প্রণয়ের সূচনা পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
205

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৮
__________________________
ধরনী তে সন্ধ্যা নেমে রাতের আগমন।প্রকৃতি তে কুয়াশার আবরণ।কার্তিক মাস চলছে এখন। বৃষ্টি আবার কুয়াশা, কী বিচিত্র দৃশ্যের দেখা মেলে তা ও একই ঋতুতে।এই তো গত রাতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল আর আজকে কুয়াশা।ব্যালকনির ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে সূচনা।রাত দশটার বেশি বেজে গেছে।ঠান্ডা লাগছে তার প্রচুর। কিন্তু রুমে যাচ্ছে না সে।প্রণয় রুমে ই আছে।ফেরার পর সূচনা মিসেস আফিয়ার সাথে কাজ করতে করতে কথা বলে কাটিয়েছে অনেকটা সময়।মেহমান যারা ছিল সবাই চলে গেছে।ফিহা, তনয়া, নিহাকে তন্ময় দিয়ে এসেছে গিয়ে। সেখান থেকে ফেরার পর তন্ময়কে আর বাসায় যেতে দেয়নি প্রণয়।সূচনাকে রাতে খাওয়ার পর রুমে পাঠিয়েছে মিসেস আফিয়া।কিন্তু সূচনা রুমে যাওয়ার বদলে ব্যালকনি তে ঘা/পটি মে/রে বসে আছে।কাছের কেউ তার ওপর উচু স্বরে কথা বললেই কান্না কা/টি করে ভাসি/য়ে দেয়ার অবস্থা হয় তার।আজকেও প্রণয় যখন ব/কলো সূচনার অবস্থা তেমনই হয়েছিল।তাহলে প্রণয় কি তার কাছের কেউ?নাকি কাছের না?হবে না কেন?প্রণয় তার স্বামী, আর বিয়ের পর একটা মেয়ের সবচেয়ে কাছের,আপন হয় তার স্বামী। একেবারে বন্ধুর ন্যায়।সে স্বাভাবিক না হতে পারলেও প্রণয় তো ঠিকই তাকে আপন করে নিয়েছে।তাকে সময় দিচ্ছে, তার পাশে আছে তো।অবশ্যই সে ও তাহলে তার কাছের কেউ।এজন্য ই তো এত রা/গ।বেশি রা/গ হয়েছে যখন ভেন্যুতে তাকে ব/কার পর সে সেখান থেকে চলে এসেছিল অথচ প্রণয় একবারো খোজ নেয় নি।হাত কে/টে গেছে তার জন্য ও কিছু করেনি।জিজ্ঞেস ও করে নি।ইটা না ব্যান্ডে/জ করে দিল।আসার সময় গাড়িতে প্রণয়ের পাশের সিটেও বসেনি কিন্তু প্রণয় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।এমনকি জিজ্ঞেস ও করেনি কেন বসলো না।বাসায় আসার পরেও একটা কথাও বলেনি।রা/গ অভিমান যেন তরতর করে বেড়ে গেছে সূচনার।এই যে এতক্ষণ ধরে এই ঠান্ডার মধ্যে বসে আছে সে তো রুমে ই আছে কই একবার ও তো এলো না।রা/গে দুঃখে এবার কান্না চলে আসলো সূচনার।বিড়বিড় করে বললো-

–‘অবহেলা করছেন আমাকে।কই বিয়ের দিন তো ঠিকই আব্বুকে বলছিলেন নিজের সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখব, আরও কত কি।এখন কোথায় গেল সব।

–‘ আমি তো রাজি ই আগলে রাখতে তুমি না দূরে থাকো।

আক/স্মিক কণ্ঠ।মাথা তুলে ঝট করে তাকালো সামনে।চোখের সামনে প্রথমেই নজরে এলো এক জোড়া পা।পা থেকে উপরে উঠতে উঠতে দৃষ্টি তার মাথা অব্দি পর্যবেক্ষণ করলো।প্রণয়ের চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিল সূচনা। প্রণয় তাকিয়ে রইলো চুপচাপ।সূচনা ও চুপ করে মাথা বা/কিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রণয় তার ডান হাতটা সূচনার দিক বাড়িয়ে দিয়ে বললো-

–‘রা/গ করলে যার ওপর করেছ তাকে শাস্তি দেয়া উচিত, নিজেই নিজেকে কেন শাস্তি দিচ্ছ?এমনিতেই তো তোমার শীত বেশি।এখন শীত লাগছে না? উঠে এসো।

নীরব রইলো সূচনা।প্রণয় গলায় গাম্ভীর্যের ভাব বজায় রেখেই আবারো বললো-

–‘ উঠে এসো।সিজন চেন্জ হয়েছে। এখন ঠান্ডায় এভাবে বসে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে পরে জ্বর ও বেঁধে যাবে।সিজনাল ফিবার কিন্তু খুব খা/রাপ।দুদিন আগে হাত পুড়ি/য়েছ,আজকে আবার কে/টে বসে আছ।আরও কি কি করবে আল্লাহ মালুম।জ্বর বাধিওনা, জ্বর হলে আমি সেবা টেবা করবো কিভাবে শুনি, এমনিতেই তো ধারে কাছে ও আসোনা।ছু/লে ও দো/ষ বলবে অনুমতি ছাড়া ছু/য়েছি।আবার আমার অফিস আছে। অফিস বাদ দিয়ে বাসায় বসে বউয়ের সেবা করলে লোকে বলবে বিয়ের মাস না পেরোতেই আমি বউ ভক্ত হয়ে গেছি।

এবার প্রণয়ের কথা শুনে যেন তেতে উঠল সূচনা।মুখ ঘুড়িয়ে তাকালো প্রণয়ের দিকে।ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললো –

–‘কে বলেছে আপনাকে সেবা করতে আমি বলেছি? নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি আমি। অত কঠি/ন পরিস্থিতি তে ও নিজেকে সামলে নিয়েছি আর সামান্য জ্বরে কা/বু হয়ে যাব।সূচনা এতটাও নরম মনের না,ভে/ঙে গুড়ি/য়ে গেলেও কাউকে বলবেনা দেরিতে হলেও নিজেকে গুছিয়ে নিবে।

