আমার প্রিয়দর্শিনী তুমি পর্ব-১১

0
370

#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(১১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

অর্পি কে জোর করে একটা মেয়ে বিয়ের সাজে সাজাচ্ছে!অর্পি বাঁধা দেওয়ার কারণে মেয়েটাকে অনেক ব্যাগ পোহাতে হচ্ছে। সাজানো একটু বন্ধ করলেই,সুঠাম দেহের অধিকারী একটা ছেলে উচ্চ কন্ঠে ধমকে ওঠে,মেয়েটি ভয়ে চুপসে যায়। পরক্ষনেই আবার দ্রুত হাত চালায় অর্পি কে সাজাতে শুরু করে।
তাকিয়া কিছুই অবলোকন করতে পারছে না কি হচ্ছে এসব?অন্যত্র একটা সোফায় আলিয়া চোখের পানি বিশর্জন দিয়ে চলেছে। গলায় তার ধারালো ছু’রি ধরে রাখা!আর চুপ না থেকে বললো,
-“আন্টি কি হচ্ছে এসব?
-“তা,, তাকিয়া তুই রুমে যা।
আলিয়া চোখের ইশারায় কিছু ইঙ্গিত করছে কিন্তু তাকিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না।
আলিয়া চাইলেও বলতে পারছে না, যে ইশরাক কে কল কর আসার জন্য।
-“আন্টি তুমি কি বলছো?আর এখানে এসব কি হচ্ছে?অর্পি কে এভাবে সাজানো হচ্ছে কেন?

-“আরেব বাস এ যে মেঘ না চাইতেই জল!
তাকিয়ার দিকে লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বখা’টে রাব্বি বললো কথাটা।

তাকিয়া’র শরীর শিরশির করে উঠলো রাব্বির এরকম চাউনিতে। রে’গে তেতে ওঠে বললো,
-“কারা আপনারা? এখানে আইসা এমন বখা’টেপনা করছেন কেন? আমি কিন্তু পুলিশ কে কল করুম।ভালোয় ভালোয় বেরিয়ে যান বলছি।

রাব্বি তাকিয়া’র মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে ঠোঁট নাড়তে নাড়তে বললো,
-“রূপসীর দেখছি অনেক তেজ!
তাকিয়া হাত তুলতে নিলে!খপ করে হাত ধরে নেয় রাব্বি।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক” ধরে অন্য হাতে তাকিয়া’র মাথা থেকে ওড়না টেনে ছুড়ে ফেলে দেয়।তাকিয়া এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিজেকে আবৃত করার চেষ্টা করে চলে। আলিয়া অনুরোধ করে বলে,
-“তোদের তো আমার সাথে ঝামেলা তাহলে শুধু শুধু মেয়েটাকে কেন অসম্মান করছিস? আমার মেয়ের সাথে করেও কি আশ মিটছে না?ও বিবাহিত মেয়ে ওকে ছেড়ে দে?ওর স্বামী সংসার আছে।

আলিয়ার কথা গুলো যেন রাব্বির কর্ণধারে পৌঁছালো না।তাকিয়ার লম্বা চুলের বেনুনি টা টেনে ধরে নাকের কাছে এনে শুঁকতে লাগলো! তারপর বেনুনি টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে তাকিয়া’কে।এর মধ্যে তাকিয়া’র শরীর ভয়ে কাটা দিয়ে ওঠে। ফর্সা মুখশ্রী কালচে বর্ণ হতে শুরু করে!
তাকিয়া ফর্সা তবে দুধে আলতা ফর্সা নয়। দুধে আলতা গায়ের রঙের অধিকারীদের রেগে গেলে বা ভয় পেলে মুখশ্রী লাল রঙ ধারণ করে কিন্তু যারা হলদে ফর্সা রঙের অধিকারী তাদের মুখশ্রী তাকিয়া’র মতো কালচে বর্ণ ধারণ করে।
মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে চলেছে তাকিয়া। আলিয়া আসতে চাইলে গলায় ধরা ছু’রি টা আরো চেপে ধরে লোকটা।
একদিকে গায়ে ওরনা নেই অন্য দিকে লম্বা চুল গুলো হাতে পেঁচিয়ে নিয়েছে রাব্বি। তাকিয়া অনেক দস্তা দস্তি করেও ছাড়া পাচ্ছে না। রাগে দুঃখে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে তার।বার বার আল্লাহ কে স্মরন করে চলেছে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ই এই বি’পদ থেকে রক্ষা করতে পারেন।

