ছদ্মবেশ পর্ব-৫২+৫৩+৫৪

0
975

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৫২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আহত রুশানকে কাধে নিয়ে মেইন রোডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নিবিড়। রক্তে শার্ট ভিজে গেছে তার। রুশানের এই অবস্থা, সাথে একটু আগে করে ফেলা কাজটা, সব মিলিয় দিশেহারা হয়ে ছুটছে সে। বুকের ভেতর হার্ট খুব জোড়ে বিট হচ্ছে। মনে হচ্ছে জায়গা পেলে এখনি বেড়িয়ে আসবে।

রুশানকে নিয়ে মেইন রোডে দাড়ালো নিবিড়। রুশানকে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে গায়ের উপরের জামাটা খুলে হ্যাল্প হ্যাল্প বলে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছে সে। মেইন রোডে কয়েকটা গাড়ি তাকে ক্রস করে চলে গেলেও একটা সি’এন’জি এসে তার সামনে দাড়িয়ে বলে,
– কি হইছে ভাই? সমস্যা কিতা?
নিবিড় উত্তেজিত গলায় বলে,
– ভাই আমার বন্ধুকে হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে যত তারাতারি সম্ভব। নয়তো ম’রেই যাবে।
লোকটা এবার রুশানের দিকে চেয়ে দেখে জায়গায় জায়গায় যখম তার। শরিরের বিভিন্ন অংশ কেটে রক্তে লাল হয়ে আছে। নাক মুখে রক্তে যা তা অবস্থা।
লোকটা এবার নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– হিয়ার(তার) তো অবস্থা খুব খারাপ ভাই। তারাতারি গাড়িত তোলেন।
নিবিড় এবার রুশানকে ধরে গারিতে গিয়ে বসায়। রুশান মিটি মিটি চোখ খুলছে আবার বন্ধ করছে। নিবিড় তার গালে হাত রেখে বলে,
– কিছু হবে না ভাই। একটু ধৈর্য ধর।

সি’এন’জি ড্রাইবার গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,
– কন্ডে মারামারি কইত্তেন গেছেন? এমুই জায়গা এতো সুবিধার নো। আই নোয়াখালির তুন আই ইয়নে গাড়ি চালাই আইজ্জা চাইর মাস। এর ভিত্রে ২ জনের খুনের খবর হাইছি। জায়গা এতো ভালা নো।
নিবিড় বলে,
– ভাই তারাতারি কোনো হসপিটালে চলেন আপনি। পরে বলবো সব।
,
,
ওদিকে আজ ২ দিন রুশানের কোনো খবর না পেয়ে সন্ধা থেকে কয়েকবার ফোন দিলো রাজ। কিন্তু ফোনও বন্ধ পাচ্ছে তার। সকালে নাকি ফরিদা আন্টি ফোন দিয়েছিলো। তখনও বন্ধ ছিলো। তখন তিনি ভেবেছিলো হয়তো ফোনের চার্জ নেই বা অন্য কিছু হবে। এর পর আজ রাত হয়ে যাওয়ার পরও কোনো ফোন না পাওয়ায় আর ফোন বন্ধ পাওয়ায় রিতিমত টেনশন শুরু হয়ে গেলো তার।

নিলয় কিছুটা সন্দেহজনক ভাবে সরে যায় সেখান থেকে। পিন্টুকে ফোন দিলে দেখে সে ফোন রিসিভ করছে না।
পিন্টুও ইদানিং তার আগে আগে হাটার চেষ্টা করছে। আগে ফোন দিলেই ফোন রিসিভ করতো আর এখন দুই বার দেওয়ার পরও রিসিভ করছে না।
তিন বারের সময় রিসিভ করলে নিলয় বলে,
– ওই শুয়’রের বাচ্চা, ফোন কি ** ভিতর ঢুকাই রাখছস?
পিন্টু স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– কাছে ছিলো না তাই শুনতে পাইনি।
নিলয় বিশ্রি একটা গালি দিয়ে বলে,
– কানের ভেতর কি ** দিয়ে রাখছ?
পিন্টু এবার কিচুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– স্যরি ভাই। ভুল হয়ে গেছে।

নিলয় এবার কিচুক্ষন চুপ থেকে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করে বলে,
– রুশান কোথায়?
পিন্টু কিছুটা অবাক ভঙ্গি নিয়ে বলে,
– কোন রুশান?
নিলয় আবার উত্তেজিত হয়ে বলে,
– সোজা কথার সোজা উত্তর দে, কোনো তিরিং বিরিং চো*** একবারে হাতের মুঠে চিপে পি’ষে ফেলবো। হাটতে শিখালাম আমি, আর এখন আমার আগে আগে দৌড়াচ্ছো, না?

পিন্টু এবার কিছুক্ষন শান্ত থেকে বলে,
– ভাই দলের বাকি লোকেরা খবর পেয়েই তুলে নিয়ে মে’রে দিয়েছে। আমি বারন করার সময় টুকুও পাইনি ভাই।
নিলয় এবার এক মুহুর্তের জন্য নিশ্চুপ হয়ে গেলো। ফোনটা অটোমেটিক কানের কাছ থেকে সরে গেলো তার। রোবটের মতো দাড়িয়ে আছে ছাদের এক পাশে।
,
,
রাজের ফোনটা বেজে উঠতেই হাতে নিয়ে দেখে নিবিড়ের ফোন। রিসিভ করলে রাজকে রুশানের অবস্তার কথা জানায়। কথা বলার সময়ও যেন নিবিড়ের গলাটা কাঁপছিলো খুব।

