্যামেরা, আমি অলটাইম আপনাদের নজর বন্ধি থাকি,সত্যিই অসহ্য।

বিরক্তি নিয়ে চলে গেলো আরুশি। আয়ান সায়ান রাগি লুকে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে স্থান ত্যাগ করলো ঝটফট।তবে বাইরে বেড়িয়ে আরুশিকে পেলো না দুজন,মন ঘাবড়ালো দুজনেরই।

পার্টি চলছে ঘরের ভিতরে,কিন্তু ওদের পুলসাইডটা ঘরের একদম পিছনে যেখানে বর্তমানে কেউ যাওয়া আসা করছে না।আয়াস তার ফায়দা উঠালো।একজন কাজের লোক পাঠিয়ে ডাকালো আরুশিকে।কাজের লোক দিয়ে আরুশিকে বলালো যে আরুশিকে ওর একজন বন্ধু পুল সাইডে আসতে বলেছে এক্ষুনি। কাজের লোক আয়াসকে আরুশির বন্ধু ভেবে ওকে কথাটা বলতে গেলো।কিন্তু কথাটা হজম হলো না আরুশির।ওর তো এই শহরেই কোনো বন্ধু নেই।তবে এই বন্ধু কোথা থেকে আসলো।কৌতুহলবশত আরুশি গেলো পুল সাইডে।পিছন মুড়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়াস।আরুশি জিজ্ঞেস করলো।

কে আপনি?আমাকে এখানে কেনো ডাকিয়েছেন?

এবার আরুশির দিকে মুখ ফিরিয়ে ওর সামনে হাটু গেরে বসলো আয়াস,হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল।
রোমান্টিক স্বরে বলতে লাগলো আয়াস।

সুন্দরী তোমার রুপ দেখে হয়েছি মগ্ন।
হয়েছি প্রথম দেখায় নেশাক্ত।
তোমার নেশা করেছে পাগল।
হয়েছি আমি অধম।
তোমার হাতেই এই অধমের বাঁচার আশ ঝুলে আছে।
চলে আসো জীবনে ভরিয়ে দাও সুরভীতে।

এক্সকিউজ মি মি.আপনি কি বলতে চাইছেন ক্লিয়ার করে বলেন।

ওকে মুল কথায় আসি।আমি তোমাকে প্রথম দেখাতে ভালোবেসে ফেলেছি আরুশি।বিয়ে করতে চাই আমি তোমাকে।উইল ইউ বি মাইন।

দেখেন প্রথমতো আমি আপনাকে চিনি না আর চিনলেও আমার তাতে কিছু আসে যায় না।আমি প্রেম ভালোবাসা করতে চাই না আর না তো বিয়ে করতে চাইছি।আশা করি আপনি আপনার জবার পেয়ে গেছেন।

কথাটা স্বাভাবিক ভাবে বলে আরুশি যেতে নিলে ওর হাত ধরে নিলো আয়াস,বিরক্তি নিয়ে আরুশি আয়াসের কাছ থেকে নিজের হাত টান দিয়ে ছাড়িয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো।

আপনার সাহস হলো কি করে আমার হাত ধরার?

সরি বাট আমার কথা বুঝো।আমি জীবনে অনেক মেয়ের সাথে থেকেছি।ভেবেছি এভাবেই জীবন পার করবো কারন একজনে সীমাবদ্ধ থাকার ছেলে আমি না তবে তোমাকে দেখে কেনো যেনো আমার চোখের সাথে আমার মনও সীমাবদ্ধ হয়েছে।হয়তো একেই বলে প্রথম দেখায় ভালোবাসা।দেখো আমার যথেষ্ট টাকা পয়সা আছে আমি তোমায় টাকা দিয়ে ভরিয়ে দিবো।চলো আমার সাথে।

আরুশি টাকার কাছে বিক্রি হওয়া মেয়ে না।আমার জবাব না আর নাই থাকবে।
আরুশি এবার চলে যেতে নিলে আয়াস ওর হাতে টান দিয়ে ওকে নিজের দিকে করে ওর কোমরের পিছনে সজোরে চেপে ধরলো,আরুশি ধাক্কা দিয়ে আয়াসকে ছাড়িয়ে যেতে নিলে আয়াস আবারও ওর হাত পাকড়াও করলো।

