শৈবলিনী পর্ব-৩৯+৪০

0
603

#শৈবলিনী—৩৯
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★অনুষ্ঠানের সব আয়োজন শেষ হতে হতে প্রায় অনেক রাত হয়ে গেল। নূর বাইরে এসে কোনো সিএনজি, ট্যাক্সি কিছু পেলনা। গাড়ি বানিয়ে ফেললেও নিজের জন্য এখনো ব্যবহার করা আরম্ভ করেনি সে। আগে মার্কেটিং ভালোভাবে জমলে তবেই নিজের জন্য ব্যবহার করবে ভেবেছে৷ অনেকক্ষণ হলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো ট্যাক্সি বা সিএনজির দেখা মিলছে না। আর এখান থেকে হাইওয়ে রোডও অনেক দূরে, তাই বাসে করেও যেতে পারছেনা। তখনই সোহানও সেখানে এগিয়ে এলো। নূরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাছে গিয়ে বলল,
–মিস নূর,চলুন আমি আপনাকে বাসায় ড্রপ করে দিচ্ছি।

–না না, ইটস ওকে আমি ম্যানেজ করে নিবো।

–আরে কি ম্যানেজ করবেন? এখানে আপনি কোনো ট্রান্সপোর্ট পাবেন না। রাত করে আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন? চলুন আপনাকে নামিয়ে দিবো আমি।

আসলেই এভাবে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে, তার চেয়ে সোহানের সাথে যাওয়াই ঠিক মনে করলো নূর। আর তখনকার ওই বিষয়ে সবটা ক্লিয়ারও করে দিবে নূর। বুঝিয়ে দিবে নূরকে বিয়ে করার চিন্তা যেন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে।এটা সম্ভব না। এই মনস্তাপ করে নূর সোহানের কথায় রাজি হয়ে গেল। সোহান ওর ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে আসতে বলার জন্য ফোন করলো। কিন্তু ড্রাইভার জানালো,গাড়ির নাকি টায়ার পানচার। সোহান নূরকে বলল,
–ওহ হো, একটা ঝামেলা হয়ে গেল। গাড়ির নাকি টায়ার পানচার হয়ে গেছে।

নূর সৌজন্যমূলক মুচকি হেসে বলল,
–নো প্রবলেম। আমি চলে যেতে পারবো।

–কিন্তু আপনি কতক্ষণ গাড়ির জন্য এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন? এক কাজ করি, দুজন মিলে অপেক্ষা করি। এক ট্যাক্সিতেই দুজন নাহয় চলে যাবো।

–ওকে।

আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কোনো গাড়ি গুড়ি পেলোনা তারা। আজ যেন সবাই হর,তালে বসেছে।এমনিতেতো সবসময় সিএনজি, ট্যাক্সির মেলা লেগে থাকে। অথচ আজ একটাও দেখা যাচ্ছে না। একসাথে সবকিছু গায়েব হঠাৎ যেন গায়েব হয়ে গেছে। ওদের অপেক্ষার মাঝেই হঠাৎ আদিত্য ওর গাড়ি নিয়ে ওদের সামনে এসে ঠেকালো। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে সে। জানালার কাচ নামিয়ে সোহানের উদ্দেশ্যে বলল,
–মিঃ সোহান দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসুন নামিয়ে দেই আপনাকে।

সোহান বলল,
–হ্যাঁ মিঃ আদিত্য, লিফট দিলেতো ভালোই হতো। আসলে আমি আর মিস নূর দুজনেই ফেঁসে গেছি।

–আমি থাকতে কোনো ঝামেলা নেই। আসুন উঠে পড়ুন গাড়িতে। নামিয়ে দিচ্ছি।

সোহান নূরের উদ্দেশ্যে বলল,
–চলুন মিস নূর, আপনিও চলুন। মিঃ আদিত্য আমাদের লিফট দিবে।

আদিত্যর গাড়িতে ওঠার মোটেও ইচ্ছে নেই নূরের। সে মানা করে দিলো। কিন্তু সোহানের জোরাজোরিতে পেরে উঠলনা। অতঃপর সে রাজি হতে বাধ্য হলো। তাছাড়া আদিত্যর সামনে সে সোহানের সাথে মিল দেখাতে চায়। তাই সোহানের কথা মেনে আদিত্যর গাড়িতে উঠে বসলো। সোহান সামনে আদিত্যর পাশে বসলো। আর নূর পেছনের সিটে বসলো। গাড়িতে আদিত্য নূরের সাথে কোনো কথা বললো না। আর না তাকালো তার দিকে। সোহানের বাসা আগে আসে। তাই প্রথমে সোহানকে নামিয়ে দিলো আদিত্য। সোহান নেমে গিয়ে নূর আর আদিত্যকে গুড নাইট বলে চলে গেল।আদিত্য সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, সো সরি মিঃ সোহান,আপনার নাইট আজ গুড হবেনা। সোহান চলে যাওয়ার পর আদিত্য কতক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো। নূরের কোনো হেলদোল না দেখে আদিত্য পেছনে না তাকিয়েই বলে উঠলো,
–এখনকি আমাকে সেই ফিল্মি ডায়লগ বলতে হবে তারপর সামনে এসে বসবে,নাকি গাড়ির মালিক হয়ে গিয়ে এখন আমাকেও ড্রাইভার মনে হচ্ছে?

আদিত্যর খোঁচা মারা কথায় রাগতো প্রচুর হলো নূরের। তবে আপাতত সে কোনো প্রতিত্তোর করলোনা। এই লোকের সাথে কোনো তর্কে জড়াতে চায়না সে। পারলে সে এখুনি এই গাড়ি থেকে নেমে চলে যেত। তবে এতে আরও সীন ক্রিয়েট করতে পারে এই লোক। তাই কিছু না বলে চুপচাপ সামনে এসে বসলো নূর। আদিত্য গাড়ি স্টার্ট দিলো। আদিত্য এখনও নূরের দিকে তাকাচ্ছে না। না তার সাথে কোনো কথা বলছে। নূর ভাবছে হয়তো তার ট্রিক কাজে লেগেছে। লোকটা হয়তো এবার তার জিদ ছেড়ে দিবে। আর কখনও ওর পিছে আসবেনা। এই ভাবনা নূরকে ভেতরে পুড়িয়ে দিচ্ছে। দিক,তবুও এটাই ভালো। সারাজীবনের গ্লানির থেকে ক্ষণিকের কষ্ট শ্রেয়। আমাদের পথ সবসময় আলাদা ছিলো আর আলাদাই থাকবে। সেই পথে চলার চেষ্টা বৃথা,যার কোনো মঞ্জিল নেই।

এভাবেই চলতে চলতে হঠাৎ রাস্তায় গাড়ি থেমে গেল। নূর ভ্রু কুঁচকে বলল,
–কি হয়েছে? গাড়ি থামালেন কেন?

