#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২৩)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা দিয়ে শুরু হয় তায়েস আর নূরের সকাল’টা।
স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ফযর নামায পড়ে ঘুমিয়েছে।
তায়েস আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে বাহিরে বের হয়।নূর তখনো ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।বেলা দশটার উপরে বাজে তখন তায়েস রুমে ফিরে দেখে নূর তখনো ঘুমিয়ে আছে।তাই পাশে বসে আলতো হাতে নূরের এলোমেলো বেবি হেয়ার গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বললো,
-“এই যে ড্রামা কুইন দেশ যে স্বাধীন হয়ে গেছে! সে সম্পর্কে আপনি অবগত আছেন?
নূর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
-“সে তো আমার জন্মের আগেই হয়েছে। এখন আবার কি স্বাধীন হয়েছে?
এই কথা বলে আবার পুনরায় ঘুমিয়ে পরলো নূর।তায়েস অনেক বার ডেকে যখন ব্যর্থ হলো তখন দুষ্টুমি মাথায় ভর করলো তার।
বাথরুমে গিয়ে বার্থটবে গরম আর ঠান্ডা পানির মিশ্রণে পানি তৈরি করে রুমে ফিরে এলো।
আচমকা পাঁজা কোলে তুলে নিল নূর কে! নূরের ঘুম হালকা হয়ে এসেছে এর ফলে।গলা জড়িয়ে ধরে তায়েস এর।পিট পিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে বললো,
-“কোথায় যাচ্ছি আমরা?
তায়েস নূরের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের সাথে নিজের ঘ্রাণেন্দ্রিয় স্পর্শ করে বললো,
-” চলো তারপর দেখতে পারবে বেব!
এই বলে হাঁটা শুরু করে বাথরুমের দিকে।
বাথরুমে ঢুকলে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে নূর বললো,
-“এখানে কেন?
তায়েস এর পাল্টা জবাব না দিয়ে আচমকা বার্থটবে বসিয়ে দিল নূর কে! নূর মুখশ্রী বিকৃতি করে চিৎকার করে উঠল।
এদিকে তায়েস হাসতে হাসতে শেষ নূরের এমন হতবিহ্বল মুখশ্রী দেখে।
নূর কিছুক্ষণ ভেবে এক মগ পানি ঢেলে দিল তায়েস এর গায়ে!তায়েস বরকে গিয়ে বললো,
-“এটা কি ঠিক হলো?
এবার নূর হাসতে হাসতে বললো,
-“বেশ করেছি পানি দিয়েছি প্রয়োজন হলে আরো দিব।
এই বলে আরো পানি ঢেলে দিল তায়েস এর গায়ে। এবার দু’জনের অবস্থা ভিজে একাকার।
.
.
কিছুদিন পর এক সকালে,
ফয়জান কল করে রামিসা আর কায়েস কে তাদের বাসায় ইনভাইট করলো। বললো সকালের নাস্তা যেন তাদের সাথেই করে।
রামিসা আর কায়েস তৈরি হয়ে ঐ বাসায় রওনা হয়।কায়েস দের বাসা থেকে ফয়জান দের বাসা পাঁচ মিনিটের ব্যবধান।
তাই খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায় তারা।
গেইটে কলিং বেল বাজালে ফাইজা এসে দরজা খুলে দিল।
ফাইজা জানতো না যে কায়েস আর রামিসা আসছে তাই ওদের দুজনকে দেখে বরকে গেল খানিকটা।
কায়েস ও খানিক অবাক হয়ে তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
রামিসা অনেক দিন পর আপু কে দেখতে পেয়ে জরিয়ে ধরে বললো,
-“আপু কেমন আছো তুমি? তুমি আসছো আমাকে একবার ও বললে না? এভাবে আমাদের ছেড়ে কষ্ট হয় না তোমার? কিভাবে পারো আমাদের ছেড়ে থাকতে বলো?
ফাইজা বোনের পিঠে আলতো হাত বুলিয়ে বললো,
-“ভিতরে আয় পাগলী। একসাথে এতগুলোর জবাব দেই কি করে?
তারপর কায়েস কে ও ভদ্রতার খাতিরে বললো,
-“ভাইয়া ভিতরে আসেন?
