#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Addrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_১৮
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
ভোরের পাখিরা কিচিরমিচির করে ডাকছে।অন্ধকার ভেদ করে দেখা দিচ্ছে আলো।সূর্যের কিরণ চোখে পড়তেই ঘুম ভাংলো আমার।হাই তুলে পাশ ফিরে দেখলাম আমি।চারু বাসের জানালায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।জানালার পর্দা ভেদ করে আবছা আবছা আলো আসছে।পেছনে ফিরে দেখলাম আমি।আমাদের পেছনের সিটটাতেই বসেছেন শরৎ ভাই।তিনি জেগে আছেন,ফোনে বলছেন কারো সাথে।ফোন কেটে উনি আমার দিকে তাকালেন।বললেন-
“কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?”
আমি মাথা নাড়িয়ে ইশারা করে বললাম…
“কিছু না।”
উনি বললেন…
“শোন মা ফোন দিয়েছিলো, বললো তোর ব্যাগে কিসের যেনো ট্যাবলেট আছে মনে করে খেয়ে নিতে।”
“আর কিছু বলেনি?”
“নাহ্ তোকে আর কিছু বলেনি।”
বুঝতে পারলাম মামনি বমির ট্যাবলেটের কথা বলেছেন।বাসে উঠলেই আমার এই একটা সমস্যা।বমি হবেই,বিষয়টা নিয়ে চরম বিরক্ত আমি।কথাটা মনে পড়তেই বিরক্তিতে নাক মুখ কুচঁকে এলো আমার।পাশে থাকা হাত ব্যাগ থেকে পানির বোতল আর পিল বের করে পিলগুলো খেয়ে নিলাম আমি।চারু ঘুমোচ্ছে।আমি ওকে আর ডাকলাম না।গাজিপুর চৌরাস্তা থেকে বাস যাচ্ছে ঢাকায়।রাতের বাসে উঠেছি আমরা বেশিদূর বাকি নেই।অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি আর ঘুমোবো না কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবো।এই ভেবে ফোনটা হাতে নিলাম। সময় ব্যা করার জন্য,ফোনটা হাতে নিয়ে ওয়াটস্ এপ এ ঢুকতেই দেখলাম দির অসংখ্য এসএমএস আর কল।পেছনে শরৎ ভাই আছে তাই ফোন দেয়া যাবে না।বাড়ি ফিরেই দিকে ফোন করবো।মায়ের সাথেও কদিন তেমন কথা হয়নি।মাকেও কল দিতে হবে।এই ভেবে ওয়াটস্ এপ থেকে বেরিয়ে ফোন টিপতে লাগলাম।
বাড়ি পৌছাবার পর মামনির সে কি কান্ড।মনে হচ্ছিলো বহুযুগ পরে আমাকে দেখছে।চারুকে দেখে তো মহা খুশি সে।মামনিকে শরৎ ভাই কিছু বলেনি তা ভালোই বুঝতে পেরেছিলাম।তাই আমিই সব খুলে বলেছিলাম মামনিকে।সব শুনে মামনি হালকা হেঁসে বলেছিলো…
“ভালোই তো হলো,কতো শখ ছিলো আমার একটা মেয়ের।তা এখন পূরণ হয়ে গেলো।”
চারু বোধয় মামনির কাছ থেকে এমনটা আশা করেনি।চারু কিছু বললো না মামনিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
সময়ের নিয়ম অনুযায়ী কেটে গেলো বেশ কিছু দিন।
দুপুর খাবার খাচ্ছিলাম আমরা সবাই তখন মামু শরৎ ভাই কে উদ্দেশ্য করে বললেন…
“শুনলাম অফিস থেকে ট্রান্সফার হচ্ছো সাভারের দিকে।”
শরৎ ভাইয়ের ছোট খাটো উত্তর…
“হুম বাবা।”
“মেসে থাকার কোনো প্রয়োজন দেখছি না আমি।সেখানে কি খাবে, না খাবে?ঠিক মতো চলতে ফিরতে পারবে কিনা তারও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।শ্রীজারও ছুটি শেষ হয়ে আসছে।ওর আর হোস্টেলে থাকা অহেতুক কোনো দরকার নেই।বরং তুমি এক কাজ করো ভালো দেখে একটা ফ্লাট ভাড়া করে নাও।দুজনে এক সাথে ওখানে থাকবে।তোমাদের সম্পর্কের উন্নতিও হবে।বন্ডিংটাও বেশ জোড়ালো হবে।কি বলো?”