আদিত্য জবাবে বলল,
–জানি না, হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। দেখছি স্টার্ট হয় নাকি।

আদিত্য বারবার গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু ইঞ্জিন চালু হচ্ছে না। নূর বিরক্তি নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। জায়গাটাও কেমন নিরিবিলি জনশূন্য একদম। রাস্তার পাশে ঘন গাছগাছালিতে ঘেরা। তাই কেমন ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। এমন একটা জায়গায় এভাবে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়াটা কেমন যেন লাগছে নূরের কাছে। লোকটা কী ইচ্ছে করে গাড়ি বন্ধ করে দিলো? কিন্তু স্টার্ট দিচ্ছে সেটাতো নূর দেখতে পাচ্ছে। একজন মেকানিককে তো আর বোকা বানাতে পারবেনা সে। আদিত্যকে অনেকবার চেষ্টা করতে দেখে এবার নূর বলে উঠলো।
–দেখি সরেন, আমি দেখছি কি হয়েছে।

আদিত্য নূরের কথা অনুযায়ী পেছনে সিটের সাথে চেপে গিয়ে নূরকে জায়গা করে দিলো দেখার জন্য। নূর নিজের সিটবেল্ট খুলে আদিত্যর কোলের সামনে ঝুঁকে গিয়ে গাড়ির চাবি ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো কি সমস্যা হয়েছে। গাড়ি আসলেই স্টার্ট হচ্ছে না। নূর ট্রাই করতে লাগলো। নূর ঝুঁকে যাওয়ায় ওর চুলগুলো ঝুঁকে এসে সব আদিত্যর কোলের ওপর পড়ে আছে। এই অবস্থায় বাইরে থেকে কেউ দেখলে বিষয়টা অন্যরকম মনে হবে। এবং হলোও তাই। হঠাৎ গাড়ির জানালায় টোকা পড়লো। আদিত্য তাকিয়ে দেখলো পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। শব্দ শুনে নূরও ওই অবস্থাতেই শুধু মাথাটা উপর দিকে তুলে বাইরে তাকালো। পুলিশকে দেখে নূর একটু চকিত হয়ে ঝট করে সোজা হয়ে বসলো। আদিত্য গাড়ির কাচ নামিয়ে বলল,
–ইয়েস ইন্সপেক্টর, কিছু বলবেন?

পুলিশটি কেমন কু,শ্রী ভাবে তাকিয়ে বলল,
–এসব কি হচ্ছে এখানে হ্যাঁ? রাস্তাঘাটে এসব কি নোংরামি চলছে? এসব করার হলে হোটেলে গিয়ে করুন। এখানে রাস্তার মাঝে কি?

পুলিশের কথায় নূরের মাথা প্রচন্ড লেভেলের গরম হয়ে গেল। সে রেগে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
–এই ইন্সপেক্টর, ভদ্রভাবে কথা বলুন। কি আবোলতাবোল বলছেন আপনি?

–ও আচ্ছা, তো এখন আপনাদের মতো লোকের কাছ থেকে আমার ভদ্রতা শিখতে হবে?

নূর আরও রেগে গিয়ে বলল,
–আপনাদের মানুষ বলতে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি? পুলিশ হয়েছেন দেখে কি যা খুশি তাই বলে যাবেন?

–ও ম্যাডাম,মনে হচ্ছে অনেক বেশি তেজ আপনার। চলুন, বের হোন গাড়ি থেকে। এখুনি পুলিশ স্টেশনে চলুন৷ তারপর দেখাবো আপনাকে ভদ্রতা।একেতো রাস্তাঘাটে অবৈধ কাজ করছেন আবার উল্টো পুলিশের সাথে তর্ক হচ্ছে! নামুন।

অবস্থা বেগতিকের দিকে যেতে দেখে আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে এসে পুলিশের উদ্দেশ্যে বললো,
–আরে ইন্সপেক্টর আপনি ভুল বুঝছেন। এখানে এমন কিছুই হচ্ছে না। আসলে আমার গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখানে গাড়ি থেমে গেছে দ্যাটস ইট।

পুলিশটা এবার আদিত্যর দিকে ভালো করে খেয়াল করে বলল,
–আপনি! আপনিতো ওই সিনেমার হিরো, আদিত্য না?

আদিত্য বিনয়ী সুরে বলল,
–জি জি, আমিই সেই।

কিছুক্ষনের মধ্যেই সেখানে আরও দুই তিনজন কনস্টেবল পুলিশ এসে হাজির হলো। তারাও আদিত্যকে দেখে চিনে ফেললো। ইন্সপেক্টর এবার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
–ওওও তো এই ব্যাপার! হ্যাঁ ভাই জীবন তো আপনাদেরই। নায়কের জন্য মাইয়ারা পাগল। আপনেরা চাইলেই যাকে খুশি নিয়ে ফূ,র্তি করতে পারেন। তারপর বছর বছর একটা করে বাচ্চার খবর সামনে আসে। নাজানি কতো জায়গায় একাউন্ট খুলে রেখেছেন আপনারা। আর কিছুদিন পরপরই সেটা সুদ বের হয়ে আসে। তা মেয়েলোক নিয়ে ফূ,র্তি করবেন, কোনো ফাইভ স্টার হোটেলে গিয়ে করুন। টাকার কি কমতি আছে আপনাদের? রাস্তাঘাটে কেন এসব করছেন? জানেন না পাবলিক প্লেসে এসব করা আইনত অপরাধ?

ব্যাস এবার আর সহ্য হলোনা নূরের। পুলিশের এতো বি,শ্রী কথাবার্তা শুনে মাথা ব্লাস্ট হয়ে গেল তার। তীব্র রাগের বশে সে তেড়ে গিয়ে হিং,স্র বাঘিনীর মতো পুলিশের কলার চেপে ধরে ক্ষিপ্র স্বরে বলল,
–এই পুলিশের বাচ্চা, তোর সাহস কি করে হলো আমার ব্যাপারে এতো জ,ঘ,ন্য কথা বলার? একটা ছেলে মেয়ে একসাথে দেখলেই কি মাথায় শুধু এই নোংরা ধারণাই ঘোরে? আজ তোদের মতো এই চিপ মেন্টালিটির পুলিশদের জন্যই দেশের এই অবস্থা। তোদের দ্বারা মানুষের বিপদ উদ্ধার হওয়ার বদলে উল্টো আরও বেশি বিপদে পড়ে। কাজের কাজ করতে পারিসনা, শুধু পারিস নিরপরাধীদের হ্যা,রা,স করতে।

অবস্থা আরও বেগতিক মোড় নিলো।আদিত্য কোনোরকমে নূরকে ছাড়িয়ে এনে ফিসফিস করে বলল,
–কি করছ নূর? সব জায়গায় এতো মারপিট দেখাতে হয়না। এতে সিচুয়েশন আরও বিগড়ে যায়।ভুলে যেওনা এরা পুলিশ। এদের সাথে লাগতে গেলে আমাদেরই বেশি ক্ষতি হবে।

নূর তবুও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
–কেন বলবে ও এসব কথা? পুলিশ হয়েছে তো কি মাথা কিনে নিয়েছে?