কথা শেষে পাশ থেকে তুষার ও ফরিদা আন্টি কি হয়েছে জানতে চাইলে রাজ বলে,
– রুশানের নাকি ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। এখন কুমিল্লায় একটা হসপিটালে ভর্তি।
ফরিদা আন্টিও যেন ভুত দেখার মতো হতভম্ব হয়ে যায়। তিনি আশা করেছিলো অন্য কিছু। ভেবেছিলো নিবিড় আজ এতোদিন পর ফোন দিয়ে তার ভুল শিকার করে মাপ চাইবে। আর ফরিদা আন্টি বাসায় নিয়ে আসবে আবার। রাগ আগের থেকে অনেকটা কমেছে। তবে নিবিড়কে চোখে হারাচ্ছে সে।

এর মাঝে নিলয় ছাদ থেকে নেমে সবাইকে এমন উত্তেজিত দেখে কারণ জানতে চাইলে রাজ বলে,
– আমাদের এখন কুমিল্লায় যেতে হবে রেডি হও।
বলেই সেখান থেকে উঠে রুমে চলে গেলো রাজ। নিবিড় অবাক ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকালে তুষার বলে,
– রুশান নাকি কুমিল্লায় একটা হসপিটালে ভর্তি। নিবিড় আছে ওখানে। আমি আর রাজ যাচ্ছি। তুইও গেলে রেডি হ।
রুশান বেচে আছে এটা শুনে একটা স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়ে নিলয়। এরপর স্বাভাবিক হয়ে বলে,
– হুট করে এতো রাতে গাড়ি পাবি কই?

তুষার এবার কিছুটা ভাবান্তর হয়ে রাজের কাছে চলে যায়। পেছন পেছন নিলয় ও ফরিদা আন্টিও যায়।
ফরিদা আন্টি বলে,
– এখন মাঝ রাতে কুমিল্লায় যাওয়ার গাড়ি পাবে কোথায়?
নিজের গাড়ি আছে, কথাটা রাজ অস্থিরতা নিয়ে বলতে গিয়েও নিজের ভেতর রেখে কথা ঘুরিয়ে বলে,
– গাড়ি না পেলেও যেতে হবে এখন।
পাশ থেকে তুষার বলে,
– আমার পরিচিত একটা লোক আছে। ভাড়ায় গাড়ি চালায়। এইতো কাছেই তার বাসা। তবে এতো রাতে যাবে কিনা ঠিক বলতে পারছি না।
রাজ বলে,
– আমাকে নাম্বার টা দাও আমি কথা বলছি।
তুষার নাম্বারটা দিয়ে বলে লোকটার নাম ইব্রাহিম।

রাজ সবাইকে রেডি হতে বলে বেলকনিতে চলে যায়।
মাঝ রাতে ঘুমু ঘুমু ভাব নিয়ে ওপাশ থেকে বলে,
– হ্যালো, কে বলছেন?
রাজ বলে,
– একটা জরুরি প্রয়োজনে কল দিয়েছি। আপনাকে ইমার্জেন্সি কুমিল্লা যেতে হবে এখন।
লোকটা বলে,
– ভাই মাফ করবেন এতো রাতে গাড়ি নিয়ে বের হইনা আমি। তাছারা অনেক দুরের পথ। রাতের বেলায় পুলিশ চেক পোষ্টেরও অনেক ঝামেলা আছে।
রাজ বলে,
– ওসব আপনাকে ভাবতে হবে না।
লোকটা আবার বলে,
– ভাই আমি ভাড়া গাড়ি চালাই। সামান্য ৪-৫ হাজার টাকার জন্য এতো রাতে রিস্ক নিতে পারবো না।
রাজ এবার বিরক্ত হয়ে বলে,
– আপনার এক মাসের ইনকামের সমান পেমেন্ট পাবেন। তবে যেতে হবে খুবই ইমার্জেন্সি।
লোকটা এবার শোয়া থেকে উঠে বসে চোখ ডলে ডলে বলে,
– সত্যি বলছেন নাকি পরে পল্টি মারবেন?
রাজ বলে,
– আমি এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না।
লোকটা এবার হাস্যজ্জল মুখে বলে,
– আচ্ছা ঠিকানা বলেন, আমি আসছি।
,
,
রাতের বেলায় রাস্তা মোটামুটি ফাকা ছিলো দেখে সময় বেশি লাগেনি। রাত ২ টার দিকে তারা পৌছে গেছে কুমিল্লায়।
নিবিড়ের থেকে হসপিটালের ঠিকানে নিয়ে সেখানে চলে গেলো রাজ, নিলয়, তুষার ও ফরিদা আন্টি। ফরিদা আন্টিকে আসতে নিষেধ করেছিলো বার বার। তবুও তিনি বারণ শুনেনি। নিজের ছেলের মতোই সবাইকে ভেবে এসেছে এতো দিন। আর ছেলের কিছু হলে মা কিভাবে শান্ত থাকে?

রাজ ওখানে গিয়ে জানতে পারে রুশানের অবস্তা এতোটা ভালো না। যত তারাতারি সম্ভব ঢাকায় কোনো ভালো হসপিটালেে নিয়ে যেতে।

নিলয় নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে আছে রুশানের দিয়ে। এই প্রথম কোনো শত্রুকে দেখে তার চোখ ছলছল করে উঠলো। এক দিক দিয়ে তার খুব কাছের বন্ধু। আর অন্য দিক দিয়ে তার সবচেয়ে বড় শত্রু। কোনটাকে আগে প্রাধান্য দেবে সে?
ফরিদা আন্টিতো কেঁদে একাকার। হুমায়ুন আহমেদ এই জন্যই বোধ হয় বলেছিলেন। ছেলে মানুষ সহজে কাঁদে না। আর মেয়েরা তো সামান্য লিপস্টিক হারালেও কাঁন্না করে ফেলে।