“হুম বাবা আমি দেখছি।”
শরৎ ভাইয়ের তেমন কোনো ভাবান্তর নেই।আমি খানিকটা দ্বিমত পোষন করলাম। বললাম…
“কিন্তু মামু,হোস্টেল থেকে ফিরে আসাতে অনেক ঝামেলা এতো বই পত্র।জিনিস পত্রের গোছ গাছ, আবার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া।”
মামু গম্ভীর স্বরে বললেন…
“তুই যেমন ঝামেলার কথা বলছিস জিনিসটা তেমন ঝামেলারও নয়।আর তো কদিন।প্রিপারেশন নিয়ে নে সব।আর শরৎ ফ্লাট আমি কয়েকটা দেখে রেখেছিস, তোদের ঠিকানা দিয়ে দিবো গিয়ে চেক করে নিস।আর জিনিস পত্র কেনা কাটার বাজেট নিয়ে কোনো চিন্তা করবি না।তোরা শুধু ফ্লাটে উঠবি বাকি সব আমি দেখবো।”
আমি আবারও বললাম…
“কিন্তু মামু তোমাদের কে দেখে রাখবে?শরৎ ভাই যদি চলে যায় তাহলে তোমরা তো একা হয়ে যাবে।”
মামু আমার দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বললেন…
“চারু আছে তো।”
ফের শরৎ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন…
“ভালো কয়েকটা কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করিস তো। চারুর কলেজেও ভর্তি হতে হবে।এভাবে বসে থাকলে তো আর চলবে না।”
শরৎ ভাই কিছু বললেন না মাথা নাড়লেন শুধু।খাওয়া দাওয়া শেষে আমি ঘরে ফিরে এলাম।যদিও শরৎ ভাই আগে এসেছেন।কিন্তু ওনাকে আমি ঘরে দেখলাম না।ঘরে ভালো লাগছে না তাই ইকটু ছাঁদে যাবো ভাবছি।ভাবতে দেরি কিন্তু ছাদে যেতে দেড়ি নেই।ছাদের কাছে গিয়ে দেখলাম ছাঁদের দরজার তালা খোলা।হয়তোবা ভেতরে কেউ আছে।আমি অতোশতো না ভেবে ছাঁদে ঢুকে পড়লাম।হাঁটা হাটি করার মাঝে দেখতে পেলাম শরৎ ভাইকে।উনি ছাঁদের এক কিনারায় দাড়িয়ে আছেন আপন মনে।আমি ওনাকে আর বিরক্ত করলাম না।চুপচাপ ওনার বিপরীতে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম।শরৎ ভাই আমার উপস্থিতি টের পায়নি এমনটা নয়।চারিপাশে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।কিছুক্ষণ পর উনি নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বলে উঠলেন।
“তখন ওমন করে বাবাকে বার বার না করিছিলি কেনো?”
আমি বিষয়টা বুঝে উঠতে না পেরে ওনাকে বলে উঠলাম…
“কোন ব্যাপারে না করছিলাম শরৎ ভাই?”
“ফ্লাটের ব্যাপারটাতে।তোর কি কোনো আপত্তি আছে?”
