#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১১
রক্তিম সোফায় বসে আছে তার চারপাশ জুড়ে নানান হৈচৈ কাছের মানুষ গুলো ছাড়া আর কাউকেই ইনভাইট করা হয়নি।দিবার পরিবার কেও ইনভাইট করা হয়েছে কিন্তু তারা কেউই আসে নি এতে রক্তিমের মা অনেক খুশি হয়েছে।সে তো তাদের ইনভিটেশনই দিতে চাইনি শুধুমাত্র স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে সে রাজি হয়েছিলো।রক্তিমের মা অধরার রুমে চলে গেলো অধরা তাকে দেখে সালাম দিলো রক্তিমের মা অধরার সামনে বসে ব্যাগ থেকে গহনার বক্স বের করে এক এক করে সব অধরাকে পরিয়ে দিয়ে বললেন,
~এখন লাগছে একদম বউয়ের মতো।
অধরা মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেললো রক্তিমের মা রুম থেকে বের হয়ে আসলো আর সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
~শুভ কাজে আর দেরি করে লাভ নেই বিয়েটা হয়ে যাওয়া ভালো।
সবাই তার কথায় একমত পোষণ করলো কাজী সাহেব অধরার কাছে চলে গেলো সব নিয়ম কানুন শেষ করে কাজী সাহেব অধরাকে বললেন,
~কবুল বলুন মা জননী।
“কবুল” শব্দটা শুনে অধরার মনে এক অজানা শিহরণ বয়ে গেলো তার মুখ দিয়ে যেন কোনো শব্দ বের হতে চাইছেনা।চোখ বেয়ে টুপ করে পানি পরতে শুরু অধরার মা আর তন্নি তার পাশে বসে পরলো।অধরার মা অধরার হাত ধরে বললেন,
~অধরা,আমি জানি তোর মনে এখন কী চলছে এই পরিস্থিতি যে আমিও পার করে এসেছি কিন্তু মা রক্তিম যে তোর অপেক্ষায় আছে। সে যে ব্যাকুল নয়নে তোর জন্য অপেক্ষা করছে ওকে এভাবে কষ্ট দিস না কবুলটা বলে দে।
অধরা মায়ের হাত ধরে এক দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে বললো,
~কবুল,কবুল,কবুল।
অধরার কবুল বলা শেষে সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ বলে রক্তিমের কাছে চলে যায়।অধরা তার মাকে ধরে কেঁদে উঠে আর বলে,
~আমাকে তোমরা ভু/লে যেওনা।
অধরার মা তার চোখ মুছিয়ে বললেন,
~পা/গ/লী মেয়ে আমার তোকে কেন আমরা ভু/লে যাবো।
রক্তিমের কাছে কাজী সাহেব বসে আছে সব নিয়ম মেনে সে রক্তিমকে বললেন,
~কবুল বলুন বাবা।
রক্তিম এক মিনিটও সময় ব্যয় না করে বলে উঠলো,
~কবুল,কবুল,কবুল।
সবাই হেসে উঠলো রক্তিমের কান্ডে অবশেষে রক্তিম আর অধরার বিয়ে হয়ে গেলো কোনো বাধাই তাদের মাঝে আসতে পারেনি।রক্তিমের বাবা অধরার বাবার হাত ধরে বললেন,
~আমরা এখন আমাদের পুত্রবধুকে নিয়ে যেতে চাই।
অধরার বাবা মাথা দুলিয়ে বললেন,
~আমার মেয়ের খেয়াল রাখিস কোনো ভু/ল হলে ছোট হিসেবে ওকে ক্ষমা করে দিস।
রক্তিমের বাবা বললেন,
~তুই এসব কী বলছিস?আমার মেয়ে নেই আমার দুই ছেলের বউই আমার মেয়ে হয়ে থাকবে।আমার আবার মেয়ের অনেক ইচ্ছে ছিলো কিন্তু দেয়নি আল্লাহ এই দুই বি/চ্ছু/কে দিয়েছে আমাকে জ্বা/লি/য়ে মা/রে।
রক্তিমের বাবার কথায় রাত মুখ ফুলিয়ে বললো,
~আমরা তোমাকে জ্বা/লি/য়ে মা/রি এক কথা তুমি আমাদের বলতে পারলে।
রাতের কথা শুনে তারা দুজনই হেসে উঠলো অধরাকে তন্নি নিজ হাতে খাইয়ে দিলো খাওয়া শেষ হতেই অধরার মা রুমে চলে আসলেন আর বললেন,
