তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-২৬+২৭+২৮

0
493

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_২৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

দেখতে দেখতে কেটে গেলো,পনেরো’টা দিন।আহান আবার আগের মতো হয়ে যাচ্ছে।অফিসে গেলে দুপুরে’র মধ্যে-ই বাসায় ফিরে আসে।এভাবে কাজ করলে তো অফিসে’র বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।শেষে আশরাফুল চৌধুরী নিজেই আবার অফিসের হাল ধরলেন।আহান নিজের রুমে মধ্যে বসে থাকে।সারারাত জেগে থাকে।অধরা যাওয়া পরে রাতে ঘুমিয়েছে কি না।তা আহানের জানা নেই।নিজেকে খুব শূন্য শূন্য লাগে আহানের।বাঁচতে ইচ্ছে করে না।বুকের মাঝখানে ফাঁকা ফাঁক লাগে।এখন বুঝতে পারছে।ও না জেনে বুঝে জীবন থেকে কি হারিয়েছে।থাকতে মূল্য দেয় নাই।হারিয়ে যাওয়ার পরে খুঁজে’ও পেলো না।শহরের এমন কোনো জায়গা আছে,যেখানে আহান অধরা’কে খুঁজে নাই।অধরা তার নানির বাসা’ও যায় নাই।তাহলে মেয়েটা গেলো কোথায়।আজ পনেরো দিন হলো,অধরা’র কোনো খোঁজ নেই।অধরা যে,এই বাসায় নেই।এটা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই।অধরা থাকলেই কি আর না থাকলেই কি কারো কোনো যায় আসে না।অধরাকে দেখার প্রবল ইচ্ছে জেগেছে মনে।এক পলক দেখলে হয়তো অশান্ত মন’টা একটু শান্তি পেতো।কতদিন হলো কথা হয় না।আহানের দম বন্ধ হয়ে আসে আজকাল।আহান রুম থেকে ভয়ে ভয়ে বেড়িয়ে তার বাবার কাছে গেলো।

–বাবা আসবো”?

–আসো,তুমি হঠাৎ কি মনে করে আমার কাছে আসলে।কোনো দরকার আবার কাকে তাড়াতে হবে বলো।আমি তাকে তাড়িয়ে দিচ্ছি।

–এভাবে কথা বলছো কেনো।

–তাহলে কিভাবে কথা বলবো তুমি বলো।

–বাবা একটা কথা বলবো।

–বলো।

আহান বেশ কিছুক্ষণ ধরে চুপ করে আছে।ভেতরে ভেতরে ভয় কাজ করছে।সে,কি করে তার বাবা’কে তার মনের কথা বলবে।বাবা যদি রেগে যায়।তাকে অনেক কথা শুনিয়ে দেয়।তখন সে কি করবে।আমতা আমতা করে বলল।

–বাবা”!

–বলো।কি তখন থেকে বাবা বাবা করছো।যা বলতে এসেছো।সোজাসাপটা বলো।এতো প্যাচানোর কি আছে।

–তুমি ছেলেটা’র সাথে এমন করছো কেনো।সারাক্ষণ একা একা থাকে।তোমার সাথে দু’কথা বলতে এসেছে।তুমি একটু ভালো ব্যবহার করতে পারো না।একাকিত্ব আমার ছেলেকে শেষ করে দিচ্ছে।আমরা বাবা-মা হয়ে,যদি ওর সাথে এমন ব্যবহার করি।তাহলে আহান কোথায় যাবে বলো তো।বললেন আফরোজা চৌধুরী।

–আমি কি তোমার ছেলেকে একটা থাকতে বলেছিলাম।তার ভালো থাকার ব্যবস্থা’ও করে দিয়ে ছিলাম।সে,যখন নিজের ভালো বুঝে না।তাহলে তার ভালো আমি কি করে করবো।কতটা আশা নিয়ে কতো কাঠকয়লা পুড়িয়ে,মেয়েটাকে এই বাসায় নিয়ে আসছিলাম।তোমার ছেলে অধরাকে পেয়ে তো বেশ ভালো-ই ছিলো।এখন তোমার ছেলেকে জিগা’ও অধরাকে ছাড়া,তোমার ছেলে ভালো আছে নাকি।

আহান এবার তার বাবার পায়ের কাছে বসে পড়ল।কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।

–বাবা অধরা কোথায়।

–আমি জানি না।

–আমি জানি তুমি সব জানো।বাবা আমি আর থাকতে পারছি না ওকে ছাড়া।আর কিছুদিন এভাবে থাকলে হয়তো।আমি মরে-ই যাব।বলো না বাবা অধরা কোথায়।আমি নিজে গিয়ে অধরাকে বাসায় নিয়ে আসবো।

–আমি জানি না অধরা কোথায়।আমাকে বিরক্ত করো না।নিজরে রুমে যা-ও।

মিসেস আফরোজা চৌধুরী অসহায় দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছেন।আফরোজা চৌধুরী’ও এটা বুঝে গেছেন।তার ছেলে মেয়েটা’কে ঠিক কতটা ভালোবাসে।একটা মুহূর্ত ভালো থাকতে পারছে না মেয়েটা’কে ছাড়া।আহানের ভালো থাকার কারণ হয়ে গেছে মেয়েটা।মা হয়ে ছেলের কষ্ট কি সয্য করা যায়।আগে ছোট বেলায় আহান এমন করে বায়না ধরতো গাড়ি কেনার জন্য।আজ আবারো ছোট বাচ্চাদের মতো বায়না ধরেছে।ছোট বেলায় খেলনা গাড়ি কিনে দিতে পরালেও।এখন তার বউকে এনে দিতে পারছে না।আফরোজা চৌধুরী কিছু বলতে যাবে।তখনি আশরাফুল চৌধুরী বলল।

–ছেলের হয়ে সাফাই গাইতে এসো না।তোমার ছেলেকে সকালে উঠতে বলবে।কালকে তিতির’কে আনতে যাব।মেয়েটা রাগ করে চলে গেছে।সামনে তিতলি’র বিয়ে।এখন যদি ও রাগ করে থাকে।বিষয়’টা সত্যি খুব খারাপ দেখায়।

