#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৫
____________________________
মিসেস আফিয়া চলে গেছেন।ইরা এসেছিল সূচনাকে খায়িয়ে দিয়ে,কিয়ৎপরিমাণ কথাও হয়েছে তাদের।সে ফাকে প্রণয় ফ্রেশ হয়ে এসেছে।বর্তমানে সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে আছে প্রণয়।আর সূচনা বিছানায় বসে তাকিয়ে আছে তার দিকে।চোখের সামনে এখনো ভাসছে মূহুর্তগুলো।অতীত পিছু ছাড়ে না তা জানে সূচনা,কিন্তু তার যে পুনরাবৃত্তি ও ঘটে তা অনুধাবন করল আজকে। তার সাথে খারা/প কিছু হয়নি।নিষাদের কথা মনে পড়তেই গা ঘিনঘি/ন করছে সূচনার।জ্ঞান না হারালে হয়তো,,আচ্ছা তাকে প্রথম কে দেখেছিল সেন্স লেস অবস্থায়?প্রণয়?রুমে এসেছিল কে?আর কখন?কতক্ষণ পড়েছিল এখানে?এখনই বা কয়টা বাজে?এত সবকিছুর মধ্যে সময় পরখ করতেও মনে নেই। শরীরে জড়ানো মোটা, ভারী কম্বল টা সরিয়ে উঠতে নিলেই আঁ/তকে উঠলো।তার পড়নে পিংক কালারের লং টি-শার্ট আর কালো রঙ এর প্লাজু।এতক্ষণে তার খেয়ালই হয়নি,তার ড্রেস চেঞ্জ করল কে? ফট করে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো সূচনা। ধ্যান ভাঙলো প্রণয়ের।তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘কী হয়েছে? এভাবে উঠে দাড়ালে কেন?
নিজের কাজে সূচনা নিজেই ল/জ্জা পেল খানিক। আমতা আমতা করে বললো-
–‘কিছু না।
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে সোফায় যেয়ে বসলো প্রণয়ের পাশে। প্রণয় প্রতিক্রিয়া দেখাল না তেমন একটা। দুজনের মাঝে থাকা কিঞ্চিৎ পরিমাণ দূরত্বের ইতি টানল সূচনা।একদম গা ঘেষে বসল প্রণয়ের। প্রণয় হতবিহ্বলের ন্যায় ঠাই বসে রইলো।সূচনা ও প্রণয়ের কাধের সাথে কাধ ঠেকিয়ে বসে আছে চুপচাপ। সূচনার গা গর/ম এখনো।তা দেখে প্রণয় চিবিয়ে চিবিয়ে বললো-
–‘ জ্বর কমেনি এখনো, এখানে এসে বসলে কেন? ঠান্ডা লাগবে।
সূচনা সহসা জবাব দিল-
–‘লাগবে না।
–‘ বললাম না ঠান্ডা লাগবে যাও
–‘যাবনা।
–‘কেন?
–‘আমার প্রশ্ন আছে কিছু, উত্তর দিন।
প্রণয় স্বাভাবিক গলায় ই জিজ্ঞেস করলো-
–‘কী প্রশ্ন?
সূচনা নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো-
–‘ আমি যে রুমে ছিলাম সেন্সলেস হয়ে সেটা প্রথম কে দেখেছে?
–‘আমি,, কেন?
–‘আপনি রুমে কেন আসলেন?আপনি তো ছাদে ছিলেন।কিভাবে জানলেন আমি রুমে ছিলাম?
–‘আমার রুম আমি আসব না?
–‘আহা,সত্যি কথা বলুন।
–‘ইরা বলেছে।তুমি ছাদ থেকে নামার দশ কি পনেরো মিনিট পরই হবে,তোমাকে ছাদে না দেখে খুঁজছিলাম, তখন ইরা বললো রুমে। তাই রুমে এসেছিলাম।
–‘ তারপর?
–‘কী তারপর? তারপর সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলে,ফ্লোর থেকে উঠিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে পানির ঝাপ্টা দিলাম,আর তখন সেন্স এসেছে,আর চিৎকা/র দিয়ে উঠেছ।আচ্ছা চিৎ/কার দিয়েছিলে কেন বলোতো?খারা/প স্বপ্ন দেখেছিলে?
প্রণয়ের প্রশ্ন শুনেই মুখশ্রীতে মলিনতা এসে ভীড় করল সূচনার। অস্ফুটস্বরে বললো-
–‘না।
–‘তাহলে?
–‘ আসলে,,,
–‘ওয়েট তন্ময় ফোন দিয়েছে বোধহয়। একটু বসতে পারবে না একা?
সূচনা ছোট্ট করে বললো-
–‘হুম।
ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল প্রণয়।
.
.
–‘ হ্যা তন্ময় বলো।
–‘স্যার ও এসেছে আপনি আসবেন না?
–‘আসব,, একটু অপেক্ষা করো।
–‘ঠিক আছে স্যার।
কল কেটে দিয়ে আবার ও রুমে আসলো প্রণয়। সূচনা সোফাতে পা উঠিয়ে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। এই মুহূর্তে একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে থাকে।এলোমেলো চুল,পড়নের টি-শার্ট টাও একদিক দিয়ে উঠে আছে, গায়ে ওড়নাও নেই।সে দিকে খেয়ালই নেই তার,থাকলে এতক্ষণে কেমন রিয়েক্ট করত কে জানে। প্রণয় কিঞ্চিৎ হাসল।সূচনার সামনে যেয়ে দাড়ালো। তারপর বললো-
–‘ অনেক রাত হয়ে গেছে এবার ঘুমাও। আমিও ক্লান্ত অনেক।
–‘ কয়টা বাজে?
–‘বারটার বেশি হবে।
–‘ওহ,,কিন্তু আমার উত্তর?
–‘দিলামই তো।
–‘আপনি এত স্বাভাবিক আচরণ করছেন? কিছু বলবেন না? করবেন না কিছু?
–‘কি করব? আর আমার অস্বাভাবিক আচরণ করার কী কথা?
–‘ যদি কিছু হয়ে যেত?
–‘ সেই দুঃসা/হস দেখানোর মতো সাহস তার নেই আর না হবে।
–‘ মুখে বললেই হয়ে যায়?
–‘ হতে হবে।
–‘ যদি অন্য কারো সাথে ও এমন করে?
–‘সেই ভাবনা তার মাথায়ও আসবে না।
–‘মানে?
–‘কিছু না।
–‘আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।
–‘ সময় হলে এমনি বুঝবে।
সূচনা হার মান/ল যেন। হতাশ গলায় বললো –
–‘আপনি অদ্ভুত।
–‘ হয়ে গেছি।
–‘আগে ছিলেন না?
–‘নাহ।
–‘ কারণ কী?
–‘বলব একদিন,সঠিক সময়ে আপনাআপনি সব ধরা দিবে তোমার সামনে।এখন চলো ঘুমাও তাড়াতাড়ি।
দুজনের সহজ কথোপকথন। সূচনাকে এক প্রকার জোর করে ই বিছানায় শুইয়ে দিল প্রণয়।বললো-
–‘ হালকা জ্বর আছে,,কাথায় হবে?