~বিদায়ের সময় হয়ে গেছে অধরার লাগেজ গুলো রাত এসে পরে নিয়ে যাবে।
বলা শেষ করে অধরার মা অধরার কাছে এসে বললেন,
~আজ থেকে তোর নতুন একটা সংসার শুরু হবে তুই সবাইকে আপন করে নিবি কোনো কিছু যদি না বুঝতে পারিস তোর শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করবি তার পরার্মশ নিবি।দেখবি সব ঠিকঠাক মতো শিখে যাবি আমি জানি আমার মেয়ের মনটা কতো ভালো।
অধরা তার মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো তন্নিও তাদের জড়িয়ে ধরলো।বিপত্তি ঘটলো যাওয়ার সময় অধরা হুইল চেয়ার করে শশুড় বাড়ি যাবে না নিজেই ধীরে ধীরে নিচে নামবে বলে জেদ ধরে বসলো।সবাই তাকে বুঝাতে ব্যস্ত কিন্তু সে মানতে না/রা/জ তখনই রক্তিম রুমে প্রবেশ করলো আর বললো,
~আর কোনো চেঁচামেচি করার দরকার নেই আমার কাছে সমাধান আছে।
বলেই রক্তিম অধরার কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো সবাই হা হয়ে আছে রক্তিমের কান্ডে।রক্তিম অধরাকে নিয়ে সোজা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো বাকিরা মুখ টিপে হেসে অধরার বাসার সবার থেকে বিদায় নিয়ে নেমে গেলো।রক্তিম অধরাকে নিয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে অধরা মুখ ফুলিয়ে বললো,
~আপনি এটা কী করলেন?
রক্তিম বললো,
~কী করেছি?
অধরা বললো,
~অ/স/ভ্যে/র মতো আমাকে কোলে তুলে নিলেন সবার সামনে।
রক্তিম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
~এতে কী হয়েছে তুমি আমার বউ আমি কোলে নিবো না তো কে নিবে?
তখনই রক্তিমের মা চলে আসলেন আর বললেন,
~সরি চাবি আমার কাছে ছিলো।
রক্তিমের মা দরজা খুলতেই রক্তিম বাসায় প্রবেশ করলেন রক্তিম অধরাকে সোফায় বসিয়ে দিলো।রক্তিম তার পাশে বসে পরলো আর হাত ঝা/ড়া দিয়ে বললো,
~অধরা তুমি কিন্তু মোটা হয়ে গেছো কিন্তু কোনো সমস্যা নেই আমার আবার গোলুমলু তুমিটা পছন্দ।
অধরা রে/গে গিয়ে বললো,
~আমি মোটা তাই না আমার কাছে আসবেন না।
রক্তিম বললো,
~তুমি বললেই চলবে নাকি আমার বউ যা ইচ্ছে তাই করবো।
অধরা আর কোনো কথা না বলে নাক ফুলিয়ে অন্য সাইডে তাকিয়ে রইলো।রাত আর তার বাবা বাসায় চলে আসলো বাকি মেহমান নিজ নিজ বাসায় চলে গিয়েছে।রক্তিমের বাবা অধরার উদ্দেশ্যে বললেন,
~অধরা,তুমি মন ছোট করো না তুমি যখন সুস্থ হয়ে উঠবে তখন অনেক বড় করে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।তোমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে শপিং করবে একদম পার্ফেক্ট একটা ওয়েডিং হবে তুমি চিন্তা করো না।
অধরা বললো,
~না না আঙ্কেল আমি মন ছোট করিনি আল্লাহর যেটা ইচ্ছে সেটাই হয়েছে।
রক্তিমের বাবা বললেন,
~কে তোমার আঙ্কেল?আমি তো তোমার বাবা।
অধরা মুচকি হেসে বললো,
~হ্যাঁ বাবা।
রক্তিমের মা এসে বললেন,
~এতক্ষন এভাবে ওকে বসিয়ে রেখো না রক্তিম ওকে ঘরে নিয়ে যা।
রক্তিম অধরাকে আবার কোলে তুলে নিলো আর নিজ রুমের দিকে চলে আসলো।রুমের সামনে এসে দেখলো দরজায় তালা ঝুলছে রক্তিম বললো,
~ঘরের দরজায় তালা কেন?