দুই বোন ভিতরে চলে আসলে, কায়েস ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সোফার এক কোণে বসে থাকে। তখন ফাহমিদা, ফয়জান আসলে তাদের সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে।
আর রামিসা তার আপু কে পেয়ে মন খুলে গল্প করা শুরু করে।
ডাইনিং টেবিলে আলো আর ফাহমিদা নাস্তা সাজানো শেষ হলে সবাই কে খেতে আসতে বলে।
তারপর আলো ছাড়া সবাই একসাথে খেতে বসে। খাবার টেবিলে রামিসা খেয়াল করে কায়েস কে। লোকটা মাথা নিচু করে যে খাচ্ছে আর মাথা উপরে তুলছে না। নিশ্চয়ই ফাইজার কারণে।
খারাপ লাগলেও আনন্দ লাগছে রামিসার এরকম একজন সৎ,দ্বীনদার জীবন সঙ্গী পাওয়ার জন্য। শুকরিয়া আদায় করতে আলহামদুলিল্লাহ বললো মনে মনে। নিজের আপুর প্রতি ও কৃতজ্ঞ সে। আজকে ফাইজার কারণেই সে এমন একজন মানুষ কে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছে।
ফাইজার ভিতর পুড়ছে ঠিকই কিন্তু সে খুশি এই ভেবে যে তার প্রিয় দুজন মানুষ সুখী আছে।তাকে ছাড়াই সুখী হতে পেরেছে। সত্যি বলতে ফাইজা জানতো একবার রামিসা কে বিয়ে করলে কায়েস তাকে ঠিক মেনে নিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দিবে। কারণ সে জানে কায়েস আল্লাহ বিরু মানুষ।আর আল্লাহ বিরু মানুষ কখনো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য অস্বীকার করে না।
.
গতকাল রাতে ফাইজা কে ফয়জান কল করে বাসায় ফিরিয়ে এনেছে। প্রথমে স্নেহের স্বরে বলেছে, তারপর করা নির্দেশ দিয়েছে বাসায় আসার জন্য বলেছে,
-” তুমি এখনো অবধি বিয়ে না করার কারণ আমাদের বলনি ঠিক আছে,সময় হলে তুমি নিজেই বলবে এই আশায় আছি আমরা প্রত্যেকে। কিন্তু তাই বলে বাসায় না থেকে এভাবে বাহিরে থাকার মানে কি?আর অফিস করার হলে বাসা থেকে গিয়ে করবে নতুবা অফিস করার দরকার নেই।
তুমি একটা ভালো কাজের সাথে জড়িত বলে আমি এতদিন তোমার কাজ নিয়ে কিছু বলিনি।তাই বলে যে কোনদিন কিছু বলবো না এই ধারণা বাদ দাও।আমি আজকেই তোমাকে বাসায় দেখতে চাই।
এতটুকু বলে কল কেটে দেয় ফয়জান।
ফাইজা কিছু বলার সুযোগ পায় না। তবে সে জানে তাকে আজকে বাসায় ফিরতেই হবে।তার ভাই একবার রেগে গেলে আর র’ক্ষা নেই। তারপর এই ছিল ফাইজার বাসায় ফিরে আসার কারণ।
.
.
আলোর পরীক্ষা আর মাত্র ছয়দিন বাকি। এখন নিশ্চয়ই পড়ার মাত্রা বাড়ানো প্রয়োজন। অথচ আলো শুয়ে আছে। ফয়জান কয়েক বার ডাকার পরও উঠেনি।তাই ফয়জান একটু কাঠোর গলায় বললো,
-” রাত পোহালেই পরীক্ষা তোমার এখন এভাবে শুয়ে বসে সময় কাটালে চলবে কি করে? উঠে পড়তে বসো, আমি দেখবো কোথায় আর সমস্যা আছে কিনা।
এরকম কয়েকবার পড়ার কথা বললে,আলো খুব রেগে যায়! কান্না মিশ্রিত কন্ঠে এবং কন্ঠস্বর খানিকটা উঁচু করে বলে,
-“আমি এখন পড়বো না। আপনি প্লিজ এখান থেকে চলে যান! আমার ভালো লাগছে না।
ফয়জান ফ্রিজস হয়ে বসে রইলো।আলো এভাবে কথা বলবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি। কিঞ্চিৎ রাগ হলো ফয়জান এর।বাসা থেকে বেড়িয়ে চলে গেল গলির মোড়ে দোকানে। দোকানদার মামা কে বললো,
-“কড়া করে এক কাপ চা দেওয়ার জন্য।চা খেতে খেতে আশেপাশে বিরতিহীন পলক ফেললো। রাতের এই সুন্দর মূহুর্তটা যেন বি’ষের মতো লাগছে। মনে শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই।
ঘন্টা খানেক পর বাসা থেকে ফাহমিদা খাতুন কল করে বললেন,
-“বাবা তুই কোথায় আছিস?