নূরের এ্যাকশনে পুলিশ চরম রেগে গেল। কনস্টেবলের উদ্দেশ্যে বলল,
–কনস্টেবল, গ্রেফতার করো দুটোকেই। লকাপে নিয়ে চলো এখুনি। পুলিশের গায়ে হাত তোলা! এর পরিণাম কি ভয়াবহ হবে তা হারে হারে দেখিয়ে দিবো। এদের উপর এমন এমন ধারা লাগিয়ে দিবো যে সারাজীবন মনে রাখবে। আর মিডিয়াকেও খবর দাও। সবাইকে এই নায়কের কর্মকাণ্ডের ব্রেকিং নিউজ দেওয়া তো জরুরি। লোকজনের একটু এন্টারটেইনমেন্ট হবে।

আদিত্য অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
–প্লিজ অফিসার, এমনটা করেন না। আমরা একটু শান্ত ভাবে কথা বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আপনাকে সব বুঝিয়ে বলছি।

–কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি। যা বলার পুলিশ স্টেশনে গিয়ে বলবেন। কনস্টেবল নিয়ে চলো এদের।

দুজন কনস্টেবল ওদের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। আদিত্য অনেক রিকুয়েষ্ট করে বোঝানোর চেষ্টা করলো তবে পুলিশ কোনো কথায় শুনলোনা। সিচুয়েশন একেবারেই আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেল। এবারতো নূরও ঘাবড়ে গেল। এভাবে রেগে গিয়ে পুলিশের গায়ে হাত তোলাটা ঠিক হয়নি। ওতো জানেই পুলিশের স্বভাব তবুও এভাবে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো সে? এখন কি হবে? নাজানি এই পুলিশের জা,ত কি করবে এখন ওদের সাথে?
আদিত্য আর নূরকে পুলিশ জিপে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো পুলিশ স্টেশন। জিপের ভেতর আদিত্য নূরের উদ্দেশ্যে বলল,
–এইজন্যই তোমাকে বলি নিজের রাগকে একটু কন্ট্রোল করতে শেখ। সবসময় ঝাঁসির রানির মতো তলোয়ার বের করে ফেলো। এখন দেখলে তো কি হলো? মিডিয়াতে এসব জানাজানি হয়ে গেলে কী হবে ভাবতে পারছ একবারও?

নূর নিজের ভুল বুঝতে পারলেও আদিত্যর ওপরও তার রাগ হলো। সে রাগ দেখিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
–হ্যাঁ হ্যাঁ, তাতো অবশ্যই। দ্য সুপারস্টার নায়কের ইমেজ বলে কথা। লোকের সামনে ইমেজ খারাপ হয়ে যাবে আপনার। কে বলেছিল গাড়িতে তুলতে? আমাকে না তুললে তো আর আপনার মহান ইমেজ লোকের সামনে নষ্ট হতোনা।

আদিত্য হতাশার সুরে বলল,
–তুমি আবার কবে আমাকে বুঝেছিলে যে আজ বুঝবে। আমাকে ভুল বোঝাটাতো তোমার ফেবারিট হবি। এখানেও তোমার মনে হচ্ছে আমি আমার নিজের ইমেজের কথা ভাবছি। একবারও ভাবছনা এখানে আমার সাথে তুমিও জড়িত আছ। আমার না হয় যা হবে, হবে। কিন্তু এসবের জন্য তোমার ইমেজের কী হবে একবারও ভেবে দেখেছ?

নূর এবার সত্যি ঘাবড়ে গেল। সে বুঝতে পারছে অনেক বড়ো ব্লেন্ডার হয়ে গেছে। নিজের জন্য চিন্তা হচ্ছে না নূরের। চিন্তা হচ্ছে পরিবারের জন্য। অমালিয়ার ওই ঘটনার পর থেকে এমনিতেই ওদের পরিবারের ওপর দিয়ে অনেক তুফান গেছে। বদনামি, লোকজনের খোঁচা মারা কথার তীর সব সইতে হয়েছে। যার জের এখনো আছেই। এসব দেখে মা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।তারপর থেকেই সে বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থ থাকে। ইদানীং তো তাঁর শারিরীক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। সপ্তাখানেক আগেই হসপিটালাইজড করতে হয়েছিল মাকে। মাত্রই একটু ঠিক হয়েছে সে। এখুনি যদি আবার এসব নিয়ে কোনো বদনামি ছড়ায় তাহলে মা সইতে পারবেনা। তাঁকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে। না না,মাকে কিছু হতে দিতে পারবোনা আমি। কিছুতেই না। যে করেই হোক সিচুয়েশন সামাল দিতে হবে।

পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসা হলো ওদের। জিপ থেকে নামতেই দেখতে পেল একঝাক মিডিয়া এরই মাঝে এসে উপস্থিত হয়ে গেছে। এসব দেখে নূর প্রচন্ড ঘাবড়ে গেল। ভয়ে গলা শুঁকিয়ে আসছে তার। বারবার শুধু মায়ের চিন্তা হচ্ছে ওর। আদিত্য যেতে যেতে নূরের দিকে হালকা ঘাড় কাত করে ফিসফিস করে বলল,
–দেখ, যা করার করে ফেলেছ। এখন একটু দয়া করে চুপ থেক। সিচুয়েশন আমাকে হ্যান্ডেল করতে দাও প্লিজ।

নূর আদিত্যর কথায় সায় দিয়ে সম্মতি স্বরূপ মাথা নাড়ালো। এখন আর ওর হাতে কিছু নেই। এখন এই লোকটাই যদি কিছু করতে পারে। তাছাড়া আর কোনো পথ নেই। আদিত্য আর নূর এগিয়ে যেতেই সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলো তাদের। একেকজন একেক ধরনের প্রশ্নের তীর ছুড়তে লাগলো।প্রথমে পুলিশ ওদের কোন অবস্থায় ধরেছে সেটা আরও মসলা লাগিয়ে মিডিয়াকে জানলো।এসব শুনে একজন সাংবাদিক বলল,
–মিঃ আদিত্য, এসব কি সত্যিই? পুলিশের দেওয়া ইনফরমেশন কী সত্যি?কে এই মেয়ে? আপনি কি এই মেয়েকে ডেট করছেন? নাকি শুধুই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড?