–‘হবে।
সূচনার গায়ে কাথা জড়িয়ে দিয়ে সে ও তার পাশে শুয়ে পড়ল। কোমল স্বরে বললো-
–‘তুমি ঘুমাও, আমি চুলে হাত বুলিয়ে দেই।
–‘হাত বুলিয়ে দিতে হবে না,, ঘুমিয়ে যাব আমি।আপনি ও ঘুমিয়ে পড়ুন।
–‘চুপচাপ ঘুমাও,আমার কাজ করতে দাও আমাকে।
–‘অভ্যাস হয়ে যাবে।
–‘সমস্যা নেই,,মে হু না,
প্রণের কথা শুনে প্রতিক্রিয়া দেখাল না সূচনা। তাকে হাসাতে প্রণয়ও হাসল তার দিকে তাকিয়ে।লাভের লাভ কিছু ই হলো না।তবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ই ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে সূচনা। এত তাড়াতাড়ি কেউ ঘুমাতে পারে? কী ঘুম রে ভাই।প্রণয় মনে মনে ভাবল কথাগুলো।
_______________________________
অন্ধকার রুমে বাইরের রাস্তার সোডিয়াম বাতির আবছা আলো এসে পড়েছে। সে আলোতে হালকা হলেও বোঝা যাচ্ছে ফ্লোরে পা ভেঙে বসে থাকা নিষাদের ভীত মুখশ্রী।তার সামনে দু’জন দাঁড়িয়ে।একজন তার একেবারে সামনে আরেকজন অনেকটা দূরেই।
সামনে থাকা ছেলেটার পড়নে অর্ধেক সাদা আর অর্ধেক কালো রঙ এর শেডের হুডি পড়, মুখে মাস্ক ও আছে, হুডির টুপি টাও টেনে দেয়া।তার পেছনে দাড়ানো ছেলেটার অবস্থা ও ঠিক এমনই,পার্থক্য শুধু হুডির রং এ।সে সম্পূর্ণ কালো রঙ এর হুডি পড়েছে।দুজনের ব্যবহার দেখে বোঝা যাচ্ছে সামনের জন তার পেছনের জনের বস।
সামনের ছেলেটা নিচু হয়ে নিষাদের শার্টের কলার চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
–‘ ওকে ছোয়ার সাহস হলো কী করে তোর?
নিষাদ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো-
–‘আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে কেন?
–‘আমার প্রশ্নের উত্তর এটা না।কোন সাহসে ছুয়েছিস?
–‘কা,,কার কথা বলছেন আপনি?আর আপনি কে?
–‘ আমি কে সেটা জানার পরে সত্যিটা এমনি চলে আসবে মুখে কিন্তু অত সময় আমার নেই, যে কাজে এসেছি সেটাই করি। নাকি দেখাব আমি কে?
–‘ হ্য,,,হ্যা দেখতে চাই,কার এত বড় সাহস আমাকে এভাবে এখানে ধরে নিয়ে আসার?
–‘ধরেই নিয়ে এসেছি বে/ধে তো রাখিনি। পা/লিয়ে কেন যেতে পারলিনা? সাহ/স হয় নি তাই না?
কিছু সনয় চুপ থেকে সামনের ছেলেটা হুট করেই হাসতে লাগল।হাসতে হাসতে তার পেছনের ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো-
–‘বুঝলে জুনিয়র, ইদানীং একটা জিনিস আমি খেয়াল করলাম যে তুমি আমার কাজগুলো সুন্দর করে নিজের আয়ত্তে আনছ,একদম আমার মতো করে শিখছ,করছো ঠিক যেমনটা আমি চাই। আই এম প্রাউড অফ ইউ মাই বয়।
–‘ সব আপনারই ক্রেডিট স্যার।
–‘তোমার কাছে খোলা হাত পায়ে থেকে, এমন তা/গড়া এক যুবক পালা/নোর সাহস করতে পারলনা।স্ট্রেন্জ রাইট?
–‘ সেটা কিভাবে পারবে স্যার, ঘুড়ির নাটাই যে আমাদের হাতে।চলে গেলে তো তারই বিপ/দ।
–‘ হ্যা,, তা ভিডিওটা কি আছে না ভাইরাল করে দিয়েছ?
–‘না স্যার,আপনার অনুমতি ছাড়া কিভাবে করব? এখনও আছে। স্যার আপনার মাথায় যে কিভাবে আসে?এত কিছু লক্ষ্য করেন কিভাবে সেটাই ভাবি
–‘ ভিডিওটা ভাইরাল করব না শাস্তি অন্য ভাবে দিব?
–‘অন্য ভাবে স্যার।
–‘ তার আগে সারপ্রাইজ টা দিয়ে নেই?
বলেই মুখে থাকা মাস্কটা খুলে ফেলল।নিষাদ যেন চম/কে উঠলো তাকে দেখে। কাপা কাপা কণ্ঠে শুধু উচ্চারণ করলো-
–‘প্র,,,
পুরো কথা,শেষ হওয়ার আগেই রুম কাপিয়ে চিৎকার করে উঠলো সে। লুটিয়ে পড়লো মাটিতে,ব্য/থায় আর্ত/নাদ করে উঠলো,তার বামহাত টার দিকে তাকিয়ে থেকে ছটফ/ট করতে লাগল।
ছেলেটা নিষাদের দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললো –
–‘তোর মতে নিচু মানসিকতার মানুষ না আমি যে একটা মেয়ের মান সম্মান নিয়ে খেলব সে যতই খা/রাপ হোক।তোর ফোনে তোর আর তোর গার্লফ্রেন্ড এর ইন্টি/মেট মূহুর্তের ক্লিপ গুলো আছে না সেগুলো তো আমরা দেখিওনি,জানতাম ওনা।তবে চ্যাট বক্সে ঢুকতেই জানতে পারলাম, বাজি/য়ে দেখার জন্য জুনিয়র বলেছিল সেই ভিডিওর কথা, আর অপ্রত্যাশিত ভাবে সেটাই সত্যি ছিল যার দরুন তুই স্ব ইচ্ছায় এখানে এসেছিস।ফোন দিয়ে দিলাম,ধর,,মেমোরি জি/রো।কিচ্ছু নেই,সব ডিলি/টেড।
পিছনে ঘুর তাকিয়ে বললো-
–‘জুনিয়র ওকে হসপিটালে পোঁছে দিও।
_____________________________
দুইহাত বু/কে গুজে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে প্রণয়।
