তবুও ভালোবাসি পর্ব-০৩

0
777

#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_০৩
#রেজওয়ানা_রমা

মেহুল তার পাশে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় মেহুল কে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। এমনিতেই মেহুল অপূর্ব সুন্দরী। দুধে আলতা গায়ের রং আর কাজল কালো হরিণী চোখ। ঠোঁট দুটি যেন ফুটন্ত গোলাপ। রিয়ান এভাবে মেহুল কে দেখে অপলক তাকিয়ে রয়। মেহুল সজাগ থাকলে রিয়ান এত ভালো ভাবে প্রিয় মানুষ টা কে দেখতে পায় না। রিয়ান আস্তে আস্তে মেহুলের কাছে যায়। মেহুলের মুখের কাছে মুখ নিয়ে খুব কাছ থেকে মেহুল কে দেখে।মেহুলের এই অপূর্ব সৌন্দর্য রিয়ানকে আকৃষ্ট করছে। রিয়ান মেহুলের কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। রিয়ানের স্পর্শে মেহুলের ঘুম ভেঙে যায়।মেহুল চোখ খুলে রিয়ান কে এত কাছে দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। রিয়াম সাথে সাথেই মেহুলের কাছ থেকে সরে যায়। মেহুল উঠে বসে বলে,

-আপনি কি করছিলেন? আমি আগেই বলেছি না আমাদের মাঝে এমন কোন সম্পর্ক থাকবে না। নিজেকে সামলে রাখুন মি. রিয়ান। ভুলে যাবেন না আমি আপনার কাছে আমানত মাত্র। এক বিছানায় ঘুমালেই স্বামীর অধিকার পাওয়া যায় না।
– এমন কিছুই না যেমন টা তুমি ভাবছো।
– তাহলে কেমন কিছু? এত কাছে এসে কি করছিলেন আপনি? এখন তো দেখছি আমি আপনার কাছে সেফ নই।
– নীড়
– চিৎকার করবেন না।
– একটু বেশি বলে ফেলছো নয় কি
এর মধ্যেই মেহুলের ফোন বেজে উঠে। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। মেহুল ফোন টা হাতে নিয়ে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আপনার সাথে আমি পরে কথা বলছি বলেই ফোন নিয়ে বেলকানি তে চলে যায়। ফোন রিসিভ করতেই মেহুল থমকে যায়। মেহুল কোন কথা বলছে না। ফোনের ওপাশ থেকে বলে,