আহান আর কোনো কথা বলল না।চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আশরাফুল চৌধুরী ভালো করে-ই জানেন ছেলেটা রুমে গিয়ে কান্না করবে।বড্ড চাপা স্বভাবের ছেলে তার।খুব সহজে কাউকে কিছু বলে না।আবার বললে সে,জিনিস টা তার চাই-ই চাই।এতটুকু শাস্তি হওয়া দরকার আহানে’র।এই জন্যই বলে “ভাবি’ও করি’ও কাজ।করিয়া ভাবি’ও না।

পরের দিন সকাল বেলা সবাই মিলে তিতিরে’র বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।কলিং বেলে চাপ দিতে-ই তিতির এসে দরজা খুলে দিলো।তার বাবা-মা ভাই-বোনকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠে এমন অবস্থা হয়েছিল তিতিরে’র।কিন্তু পরক্ষনে তার বাসা থেকে চলে আসার কথা মনে পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।সবাইকে ভেতরে আসতে বলল।তিতির সবার সাথে কথা বললে’ও আহানের সাথে কথা বলছে না।আহান চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।একবার আহানের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো নাস্তা তৈরি করতে।তিতরের শশুর শাশুড়ি এগিয়ে আসলো।ড্রয়িং রুমে সবাই মিলে গল্প করছে।হাসাহাসি করছে,এর মাঝে তিতির এসে নাস্তা দিলো সবাইকে।

–বেয়াইন এবার কিন্তু একমাস থেকে যতে হবে।না হলে খুব রাগ করবো।বহুদিন পরে আসছেন।কয়টা দিন না থাকলে যেতে দিব না।বলল তিতিরের শশুড়।

–আমার তিতলির বিয়ে।তাই জন্য আপনাদের সবাই’কে নিয়ে যেতে এসেছি।বহুদিন পর যখন এসেছি,আপনাদের একটু না জ্বালিয়ে বাসায় ফিরছি না।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

আশরাফুল চৌধুরীর কোথায় সবাই হেঁসে উঠলেন।আহানের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে তিতির নিজেই আহানের পাশে বসলো।তারপরে বলল।

–কি রে কেমন আছিস।চোখ এত লাল হয়ে আছে কেনো।সারারাত ঘুমাস নাই নাকি।চেহারার কি হাল করেছিস।একদম বকের মতো দেখতে হয়ে গিয়েছিস।আহান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।তিতির’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।আহান একটু দূরে বসে ছিলো তাই সবাই বুঝতে পারলো না।ভেবেছে অনেক দিন পরে বোন’কে পেয়েছে তাই এমন করছে।

–আপু অধরাকে এনে দাও।আমি আর পারছি না।ওকে ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগে না।আমার মাথা কাজ করে না।আমি আর ওকে ভুল বুঝবো না।তুমি অধরাকে এনে দাও।

তিতির আহানের এমন ছেলে মানুষি দেখে হেঁসে দিলো।খালি বড়-ই হয়েছে।ছোট বেলার স্বভাব টা এখনো যায় নাই।তিতির মুখে রাগি ভাব এনে বলল।

–কেনো ভুল বোঝার আগে মনে ছিলো না।তাড়িয়ে দেওয়ার আগে মনে ছিলো না।

আহান আর কোনো কথা বলল না।চুপ হয়ে গেলো।চোখের কোণে জমে থাকা পানিটুকু মুছে নিলো।ছেলেদের চোখে পানি আসাটা বড্ড বেমানান।আহানের অবস্থা দেখে তিতিরের’ও কষ্ট হতে লাগলো।তার কত আদরের ভাই এভাবে কষ্ট পাচ্ছে।

–মন খারাপ করিস না।সময় হলে পেয়ে যাবি।তবে তোকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।মহারাণীর রাগ ভাঙাতে।বলে-ই চলে গেলো তিতির।আহান তিতিরের কথা আগামাথা কিছু বুঝলো না।তার এখন ঘুমের দরকার।ঘুম না হলে পাগল হয়ে যাবে।লজ্জায় বলতে’ও পারছে না।বেলা বাজে দশ-টা তিতির আহানের কাছে এসে বলল।

–ঝিমাচ্ছিস কেনো।তোর কি ঘুম পেয়েছে।ঘুম পেলে আয় খেয়ে নিবি।খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বি।বলে-ই ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাতে লাগলো।

আহান ডাইনিং টেবিল বসে আছে।তিতির ভাত বেড়ে দিচ্ছে আহানের প্লেটে।তখনি অধরা চোখ ডলতে ডলতে এসে ডাইনিং টেবিল বসে।চোখে প্রচুর ঘুম।এখনো ঘুমের রেশ কাটে নাই।ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল আপু তাড়াতাড়ি খেতে দাও।খেয়ে আবার ঘুমাবো।কাল সারারাত রোহান আমাকে যা জ্বালিয়েছে না।খালি ওর পরীক্ষা ছিলো তাই বেঁচে গেছে।না হলে দিতাম কয়টা লাগিয়ে।ম্যাডাম হিসেবে আমি কিন্তু খুব খারাপ।বলে-ই সামনে তাকলো।আহান সহ বাকি সবার দৃষ্টি অধরার দিকে।নিমিষেই অধরার চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেলো।দু’জন একদম সামনাসামনি বসে আছে।আহান’কে দেখে অধরা দৌড়ে রুমে চলে গেলো।আহান’ও উঠে দৌড় দিতে যাবে।তখনি তিতির এসে আহান’কে ধরে ফেলে।

–আপু অধরা তোমার কাছে তুমি আমাকে বলো নাই কেনো।আমাকে ছাড়ো ওর কাছে যেতে যাও।ও যদি আমার চলে যায়।

–বাপ রে তোর বউ কোথা’ও পালিয়ে যাচ্ছে না।এখানেই আছে।এত অস্থির হবার কোনো দরকার নেই।বউকে তাড়িয়ে দেওয়ার সময় মনে ছিলো না।এখন এত পাগল হচ্ছিস কেনো।আগে খেয়ে নিবি।তারপরে অধরার কাছে যাবি।আহান চুপচাপ বসে পড়লো।বুকের ভেতর অস্থিরতা কাজ করছে।একদম অধৈর্য হয়ে পড়েছে।তবু্ও চুপচাপ জোরে জোরে খেতে শুরু করলো।