বিয়ের অফার দিয়েছি ভালোয় ভালোয় মেনে যা নইলে এমন হাল করবো যে কখনো কেউ বিয়ে করবে না,আরুশি ভয় পেয়ে মা বাবা,আয়ান সায়ান বলে চিৎকার করছে।আয়াস বাঁকা হেসে বললো।

আরে বেবি ভিতরে এতো লাউড মিউজিক অতিক্রম করে তোর চিকন স্বর কিভাবে কারো কানে পৌঁছাবো! কথাটা বলে পৈশাচিক হাসি দেয় আয়াস,আরুশি ওর মুখে খামছে দিয়ে ছোটে পালাতে লাগলে আয়াস ওর শাড়ির আচঁল ধরে নেয়।ঠিক তখন…………..

চলবে…………..

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৬

ঠিক তখন আয়ান এসে আরুশির আঁচল থেকে আয়াসের হাত ছাড়ালো।আর তারপর ওকে মারতে শুরু করলো।পাগলের মতো মারছে আয়ান আয়াসকে আর বলছে।

তোর সাহস হলো কি করো ওর গায়ে হাত দেওয়ার?আজ তোকে প্রাণে মেরে ফেলবো আমি।আয়ান তখন আরুশির খোঁজেই ওদিকে এসেছিলো। আয়ান আয়াসকে মারতে মারতে প্রায় আধমরা করে ফেলেছে,অবশ্য প্রথমে আয়াসও অনেক কঢ়া টক্কার দেয় তাকে কিন্তু অবশেষে আয়াসকে দমতে হয় আয়ানের কাছে।আয়ানের পাগলের মতো মার দেখে আরুশি ওকে আটকাতে যায় তবে পারছে না আয়ান যেনো পাগল হয়ে গেছে আজ আয়াসকে মেরেই ফেলবে।আরুশি এবার টান দিয়ে আয়ানকে আয়াসের কাছ থেকে ছাড়াতে গেলে আয়ান গর্জে উঠে বললো।

সরে যাও আরুশি আজ আমি ওকে মেরেই ফেলবো।

ওকে এভাবে মারলে তো ও সত্যিই মারা যাবে।ভিতু কন্ঠে বললো আরুশি।

মারা যাক ও।ওকে মরে যেতে হবে।ওর সাহস কি করে হয় তোমার গায়ে হাত দেওয়ার
সরে যাও সামনে থেকে তুমি যতো আটকাবে ওর মরণ ততোটা যন্ত্রণার হবে।

আয়ানের চোখ দিয়ে যেনো আগুন বেরুচ্ছে।আয়ান রাগি হলেও এতোটা রাগে আরুশি আয়ানকে এর আগে কখনো দেখে নি।মাথায় যেনো রক্ত চেপেছে ওর।আয়াসের মৃত্যুই পারে আজ ওকে শান্ত করতে।আরুশি ঘাবড়ে ছোটে গেলো ঘরের ভিতর,সবাইকে ডেকে আনলো,আয়ান আয়াসকে মারতে মারতে অজ্ঞান করে দিয়েছে তবুও মারছে কেউ পারছে না ওকে আটকাতে সবাই হতবাক ওর এমন কান্ডে।কখনো ওকে কেউ এতোটা রাগে দেখে নি।কোনোরুপ সবাই আয়ানকে ছাড়ালো,আয়ান এখনও গর্জে গর্জে বলছে।
আমি ওকে মেরে ফেলবো ও কেনো আরুশির গায়ে হাত দিলো?সবাই কোনোরুপ আয়ানকে রুমে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।সবাই আরুশিকে কারনটা জিজ্ঞেস করলে আরুশি সব কিছু জানালো সবাইকে।সায়ান কথাটা শুনতেই ওর মাথায়ও রাগ চটকালো ওর এতো বড় সাহস বলে আয়াসের দিকে এগিয়ে গেলে সবাই ওকেও কোনোরকম আটকালো আর আয়াসকে হাসপাতালে নেওয়া হলো।সায়ান অস্থির হয়ে আরুশির পাশে এসে ওর হাত পা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করলো।

আরুশি তুমি ঠিক আছো তো?

আমি একদম ঠিক আছি সায়ান।

ঘন্টা খানিক পর…….

