#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৩
দূর্বল প্রায় শরীর নিয়ে আরাবী নেতিয়ে পরেছে প্রায়।লেপ্টে আছে জায়ানের বক্ষে।জোড়ালো কান্না থেমেছে।তবে এখনও হালকা আওয়াজে কাঁদছে আরাবী। কান্নার ধিমিকে কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীর।হিঁচকি উঠে গিয়েছে।জায়ানের আর সহ্য হচ্ছে না আরাবীর কান্না। আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে জায়ান বলে উঠে, ‘ হয়েছে তো! আর কাঁদেনা।’
আরাবী ঠোঁট কামড়ে ধরলো।কান্না থামানোর জোড়ালো প্রয়াস চালালো।ভাঙ্গা আওয়াজে বললো, ‘ আমি পা…পারছি না তো।আমার ভাবতেই শরীর ঘিনঘিন করছে। ওই শয়তান আ..আমায় স্পর্শ করেছে জায়ান। আ..আমার শরীরের উপর ঝাপিয়ে পরেছিলো।আ..আমার এখানে,এইদিকে, এই জায়গায় স্পর্শ করেছে।’
বলতে বলতে আরাবী ওর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দেখাচ্ছে যেখানে আদি ওকে বাজেভাবে স্পর্শ করেছে।আরাবী অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায় জায়ানের দিকে।বলে, ‘ আমার ঘৃনা লাগছে।বমি পাচ্ছে জায়ান।আমি কিভাবে ভুলবো এসব? আ..আজ আপনি সময় মতো না আসলে। আ..আমার সাথে ও….!’
অর্ধেক বলে আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পরলো আরাবী। মেয়েদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তাদের ইজ্জত।আর যখন সেই ইজ্জতের দিকে কেউ হাত বাড়ায় তখন সেই মেয়ের কাছে ঠিক কি অনুভূত হয় তা সে ছাড়া আর কেউ জানে না।কতোটা বাজেভাবে মনের মাঝে আঘাত করে তা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।আরাবীর সারা শরীর এখনো কাঁপছে ভয়টা এখনো কাটাতে পারছে না আরাবী। জায়ানের চোখজোড়া লাল হয়ে এসেছে।ছেলে মানুষ কাঁদতে পারেনা।ওরা যদি কাঁদতে পারতো। তাহলে অন্তস্থল হৃদয়টা নামক যন্ত্রটায় ঠিক কতোটা বাজেভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা বুঝি সবাইকে বোঝাতে পারতো।কিন্তু আফসোস।জায়ান চোখ বুঝে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।দুহাতে আরাবীর গাল ধরে ওর মুখটা উঁচু করে আরাবীর কপালে চুমু খেলো। ধরা গলায় বলে, ‘ আমি আছি তো।আর কেউ তোমাকে কিছু করতে পারবে না।আজকের মতো ভুল আমি আর কখনো করবো না।আমার আরাবীকে আমি আর কখনো একা ফেলে যাবো না।সবসময় তাকে আগলে রাখবো আমার বুকের মাঝে।যাতে আর কেউ তাকে বাজেভাবে স্পর্শ করতে না পারে।তুমি ভয় পেও না।তুমি তো আমার স্ট্রোং গার্ল। আর কাঁদেনা।’
আরাবী জায়ানের চোখের দিক নিস্প্রভভাবে তাকিয়ে রইলো।এক সেকেন্ডের জন্যে পলক ফেললো না।টপটপ করে অশ্রু ঝরছে ওর চোখ দিয়ে।জায়ান বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা আরাবীর চোখের জলগুলো মুছে দিলো।চুমু খেলো ওর সিক্ত চোখজোড়ায়। একটু সরে আসতেই আরাবী আবারো দৃষ্টি নীবদ্ধ করলো জায়ানের দিকে।হঠাৎ কেমন যেন অদ্ভুত একটা কন্ঠে আরাবী বলে উঠলো, ‘ বিয়ে করবেন আমায়?’
জায়ান অবাক হলো আরাবীর কথায়।বিয়ে তো ও করবেই আরাবীকে।সেটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে।তবে আরাবীর মুখে এই কথাটা শুনে বেশ শান্তি লাগলো জায়ানের।বললো, ‘ হ্যা করবো তো।তোমাকে করবো না তো কাকে করবো?’