আমি হালকা হেঁসে মাথা নাড়িয়ে শরৎ ভাইকে বললাম…
“আরেহ্ না।আপত্তি থাকবে কেনো?শুধু শুধু আপনাকে বিরক্ত করে কি লাভ?তা ছাড়া আমাদের সম্পর্কটাও তে দু দিনের শরৎ ভাই। কদিনের সম্পর্কটাকে এভাবে সমাজের চাপের কারণে বাস্তবিক রূপ দেয়াটা ভুল ছাড়া কিছুই নয়।আর সম্পর্কটা তো স্থায়ীও নয়।এক তরফা ইচ্ছা বা ভালোবাসাতে কোনো সম্পর্কই টিকে না শরৎ ভাই।”
শরৎ ভাই কিছুটা অপরাধবোধ করলেন বোধয় বললেন…
“একতরফা কোনো কিছুই কারো জীবনে সুখ এনে দিতে পারে না শ্রীজা।তোর আশা আকাঙ্ক্ষা হয়তোবা কখনোই পূর্ণতা পাবেনা।”
আমি মলিন করে হাসঁলাম।নিচু স্বরে খানিকটা অভিমান নিয়েই বললাম…
“তাইতো এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইছি,শরৎ ভাই।”
শরৎ ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বললেন…
“এই টপিক বাদ দে।শোন ফ্লাটে চলে গেলে সুবিধা তো আমাদের দুজনেরই।তোর আর হোস্টেলে থাকতে হবে না।আর সারাদিন শেষে বাড়িতে এসে রান্না বান্না ঘর দোর গোছানোর কাজ করা আমার জন্যে অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে।তোরও সপ্তাহে কদিন মাত্র ক্লাস হয়।তাই বাবার আইডিয়াটাই বেস্ট।তুই তৈরি হয়ে থাকিস কদিন পরই আমরা সাভার ফিরছি।সবার আগে ফ্লাট চেক করে দেন তোর ভার্সিটিতে যাবো আমরা।সেখান থেকে আবার নতুন ফ্লাটে।জিনিস পত্র নাকি বাবাই সব পৌঁছে দিবে আমরা যাবার আগে।”
আমি কিছু বললাম না শুধু হ্যা বলে মাথা নাড়লাম।এরপর নিচে নেমে চলে এলাম ঘরে।শরৎ ভাইয়ের বেলকণিতে কিছু গাছ আছে যেমন ক্যাকটাস,অপরাজিতা,সকাল-সন্ধ্যা এরকম অনেক গাছই আছে।আমি বেলকণিতে গিয়ে দেখালাম।সেখানকার গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে চারু।মাথার চুলগুলো ছেড়ে দেয়া।পড়নে সাদা রঙের নতুন টপস আর কালো প্লাজো।মাথায় নীল রঙের ছোট্ট অপরাজিতা ফুল গুঁজে দিয়েছে সে।দেখতে অপূর্ব লাগছে। আমি ওর কাছে গেলাম বললাম…
“কি করছেন আমার ননদিনী?”
চারু মুঁচকি হেঁসে আমার দিকে ফিরলো।বললো…
“গাছে পানি দিচ্ছিলাম ভাবি।এখানে থাকো কেমন করে?যাওয়ার কোনো জায়গা নাই,হাটাঁর কোনো জায়গা নাই।মনে হয় কেউ খাঁচার মধ্যে বন্ধি করে রাখসে।ভালোই লাগে না আমার।”
আমি হাঁসলাম। বাতাসে উড়ন্ত চুলোগুলো ওর কানের এক পাশে গুঁজে দিয়ে বললাম…
“আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করেন।কলেজে ভর্তি হলে নতুন ফ্রেন্ড পাবেন।নানান জায়গায় ঘুরতে যাবেন।আবহওয়া আর পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে বেশি একটা সময় লাগবে না।আর বন্ধু পাতানোর সময় সবসময় সচেতন থাকবে,নানান ধরনের মানুষ দেখবে তুমি।মুহূর্তেই তারা নিজেদের রূপ বদলে ফেলবে।নামে বন্ধু থাকবে এক হাজার তবে আসল বন্ধু পাবে ১জন।”
চারু মাথা নাড়লো বললো…
“আচ্ছা ভাবী তুমি কি চলে যাবে?”