অর্পিকে সাজানো শেষ হলে পার্লারের মেয়েটি বললো, সাজানো হয়ে গেছে।
এ কথা শুনে রাব্বি তার পারিশ্রমিক দিয়ে বিদায় করলো। তারপর সাথের একজনের হাতে তাকিয়া কে দিয়ে রাব্বি বিয়ের কাজে মনোনিবেশ করলো।কাজি সাহেব তুতলাতে তুতলাতে বিয়ের কাজ শুরু করেন।এত অ’স্ত্র দেখে ভয়ে তেনার জান যায় যায় অবস্থা।

রাব্বি ধমকের সুরে বললো,
-” স্পষ্ট করে বল! এভাবে বললে বিয়েটাই তো সুদ্ধ হবে না শা*

কাজী সাহেব যথাসম্ভব চেষ্টা করছেন নিজেকে সংযত করার তবুও ভ’য়ে কাঁপছেন তিনি।অর্পির শরীর রা’গে ফুঁসছে শুধু গায়ের জোরে পারছে না বলে। তারপর কাজী সাহেব সব কিছু ঠিক করে অর্পিকে বললেন,
-“মা এখানে সাইন করে দাও।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক”অর্পি ফাইলটা হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল অদূরে!যার জন্য রাব্বি রা’গে নিজেকে সামলাতে না পেরে থাপ্প’র দিয়ে বসে অর্পিকে!অর্পি গালে হাত দিয়ে কেঁদে ওঠে। মায়ের দিকে করুন চোখে তাকায়। আলিয়ার বুক ফেটে কান্না আসার উপক্রম। ইচ্ছে করছে নিজেকে শে’ষ করে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে।আর এসব দেখার মতো ধৈর্য ক্ষমতা অবশিষ্ট নেই তার।

শেষে অর্পি সাইন করতে বাধ্য হয়! রাব্বি কলম হাতে নিয়ে যেই না সাইন করবে তখন পুরো ঘর অন্ধকারে ডুবে গেল! রাব্বি রা’গে সামনে থাকা ছোট কেবিনেটে সজোরে লা’থি মেরে উঠে দাঁড়ায়! চেঁচিয়ে বলে,
-“তা’মা দেখতে দাঁড়িয়ে আছিস? সবগুলোর ফোনের ফ্লাস লাইট অন কর।

সবগুলো বখা’টে ছেলে নিজেদের পকেট হাতড়ে ফোন বের করে ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে আঁধারের ঘনঘটা আলোতে রুপান্তরিত করে। রাব্বি অধরে বিস্তর হাসি ফুটিয়ে নিজের ফোনের আলো নিয়ে ফাইলে মনোযোগ দিতেই চারিদিকে অন্ধকার ছাড়িয়ে আলো ফুটে ওঠে। সেই আলোর সাথে সাথে রাব্বির জীবনের আলো নিভে যায়! রাব্বি নড়াচড়া করার শক্তিও যেন লোপ পেয়েছে।তার মাথার কোণে রিভ’লবার ধরে রাখা! একটু নড়াচড়া করলেই যেন গু’লি বের হয়ে আসবে! ইশারায় সবগুলো ছেলেকে নিজেদের অ’স্ত্র ফেলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিল রাব্বি। সবাই ইশারা অনুযায়ী অ’স্ত্র ফেলে দিল।

-“আন্টি আপনার মেয়ে আর ভাবীকে নিয়ে যান এখান থেকে।

পুলিশের পোশাকে থাকা ফাহাদের কথায় আলিয়া অর্পি আর তাকিয়া কে নিয়ে এক পাশে দাঁড়ায়। সামনের একটা সোফায় ইসরাক পায়ের উপর পা তুলে আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছে।আর তার বন্ধু ফাহাদ রাব্বির মাথায় রিভ’লবার ধরে আছে! ইসরাক তার ডান হাতের তর্জনী দিয়ে ভ্রুতে স্লাইড করতে করতে বললো,
-“তো মিষ্টার রাব্বি হোসাইন বিয়ে করার খুব শখ জেগেছে তাই না? এখনো কি সেই শখ অব্যহত আছে না গেছে?

অপরদিকে রা’গে ফুঁসছে রাব্বি মুখে কিছু বলার মতো সাহস যুগিয়ে উঠতে পারছে না। ইসরাক আবারো কিছু বলতে গিয়ে তাকিয়া’র দিকে নজর গেল।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক” তাকিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে আলিয়ার বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে ওরনা নেই! ইসরাক এর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল পরক্ষনেই। এদিক ওদিক তাকিয়ে ফ্লোরে পরে থাকা ওরনাটা নিয়ে তাকিয়ার গায়ে জড়িয়ে দিল ইসরাক।তার আর বুঝতে বাকি রইলো না একটু আগেও ঠিক কি কি ঘটেছিল।

ইতিমধ্যে ঘরের মেইন দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ফোর্স ঘরে ঢুকে সবগুলো ছেলেকে এরেস্ট করে। ফাহাদ তখন বললো,
-” ইসরাক আমি এই কাল’প্রিট গুলো কে নিয়ে যাই? শ্বশুরবাড়ির আপ্যায়ন করতে হবে তো নাকি!