আসলে সেদিন তিতির অধরাকে গাড়িতে তুলে নিয়েছিল।অধরা প্রথম রাজি হয় নাই আসতে।কিন্তু তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।তাই তিতিরের সাথে-ই আসছে।এই কয়টাদিন তিতিরের কাছে-ই ছিলো অধরা।আশরাফুল চৌধুরী সবটা জানেন,বাবার বয়স হয়েছে।যদি চিন্তা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।তাই আগে-ই জানিয়েছে তিতির।আশরাফুল চৌধুরী তিতির’কে কাল রাতে আহানের কথা বলছিলো।তিতির বলছে বাবা তুমি নিয়ে আসো।আমি দেখছি ওদের বিষয়’টা।

–কি রে তিতির অধরা যে, তোর কাছে আসলো কি করে।

–তোমরা যখন অধরা’কে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলে,মেয়েটা রোদের মধ্যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল।আমি সেদিন ওকে আমার সাথে নিয়ে আসি।

–আস্তে আস্তে খা তোর খাবার কেউ নিয়ে যাচ্ছে না।এত জোরে জোরে খাচ্ছিস কেনো।বলল তিতলি।

আহান কোনো না বলে খেয়ে-ই যাচ্ছে।খুব দ্রুত নিজের খাবার শেষ করলো।তিতির অধরা’র খাবার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।অধরা খেয়ে চুপ করে রুমে মধ্যে বসে আছে।বুকের ভেতরটায় ভয়ে ধকধক করছে।আহান সামনে আসলেই অধরা’র হার্টবিট ক্রমশো বেড়ে যায়।মানুষ’টা সামনে আসলে,সমস্ত রাগ,অভিমান নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়।ইচ্ছে করে দৌড়ে গিয়ে মানুষটাকে মন ভরে দেখে আসি।কিন্তু তার উপায় কি আছে।মানুষ টা তো আমার মুখ-ই দেখতে চায় না।যখনি নিজেকে ঠিক করে নিতে লাগি।তখনি এই মানুষটা আমার সামনে এসে আমার সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।এসব ভাবছিলো অধরা।তখনি দরজার ওপাশ থেকে তিতির ডাকলো।তিতিরের কণ্ঠ পেয়ে অধরা দরজা খুলে দিলো।তিতিরের পাশে-ই আহান দাঁড়িয়ে আছে।

–শুনো অধরা আহান তোমার রুমে থাকবে।আমাদের বাসায় যে,কয়টা রুম ছিলো সব গুলো’তে মানুষ হয়ে গেছে।আহানের ঘুমোনোর জায়গা হচ্ছে না।কয়টা দিনের-ই তো ব্যাপার পাঁচটা দিন থেকে চলে যাবে।এই পাঁচটা দিন তোমার রুমে থাকবে।

–কিন্তু আপু।

–কোনো কিন্তু না।আমার অনেক কাজ আছে।দুপুরের রান্না বাসতে হবে।আমি আসছি বরং।

–আমি যাই তোমার সাথে কাজে সাহায্য করবো।

–তোমার এত আসা লাগবে না।যদি পারো বাবা মায়ের সাথে দেখা করে আসতে পারো।বলে-ই তিতির চলে গেলো।তিতির যতক্ষণ ছিলো।আহান ভদ্রছেলের মতো দাঁড়িয়ে ছিলো।তিতির চলে গেছে।অধরা তিতিরের পেছনে পেছনে যাবে।তখনি আহান অধরা হাতে টেনে নিয়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।কারো মুখে কোনো কথা নেই।অধরা নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু আহান এত জোরে অধরার হাত চেপে ধরেছে আর একটু হলে ভেঙেই যাবে।আরে ভাই ছাড় আমাকে আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।এত জোরে আমার হাত ধরে রেখেছে।মনে হয় ছেড়ে দিলে-ই আমি পালিয়ে যাব।অধরা নিচের তাকিয়ে ছিলো।আহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আহানর তার দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে কত বছর তাদরে দেখা হয় না।চোখে হাজারো তৃষ্ণা দেখার।আহান হয়তো নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।এভাবে একটা মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে লজ্জা লাগে না।অধরা এক হাত দিয়ে তার মুখ ঢেকে ফেললো।আহান এতে বেশ বিরক্ত হয়ে গেলো।অধরার দু-হাত শক্ত করে ধরে আছে।অধরা যেনো তার কাজে বাঁধা দিতে না পারে।

আল্লাহ আমাকে কি চোখ দিয়ে-ই গিলে খেয়ে ফেলবে নাকি।আমি চুপচাপ সবকিছু সয্য করছি কেনো।মানুষকে অপমান করে তাড়িয়ে দিলে,মানুষ তার সাথে মারামারি শুরু করে দেয়।আর আমি বকার মতো চুপ করে আছি।সমস্যা টা আমার না।সমস্যা টা ওনার উনি সামনে আসলেই আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।হঠাৎ কোনো কথা ছাড়া-ই আহান অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।অধরা ছোটাছুটি করবে তার উপায় নেই।আহান এতটা শক্ত করে তাকে ধরে আছে।নড়াচড়া করলে শরীরের হাড়গুলো ভেঙে’ও যেতে পারে।দু’জন মাঝে পিনপিন নীরবতা কাজ করছে।কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।বুকের ভেতরের ধুকপুক আওয়াজ স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে।বেশ কিছুক্ষন পরে আহানের হাত আলগা হয়ে আসলো।অধরা বুঝতে পারলো না কিছু।অধরার কাঁধে মাথা রেখেই আহান ঘুমিয়ে গেলো।মনে হচ্ছে বহুবছর পরে সে, শান্তিতে ঘুমোচ্ছে।আহানের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আহান’কে তোলার চেষ্টা করলো।কিন্তু পারলো না আহান ঘুমিয়ে গেছে।