রুমে সূচনা।বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে। মেডিসিনের এফেক্ট।গভীর রজনী,নিস্তব্ধ চারিপাশ, ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে নগরী, গাছের পাতায় যেন হাওয়ার ছোয়া মাত্র নেই।গুমোট সেই পরিস্থিতি তে একরাশ ভাবনা এসে ভর করেছে প্রণয়ের মন কুটিরে। লজ্জা আর অনুতপ্ততা দুটোই ঘিরে ধরেছে তাকে। লজ্জাবোধ টা নিজের দায়িত্বহীন তার জন্য। দায়িত্বহীন ই তো সে, তার স্ত্রী কে অন্য কেউ ছুঁয়েছে হোক সেটা শুধু হাত পর্যন্ত ই সীমাবদ্ধ। ছুঁয়েছে তো,বা/জে ভাবে। সে একা না ছাড়লে, আগে খেয়াল রাখলে তো এমন হত না। সূচনাকে যতটা সহজভাবে বলেছে বা বুঝিয়েছে সে মোটেও অতটা সহজ ভাবে নেয়নি। ইরাকে তখন ছাঁদে সূচনার কথা জিজ্ঞেস করেছিল, বলেছে রুমে গেছে সেজন্য ই তো রুমে এসেছিল। রুমে এসে যখন দেখল নিষাদকে তার রুম থেকে বের হতে তখনই বু/কে মোচড় দিয়েছিল প্রণয় এর। দৌড়ে গিয়েছিল রুমে, ফ্লোরে পড়েছিল সূচনা। তাকে ঔ অবস্থায় দেখে হৃদকোমলে অদ্ভুত রকমের অস্থিরতা টের পাচ্ছিল প্রণয়।তার কারণ সে জানে না, জানতে ইচ্ছুক ও না।তবে যা করা উচিত ছিল করে এসেছে এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যাক।সকালে আবার ধক/ল তো কম যাবেনা।তারওপর সূচনা সকালে কেমন ব্যবহার করবে কে জানে।হাহা,,বড় বড় কয়েকটা শ্বাস ছাড়লো প্রণয়।ঠিকঠাক হয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো।সূচনা এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে।তার মুখ থেকে দৃষ্টি সরাতেই থমকে গেল প্রণয়। টি-শার্ট সরে গিয়ে উন্মুক্ত উদ/র। একদম স্লিম বা ছিপছিপে না ফর্সা উদরে হালকা মেদ জমেছে।প্রণয় সেখানে তাকিয়ে ই ফাঁকা ঢোক গিললো কয়েকটা। শব্দহীন এগিয়ে আসলো সূচনার দিকে। বাম হাত দিয়ে কোনোরকমে টি-শার্ট টা নামিয়ে দিয়ে সরে আসলো। বড় বড় শ্বাস নিল কয়েকটা। এই এতটুকু দেখেই তার এমন অবস্থা।নিজেকে ঠিকঠাক করে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়।আপাদত এটাই বেস্ট নাহলে কি থেকে কি করবে সে নিজেও জানেনা।
______________________________
ডাইনিং টেবিলের একেবারে শেষ মাথার চেয়ারটায় চুপ/টি মে/রে বসে আছে সূচনা। তার দুই পাশে মিলিয়ে দিনা,তিথি, মিহু,ইরা,ফিহা,তৃণা বসেছে।দিনার বাকি দুইজন বান্ধবী থাকেনি, রাতেই চলে গিয়েছে তাড়াতাড়ি করে।সবাই কথা বললেও সূচনা চুপ।মাথার মধ্যে এখনও ঔসবই ঘুরছে।
–‘ভাবি তোমার কী খা/রাপ লাগছে?জ্বর কমেনি?
ভাবনার মাঝে ইরার ফিসফিসানি কণ্ঠ। তার দিকে তাকিয়ে সূচনা ও ফিসফিসিয়ে বললো-
–‘কমেছে,, একটু উইক লাগছে।
–‘আচ্ছা,, তাহলে রুমে যেয়ে রেস্ট নেও তাহলে। আমি নাস্তা রুমে দিয়ে আসবনি।
–‘সমস্যা নেই থাক।
–‘সিওর?
সূচনা হালকা হেসে বললো-
–‘হ্যা।
–‘মামী নিষাদ আর নিহা কই?
ডাইনিং টেবিলের নিজের জন্য বরাদ্দ কৃত চেয়ার টায় বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো প্রণয়। তন্ময় তার পাশে দাড়ানো।সূচনা চোখ ঘুড়িয়ে প্রণয়ের দিকে তাকালো। প্রণয়ের প্রশ্নের উত্তরে মিসেস আফিয়া উদাস কণ্ঠে বললেন-
–‘নিষাদ নাকি কালকে রাতে এখান থেকে ফেরার সময় বাইক এক্সি/ডেন্ট করেছে। বাম হাত ভে/ঙে গেছে, প্লাসটার করে দিয়েছে, একদম রেস্টে থাকতে বলেছে।নিহা সকালে শুনেই চলে গিয়েছে,ফিহা ও চলে যাবে বলছে।জোর করে রাখলাম,বলেছি বিকেলে যেয়ে দিয়ে আসবে কেউ। আমি না বুঝলামনা কিভাবে কী হলো?ও রাতে গেলই বা কেন?আমাকে বলেও যায়নি। নিহা বা ফিহা কেও বলেনি।কি সব আজব ঘটনা হচ্ছে। বুঝতে পারছি না কিছু।
কেউ তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাল না হয়তো তারা আগে থেকেই জানে।কিন্তু মিসেস আফিয়ার প্রথম কথাটুকু শুনেই সূচনা তা/জ্জব বনে গেল যেন। কেন যেন ফট করে তাকালো প্রণয়ের দিকে। প্রণয় শান্ত চোখে মিসেস আফিয়ার দিকে তাকিয়ে তার কথা শুনছে। সূচনার দিকে চোখ পড়তেই নিজ কায়দায় ঠোঁট বাকি/য়ে হাসল প্রণয়।সূচনা থম মে’রে বসে রইলো।
#চলবে
#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৬
___________________________
ভেন্যু থেকে কিয়ৎকাল আগেই ফিরেছে প্রণয়।ঘেমে নেয়ে বেচারার একাকার অবস্থা।দুই হাত দুইদিকে মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আয়েশ করে শুয়ে ছিল বিছানায়।তাকে ফিরতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো সূচনা। কোনো দিক না দেখে সোজা জিজ্ঞেস করে বসলো-
–‘ নিষাদের হাতে কী হয়েছে? কীভাবে ভাঙ/লো?
সূচনার দৃষ্টি প্রণয়ের দিকেই,জবাবের আশায় আছে কিন্তু প্রণয় নিশ্চুপ। কোনোরকম সাড়া শব্দ নেই।আচ্ছা সে কী ঘুমিয়ে পড়েছে? এক মূহুর্তের জন্য কথাটা ভাবলেও সেই ভাবনায় ইতি টানল সূচনা।পুনরায় গলা উঁচিয়ে বললো-
–‘শুনছেন?বলছেন না কেন?
আঁখি জোড়া বদ্ধ অবস্থায় ই কপাল কুচকে এলো প্রণয়ের।উন্মুক্ত হলো আখি,সেখানে একরাশ ক্লান্তি।উঠে বসলো প্রণয়।সূচনার মায়া হলো ভাবল -সে ভুল করেছে, এখন এভাবে ডাকাডাকি করে প্রশ্নের উত্তর টা তো পরেও চাওয়া যেত,এমনিতেই কাজ করতে করতে বেচারার অবস্থা কা/হিল তারওপর তার বোনের বিয়ে ভাই হিসেবে নিশ্চয়ই তার জন্য অনুভূতি টা কষ্টের আর সে কিনা এসব করে আরও মাথা খাচ্ছে। নিজের ওপর নিজেরই রা/গ হচ্ছে তার।
–‘ কী হলো এখন চুপ কেন?বলো কী জানতে চাও?