সাংবাদিকদের এমন বি,শ্রী প্রশ্নে নূরের রাগতো প্রচুর হলো। তবে নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো সে। এমনিতেই অনেক অবস্থা বেগতিক হয়ে গেছে। এখন আরও খারাপ করতে চায়না সে। হঠাৎ একজন সাংবাদিক বলে উঠলো,
–আরে উনিতো সেই মেয়েটাই, যাকে নিয়ে এর আগেও একবার ছবির সাথে নিউজ লিক।হয়েছিল। এসব কী মিঃ আদিত্য? আপনাদের এই সম্পর্কের কী বিশ্লেষণ দিবেন আপনি? আমরা কী ভাববো এই সম্পর্কে?

এভাবে একেকজন সাংবাদিক একেক ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলো ওদের। সিচুয়েশন সামলাতে আদিত্য বলে উঠলো,
–আপনারা সবাই একটু শান্ত হোন। আমি সবার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। আসলে ইন্সপেক্টর আর আমাদের মাঝে শুধু একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাছাড়া আর কিছুই না। উনি আমাদের ভুল বুঝে ধরে এনেছেন। আমাকে বোঝানোর সময়ও দেননি উনি। তবে এখন আমি সবাইকেই বিষয় টা বুঝিয়ে বলছি। আসলে আপনারা যেমনটা ভাবছেন আসলে তেমন না। আসল ব্যাপার হলো, আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী।

“স্বামী স্ত্রী” দুটো শব্দই নূরের ওপর বিস্ফোরণ করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। ভুমিকম্পের মতো বিস্ফোরক ঘটলো যেন সবার ওপর। নূর চমকে উঠে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো আদিত্যর পানে। ভড়কে উঠে কিছু বলতে যাবে তখনই আদিত্য হাত চেপে ধরে নূরকে চুপ থাকার ইশারা করলো। লোকজনের সামনে নূর চেয়েও কিছু বলতে পারলোনা। সাংবাদিকরা এতো বড়ো নিউজ শুনে প্রশ্নের হুড়োহুড়ি লাগালো। আদিত্য তখন বলল,
–আসলে এটা আমি এভাবে বলতে চাইনি আপনাদের। তবে এখন সত্যিটা না বললে ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে না। ওর নাম নূর,আমাদের সম্পর্ক বছরখানিক হলো। দুমাস আগেই আমরা ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করেছি। মিডিয়াকে জানায়নি কারণ বড়ো করে একটা এনাউন্সমেন্ট করার অপেক্ষা করছিলাম। ততোদিন বিষয় টা গোপন রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন না বললেতো আপনারা বিষয়টাকে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই বলতে বাধ্য হলাম। কারণ নিজের বউকে নিয়ে গাড়িতে লং ড্রাইভে যাওয়াটা নিশ্চয় কোনো অপরাধ না! তো এভরিওয়ান,মিট মাই ওয়াইফ মিসেস নূর সাদমান শাহরিয়ার।
আদিত্য পুলিশের উদ্দেশ্যে বলল,
–তো ইন্সপেক্টর,এখন নিশ্চয় কোনো কনফিউশান নেই? প্লিজ এবার যেতে দিন আমাদের।

পুলিশ বিদ্রুপ হেঁসে বলল,
–এসব নাটক রোজ দেখি আমরা। ধরা পরলে তখন সবাই নিজেদের স্বামী স্ত্রীই বলে। কী প্রমাণ আছে আপনার কথার? আগে প্রমাণ দেখান।তবে ছবি চলবেনা। কারণ ছবির ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। ম্যারেজ সার্টিফিকেট বা অন্যকিছু থাকলে দেখান।

–ইনস্পেক্টর, ম্যারেজ সার্টিফিকেট কী কেউ পকেটে নিয়ে ঘোরে নাকি? এখন এমুহূর্তে কীভাবে দেখাবো আপনাদের? দেখুন প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস করুন।

–এসব মুখের কথায় কাজ হবে না। প্রমাণ করতে না পারলে হাজতে থাকতে হবে।

হঠাৎ এক কনস্টেবল বলে উঠলো,
–একটা উপায় আছে স্যার। উনারা যেহেতু স্বামী স্ত্রী। তাহলে নিশ্চয় আরেকবার বিয়ে করতেও সমস্যা হবে না। এক কাজ করা যাক পাশের কাজী অফিস থেকে কাজী এনে এখানে সবার সামনে বিয়ে পড়ানো হোক। তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে যে এরা স্বামী স্ত্রী।

ইন্সপেক্টর কনস্টেবলের কথায় সায় দিয়ে বলল,
–ঠিক বলেছ কনস্টেবল। যাও গিয়ে কাজী সাহেব কে ডেকে নিয়ে এসো।

কনস্টেবল কাজীকে ডাকতে গেল। নূর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। মাথা ভনভন করে ঘুরছে তার। এসব কি হচ্ছে? বিয়ে? উনার সাথে? নো নো নো, এটা সম্ভব না, কিছুতেই না। নূর অস্থির হয়ে ওখান থেকে চলে যেতে লাগলো। আদিত্য নূরের হাত ধরে আঁটকে দিয়ে ফিসফিসানো কন্ঠে বলল,
–কোথায় যাচ্ছ নূর? এভাবে এখান থেকে যাওয়া সম্ভব না। এতে আরও বড়ো মাপের অপরাধী হয়ে যাবে তুমি।

নূর দৃঢ় কন্ঠে বলল,
–হোক যা খুশি তাই। আপনি কীসব আবোলতাবোল বলে যাচ্ছেন তখন থেকে? আর কি চাইছেন বসে চুপচাপ বিয়ে করে ফেলবো আপনাকে?

–দেখ নূর,শান্ত হয়ে বোঝার চেষ্টা করো। এখন এই সিচুয়েশনে এই ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা। সেই মুহুর্তে তোমাকে আমাকে দুজনকেই এই সিচুয়েশন থেকে উদ্ধার করতে এটাই সঠিক রাস্তা মনে হয়েছিল আমার। তাছাড়া এখান থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় ছিলোনা। আর এরা যে এভাবে বিয়ের কথাটা তুলবে সেটাকি আমি আগে থেকে জানতাম নাকি?

