#ভালোবাসা_অবিরাম
#অন্তিম_পর্ব
#আইরাত_বিনতে_হিমি
কেবিনে বেডে সুয়ে আছে নিলু। একটা স্টেচারে সুয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো আসফি।তাকে নিলুর পাশে রেখে সবাই চলে গেলো। আসফি খুব নিখুঁত ভাবে তার চন্দ্রকান্তাকে দেখছে। তার চন্দ্রকান্তা আজ আর চাঁদের মতো উজ্জল নেই। অসুস্থ নামের ব্যধি তাকে একদম কাবু করে ফেলেছে।তার চোখের নিচে এখন আর কাজল নেই। কাজলের বদলে চোখের নিচে কালি পরে গিয়েছে। তার ঐ হাস্যজ্জল চেহারাটা এখন আর হাস্যজ্জল নেই। তার চেহারাটা এখন পান্ডুবর্ণ রূপ ধারন করেছে। নিজের প্রেয়শীর এমন বেহাদ অবস্থা দেখে আসফির নয়ন নোনাজলে ভরে উঠলো। অত্যন্ত শিথিল সুরে সে বলে উঠলো
তুমি আমার সেই প্রেয়শী যাকে এই বুকে আগলে রাখতে পারিনি।
এই কথা বলে আসফি নিজের হাতে ভর দিয়ে নিলুর দিকে ঝুকে আর তার কপালে অত্যন্ত কোমলতার সাথে নিজের ওষ্ঠযুগল ছুয়ে দেয়। নিজের কপালে কোনোকিছুর ছোয়া পেয়ে চোখ মেলে তাকায় নিলু। চোখের সামনে নিজের প্রনয়নীর মুখশ্রী দেখে উদ্ভুত নয়নে চেয়ে থাকে। প্রেয়শীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে নিজের হস্ত নিলুর চোয়ালে রাখে আর বলে
এখন কেমন ফিল করছো?
নিলু কিছু বলতে পারে না নিজের দুহাত দিয়ে আসফিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। যেনো এত বছরের আবেগ গুলো কোনো ভরশার বুক পেয়ে একসাথে বাহির হয়ে আসছে। আসফি এতে নিজের উদরে ব্যথা অনুভব করলেও প্রানপ্রিয়ার কথা ভেবে সেইদিকে পাত্তা দেয় না। বেশকিছু ক্ষণ পর নিলু আসফিকে ছেড়ে দেয়। আর আসফি নিজের জায়গা সুয়ে পরে। নিলু আসফির দিকে ফেরে আসফির হস্তজোড়া নিজের হস্তে মুস্টিবদ্ধ করে ফেলে নিজের নরম ওষ্ঠযুগল এগিয়ে দিয়ে আসফির হাতের মধ্যে কোমলতার সাথে চুমু খায়। আসফির এমন করুণ অবস্থা দেখে সে ডুকরে কেদে উঠে। যা আসফির দৃষ্টিগোচর হতে সে বলে
এই বোকা কাদছো কেন? দেখ আমি একদম ঠিকআছি।
কান্নামিশ্রিত কন্ঠে নিলু জবাব দেয়
হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি আপনি কেমন ভালো আছেন। শরীরের কত জায়গায় ক্ষত। পেটের মধ্যে ব্যান্ডেজ করা। কেন ব্যান্ডেজ করা বলুন। কি হয়েছিল আপনার।
কিছু না ছোট্ট একটা accident
সম্পূর্ণ ঘটনাটা আসফি নিলুর কাছ থেকে গোপন করলো কারণ সে চায় না তার এই বিদ্ধস্ত জীবনের কাহিনি নিলু জানুক। সে রাগলে কতটা ভয়ানক হতে পারে তা সে জানুক। সে যে মানুষ খুন করে এসেছে তা নিলু জানুক তার কোনোটাই সে চায় না। শুধু এতটুকুই চাই সে আসফি চৌধুরীর ভালো মূর্তি দেখে এসেছে তাই সারাজীবন দেখে যাক।
নিলু আর কথা বাড়ালো না। সে ধীরে ধীরে উঠার চেষ্টা করলো যা আসফির দৃষ্টিগোচর হতে সে বললো
কি করছো নিলু উঠছো কেন?
কিন্তু তার কোনো কথায় নিলু কর্ণকুহরে নিলু না। সে ধীরে ধীরে উঠে আসফির কাছে যায় এবং উদরের কাছে গিয়ে অতি সাবধানতার সাথে ক্ষত স্থানে নিজের ঠোট ছুয়িয়ে দেয় যা আসফির দৃষ্টিগোচর হতেই আসফির চোখ আপনা আপনি আবেশে বন্ধ হয়ে আসে। নিলু উঠে পুনরায় নিজের জায়গায় এসে সুয়ে পরে। বেশকিছু ক্ষণ পর কেবিনে বাড়ির সবাই প্রবেশ করে সাথে রাবেয়া চৌধুরীও। রাবেয়া চৌধুরীকে দেখে আসফি কুশল বিনিময় করে এবং সর্বশেষ বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে সব কথা খুলে বলে। যা শুনে আশরাফ চৌধুরী একদম ভেঙ্গে পরে। আশরাফ চৌধুরীকে শক্ত হতে বলে আসফি। মনোবল হারাতে নিষেধ করে।
৫ বছর পর,
আরুশি চৌধুরী বাড়ির বাগানের মধ্যে ছোটাছুটি করছে আর তার পিছন পিছন খাবার নিয়ে দৌড়াচ্ছ নিলু। নিলু বারংবার বলছে
মামমাম প্লিজ কথা শুনো খাবারটা খেয়েও নেও। আরুশি দাড়াও বলছি। এই শুনো।
কিন্তু কে শুনে কার কথা সে দৌড়েই চলেছে। সে হাপাচ্ছে না কিন্তু তার পিছনে দৌড়িয়ে নিলু হাপিয়ে গেছে। আরুশি দেখতে পেলো বাড়ির মেঈন গেইট দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করছে তাই সে এক দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে যায়
পাপা
আসফিও গাড়ি থেকে বাহির হয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়। যা দেখে নিলু বলে
এতক্ষণ আমি যে তোর পিছনে এত দৌড়ালাম তুই কেনো দাড়ালি না। এখন পাপাকে দেখে চলে আসলি।
আসফি এক গাল হেসে নিলুর গাল টেনে বলে
তাতে কি হয়েছে তুমি তো জানোই ওহ একটু দুষ্টুমি করতে পছন্দ করে।
হে আপনার মেয়ে না তাই আপনার মতো হয়েছে
এই কথা বলতেই নিলুর উলটি আসে। সে সাথে সাথে মুখ ধরে বাগানের সাইটে চলে যায়। আসফি ব্যপারটা বুঝার জন্য মেয়েকে কোলে থেকে নামিয়ে বাসার ভিতরে যেতে বললো আর সে নিলুর কাছে গেলো। নিলু বমি করছে। আসফি নিলুর পিঠে হাত রেখে বললো
ঠিক আছো
হুম
বাবা হচ্ছি।
নিলু লজ্জায় নুয়ে যাওয়ার অবস্থা। তবুও মাথা নাড়িয়ে চলে যেতে নিলে। আসফি ধরে ফেলে। আর নিজের বুকের পা পেশে নিলুর মাথা রেখে বলে
#সমাপ্ত