রা/গে সূচনার সারা শরীর কা/পছে।চোখের সামনে শুরু থেকে কালকের ঘটনা আর প্রণয়ের সব কথাগুলো যেন কোনো মুভির ফ্লাশব্যাকের ন্যায় ভেসে উঠছে।প্রণয় কিছুই বলল না,সূচনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হুট করে হেসে ফেলল তবে নিঃশব্দে।বড় করে শ্বাস নিলো। একটু এগিয়ে গ্রিলে দুই হাত রেখে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। সূচনা আড় চোখে পরখ করলো তাকে। একটু আগে কি বলেছে না বলেছে খেয়াল না করলেও এখন বুঝেছে।প্রণয় কি তবে রা/গ করলো?বেয়া/দবী করেছে সে।ভাবতেই কেমন যেন অস্থিরতা তৈরি হলো সারা শরীরে।প্রণয় হুট করেই পেছনে ঘুরলো, সূচনা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।চোখ ফেরাতে নিলেই প্রণয় বলে উঠলো-

–‘ এভাবে লুকিয়ে কেন দেখো জা*ন? আমি তোমার একমাত্র বর।আমাকে দেখতেই পারো যত খুশি। ঝ/গড়া করেছ তো কি হয়েছে বরকে দেখতে তো না নেই।
নাও দেখ।

বিস্ম/য়ে চোখ বড় বড় করল সূচনা। কানের মধ্যে বারবার বাজছে জান শব্দটা। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে তার।প্রণয়ের এমন হুটহাট সব সম্মোধন যে তাকে স্পেশাল ফিল করায়। তা কি জানে সে?পরক্ষণেই মনে হলো সে তো অভিমান করেছে।তাই মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘ আমি কারো জা*ন ফা*ন না।আজাই/রা ঢং করতে বলেনি কেউ।

–‘তোমাকে কে বললো তুমি আমার জা*ন।

সূচনা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে। চোয়াল ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘মানে?

তার এমন চাহনি দেখে প্রণয়ের হাসি পেল।মেয়েটা বড় বো/কা। নাহলে আবার জিজ্ঞেস করতো নাকি।সে প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আবার ও জিজ্ঞেস করলো-

–‘তুমি যাবে না?

সূচনা সহসা জবাব দিল-

–‘ না যাবনা।

তার এই উত্তরই কাল হলো।প্রণয় আ/কস্মিক এমন কিছু করবেে তা ধারণাতেই ছিল না সূচনার।সূচনার না বোধক উত্তর শোনার সাথে সাথে ই ফট করে তাকে কোলে তুলে নিল প্রণয়। অবাক হওয়ার প্রতিক্রিয়া ও দেখাতে পারেনি সূচনা। তার আগেই তাকে ঠা/স করে এনে ফেলেছে বিছানার ওপর। সূচনা মৃদু স্বরে ‘আহহ’ বলে উঠলো।এটা আদর করে কো/লে নেয়া ছিল নাকি আদর করে আ/ছার মা/রা বুঝল না সে।ব্যালকনির দরজা লক করে দিয়ে বিছানার কাছে এসে দাড়ালো প্রণয়।বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ল,চুলে হাত চালাতে চালাতে বললো –

–‘ হাহহ শান্তি,, এবার ঘুমাও না হয় চেয়ে থাকো আমার দেখে লাভ নেই।আমার ঘুম পেয়েছে,সো গুড নাইট।

সূচনা আহম্ম/কের ন্যায় কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার দিকে। ইতিমধ্যে আরাম করে শুয়ে চোখ বুজে নিয়েছে সে।ঘুমিয়ে ও গেছে বোধহয়।কিন্তু সূচনার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢে/লে দিয়ে প্রণয় বলে উঠলো –

–‘এখনও ঘুমাইনি আমি।খবরদার রা/গ দেখিয়ে আবারও বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবেনা।সাথে সাথেই ধরে ফেলব আমি।

সূচনা মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘ যাব একশবার যাব, আর আপনি বুঝবেন ও না।

চোখ বন্ধ অবস্থায় ই হাসল প্রণয়।বললো –

–‘ তোমার পা জোড়ার দিকে তাকাও তো জা*ন।

সূচনা ভ্রু কুচকে পায়ের দিকে তাকলো।কুঁচকানো ভ্রু জোড়া অবাক হয়ে প্রসারিত হলো।পা জোড়া তার
ওড়নার এক প্রান্ত দিয়ে বা/ধা আর অন্য প্রান্ত বাঁ/ধা প্রণয়ের পায়ে।

–‘ কীসব পা/গলামি এগুলো? পা বেঁ/ধেছেন কেন?

উঠে বসলো প্রণয়।বালিশের ত/ল থেকে আরেকটা ওড়না বের করে বললো-

–‘ শুধু কী পা, এখন হাত ও বাঁ/ধবো। দেখি হাতটা।

জোর করে এক হাত ও বেঁধে দিল প্রণয়।আরেক প্রান্ত বাধলো প্রণয় নিজের হাতে।সূচনার দুই বাহু ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাথা টে/নে দিল।তারপর হামি দিতে দিতে বললো –

–‘এবার শান্তি তে ঘুমাতে পারব,, গুড নাইট।

নিজেও শুয়ে পড়ল প্রণয়।সূচনা হাসফাস করতে লাগল।হাত পা বাধা অবস্থায় নিজেকে আসা/মীর ন্যায় লাগছে এখন।হাত পা নাড়াচ্ছে সে অনবরত। প্রণয় বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বললো –

–‘জা*ন নড়াচড়া করছো কেন? আরেকবার নড়লে কিন্তু আমি জড়িয়ে ধরে নড়াচড়া থামাব তখন কিছু বলতে পারবে না।