–বাহ্! জানতেন না। কি সুন্দর করে বলে দিলেন। তো এখন কী আপনার মিথ্যে প্রমাণ করতে সত্যি সত্যিই বিয়ে করবো আমি? পাগল হয়ে গেছেন আপনি?

–দেখ এই ছাড়া কোনো উপায় নেই এখন। না চাইতেও এটা করতে হবে।

–করবোনা আমি। দেখি কে ঠেকায় আমাকে।

বলেই নূর আবারও চলে যেতে লাগলো। কিন্তু ততক্ষণে পুলিশ এসে আঁটকে দিলো নূরকে। সাংবাদিকেরা আবারও সন্দেহমূলক বাজে ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলো তাকে।এরই মাঝে কাজীকে নিয়ে চলে এলেন কনস্টেবল। নূর হতবুদ্ধি হয়ে গেল। সবকিছু কেমন গোল পাকিয়ে যাচ্ছে তার। চেয়েও সে কিছু করতে পারছেনা।না পারছে এখান থেকে ছুটে পালাতে। অন্যদিকে মায়ের চিন্তাও হচ্ছে তার। এসব মিথ্যে বদনাম খবরে দেখালে তার মা নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক করবেন। অতঃপর আর কোনো উপায় না পেয়ে পুলিশ, মিডিয়া সবার সামনে কবুল বলতে বাধ্য হয় নূর আর আদিত্য। বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায় তারা। অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা তাদের স্বামী-স্ত্রীতে রুপান্তর করে দিলো।

চলবে……

#শৈবলিনী—৪০
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★নির্বিকার স্তম্ভিত হয়ে বসে আছে নূর। মস্তিষ্ক আপাতত অজ্ঞান হয়ে আছে। বর্তমানে সে আদিত্যর ঘরে অবস্থান করছে।মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কি থেকে হয়ে গেল তা এখনো বুঝতে পারছে না সে। তখন ওইভাবে ঘটনাচক্রে বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ওদের ছেড়ে দেয়। মিডিয়াও তাদের প্রশ্নের জবাব পেয়ে সেটাকে ঘরে ঘরে পৌছানোর কাজে লেগে পরে।মুহুর্তের মাঝেই রমরমা খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। যা আদিত্য আর নূরের পরিবার পর্যন্তও যেতে সময় লাগেনা। সবাই জেনে যায় এই বিয়ের ঘটনা।তবে কাহিনির শেষ এখানেই হয়না। ধারাবাহিকের আরও কিছু পর্ব যে তখনও বাকি ছিলো।ওসব ঘটনার পর নূর পুলিশ স্টেশন থেকে আদিত্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা নিজের বাড়ি ফিরে আসে।আদিত্য আটকানোর চেষ্টা করলেও তা উপেক্ষা করে চলে আসে সে। বাড়ি আসতেই শুরু হয় সবার প্রশ্নের বেড়াজাল। নূর কোনোরকমে তাদের সবকিছু বুঝিয়ে বলে। ইভান বিষয় টা একটু ঠান্ডা ভাবে নিলেও লতিকা বেগম এসব জেনে মোটেও শান্তি পাচ্ছেন না। এক মেয়েকে নিয়ে এমনিতেই এতকিছু হয়ে গেল। এখন আবার এই মেয়েটার ভবিষ্যৎ কি হবে সেই চিন্তায় বুক ভারী হয়ে আসছে তাঁর ।

কাহিনির তবুও শেষ হয়না। এতে আরও মশলা, পাঁচফোড়ন মেশাতে নূরের বাড়িতে হাজির হয়, নূরের সদ্য বিবাহিত স্বামী জনাব, আদিত্য। সে এসেই তার বউকে নিজের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জোর দাবি জানায়৷এতে নূরের শতভাগ অমত থাকলেও তার এই সিদ্ধান্তের পাশে আর কাউকেই পেলনা সে। মা, ভাই এননকি পিচ্চি মিছরিটাও ওই আদিত্যর সাপোর্টার হয়ে গেল। তবুও অনঢ় রইলো নূর। সে কোনোমতেই আদিত্যর সাথে যাবে না। যেখানে সে এই নাটকীয় বিয়েটাকেই মানে না,সেখানে উনার বউ হয়ে উনার বাড়িতে গিয়ে থাকাতো প্রশ্নই আসেনা। কদাপি নহে। কিন্তু নূর তার সিদ্ধান্তে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারলোনা। কারণ টা ছিলো তার মা। নূরের মা ওর হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বলে,
“নূর মা, দেখ যেভাবেই হোক বিয়েটাতো হয়েই গেছে। আদিত্য এখন তোর স্বামী। তোরা এখন স্বামী স্ত্রী। তুই মান আর না মান,সত্যিকে এড়াতে পারবিনা। আল্লাহর আদেশেই সব হয়। যার ভাগ্যে যে থাকে, কোনো না কোনোভাবে তার সাথে মিল হয়েই যায়।স্বামী স্ত্রীর বন্ধন, পবিত্র বন্ধন। এটা কোনো খেলার জিনিস নয় যে, মন চাইলে খেললাম, না মন চাইলে না খেললাম। বিয়ে যখন হয়েই গেছে, এটাকে নিজের ভাগ্য মেনে নে। ছেলেটা খারাপ না। ওর চোখে আমি সততা দেখেছি। তুই হয়তো অমালিয়ার বিষয় টার কারণে আমাদের সবার মতো আদিত্যর ওপরও রেগে আছিস। তাই তুই রাগের বশে কোনোকিছু বুঝতে পারছিস না। কিন্তু আমার চোখ ভুল দেখেনি। ছেলেটার মন পরিষ্কার আছে। ভালো রাখবে তোকে। ওকে আরেকটা সুযোগ দিয়ে দেখ।”

মায়ের কথায় নূর মনে মনে তাচ্ছিল্যকর হাসে। মন পরিষ্কার! হাঁহ, মা তো আর জানেনা ওই লোকের আসল চেহারা। জানলে আর তাকে ভালোর ট্যাগ দিতে পারতোনা। কিন্তু ওসব কথা মাকে বলাও যাবে না। নূর তার মাকে অনেক ভাবে মানা করতে চায়। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর পেরে ওঠেনা সে। যখন তার মা এসব বুঝাতে বুঝাতে এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন নূর আর শক্ত থাকতে পারে না। মায়ের অবস্থা দেখে হার মেনে রাজি হতে বাধ্য হয় সে। আর যাইহোক মায়ের কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কখনে মাফ করতে পারবেনা সে। বাবার পর এখন মাকেও হারানোর ক্ষমতা নেই তার মাঝে। তাইতো মায়ের কথায় রাজি হয়ে আদিত্যর সাথে যেতে রাজি হয় সে।