সূচনা মাথা নিচু করে কাচুমাচু ভঙ্গিতে বললো-
–‘ কিছু না।
–‘কেন একটু আগেই তো জিজ্ঞেস করছিলে হাত কিভাবে ভাঙ/লো?কী হয়েছে? এখন জানতে চাও না?
সূচনা হ্যা না কিছু ই বলল না।চুপ করে রইলো।প্রণয় বাম হাত চুলে চালাতে চালাতে বললো-
–‘এদিকে এসো।
সূচনা আসলোনা।দাঁড়িয়ে রইলো মূর্তি/র ন্যায়।বু/কের ভেতর তার ধুকপুক ধুকপুক করছে। গতরাতে প্রণয় আর তার ঔ অতটুকু মূহুর্ত স্মরণে আছে তার। প্রণয়ের থেকে পাওয়া দ্বিতীয় স্পর্শ, তার বলা বাক্যটুকু এখন ও কর্ণকুহরে ঠেকছে যেন।এই যে মনে হচ্ছে প্রণয় এখন ও কালকে রাতের মতো তাকে বলছে-
–‘সদ্য স্ফুটিত কোনো পুষ্পের ন্যায় পবিত্র প্রণয়ী,নিজেকে অপবিত্র ভাবার দুঃসা/হস যেন না করে সে।তার অন্তর,কায়া গভীর থেকে গভীর ভাবে স্পর্শ করার অধিকার শুধু তার প্রণয়ের।সেই দুঃসাহস শুধু দেখাবে প্রণয়ীর প্রণয়ই।
ইশশশ এত সুন্দর করে বুঝি বলতে হয়।প্রণয় তো জানে না তার এই কথাটা যে তাকে অস্থির করে তুলেছে,সাথে লাজরাঙা ও।ভাবনার সুতোয় টান পড়ল সূচনার। হাতে টান পড়ায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই আরেক দফা অবাক হয়ে গেল সে।প্রণয় হাত ধরে টান দিয়ে তার কোলে বসিয়ে দিল সূচনাকে।সূচনা পাথর হয়ে গেল একেবারে। ওঠার কথাটাও যেন ভুলে গেছে।প্রণয় সূচনার ছাই রঙা শাড়ির ওপর দিয়ে ই আঁকড়ে ধরল তার কো’মর।কো’মরে স্পর্শ পেতেই তার দিকে মুখ ঘুরা’লো সূচনা।মুখোমুখি হলো তারা,নিঃশ্বাস আছ’ড়ে পরছে একে অপরের মুখে,মিল’ন ঘটলো যেন তাদের।প্রণয় কো/মরে হালকা চা’প দিতেই সূচনা তার ডান হাত রাখল প্রণয়ের হাতের ওপর।নিজের কোমর হতে প্রণয়ের হাত সরাতে সূচনা মৃদু চেষ্টা চালালো।কিন্তু হাত যেন চলছে না তার। হাসফাস করছে সে। হুট করে এক অপ্রত্যাশিত কাজ করল প্রণয়। বাম হাত দিয়ে সূচনার গাল চেপে ধরে তার বাম গা/লে অধর ছোঁয়ালো।অতঃপর যেভাবে টান দিয়ে কোলে বসিয়েছিল সেভাবেই নামিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল। সূচনা সম্বিত ফিরে পেল ঝাঁ/কুনি তে।এতক্ষণের অস্থিরতা, হাসফাস দুটোর পরিমাণ টাই কমেছে খানিক। কেন?তার সংস্পর্শে আসায়?কিন্তু তার স্পর্শ ই তো এলোমেলো করেছে তাকে,অস্থিরতার যোগান দিয়েছে।তাহলে?চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো সূচনা।প্রণয় শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে কাবার্ডের দিকে গেল।সূচনা চোখ গোল গোল করে অবাক কণ্ঠে বললো –
–‘এটা কী হলো? কী করলেন আপনি?
প্রণয় কিছু না বোঝার ভান করে বললো-
–‘কই কী হলো? কী করলাম আবার?
–‘আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন আমার অনুমতি ছাড়া।
–‘ আমি কখন স্পর্শ করলাম?আশ্চর্য!
–‘আশ্চর্য, আপনি মি/থ্যা বলছেন কেন? একটু আগে যা করেছেন সেটা কী ছিল?
–‘ ও ওটা
–‘হ্যা
–‘কিন্তু ওটা তো আমার দো/ষ না।আমার হাত আর ঠোঁটে/র দো/ষ।আসলে কী জানো তো তোমাকে দেখলে আমার কোনো কিছুই আমার কন্ট্রোল এ থাকেনা। একটু আগে যা হয়েছে সেটাও আমি করিনি।এই যে হাত(হাত উঁচিয়ে) আর এই যে ঠোঁ/ট (ঠোটে আঙুল দিয়ে) এদের দো/ষ। এখন তুমি বলো এদের কি শা’স্তি দেয়া যায়? তবে শাস্তি যা ই দাও না কেন আমাকে স্পর্শ করতে হবে।কি বলো রাজি?
সূচনা আহা/ম্মকের ন্যায় তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিক। এ কেমন যুক্তি? এক সময় এমন আজাই/রা যুক্তি তো সে দেখাত।আর প্রণয় কি না তাকে আজকে সেই জা/লেই ফা/সালো। সূচনা কি বলবে না বলবে বুঝতে না পেয়ে বললো-
–‘ আমার সাথে ফা/জলামো করছেন?আমাকে দেখলে আপনার ফাজ/লামো করার শখ হয় সেটাও বলেন।
প্রণয় মুখ বা’কিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘তুমি আমার সমবয়সী?
সূচনা ভ্রু কুটি করে জিজ্ঞেস করলো-
–‘ মানে ?
–‘মানে এটাই তুমি আমার সমবয়সী ও না আমার বান্ধবী ও না,তাহলে তোমার সাথে ফাজলামো করব কোন দুঃখে?তুমি আমার বউ আর বউকে দেখলে বরদের আদর আদর লাগে ফাজলামো করবে কেন?বউ কি ফাজলামো করার জিনিস? বউ হচ্ছে আদর করার জিনিস। বুঝেছ?
প্রণয়ের কথা শুনে সূচনা অবাক হয়ে গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো।সে দিকে তোয়াক্কা না করে প্রণয় কাবার্ড থেকে একটা ব্যাগ বের করে সূচনার হাতে দিয়ে বললো-
–‘সুন্দর করে এটা পড়ে তৈরি থেকো।আমি গেস্ট রুমে যাচ্ছি শাওয়ার নিতে।এখন জ্বর আছে হালকা,তোমার তো এমনি শীত বেশি এজন্য শাওয়ার না নিয়ে এসে পড়ো না।শীতকালে সপ্তাহে দুইদিন শাওয়ার নেয়ার প্ল্যান থাকলে সেটাও ভুলে যাও।আই হেট দিজ।গট ইট?