তুষার রাজের সাথে সাথেই দৌড়াচ্ছে। আর নিবিড় ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে এক পাশে।

রাজ ওখান থেকে একটা এম্বুলেন্স নিয়ে রুশানকে তুলে বাকি সবাইকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নিবিড় এখনো গাড়ির ভেতর চুপচাপ একপাশে বসে আছে। হুট করে কি হয়ে গেছে তা এখনো মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারছে না সে। সহজ ভাষায় যাকে বলে জ্ঞান শুন্য।
,
,
ঢাকায় সবচেয়ে উন্নত হসপিটালে নিয়ে যায় রুশানকে। রাজ আগেই লোক দিয়ে সেখানে সব ঠিকঠাক করে রেখেছে। এরপর সরে গেছে লোক গুলো। হসপিটালে নিয়ে যেতেই একজন ডাক্তার বলে উঠে,
– আরে এটা তো মি. রিদ সাহেবের ছেলে। আগেও অনেকবার এখানে এসেছিলো রিদ সাহেবের সাথে দেখা করতে।
তুষার ফরিদা আন্টি এরা কিছুই বুঝলো না। কে রিদ আর কে কার ছেলে। কিছুই তাদের মাথায় ঢুকছে না।

রুশানকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো তারা। ওটির বাইরে বসে আছে সবাই। নিবিড় এখনো জড়োসড় হয়ে চুপচাপ বসে আছে সবার মাঝখানে। গায়ে ছোপ ছোপ রক্ত ওয়ালা জামাটা এখনো রয়ে গেছে। মুখে ছিটকে পড়া রক্ত গুলোও শুকিয়ে কালচে রং এর হয়ে আছে।

নিবিড়কে এমন দেখে রাজ পাশ থেকে তার কাধে হাত রাখে একটু স্বাভাবিক করার জন্য। নিবিড় চমকে উঠলে রাজ বলে,
– এতো কিছু হয়ে গেলো কিভাবে? তুমি না হয় কুমিল্লায় গিয়েছিলে। রুশান কুমিল্লায় গেলো কেন? তুমিই বা তাকে পেয়েছো কোথায়?
নিবিড় এবার গড়গড় করে রাজকে বলে দেয় সব। কিভাবে লোক গুলোকে রুশানে নিয়ে যাচ্ছিলো, আর কিভাবে সে দেখেছিলো।
আর নিবিড়ের গায়ে রক্ত গুলো রুশানের না। রুশানকে বাচাতে গিয়ে অন্য কাউকে কু’পিয়ে মা’থা আলাদা করে দেওয়ায় র’ক্ত ছিটকে মুখে এসে পরেছে।

সবাই অবাক হয়ে নিবিড়ের দিকে কিছুক্ষন স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকে। নিবিড়ের মত একটা ছেলে এমনটা করেছে এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না তাদের। যেই ছেলেটা ঝগড়া ঝামেলা থেকে দুরে থাকতো সব সময়। অজান্তে কারো মনে কষ্ট দিলেও পরে গিয়ে মাপ চেয়ে নিতো। সে কিনা একজনকে মার্ডার করে ফেলেছে?

নিবিড় এবার রাজের হাত চেপে ধরে ভয়ার্ত গলায় বলে,
– ভাই আমি একজনকে খু’ন করে ফেলেছি। নিজ হাতে করেছি। আমি তো ইচ্ছে করে করিনি। হুট করে হয়ে গেছে মা’র্ডার টা। আমাকে কি এখন পুলিশ দরে নিয়ে যাবে? ফাঁ’সি দিবে আমায়? বিশ্বাস করো তোমরা। আমি তো ইচ্ছে করে কিছু করিনি। বিশ্বাস করো তোমরা।

নিলয় এতোক্ষন বুকে দুই হাত গুজে দেওয়ালে হেলান দিয়ে সবটা শুনলো। এবার নিবিড়ের চোখে মুখে আতঙ্ক দেখে নিবিড়ের পাশে বসে সেও নিবিড়ের কাধে হাত রাখে।
রাজ ও নিলয় দুজন একই সাথে বলে উঠে,
– কিছু হবে না। আমরা আছি তো।

To be continue……

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৫৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

কিছুক্ষনের মাঝে হসপিটালের সামনে এসে রিদের গাড়ি। ড্রাইভার নেমে গাড়ির দরজা খুলে দিতেই সে কোনো কথা ছাড়াই নেমে দ্রুত পায়ে ভেতরে চলে গেলো। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এক সেকেন্ড সময়েরও এখন অনেক মুল্য।

রাজ, নিবিড়, তুষার, নিলয় এদের সাথে আগে কখনো পরিচিত ছিলো না রিদ।
ওটির বাইরে তাদের বসে থাকতে দেখেও কোনো কথা না বলে ভেতরে চলে গেলো সে।
ভেতরে গিয়ে দেখে অলরেডি অপারেশন শুরু হয়ে গেছে।
অপারেশন টেবিলে কখনো নিজের ছেলেকে এমন করুণ অবস্থায় দেখতে হবে তা ধারণারই বাইরে ছিলো তার। তার দৃষ্টি কিছু মুহুর্তের জন্য স্থির হয়ে ছিলো রুশানের দিকে। তবে এমন সিচুয়েশনে ইমোশন নিয়ে সময় নষ্ট করা একধমই যুক্তি সম্বত নয়।