আদিত্যর খুশি আর দেখে কে। সে তো পারলে পুরো পৃথিবীতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তার খুশির বয়ান করে। খুশির পরিমাণ এতটাই বেশি হয় যে, সে নূরকে ওদের বাড়ির সবার সামনেই পাঁজা কোলে তুলে নেয়। সেই যে কোলে তুলে নেয়, একেবারে ওর বাড়ি পর্যন্ত ওইভাবেই নিয়ে আসে। নূর কতবার করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু আদিত্যর সাথে কিছুতেই পেরে ওঠেনা। নূরকে কোলে নিয়েই নিজের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে আদিত্য। লিভিং রুমে বসা পরিবারের সবার সামনে নূরকে কোলে নিয়ে বাসায় ঢুকে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,
–আরে কে কোথায় আছ? দেখ তোমাদের বাড়ির বউ নিয়ে এসেছি। তাড়াতাড়ি ওয়েলকাম করো।

আদিত্যর পরিবারতো হতবাক হয়ে যায় আদিত্যর আচমকা এমন কান্ডে। খবরে তারা আগেই জেনে গিয়েছিল। তাই আর বেশি অবাকের সময়কাল বৃদ্ধি করে না। সবার সামনে এভাবে কোলে নিয়ে আসায় নূর চরম অস্বস্তিতে পড়ে যায়। আদিত্যকে ছাড়িয়ে ঝট করে নিচে নেমে দাঁড়ায় সে। আদিত্যর ওপর রাগের পাহাড় জমছে তার। কত্তবড় নির্লজ্জ লোক! পরিবারের সবাই অবাকের পর্ব কোনোরকমে সমাপ্ত করে এগিয়ে এলো ওদের সামনে। বিস্ময় ছাপিয়ে এবার সবার চোখেমুখে আনন্দের ঝলক দেখা গেল। প্রথমত আজ এতদিন পর বাড়ির ছেলে, বনবাস শেষ করে বাড়িতে ফিরে এসেছে। তারওপর বাড়ির বউও নিয়ে এসেছে। যেভাবেই হোকনা কেন, এই বিয়েটাই হয়তো আদিত্যকে আবারও হাসিখুশি জীবনে ফিরিয়ে আনবে। এটা ভেবেই সকলে খুশি। সবচেয়ে বেশি আনন্দে নেচে উঠলো আহানা। সে খুশিতে হৈ হৈ করে আদিত্যর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
–ওয়াও ভাইয়া! আম সোওওওও হ্যাপি। আজ তুমি ফাইনালি একটা কাজের কাজ করেছ। আমার ভাবি নিয়ে এসেছ। ইয়েএএএএ…

আহানা নূরকে ফট করে জড়িয়ে ধরে বলল,
–ওয়েলকাম ভাবি। আমি তোমার কিউট ননদ, আহানা। সবাই আন্নি বলে ডাকে।

নূর কিছু না বলে শুধু জোরপূর্বক কিঞ্চিৎ ঠোঁট দুটো প্রসারিত করলো। এইমুহূর্তে এসব তার কাছে চরম অস্বস্তিকর লাগছে। আদিত্যর মা বাবাও এগিয়ে এলো। নূর একবার রেহনুমার দিকে তাকালো। এই মহিলা তাকে কতো কথা শুনিয়ে ছিলো। নাজানি আজ কী তান্ডব করে। কিন্তু নূরের ভাবনাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে দিয়ে রেহনুমা নিজের গলার স্বর্ণের চেনটা খুলে নূরকে পরিয়ে দিতে দিতে প্রসন্নচিত্তে বলল,
–খালি হাতে নতুন বউকে কীভাবে বরন করি? আদিটা আগে জানালে বড়ো করে নাহয় কিছু করতাম। যাইহোক নতুন বউ ঘরে এসেছে এরচেয়ে বড়ো সৌভাগ্যের বিষয় আর কিছুই না। অন্যসবতো পরেও করা যাবে।

রেহনুমার আচরণে নূর অবাকের শির্ষে। উনি কি সেই মহিলাই, যে তাকে সেদিন ওসব কথা বলেছিল? নাকি উনার মাঝে স্প্লিট পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার আছে? এই পরিবারের সবাই কি এমন দুমুখো? এদের মাঝে কীভাবে নিজেকে এডজাস্ট করাবে নূর? মস্তিষ্ক পুরো জমে যাচ্ছে তার। আদিত্যর বাবাও আদিত্য আর নূরের মাথায় একসাথে স্নেহের হাত বুলিয়ে বললেন,
–তুই যে বৌমাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে এসেছিস এতেই আমি অনেক খুশি। এতদিন পর বাড়িটা যেন বাড়ি মনে হচ্ছে। নাহলে তোকে ছাড়াতো বাড়িটা শোকাচ্ছন্ন হয়ে ছিলো।

আদিত্যর বাবার কথায় নূরের ভ্রু কুঁচকে এলো। এতদিন পর বাড়ি ফিরে এলো মানে কি? উনি কি বাড়িতে ছিলেন না এতদিন? যাকগে যেখানে খুশি সেখানে, আমার কি! ওদের থেকে কিছুটা দূরে আদ্র আর অমালিয়াও দাঁড়িয়ে ছিলো। তবে আদিত্য আর নূরের সামনে আসার সাহস পেলনা ওরা। ওরা জানে, আদিত্য বা নূর কেউই ওদের দেখে খুশি হবেনা। তাই ওরা দূরেই থাকলো। এতদিন পর দুজন মিলতে চলেছে। এখন তাদের সামনে গিয়ে পূরণ ক্ষত জাগ্রত করতে চায়না তারা।
রেহনুমা আহানার উদ্দেশ্যে বলল,
–আন্নি,তোর ভাবিকে আদির রুমে নিয়ে যা। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, টায়ার্ড হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়। রুমে নিয়ে গিয়ে আরাম করতে দে। আর আপাতত তোর কিছু কাপড়চোপড় নূরকে দিস, চেঞ্জ করে নিবে। আমি কালই নূরের সব দরকারি জিনিসপত্র কিনে এনে দিবো।

এই পর্যায়ে এসে মুখ খুলল নূর। রেহনুমার উদ্দেশ্যে বলল,
–জি তার কোনো দরকার নেই। আমি নিজের প্রয়োজন নিজেই মেটাতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার যা লাগবে আমি নিজেই ব্যবস্থা করে নিবো। আমার জন্য কারোর উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই।