সূচনা মুখ বা’কিয়ে বললো-
–‘ আমি আপনার মতো না শীতকালেও সপ্তাহে চারদিন শাওয়ার নেই। হুহ
প্রণয় নাক মুখ কুচকে বললো –
–‘ছি/হ মানে বাকি দুই দিন শাওয়ার না নিয়েই থাকো?ই/য়াক।
আবার মুখ বা/কালো সূচনা।বললো-
–‘ শাওয়ার নেই না,, ফ্রেশ তো হই।আমার উনিশটা শীতকাল আমি সারাদিন শুয়ে,বসে কাটিয়ে/ছি।ছোট বেলায় ছোট ছিলাম আর বড় হওয়ার পর আলসেমিতে।আর এমন একটা ভাব নিচ্ছেন যেন চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বাইশ ঘন্টাই আপনি শাওয়ার নিতে থাকেন।যতসব।
–‘আমি জানতাম তুমি অলস কিন্তু অলসতায় যে শাওয়ার ও নেও না সেটা ধারণায় ছিল না।
সূচনা একটু কাচুমাচু মুখ করে বললো-
–‘ শুধু কী শাওয়ার,,,খেতে,বসতে,চুল আচ/রাতে, শাওয়ার নিতে, পড়তে বসতে সবকিছু তে আলসে/মি লাগে শুধু ঘুমানো ছাড়া।
প্রণয় হতাশ চোখে তাকিয়ে রইলো সূচনার দিকে। সূচনা একটু নড়েচড়ে বসলো। কী ভাববে সে কেমন এক অলস মেয়েকে বিয়ে করেছে। কিন্তু সূচনাকে অবাক করে দিয়ে প্রণয় কয়েক কদম এগিয়ে আসলো সূচনার দিক।সূচনা নজর রাখল প্রণয়ের দিকে।বরাবরের মতে মুখে বা’কা হাসি দখল করেছে প্রণয়ের ওষ্ঠদ্বয়।সূচনা তাকাতেই প্রণয় চোখ টিপ দিয়ে বললো-
–‘ তোমার রেগুলার শাওয়ার নেয়ার ব্যবস্থা করব এবার,আর সেটা হয়ে গেলে কাজ বেড়ে যাবে তোমার তখন আলসেমি ও লাগবে না।
কথাটা বলেই রুম থেকে চলে গেল প্রণয়। সূচনা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।কিছু বোধগম্য হয়নি তার।কী বললো প্রণয়? অত ঘাটালো ও না।কোলের ওপর রাখা ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
__________________________________
–‘এটা কেমন শাড়ি পড়েছ?
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হিজাব পড়ছিল সূচনা।তখনই প্রণয়ের স্বর কানে এল।সূচনা পেছনে ঘুরে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো-
–‘কেন কী হয়েছে?
–‘ তুমি জানো না কি হয়েছে?
সূচনা একটু অবাক হয়ে গেল,বুঝতে পারলোনা প্রণয় কি বলছে।তাই মাথা নাড়িয়ে বললো-
–‘ আমি বুঝতে পারছি না কী বলছেন আপনি।
প্রণয় বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এসে দাড়ালো সূচনার সম্মুখে।সূচনা পেছাতে যেয়েও পারলনা,তার আগেই প্রণয় দু হাটু মুড়ে বসে তার কোমর আঁকড়ে ধরেছে।প্রণয়ের এহেন কান্ডে সূচনা ভর/কে গেল। স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো। প্রণয়ের দেয়া সবুজ রঙের সার্টিন সিল্ক শাড়ী টাই পড়েছে সূচনা। শাড়ীর কুঁচি গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে, এক পাশ দিয়ে কিঞ্চিৎ উন্মুক্ত হয়েছে উদর। সেটা দেখেই রে/গেছে প্রণয়।শাড়িটাও ঠিক ভাবে পড়তে পারবে না কেন?আবার নিজেই নিজেকে বক/লো কে বলেছিল তাকে সিল্কের শাড়ী কিনতে?জামদানী বা বেনারসি কিনলে তো এই ঝামে/লা হত না।লেপ্টে থাকত সুন্দর করে। পরমুহূর্তেই ভাবলো এই ঝা/মেলা না হলে তো সে এত কাছে ও আসতে পারত না।এলোমেলো কুঁচি গুলো সন্তপর্ণে ঠিক করে দিল যেন পে/টে হাত না স্পর্শ করে।মাথা উঁচিয়ে সূচনার দিকে তাকালো।চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে সে।এই মুহুর্তে তাকে ছুয়ে দিলে কি প্রণয় বড় কোনো ভুল করে ফেলবে?সে তো চাইছে ভুল করে তার আঙুলের স্পর্শ লাগুক তার উন্মুক্ত উদরে।কিন্তু হাত জোড়া এখনও তার নিয়ন্ত্রণে নেই।এই যে কত সুন্দর করে ঠিক করে দিল অথচ স্পর্শ লাগল না।হাহ,,মাথা থেকে সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কুঁচি গুলো একহাতে নিয়ে সূচনার উদ্দেশ্যে বললো-
–‘ নাও গুজে দাও।
এতক্ষণ যেন কোনো এক ঘোরের মধ্যে ছিল সূচনা।প্রণয়ের গলা পেতেই সম্বিত ফিরে পেল। কা’পা কা’পা হাতে কুচিগুলো গুজে নিল।উঠে দাঁড়ালো প্রণয়।সূচনার কানের সামনে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
–‘ আমার জিনিস শুধু আমি দেখব।অন্য কেউ কেন দেখবে?আজ যদি বাইরে এভাবে চলে যেতে না I swear আর কোনোদিন শাড়ী পড়ে বাইরে বেরোতে দিতামনা। শাড়ী পড়তে এমন ভাবে ই তারপর আমি ঠিক করে দিতাম।শাড়ী পড়ে রুমের মধ্যে ই ঘোরাঘুরি করতে আর আমি দেখতাম।তারপর খুলে রেখে দিতে ব্যস শেষ কাহিনি।কথা বোঝা গেছে?
একে তো প্রণয় এতটা কাছে তারওপর রে/গে আছে বিধায় ভ/য় পেয়ে গেল সূচনা। ঢোক গিলে বললো-
–‘বু,,,বুঝেছি।
প্রণয় হাসল।সূচনার হিজাবটা দুদিক দিয়ে টেনে ঠিক করে দিতে দিতে বললো-
–‘দেট’স লাইক মাই ওয়াইফ।
নিজের হাতের মুঠোয় সূচনার হাতটা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো-
–‘চলো যাওয়া যাক।
ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখা গেল ইরা আর তনয়া কে।ফিহা,তিথি তৃণা দিনার সাথে পার্লারে গিয়েছে।ইরা আর তনয়া দুজনই তৈরী।মিসেস আফিয়া সূচনাকে দেখেই বললেন-
–‘মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে, আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হয়।শাড়ী আর শাড়ী যে পড়েছে দু’জনই সুন্দর।
মিসেস আফিয়ার কথায় সূচনা লজ্জায় মাথা নিচু করল। মিসেস আফিয়া হাসতে হাসতে বললেন –
–‘ইশশশ এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন? সুন্দর কে সুন্দর বলবনা?যদি মিথ্যা প্রশংসা করতাম তখন না লজ্জা পাওয়ার কথা।যাক ওরা তো পার্লার থেকে সোজা ভেন্যু তে আসবে,আমরা তাহলে এখনই বেরোই। যেতেও সময় লাগবে তাই না প্রণয়।
–‘হ্যা মামা চলে গেছে?