বেশ কিছুক্ষণ পর রক্তিম চোখে ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে রিদ। টলমল চোখের পানি নিয়ে চোখ দুটু লাল হয়ে আছে তার।
বসা থেকে দাড়িয়ে সবার দৃষ্টি এখন রিদের দিকে। সবাই একসাথে অবস্থা জানতে চাইলেও সে কোনো কথা বলতে পারেনি। তাই বেশিক্ষন দাড়িয়ে না থেকে চুপচাপ চলে গেলো সেখান থেকে।
সবাই রিদের আচরণে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার চলে যাওয়ার দিকে। খারাপ কিছু হয় নি তো? হার্টবিট বেড়েই চলছে আগের তুলনায়।

পেছন থেকে আরেকজন ডাক্তার বেড়িয়ে বলে,
– সে রোগীর বাবা। হয়তো ছেলের এমন অবস্থা দেখে কিছুটা আপসেট। রোগীর অবস্থা ভালো না। বাজে ভাবে আঘাতের কারণে শরিরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়ে গেছে। মাথায়ও চোট পেয়েছে বেশ ভাড়ি ভাবে। তাই এই ব্যাপারে এখনো নিশ্চিয়তা দিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে চিন্তা করবেন না। আপাতত তাকে আই’সি’ইউ তে পাঠাচ্ছি। শরিরের উন্নতি হলে কেবিনে পাঠানো হবে। দোয়া করুণ শুধু আপনারা। যেন সব কিছু ভালো হয়।
,
,
সকাল হলে গত রাতে ঘটে যাওয়া সেই জায়গাটায় ভিড় জমতে থাকে। ব্রিজের উপর পড়ে আছে মা’থা কা’টা লোকটার নিথর দেহ। র’ক্ত গুলো কালচে রং ধারণ করে ব্রিজের সাথে লেগে আছে অনেক জায়গায়। তার কিছুটা দুরে পরে আছে ছু’রিটা। চার পাশে লোকজন ভিড় জমিয়ে দাড়িয়ে দেখছে তা। কয়েকজন থানায় ফোন দিয়ে বিষয়টা জানায় তাদের। হয়তো কিছুক্ষনের মাঝে পুলিশ এসে এরপর তদন্ত শুরু করে দিবে। তাই ছু’রি র’ক্ত লা’শ কোনো কিছুর ধারের কাছেও যাচ্ছে না কেউ।

কিছুক্ষনের মাঝে পুলিশের গাড়ি এসে দাড়ালো সেখানে। লা’শের কয়েকটা ছবি তুলে চার পাশটা দেখতে লাগলো তারা।
আর কেউ ওখানকার মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
একজন পুরো বিষয়টা সাক্ষ্য দিলো যে, সকালে এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় এই অবস্থা দেখতে পায় সে। এরপর কয়েকজনকে ডেকে আনলো। তারা থানায় ফোন দিয়েছিলো। তারপর ধীরে ধীরে লোকজন বাড়তে লাগলো সেখানে।

সেখানে সব কিছু শেষ হলে লা’শ টা প্যাকেটিং করে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। মাথাটা খুজে পায়নি কেউ। হয়তো পানির সাথে ভেষে চলে গেছে কোথাও? তাই একটা কার লা’শ তা এখনো অনুমান করতে পারেনি কেউ। সেখানে থাকা ছু’রিটাও প্যাকেট করে নিয়ে গেলো। এরপর লোকজন কমতে লাগলো সেখানে।
লা’শ নিয়ে চলে গেলো পুলিশের গাড়ি। হয়তো এরপর তদন্ত করার সময় আবার আসবে তারা। যাওয়ার সময় চোখ পরলো তিন রাস্তার মোড়ে ল্যাম্প পোষ্টের সাথে সিসিটিভি ক্যামরা। এই এলাকায় এর আগেও এমন কয়েকটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রতিটা ল্যাম্প পোষ্টের সাথে ক্যামেরা সেট করা হয়েছে।
,
,
আজ রিমার লাষ্ট এক্সাম। সময়টা খুবই আনন্দের ছিলো। আজ এক্সাম শেষ হওয়ার পর একধম কয়েক মাসের জন্য প্যারা মুক্ত। এবার একবারে সব এক্সামই ভালো হয়েছে। এ+ এবার খামায় কে?
রুশান বলেছিলো, এক্সাম শেষ হলে আসবে। রেজাল্ট ভালো কি যেন সারপ্রাইজ আছে। সব মিলিয়ে সময়টা আনন্দময়ই কাটছিলো।

কিন্তু সকালে মা-বাবার কথপোকথনের মাঝে রুশানের নাম বারংবার আসলে কেমন যেন বুক টা টিপ টিপ করতে থাকে। মা-বাবা, রামিম ভাইয়া একে একে সবাইকে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও কেউ কিছু বলছে না তাকে। তবুও নাছোড়বান্দার মতো পরে আছে সে। সে জানবেই।
ইতিমধ্যে বাবা মা দেখছে কোথাও যাওয়ার জন্য অলরেডি বের হচ্ছে। আর রামিমকে বললো, আজ অফিস থেকে ছুটি নিতে।

অনেক জোড়াজুড়ির পর রামিমের কাছে জানতে পারলো রুশান হসপিটালে আর সবাই সেখানেই যাচ্ছে।
রিমা রীতিমতো কাঁন্না করে দেওয়ার অবস্থা। সবার সাথে সেও যাবে। আর এদিকে আজ তার লাষ্ট এক্সাম। কিন্তু রিমা এসব কিছুই শুনতে চাইছে না আজ। তার একটাই কথা সে রুশানের কাছে যাবে।
ফাইনালি বাবা-মা রাজি হয়ে বলে, এক্সাম শেষ হওয়া মাত্রই রামিম তাকে নিয়ে যাবে। আর চিন্তা না করতে। সুন্দর ভাবে আজকের এক্সামটা শেষ করে বের হতে।