রেহনুমা পরিস্থিতির গম্ভীরতা ঠাহর করতে পারলেন। বর্তমানে নূরের মনোভাব বুঝতে পারছেন তিনি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে আহানাকে বললেন নূরকে নিয়ে যেতে। আহানা নূরকে নিয়ে এলো আদিত্যর রুমে। তখন থেকে রুমেই অবস্থান করছে নূর। সবকিছু কেমন অদ্ভুত লাগছে তার কাছে। কি থেকে কি হয়ে গেল, এখন সামনেই বা সবকিছু কীভাবে চলবে সেসব ভাবনায় অশান্ত হয়ে যাচ্ছে নূর। যে লোকটা তার সাথে এতো বড়ো ধোঁকা করলো, সেই লোকের সাথে কীভাবে এই সম্পর্ক মেনে চলবে সে? মাথার ভেতর যেন স্নায়ুযুদ্ধ চলছে নূরের। মন চাচ্ছে এক ছুটে এখান থেকে পালিয়ে যেতে। কিন্তু চাইলেই যে সব সম্ভব না। জীবন টা হঠাৎ কেমন সাকার্সের খেল হয়ে গেল। নূর রুম জুড়ে পায়চারি করছে আর অশান্ত মনে এটা ওটা ভাবছে। হঠাৎ চোখ গেল ওর দেয়ালে টানিয়ে রাখা আদিত্যর বিশাল ছবিটাতে। গিটার কাঁধে নিয়ে স্টাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে অমায়িক হাসি। হাসিতো থাকবেই, বদ লোকযে একটা। বদ লোক, নিশ্চয় কোনো বদ চিন্তা করেই হাসছে। নূরের ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার শব্দে হকচকিয়ে সেদিকে তাকালো সে। আদিত্য ভেতরে ঢুকলো। আদিত্যকে দেখে হঠাৎ বুকের মাঝে হালকা কম্পন হলো নূরের। মনে হচ্ছে গলা শুঁকিয়ে আসছে ওর। হাত পায়ের ভেতর নিশপিশ শুরু হলো।

আদিত্য নূরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেললো। একটুও এদিক ওদিক নড়চড় হলোনা নজর। ঠোঁটে তার দুষ্টুমিপূর্ণ হাসি। নূরের দিকে তাকিয়ে থেকেই দুই হাত পেছনে নিয়ে দরজা আটকে দিলো। দরজা আটকানোর খট শব্দে নূরের বুকের ভেতর আরও একবার কেঁপে উঠল। নূর নিজের নার্ভাসনেস ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে আমতাআমতা স্বরে বলল,
–এই এই,আপনি দরজা কেন বন্ধ করলেন? দেখুন আপনি যদি ভেবে থাকেন আমরা একই রুমে থাকবো আর আপনি আমার সাথে যা খুশি তাই করতে পারবেন তাহলে সেই চিন্তা ভুলে যান। আমি এই বিয়ে মানি না। আর না আপনার মতো বেঈমান লোককে আমি আমার স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবো। সো স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি।

নূরের হুমকিপূর্ণ কথা আদিত্যর উপর কোনো প্রভাব ফেলল বলে মনে হলোনা। সে একই ভঙ্গিতে দুষ্টু হাসির রেখা ঠোঁটে ঝুলিয়ে ধীর ধীরে সামনে অগ্রসর হলো। এগুতে এগুতে সে নিজের শার্টের বোতামগুলো এক এক করে করে খুলতে লাগলো। যা দেখে নূর আরও ভড়কে গেল। চোখ কপালে উঠে যাওয়ার অবস্থা। আদিত্যকে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে সে অপ্রস্তুত ভাবে পেছাতে লাগলো। পেছাতে পেছাতে কন্ঠে রাগী ভাব আনার চেষ্টা করে বলল,
–শা শার্ট কেন খুলছেন আপনি? দেখুন ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম। আমি কিন্তু ভয় পাওয়ার মতো মেয়ে নই। একদম উল্টো পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবেন না। নাহলে কিন্তু আপনার জন্য মোটেও ভালো হবে না।

আদিত্য নূরের হুমকির বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না একইভাবে এগিয়ে যেতে লাগলো নূরের দিকে।নূর পেছাতে পেছাতে আবারও বলতে লাগলো,
— থামুন, ওখানেই থামুন বলছি। আর একপাও এগুবেন না। নাহলে…..

পেছাতে পেছাতে এইপর্যায়ে নূর কাবার্ডের সাথে ঠেকে গেল। পেছনে আর যাওয়ার যায়গা পেলনা সে। এতক্ষণে আদিত্যও নূরের একেবারে কাছে চলে এলো।আর শার্টের বোতামও ততক্ষণে সবগুলো খোলা শেষ। এবার শার্টটাকেও শরীর থেকে আলাদা করে ফেলল। ঠোঁটে তার এখনো সেই দুষ্টুমি ভরা হাসি বিদ্যমান। সেই হাসিটা আরও বিস্তৃত করে আদিত্য নূরের দুইপাশ দিয়ে কাবার্ডে হাত ঠেকিয়ে নূরকে দুই হাতের মাঝে আটকে দিলো। নূরের চোখের দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে মাথাটা ধীরে ধীরে নূরের মুখের দিকে ঝুকালো। নূর চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।উপরে উপরে যতই বাহাদূরি দেখানোর চেষ্টা করছে, ভেতরে ভেতরে গলা শুঁকিয়ে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে তার। বরাবরের মতোই এই লোকটার সান্নিধ্য তাকে শক্তিহীন, বোধহীন করে দেয়। চেয়েও শক্তি যোগার করে এই লোকটাকে প্রতিহত করতে পারে না। আদিত্য ধীরে ধীরে নূরের চুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে নূরের কানের দিকে ঝুঁকে মাদকতা জড়ানো কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,
–নাহলে? নাহলে কী করবে শুনি? টেল মি না, নূরসোনা?