–‘ আমি কিন্তু চিৎ/কার করব এখন।

–‘ছি/হ জা*ন সবাই কি বলবে? বলবে প্রণয় তার বউকে এত আদর করে যে তার বউ,,,

–‘ দোহা/ই আর কিছু বলিয়েন না।আমি ঘুমাচ্ছি।

–‘ দেট’স লাইক আ সুইট ওয়াইফ।

রা/গে দাঁত কি/ড়মিড় করছে সূচনা।মনে মনে শ’খানেক কথাও শুনিয়ে দিচ্ছে প্রণয়কে।তাকে এভাবে বেঁ/ধে রেখে সে আরাম করে ঘুমাবে তা কি করে সম্ভব? তার ঘুম ভাঙা/নো উচিত।কিন্তু হাত পা বাধা অবস্থায় তো আর কিছু করা যাবে না।প্রণয়ের দিকে ফিরতেই প্রণয় নড়েচড়ে উঠল।হাত বা পায়ের বাধনে টা/ন পড়ায় বোধহয়।নড়েচড়ে আবার ও তলি/য়ে গেল ঘুমে।সূচনা প্রণয়ের মুখের দিকে তাকালো এক পলক।ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় কেমন শান্ত, শীতল লাগছে তার মুখখানা।কেমন ক্লান্তির ছাপ।এই মুখশ্রীতে তাকাতেই নিজেকে কেমন যেন দুর্বল লাগছে সূচনার।চোখ জ্বা/লা করছে, কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছে।এ কেমন অনুভূতি? এমন লাগছে কেন তার?চোখ সরিয়ে নিতে গেলেও পারলনা। এই অস্থিরতা থাকুক,চোখে জ্বা/লা হচ্ছে হোক কিন্তু অনুভূতি টা অন্যরকম।একদমই নিত্যনতুন।নিষিদ্ধ এক আকাঙ্খা জা/গল মনে।তার জন্য নিষিদ্ধ বটে।সে এখনও প্রণয়ের সামনে স্বাভাবিক ভাবে দু’টো কথাও বলতে পারেনা।ঝ/গড়ার সময় আলাদা ব্যাপার,তখন তো অত কিছু খেয়ালে থাকেনা।কিন্তু এখন তো ঘুমিয়ে আছে এখন একটু ছু/য়ে দিলে কি হবে?ঘুমন্ত প্রণয়ের মুখশ্রীতে তাকিয়ে ই ভাবতে লাগল সূচনা।ভাবতে ভাবতে আনমনেই হাত চলে গেল প্রণয়ের গা/লে।সাথে সাথে সরিয়ে নিল হাত।তার শ্বাস ওঠা নামা করছে দ্রুত।কারণ ছাড়াই চোখ ভরে এলো তার।দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে ও পড়/লো।এখন আর জ্বলছে না আঁখি জোড়া। অশান্ত মনে শান্তি মি/লেছে এখন।অজান্তেই অধর কোণে এক চিলতে হাসি ফুট/ল তার।প্রণয়ের দিকে মুখ করেই বন্ধ করলো আখিঁ জোড়া।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৯
_____________________________
সারাদিনের ধক*ল তারপর বাসায় এসে সব নিয়ম কানুন সেরে দিনাকে জাওয়াদের রুমে দিয়ে যাওয়া হয়েছে।লোক সমাগম থেকে ছাড়া পেতেই দিনা লাগেজ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ছুট লাগিয়েছে ওয়াশরুমে।এমনিতেই সে অতিরিক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে।যে মেয়েটা হাতে একটু ধুলোর ছোয়া লাগলে ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার জন্য বে*হুশ হয়ে যায়,সে যে এতক্ষণ ধরে এক কাপড়ে এত লোকের মাঝে কা/টিয়েছে সেটা অনেক।জাওয়াদের রুমটা দিনার পছন্দ অনুযায়ী টক*টকে লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে।সাথে অবশ্য হলুদ গোলাপ আর আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ার ও আছে। রুমে মোমবাতিও জ্বলছে গুটি কয়েক।লাইট অফ করা,মোমবাতির আলোতে যতটুকু দেখা যাচ্ছে অতটুকুই।শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসেছে দিনা,আয়নার সামনে বসে আছে সে।পড়নে তার কালো পাড়ের জলপাই রঙা শাড়ী।দরজা খোলার শব্দ পেতেই দিনা বুঝতে পারল যে জাওয়াদ এসেছে।মাথা তুলে তাকালোনা।দরজা লাগিয়ে কয়েক পা এগিয়ে এসে জাওয়াদ কোমল স্বরে ডাকলো-

–‘দিনা,,

খানিক কে*পে উঠল দিনা।মাথা তুলে তাকালো।জবাব দিল-

–‘জ্বী।

–‘ আমার লজ্জাবতীর সাথে আজকে রাত্রি বিলাস করব।অনুমতি আছে?

দিনা মাথা নাড়ালো।জাওয়াদ হাত বাড়িয়ে দিলে হাতে হাত রাখলো দিনা।তাকে নিয়ে ব্যালকনিতে গেল,পাশাপাশি দাড়ালো দুজন। বিস্তর আকাশে এক ফা*লি চাঁদের উকি।দুজনের দৃষ্টি সেদিকেই নিবদ্ধ।দিনার হাতটা এখনো জাওয়াদের মুঠোবন্দি।দুরু দুরু কা/পছে দিনার বু*ক। আজ যদি জাওয়াদ তার স্বামীর হক চায় তাহলে কি করবে সে? না করে দিবে?নাহ, না কেন করবে?এতদিন অপেক্ষায় ছিল এই রাতের।যা হবার বিয়ের পর হবে।বিয়ে হয়ে গেছে দুজনের মতেই,ভালোবাসা,সম্মান আছে তাদের সম্পর্কে।তাহলে দ্বিধা কিসের?কোম*রে শীতল স্পর্শ পেতেই চম/কে উঠল দিনা।বুঝতে বাকি রইলো না জাওয়াদ এটা।তার কাধে মাথা রেখে জাওয়াদ শান্ত, শীতল গলায় বললো –

–‘ লজ্জাবতীর লজ্জা কী আজকে ভা/ঙবে?ভাঙা/তে চাই যে আমি।কত শত অপেক্ষার প্রহর গুনলাম এই রাতের।তাকে একটু গভীর ভাবে ছুয়ে দেখার জন্য,আজকে কী সেই অনুমতি পাবনা?