–‘হ্যা চলে গেছে।
–‘ ঠিক আছে।
.
.
–‘হাত কা/টল কিভাবে? কী করতে গিয়েছিলে? চুপচাপ এক জায়গায় বসে থাকতে পারো না?
কর্কশ গলায় উক্তি টুকু করলো প্রণয়।আশেপাশের অনেকেই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সূচনা টলমলে চোখে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।ছোট্ট মনে অভিমান জমলো তার প্রণয়ের প্রতি।এভাবে সবার সামনে না ব/কলে হত না।মানুষ কিভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এত বড় মেয়ে হাত কে/টে ফেলেছে সেজন্য বরের কাছ থেকে ব/কা শুনছে? ছি/হ। অত বড় কিছু না হলেও কেন যেন চোখ থেকে কান্নারা উপচে পড়ছে। পিছিয়ে গেল সে লাগবে না তাকে দেখানো, এভাবেই থাকুক, কিছু করবেনা।
#চলবে
#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৭
_________________________
ভেন্যু তে পোঁছে সূচনাকে ইরা,ফিহা দের সাথে রেখে গিয়েছে প্রণয়।যাওয়ার আগে কড়া কণ্ঠে কয়েকবার বলে গিয়েছে -” এখান থেকে একদম নড়বে না,ফোন কাছে রাখবে যেন কল দিলে সাথে সাথে রিসিভ করতে পারো।আগ বাড়িয়ে কোনো কাজ করতে যাবে না।
জবাবে মাথা দুলিয়ে হ্যা বলেছে সূচনা।প্রণয় চলে গেছে তার কাজে।সে ব্যস্ত ভীষণ।এই যে প্রায় ঘন্টা খানেক পার হয়ে গেছে একবার ও এখানে আসেনি। সূচনা চুপটি করে বসে আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিনার দিকে।মেয়েট কি সুন্দর লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে। একদম পু/তুলের মতো। দিন কয়েক আগে সে ও তো ছিল এই জায়গায়। মাথা ভর্তি চিন্তা ছাড়া তখন কিছু ই ছিল না তার। কিন্তু বিয়ে ও হয়ে গেল আবার দিন ও পার হয়ে যাচ্ছে। সময় বহমান তার প্রমাণ জীবনের প্রতি মুহূর্তে ই পাওয়া যায়। ভাবনার মাঝেই কানে আসলো, কেউ চেচি/য়ে বলছে-
–‘বর এসে গেছে।
দিনার মুখে তখন লজ্জার হানা।তার লাজুক হাসি দেখে সূচনা স্মিত হাসলো।তার মনে পড়েনা যখন প্রণয় বিয়ের দিন তার জন্য অপেক্ষা করছিলো তখন তার অনুভূতি টা কেমন ছিল।থাকবে কিভাবে?প্রণয় তো ঝড়ে/র বেগে এসেছিল তাকে বিয়ে করতে।সে তো জানত ও না প্রণয়কে।সে জায়গায় দিনা আর জাওয়াদ তো একে অপরকে ভালোবাসে।বর এসেছে শুনে তিথি, ইরা,তৃণা,তাসনিন,মিহু সবাই উঠে চলে গেল গেটের কাছে।সূচনা দিনার কাছে এসে বসলো। তার দিকে মুখ তুলে তাকালো দিনা। কিছুটা ভীত মুখশ্রীতে বললো-
–‘ আমার খুব টেনশন হচ্ছে ভাবী।আম্মু কোথায়?
সূচনা মিহি হাসলো। জীবনে সুখের বা কঠি/ন মুহূর্ত যাই হোক না কেন সবার আগে মা নামক মানুষ টাকে প্রয়োজন।তার ছায়া তলে আসলে যেন সব দুঃখ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। সুখগুলো যেন অতিমাত্রায় আনন্দ দেয়। সূচনা হাসি টেনেই বললো-
–‘তুমি বসো,,আমি মামিকে ডেকে দিচ্ছি।
দিনার কাছ থেকে উঠে সামনে পা বাড়ালো সূচনা। একটু খুঁজতেইপাওয়া গেল মিসেস আফিয়া কে।মিসেস দিশার সাথে কথা বলছিলেন উনি। সূচনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। ইতিমধ্যে মিসেস দিশার চোখে পড়েছে সূচনা। সূচনা এগিয়ে গেল।মিসেস আফিয়া কে বললো-
–‘ মামী দিনাপু আপনাকে ডাকছে।
মিসেস আফিয়া হালকা হেসে মিসেস দিশা কে বললেন –
–‘ আমি একটু আসি আপা,আপনি সূচনার সাথে কথা বলেন।
মিসেস দিশা ও হালকা হেসে “আচ্ছা ” বললেন।মিসেস আফিয়া চলে যেতেই সূচনা জিজ্ঞেস করলো-
–‘কেমন আছো আম্মু? তোমরা কখন এসেছো?
–‘এই তো মিনিট পাচেক আগে। আলহামদুলিল্লাহ,, তুই কেমন আছিস?
–‘আলহামদুলিল্লাহ।
মিসেস দিশা কিছুটা নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন –
–‘সবকিছু ঠিকঠাক আছে না মা?
সূচনা বুঝেও না বোঝার ভান করে বললো-
–‘কিসের কথা বলছো আম্মু?
–‘আসলেই বুঝতে পারছিস না?নাকি না বোঝার ভান করছিস?
–‘ তা করব কেন?সত্যি ই বুঝতে পারছিনা।
–‘আমার ভাগ্যটা না আসলেই খারা/প এদিক থেকে। একটা মাত্র মেয়ে আমার,মেয়েদের নাকি মায়ে/দের সাথে বন্ধুর মতো সম্পর্ক থাকে আর আমার একটা মেয়ে হয়েছে তার মুখ থেকে দু’টো কথা বের করা যায় না। সবকিছু নিজের মাঝে আট/কে রাখে।আমাকে কি তোর কিছু মনে হয় না? নাকি আমি ধরে নিব মা হিসেবে ব্যর্থ আমি,নিজের মেয়ের বন্ধু হতে পারিনি।তার কথা বন্ধু হতে পারিনি।
মা/য়ের কথা শুনে সূচনার বুকটা ছে/ত করে উঠল একদম। অতি ব্যস্ত গলায় বললো –
–‘ তুমি ভুল ভাবছ আম্মু। মা হিসেবে তোমার কোনো ব্যর্থতা নেই বরং মেয়ে হিসেবে ব্যর্থ আমি।নিজের মা’কে ভালো বন্ধু বানাতে পারিনি, মন খুলে কথা বলতে পারিনি।তুমি তো জানো আমি কেমন, সবার মতো সবকিছু অত সহজভাবে বলতে পারিনা আমি।
সূচনা উদাস কণ্ঠে কথাগুলো বললো। মিসেস দিশা তার মন খারা/প দেখে প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য তার করা প্রশ্ন টা আবার ও করলেন-
–‘বললি না সব ঠিক আছে কি না?