নূর কী উত্তর দিবে! আদিত্যর এতো কাছে আসায় এমনিতেই তার সব এলোমেলো হয়ে গেছে। কাঁধে আদিত্যর তপ্ত নিঃশ্বাস অনুভব হতেই এবার যেন নিঃশ্বাসটাও অবরোধ করে বসলো। হঠাৎই যেন বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের ঘাটতি উপলব্ধি করলো নূর। পর্যাপ্ত নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা সে। একি জ্বালা! এখন কী তাহলে নিঃশ্বাস আঁটকে মরে যাবে সে! লোকটা তাহলে ওকে এভাবে মেরে ফেলার ফন্দি আঁটছে! নূরের আকাশপাতাল ভাবনার মাঝেই আদিত্য খট করে কাবার্ডের পাল্লা খুলে নিজের জন্য টিশার্ট আর ট্রাউজার বের করলো। কাবার্ড খোলার শব্দে চোখ খুলে তাকালো নূর। আদিত্য কাপড়চোপড় হাতে নিয়ে মুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করে হঠাৎই দুনিয়ার সবচেয়ে ভোলাভালা ব্যক্তি প্রমাণ করার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
–শার্ট না খুললে ফ্রেশ কীভাবে হবো? কিন্তু তুমি কী ভাবছিলে? আমি তোমার সাথে…… ইশশ কি সব ভাবো তুমি! মাথায় শুধু এসবই চলে তোমার তাইনা? নটি গার্ল! মানলাম আমরা স্বামী-স্ত্রী,তাই বলে সোজা মেইন সীনে চলে যাবে? আমার বুঝি লজ্জা করে না! আমি কী তোমার মতো নির্লজ্জ নাকি?এসব ভাবতেও লজ্জায় মরে যাই আমি। আগে আমার লজ্জা কমুক, তারপর সব হবে।

বলেই কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে রওয়ানা হয় আদিত্য। রাগে নূরের র,ক্ত,ক,না ফেটে যাচ্ছে। কত্তবড় বদ লোক। রেগে গিয়ে নূর ক্যাবিনেটের ওপর থাকা পারফিউমের বোতল টা উঠিয়ে পেছন থেকে আদিত্যর দিকে ছুঁড়ে মারলো। তবে আদিত্য নিজের শরীরে লাগার আগেই ঝট করে সেটা ধরে ফেলল। ধরে নিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,
–উই মা! এতো রাগ! কেন? বাসর আরম্ভ করিনি বলে? বললাম তো আমার লজ্জা করে। এখন কি বেচারা মাছুম বর লজ্জাও পেতে পারবেনা? আচ্ছা ঠিক আছে, করো তুমি যা করতে চাও। বাঁধা দেবোনা তোমাকে। তুমি তোমার বউয়ের অধিকার নিয়ে নাও৷ আমি নাহয় লজ্জায় মরি মরি করেই নিজেকে তোমার কাছে সমর্পণ করে দেবো। ♬ আমার গায়ে যতো দুঃখ সয়,বন্ধুয়ারে করো তোমার মনে যাহা চায়….

আদিত্যর এসব ফালতু কথা নূরের রাগকে আরও হাজার গুণ বাড়িয়ে দিলো। রাগে কান দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার উপক্রম তার৷ প্রচন্ড রেগে নূর আদিত্যর দিকে তেড়ে যেতে যেতে বলল,
–ইউউউউউউ….

অবস্থা বেগতিক দেখে আদিত্য দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা আঁটকে দিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠল। আর নূর রাগে কটমট করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো আদিত্য। নূর খাটের একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আদিত্য নূরকে আর নাড়লো না।এমনিতেই ক্ষেপে আছে। দেখা যাবে শেষমেশ প্রথম রাতেই শহিদ হয়ে যেতে হবে। তাই চুপচাপ বিছানায় একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। তবে নূর পড়ে গেল চরম দ্বিধায়। সে কোথায় ঘুমাবে? একই বিছানায় উনার সাথে শোয়াতো ইম্পসিবল। কিন্তু তাছাড়া আর কোথায় শোবে?সারারাত এভাবে বসেতো আর থাকা যাবে না।
নূরকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আদিত্য বলে উঠলো,
–এখন কী টিভি সিরিয়ালের সেই বিখ্যাত সীনটা করার ইচ্ছে জেগেছে নাকি? এক বিছানায় শুতে পারবোনা, সোফায় গিয়ে শুবে এন অল? নাকি তোমার নিজের উপর বিশ্বাস নেই? আমার মতো এমন হ্যান্ডসাম, হট পুরুষের কাছে শুয়ে তুমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবেনা সেই ভয় করছ?

নূর দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
–একদম বাজে কথা বলবেন না। আমি আপনাকে আগেই বলেছি আমি আপনার সাথে এক রুমে থাকতে পারবোনা।

–হ্যাঁ, সেটাইতো বলছি। আমাকে চোখের সামনে দেখে তুমি তোমার কামনা আঁটকে রাখতে পারবেনা। তাইতো একসাথে থাকতে চাওনা। জানি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবেনা তুমি। হামলে পড়বে আমার ওপর।

–আর একটাও বাজে কথা বললে কিন্তু খবর আছে আপনার। নূরের এতো খারাপ দিনও আসেনি যে আপনার মতো থার্ড ক্লাস নায়ককে দেখে নিয়ন্ত্রণ হারাবে।

–হাঁহ,এসব কথার কথা। নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় না থাকলে আমার পাশে বিছানায় ঘুমিয়ে দেখাও। জানি পারবেনা। সেই সাহসই নেই তোমার। কারণ তুমি কন্ট্রোল করতে পারবেনা।

নূর চোয়াল শক্ত ঠাস করে আদিত্যর পাশে বিছানায় শুয়ে পড়ে বলল,
–এইযে নেন শুয়েছি। এখন দেখি কে নিয়ন্ত্রণহীন হয়। খবরদার আপনার হাত যেন আমার সীমানায়ও না আসে।

আদিত্য মনে মনে হাসলো। রাগী মেয়েগুলো মাঝে মাঝে খুব বোকা হয়ে যায়।নূরের উপর সবসময় এই ট্রিক টা কাজে লাগে। সারাদিনের অশান্তি আর ক্লান্তির কারণে ঘন্টাখানিকের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল নূর। আদিত্য বালিশে কনুই ঠেকিয়ে, হাতের উপর মাথা রেখে মায়াময় চোখে তাকিয়ে নূরের ঘুমন্ত মুখের দিকে। এই দিনটার জন্য আদিত্য কতদিন ধরে অপেক্ষা করছিলো। আজ ফাইনলি সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত এসেছে। নূর আজ ওর বউ। ওর ঘর নূরের আলোর মতোই আলোকিত ওর পাশে শুয়ে আছে। আর কি চাই আদিত্যর। হ্যাঁ, নূরকে এভাবে পেতে ওকে একটু অযাচিত পন্থাও অবলম্বন করতে হয়েছে। কিন্তু এছাড়া যে আর কোনো উপায় ছিলোনা। নূরকে অন্য কারোর হয়ে যাওয়া কীভাবে দেখতে পারতো সে? তাইতো নূরকে একেবারেই নিজের করে নিয়েছে। এখন আর নূরকে হারানোর ভয় নেই। যত খুশি রাগ করুক তবুও আমার চোখের সামনে থাকুুক। ওর সব রাগ, অভিমান,ঘৃণা সইতে পারবো। তবে অন্য কারোর হতে দেখতে পারবোনা। কখনো না। তুমি শুধু আমার নূর। আমার শৈবলিনী।

চলবে……