দিনা থম/কে গেল একদম।লজ্জায় কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখাতে বা কথা বলতেও ভুলে গেল যেন।জাওয়াদ এর হাতের ওপর তার কাঁপা কাঁপা হাতটা রাখলো।মুচকি হাসলো জাওয়াদ।কাধ থেকে উঠতে উঠতে দিনার চিবুকে উষ্ণ স্পর্শ আ*কলো সে।গভীর হলো স্পর্শ। নিঃশ্বাসের গতিবিধি ক্রমশ বাড়*তে লাগলো দুজনের।গ্রীবা,চিবুক ছুয়ে অতঃপর ওষ্ঠা/ধর মিলিয়ে দিল দুজনের।থাম/লো জাওয়াদ,দিনাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে পা বাড়ালো রুমের উদ্দেশ্য।হয়তো নতুন শুরুর পথে,গভীর থেকে গভীর স্পর্শে মত্ত হতে।
_________________________
ঘা/ড়ে গরম অনুভব হতেই ঘুম হালকা হয়ে গেল প্রণয়ের। চোখমুখ কুচকে চাইলো।ড্রিম লাইটের আলো তে আচ্ছন্ন রুম।ঘাড়ে গরম অনুভূত হওয়ার কারণ বুঝতে সময় লাগল কয়েক সেকেন্ড।আলতো ভাবে ঘাড় বা’কিয়ে তাকালো পেছনে।একদম তার সাথে লেপ্টে ঘুমোচ্ছে সূচনা।পিঠে মুখ গুজে রেখেছে।একটা হাত প্রণয়ের পেটের ওপর এসে ঠেকেছে।মাঝে জায়গা করে নেয়া শিমুল তুলোর কোলবালিশ টার অবস্থান হয়েছে আজ পায়ের নিচে।প্রণয় কিছুক্ষণ অনিমেষ তাকিয়ে রইলো সূচনার মুখের দিক।নড়লো না একদম,নড়লে যে ঘুম ভেঙে যাবে সূচনার।সেভাবেই ঘাড় ঘুরিয়ে শুয়ে রইলো।ঠোঁটে মিটিমিটি হাসির জোগান হলো তার।ব*ক্ষমাঝে আশ্বাসের সহিত ভাবনার হলো সূচনা-“আজকে তো ঘুমের ঘোরে এসেছ,ছুয়েছ আমায়।কোনো একদিন স্বইচ্ছায় মাথা রাখবে এই বু/কে,আ/কড়ে ধরবে দুই বাহু,সেই অপেক্ষায় আছি।আমার বু/কে নিজেকে নিরাপদ মনে করে প্রশান্তির শ্বাস ছাড়বে সেই অপেক্ষায় আছি।সেই অপেক্ষার অবসান ঘটানোর অপেক্ষায় আছি আমি।”
_____________________________
সবে আগমন ঘটা শীতের সকালের সময়টায় এখন শরীরে কা/পন ধরায়।রোদের মিহি ঝিলিক ও দেখা যায় আবার।ব্যালকনির দরজা বন্ধ থাকায় বাইরের আলো প্রবেশ করেনি রুমে।সূচনা ও ওঠেনি এখনও।বার কয়েক পলক ঝাপ/টে তাকালো প্রণয়।ড্রীম লাইটের সবুজ আলোর ঝ/লকানি চোখে লাগতেই লাফ দিয়ে উঠলো।ফোন হাতরে টাইম দেখল।সকাল সাতটা প্রায়। দুহাত দিয়ে মাথা চে/পে ধরল।মাত্র উঠেছে সে মানে ফজরের নামায মিস।ধ্যাত।মেজা/জ তিরিক্ষি হয়ে গেছে। পাশ ফিরে সূচনার দিকে এক পলক তাকালো।এখন ও তন্দ্রাচ্ছন্ন সে।হাত এখন ও মুড়িয়ে রেখেছে যেন বেধে রাখা।তার হাত পায়ের বাধ’ন রাতেই খুলেই দিয়েছে প্রণয়।অথচ সে এখনও বুঝেনি।মনে মনে ‘বো/কা মেয়ে’ উপাধি দিয়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখল সূচনাও উঠে গেছে।এলোমেলো অবস্থায় দাড়িয়ে আছে বিছানার সামনে।প্রণয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।সূচনা চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী সমস্যা? এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?হাত পা বে/
/ধে শখ মেটে নি? নাকি অন্য কিছু করার শখ আছে?

প্রণয় মুখ বা/কালো।থুতনিতে হাত রেখে ভাবুক কণ্ঠে বললো-

–‘ হ্যা ঠিকই ধরেছ,তুমি বুঝলে কিভাবে বলোতো?
যাক গে আমার কিন্তু এখন,,

সূচনা কিছু টা ভীত গলায় বললো –

–‘ আ,,আপনার কী?

সূচনার দিকে এগোতে এগোতে প্রণয় মিহি স্বরে বলতে লাগলো-

–‘ আমার,,আমার ইচ্ছে করছে তোমার,,

–‘আব,,ব ক,,কী আমার?

–‘ আমার ইচ্ছে করছে তোমার হাতের বানানো চা খেতে।প্রচুর মাথা ধরেছে,তোমার বানানো কড়া লিকারে চা টা খেলেই সাড়বে।যাও তাড়াতাড়ি, বানিয়ে নিয়ে এসো।

আদেশের স্বরে বললো প্রণয়।সূচনা গোল চোখে তাকিয়ে রইলো।প্রণয় আবারও বললো –

–‘ সারাক্ষণ উল্টাপাল্টা ভাবনা,ছি/হ,তুমি এমন!যাও চা বানিয়ে আনো।

দৃষ্টি সরিয়ে স্বাভাবিক হয়ে আবারও তাকালো প্রণয়ের দিকে তার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি জুড়ে আছে।প্রণয় ইচ্ছে করে ই তাকে লজ্জা দিচ্ছে আর সে গাধি/র মতো লজ্জায় লাল,পিলা হয়ে যাচ্ছে।নিজেই নিজেকে গাধি উপাধি দিল সূচনা। থমথমে গলায় বললো –

–‘ আমি ফ্রেশ হয়ে নেই,পাঁচ মিনিট লাগবে। একটু বসেন।

প্রণয় মাথা নাড়িয়ে বললো- “যাও।

ফ্রেশ হয়ে হাত মুখ কোনোরকম মুছে দরজার দিকে যাচ্ছিল সূচনা।পেছন থেকে হাত টেনে ধরতেই পা থেমে গেল তার।না ঘুরেই জিজ্ঞেস করলো-

–‘ আবার কী হয়েছে? হাত কেন ধরলেন এভাবে?