পরিক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘন্টা পার হয়ে কিছুটা সময় গেলেই হল থেকে বেরিয়ে আসে রিমা। বাইরে রামিম দাড়িয়ে ছিলো। ৩ ঘন্টার পরিক্ষার মাঝে রিমাকে দেড় ঘন্টার মাঝে বের হয়ে যেতে দেখে অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকায় রামিম। এখনো দেড় ঘন্টা বাকি। তারচেয়ে বড় কথা হলো এটা বোর্ড এক্সাম। একটা বিষয় এদিক ওদিক হলেই এক বছরের জন্য পিছিয়ে যেতে হবে। যেখানে রিমার এ+ এর স্বপ্ন ছিলো, সেখানে আজ পাশ করবে কিনা সেটা না ভেবেই খাতা জমা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো হল থেকে। তার মন পরে আছে আজ অন্য জায়গায়।

রামিম এই নিয়ে রিমাকে কয়েকটা কথা শুনালে রিমা আজ ভাইয়ের দিকে চেয়ে তেজস্বী গলায় বলে,
– লাগবেনা পাশ করা। লাগবে না ভালো রেজাল্ট? কার খুশির জন্য এতো কিছু করবো? সে নিজেই তো এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে। সে না থাকলে আমি এসব পাশ রেজাল্ট দিয়ে কি করবো?
রামিম হা করে চেয়ে থাকলে মুহুর্তেই রিমা তার তেজস্বী গলাকে করুন করে বলে,
– স্যরি ভাইয়া, প্লিজ আমাকে তারাতারি নিয়ে চলো না। কিচ্ছু ভালো লাগছে না আমার।
,
,
আইসিইউ তে রাখার ফলে রুশানের সাথে কেউই দেখা করতে পারেনি। দুর থেকে দেখছে শুধু।
রুশানের বাবা রিদের সাথে রাজ ও বাকিদের কথা হয়েছে সকালে। তিনি খুব আপসেট। দেখে মনে হচ্ছে এই অল্প সময়েই তাকে তীব্র কষ্ট গ্রাশ করে নিয়েছে।

একটা মেয়েকে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদতে দেখে প্রশ্ন করে মেয়েটা কে? কেও একজন বলে উঠে রুশানের হবু বৌ। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।

গ্লাসের সামনে বসে বাচ্চাদের মতো কাঁদছে সে। কেও একজন এসে তাকে ধরে তার পাশে নিয়ে বসালো। কোনো দিকে খবর নেই রিমার। তার মন এখন এক জায়গাতেই আবদ্ধ হয়ে আছে।

এক সময় রুশানকে দেখলেই তার বিরক্ত লাগতো। যখন সে স্কুলে পড়তো। কোনো ছেলের সাথে মিশলে বা আড্ডা দিলে রুশান তাকে কড়া ভাবে বুঝাতো যেনো এসব না করে। এর পরও মিশলে টাস টাস চ’র বসিয়ে দিতো। রিমার তখন বিরক্ত লাগতো এটা ভেবে যে, আমি কি করবো না করবো সেটা ওর প্রব্লেম কি? সে কেন আমার মা’রবে, আমায় শাসন করবে?
সেই সময় গুলোতে রুশানকে প্রচুর বিরক্তিকর মনে হতো। এরপর আবার রাগ ভাঙাতে কখনো চকলেট কখনো রিমার পছন্দের কিছু নিয়ে এসে বুঝাতো সব। আগের সময় গুলো এভাবেই কাটতো।
তারপর ধীরে ধীরে বুঝতে শিখেছে। বড় হওয়ার পর রুশার কখনো আর চর থাপ্পর দেয় নি। কারণ রিমার এখন রাগ অভিমান বুঝার বয়স হয়েছে। এখন মুখের কথাই মা’রের চেয়ে বেশি আঘাত করবে তাকে।
এভাবেই অল্প অল্প করে আজ এই জায়গায় দুজন। বিরক্তিকর মানুষটাকে আজ বড্ড বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে সে। বিরক্তিকর মানুষটার জন্য কলিজা ছিড়া অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে। মনে মনে কিছু কথা এমন হচ্ছে যে,

‘আমি আর কখনো আপনার প্রতি বিরক্ত হবো না। আপনার সব কথা শুনবো। যখন যা বলবেন তাই করবো। তবুও দুরে কোথাও সরে যাবেন না প্লিজ। ছোট বেলা থেকে এতো জ্বালিয়ে এখন অনুভূতি বুঝতে শিখার পর দুরে চলে গেলে আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাবো। কখনো আমার চোখে পানি দেখলে তো আপনার আঙুলের আলতো ছোয়ায় তা মুছে দিতেন। আজও আমার চোখ ভিজে উঠেছে। অন্তত একবার তাকান না প্লিজ। দেখেন আমি আজ খুব বেশিই কাঁদছি। মুছে দিবেন না এই অশ্রু? আমার দু’চোখ যে পলকহীন ভাবে চেয়ে আছে আপনার স্থির হয়ে থাকা হাতের আঙুল গুলোর দিতে। আগের মতো আজও আলতো করে অশ্রুকনা মুছে দিবে এই আশায়।’
,
,
গতকাল রাতে একটা গাড়ি এসে থেমেছিলো তিন রাস্তার মেড়ে। সেখান থেকে রুশানকে বের করে সিএনজিতে তুলে ঐ রাস্তাটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একটা ছেলেও পেছন পেছন গেলো। আধা ঘন্টা পর আবার ঐ রাস্তা থেকে ঐ ছেলেটা বেড়িয়ে মেইন রোডে আসে রুশানকে কাধে নিয়ে। ঐ জায়গায় একটা লা’শ ফেলে আবার রুশানকে নিয়ে মেইন রোডে আসলো ছেলেটা।
তারপর জামা খুলে গাড়ি দাড় করানোর চেষ্টা করছে।
ভিডিওটা দেখে তারা বুঝে উঠতে পারছে না ছেলেটা কি রুশানের এমন অবস্থা করেছে? নাকি রুশানকে বাচাতে চাইছে। তাহলে সেই জায়গায় খু’নটা করেছিলো কে?
এমন নয় তো ছেলেটা রুশানকেও মা’রতে চেয়েছে ঐ লোককেও মে’রেছে।