সূচনা বুঝল উত্তর না নিয়ে ছাড়বে না তাকে।কিন্তু উত্তর টা কি দিবে? আদৌ কি সব ঠিক আছে?মন গহীন হতে উত্তর আসলো-
–‘ হ্যা ঠিকই তো আছে, এই যে তিনবছর আগের সেই বিষা/দময় ঘটনা গুলো সে ভুলতে পেরেছে এতদিনে।আগে কোনো না কোনো না ভাবে তার সামনে চলে আসত সে গুলো কিন্তু এই ক’দিনে ভুল করেও সেগুলো মনে পড়ার ভুল হয়নি তার।এই যে এত সুন্দর পরিবার,সবাই কত ভালোবাসে তাকে,এই যে কালকের ঘটনাটা যদি আগে ঘটতো তখন হয়তো সে আবারও ডুব দিত বি/ষাদে, দুঃখ বিলাস করত তার ভু/লের জন্য। কিন্তু,, কিন্তু প্রণয় কত সুন্দর করে সামলে নিলো তাকে। কত সুন্দর বুঝে তাকে সেগুলো কি ভালো থাকার জন্য যথেষ্ট না? সম্পর্কটা শুধু স্বাভাবিক হয়নি আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর মতো তাই বলে তারা কি ঠিকঠাক ভালো থাকতে পারে না?
–‘কিরে কোথায় হারা/লি।
নিজ ভাবনায় মত্ত সূচনা খানিক চম/কে উঠল মিসেস দিশার কথায়।তাকে চমকা/তে দেখে মিসেস দিশা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন –
–‘কিরে কি হয়েছে?এমন করলি কেন?
সূচনা মিহি হেসে বললো-
–‘কিছু না তো মিসেস দিশেহারা।এমনি,আপনার মেয়ে ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ। ঠিকঠাক ই আছে সব আর যা ঠিক নেই তাও ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
সূচনার জবাবে মনে শান্তি আসলো যেন মিসেস দিশার।সূচনাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরতেই সূচনা জিজ্ঞেস করলো-
–‘ আব্বু কই?
মিসেস দিশা মুখ ছোট করে বললেন-
–‘ আমার কাছে থাকতে তো ভালো লাগেনা।খালি আব্বু আব্বু, সব ভালবাসা আব্বুর জন্য ই।
সূচনা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।বললো-
–‘ হ্যা আমার সব ভালোবাসা তার জন্য ই।তোমাকে একটুও ভালবাসিনা।এক রত্তিও না।আমি আমার আম্মুকে ভালোবাসি।
–‘ কে আপনার আম্মু?
–‘ উমমম,,,ওনার নাম মিসেস দিশেহারা।
দু’জন একত্রে হাসল।সূচনা হাসছে মিসেস দিশা অপলক তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। হাসলে কত সুন্দর লাগে তার মেয়েটাকে। সবসময় এভাবেই না হয় খুশি থাকুক তার গম্ভীর স্বভাবের মেয়েটা।
.
.
.
অতি কাঙ্ক্ষিত এক মুহূর্ত এসে আবার চলেও গেল।কাঁদতে কাঁদতে সেই পবিত্র শব্দ উচ্চারিত হলো দিনার মুখ থেকে। সবাই একসাথে বলে উঠল আলহামদুলিল্লাহ।জাওয়াদ নিজের স্ত্রী রূপে গ্রহণ করল দিনাকে।দিনার নতুন পরিচয় যোগ হলো, সে এখন জাওয়াদের স্ত্রী। কান্নার মাঝে কথাটা ভেবে যেন আরও কান্না আসলো তার।সুখের কান্না।কত প্রহর অপেক্ষা করেছে দুজন এই মুহূর্তের জন্য। দিনা আর জাওয়াদ দু’জন কে একসাথে বসানো হয়েছে এখন। কান্না আর লজ্জা দুয়ে মিলে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না দিনা। পাশ থেকে জাওয়াদ ফিসফিস করে বললো-
–‘ বলেছিলাম না এবার যা করার করে দেখাব।আজকে রাতে সব হিসাব নিব পই/পই করে।
কিছু বলতে পারলনা দিনা।সেই ফিসফিসানি কণ্ঠ আর উক্তি,,ইশশ।দুটো ই যেন মারা/ত্মক।আজকে রাতে সব হিসাব নিবে কথাটার মানে পরিষ্কার দিনার কাছে যা লজ্জার পরিমাণ তার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করছে। জাওয়াদ আবার ও ফিসফিস করে বললো-
–‘আমার দিকে তাকাও।
দিনা তাকালো না।উল্টো চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল।জাওয়াদ হতাশ চোখে তাকালো।দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বললো -আজকে রাতে দেখব কোথায় পালাও।
–‘ আপনাদের প্রেমালাপ হয়ে গেলে আমরা একটু ছবি তুলি এখন?
দুজনেরই হুশ ফিরল।সামনে তাকিয়ে দেখল জাওয়াদ এর কয়েকটা কাজিন দাড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে কেউ একজন বলেছে হয়তো।’এমনিতেই বউ লজ্জায় বা/চে না একটু কথা বলতে নিয়েছি আর লম্বা নাক নিয়ে চলে আসছে গ/লাতে’। জাওয়াদ মনে মনে কথাগুলো বললেও মুখে হাসি টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
–‘হ্যা ছবি তো তুলবেই বিয়ে তো আর আমার না তোদেরই।নেয় তোল আমি চলে যাই।
জাওয়াদ এর কথা শুনে দিনাসহ সবাই হাসল ঠোঁট টিপে।
.
.
–‘ এমন মন খারা/প করে বসে আছ কেন?
মন খা/রাপ করে এক কোণে বসেছিল ফিহা। সূচনা পাশে বসে কথাটা জিজ্ঞেস করলো। ফিহা উদাস কণ্ঠে বললো –
–‘ভাইয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে।
নিষাদের কথা মনে পড়তেই মুখ ভা/ড় হলো সূচনার। কিছু টা গম্ভীর গলায় বললো-
–‘এত চিন্তা করো না,ঠিক হয়ে যাবে।এই ছোট্ট মনে এত টেনশন দিচ্ছ কেন? সবসময় হাসি খুশি থাকবে,মানুষকে বুঝতে দিবেনা তোমার মনের অবস্থা। স্ট্রং রাখবে নিজেকে।
ফিহা বুঝতে পারেনি তার কথার পিঠে সূচনা এমন কঠি/ন কিছু কথা বলবে।কিন্তু তার ভালো লেগেছে কথাগুলো।মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো-
–‘থ্যাঙ্কিউ ভাবি।তুমি অনেক ভালো।
বিনিময়ে মুচকি হাসি দিল সূচনা।একটু চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো-
–‘নিহা কোথায়?
ফিহা মুখ বা’কিয়ে বললো-
–‘জানিনা।
সূচনা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘তোমার সাথে কথা হয়নি আসার পর?
ফিহা একটু মন খারা/প করে বললো-
–‘নাহ। আপু আমাকে তেমন পছন্দ করেনা, প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা ও বলে না।
সূচনার মন ও খারা/প হয়ে গেল।তার ভাই বোন নেই সেজন্য তার এত আফসোস আর এদিকে এত সুন্দর বোন থাকার পরেও তাকে অবহেলা করছে। সত্যি ই মানুষ মাত্র ই বিচিত্র তার রঙ।দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সূচনা।
________________________
–‘হাত কা/টল কিভাবে? কী করতে গিয়েছিলে? চুপচাপ এক জায়গায় বসে থাকতে পারো না?