প্রণয় পূর্বের ন্যায় হাত টেনে নিজের দিকে ঘুরালে সূচনাকে।হাত ছেড়ে দিয়ে দুই হাতে শরীরে জড়িয়ে দিল ধূসর রঙা ওড়নাটা।সূচনার দৃষ্টি ওড়নাতেই আ/টকে গেল।মস্তিষ্কে যেন হাতুড়ি পিটি/য়ে কেউ জানান দিল -“এতক্ষণ ওড়না ছাড়াই প্রণয়ের সামনে ঘুরঘুর করছিলি সূচি।হায় হায়! লজ্জায় কেমন যেন হাসফাস লাগছে তার।ইশশশ,,কী বিব্রতকর পরিস্থিতি।তার সে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে যেন নতুন মাত্রা যোগ হলো প্রণয়ের কথায়।

–‘ এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, কালকে রাত থেকেই এভাবে দেখছি,শুধু কালকে না তার আগের রাতেও দেখেছি।

সূচনা ঝট করে প্রণয়ের দিকে তাকালো।তার দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে প্রণয় বললো –

–‘আজ্ঞে হ্যা কালকে রাতে আমি রুমে আসার আগে যখন ব্যালকনিতে ছুট লাগিয়েছিলেন না,তখনই ওড়না নিতে ভুলে গেছেন।ব্যালকনিতে যখন আপনি আমার দিকে ঘুরে কথা বলছিলেন তখনই খেয়াল করেছি আমি।আপনার এই ওড়না দিয়ে ই পা বেধেছিলাম আমি।আর আপনি এখনও বুঝেননি।

সূচনা হতবাক।এতটা মন ভুলো, খামখেয়ালি সে!এভাবেই বাইরে যাচ্ছিল।ক/পাল!মানুষের দিনদিন উন্নতি হয় এদিকে তার অবনতি ছাড়া কিছু ই হচ্ছে না।

–‘এখন এত ভেবে লাভ নেই যা হওয়দর আই মিন যা দেখার হয়ে গেছে।এত ভাবাভাবির কি আছে?লজ্জা পাওয়ার ই বা কি আছে?আমি আর তুমি ছিলাম, অন্য কেউ তো দেখেনি। আমি নিশ্চয়ই তোমার পর না, তোমার বর তো এত লজ্জাটজ্জা দূরে নিয়ে ফেলো।ঔসবের দরকার নেই।আমার সামনে ওড়না ছাড়া কেন অন্য কিছু আই মিন ওড়না ছাড়া থাকো সমস্যা নেই বাট বাইরে যেও না তাহলে পা ভে/ঙে ঘরে বসিয়ে রাখব।বলেছিলামনা আমার জিনিস আমি দেখব,শুধু আমি।অনেক সময় নষ্ট করেছ, পাচ মিনিট সময় দিলাম চা নিয়ে আসো যাও।

প্রণয় কথার শুরু দুষ্টুমির সাথে করলেও শেষ করলো কড়া কণ্ঠে রা/গী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সূচনা ভয় পেল তার চোখের দিক তাকিয়ে।শুকনো ঢোক গিলে বললো-ঠিক আছে, যাচ্ছি।
_________________________________
–‘ আপনি কি ছাড়বেন না?

নিচু স্বরে জাওয়াদকে বললো দিনা।তার একহাত মুঠোবন্দি জাওয়াদের হাতে।জাওয়াদ থমথমে গলায় বললো –

–‘ছাড়বনা আগে বলো সকাল থেকে পালাচ্ছ কেন আমার কাছ থেকে?

–‘ কই পালাচ্ছি?

–‘ তাহলে আমি মিথ্যা বলছি?

–‘ তা তো বলিনি।

–‘তাহলে বলো।

–‘ আপনি ইচ্ছে করে এমন করেছেন তাই না?

–‘কি করেছি?

–‘এই যে রিসেপশন করবেননা।আর না আমাকে আজকে যেতে দিবেন।

–‘ হ্যা ঠিকই বলেছ।এবার আসল কথা বলো।

–‘আমার লজ্জা লাগছে।

দ্বিধা ছাড়াই কথাটা বললো দিনা।জাওয়াদ হাসলো।উচ্চস্বরে হাসলো।এগিয়ে যেয়ে অধর ছোয়ালো দিনার ওষ্ঠাধরে।চমকে গেল দিনা, মূহুর্তেই হানা দিল মুখশ্রীতে লজ্জারা।জাওয়াদ হেসে বললো-

–‘এবার যাও।

দিনা লাজুক হাসলো।সাথে সাথে উঠলো না।একটু সময় নিয়ে পরে উঠে দাড়ালো।রুম থেকে চলো যাওয়ার আগে জাওয়াদের হাসির শব্দ শোনা গেল।
_______________________________
অলস দুপুর।ব্যালকনিতে একটা বেতের চেয়ার টেনে বসেছে।ব্যালকনিতে অন্য গাছগুলোর সাথে নতুন করে অলকানন্দা গাছটা ও জায়গা করে নিয়েছে এক পাশে।বাগান থেকে একটাা টব নিয়ে এখানে রেখেছে।কী সুন্দর ফুল ফুটেছে সেখানে,যেন সবুজ শিয়রে হলুদ তারকাদের আগমন।মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে সেখানে।মনে মনে অবশ্য ভাবনা অনেক।দিনার অনার্স কমপ্লিট করার পর গেট টুগেদারের আয়োজন করা হবে।তাই রিসেপশন এর আয়োজন করা হয়নি।দুপুরে খেয়ে যে যার মতো রুমে।মিসেস আফিয়া অসুস্থ একটু।হওয়ারই কথা এইকয়দিনে চাপ তো কম যায়নি তার ওপর দিয়ে।প্রেশার বেড়ে গেছে একটু।ঘুমাচ্ছোন তিনি।প্রণয় বাসায়ই আজকে।সকাল থেকে একটু পর পরই ফোন বেজে যাচ্ছে তার।বিরক্তি তে একবার রুম থেকে ই চলে গিয়েছিল সূচনা।এই তো একটু আগে এই ফোন নিয়ে ছোট খাটো একটা ঝা/মেলাও হয়ে গেছে।প্রণয় সোফাতে বসেছিল।সূচনা আর তিথি কথা বলছিল বিছানায় বসে।তখনই ফোন বেজে উঠেছে প্রণয়ের।বিরক্তি তে মুখ বা’কিয়ে প্রণয়ের দিকে তাকালেও তিথি বলেই ফেলেছে –‘ভাবি আর কেউ হোক আর না হোক এই ফোন ই হচ্ছে তোমার একমাত্র স/তীন।প্রণয় অস্ফুটে স্বরে বলেছিল-শুধু কি ফোন আরও একজন আছে।আস্তে বললেও তিথি শুনে ফেলেছে।ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে-

–‘ আরেকজন?আরেকজন আবার কে?