আরাবী জায়ানের হাত খামছে ধরলো বললো,’ আমি সেটা বলছি না।আমাকে বিয়ে করবেন।তাও আজ, এক্ষুনি!’
চমকে উঠলো জায়ান আরাবীর কথায়।খানিক স্তব্ধ ভঙ্গিতে থম মেরে রইলো। পরক্ষণেই আরাবীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে, ‘ করবো বিয়ে।কিন্তু আজ না। আজ তুমি অসুস্থ।আমি নূরকে ডাকছি। ওর সাহায্যে গোসল করে ফ্রেস হয়ে নেও।অনেক আঘাত পেয়েছো শরীরে মেডিসিন লাগাতে হবে।খাবার খেয়ে,ওষুধ খেতে হবে।তারপর বিশ্রাম করিও।’
জায়ানের এরকম কথায় আরাবীর যেন রাগ হলো অনেক।এক ঝটকায় জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ‘ নাহ! এক্ষুনি বিয়ে হবে।যদি আজ আপনি আমায় বিয়ে না করেন।তাহলে আমি আর আপনাকে বিয়ে করবো না।চলে যাবো আমি এখান থেকে।আর আমাকে খুজেও পাবেননা আপনি।’
জায়ান থমকে গেলো আরাবীর কথায়।আরাবীর দিকে তাকালো।মেয়েটা কেমন থরথর করে কাঁপছে।ভালোভাবে তাকাতেও পারছে না।জায়ান বুঝলো আজকের ঘটনাটা বেশ ভালোভাবেই ইফেক্ট করেছে আরাবীর মন,মস্তিষ্কে।আরাবী যে ওকে নিয়ে প্রচন্ড ইনসিকিউরড ফিল করছে বুঝতে পারছে জায়ান। তাই আর কোন তর্কে জড়ালো না।আরাবীর বাহু ধরে ওকে নিজের কাছে এনে বলে, ‘ আচ্ছা আজই হবে আমাদের বিয়ে। তুমি কোন চিন্তা করো না।আমি তোমারই।আমি তোমাকে রেখে কোথাও যাবো না। তুমি থাকো।আমি নূরকে ডাকছি।ওর সাহায্যে ফ্রেস হয়ে নেও। ক্ষতগুলোতে মেডিসিন লাগাও,খাবার খেয়ে ওষুধ নিবে ঠিক আছে?আমি ততোক্ষনে সব ব্যবস্থা করছি।’
আরাবীর কপালে চুমু খেয়ে জায়ান ওকে সুইয়ে দিয়ে বাহিরে চলে আসলো।সোজা নিচে নেমে আসলো। বাড়ির সবাই সেখানে বসে আছে।জায়ানকে আসতে দেখে আরাবী মা ধুকরে কেঁদে উঠলেন।বললেন,’ আমার মেয়েটা কেমন আছে বাবা?আমি কি যাবো?’
জায়ান আরাবীর মায়ের কাছে গেলো।বললো, ‘ চিন্তা করবেন না আন্টি।ও ঠিক আছে।’
‘ আমার মেয়েটার সাথেই কেন এসব হয়?সবার কুনজর কেন থাকে আমার মেয়েটার উপর।আল্লাহ্ যেন ওর সব বিপদ আমাকে দিয়ে দেন।তাও আমার মেয়েটা যেন আর দুঃখ না পায়।’
জায়ান ক্রোধপূর্ণ কন্ঠে ইফতিকে বললো,’ ওই কুকুরের বাচ্চা কই ইফতি?’