পাশের হসপিটাল থেকে ছেলেটার কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে। ছেলেটার নাম নিনিড়। ছু’রিতে এই ছেলেটার ফিঙ্গারপিন্টও পাওয়া গেছে। যেটা দেখে পরিস্কার যে মা’র্ডারটা এই ছেলেটাই করেছে। তাহলে আবার রুশানকে নিয়ে মেইন রোডে আসলো কেন? যার কারণে বিষয়টা ধোয়াশা মনে হচ্ছে।

আপাতত ছেলেটাকে এ্যারেষ্ট করার প্রস্তুতি চলছে। এরপর বাকি বিষয়টা জানা যাবে।
,
,
রুশানের নিরাপত্তার জন্য হসপিটালের চার পাশ টা পুলিশ ঘিরে রেখে সিকিউরিটি দিচ্ছে। সাথে বড় বড় অফিসারও রুশানকে দেখতে এসেছে। সেই সাথে নিবিড়কেও খুজছে পুলিশ।

বিষয়টা চুপচাপ মাথার মাঝে সাজিয়ে নিয়ে সুজুগ বুঝে নিবিড়কে বাইরে পাঠিয়ে দেয় সে। অন্য দিকে সব ঠিকঠাক করে রেখেছিলো। নিবিড় চার পাশে পুলিশ দেখে মাস্কটা ঠিক করে হসপিটালের গেট পেড়িয়ে বাইরে আসে। রাজের কথা মত কিছুটা দুরে হেটে গিয়ে একটা গাছের সামনে দাড়ায় সে। রাজ বলেছিলো সেখানে কেও একজন আসবে তার সাথে দেখা করতে।
কিন্তু কেও নেই সেখানে। হুট করে একটা গাড়ি এসে দাড়ায় তার সামনে। কিছু বুঝে উঠার আগেই নিবিড়কে তু’লে নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। নিবিড় কিছুি বুঝতে পারলো না, তার সাথে কি হচ্ছে। শুধু একজন তাকে অবয় দিয়ে বলে,
– ভয় পাবেন না। যা হচ্ছে আপনার ভালোর জন্যই হচ্ছে।

To be continue………

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৫৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

প্রায় ঘন্টা খানেক পর একটা বড় বাড়ির সামনে এনে গাড়ি থেকে নামায় নিবিড়কে। নিবিড় অবাক ভঙ্গিতে একবার বাড়িটার উপর চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর সন্ধেহ জনক ভাবে সেখানে থাকা লোক গুলোর দিকে তাকায়। বুকটা টিপটিপ করছে তার।
এরা কি সেই লোক, যারা রুশানকে মা’রতে চেয়েছিলো? রুশানের মতো আমাকেও মে’রে ফেলার জন্য নিয়ে আসেনি তো এখানে? এমন নানা চিন্তা মাথার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।

একজন হাত দিয়ে সামনের দিকে ইশারা করে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে বললো নিবিড়কে।
নিবিড় নার্ভাস অবস্থায় এখনো দাড়িয়ে আছে এক জায়গায়। ভেতরে যাওয়ারও সাহস পাচ্ছে না আর দৌড় দিয়ে পালিয়ে যাওয়ারও সাহস পাচ্ছে না।

ভাবতে বাবতে খেয়াল করে বাড়ির ভেতর থেকে একজন ভদ্রলোক বেড়িয়ে এসে নিবিড়ের সামনে দাড়ালো। তার দিকে হাত বাড়িয়ে মুখে হালকা হাসির আভাস রেখে বলে,
– হাই, আমি ইকবাল সানি।
নিবিড় লোকটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে সেও হাত মিলালো। তারপর কিচুটা নার্ভাস গলায় বলে,
– আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে কেন?
ইকবাল সানি পকেটে দু’হাত গুজে নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– আপনার নিরাপত্তার জন্য মি. রাজ চৌধুরীর কথায় আপনাকে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। পরিস্থিতি স্বাবাবিক না হওয়া পর্যন্ত এখানে গা ঢাকা দিয়ে থাকুন। সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হবে আপনাকে।
নিবিড় একটু ভ্রু-কুচকে বলে,
– রাজ চৌধুরী কে? আর আমাকে নিয়ে সে এতো ভাবছে কেন?

ইকবাল সানি একটু মুচকি হেসে বলে,
– আপনার নামে কি’ডনাপিং ও মা’র্ডার কে’স দুটুই হয়েছে শুনে ভেবেছিলাম মোটামুটি বুদ্ধি-সম্পন্ন হবেন আপনি। একন দেখি সম্পর্ণই তার বিপরীত।
নিবিড় এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। দুই দিকে একটু হাত মেলে বলে,
– আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
ইকবাল সানি এবার হাসি দমিয়ে রাখার মতো করে বলে,
– সময় হলেই বুঝতে পারবেন। আপাততঃ ভেতরে আসুন। মি. রাজ আসার পর বাকিটা বুঝে নিবেন।