“হুম যেতে তো হবেই।না গেলেই নয়,ভার্সিটি খুলে ফেললে তো আর এখানে বসে থাকা যাবে না।”
মুখটা গোমড়া করে ফেললো চারু। মন খারাপ করে বললো…
“তুমি চলে গেলে আমি কার সাথে থাকবো?একা একা ভালো লাগে না আমার।”
“আরে এতো প্যারা নাও কেনো?আমরা যাওয়ার আগে তুমি নিজেই কলেজে গিয়ে বন্ধু বান্ধব পাতিয়ে আমাদের ভুলে যাবে।”
আমার দিকে তাকিয়ে চারু বললো…
#চলবে…
#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_১৯
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
“তাও আমার কেমন ভয় করছে গো ভাবি।প্রথম কলেজ,তার ওপর শহরে,আমি তো কিছু চিনি টিনিও না।কীভাবে কী করবো?”
আমি চারুকে আশ্বাস দিতে ওর কাধেঁ হালকা করে চাপড় মেরে বললাম…
“আরে পাগলি কি বলে?প্রথম প্রথম তোমার শরৎ ভাই দিয়ে নিয়ে আসবে কদিন।এরপর তো তুমি নিজেই চিনে বুঝে নিবা সব।”
“আচ্ছা ভাবি একটা প্রশ্ন করি?”
“একটা না হাজারটা করো কোনো সমস্যা নেই।”
“সেদিন চাচী আর চাচা বলছিলো তোমার আর শরৎ ভাইয়ের বিয়েটা নাকি শরৎ ভাইয়ের অমতে হয়েছিলো।আর তোমার বড় বোন নাকি বিয়ের দিন পালিয়ে গিয়েছিলো,শরৎ ভাই নাকি তোমাকে শুধু দায়িত্বের কারণেই মেনে নিচ্ছে।আদেও কি শরৎ ভাই তোমায় ভালোবাসে না?”
চারুর কথা শুনে থমকে গেলাম আমি।তাহলে কি শরৎ ভাইয়ের ব্যাক্তিগত কথাগুলো আর ব্যাক্তিগত নেই?সবাই সবটা জেনে যাচ্ছে।আর জানবেই না বা কেনো?সত্য তো আর কখনো চাপা থাকে না।চারুর কথাগুলো শোনার পর আমি ওকে ঠিক কি উত্তর দেবো বুঝে উঠতে পারলাম না।আমি কথা কাটাতে ওকে তারা দিয়ে বলে উঠলাম…
“চারু তোমায় বোধয় মামনি ডাকছে।”
আমার কথা শোনা মাত্রই ও দ্রুত পায়ে হেঁটে হেঁটে মামনির ঘরের দিকে চলে গেলো চারু।চারু যাওয়া মাত্রই আমার বাধ না মানা চোখের জলেরা গাল বেয়ে বেয়ে পড়তে লাগলো।হুট করেই মনে হতে লাগলো শরৎ ভাই আর আমার বিয়েটা না হলে হয়তোবা আমার এতোসব সহ্য করতে হতো না,নাইবা শরৎ ভাই নিজেই এতো কষ্ট পেতো।কি লাভ হলো শরৎ ভাইকে এভাবে পেয়ে?যে পাওয়াতে কোনো প্রাপ্তি নেই।নেই কোনো সুখ,আর না আছে আনন্দ।ফোনের শব্দে আমার ধ্যান ভাংলো।আমি ফোনটা হাতে নিয়ে কলটা রিসিভ করলাম।বরাবরের মতোই দির ফোন।ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম দির আনন্দে ঘেরা কন্ঠস্বর। দি আমাকে প্রশ্ন করলো…
“কিরে বরকে পেয়ে তো আমাকে ভুলে বসেছিস।অনু দি কে তো মনে পড়ে আর, তাই না!”