ইফতি বলে, ‘ ভাই ওকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছে।তুমি চিন্তা করো না।’
জায়ান হাতমুষ্টিবদ্ধ করে বলে, ‘ পুলিশকে বলবি ওকে যেন টাচ না করে তারা।যা করার আমিই করবো কাল গিয়ে।’
ইফতি সম্মতি জানালো।
জায়ান রাগটাকে সামলে নিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো।নূরকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ নূর।যা আরাবীকে ফ্রেস হতে সাহায্য কর।ক্ষতস্থানগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিস।আর হ্যা ভালোভাবে চেক করিস কোথায় কোথায় আঘাত লেগেছে।’
নূর মাথা দুলালো, ‘ আচ্ছা ভাইয়া।তুমি চিন্তা করো না।’
নূর চলে গেলো।আরাবীর মা বললো, ‘ আমিও যাই বাবা।মেয়েটাকে একটু বুকে না নিলে শান্তি পাবো না।’
জায়ান থমথমে গলায় বলে, ‘ নাহ আন্টি এখন যাবেন না।জরুরি কথা আছে আপনাদের সবার সাথে?’
সাথি ভ্রু-কুচকে তাকালেন ছেলের দিকে। বললেন,’ আশ্চর্য? তোর কথার থেকে কি?উনি উনার মেয়ের কাছে যাবে সেটা ইম্পোর্টেন্ট নাহ?’
‘ হ্যা জানি আমি।তবে আমি যা বলবো সেটা আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ! ‘
জায়ানের কথায় নিহাদ সাহেব গম্ভীর গলায় বললো, ‘ কি এমন কথা শুনি?’
জায়ান সবার দিকে এমপলক তাকালো।ফের বললো, ‘ আজ আর এক্ষুনি আমার আর আরাবীর বিয়ে হবে। ওকে আমি এইমুহূর্তে বিয়ে করবো।’
চমকে উঠলেন সবাই।নিহাদ আর সাথি ছেলের কথায় বেশ রেগে গেলেন।এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো। আর এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে পারে ছেলেটা বিয়ের কথা বলতে? নিহাদ সাহেব বেশ রাগি গলায় বলে, ‘ মাথা ঠিক আছে তোমার?কি যা তা বলছো?’
জায়ান ঠান্ডা কন্ঠে বলে, ‘ আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি বাবা!’
আরাবীর মা করুন গলায় বললেন, ‘ বাবা! মেয়েটা আমার অসুস্থ। এমন অবস্থায় বিয়েটা না করলে হয়না।দুদিন বাদে তো এমনিতেও বিয়ে হতো।’
জায়ান শ্বাস ফেললো উনার কথায়। বললো, ‘ আমিও সেটাই বুঝিয়েছিলাম আপনার মেয়েকে।কিন্তু তিনি আমার কথা শুনতে নারাজ।সে করতে চায় আর তা এক্ষুনি।তাকে আমি শতবার বুঝিয়েও লাভ হয়নি।তিনি তার কথাতেই অটল।’
সবাই একে-অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো।এইবার সবাই বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা।যে এই সিদ্ধান্ত জায়ান নেই নি। জায়ান এতোটাও কান্ডজ্ঞানহীন না। আরাবীই ওকে জোড় করেছে। আরাবীর দিকটা ভেবে সবাই রাজি হয়ে গেলো।জায়ান সবার সম্মতি পেয়ে গম্ভীর স্বরে বললো, ‘ জায়ান কাজি আর হুজুরের ব্যবস্থা কর। এতোদিনে তোর বোন আমার কাছে এই একটা আবদার করেছে।আমি কি তা না রেখে পারি বল?উলটো আমি নিজেই তো এইদিনটার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম।আর তোর বোন নিজেই সেই অপেক্ষার অবষান করার ইচ্ছা পোষণ করেছে।যা দ্রুত।আর দেরি করিস না।’
ইফতি জায়ানের কথায় মাথা নাড়ালো।বেশ হাসিমুখেই ভাইয়ের কথামতো কাজে লেগে পরলো।
#চলবে_________
#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৪
‘ ভাই কাজি আর হুজুর এসে পরেছেন।এইবার আরাবীকে আসতে বলো!’ ইফতির প্রশ্নে জায়ান নূরকে মেসেজ করে দিলো।আরাবীকে নিয়ে নিচে আসতে।
জায়ানের মেসেস পেয়ে নূর আরাবীকে বলে, ‘ ভাবি নিচে চলো।ভাইয়া মেসেজ দিয়েছে।’
আরাবী নূরের কথায় সম্মতি জানিয়ে নূরের সাহায্যে উঠে দাড়ালো।আসলে আদি যখন দিয়ে ওকে ফ্লোরে ফেলে দিয়েছিলো তখন পেটে খুব ব্যাথা পেয়েছিলো আরাবী।তাই এখন ওর হাটতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে।নূর আরাবীকে এইভাবে হাটতে দেখে প্রশ্ন করলো, ‘ আর ইউ ওকে ভাবি?’