– কি হলো কথা বলছো না যে, আমার ভুল হয়ে গেছে মেহু। প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতেই পারছি না। আমি অনেক চেষ্টা করেছি মেহু। তোমাকে ভুলে থাকার জন্য রিলেশনেও গিয়েছি আমি তাও ভুলে থাকতে পারছি না মেহু। I need you মেহু। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমায়। আমাকে কাছে টেনে নাও প্লিজ মেহু
– শাট আপ। কে আপনি? আমি আপনাকে চিনি না। কাকে কি বলছেন? আপনার মেহু মরে গেছে আর এখন যে বেচে আছে সে অন্যের স্ত্রী। খবরদার আর আমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না। আমি আপনাকে চিনি না।
– অন্যের স্ত্রী মানে? তু তুমি বি বিয়ে করেছো মেহু?
– কেন অবাক হচ্ছেন কেন? আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন। আপনি তো আপনার পথে বাধা হই নি। বরং আমার জন্য যেন আপনার জীবনে কোন সমস্যা না হয় সে জন্যই তো বলেছিলেন বিয়ে করে নিতে। আমি নিয়েছি। আপনার জীবনের সকল সমস্যা দূর করেছি আর কি চান আপনি? আমাকে ভালো থাকতে দেন।
– একটা বার আমার কথা ভাবলে না তুমি? ভাবলে না আমাদের দেখা স্বপ্ন গুলোর কথা? আমি কিভাবে থাকবো মেহু?
-কেন এত দিন যেভাবে ছিলেন। অনলাইনের প্রেমিকা কোথায় আপনার। যার সাথে দেখা করতে ছুটে যেতেন। যার জন্য আমাকে রিজেক্ট করেছিলেন কোথায় সে? তার কাছেই যান। যে আমার সাথে রিলেশনে থাকার পরও অন্য কোন মেয়ের প্রতি আসক্ত হতে পারে সে কখনও আমাকে ভালোবাসতে পারে না। আপনি আমাকে ভালোবাসলে অন্য জনের সাথে প্রেম করতে পারতেন না। আমি ভুল মানুষের সাথে ছিলাম এতো গুলো বছর। আমার জীবনের সাত টা বছর নষ্ট হয়েছে আপনার জন্য। – বলছি তো ভুল হয়ে গেছে। আমি ভুলতে চেয়েছিলাম পারি নি। আর পারবও না। তোমাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না।
– চুপ করুন। আর একটা কথাও বলবেন না। আমি যখন পাগলের মত আপনার কাছে ফিরতে চেয়েছিলাম কই ছিল আপনার ভালোবাসা। আপনি নিজেও আমাকে অপমান করেছেন আবার আপনার প্রেমিকা কে দিয়েও অপমান করিছেন। আমি আপনাদের কে কখনই ক্ষমা করবো না। আমি আমার স্বামী সংসার নিয়ে ভালো আছি। সুখে আছি। আমাকে ভালো থাকতে দিন বলেই মেহুল ফোন কেটে রুমে যায়।
রিয়ান তখন সাওয়ার শেষ করে রেডি হচ্ছে। মেহুল রিয়ান কে দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। রিয়ান কোন কিছুই বুঝতে পারে না। রিয়ান মেহুল কে বুকের ওপর থেকে তুলে বলে,
– কি হয়েছে নীড়? কাদছো কেন? কি হয়েছে বলো আমায়?
মেহুল কান্নায় ভেঙে পড়ে।
-নীড়! এভাবে কেদো না। কি হয়েছে বলো নীড়।
– ই ই ঈশান! ই ই ঈশান ফোন করেছিলো।
-কিহ! কি বলেছে? মেহুল চোখ মুছতে মুছতে বলে,
-ও ফিরতে চায়।
– তুমি কি বলেছো?
– আমি কখনই ফিরিয়ে নিতে পারবো। আর নিজেও ওর কাছে ফিরতে পারবো না। ও আমার অতীত। আর আপনি বতর্মান আপনি ভবিষ্যত। আমার জীবনে এখন আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। – তুমি তো ওকে ভালোবাসো
– হ্যাঁ ভালোবাসি। কখনও ভুলতে পারবো না এটা যেমন সত্য তেমনই এটাও সত্য যে আমি ওর কাছে ফিরতে পারবো না রিয়ান। আমার জিবনে এখন আপনি আছেন। আপনিই সব। আমি আপনার সাথেই থাকতে চাই।
– অন্য কাউ কে ভালোবেসে আমার সাথে সংসার? বাহ
– আমার সময় লাগবে
– নাও যত সময় লাগে নাও। কিন্তু আমার কাছে আসতে হলে পুরা টা আমার হয়েই এসো। না হলে এসো না। মেহুল রিয়ানের কথা শুনে রিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলে,
-আমার পাশে থাকবেন তো? ঈশানের মত করে বদলে যাবেন না তো? রিয়ান মেহুলকে বুকের মাঝে পরম আবেগে জড়িয়ে বলে,
– না নীড়। আমি আছি তোমার সাথে। তোমার সকল খারাপ সময় তোমার পাশে থাকবো। কোন বিপদকে তোমায় স্পর্শ করতে দেবো না কথা দিলাম।

এর মধ্যেই রুমে আসে মেহুলের বেস্ট ফ্রেন্ড আলিশা। মেহুল আর রিয়ান কে এভাবে দেখে আলিশা বলে উঠে,

-ইসসস ! ভুল সময়ে চলে এসেছি। সরি সরি সরি।

রিয়ান ও মেহুল দু’জনই দু’জন কে ছেড়ে দিয়ে রিয়ান আয়নার সামনে চলে যায় আর মেহুল আলিশার কাছে এসে ফিস ফিস করে বলে,

– এই বেয়াদপ চুপ হ
আলিশা জোরে জোরে বলে,

-কেন চুপ হবো? তোমরা সারা রাত রোমান্স করেও সকালে দরজা খুলে আবারও রোমান্স করছো আর আমি কিছু বলবো না!
– ফাজিল মাইয়া চুপ হ। লজ্জা করে না তোর
– হ। এহন তো আমি ফাজিল মাইয়া আর তুই ভালা
– আমি তো ভালই।
– ভালো বউ
-ধ্যাত
আলিশা রিয়ানের কাছে গিয়ে বলে,

– ভাইয়া হানিমুনে কোথায় যাচ্ছেন তাহলে?
– হানিমুন!
-এমন ভাবে বললেন যেন এই শব্দ টা লাইফে ফাস্ট শুনলেন।
– না তা নয়। আসলে এখনও হানিমুন নিয়ে কোন প্লান করি নাই। আপনার ফ্রেন্ড যেখানে বলবে সেখানেই যাওয়া হবে।
-ইস আমার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কেন মি.
-তুমিই তো সব তাই
– ওরে প্রেম রে। এত প্রেম কই পান আপনারা। (আলিশা)
এর মধ্যেই মেহুলের কাজিন সাফা রুমে এসে রেগে বলে, . . . . .

#চলবে…..