ফয়জান গম্ভীর মুখে বললো,
-“বাহিরে বের হয়েছি।
ফাহমিদা খাতুন তাগাদা দিয়ে বললেন,
-“বউ পেট ব্যথায় চিৎকার করছে!তুই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আয়।
মায়ের কথা শুনে তড়িগড়ি করে ফোনে আজকের তারিখটা দেখলো ফয়জান। এখন নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে তার। আজকের তারিখটা তার মনে রাখা উচিৎ ছিল না?প্রত্যেক মাসের এই তারিখের দুই একদিন আগে পরে আলো’র পিরিয়ড শুরু হয়।ভিশন পেট ব্যথা শুরু হয় মেয়েটার।যখন সহ্য করতে না পারে তখন ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।
আজকেও এর ব্যতিক্রম হলো না।
মাসের ওই দিনগুলিতে মেয়েরা এমনিতেই শারীরিকভাবে একটু কাহিল থাকে। পেটে যন্ত্রণা, কোমরে ব্যথা, বমি বমি ভাব। মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়। পিরিয়ডের দিনগুলিতে মেয়েদের হজমের সমস্যাতেও ভুগতে দেখা যায়। কেউ কেউ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। কেউ কেউ আবার ডায়রিয়ায়।
তাই তাদের খুব যত্নের প্রয়োজন হয়। তাদের সাথে কখনোই তর্ক করা উচিৎ নয়। বকাঝকা তো অনেক দূর।
প্রত্যেকের অনুভব করা উচিৎ।এই সময়ের যন্ত্রনা উপলব্ধি করা উচিৎ।
ফয়জান দ্রত বাসায় ফিরে হটব্যাগ চার্জ দিয়ে আলো’কে দেয়।আর নরম গলায় বলে,
-“তখন আমাকে বললে কি হত?
আলো চুপ করে থাকে কিছু বলতে চেয়েও বলে না।…
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।
#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২৪)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
আলো’র এইসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে গতকাল। পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
ফয়জান ঠিক করেছে আলো এবং তার ভাই বোনদের নিয়ে ট্যুরে যাবে।
বড়দের ও বলেছে কিন্তু তারা যাবে না বলেছেন।তাই তিন কাপল এবং ফাইজা যাবে।
প্রথমে ফাইজা ও বলেছিল যাবে না।পরে ফয়জান কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেছে যেতেই হবে।তাই অঘর্তা যেতে হচ্ছে তাকে।
.
ফয়জান ক্যান্টিনে বসে অনলাইনে বিভিন্ন রিসোর্ট সম্পর্কে দেখছে,ট্যুরে কোথায় গেলে ভালো হবে। সবাই আনন্দ উপভোগ করতে পারবে মূলত সেই জন্যই।
তখন সমির স্যার এসে বসলেন।
জিজ্ঞাসা করলেন, ফয়জান ব্যস্ত নাকি?
ফয়জান বললো,
-“তেমন কিছু না স্যার।
আচ্ছা স্যার আপনি নিশ্চয়ই ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের মধ্যে একজন হবেন? কারণ প্রতিটি মানুষ ই ভ্রমণ পিপাসু হয়। হয়তো পরিস্থিতির বিড়ম্বনায় ভ্রমণ করা হয়ে উঠে না।যাই হোক আপনার জানামতে কোন ভালো রিসোর্ট আছে যেখানে বারান্দায় বসে এক কফিতে চুমুক দিতেই সব ক্লান্তি নিমিষেই দুর হয়ে যাবে। দখিনা বাতাস এর অপরূপ প্রকৃতিতে ভালো লাগতে বাধ্য হবো।
ফয়জান এর কথা শুনে সমির স্যার কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
-” নিশ্চই এমন একটা খুবই সুন্দর রিসোর্ট আছে আমার জানামতে মতে।
ফয়জান ফোন রেখে, উৎসুক হয়ে বললো,
-” বাহ্। কোথায় এটা?এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন আপনি?