আরাবী দূর্বল কন্ঠে বলে, ‘ হ্যা। আমি ঠিক আছি চিন্তা করো না।’
আরাবী সিড়ির কাছে আসতেই শুকনো ঢোক গিললো।এখন এই সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে ভেবেই আরাবীর গলায় শুকিয়ে আসলো।তাও আস্তে আস্তে নামতে লাগলো।এদিকে ইফতি নূর আর আরাবীকে দেখেই বললো, ‘ ভাই আরাবী এসেছে।’
জায়ান পিছন ফিরে তাকালো।আরাবীও জায়ানের দিকেই তাকিয়েছিলো।জায়ানের চোখে আরাবী দেখতে পেলো একরাশ মুগ্ধতা।কিভাবে তাকিয়ে আছে লোকটা।আরাবী বেশ লজ্জা পেলো।চোখ নামিয়ে নিলো আরাবী।তবুও আঁড়চোখে তাকাচ্ছে।লোকটাকে শুভ্র পাঞ্জাবীতে অমায়িক সুন্দর লাগছে।জায়ানকে পাঞ্জাবিতে এই প্রথম দেখলো আরাবী।বেশ মানায় লোকটাকে পাঞ্জাবীতে।আরাবী যখন নিজের ভাবনায় ব্যস্ত।তখন হুট করে একজোড়া বলিষ্ট হাত ওকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো।লোকটা যে জায়ান ছাড়া কেউ না তা আরাবী ভালোভাবেই জানে।তবেআকস্মিকতায় আরাবী ঘাবড়ে গিয়ে জায়ানের ঘাড় আর বুকের কাছের পাঞ্জাবির অংশ খামছে ধরলো।ভীতু চোখে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ এইভাবে হুট করে কোলে নেওয়ার মানে কি? ভয় পেয়েছি তো আমি।’
জায়ান হালকা রাগি স্বরে বললো, ‘ পেটে যে ব্যাথা হচ্ছে সেটা আমাকে জানাও নি কেন?আর নূরকেও মনে হয় বলোনি?এতো কেয়ারলেস কেন তুমি?’
আরাবী হা হয়ে গেলো জায়ানের কথায়।ও তো জায়ানকে ব্যাথার কথা বলেনি। তবে লোকটা জানলো কিভাবে।জায়ান আরাবীকে নিয়ে নিচে নামতে নামতে বললো, ‘ অবাক হওয়ার কিছু নেই।যেইভাবে পেট চেপে ধরে একটু পরপর নাক মুখ কুচকে ফেলছো।তাতেই আমি বুঝি গেছি।বেশি সমস্যা হলে বলো।ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।থাক তা লাগবে না আমি ডাক্তারকে ফোন করে আসতে বলবোনি।’
আরাবী মিনমিনে কন্ঠে বলে উঠে, ‘ আরে তা লাগবে না।একটু ব্যাথা করছে।ঠিক হয়ে যাবে। আর তাছাড়া এতো রাত হয়ে গিয়েছে শুধু ডাক্তারকে আনা লাগবে না।’
জায়ান আরাবীকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো, ‘ তোমায় বেশি পাকনামি করা লাগবে না আমি আমারটা বুঝে নিবো।তখনও ফোন দিতে চেয়েছিলাম তুমি ফোন দিতে দিলে না।বললে অল্প একটু ব্যাথা।কিন্তু এখন তো আমি দেখছি অন্য কিছু। আর একটা কথাও বলো না।’
আরাবী কথা বাড়ালো না।সে জানে এই লোককে এখন এসব কিছু বলে লাভ নেই।তাই চুপচাপ থাকলো।জায়ান ডাক্তারকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলে।তারপর সোফায় আরাবীর পাশে এসে বসলো। জায়ান ইশারা দিতেই আগে হুজুর নিজের কাজ শুরু করলেন।হুজুর যা যা করতে বললেন জায়ান সব যথাযতভাবে বললো।বাবার দায়িত্ব অবশ্য মিহান পালন করেছে। জায়ানকে কবুল বলতে বললে জায়ান বেশ স্বাভাবিকভাবেই তিন কবুল বলে ফেললো। আরাবীর পালা আসলে আরাবী ছলছল চোখে ওর মায়ের দিক তাকালো। আরাবীর মা এসে মেয়ের পাশে বসলেন।