–আল্লাহ এই হাতি’টা ঘুমিয়ে গেছে।এখন আমি কিভাবে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে যাব।অধরা কোনোরকম ভাবে আহান’কে বিছানায় শুইয়ে দিলো।অধরার কাছে মনে হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয় করলো।আহানের পায়ে থেকে জুতা খুলে দিয়ে বাহিরে চলে গেলো।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_২৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

তিতির রান্না করছে।সাথে তিতরে’র বাসার কাজের মেয়েটি’ও আছে।অধরা গিয়ে সেখানে দাঁড়াল।দূর থেকে এসেছে সবাই,ক্লান্ত শরীর নিয়ে,কেউ বেশিক্ষণ আড্ডা দিতে পারলো না।সবাই নিজের রুমে গিয়ে,বিশ্রাম করছে।

–আপু আমি’ও তোমাকে সাহায্য করি।বলো আমাকে কি করতে হবে।বলল অধরা।

–তোমার এত কিছু করা লাগবে না।আমার বাবা-মা কতদিন পরে আমার বাসায় আসছে।আমি নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবো।আমি তোমাকে কাজ করানো’র জন্য নিয়ে আসছি।তুমি বড় বোনের কাছে আসছো।একদম রাণীর মতো করে থাকবে।আমাকে নিজের বোন মনে করো না নাকি।

–না এমনটা না।আমি’ও তো আমার বোনকে সাহায্য করতে পারি।আমার বোন একা একা কষ্ট করছে।

–আমার অভ্যাস আছে।আমি অনেক বছর ধরে সংসার করছি।এক সন্তানের মা হয়েছি।এখনো যদি সবকিছু না পারি।তাহলে কেমন বউ আমি।

–তোমার সাথে কথা বলে পারা যাবে না।

তখনি মিসেস আফরোজা চৌধুরী আসলেন।অধরার মাথায় হাত রেখে বলেন।

–মা,তুই আমাকে মাফ করে দিস।জেনে-বুঝে তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।অনেক অন্যায় করেছি তোর সাথে।দয়া করে তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।

–ছিঃ আন্টি আপনি এসব কি বলছেন।আপনি আমার বড়।আমার গুরুজন।আপনি যত-ই অন্যায় করেন না কেনো।বড় হয়ে ছোটদের কাছে মাফ চাওয়া বড্ড বেমানান লাগে।আপনি এমন করে বলবেন না।আমার খারাপ লাগে।

–তুই আমাকে মা ডাকিস।তুই যে,আমাদের বাসার প্রাণ হয়ে গেছিস।তোকে ছাড়া আমার ছেলে ভালো থাকতে পারে না।আমি বুঝে গেছি।তুই আমার ছেলের জন্য কতটা কি।আমাকে মাফ করে দিস রে মা।তোকে কষ্ট দিলে আমার ছেলেকে কষ্ট দেওয়া হবে।আমি মা হয়ে নিজের সন্তানদের কিভাবে কষ্ট দেই।আর রাগ করিস না মা।আমাদের সাথে বাড়ি ফিরে যাবি।কথা দে মা তুই আমাকে।

–এমন করে বলবেন না।আপনি আমাকে যতই কষ্ট দেন না কেনো।আপনি আমার বড় আপনি মাফ চাইলে আমার খারাপ লাগে।যে,নিজের ভুল বুঝতে পারে,মাফ চায়।তাকে অবশ্যই মাফ করে দেওয়া উচিৎ।

মিসেস আফরোজা চৌধুরী অধরা’কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে,মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।দুপুরে সবাই খাওয়া দাওয়া করে আড্ডা দিচ্ছে।আহান এখনো উঠে নাই।সারাদিন পেড়িয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে আসলো।ড্রয়িং রুমে সবাই মিলে নাশতা করছে।অধরা’ও বসে আছে সবার সাথে।সবাইকে পেয়ে খুব খুশি অধরা।ভালোবাসার মানুষ গুলো পাশে থাকলে সমস্ত রাগ,অভিমান নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়।আহান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে আসলো।সবাই আড্ডা দিচ্ছে,আহান কোনো কথা না বলে চুপচাপ অধরা’র পেছনে এসে দাঁড়াল।

–শুনেন বেয়াইন তিতিরের সাথে,আপনাদে’র-ও যেতে হবে।আমরা আপনাদে’র কথা রেখেছি।এখন আপনাদে’র পালা।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–আপনি চিন্তা করবেন না।আমরা’ও আপনাদে’র একটু জ্বালাতে চৌধুরী বাড়িতে আপনাদে’র পিছু পিছু চলে যাব।বলল তিতিরের শশুর।

তিতিরে’র শশুরের কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো।অধরা হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে আহান’কে দেখে চিৎকার করে উঠলো।সবাই অধরা’র দিকে তাকালো।আচমকা কেউ না বলে চুপচাপ পেছনে দাঁড়িয়ে,থাকলে ভয় পাবার-ই কথা স্বাভাবিক।

–কি রে তুই কখন ঘুম থেকে উঠলি।ভূতের মতো কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।বলল তিতির।

–মেয়েটা মনে হয় খুব ভয় পেয়ে গেছে।ও মেয়ে দেখি তোমার স্বামীকে একটু ছুঁইয়ে দেখো।তাহলে ভয় মনে বসবে না।বলল তিতরের শাশুড়ী।

–ডং এত ভয় পাবার কি আছে।আর এসব কুসংস্কারে’ বিশ্বাস করেন আপনারা।বলল তিতলি।

–তিতলি এটা কেমন ধরনের ব্যবহার।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।তিতলি চুপ হয়ে গেছে।

–এবার দেখবো আমাকে না ছঁইয়ে কোথায় যা-ও।মনে মনে বলল আহান।সবাই’কে অবাক করে দিয়ে।অধরা সবার মাঝখানে থেকে উঠে চলে গেলো।যাওয়ার আগে একটা কথা’ও বলল না।আহান ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।কতোটা বদলে নিয়েছে নিজকে।