সমির স্যার তার বাম হাতের তর্জনী দিয়ে ভ্রুতে স্লাইড করতে করতে বললেন,
-” অবশ্যই কেন নয়।শুনেন বলছি,
লা রিভারিয়া রিসোর্ট এন্ড পার্ক,
হাজার বছরের ইতিহাস আর ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আমাদের এই দেশ। আপনারা ভ্রমন পিপাসু মনের চোখ দিয়ে দেখলে দেখবেন এই দেশে দেখার আছে অনেক কিছু। হয়তো তার খোজ আমরা জানিনা।
“লা রিভারিয়া রিসোর্ট এন্ড পার্ক” এই রিসোর্ট টি ঢাকা বাসীর জন্য হতে পারে যান্ত্রিক জীবন থেকে হাফ ছেড়ে বাচার কাছে নতুন এক গন্তব্য। নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এ শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেসে গড়ে উঠেছে দৃস্টিনন্দন এই রিসোর্ট। রিসোর্ট এর অবকাঠামো এর কারনে ইতমধ্যেই এই রিসোর্ট টি অনেকের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ঢাকার পূর্বাচল কাঞ্চন ব্রীজ থেকেই এই রিসোর্ট এর নান্দনিক অবকাঠামো আপনার চোখে পড়বে।
শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে রিসোর্ট এর খোলা বারান্দায় বসে এক কফিতে চুমুক দিতেই আপনার সব ক্লান্তি নিমিষেই দুর হয়ে যাবে। দখিনা বাতাস এর অপরূপ প্রকৃতি আপনারি ভালো লাগতে বাধ্য।
এই রিসোর্ট এ যাওয়া খুবই সহজ। আপনি ঢাকার যে কোন স্থান থেকে কাঞ্চন ব্রীজ পার হয়ে মায়ার বাড়ী বাস স্ট্যান্ড নেমে একটি রিকশা নিয়েই চলে যাওয়া যাবে এই রিসোর্ট এ।
এটি মূলত একাধারে রিসোর্ট/ রেস্টুরেন্ট এবং পার্ক হিসেবে গড়ে উঠেছে। রিসোর্টটি যেহেতু নতুন তাই এখানে অনেক প্রকল্পই বাস্তবায়ন এর অপেক্ষায়। রিসোর্ট এ লাগানো হয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। যার মাত্র কয়েক বছর। এই গাছ গুলো বড় হয়ে গেলে রিসোর্টটিকে আরো বেশী আকষনীয় হয়ে উঠবে।
রিসোর্ট এ রয়েছে রাত্রী যাপনের জন্য বেশ কয়েকটি কটেজ যা বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় বুকিং দেওয়া যাবে।
চাইলে ওখানেই যেতে পারেন।
ফয়জান সমির স্যারের মুখে এতো প্রশংসা শুনে না দেখেই ভালো লাগলো। অনলাইনে গিয়ে সার্চ করলো “লা রিভারিয়া রিসোর্ট এন্ড পার্ক” লিখে।
সমির স্যার ঠোঁট কামড়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,
-” তো ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে যাচ্ছেন? নাকি ফ্রেন্ড সার্কেল দের নিয়ে?
ফয়জান ফোন থেকে মাথা তুলে বললো,
-” না স্যার দেশে আমার ফ্রেন্ড নেই বললেই চলে।যারা আছে তারা সবাই বিদেশের। কাজের চাপে যোগাযোগ ও হয় না বললেই চলে।
-” একটা সময় এরকম ই হয়। সবাই সবার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমার অবশ্য এখনো অবধি ফ্রেন্ডদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান আছে।
যাই হোক আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।
শেষের কথাটা একটু টেনে বললো সমির স্যার। ফয়জান অতো আমলে নিল না হেসে চলে গেল ক্লাস রুমে।
.
.