তখনই রাত আর তন্নি সেখানে এসে উপস্থিত হয় তাদের দেখে রক্তিম বললো,
~এসব কী তোদের কারসাজি?
রাত আর তন্নি মাথা দুলালো অধরা বললো,
~তোরা এসব কী শুরু করেছিস?
তন্নি বললো,
~টাকা দিলে চাবি দিয়ে দিবো নাহলে সারারাত আপুকে কোলে নিয়ে থাকতে হবে।
রক্তিম বললো,
~এতে আমার কোনো সমস্যা নেই সোজা চলে যাবো ছাদে দুজন
মিলে ছাদ বিলাস করবো।
রাত গলা পরিষ্কার করে বললো,
~ছাদেও তালা মা/রা।
রক্তিম বললো,
~তাহলে বাবা-মার রুমে চলে যাই।
বলেই সে পা বাড়ালো সেদিকে রাত আর তন্নি তাদের সামনে দাড়ালো রাত বললো,
~ভাইয়া এতো কষ্ট করে রুমটা সাজিয়েছি একটু ট্রিট তো পেতেই পারি।
রক্তিম একটু ভাবুক হয়ে বললো,
~পকেটে ৫০০০ টাকা আছে নিয়ে নে।
রাত আর দেরি না করে পকেট থেকে টাকাটা নিয়ে নিলো তন্নি চাবি বের করে রুমটা খুলে দিলো।রক্তিম রুমে প্রবেশ করলো অধরা চারপাশ চোখ বুলিয়ে দেখলো আসলেই রুমটা তারা বেশ সাজিয়েছে।বেলিফুলের ঘ্রাণে সারা ঘর মো মো করছে রক্তিম অধরাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে এসিটা চালু করে দিলো।অধরা রক্তিমকে বললো,
~তন্নি কে একটু ডেকে দিবেন।
রক্তিম বললো,
~তন্নিকে দিয়ে কী করবে?
অধরা বললো,
~আসলে শাড়িটা বদলিয়ে ফেলতাম আমি তো একা একা পারবোনা।
রক্তিম বা/কা হেসে বললো,
~তন্নির কী প্রয়োজন আমিই করে দিচ্ছি।
অধরা অবাক হয়ে বললো,
~আপনি তো দিন দিন অ/স/ভ্য হয়ে যাচ্ছেন।
রক্তিম অধরার দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বললো,
~এতে অ/স/ভ্যে/র কী আছে আ’ফ টা’র অ’ল আ’ই এ’ম ইউর হাসবেন্ড।
অধরা চোখ বড় বড় করে বললো,
~একদম আমার কাছে আসবেন না আমি জোরে চিৎকার করবো।
রক্তিম অধরার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো অধরা রক্তিমের হাসি দেখে গা জ্ব/লে উঠলো।রক্তিম কার্বাড থেকে টাওয়াল আর নিজের জিনিস পত্র বের করে দরজার সামনে এসে বললো,
~তন্নিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
বলেই সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো অধরা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~অ/স/ভ্য লোকটা লজ্জা না দিলে ভালো লাগে না তার।
চলবে