ইসরাক বাধা দিয়ে বললো,
-“তার আগে আমার কিছু বোঝাপড়া বাকি আছে।
এগিয়ে গিয়ে রাব্বির সার্ট এর কলার চেপে ধরে বেদরম মা’রা শুরু করে।যে হাত দিয়ে তার “সুবুজিনী” কে স্পর্শ করেছে সেই হাতের তেরোটা বাজানোর জন্য পিচ্চি অনিতা কে বললো, বাথরুম থেকে পানি আর ডিটারজেন্ট পাউডার নিয়ে আস! অনিতা যারপরনাই বিস্মিত হয়ে দৌড়ে গেল এগুলো আনতে। এই মুহূর্তে কোনো প্রশ্ন করার পরিস্থিতি নয় তাই কোন রকম প্রশ্ন করলো না।এই পিচ্চি মেয়েটিই বুদ্ধি করে,লুকিয়ে থেকে ইসরাক কে কল করে সবটা জানায়। তারপর ইসরাক তার বন্ধু ফাহাদ যে কিনা একজন এস.আই. তাকে নিয়ে আসে।
কয়েক মিনিটে পানি আর ডিটারজেন্ট পাউডার নিয়ে হাজির হয় অনিতা।

ডিটারজেন্ট এর সাথে কয়েক ফোঁটা পানি মিশিয়ে রাব্বির হাতের তালুতে দিয়ে দিল ইসরাক! ফাহাদ তখন মাথায় রিভ’লবার ঠেকিয়ে বললো,
-“হাত যেন মেলে রাখে রাব্বি, না হয় রিভ’লবারের সবগুলো গু’লি তার মাথায় ঢুকানো হবে!

রাব্বি প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও একটু পর যন্ত্র’নায় ছটফট করতে থাকে। কিন্তু তার এই ছটপট দেখে কারো বিন্দু পরিমাণ মায়া হলো না। সবাই শুধু বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে মেয়েরা কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে?

“তাপমোচী বিক্রিয়ার কথা বোধহয় আমরা সবাই কম বেশী শুনেছি । যে বিক্রিয়ার ফলে তাপ উৎপন্ন হয় । আমরা তাকেই তাপমোচী বিক্রিয়া বলে জানি।

ভিজে হাতে ডিটারজেন্টকে স্পর্শ করলে এই তাপমোচী বিক্রিয়াই ঘটে ।

আসলে ডিটারজেন্টের মধ্যে মূল উপাদানটি হল সোডিয়াম কার্বনেট । এই সোডিয়াম কার্বনেট জলের সাথে বিক্রিয়া করে তাপ উৎপন্ন করে । কিন্তু আমরা যখন বালতি ভর্তি জলে অল্প একটু পাউডার দিই জামাকাপড় কাঁচার জন্য । তখন সেই বিক্রিয়া দ্বারা উৎপাদিত তাপ জলের মধ্যেই বিলীন হয়ে যায় । এরফলে সেই সময় আমরা এই তাপটাকে অনুভব করতে পারিনা। কিন্তু ভিজে হাতে ডিটারজেন্ট পাউডার নিলে , জল অপেক্ষা পাউডারের পরিমাণ বেশী হয় । এরফলে বিক্রিয়াজাত তাপের পরিমাণও বেশি হয় । ফলে হাতে বেশি গরম লাগে।

এই কারণে বলা হয়ে থাকে – ঘন অ্যাসিডের জলীয় দ্রবণ প্রস্তুত করার সময় । ঘন অ্যাসিডে কখনও জল ঢালা উচিৎ নয় । কারণ বিক্রিয়াজাত তাপের প্রভাবে অ্যাসিডে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে অথবা অ্যাসিড ছিটকে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে”।

আর তাই হাত গরম হয়ে পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে রাব্বির।এই অবস্থাতেই রাব্বিকে ফাহাদ সহ তার ফোর্স ধরে নিয়ে যায় থানায়।
.
.
সবকিছু মিটে গেলেও তাকিয়ে এভনরমাল হয়ে যায়! কারো সাথে কথা বলে না। ইসরাক অনেক কথা বলে জরিয়ে ধরে কিন্তু তাকিয়ার এতে কোন ভাবান্তর হয় না!….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।