আয়ান রুমের ভিতর এখনও রাগে ফুঁসছে। ভুলতে পারছে না তখনকার মুহুর্ত।আরুশিকে খারাপভাবে স্পর্শ করেছিলো আয়াস দৃশ্যটা চোখের সামনে থেকেই যেনো সরছে না।আয়াসকে আজ প্রাণে মেরে ফেললেও ওর ভিতরখানা যেনো শান্ত হতো না।
এদিকে আরুশি খাবার নিয়ে আয়ানের রুমে যাচ্ছিলো তখন সায়ান ওকে আটকালো।

আরুশি তুমি সত্যি ঠিক আছো তো?তুমি কেনো একা গিয়েছিলে পুলসাইডে এভাবে যে কারো ডাকে?যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো তখন?ওই আয়াসকে তো ছাড়বো না আমি।হাসপাতালে ওর চিকিৎসা কেমনে হয় আমিও দেখবো।

দেখো সায়ান আমি একদম ঠিক আছি।আমি চাই না আমার জন্য কারো কষ্ট হোক।আয়াস নিজের কর্মের ফল পেয়ে গেছে আর বাকিটা আল্লাহ দেখবেন।তুমি প্লিজ ওর চিকিৎসা আটকিয়ে রেখো না।প্লিজ। প্লিজ তুমি এমনটা করো না।আমার জন্য হলেও।প্লিজ।

আচ্ছা ঠিক আছে।এভাবে অনুরোধ করলে আমি ফেলিই বা কি করে?তা কোথায় যাচ্ছো?

আয়ান স্যারের জন্য খাবার নিয়ে।বেশ সময় ধরে উনি রুমে আটকে আছেন।কিছু খানও নি তাই।

ওর খেয়াল রাখার জন্য বাবা মায়েরা আছেন।তোমাকে কেনো আসতে হলো?

উনি বাইরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দিয়ে এসেছেন বাবা মায়েরা তাই সামালতে ব্যস্ত।মা নিজেই বলেছেন আয়ান স্যারকে আমি দেখতে।কথাটা বলে আরুশি আয়ানের রুমে ঢুকে গেলো,সায়ানের মনে শুরু হলো আবারও অশান্তির সমাগম।আরুশি রুমে ঢোকায় দরজা বেশ ফাঁক করা রইলো।আয়ান বসে আছে বিছানার এক প্রান্তে,মারামারির দরুন হাতের অনেক জায়গা ছিলে গেছে ঠোঁটের এক পাশে অল্প কেটে গেছে আরুশি খাবারগুলো এক পাশে রেখে ফাস্ট এইড বাক্স নিয়ে ওর কাছে বসে ওর ক্ষতগুলোতে ওষুধ লাগাতে শুরু করলো আয়ান কিছু বলছে না শুধু অপল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরুশির পানে।আরুশি স্বাভাবিক ভাবে আয়ানের ক্ষততে ওষুধ লাগিয়ে এবার ভাত মাখিয়ে আয়ানের মুখের সামনে এক লোকমা ধরলো।আয়ান বললো।

আমি নিজে খেতে পারবো।

হাতের অবস্থা দেখেছেন। মাত্র ওষুধ লাগিয়েছি। আমি খাইয়ে দিচ্ছি খেয়ে নিন।আয়ান আর কিছু না বলে খেতে শুরু করলো।আরুশির এই অল্প পরিচর্যা আয়ানের জন্য অনেক বড় কোনো পাওয়া।আরুশি আয়ানকে খাইয়ে উঠে চলে যেতে চাইলে আয়ান জিজ্ঞেস করে বসলো।

আমার এতো কেয়ার কেনো করো তুমি?

আগে আপনি বলেন ওই লোকটাকে এভাবে মারলেন কেনো আপনি?এভাবে না মারলেও পারতেন।

ও তোমাকে ছোঁয়ার স্পর্ধা করেছে।ওকে ছাড়তাম কি করে?তোমাকে যে খারাপ ভাবে স্পর্শ করতে আসবে আমি তাকে শেষ করে দিবো।

কেনো?কে হই আমি আপনার যে আমাকে কেউ ছুলে আপনার এতো রাগ হবে।যে আপনি কাউকে প্রাণে মারতেও দ্বিধা করবেন না?