দির অভিযোগে মাখা প্রশ্নের উত্তরে আমি বলে উঠলাম…
“আমি তো তাকে ভাগ্যের জোড়ে পেয়েছি দি।সে তো এখনো তোকে হৃদয় থেকে চায়।যদি সম্পর্কটাতে তুই অনিশ্চিতই ছিলি তবে তাকে কেনো এমন মায়ায় জড়ালি দি?যে মায়ার বেড়াজাল ছিড়ে সে এখনো বের হতে পারছে না।তুই তো সবার ভালোর জন্যেই এমনটা করছিলি দি।আমি কেনো ভালো নেই দি?শরৎ ভাইও যে ভালো নেই।আমার ভালো না থাকা আমায় যতোটা পোড়ায় তারে চেয়ে বেশি পোড়ায় শরৎ ভাইয়ের ভালো না থাকা।এই দহনে পুড়তে পুড়তে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি দি।আমি আর নিতে পারছি না।কেনো আমার সাথেই এমনটা হলো বল!আমি তো সবটা মেনে নিয়েছিলাম।তবে কেনোই বা এমনটা হলো আমার সাথে আমি তো হুট করেই এমন পরিবর্তন চাইনি।”
ছোটো বোনের এমন আর্তনাদ শুনে যেনো কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে অনুর।ছোট বেলা থেকেই সে শ্রীজা কে খুব বেশি ভালোবাসে।কিন্তু তারা করা এমন ভুল যে তার প্রিয় বোনটাকে এভাবে পোড়াবে তা ভাবার বাইরে ছিলো অনুর।অনু শ্রীজাকে ভরসা দিয়ে বলে উঠলো…
“এভাবে বলতে হয় না শ্রীজা।ধৈর্য ধর একদিন ঠিকই ফল পাবি।হুট করেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে না বল।ধীরে ধীরে ঠিক হবে।আর তার জন্য তো তোকে সবার আগে শক্ত হতে হবে।তুই শক্ত না হলে সম্পর্কটা জোড়া লাগবে কি করে?তোরা দুজনেই ভেঙ্গে পড়লে সম্পূর্কটাকে শেষ পর্যন্ত দেখবে কে?তোদের সম্পর্কের একটা নাম তৈরি হয়েছে।একটা পরিচয় সৃষ্টি হয়েছে।ধীরে ধীরে তা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হতে সময় লাগবে শ্রীজা।সবুর কর।পৃথিবীতে কেউই হুট হাট করে সফল হতে পারেনি শ্রীজা।আর প্রসঙ্গ যখন ভালোবাসার।পুড়তে তোকে অবশ্যই হবে।হাজার বার পুড়তে হবে,বার বার ভেতর থেকে আঘাত পেতে হবে।আশেপাশের বাঁধা বিপত্তি গুলোকে পার করেই তুই ভালোবাসার সজ্ঞা বুঝতে পারবি।তোর অনুভুতীগুলো আর ভালোবাসা এতোটাও ঠুনকো নয় যে এতো দ্রুতই হেরে যাবে।আমার শ্রীজা স্ট্রং গার্ল না?শ্রীজা কে তো পারতেই হবে।শ্রীজা কী পারবে না?”
দির কথা শুনে মনে হালকা শক্তি আর শান্তি এলেও আমি নিজের ওপর ভরসা করতে পারছি না।আমি আদেও জানি না আমি পারবো কিনা।আমি দ্বিধা-দন্দ নিয়ে বলে উঠলাম…
” আ আমি বোধয় পারবো…. ”
“হুসসস,আমার শ্রীজা পারবে।”
আমাকে না শব্দটি উচ্চার করতে না দিয়েই আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলে উঠলো দি।দি আবার বললো…
“সব সময় এমন কাদিঁস কেনো শ্রীজা?শরৎ কিন্তু হুট হাট কান্না একদমই পছন্দ করে না।ও সব সময় চঞ্চলতা,হাঁসি খুশি,আনন্দ এসবকে পছন্দ করে।আর তুই কি করিস?ও যেটা একদমই পছন্দ করে না,তুই ওর সামনে সেটাই করিস।এ ভুল আর করা যাবে না শ্রীজা।আজ থেকে আমাদের আগের শ্রীজা ব্যাক আসবে।কোনো ছিচ-কাদুঁনি শ্রীজা যে আমাদের মাঝে ছিলো তা আমরা কাউকে বুঝতেই দিবো না।ছিচ-কাদুঁনি শ্রীজার অস্তিত্বই বিলীন করে দিবে আমাদের আগের শ্রীজা।তাই নয় কি?”
