তোমার জন্য ফিরে আসা পার্ট-০২

0
1189

#তোমার_জন্য_ফিরে_আসা
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_২

আলিব মানুষ রুপে আত্মার নাকি কোনো জাদুকরী ইভা বুঝতে পারছে না ভয় লাগছে তার সাথে আছে আবার জোছনা রাতে সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে ভালোও লাগছে। আলিবের পিছু পিছু ইভা হাঁটছে। সামনে হাঁটলে যদি ঘাড় মটকে দেয় তাই সামনে যায় না।
চাঁদে আলোয় সমুদ্রের পানি অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে প্রকৃতি চাঁদের আলোয় সেজেছে ইভা মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখছে, মন চাইছে সারাজীবন যেনো ওখানে থাকতে পারে।

“ভাওউউউউ মানুষের গন্ধ পাও ”
ইভা চিৎকার করলো উঠলো “বাঁচাও বাঁচাও ”
আবিল ওর মুখ চেপে ধরে বললো,
“মহারানী এতো ভয় পাচ্ছো কেনো আমি-ই তো ”
ইভা ওর হাত সরিয়ে দিলে বলে
“এভাবে কেউ ভয় দেখায়, আর একটু হলেই প্রান চলে যেতো ”
“আমাকে উদ্ধার না করে তোমার ছুটি নেই ”
“আপনাকে আমি উদ্ধার করবো মানেটা বুঝলাম না? ”
“বুঝতে হবে না তবে তুমি খুব সাহসী ”
“বুঝলেন কিভাবে? ওহ্ আপনি তো সবই বুঝেন ও জানেন ”
“হাহাহাহ্, তোমার জন্য আমার সব বোঝার ক্ষমতা হয়ছে”
“এতো হেয়ালি না করে বলুন তো আপনার উদ্দেশ্যে কি? আপনি জ্বীন-ভূত নাকি জাদুকরী “?
” আজ বলার সময় না ”
“কবে বলবেন? আর আপনাকে কতোদিন সহ্য করতে হবে? ”
“একশত দিন আমাকে তোমার সঙ্গে থাকতে হবে সেটা তুমি চাও আর না চাও ”
“আমি না ডাকলে তো আপনি আসবেন না তাহলে কিভাবে আমার সঙ্গে থাকবেন? ”
“প্রতিদিন রাত বারোটায় আসবো তোমার ডাকতে হবে না”
“একবার আসতেই হবে “?
” হুম ”
“আমি যদি আংটি ফেলে দেই বা অন্য কোথাও চলে যাই?”
“তাতে কি, আমি একশত দিন থাকবো তা তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকো না কেনো”
“ওহ্ আচ্ছা, আপনি কি অনেকর সঙ্গে থাকেন? ”
“ধুর বোকা মেয়ে, অনেকের সঙ্গে থাকবো কেনো? তোমার জন্য ফিরে আসা ”
“পৃথিবীতে এতো লোক থাকতে আমার জন্য আপনার কেনো ফিরে আসা সেটা বুজলাম না, অন্য কারো সঙ্গে থাকলে কি হতো? আমার সাথে কখনো ভালো কিছু হয় না? ”
“আহারে আমার মহারানীর কি দুঃখ? ”
“ঢং করবেন না সহ্য হচ্ছে না ”
“আচ্ছা বেশ বলো তুমি কি এখন বাসায় যাবে? ”
“হুম যাবো তবে একটু পরে ”
“তোমার ভয় লাগছে না এতো রাতে আমার সাথে ঘুরতে?”
“নাহ্ আপনি অনেক ভালো, যদি খারাপ হতেন তাহলে আমাকে সেই কখন ঘাড় মটকে রক্ত চুষে খেতেন”
“তাও তোমার অনেক সাহস আছে, আমাদের এভাবে সবাই বিশ্বাস করে না ”
“হুম, আপনার পরিবারে কে কে আছে? ”
“আমার পরিবার এখন নেই আগে ছিলো। ”
“কেনো তাদের কি হয়েছে? ”
“মেরে ফেলেছে, জানো আমরা অনেক সুখী পরিবার ছিলাম”
“কে মেরেছে? ”
“এক জাদুকরী। উনার জন্য সবকিছু ধংস হয়েছে ”
“আমাকে ঘটনা খুলে বলুন প্লিজ প্লিজ ”
“না গো মহারানী আমার হাতে সময় নেই তোমাকে এক্ষুনি বাসায় পৌঁছে দিতে হবে ”
“সকাল হতে দেরি আছে তো ”
“চারটা বাজতে আর দশ মিনিট বাকি আছে এখন তুমি আংটি ধরে আমাকে চলে যেতে না বললে আমি একশত বছর পর ছাড়া আর বেড় হতে পারবো না তাই তোমাকে বাসায় দিয়ে আসতে হবে ”

ইভার কিছু বলার আগে আলিব ওর চোখ বন্ধ করে রেখে বাসায় পৌঁছে দিলে। ইভা চোখ মেলে দেখে সত্যি বাসায় এসেছে আর আলিবের কথা মতো ওকে চলে যেতে বললেই চলে গেলো।
ইভা বিছানায় শুতে ওর ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো।