–মেয়েটা’কে ভয় পাইয়ে দেওয়ার কি ছিলো।আয় তোকে খেতে দেই।মহারাজ বিশ্বজয় করে আসলেন।সারাদিন এভাবে ঘুমাবি না।

অধরা রুমে এসে চুপচাপ শুইয়ে পড়ল।সকালে একটু ঘুমিয়েছে।এখন ঘুমালে মন্দ হয় না।কিন্তু তিতির আপু রাতে খাবার জন্য আবার ডাকবে।ভালো লাগে না।

আহান চুপচাপ রুমে এসে অধরা’র পাশে শুইয়ে পড়ল।দু’জনে মাঝে বেশ দুরত্ব।আহান’কে দেখে অধরা বালিশ নিয় ফ্লোরে শুইয়ে পড়ল।যার মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না।যার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।এখন তাহলে তার পিছু পিছু ঘুর ঘুর করছেন কেনো।মনে মনে বলছিলো অধরা।

–জানো অধরা তুমি সামনে আসলে আমার অভিমান’রা-ও তোমাকে ভালোবেসে ফেলে।এতটা সুন্দর তুমি।বলল আহান।

আহান আগে কথা বলেছে।অধরা’র জেদ সফল হয়েছে।তবু্’ও অধরা কোনো কথা বলল না।আহান পকেট থেকে চকলেট বের করলো।অধরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল।তোমার জন্য।তা-ও অধরা কিছু বলল না।চোখ বন্ধ করে শুইয়ে রইলো।উত্তর না পেয়ে আহান আবার বলল।

–আমি তোমাকে কিছু বলছি।রাগ করে কি বলে ছিলাম এখনো ধরে বসে আছো।আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে মাফ করে দাও।

অধরা’র আগের ন্যায় শুইয়ে আছে।কোনো কথা বলছে না।আহান আবার বলল।

–ও অধরা ম্যাডাম।আমার ভুল হইয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করি দেন।

অধরা এবার না হেঁসে পারলো না।কয়দিন আগে একটা চোর চুরি করে গিয়ে ধরা পড়েছিল।তখন চোর’টি এভাবে মাফ চেয়েছিল।আহান’ও লোকটার মতো কপি করলো।

–এই অধরা কথা বলছো না কেনো।এবার কিন্তু সত্যি সত্যি আমি কিছু একটা করে ফেলবো।

আমাকে কথা বলতে নিষেধ করে।এখন নিজে-ই হুমকি দিচ্ছে।কথা বলবো না মানে,বলবো না।আহান অধরা’র পাশে গিয়ে অধরা’কে জড়িয়ে ধরে শুইয়ে পড়ল।

–এটা কেমন ধরনের ফাজলামি।দূরে সরুন বলছি।

–আমার সাথে কথা বলবে না তাই না।আমি’ও দেখবো,তুমি আমার সাথে কথা না বলে,কি করে থাকতে পারো।বকবক করে যদি তোমার মাথা নষ্ট করে না দিয়েছি।তবে আমার নাম’ও আহান না।

অধরা কোনো কথা বলল না।চুপচাপ শুইয়ে রইলো।

এভাবে পাঁচ দিন থেকে সবাই চৌধুরী বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।তিতলির বিয়ের জন্য,আজ বাসায় গিয়ে সন্ধ্যায় শপিং করতে যাবে।অধরা সকাল থেকে জেদ ধরে বসে আছে।সে,কিছুতেই চৌধুরী বাড়িতে যাবে না।

–তুমি যাবে না।বলল আহান।

–না,যাব না।বলল অধরা।

–কেনো যাবে না।

–যে,বাসায় আমাকে অপমান করা হয়।আমি সে,বাসায় কিছুতেই যাব না।

–আমাকে রাগাবে না বললাম।এই কয়টা দিন অনেক ধৈর্য ধরেছি।এখন যদি এমন করো,আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

–আপনি মানুষটা এমনতেই খারাপ।ভালো ছিলেন কবে।

–আমি যখন ভালো মানুষ না।তাহলে ভালোভাবে বলে কাজ নেই।

–আমি যাব না।

–তোমাকে যেতে হবে না।বলেই আহান অধরা’কে কোলে তুলে নিলো।

অধরা রাগী দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো।

–তুমি ভালোভাবে যাবে না।এখন তুমি যদি চাও বরের কোলে চড়ে শশুর বাড়ি যাবে।তাহলে বর হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না।

–আমাকে নামিয়ে দিন।আমি যাব।

–এইবার পথে আসো।বলে-ই অধরাকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো।অধরা আর আহান’কে একসাথে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো।সবাই মিলে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।বাসায় এসে সবাই মিলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আহান ফ্রেশ হয়ে অধরা’র পাশে বসতে-ই অধরা দূরে সরে গেলো।

–দেখুন আপনার সাথে আসছি।তারমানে এই না যে,আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি।একদম আমার কাছে আসবেন না।

–তুমি বললে-ই আমি শুনবো নাকি।

–না শুনলে আমি আবার চলে যাব।

–ঠ্যাং ভেঙ্গে দিব।

–সাহস থাকলে দিয়ে দেখান।

–তুমি আমার সাহস দেখতে চাও।বলে-ই অধরা’র দিকে এগোতে লাগলো।কিছু একটা মনে করে বাহিরে চলে গেলো আহান।একটু পরে হাতে অনেক গুলো গোলাপ ফুল নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।সেগুলো অধরা’র সামনে ধরে বলল।

–সরি বউ মাফ করে দাও।এই যে,তোমাকে ভালোবাসে এতগুলো ফুল দিচ্ছি।প্লিজ আহানের বউ গলে যা-ও।

–সময় হলে,একা-ই কমে যাবে।এত তেল দেওয়ার দরকার নেই আহান।বলল তিতলি।

–তিতলি মানুষের মনে আঘাত দিয়ে কথা বলা ছেড়ে দে।দু’দিন পরে তুই’ও শশুর বাড়ি যাবি।আল্লাহ না করুক।তোর সাথে’ও যদি এমন টা হয়।তখন তুই কি করবি।স্বামী হয়ে যদি বউয়ের রাগ ভাঙাতে না পারে।তাহলে আহানের স্বামী হবার কোনো যোগ্যতা নেই।বলল তিতির

–নিজের বোন হয়ে আমাকে অভিশাপ দিচ্ছিস।

–আপু বাদ দাও।তিতলি আপু অনেক ভালো।পারে-ই শুধু অন্যের ক্ষতি করতে।বলে-ই অধরা বাহিরে চলে গেলো।

সন্ধ্যা বেলা সবাই মিলে শপিং মলে গেলো বিয়ের শপিং করতে।শপিং মনে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো।কাকে দেখছে সে”?