–‘তোর পেয়ারি ভাবিকে জিজ্ঞেস কর।

–‘ বা/জে কথা বলবেন না।(সূচনা)

–‘ ভাইয়া বলোতো।

–‘আরে ওই যে শিমুল,,

–‘কিহ?তার নাম শিমুল?

–‘ আরেএ

–‘ভাইয়া এটা কে?কবে থেকে চলে এসব?

–‘ ঠা/টিয়ে দিব।এজন্যই বলে মেয়ে মানুষ বুঝে কম চি/ল্লায় বেশি।

–‘ভাইয়া।

আবারও ফোন বেজে ওঠায় প্রণয় কিছু না বলে ফোন নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।

–‘ প্রণয়ী শোনো।

কোমলপ্রাণ,শীতল কণ্ঠে ঘার বা’কিয়ে পেছনে তাকালো সূচনা।প্রণয় দাড়িয়ে আছে।চোখমুখ স্বাভাবিক হলেও কেমন যেন লাগছে তাকে।সূচনা ভ্রু কুটি করে জিজ্ঞেস করলো-

–‘ কী হয়েছে? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

–‘ আমাকে যেতে হবে?

সূচনা কিঞ্চিৎ ভড়কে গেল।যেতে হবে মানে?কেথায় যাবে?

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_shifa
#পর্ব_৩০
____________________________
ব্যাগ গোছাচ্ছে প্রণয়।আ/ড় চোখে তাকে দেখছে সূচনা। চোখ জ্বা/লা করছে তার,বার কয়েক পলক ঝা/পটিয়ে ও তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে।এক সপ্তাহের জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছে প্রণয়।ব্যাগের চেই/ন লাগিয়ে প্রণয় পেছন ঘুরে নিজেকে আয়নায় আরেকবার দেখে নিল এক পলক।কাধে ব্যাগ নিতে নিতে কা/ঠকা/ঠ গলায় বললো –

–‘আসছি,সাবধানে থেকো।সবার খেয়াল রেখো আর নিজের ও। অযত্ন যেন না হয়।তা হলে খবর আছে।

সূচনা তাকিয়ে ই রইলো,কিছু বললোনা।প্রণয় পেছন ঘুরে হাটা ধরলো।দরজার কাছে যেয়ে থে/মে গেল প্রণয়।সূচনার দিকে ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।তাকে এভাবে তাকাতে দেখে সূচনাও প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।প্রণয় মিনিট দুয়েক চুপ করে থেকে হুট করে সূচনাকে মিশি/য়ে নিল নিজের সাথে। সূচনা ভড়/কে যেয়ে দু কদম পেছাতে চেয়েও পারলনা। প্রণয় অনেকটা শ/ক্ত করে ধরেছে তাকে।ঠাই দাড়িয়ে রইলো সূচনা।তার হাত পা কা/পছে অনবরত।দ্রুত ওঠানামা করছে সূচনার শ্বাস।এতক্ষণে চোখ ভি/জে উঠেছে সূচনার।”সূচনার কাছে এখন মনে হচ্ছে সে এটাই চাইছিল।যাওয়ার আগে প্রণয়ের একটু ছো/য়া।কিন্তু মুখ ফুটে বলা বা কিছু করার বিন্দু মাত্র সা/হস যে নেই।প্রণয় কি বুঝতে পেরেছে?নাকি তার মতো প্রণয় ও যাওয়ার আগে তাকে একটু স্পর্শ করতে চেয়েছে তাকে।একটু আদরে মু/ড়িয়ে দিতে চেয়েছে?এই প্রশ্নের উত্তর কী?জানা নেই তার।প্রণয় এত তাড়া/হুরো করে হঠাৎ চট্টগ্রাম কেন যাচ্ছে সে প্রশ্নের উত্তর ও দেয় নি প্রণয়।কিন্তু আপাদত প্রণয়ের জ/ড়িয়ে ধরা দেখে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই সূচনা পা/লিয়ে যাবে।মিনিট কয়েক এভাবেই জ/ড়িয়ে ধরে রাখলো প্রণয়।সূচনার দুই বাহুতে হাত রেখে আলতো স্পর্শ আকঁলো সূচনার কপালে।সূচনার ভে/জা চোখ দেখে ঠো/ট কা/মড়ে হাসলো প্রণয়।কিছুটা ফিস/ফিসানি কণ্ঠে বললো –

–‘কাঁ/দছ কেন?আমি চলে যাচ্ছি এজন্য?মিস করবে আমাকে?

প্রশ্নের উত্তর দিল না সূচনা।ঠোঁ/টে ঠো/ট চেপে মুখ শ/ক্ত করে দাড়িয়ে রইলো।প্রণয় আবারও হাসলো।হাসি থামিয়ে মুখ গ/ম্ভীর আকার ধারণ করলো।ক/ড়া কন্ঠে বললো-

–‘তোমার বর চলে যাচ্ছে আর তুমি সং সে/জে দাড়িয়ে আছো।কোনো দায়িত্ব বোধ নেই নাকি!

সূচনা আবারও ভ/ড়কে গেল।এমন কথা আশা করেনি সে।ইত/স্তত কণ্ঠে বললো –

–‘ আপনি কি বলছেন?বুঝতে পারছিনা।কিছু কি লাগবে আপনার?

–‘ তুমি কিছু বুঝবে ও না। গা/ধি একটা।

–‘ এখানে গা/ধি হওয়ার কি আছে? বুঝিয়ে বলুন।

–‘ গা/ধি আমি বাইরে যাচ্ছি।

–‘হ্যা তো।

–‘আমার মাথা।বর বাইরে যাওয়ার আগে নরমালি কাপলরা কি করে?

–‘ক,,কী করে?

–‘বলেছিলাম তো।

–‘আম,,আমার মনে নেই।

–‘আমি জানি তোমার মনে আছে আর এটাও জানি তুমি স্বীকার করবে না।আমিই বলি।

–‘ব,,বলুন।

প্রণয় ফিসফিসানি কণ্ঠে বললো –

–‘জ/ড়িয়ে ধরে কপালে চু/মু খেয়ে বলতে হয় ‘যেয়ে আবার আসুন।’

–‘ও,,ওহ।

–‘কি ওহ?কি করতে হবে এখন?

–‘যে,,যেয়ে আবার আসুন।

–‘আর?

–‘আর,,আর কী?

–‘আমি কয়দিনের জন্য যাচ্ছি?