রামিসা আর নূর বসে গল্প করছে। ইসলামের নিয়ম কানুন সম্পর্কে। ইদানিং রামিসা তার পাঠ্য বই থেকে বেশি ইসলামীক বই পড়ে।এই অভ্যাসটা তার কায়েস এর থেকে হয়েছে।
কায়েস প্রচুর ইসলামী বিভিন্ন হাদীসের বই পড়ে।তার বুক সেলফ জুড়ে সব হাদীসের বই মা শা আল্লাহ। সেই থেকেই রামিসা অনুপ্রেরণা পেয়েছে।অবসর সময়টা বই তে মগ্ন থাকে বেশিরভাগ সময়।
কথায় কথায় নূর বললো,
-“অনলাইনে কি শুরু হয়েছে দেখেছেন ভাবী?
রামিসা বললো,
-” সরি আমার অনলাইনে যাওয়া হয় না তেমন তাই কি হয়েছে আমি অবগত নই।
-” কি সব ছেলেরা মেয়ে সাজ এবং মেয়েরা ছেলেদের সাজে সজ্জিত হচ্ছে! আবার বলছে তারা পোশাক পরিধানে স্বাধীনতা চায়।
দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে থাকতে যে আরো কতো কি দেখতে হবে আল্লাহ তা’আলা জানেন।
রামিসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“পোশাক পরিচ্ছদ মানব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য বিষয়। আল কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, পৃথিবীর আদি মানুষ হজরত আদম (আ.) পোশাক পরিধান করতেন।
যেমন সূরা আরাফের ২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হজরত আদম ও হাওয়া (আ.) নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে কাপড় খুলে পড়ে যায়। সর্বকালেই সভ্য মানুষেরা লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার জন্য পোশাক পরিধান করতো। এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও এমন পাওয়া যায়নি, যারা স্বভাবজাত এই বিধানের বাইরে চলেছে আর পৃথিবীবাসী তাদেরকে সভ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যাদের অবস্থান মানব সমাজ থেকে বহু দূরে, জংলি জানোয়ারের ন্যায় জীবন যাপন করে তাদের কথা ভিন্ন। কারণ, তারা সমাজ, সভ্যতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
অতিতের প্রত্যেক সভ্য সমাজে পুরুষের চেয়ে মেয়েদের পোশাকের গুরুত্ব বেশি ছিলো। কিন্তু বর্তমান অবস্থা হচ্ছে এর সম্পূর্ণ উল্টো। পোশাকের ক্ষেত্রে পুরুষরা শালীনতা রক্ষা করে চললেও নারীরা এ ব্যাপারে বেপরোয়া। ফলে ইভ’টিজিং ও ধর্ষ’ণের মতো গুরুতর সামাজিক ব্যধিগুলো সমাজে ভয়াবহ রূপ ধারন করছে। উপমহাদেশে ভারতে ধর্ষ’ণের হার সবচেয়ে বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে নগ্ন পোশাক।
আল কোরআনে পোশাক সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সাজ-সজ্জার বস্তু। আর পরহেযগারীর পোশাকই সর্বোত্তম পোশাক। এই পোশাক আল্লাহর নিদর্শনসমূহের একটি, যাতে তারা গভীরভাবে চিন্তা করে।[১]
(সূরা আরাফ-২৬)
আয়াতে পোশাক অবতীর্ণ করার অর্থ হচ্ছে, তার উপাদানগুলো সৃষ্টি করা এবং তা থেকে পোশাক তৈরির কলা-কৌশল শিক্ষা দেয়া। অর্থাৎ এগুলো আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরতে মানুষদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। অন্যথায় মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব হতো না বস্ত্র ও তাঁত শিল্প আবিষ্কার করে এমন সুন্দর করে পোশাক তৈরি করা। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা পোশাককে তাঁর নেয়ামত ও কুদরতের নিদর্শন সাব্যস্ত করেছেন। উল্লেখিত আয়াতে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পোশাকের আলোচনা শুধু মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে করা হয়নি; করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতিকে উদ্দেশ্যে করে। বলা হয়নি হে মুসলমানেরা! বরং বলা হয়েছে ‘হে আদম সন্তানেরা! যার মাঝে মুসলিম ও অমুসলিম সকলে অন্তর্ভূক্ত। এর দ্বারা ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, পোশাক পরিচ্ছদ এটা শুধু মুসলমানদের জন্য নয় বরং সমস্ত আদম সন্তানের জন্য। সঙ্গে সঙ্গে এই দিকেও ইশারা করা হয়েছে যে, পোশাক শুধু লজ্জাস্থান ঢাকার বস্তু নয় বরং সৌন্দর্য বৃদ্ধিরও কারণ। আর পোশাক দ্বারা ব্যক্তির সৌন্দর্য ফুটে ওঠবে যখন পোশাক শালীন হবে। আল কোরআনের আরো কয়েক জায়গায় পোশাকের আলোচনা এসেছে। যেমন সূরা আরাফ আয়াত নম্বর ৩১ ও ৩২।
আল্লাহ তায়ালার পছন্দের পোশাক:
নবী-রাসূলগণ (আ.) কখনো পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত হতেন না। ঘুমানো, ঘুম থেকে ওঠা, পানাহার, প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদির মতো সামান্য সামান্য বিষয় থেকে নিয়ে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে তারা আল্লাহর তায়ালার নির্দেশনার আলোকে আঞ্জাম দিতেন। অনুসারীরাও যেন আল্লাহর মর্জি মাফিক সেগুলো করে, সে ব্যাপারেও তারা সদা সচেষ্ট থাকতেন। নবী করীম (সা.) যখন সাহাবাদেরকে এগুলোর তালিম দিতেন তখন কাফেররা হাসাহাসি করে বলতো, ‘যে ব্যক্তি প্রস্রাব -পায়খানার তালিম দেয়, সে আবার নবী হয় কেমন করে!’ কিন্তু ওরা বুঝতে পারেনি যে দীন ইসলাম একটি ব্যাপক ধর্ম, যা জিন্দেগীর কোনো শাখা-প্রশাখাকে বাদ দেয়নি। প্রস্রাব-পায়খানার মতো হীন বিষয়গুলো যদি দীনের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে তাহলে পোশাক পরিচ্ছদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দীন থেকে বাদ যাবে কোনো যুক্তিতে? এমন তো হতে পারে না যে, রাসূল (সা.) সবকিছু করতে বলেছেন ওহির ভিত্তিতে আর পোশাকের কথা বলেছেন পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। বরং এক্ষেত্রেও তিনি আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন এটাই স্বাভাবিক।
আল্লাহর নির্দেশে বলেছেন বলেই কোনো পোশাকের ব্যাপারে তিনি বলেছেন এটা জায়েজ, কোনোটার ব্যাপারে বলেছেন নাজায়েজ, কোনটা উত্তম বা অনুত্তম ইত্যাদি। মুসলিম শরীফের এক হাদীস এসেছে নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘এটা কাফেরদের পোশাক তাই তা পরিধান করো না।[২]
(মুসলিম-৫৫৫৫)
এই আলোচনার আলোকে সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায়, রাসূল (সা.) ওই পোশাক পরিধান করেছেন বা করতে বলেছেন যার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার হুকুম হয়েছে। এ ছাড়া সমাজ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি কোনো পোশাক পরেছেন এটা বলা ভুল। তাই রাসূল (সা.) এর পোশাক আল্লাহর পছন্দনীয় পোশাক। অতএব যারা বলেন, ‘কোনো পোশাকই ইসলামী নয় বরং সমাজের প্রচলিত পোশাকই ইসলামী পোশাক, রাসূল (সা.) যদি ইউরোপ বা আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে তিনি ওই সমাজের পোশাককেই শরয়ী পোশাক হিসেবে গ্রহণের করতেন’ এই কথার কোনো ভিত্তি নেই।
হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা দিয়ে রামিসা নিজেকে খুব ক্লান্ত অনুভব করে। তারপর মাথা ঘুরে উঠলো। সাথে সাথে বসা থেকে শুয়ে পরে!
হঠাৎ এমন হওয়ায় বরকে গেল নূর। তড়িগড়ি করে শ্বাশুড়ি মাকে ডেকে আনলো।
ছেলেরা তাদের কর্মক্ষেত্রে আছে।
আয়েশা আর রিনু বিচলিত হয়ে পরলে রামিসা বলে তার কিছু হয়নি এমনি একটু মাথা ঘুরে গেছে!…..
#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।