“সকাল নয়টা বাজে, এখনো মেয়ের ঘুম ভাঙ্গে না। লেখাপড়া দিন দিন গোল্লায় যাচ্ছে। বাপের আদরে একটা বাঁদর তৈরি হচ্ছে, এই ইভা এবার উঠ কলেজে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ”
ঘুম ঘুম চোখে ইভা বলছে,
“উফফ মা একটু ঘুমোতে দেও ”
“উঠে কলেজে যা তারপর এসে ঘুমা ”

ইভার মা রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফ্যান অফ করেছে। এবার ঘুমিয়ে থাকা গেলো না গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে তাই ঘুম থেকে উঠে পরলো। ফ্রেস হয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে তখন হাতের দিকে খেয়াল করতে আংটি দেখলো। রাতের ঘটনা সত্যি নাকি কোনো স্বপ্ন? স্বপ্ন হলে তো আংটি থাকতো না তাহলে কি সত্যি কেউ আছে? দেখা যাক উনি দিনের আলোয় আসে কি না? “আপনি আসুন ” আলিব চলে এলো।
“কি গো মহারানী ঘুম থেকে উঠে আমার মনে পড়ে গেলো”
“মনে আবার পড়বে না, রাতে যা অদ্ভুত ঘটনা হলো তারপরেও কি আপনাকে ভোলা যায়? ”
“তাও ঠিক ”
“আপনি অনেক সুন্দর, ঠিক স্বপ্নে রাজকুমার। জানেন আমি মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখেছি রাজপ্রাশাদে আমার বিয়ে হচ্ছে আর সেই রাজকুমার আপনি ”
“তুমি সত্যি বলছো? ”
“হ্যাঁ”

ইভার মা রুমে ঢুকতে এসে দেখে ইভা একা একা কথা বলছে।
–আয়নার সামনে দাড়িয়ে একা একা কথা বলছিস কেনো কোনো সিরিয়ালে পার্টের জন্য তোকে নেওয়া হয়েছে নাকি?
–একজন আছে তার সাথে কথা বলছি।
–রুমে তুই আমি ছাড়া কেউ নেই তাহলে আর কে?
–তুমি দেখতে পাবে না শুধু আমিই দেখতে পাচ্ছি।
–কিসব পাগলের মতো বলছিস মাথা খারাপ হয়েছে।
–আচ্ছা আমি কলেজে গেলাম।
–খেয়ে যা
–না সময় নেই।

ইভা কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। বাসার কাছে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড লিমার বাসা দুজনে এক সাথে প্রতিদিন কলেজে যায়। লিমার সাথে দেখা হতে রাতের ঘটনা বললো কিন্তু লিমা বিশ্বাস করলো না। হেসে উড়িয়ে দিলো।
রাস্তায় দেখা হলো ইভাকে পছন্দ করে সায়ন্তের সাথে। ইভা ওকে এড়িয়ে চলে আর ও ছাড়ার পাএ না ওর পিছে লেগে আছে।
“এই যে ম্যাডাম আপনি বলেছিলেন আমি যেনো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে জ্ঞান দেই তাই কয়েকদিন ধরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে বললাম যে ঠিক মতো মাথায় কাপড় দিয়ে চলা ফেরা করবেন ”
ইভা মাথার কাপড় কপাল পর্যন্ত টেনে বললো,
“ঠিক করে মাথায় কাপড় দিয়েছি এখন আমার পিছু ছাড়ুন। অনেক দিন বলেছি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে না ”
“আচ্ছা আমি বাইক নিয়ে কলেজ গেটে দাঁড়াবো, তুমি আসো।
ইভা একটা মুখ ভেঙ্গচি দিলো।
সায়ন্ত বাইক স্টার্ট দিলো কিন্তু চলছে না। বাইকের টায়ার পাঞ্চ হয়ে গেছে।
ইভার মনে নেই যে আলিবকে চলে যেতে না বললে ও যাবে না। আলিব হেসে উঠলো। হাসির শব্দ শুনে ইভার মনে পড়লো আলিব আছে।
” মহারানী তুমি খুশি হয়েছো? ”
“কেনো? ”
“বারে ওর বাইক খারাপ করে দিলাম ”
“এটাও আপনার কাজ ”
“হুম সব তোমার জন্য ”
লিমা ইভাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
–একা একা কথা বলছিস কেনো?

ইভা মনে মনে বলছে “উফফফরে আলিব আমার মাথা খেয়ে নিবে তার আগে ওকে সরিয়ে দেই। এই যে শুনছেন আপনি চলে যান ”
লিমা আবার বললো,
“কি রে চুপ করে আছিস আবার এবার একা কথা বলিস, তোর কি হয়েছে “?
” আরে কিছু না রাতের স্বপ্ন বার বার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, চল ক্লাসে দেরি হচ্ছে ”

কলেজে ক্লাস শেষ করে ইভা বাসায় এসে গা এলিয়ে শুয়ে আছে। মন চাইছে একটু সরব খেতে কিন্তু আলসেমির জন্যে উঠতে ইচ্ছে করছে না। আলিব এসে বললো,
“নেও এটা খেয়ে নেও ”

চলবে,,,,,