চলবে….

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_২৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

নিজের মেজো খালা’কে বহুবছর পরে বাংলাদেশে দেখে,নিজে’র চোখকে’ও বিশ্বাস করতে পারছে না অধরা।যে,করে-ই হোক না কেনো।আজ খালা’কে ধরতে-ই হবে।বহুবছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন উনি।আজ যখন চোখের সামনে পেয়েছি,কিছুেত-ই ছাড়বো না।আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর ওনাকে দিতে হবে।বলে-ই দৌড়ে তার মেজো খালার কাছে গেলেন।খপ করে তার খালার হাত শক্ত করে ধরলো।হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে সামনের দিকে তাকালো শারমিন বেগম।অধরা’কে দেখে চমকে উঠলো।

–অধরা তুই”?

অধরা’র মুখে তৃপ্তি’র হাসি।তবু’ও জেনে’ও না,জানার ভান ধরে বলল।

–খালামনি তুমি এখানে,জানো তোমাকে কোথায় কোথায় খুঁজেছি।এতদিন কোথায় ছিলে,তুৃমি কি নানির সাথে দেখা করছো।

অধরা’র খালা,কোনো কথা না বলে অধরা’র চুলগুলো নিজে’র হাতের মুঠোয় পুরে নিলো।খুব শক্ত ভাবে-ই ধরেছে অধরা’র চুল গুলো।

–খালামনি কি করছো।ছাড়ো চুলে ব্যাথা পাচ্ছি তো।তুমি আমার চুল ধরছো কেনো।

–একদম নাটক করবি না।তুই ইচ্ছে করে আমাকে গর্ত থেকে বের করছিস তাই না।সাপের সাথে খেলতে আসিস না অধরা।একবার যদি দাঁত বসিয়ে দেই।সয্য করতে পারবি না।ছটফট করতে করতে মরবি।

–তোমার মাথা খারাপ হয়ে খালামনি।তুমি আমাকে ছোট থেকে নিজের হাতে মানুষ করছো।আর আমি তোমার সাথে গেম খেলবো।তোমার মনে আছে,আমরা সাপ লুডু খেলতাম।চলো তুমি চলে এসেছো।আবার জমিয়ে খেলা হবে।বলে-ই নিজের চুলগুলো শারমিন বেগমের থেকে,ছাড়িয়ে নিলো।তারপরে শারমিন বেগমে’র এক হাত উল্টো করে ধরলো।ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো শারমিন বেগম।

–অধরা ছাড় আমার লাগছে।আমি তোর খালামনি হয়।তুই আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস।ছোট বেলা থেকে বড় করেছি তোকে।তার প্রতিদান এভাবে দিচ্ছিস।

–এর থেকে’ও বেশি কষ্ট।তুমি নিজে’র বোন’কে দাও।তোমার তখন বিবেকে বাঁধা দেয় না।তোমার বড় বোনের কোমরের বাম পাশে দেখো এখনো কালো দাগ হয়ে আছে।কেনো হয়েছে জানো তোমাকে ছোট বেলায় কোলে নিতে নিতে কড়া পড়ে গেছে।তুুমি সেই বোন’কে কষ্ট দিতে পারছো।আমি তোমাকে এতটুকু দিতে পারবো না।তাছাড়া তুমি ডক্টর নিজের চিকিৎসা নিজে করে নিতে পারবে।বারতি টাকা খরচ হবে না।

–অধরা”!

–গলা নামিয়ে কথা বলো”।অধরা’র সামনে কেউ উঁচু গলায় কথা বলে না।আর যে,বলে তার গলা-ই থাকে না।এখন তুমি চিন্তা করো।তোমার গলা রাখবে কি না।

–অধরা মা আমার বলছিলাম কি।

–কোনো কথা শুনতে চাই না।তাড়াতাড়ি বলো আমার বাবা-মা কোথায়।

–আমি জানি না।

–আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না।তুমি আমার খালামনি হও তাই না।তোমার সাথে আমি খারাপ কিছু করতে পারি।

–অধরা তুমি এখানে কি করছো।ওনার হাত ওভাবে ধরে আছো কেনো।ব্যাথা পাচ্ছেন উনি।আহান কথা গুলো বলছিলো।এই সুযোগে শারমিন বেগম।অধরা’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।তারপরে দৌড়ে পালালো।

–আপনি আসার আর সময় পেলেন না।সব সময় ভুল জায়গায় ভুল সময়ে চলে আসেন।কতদিন পরে সাপলুডু খেলা খেল ছিলাম।আপনার জন্য খেলা’টা শেষ করতে পারলাম না।কোনো ব্যাপার না সবে শুরু আবার খেলা শুরু করবো।

–কি সব বলছো।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।কে ছিলেন মহিলা’টি।

–পাগল”!