আর কিছু না বলে ভাবতে ভাবতে ইকবাল সানির সাথে ভেতরে চলে গেলো নিবিড়। নিবিড়ের মাথায় ধরছে না এই রাজ চৌধুরী টা আবার কে? তার বন্ধু রাজ নয়তো? ধ্যৎ সে কিভাবে হবে। এসব কিছু তো রাজের সাথে কিছুতেই মেলেনা। তাহলে কোন রাজ আমাকে এতো নিরাপত্তা দিচ্ছে?
,
,
ওদিকে রাজ তুষারকে পাঠালো নিরাদের বাসায়। যেখানে নিবিড় ও নিরা নতুন উঠেছিলো।
তুষারও চলে গেলো সেখানে। গিয়ে দেখে নিরা চুপচাপ বেলকনিতে বসে ছিলো। তুষারকে দেখেই সে উত্তেজিত হয়ে নিবিড়ের সম্পর্কে জানতে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
নিরাকে এমন অশান্ত দেখে তুষার তাকে শান্ত করে বুঝায় যে, নিবিড় ভালো আছে। আর নিরাপদেই আছে। তবে কয়েকদিন আর দেখা করতে পারবেনা নিবিড়ের সাথে। তবে নিশ্চিন্তে থাকতে। প্রেগন্যাট অবস্থায় উত্তেজিত হওয়াটা ঠিক না। রিলেক্সে থাকতে আর নিবিড়ের জন্য দোয়া করতে।

নিরা এবার একটু শান্ত হলে তুষার বলে,
– আপাতত এক সাপ্তাহের বাজার করে দিয়ে গেলাম। মাঝে মাঝে আসবো আমি। আপনি নিশ্চিন্তেই থাকবেন। কয়দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এই নিন কিছু টাকা। প্রয়োজনে খরচ করবেন। আপনি এই অবস্থায় বাইরে যাবেন না। দারোয়ানকে বলে রাখবো আমি। কিছু দরকার হলে তাকে বলবেন, সে এনে দিবে।

নিরাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে তুষার। এই নিরাকে দেখে বুঝার উপায় নেই মেয়েটা ভালো না খারাপ। প্রথমে মনে হয়েছিলো কোনো ঘাপলা নিশ্চই আছে। আর এখন দেখে মনে হচ্ছে সে সবচেয়ে বেশি নিবিড়কেই ভালোবাসে।
আবার নিবিড় বলে প্রেগন্যান্সির বিষয়ে সে কিছুই জানে না। তাহলে সত্যিটা বলছে কে? সব যেন একটা গোলক ধাঁধাঁর মতো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তুষারের।
,
,
বিকেলে নিলয় চুপচাপ হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসলো। রাস্তায় একটা গাড়ি ডেকে সোজা চলে গেলো পিন্টুর উদ্দেশ্যে।
কিন্তু ফোন বন্ধ রেখে কোথাও উধাও হয়ে আছে পিন্টু। নিলয় কয়েকজনকে পাঠালো পিন্টুকে খুজে বের করে জায়গা মত নিয়ে আসতে।

পিন্টুকে খুজে নিলয়ের কাছে নিয়ে আসতে প্রায় রাত হয়ে গেছে।
পিন্টুকে সামনে পেতেই নিলয় উঠে লাগাতার কয়েলটা চ’র দিয়ে নিজের ভেতরের উত্তেজনা কিছুটা শান্ত করলো।
পিন্টু গালে হাত দিয়ে নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ভাই এই লাইনে আসার পর থেকে সব সময় আপনার সাথে থাকছি আমি। ছোট ভাইয়ের মতোই দেখতেন আমায়। আর আজ একটা ছেলের জন্য আমার গায়ে হাত তুলছেন। তাও আবার যেই ছেলেটা আমাদের জাত শত্রু।

নিলয় আবার পিন্টুর দিকে অগ্নি চোখে চেয়ে বলে,
– তোকে বারন করার স্বত্বেও কেন তুই আমার কথার আগে পা বাড়ালি? কেন চাইলে কি আমি রুশানে হারিয়ে ফেলতে পারতাম না?
পিন্টু এবার মাথা নিচু করে করুণ স্বরে বলে,
– আমি ভেবেছিলাম, আপনার বন্ধু দেখে আপনার মায়া কাজ করছে। তাই আমিই ফেলে দিই। যত যাই হোক, শত্রু কখনো আপন হয় না এটা চিরন্তর সত্য। আচ্ছা আপনিই বলুন, যদি সে আপনার পরিচয় জেনে যায় তখন কি সে আপনার মতো মায়া দেখাবে? কখনোই না ভাই। দুনিয়াটা সার্থের গোলাম। সার্থের জন্য দুনিয়ায় কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা পর্যন্ত ছেড়ে দেয় না।

নিলয় এবার পিন্টুর দিকে চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে প্রশ্ন করে,
– সার্থটা কি বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু?
পিন্টু আবার বলে,
– এই সার্থের জন্য মানুষ শুধু বন্ধু না, নিজের ভাইয়ের সাথেও বেঈমানি করতে দ্বিতীয় বার ভাবে না। যেখানে ইমোশন বলতেই তুচ্ছ জিনিস। আচ্ছা যাই হোক, আমার অন্যায় হয়ে গেছে আপনার কথার বাইরে কিছু করতে গিয়ে। এমনটা আর হবে না।
নিলয় এবার৷ পিন্টুকে কাছে ডেকে পিন্টুর মাথাটা নিজের বুকের সাথে কিছুক্ষন চেয়ে ধরে বলে,
– ব্যাথা পেয়েছিস বেশি?
পিন্টু চুপ করে আছে। নিলয় আবার বলে,
– এই কয়েকদিন এদিকটা সামলা। আমি হয়তো সময় দিতে পারবোনা এই কয়েকদিন। আর নির্জন ভাই কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবি, কি একটা কাজ নিয়ে বিজি আছে আমাকে কিছু বলেনি।