কর্কশ গলায় উক্তি টুকু করলো প্রণয়।আশেপাশের অনেকেই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সূচনা টলমলে চোখে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।ছোট্ট মনে অভিমান জমলো তার প্রণয়ের প্রতি।এভাবে সবার সামনে না ব/কলে হত না।মানুষ কিভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এত বড় মেয়ে হাত কে/টে ফেলেছে সেজন্য বরের কাছ থেকে ব/কা শুনছে? ছি/হ। অত বড় কিছু না হলেও কেন যেন চোখ থেকে কান্নারা উপচে পড়ছে। পিছিয়ে গেল সে লাগবে না তাকে দেখানো, এভাবেই থাকুক, কিছু করবেনা।সূচনার হাত থেকে চোখে চোখ পড়তেই বু/ক ধ্বক করে উঠলো প্রণয়ের। টলমলে চোখ সূচনার,এখনই বুঝি গড়িয়ে পড়বে অশ্রু কণা।নিজের ওপর রা/গ হলো প্রণয়ের।কেটারিং এর এক লোকের সাথে ঝামে/লা হওয়াতে এমনি ই মেজা/জ চ/টে ছিল তার।আর সূচনার কা/টা
হাত দেখেই যেন রা/গের মাত্রা বেড়ে গেল।কেন যাবে পা/কামো করতে? সে বলেছিল না এক জায়গায় বসে থাকবে।কিন্তু এক জায়গায় কতক্ষণ বসে থাকা যায়।সে তো রোবট না।কিন্তু বলে ফেলেছে সে রা/গের মাথায়। কথাটা এত জোরে বলে ফেলেছে বুঝতে ও পারেনি প্রণয়। সূচনা চলে গেছে সেখান থেকে।নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে এখন।কি করলো সে?তার প্রণয়ীকে এভাবে কষ্ট দিতে পারল?এখন যে নিজের কষ্ট হচ্ছে। পা/গল পা/গল লাগছে,কিন্তু সূচনার কাছে গেল না প্রণয়।পকেট থেকে ফোন বের করে কল লাগালো কাউকে।
___________________________
বিদায়ের লগ্ন। সবার চোখে ই অশ্রুর অস্তিত্ব। মিসেস আফিয়া ইসহাক সাহেব সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এখন প্রণয়কে জড়িয়ে ধরিয়ে কান্নায় ব্যস্ত দিনা।প্রণয় হালকা হেসে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো –
–‘ এমন ভাবে কাঁদছিস কেন? খুব তো উতলা হয়ে গিয়েছিলি বিয়ে করার জন্য তাহলে এখন কি হয়েছে?
দিনা হালকা করে চাপড় মা/রল প্রণয়ের পিঠে।কাদতে কাঁদতে বললো-
–‘ আজকেও আমার সাথে এমন করবি। তুই অনেক খারা/প ভাইয়া।এতই খা/রাপ যে আমি তোর আপন বোন না হওয়া স্বত্বেও কত আদর দিয়ে আগলে রেখেছিস,এত ভালোবেসেছিস।আমি কিভাবে থাকব তোদের ছাড়া।
প্রণয় হাসল না, তার চোখ ও ছলছল করল না।নির্বাক রইলো।পাশ থেকে মিহু,তিথি ইরাও জড়িয়ে ধরলো দিনাকে।ভাই বোনের মধুরক্ষণের সাক্ষী হলো সবাই।দিনাকে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিল প্রণয়ই।শেষবারের মতো ফিরে তাকিয়ে সবাইকে দেখল দিনা।ছলছল করা নয়নে তাকিয়ে রইলো। গতিশীল হলো সাদা রঙা প্রাইভেট কার টা। মিসেস দিশা আর আরহাম সাহেব ও চলে গেলেন বিদায় নিয়ে।প্রণয় সবকিছুর মধ্যেই বারবার তাকিয়েছে সূচনার দিকে,মূলত তার হাতের দিকে। হাতে ব্যান্ডেজ করা দেখে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। সূচনা তাকিয়ে ও মুখ ফিরিয়ে নিল।তার রা/গ হচ্ছে কিন্তু কেন? এত রা/গ কেন হচ্ছে তার।নিজেই কারণ বুঝতে পারছে না।
_____________________________
অন্ধকারাচ্ছন্ন রুম।হাটুতে মুখ গুজে ফ্লোরে বসে আছে ইরা। ভেন্যু থেকে সবাই ফিরে এসেছে ঘন্টা দুয়েক।কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা লক করে, লাইট অফ করে ফ্লোরে বসে পড়েছে ইরা।কত আয়োজন করে কান্না করতে বসেছে। ভাবতেই কান্নার মাঝেও তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল।এতক্ষণ কান্না করার পর কেন যেন আর কান্না আসছে না তার।নিজকে নিষ্প্রাণ মনে হচ্ছে নিজের কাছেই।চোখের সামনে ভেসে উঠল তখনকার দৃশ্য টুকুন।কানে বেজে উঠলো তার কণ্ঠ।ইরা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো –
–‘আজকে দিনাপুর বিয়ে তে তো কত সুন্দর পরিপাটি হয়ে এসেছিলেন আপনি মুগ্ধ সাহেব।একদম বরাবরের মতো ছিলেন আজকেও। সবসময় কার মতো আপনার অধর কোণে সেই হাসিটা ও ছিল।আপনি না ভালোবাসেন আমাকে কই বেশ তো চলছেন আপনি।সেই শাক/চুন্নি টাকে ও সাাথে নিয়ে এসেছেন আর আমাকে বলেছেন আমার জন্য ফিরবেন,আমাকে নিজের করে নিয়ে যাবেন।হাসালেন আমাকে।আপনি না ঔ দিন ঠিকই বলেছিলেন আমি সত্যি বো/কা, বড্ড বেশি বো/কা না হলে সেদিনের পর আবার ও আপানকে বিশ্বাস করতামনা,আপনার আশায় থাকতামনা।এই যে এখন কষ্ট পাচ্ছি কেন জানেন কারণ আপনার সেদিনের কথার পর আমি সত্যি ই আপনার অপেক্ষা করছিলাম। আজকে সবকিছুর ইতি ঘটিয়েছেন আপনি। কিন্তু এত সহজে যে আপনাকে ভুলতে পারবনা মুগ্ধ সাহেব কারণ আপনাকে নিজের সাথে এমন ভাবেই জড়িয়ে ফেলেছি আমি।
অন্ধকারে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইরা।তার এখন কান্না আসছে আবার। চোখ ভড়ে এলো পানিতে,মনে মনে আবারও আওড়ালো ‘মুগ্ধ সাহেব’ বলে।জ্বলজ্বল করা চক্ষু থেকে পানি টুপ করে গড়িয়ে পড়ল কপোল বেয়ে। অস্ফুটে স্বরে বললো-
–‘ আমার এক একটা অশ্রু কণা,এক একটা দীর্ঘশ্বাস আট/কে থাকুক এই বদ্ধ কামড়ার প্রতিটা কোণায় তার বিনিময়ে সব সুখ আপনার হোক মুগ্ধ সাহেব।
#চলবে