–সত্যি করে করে বলো।

–আমি আপনার সাথে মজা করছি।

–আহান বেইবি তুমি এখানে কি করছো।আমরা চলে এসেছি।চলো সবাই কত জামাকাপড় কিনছে।আমরা’ও কিনবো।আজ’কে সব জামাকাপড় তোমার পছন্দে কিনবো।বলল রুহি।

–ওলে আহান বেইবি।সকালে ফিডার খাইছিলে বাবু।বলল অধরা।

রুহি রাগী দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকালো।অধরা সে,দিকে পাত্তা না দিয়ে,আহানের হাত ধরে টানতে টানতে রুহির কাছে থেকে চলে আসলো।

–তুমি আমার আহান’কে আমার কাছে থেকে-ই নিয়ে চলে গেলে।তোমাকে আর আহান’কে যদি আলাদা করতে না পারি।তাহলে আমার নাম’ও রুহি না।বলে-ই সবার দিকে এগিয়ে গেলো।এঙ্গেজমন্টের তিতলি আর বীরের কথা,দেখা কোনো টাই হয় নাই।আজ’কে বীর’কে দেখে তিতলি খুব খুশি হয়েছে।অনেক দিন পরে বীর’কে দেখে তিতলির মনের মধ্যে শান্তি লাগছে।বীরের পাশে পাশে হাটছে তিতলি।বীর একবারো তাকায়নি তিতলি’র দিকে।

–তুমি আমাকে নিয়ে চলে আসলে কেনো।

–আপনি আমাকে তিতির আপুর বাসা থেকে নিয়ে আসলেন কেনো।

–আমার বউ আমার ইচ্ছে হয়েছে।তাই নিয়ে এসেছি।কোনো সমস্যা।

–আমার জামাই আমার ইচ্ছে হয়েছে।তাই আমি নিয়ে এসছি।তাহলে আপনি কেনো এত প্যাক প্যাক করছেন।

–কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা।আমি কি হাঁস নাকি।যে,প্যাক প্যাক করবো।

–হাঁসের থেকে কোনো অংশে কম না।আর একটা কথা বললে,শপিং মলে-ই মারামারি শুরু করে দিব।

–শপিং করতে এসে’ও ঝগড়া।অধরা এদিকে আসো এই শাড়ি টা দেখো তো কেমন লাগছে।তোমার গায়ে সুন্দর মানাবে।এটা আমি তোমার জন্য পছন্দ করেছি।বলল তিতর।

–আপু এটা তো অনেক সুন্দর।আমার খুব পছন্দ হয়েছে।আমার লালা টুকটুকে শাড়ির অনেক দিনের শখ জানো আপু।এটা-ই আমি নিব।

–তাহলে তোমার জন্য নিয়ে নিলাম এটা।

–না আপু,এটা অধরা’কে একদম মানাবে না।একদম বাজ লাগছে।এত টাকা দিয়ে ওকে শাড়ি কিনে দেওয়া লাগবে না।যা-ও গিয়ে রেখে দাও।

–তোকে ধরে কয়টা লাগিয়ে দিব।বেশি কথা বলতে শিখে গেছিস তাই না।এটা অধরা’র জন্য-ই নিব।

–শাড়িটা’র দাম দেখছো পনেরো হাজার টাকা।এত টাকা দামের শাড়ি সামলাতে পারবে না।এটা আমাকে দাও।আমি বরং আমার ফ্রেন্ড’কে এটা গিফট করে দেই।

হুট করে কোথায় থেকে জানি,রুহি এসে শাড়ি’টা অধরা’র হাতে থেকে কেঁড়ে নিয়ে বলল।

–এটা পড়লে আমাকে মানাবে।খুব সুন্দর শাড়ি।এটা আমি নিব আপু।বলল রুহি।

–আপু শাড়ি’টা আমি অধরা’র জন্য নিয়েছি।বলল তিতির।

–অধরা’র জন্য অন্য শাড়ি পছন্দ করে না-ও।

তিতির কিছু বলতে যাবে।তখনি অধরা থামিয়ে দিয়ে বলল।

–থাক আপু কিছু বলা লাগবে না।সত্যি রুহি আপু’কে সুন্দর লাগছে।কেউ হয়তো রুহি আপুকে-ই শাড়ি’টা গিফট করতে চেয়েছিল।এমনিতে-ই শাড়ি আমি পড়ি না।তিতলি আপুর জন্য কি নিলে,চলো দেখবো।

–হ্যাঁ রুহি শাড়িটা তুমি রেখে দাও।তোমাকে-ই ভালো লাগবে।

তিতির রাগী দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো।তারপরে অধরা’কে বলল।

–তুৃমি রাগ করো না।আমি তোমাকে আরেক’টা শাড়ি নিয়ে দিচ্ছি।

–আমার লাগবে না।বাসায় অনেক শাড়ি ওগুলো-ই পড়া হয় নাই।চলো তোমরা শপিং করবে।আমি পছন্দ করে দিব।বলে-ই দু’জন চলে গেলো।অধরা চলে যেতে-ই আহান রুহির হাতে থেকে শাড়ি’টা কেঁড়ে নিয়ে বলল।

–দে,শাঁকচুন্নি।আমার বউয়ের শাড়ি।আমার বউ কত পছন্দ করেছে।শখ কতো,আমার বউয়ের শাড়ি নিবে।তোর কোনো যোগ্যতা আছে,এই শাড়ি পড়ার।বাজে মেয়ে একটা।আমার আশপাশে দেখলে খবর আছে।বলে-ই গটগট করে আহান চলে গেলো।তিতির বিভিন্ন রকমের শাড়ি দেখাচ্ছে।অধরা’র শরীরে ধরে দেখছে কেমন লাগে।কালো আর কলাপাতা রংয়ের দু’টো শাড়ি অধরা’র শরীরে ধরলো।বেশ মানিয়েছে অধরা’র শরীরে।তা দেখে আহান ঝটপট বলে ফেললো।

–মামা এই দু’টো শাড়ি আমাকে প্যাক করে দিন।আমার ফ্রেন্ড’কে উপহার দিব।তিতির রেগে বলল।

–তোর বান্ধবী কে”?কতো শাড়ি দেওয়া লাগে”!যেটা-ই অধরা’র জন্য পছন্দ করছি।সেই শাড়িটা-ই তোর বান্ধবীর জন্য নেওয়া লাগছে।

–এই দুটো-ই শেষ আর নিব না।

–আমি তোকে দিব না।এগুলো অধরা’র।তুই অন্য শাড়ি কিনে দে।

–না আমি এগুলো-ই দিব।

অধরা বিরক্ত হয়ে,সেখানে থেকে চলে গেলো।অধরা ঘুরে ঘুরে পুরো শপিং মল দেখছিলো।তখনি পেছনে থেকে বীর ডাক দিলো।