বলেই সেখান থেকে বেড়িয়ে যায় নিলয়। পিন্টুর বলা কথা গুলো বারংবার মাথার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। আসলেই কি সার্থটা বন্ধুত্ব বা রক্তের সম্পর্কের চেয়ে বেশি। নাকি মানুষই এটাকে ‘বেঈমানী’ নামের একটা নীতি বানিয়ে ফেলেছে।
,
,
ঐ দিনটা কেটে গেলো। হাজারও চিন্তা মাথায় নিয়ে ঐ বাসায় আজ সহ দুই দিন পার করলো নিবিড়। তুষার একটা জরুরি খবর জানাতে নিবিড়ের খোজ করলে রাজ একটা ঠিকানা দিয়ে বলে। সবধানে যাবে, আর কেও যেনো ঐ ঠিকানার ব্যাপারে কিছু না জানে।

কপির মগে চুমুক দিচ্ছে নিবিড়। এমন সময় তুষারকে দেখে অনেকটাই অবাক ভঙ্গিতে তাকালো সে। তুষার নিবিড়ের পাশে এসেই বলে,
– কিরে ভাই, তোরে নিয়ে আমি টেনশনে ম’রি।এদিকে তুই দেখি রাজার হালে আছস।
নিবিড় বলে,
– আমি নিজেও বুঝতে পারছি না আমার সাথে কি হচ্ছে। কিন্তু তুই ঠিকানা পেলি কোথায়?
তুষার কথাটার উত্তর না দিয়ে অন্য ধ্যানে বাসার চার দিকে চোখ ঘুরিয়ে একবার দেখে বলে,
– বাপরে বাপ, এই জায়গায় কিভাবে আসলি তুই? বাইরে দেখলাম কম করে ২০-২৫ টা গার্ড বাড়ির চার পাশে। আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। এমন একটা বাড়ির স্বপ্ন আমার ছোট বেলা থেকে।
নিবিড় এবার বলে,
– কফি খাবি?
তুষার বলে,
– এখানে টাকা দিতে হবে?
নিবিড় বলে,
– না, ওদেরকে যখন যা বলি তাই এনে দেয়।
তুষার আবারও অবাক হলো। নিবিড়কে এতো খাতির কে করছে এটাই তার মাথায় ঢুকছে না। যাই হোক এখন ক্ষুদাও লেগেছে অনেক। তাই নিবিড়কে বলে,
– তাহলে এক কাজ কর, ফ্রিতে হলে এখানে যা যা খাবার আছে, সব নিয়ে আসতে বল।

খাওয়া দাওয়া শেষে তুষার আরাম করে বসে বলে,
– একটা জরুরি খবর জানাতে তোর কাছে আসলাম।
নিবিড় তার দিকে চেয়ে বলে,
– পজেটিভ কিছু বল। এমনিতেই অনেক টেনশনে আছি।
তুষার কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– এই সময়ে পজেটিভ খুজতে যাস না। নেগেটিভ হলেও সত্য যে নীলার বিয়ের কথা বার্তা চলছে।
নিবিড় বিদ্যুতের মতো চমকে উঠে বলে,
– মানে কি? মজা করছিস তুই?
তুষার আবার বলে,
– তোর কি মনে হয়, এমন একটা সময়ে আমি মজা করবো? একে তো তুই নিরাকে নিয়ে এমন একটা প্রেগন্যান্সির ঝামেলায় পরে গেলি। তার উপর এখন মা’র্ডার করে পুলিশে ঝামেলায় জড়ালি। নীলাও ভালো নেই। তাই এবার প্রস্তাব আসাতেই রাজি হয়ে যায় নীলার বাবা। বিয়ের পর যদি একটু নিজেকে বুঝাতে পারে, এই ভেবে।
নিবিড়ের বুকটা কাঁপতে শুরু করলো। রাগে কাঁপতে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
– প্রয়োজনে আরো খু’ন করবো। তবুও নীলাকে অন্য কেউ নিয়ে যাবে। এমনটা হতে দিবো না।

তুষার এবার তাকে বুঝাতে বলে,
– এখন এসব বলে লাভ কি? চার দিকে তোর বিপদ। তার চেয়ে বড় কথা হলো, নিরা আছে তোর অনাগত বাচ্চা আছে। তুই চাইলেই কি ওদের ফেলে দিতে পারবি?
নিবিড় আর কিছু বলতে পারলো না। দিশে হারা ভাব নিয়ে চুপচাপ বসে আছে নিশ্চুপ।
,
,
হসপিটালের দিকটায় রাজ সব সামলে নিচ্ছে। আর বাইরের দিক গুলোতে পাঠাচ্ছে তুষারকে। আজ আবার নিরার বাসায় যাওয়ার পর দরজার বাইরে এক জোড়ে ছেলের জুতা দেখতে পায় তুষার। নিরার কাছে এই অসময়ে ছেলে আসলো কোথা থেকে।
দরজা একটু ফাক করে দেখে ড্রয়িং রুমে কেও নেই। নিরার রুম থেকে নিরা ও একটা ছেলের মাঝে কথা কাটাকাটি চলছে। তাও বাচ্চা সম্পর্কে। রুমের সামনে থেকে সবটা শুনতে পায় তুষার। যা বুঝলো তাতে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, নিরার পেটে বাচ্চাটা নিবিড়ের না বরং এই ছেলেটার। ছেলেটা তাকে মেনে নিচ্ছে না দেখে নিবিড়কে ইমোশনাল পেয়ে কৌশলে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে এই বাচ্চাটা।
তুষার চুপচাপ ফোন বের করে আড়াল থেকে সব ভিডিও করতে লাগলো।

To be continue……..