আরাবী চোখের জল ফেলে দিয়ে মায়ের হাত আকঁড়ে ধরলো।আরাবীর মা, আরাবীর বাবার একটা ছবি আরাবীর দিক এগিয়ে দিলো।আরাবী সেটা হাতে নিলো।কি সুন্দর একটা ছবি।ওর বাবা ওকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর আরেক হাতে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে আছে।সবার মুখে তৃপ্তির হাসি।আরাবী ছবিটা বুকে জড়িয়ে নিলো। তারপর ভাঙ্গা গলায় থেমে থেমে তিনবার কবুল বলে ফেললো। কাজিও নিজেও খুব সুন্দরভাবে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি পেপার এগিয়ে দিলেন।আর জায়ান ফটাফট সুন্দরভাবে সাইন করে দিলো।আরাবীও কোন আস্তেধীরে সাইন করে দিলো। সব কিছু সুন্দরভাবে হয়ে যেতেই সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।আজ থেকে ধর্মীয়ভাবে আর আইনগতভাবে দুইভাবেই জায়ান আর আরাবী স্বামি স্ত্রী হয়ে গেলো। পূর্ণতা পেলো ওদের ভালোবাসা।সারাজীননের জন্যে একে-অপরের সাথে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হলো।
বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই সাথি আর মিলি মিষ্টি এনে সবাইকে খাইয়ে দিলেন।অবশ্য মিষ্টি ইফতি নিয়ে এসেছিলো।কাজি আর হুজুরকে নিয়ে আসার সময়।সাথি আরাবীকে নিজের সাথে নিয়ে একটু পরেই চলে গেলেন। আরাবী চুপচাপ নিজের শাশুড়ি মায়ের সাথে চললো।সাথি আরাবীকে নিয়ে নিজেদের বাড়ি এসে সোজা নিজের রুমে নিয়ে গেলেন।আদুরে গলায় বলেন, ‘ তুমি এখানে একটু বসো কেমন আম্মু!’
আরাবী ধীরে বললো,’ আচ্ছা আন্টি।’
সাথি হালকা রাগ দেখালেন।বললেন, ‘ আন্টি কি আম্মু বলো!’
আরাবী মুখটা কাচুমাচু করে বললো, জি আম্মু।’
সাথি খুশি হয়ে আরাবীর কপালে চুমু দিয়ে দিলেন।
হঠাৎ নূরের কন্ঠ পাওয়া গেলো, ‘ মা ডাক্তার আন্টি এসেছেন। ভাবির চেক-আপ করানোর জন্যে।’
সাথি অনুমতি দিতেই নূর ডাক্তারকে নিয়ে ভীতরে আসলেন।আরাবীকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে তিনি আরাবীকে সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলেন।আরাবী আস্তে ধীরে সবটা বললেন।ডাক্তার ভালোভাবে আরাবীকে চেক-আপ করে নিলেন।তারপর বেশকিছু ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করে দিয়ে চলে গেলেন।তিনি যেতেই সাথি আরাবীকে উঠিয়ে ওয়াশরুমে গেলেন।নিজেও আরাবীকে হাতমুখ ধুতে সাহায্য করলেন। তারপর আরাবীকে নিয়ে রুমে আসতেই।তিনি বললেন,’ বিয়ের জন্যে তো কতো শপিং করলাম তোমার জন্যে।কিন্তু এইভাবে হয়ে গেলো বিয়েটা।যদি তুমি বেশি অসুস্থ ফিল না করো।তাহলে বিয়ের শাড়িটা তোমায় পরিয়ে দেই আমি?আমার ছেলেটা বড্ড শখ করে কিনেছে তোমার জন্যে।অবশ্য তোমার বিয়ের সকল শপিং জায়ান নিজেই করেছে।কাউকে দেখতে দেইনি।শুধু আমাকে দেখিয়েছে। কি বলো পরবে?’
আরাবীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সে অবশ্যই পরবে।কেন পরবে না?তার জায়ান তার জন্যে শাড়ি কিনেছে আর সে পরবে না?তারও তো অনেক শখ সে লাল টুকটুকে বউ সাজবে তার জায়ানের জন্যে।আরাবী হাসিমুখে সম্মতি জানালো। সাথি বেশ খুশি হলেন।সাথে সাথে নিজের ছেলের বউকে বিয়ের শাড়ি পরিয়ে দিতে লাগলেন।হাল্কা কিছু স্বর্ণের গহনাও পড়ালেন।তারপর নিজের হাতে আরাবীকে মেক-আপ করিয়ে দিলেন।চুলটাও বেশ সুন্দরভাবে সেট করে দিলেন।পুরো সাঁজ কমপ্লিট হতেই সাথি যেন চোখ সরাতে পারছে না আরাবী থেকে। আরাবীর কপালে চুমু দিয়ে হাসি মুখে বলেন,’ মাশা-আল্লাহ! আমার ছেলের বউকে একদম রানির মতো লাগছে।’
সাথি নিজের হাতে বালাদুটো খুলে আরাবীকে পরিয়ে দিলেন।তারপর বলেন,’ আমি যখন বিয়ে করে এসেছিলাম আমার শাশুড়ি আমাকে এই বালা দুটো দিয়েছিলেন।বাড়ির বড় বউদের জন্যে নাকি এটা বানানো হয়েছে।আমার শাশুড়িকে তার শাশুড়ি দিয়েছিলেন আর তিনি দিয়েছিলেন আমাকে।আর আমি আজ দিলাম আমার ছেলের বউকে।’
আরাবী হাতের বালা দুটো স্পর্শ করে হালকা হাসলো।তারপর আয়নার দিকে দিকে তাকালো। লাল টুকটুকে স্টোন ওয়ার্ক করা বেনারসি শাড়ি, মাথায় গোল্ডেন কালার ওড়না দেওয়া তাতেও স্টোন ওয়ার্ক করা,খোপা করা চুলগুলোতে লাল গোলাপ লাগানো, গলায় চিকন একটা স্বর্ণের নেকলেস, কানে স্বর্ণের দুল, নাকে ডায়মন্ডের নোসপিন,হাতে সাথির দেওয়া বালাজোড়া, আঙ্গুলে আজকের এংগেজমেন্টের আংটি আর সাথে এখন যোগ হয়েছে আরো একটা স্বর্ণের আংটি।বেশ হালকা মেক-আপ করে দিয়েছে সাথি। আরাবী নিজেকে দেখে নিজেই অবাক।বিয়ের সাজে যে ওকে এমন অদ্ভূত সুন্দর লাগবে ভাবেনি আরাবী। নাকি আজ শাশুড়ি নামক আরেক মা সাজিঁয়ে দিয়েছে এই জন্যে সুন্দর লাগছে বেশি? আরাবী জানে না।আরাবী সাথির কাছে এসে সাথিকে জড়িয়ে ধরলো। ধরা গলায় বলে, ‘ ধন্যবাদ আম্মু।আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।সব আপনার জন্যে।আমার মা আমাকে সাজিয়ে দিয়েছেন এই জন্যেই আমাকে এতো বেশি সুন্দর লাগছে।ধন্যবাদ আম্মু।অনেক অনেক বেশি ধন্যবাদ।’
সাথির চোখের কোনেও জল জমেছে।এমন একটা ভালো মনের মেয়েকে নাকি তিনি দেখত পারতেন না।কতো কথা শুনিয়েছেন।অপমান করেছেন।সেসব মনে পরলে নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যান সাথি।সাথি আরাবীকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে ওয়াদা করলো এউ মেয়েটাকে ছেলের বউ না নিজের মেয়ের মতো রাখবেন তিনি। কখনো ওকে কষ্ট পেতে দিবেন না আরাবীকে। ভাবতেই হালকা হাসলেন সাথি।
#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।