আমি দির কথা শুনে কান্নার মাঝেও হুট করেই হেঁসে দিলাম।মুখ মুছতে মুছতে বললাম…
“হুম।”
“বোনকে তো ঈদের দিন ফোন টোনও দিলি না,নতুন বর পেয়ে ভুলে গিয়েছিস বুঝি বুঝি।”
আমি হালকা হেঁসে চোখ মুছে ভেংচি কেটে বললাম…
“কচু বোঝো তুমি!কার সাথে প্রেম করলা ৩ বছর,একটা নিরামিষ। বিয়ের পর দুটো সুখ দুঃখের আলাপও করলো না।দেবদাস মার্কা জামাই জুটলো আমার কপালে।”
আমার কথা শুনে দি হু হু করে হেঁসে উঠে বললো…
“তার জন্য তো আগে ভাগে তোর মিহাদ ভাইয়ের কাছে এসে পড়েছি।বড় বাঁচা বাচঁলামরে বাবা।”
আমি বললাম…
“আর আমার শরৎ ভাইয়ের মতো একটা নিরামিষ লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে জীবনটার দফারফা করে দিলে।বলি এমন হলে তো আর কোনোদিন মা ডাক শোনা হবে না।কি কপাল আমার!”
“আমাকে তোর নিরামিষ মনে হয়?সিরিয়ালি শ্রীজা?”
আচমকা শরৎ ভাইয়ের কন্ঠস্বর শুনে ভয়ে কেঁপে উঠলাম আমি।এইরে কেলো করেছে
এবার কি হবে?শুনে ফেললো না তো।ধুর না শুনলে কি আর আমাকে এই প্রশ্ন করছে্।আমি বুদ্ধি করে ফোনটা দ্রুত কেঁটে দিলাম,আর লক করে ফেললাম।শরৎ ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন…
“সত্যি তোর আমাকে নিরামিষ মনে হয়?”
আমি হালকা হাসাঁর চেষ্টা করলাম।মাথা নেড়ে হাসঁতে হাঁসতে অবুঝের মতো বললাম…
“ক ক কই আ আপনি নির নিরামিষ শরৎ ভাই, আমি তো বলছিলাম আ আপনার মতো মহান আর আমিষ লোক এ ধরনীতে আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।একেবারেই দুষ্কর। হে হে হে।আ আমি তো নির আমিষ বলি নি শরৎ ভাই।এক একদম বলিনি।আর আমি কি নিরআমিষ আর আমিষের পার্থক্য বুঝি না নাকি?আমি কি বোকা নাকি?হে হে হে।”
আমার কথা শুনে শরৎ ভাই বিজ্ঞদের মতো করো থুতনিতে দুহাত রেখে মাথা নেড়ে বললেন…
“ওহ্ আচ্ছা।তাহলে আমিই বোধয় ভুল শুনেছি।তুই তো বোকা না অনেক চালাক,অনেক কিছু বুঝিস তাই না?”
আমি পেছাতে পেছাতে হালকা হেঁসে ঘাড় নেড়ে বললাম…
“হ্যাএএএএ,আমি আমি অনেক কিছুই জানি শরৎ ভাই।”
“তাহলে আমিষ নিরামিষের পার্থক্যটা কি আমাকে ইকটু বুঝিয়ে বল তো।আসলে আমি এইসব বিষয়ে অনেক অজ্ঞ।তাই তোকে জিঙ্গেস করলাম।”
“আস আসলে শরৎ ভাই আমিষ হচ্ছে মাছ মাংস এসব আরকি।আর নিরামিষ হচ্ছে শাক-সবজি এসব।”
“আর আমি?”
“আপনি….”
#চলবে..