–‘এক সপ্তাহের জন্য।

–‘এদিকে তাকাও।

–‘বলুন।

–‘দাও।

–‘ক,,কী দিব?

–‘অনুমতি।

–‘কিসের অনুমতি?

–‘আমাকে প্রথম বারের মতো নিজ থেকে একটু ছু/য়ে দিবে প্রণয়ী?সেই অনুমতি চাই,তোমার কাছেই।এই যে সাতদিন তোমার থেকে দূরে থাকব,তোমাকে চোখের সামনে দেখবনা,ছুয়ে দিতে পারবনা।সময়টা যে কঠি/ন হবে কিন্তু তোমার প্রথম স্পর্শ পাওয়ার মূহুর্তকে স্মরণে রেখে ক/ঠিন সময়গুলোও অনায়াসে পার করে দিবে প্রণয়।অনুমতি চাই,দিবেনা?

কী সুন্দর আবেদন!যেন একরাশ মায়া আর আবেগের সংমিশ্রণ।না/কচ করা যায় আদৌ?সূচনা কিছু না বলে দাড়িয়ে রইলো পাথরের ন্যায়।কি করবে সে?জানেনা।প্রণয় তাড়া দিয়ে বললো-

–‘আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি কি চলে যাব?

এবারও প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারলনা সূচনা।নিজের ওপর নিজেরই বির/ক্তি লাগছে এখন।এমন কেন সে?একটু ছুয়ে দিলে কি এমন হবে?তারা হালাল সম্পর্কে আছে,স্বামী স্ত্রী তারা। সমস্যা তো নেই। তাহলে কি এখনও ভুলতে পারেনি তাকে?কথাগুলো ভাবতেই পিলে চ/মকালো সূচনা।ছি/হ কিসব ভাবছে সে! নিজেই নিজেকে বোঝালো- ‘তাকে ভুলে গেছি আমি,অতীতের কোনো জায়গা নেই না হবে।নত মস্তক চট করে তুললো।মাথাটা এগিয়ে নিয়ে প্রণয়ের কপালে স্পর্শ করালো ঠোট।তড়িৎ গতিতে সরে আসলো।কী অদ্ভুত অনুভূতি!ছোট্ট এক স্পর্শেই কেমন অস্থির অথির প্রণয় খানিক সময় দাড়িয়ে রইলো স্তব্ধ হয়ে।তবে তার বাদেই মুখে ফুটলো বিজয়ের হাসি।হাসি টেনে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কপালে চুমু খাওয়ার উদ্দেশ্য জানো?

কোনোরকম দু দিকে মাথা নাড়ালো সূচনা।যার মানে সে জানেনা। প্রণয় হাসলো।সূচনার কটিতে হাত রেখে টেনে আনলো নিজের দিকে।তার কানের কাছে মুখটা এনে ফিচেল কণ্ঠে শোধালো-

–‘কপালে চুমু খাওয়ার প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে ভালোবাসার প্রকাশ করা আর দ্বিতীয় হচ্ছে যাকে চুমু খাওয়া হয়েছে তার প্রতি বিশ্বাস অর্জনের একটি দিক।তুমি কোনটা করেছো?

প্রণয়ের কথাটুকুন কর্ণপাত হতেই সূচনা চোখ বন্ধ করে নিল।বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।সার শরীর কাপ/ছে তার।প্রণয় ছেড়ে দিল।বা’কা হেসে বললো –

–‘উত্তর যাই হোক,দুইটাতেই চলবে।বিশ্বাস না থাকলে সম্পর্ক টিকে না আর সম্পর্কে বিশ্বাস থাকলে ভালোবাসাটা ও আপনা আপনি হয়ে যাবে। এবার আসি প্রণয়ী।খেয়াল রেখো,ফোন দিব আমি।

পেছন ঘুরে হাটা ধরলো প্রণয়। দরজার কাছে আসতেই কর্ণকুহর হলো –

–‘ যেয়ে আবার আসুন।

প্রণয় হাসলো,পা থামলো না,পেছন ঘুরে তাকালো ও না।কিন্তু হাসি সরলো না ওষ্ঠাধর থেকে।মিসসে আফিয়া, ইরা ও তিথিকে বিদায় জানিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।
_________________________________
মৃদু বাতাস,হালকা ঠান্ডা,পরিষ্কার আকাশ,ব্যস্ত নগরীর নিরব রূপ।হোটেলের ফিফ্ত ফ্লোরের ছোট ব্যালকনিতে দাড়িয়ে এই পরিবেশটাই উপভোগ করছে প্রণয়।চোখ জোড়া একবার ফোনে আরেকবার সামনে যাচ্ছে। এই তো আধা ঘণ্টা হলো সে চট্টগ্রামে এসে পোঁছেছে।এখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা।ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে দাড়িয়েছে।তন্ময় এসেছে তার সাথে।সে পাশের রুমে।মিসেস আফিয়াকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে পোঁছানোর কথা।জার্নি করে মাথা ধরে গেছে একদম।তার ওপর আগের তিন চারদিনের খাটাখা/টনি।মনে হচ্ছে বিছানায় শুয়ে পরলেই ঘুমিয়ে যাবে।সূচনাকে ফোন দেয়া হয়নি এখনো।একটু এগিয়ে এসে কাউচের ওপর রাখা ফোনটা হাতে নিতেই কলিং বেলের আওয়াজ কানে আসলো।রাতের খাবার রুমেই দিয়ে যেতে বলেছিল প্রণয়।হয়তো খাবার নিয়ে ই এসেছে। ব্যালকনি থেকে রুমে এসে দরজা খুলে দিল।অল্প বয়সী একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে খাবার নিয়ে মুখে হাসি টেনে।প্রণয় সরে যেয়ে তাকে ঢোকার জায়গা করে দিল।খাবার দিয়ে সে চলেও গেল।দরজা লক করে বিছানায় বসতেই ফোন বেজে উঠল।রিসিভ করলো প্রণয়।শোনা গেল তন্ময়ের ব্যস্ত কণ্ঠ-

–‘স্যার খাবার দিয়ে গেছে রুমে?কোনো সমস্যা? কিছু লাগবে?