আয়ানের কাছে যেনো এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই তাই নিরুত্তর রইলো আরুশির পানে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে।আরুশি অল্পক্ষণ জবাবের অপেক্ষা করে চলে গেলো সেখান থেকে।সায়ান রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছিলো সবকিছু। দরজার ঠিক বিপরীতে থাকা আয়নাতে আয়ান আরুশির মধ্যে চলারত দৃশ্য স্পষ্ট ভেসে এলো সায়ানের চোখে।যা সহ্য করতে পারলো না সায়ান অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে চলে গেলো নিজের রুমে।সেখানে গিয়েও নিজেকে সামলাতে পারছে না।তাই কাজের লোক পাঠালো আরুশির কাছে।কাজের লোক দিয়ে আরুশিকে জানালো ও খায় নি,তবে ও তাকে পাঠিয়েছে তা আরুশিকে জানাতে বারন করলো।অতঃপর আরুশি ওর জন্যও খাবার নিয়ে আসলো ওর রুমে।

কি হলো সায়ান শুনেছি খাও নি,কেনো এমনটা করো বলোতো?খাবার এনেছি খেয়ে নাও।

তুমি খাইয়ে দিবে না।

আশ্চর্য আমি কেনো খাইয়ে দিবো?

কেনো আয়ানকে তো খাওয়ালে।

তুমি লুকিয়ে ওসব দেখছিলে!

ফ্যাক্ট এটা নয় আরুশি যে আমি লুকিয়ে ওসব দেখেছি,ফ্যাক্ট হচ্ছে ওটা যে তুমি আয়ানকে খাইয়েছো।

হ্যাঁ আমি উনাকে খাইয়েছি কারন উনার হাতে ক্ষত ছিলো।ওষুধ লাগানো ছিলো তাই।

তবে আমার হাতে ক্ষত হলে আমাকেও খাইয়ে দিবে?

আরুশি অবাক হলো সায়ানের কথায়,কিছুই বুঝতে পারলো না।আরুশির কিছু বুঝে উঠার আগেই সায়ান পাশ থেকে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে দুই হাতে চেঁপে ধরলো ওটা যাতে হাত কেটে রক্ত ঝড়তে শুরু হলো।আরুশি ছোটে গেলো সায়ানের পাশে।ওর হাত থেকে কেরে ফেলে দিলো ছুরিটা।

এটা কি করেছো সায়ান তুমি?ছোটো বাচ্চা তুমি?বুঝো না কিছু?সায়ান কিছু বললো না শুধু আরুশির দিকে তাকিয়ে রইলো। আরুশি ওকে টেনে বসিয়ে দিয়ে ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো অতঃপর ওকেও খাইয়ে দিলো।সায়ান প্রশান্তির হাসি ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে রেখে তাকিয়ে আছে আরুশির দিকে।আরুশি ওর হাসি দেখে বললো।

সবকিছু তোমার কাছে শুধু খেলা তাই না সায়ান?এখন আবার কোন খেলা খেলছো তুমি বলো?

আমি কোনো খেলা খেলছি না আরুশি?

তবে এসবের মানে কি বলো সায়ান?

সায়ান কিছু বলতে গিয়েও বললো না,আরুশিও যেনো শুনতে চাইলো না কিছু,উঠে চলে গেলো ওখান থেকে।

আরুশিকে সায়ানের ঘরে খাবার নিয়ে যেতে দেখেছিলো আরোহী,তখন রুমের বাইরে থেকে লুকিয়ে রুমের ভিতরের কার্যকলাপ আন্দাজ করে নেয় ও।অতঃপর মনে মনে ফন্দি আটে।

যাক এবার পেলাম যোগ্য হাতিয়ার।আয়ানের মনে আরুশিকে নিয়ে যদি একটু বিষ ঢালতে পারি তবে আয়ান আমার দিকে গড়াবে।

আরোহী গেলো আয়ানের রুমে।

আরোহী তুমি এখানে কি করছো?বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বললো আয়ান।

তোমাকে দেখতে এলাম আয়ান।আমি ছাড়া আর কেই বা এখন তোমার খেয়াল রাখবে বলো?তোমার বাবা মায়েরা আছেন ঘটে যাওয়া ঘটনা স্বাভাবিক করার ধ্যানে,এদিকে আরুশি সায়ানকে নিয়ে ব্যস্ত,তাই ভাবলাম আমি এসে তোমার খোঁজ নেই।

আরুশি সায়ানকে নিয়ে ব্যস্ত মানে!