–অধরা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

–আসার পরে থেকে আমার সাথে একটা কথা বললে না।এদিকে আমার ছোট ভাইয়ের বউকে ডেকে ঠিকি কথা বলছো বীর।বলল তিতলি।

–আমার যার সাথে ইচ্ছে,আমি তার সাথে কথা বলবো।তুমি কিছু বলতে পারবে না।এখনো তুমি আমার বউ হও নাই।

–বীর তুমি আমার সাথে সব সময় এমন করো কেনো।

অধরা ওদের মাঝখানে থেকে চলে গেলো।

অন্ধকার রুমের মধ্যে।ভারি দেহের একটি লোক’কে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলছে।তবু’ও দাঁতের ফাঁক দিয়ে একটা কথা’ও বের করছে না।তখনি ভেতরে প্রবেশ করে সাইকো কুইন।কুইন’কে দেখে লোকটি’র আত্মা কেঁপে গেলো।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে লোকটি’র।

কালো রংয়ের ওনার দিয়ে পুরো মুখ ঢাকা কুইনে’র।চোখে কালো রংয়ের সানগ্লাস পড়া।ধীর পায়ে লোকটি’র কাছে এগিয়ে এসে নিচে বসলো কুইন।

–তোর কলিজা খুব বড়।তোর সাহস আমাকে খুব মুগ্ধ করেছে।এমন বিশ্বস্ত লোক আমার খুব দরকার।এই চাকু টা দে তো।কুইন হুকুম করার সাথে সাথে চাকু নিজে হাজির হলো।

–ম্যাডাম আপনার চাকু।

–এটা আমার হাতে দে,লবণ আর মরিচের গুঁড়ো নিয়ে আয়।চুলায় গরম পানি বাসাতে দে।বেচারা’কে অনেক মেরেছিস তোরা।এভাবে কেউ কাউকে মারে,তোরা কি মানুষ নাকি অমানুষ রে।

কুইনের এমন শান্ত ভাবে কথা বলা দেখে,ভয়ে সবার হাত পা কাঁপছে।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।কথা বলার শক্তি হারিয়ে আসছে।কুইন কখনো এতটা শান্ত থাকার মতো মেয়ে না।ঝড় আসার আগে,পরিবেশ শান্ত থাকে।তবে আসার পূর্বাভাস।লোকটি ভয়ার্ত চেহারায় কুইনে’র দিকে তাকিয়ে আছে।কুইন সে,দিকে পাত্তা না দিয়ে।লোকটির পা কাটতে শুরু করলো।নিমিষে-ই পায়ের মধ্যে চারবার চাকু ছুঁইয়ে দিলো।লোকটির পা থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করলো।লবন আর মরিচের গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে।লোকটির পায়ে চেপে ধরলো।সাথে সাথে লোক’টি গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে লাগলো।চিৎকার করছে লোকটি।বারবার মাফ চাইছে।কিন্তু কুইনের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।

–তোরা দেখছি খুব খারাপ মানুষ দেখছিস।একটা মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।যা গিয়ে পানি নিয়ে আয়।একজন লোক দৌড়ে গিয়ে টগবগে গরম পানি নিয়ে আসলো।কাঁপা কাঁপা হাতে কুইনের দিকে এগিয়ে দিলো।

–অনেক ব্যাথা করছে তাই না।এখনি কমে যাবে।পানি দিয়ে আমি ঠান্ডা করে দিচ্ছি।কে কোথায় আছিস তাড়াতাড়ি লেবু দিয়ে যা,দেখছিস না।উনি কতটা কষ্ট পাচ্ছেন।আমি আবার মানুষের কষ্ট সয্য করতে পারি না।

–আমি আর পারছি না।আমারকে গরম পানি দিবেন না।আমি বলছি ওরা কোথায় আছে।ওরা আমেরিকায় আছে।শুধু ওরা দু’জন না।তিনজন আছে।

লোকটির কোথায় কুইন ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

–তিনজন মানে,আচ্ছা ওটা আমি পরে বুঝে নিব।তুই শুধু শুধু এতগুলো দিন মার খেলি।আমাকে তোর সামনে নিয়ে আসলি।তবে-ই মুখ খুললি।আমাকে এভাবে হয়রানি করালি।এখন তোকে কি শাস্তি দিব বলো।

–আমাকে শাস্তি দিবেন না।আমি তো সব সত্যি কথা বলে-ই দিলাম।

–আমাদের মধ্যে থেকে কেউ আমাদের সাথে বেইমানি করছে।কে করছে”?জানতে পারলে তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো আমি।আজকের ঘটনা।আমাদের মধ্যে থেকে যদি বাহিরে যায়।তোদের সবার মুখ চিনে রাখলাম।সবগুলো’কে শেষ করে ফেলবো।বলে-ই কুইন বেড়োতে যাবে।তখনি বীরের সাথে ধাক্কা খায়।কুইন বীরের কলার চেপে ধরে বলে।

–কুত্তার বাচ্চা তোকে আমি,কাজের জন্য চৌধুরীতে পাঠিয়েছি।তুই চৌধুরী বাড়িতে গিয়ে প্রেম আলাপ শুরু করেছিস।

–আজ-কাল আমাকে রেখে-ই কাজ করছেন।

কুইন কোনো কথা বলল না।এক প্রকার দৌড়ে চলে গেলো।

অধরা শপিং মলের বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে আছে।আহান এসে অধরা’র পাশে দাঁড়ালো।দু-হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ।

–আহানের বউ বলছিলাম কি,আহানের এতগুলো ব্যাগ টানতে সমস্যা হচ্ছে।তুমি যদি সাহায্য করতে,তাহলে আহানে’র খুব উপকার হতো।

অধরা মন খারাপ করে আহানের হাতে থেকে ব্যাগ গুলো ধরলো।শপিং করে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়েছে।সবাই এসে ফ্রেশ হয়ে।খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে গেছে।সবাই বড্ড ক্লান্ত।

আহান রুমে এসে দেখলো অধরা রুমে নেই।পুরো অবাক হয়ে গেলো আহান।এত রাতে মেয়েটা গেলো কোথায়।

চলবে…..