প্রণয় হাসলো সাথে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো।মাঝে মাঝে তন্ময় এমন ভাবে বিহেভ করবে যেন প্রণয় বাচ্চা কোনো।তবে এটা যে তন্ময়ের ভালোবাসা।নিজের থেকে তার জন্য বেশি ভাবে।তন্ময়কে আশ্বাস দিল-

–‘সব ঠিক আছে আর আমি বাচ্চা না,খেয়াল রাখতে পারব।অত টেনশন করো না।নিজের কথা ভাবো।

–‘আমার জন্য আপনি আছেন না স্যার।আপনি থাকলেই হবে।

–‘ হ্যা আছি।তবে নিজের টা নিজের ভাবতে হয়।অন্য রা কয়দিন? আজ আছে কাল থাকবেনা।মানুষ স্বার্থপর জানো তো।রং বদলাতে সময় লাগেনা।তুমি তো ভালো করেই জানো।

–‘জানি স্যার।আর সে স্বার্থপর দের শা/স্তিও পেতে হয়।

–‘হুম।খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো,জার্নি করে এসেছো।আবার সকালেও যেতে হবে।

–‘ জ্বি স্যার। আরেকটা কথা

–‘বলো

–‘স্যার কালকে উনি চট্টগ্রাম আসবেন,ওনার ম্যানেজারকে ম্যানেজ করে নিয়েছি।কাজটা কালকেই সেরে ফেলবেন?

–‘একটু সময় দাও, আসবেন,ঘুরবেন,মজা করবেন থাকুক।তারপর তো আর সুযোগ পাবেননা।

–‘ঠিক আছে স্যার।রাখি তাহলে।

–‘হু।
_________________________
রাত দশটার বেশি। ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে সূচনা প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ। প্রণয়ের কলের অপেক্ষায়। মিসেস আফিয়ার কাছ থেকে শুনেছে প্রণয় কল দিয়েছিল।কিন্তু তাকে তো একবার কল দিলনা।যেতে যেতেই ভুলে গেল?সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঠিক করলো নিজেই কল দিবে।যা ভাবা তাই কাজ।প্রণয়ের নাম্বারে কল দিতেই রিসিভ হলো সাথে সাথে।মিনিট তিনেকের মতো নিশ্চুপ দুজনই।নিরবতা ভাঙলো প্রণয়ের রুঢ় কণ্ঠে বলা কথায়-

–‘চুপ করে থাকতে কল দিয়েছ এত রাতে? কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।

প্রণয়ের হেন বাক্যে সূচনা ‘থ’ হয়ে গেল।কান থেকে ফোন সরিয়ে স্ক্রিনে নাম্বারটা দেখে নিল না ঠিকঠাক ই তো আছে। প্রণয়ের নাম্বারই।কিন্তু প্রণয়ের ব্যবহার বোধগম্য হলো না তার। কিছু বলার আগেই প্রণয় আবারও বললো-

–‘ কথা বলছো না কেন? ফোন দিয়েছ কেন?

এবার চুপ থাকতে পারলনা।অভিমানে চোখ ভরে উঠলো।গলা ও শুকিয়ে যেন কাঠ প্রায়।কিছু না বলে খ/ট করে রেখে দিল ফোন। নিজেই নিজেকে ব/কলো। কে বলেছিল কল দিতে?না দেয়া ই তো ভালো ছিল। সে থাকুক না তার মতো,আমার কিসের চিন্তা? দিবনা আর, সে কল দিলেও রিসিভ করবনা।থাকুক।

–‘ভাবি কি বিড়বিড় করছো?

নিজেই বিড়বিড় করছিলো সূচনা।পেছন থেকে ইরার কণ্ঠ পেয়ে কিঞ্চিৎ চম/কে উঠে পেছনে তাকালো। আমতা আমতা করে বললো-

–‘কিছু না এমনি।তুমি ঘুমাওনি কেন এখনো?

–‘তোমার সাথে ঘুমাবো।

–‘তিথি একা না?

–‘হ্যা।

–‘সমস্যা নেই, আমি একা থাকতে পারব।বিয়ের আগে তো একাই থাকতাম।তুমি তিথির কাছে যাও।

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।

–‘হুম।

ইরা চলে গেল বিনাবাক্য ব্যয়ে।তার পিছু পিছু যেয়ে দরজা লক করে বিষন্ন মনে বিছানায় শুয়ে পরল সূচনা।মনে ভাবনারা ডানা,ঝাপটাতে ব্যস্ত।ভালো লাগছে না কেন তার।মনটা হুট করেই আরও খা/রাপ হয়ে গেল যেন।আচ্ছা এমন কেন প্রণয়?এত রা/গ?ওভাবে বলার কি আছে?ধ্যা/ত, তোরই দোষ কে বলেছিল আগ বাড়িয়ে খবর নিতে।বেশি বুঝিস তো তাই এই অবস্থা। এপাশ ওপাশ করে ও ঘুম আসছে না।ঘুম কী হবে না আমার আজকে?
.
.
বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে আছে প্রণয়। বাম হাতে ধরা ফোনে ভেসে আছে মেরুন রঙা শাড়ী পড়া এক রমণীর ছবি।সে ছবির দিকে তাকিয়ে প্রণয়ের অধরে হাসির রেশ।ছবিটা সূচনার।বিয়ের দিনের সাজে। এতক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি খেয়েও ঘুম ধরা দেয়নি দু চোখে। শেষে ফোন হাতে নিয়ে সূচনার ছবি বের করে দেখছে।সে জানে সূচনা রা/গ করেছে।সেই ছবির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো-

–‘ আমি জানি প্রণয়ী অভিমান করেছে।কিন্তু কি করব বলো তোমার সাথে কথা বললে এখানে মন টিকবে না। ইচ্ছে করবে ছুটে যাই তোমার কাছে। কিন্তু আমার এখানে কাজ সারতে হবে, নাহলে যাব কিভাবে?তোমাকে দেখতে,তোমার ঘুমন্ত তৈলাক্ত মুখশ্রীর অদ্ভুত সৌন্দর্য উপভোগ করতে রোজ ইচ্ছে করে। তার জন্য ই তো এত তাড়া।ক্ষণিকের অভিমান থাকুক। অভিমানে অভিমানে আজ দুজন না হয় নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেই। কোনো এক রাতে তোমাকে বু/কে নিয়ে গল্প শোনাবো- প্রণয়ের সূচনার গল্প,আমাদের প্রথম অভিমানের গল্প। তুমি লাজ রাঙা হবে আমি মুগ্ধ নয়নে দেখব।আচ্ছা অভিমানে কী তবে তোমার হৃদয়ে প্রেম জাগবে?

#চলবে