হ্যাঁ ব্যস্তই তো। একটু আগে দেখলাম সায়ানকে মুখে তুলে খাবার খাওয়াচ্ছে আরুশি।। আসলে এমন ছোটোলোক মেয়েরা এমনই হয় আয়ান।তুমি তো হাতের কাছের হিরে ফেলে ওই তামার কদর করছো।

সাথে সাথে একটা গ্লাস ছুড়ে মারে আয়ান আরোহীর পিছনের দেয়ালে আরোহীর ঠিক পাশ দিয়ে,গ্লাসটা দেয়ালে লেগে ভেঙে টুকরো হয়ে ফ্লোরে পরে।আরোহী ভয় পায় তাতে অনেক,আয়ান ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে বলে উঠে।আরেকবার যদি আরুশিকে ছোটোলোক বলার দুঃসাহস দেখিয়েছো তবে ওমন আরেকটা গ্লাস দেয়ালে না ভেঙে তোমার মাথায় ভাঙবো মনে রেখো।নাও গেট লস্ট ফ্রোম হেয়ার।

আয়ানের ধমকে ভিতু হয়ে চলে যায় আরোহী।আয়ান অতিরিক্ত রেগে গেলো আরুশির রুমে।আরুশি নিশ্চুপ ভঙ্গিতে বসে ছিলো বিছানায় ভাবলেশহীন হয়ে।তখন আয়ান এসেই ওর হাত ধরে দাঁড় করায় ওকে,অনেক রেগে আছে আয়ান।ওর এমন ভাব দেখে আরুশি জিজ্ঞেস করলো।

কি হয়েছে স্যার আপনার?

তুমি ওই সায়ানকে খাবার খাইয়েছো?

হ্যাঁ।

কেনো খাইয়েছো ওকে?

কেনো আপনাকেও তো খাইয়েছি।

আমি আর ও তোমার কাছে এক?আয়ান আরুশির হাত টান দিয়ে ওকে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে এসে কথাটা বললো।আরুশির অনেক রাগ হলো হঠাৎ তাই ঝাটকা দিয়ে সরালো আয়ানকে আর ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো।

কি চান আপনারা বলেন?কি চান?কেনো পরে আছেন দুজন আমার পিছন?আমি একজন মানুষ,কেনো টাঙিয়ে রেখেছেন দুজন দোটানায়?কি দোষ আমার বলেন?বলেন না?একজনের কাছে গেলে অপরজন বলে আমার কাছে আসো।এর সাথে কথা বললে অপরজন বলে আমার সাথেও কথা বলো।একজনকে খাবার খাওয়ালো ওপর জনকেও খাওয়াতে হয়।আরে বাবা আপনারা পেয়েছেন টা কি?আমি কোনো খেলনা নয় যে আপনারা দুই ভাই ওটা নিয়ে টানাটানি করবেন।

কথাগুলো বলতে গিয়ে আরুশির চোখ দিয়ে অজোর ধারা বইতে শুরু হলো যা আঘাত করলো আয়ানের মনে প্রচন্ড।দমে পরা ব্যাথীত গলায় বললো আয়ান।

প্লিজ কান্না করো না তুমি আরুশি।খারাপ লাগছে আমার।

কেনো খারাপ লাগছে আপনার বলতে পারেন?কেনো? বলেন না?
উত্তর নেই আপনার কাছে আর আমি তা জানতেও চাই না,চলে যান আপনি থাকতে দিন আমাকে একা, ছেড়ে দিন আমাকে আমার অবস্থায় প্লিজ।

কিন্তু।

প্লিজ, চলে যান দয়া করে, প্লিজ।

আয়ান যেনো আরুশির আর্তনাদ আর ফেলতে পারলো না।ধিমি পায়ে আরুশির রুম থেকে না বেরুতে চাইলেও বেরুলো আয়ান, আরুশি ওর পিছন এসেই দরজা বন্ধ করে দিলো।

চলবে………