#প্রেম_থেকে_অপ্রেম
#পর্ব১৮ (বোনাস পার্ট!)
#রাউফুন
‘এসব তুমি কি করছিলে মালা? তুমি নতুন বউ সেটা কিভাবে ভুলে গেলে? সবাই তোমাকে নিয়ে কি ভাববে এখন? সবার মনোভাব টা কি হবে তোমার সম্পর্কে?’
‘আমি রাগ করলে মানুষ খু’ন করে ফেলবো এরকম মনে হয়! রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারি না।’
‘এরকম শেইম লেস কাজ করার আগে আমার পরিবারের কথা মাথা এলো না একবারও? তোমার কাছে এটা একদমই অপ্রত্যাশিত ছিলো। হঠাৎ এতোটা হিং’সা, রা’গ, বিরুপ কোথা থেকে উদয় হলো তোমার মাঝে? আমি তো জানতাম তুমি অত্যন্ত সহবত জানা মেয়ে৷ তোমার থেকে এটা আশা করিনি আমি৷ আর যাকে নিয়ে তুমি হিং’সে করছিলে সে আমার জাষ্ট ফ্রেন্ড আর সম্পর্কে আমার ফুপুর মেয়ে আর কিছুই না।’ এক শ্বাসে কথা গুলো বলে শেষ করেই প্রিহান গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে এলো
মালা এরপর সম্পুর্ন চুপচাপ হয়ে গেলো৷ সে কি করবে রাগলে তার মাথা ঠিক থাকে না। সে এমনিতে ভীষণ শান্ত। সহজে রাগ জিনিস টা তার মাঝে আসে না। তার ব্যাক্তিগত জিনিস, বা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করলে রেগে যায় সে। কিন্তু রাগলে সে সহজেই রাগটা কন্ট্রোল করতে পারে না। হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে, দিক বেদিক ভুলে বসে৷ সে এর জন্য ডক্টর দেখাবে বলে ঠিক করলো৷ তবে প্রিহানের রাগ দেখে মনে মনে সে ভীষণ অনুতপ্ত হলো। বাইরে এসে সবার সামনে ক্ষমা চেয়ে নিলো। তার এই কাজের জন্য সে লজ্জিত। তার এরকম ভাবে রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি। ভালো ভাবে বুঝানোর পর সবাই কিছুটা ধাতস্থ হলো। তবুও তার তখন কার করা ব্যবহারের জন্য অনেকেই বিষয়টা ভালো ভাবে নিতে পারেনি। অনেকেই তাকে মাথা খারাপ বলে উপাধী দিলো। মালা চুপচাপ সব টা শুনে মাথা নত করে থাকলো।
মেহমান রা সবাই খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলে মালার মা-বাবা সবাই খেয়ে নিলো। মালার মা বাবা বিষয়টির জন্য ভীষণ লজ্জিত। রাশেদা যাওয়ার আগে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
‘ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গে আর কখনোই কথা বলবো না আমি। তোমার দ্বারা যে সংসার করাটা হবে না তা আমি আগেই বুঝেছিলাম। মান সম্মান আর রাখলে না। তোমার মতো বুদ্ধিমতী একজন মেয়ের কাছে এই কাজ টা আন-এক্সপেক্টেড ছিলো!’
‘স্যরি আম্মু! জানি না তখন আমার কি হয়ে গেছিলো। আপনারা তো আমার রাগ সম্পর্কে অবগত তাই না?’
‘সে-সব আমরা জানি বাহিরের মানুষের কাছে সেটা অজানা। ভরা বাড়িতে সবার সামনে এধরণের আচরণ করতে তোমার বাঁধলো না? তোমার নিজের সঙ্গে সঙ্গে লোকে আমাদেরকেও কথা শুনাতে ভুলছে না।’
মায়ের কথা শুনে মালা আবার মাথা নত করলো।
‘থাকো আমরা এখনি বেরিয়ে যাবো!’
‘আপনারা কি এখনি চলে যাচ্ছেন?’
‘কোন মুখ নিয়ে এখানে আর দাঁড়াবো? এখানে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর মতো মুখ টাই রাখলে না।’ মালার বাবা আনিস সাহবে বললেন।
‘আমার সত্যিই কোনো কথা বলার মুখ নেই আব্বু৷ আমার জন্য আপনাদের ফেস-লস হলো। আমাকে আপনারা ক্ষমা করবেন।’
পুতুল অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইলো। ভুল তার ও ছিলো। সে সময় যদি সে তার বোনকে ঝা’ড়ু এনে না দিতো তবে বোধহয় এতোটা অসম্মান হতে হতো না। সে কি করে বুঝবে আসল ঘটনা টা কি? যায় হোক মালার পরিবারের সবাই চলে গেলেন। আর প্রশান্ত আরও অনেক আগেই চলে গেছিলো। সে আধ ঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া ব্যাপারে কিছুই জানে না। পার্লারে তাকে প্রয়োজন ছিলো। কারণ মালা গত তিন দিন পার্লারে পা ও রাখে নি। তাই সে মালাকে বলে আগেই বেরিয়ে গেছিলো।
•
রাতের বেলা। সবাই খাবার খেতে বসেছে। মালা তখনো মাথা নত করেই সবাইকে খাবার সার্ভ করছে।
‘দেখো মা মালা, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। আমরা সে-সব ভুলে গেছি। তোমার এসব নিয়ে মাথা নত করে থাকার কোনো মানে নেই।’
‘আমাকে ক্ষমা করবেন বাবা। আমি সত্যিই খুব বা’জে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলাম। রাগলে আমার অনেক সমস্যা হয়। নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি সবার সামনে।’
‘ইটস ওকে! এসব মাথা থেকে ঝে’ড়ে ফেলো তো মা।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ মনে রেখে লাভ কি। শুনো নাত বৌ তোমার দাদিও কিন্তু খুবই হিং’সুটে ছিলো। আমার আশেপাশে কাউকেই ঘেঁষতে দিতো না।’
‘এই যে রহমান সাহেব। আমি কখন কা’কে হিং’সা করেছিলাম?’
‘সেকি কুলসুম। তোমার ফাহিমাকে মনে নেই? ওঁকে দেখলেই তো তুমি তেলে বেগুনে জ্ব’লে যেতে।’
‘ওহ তাহলে তুমি এখনো ওই ফাহিমাকে ভুলো নি?
‘আহা খালি কথা অন্য ভাবে নিয়ে যাও। ছেলে ছেলের বউ, নাত বউ আছে। সবার সামনে কি সব বলো।’
‘আর তুমি? তুমি যে আমাকে সবার সামনে হিং’সু’টে বললে তার বেলা?’
‘হয়েছে।আমার ভুল হয়েছে। শান্ত হয়ে খাও এবার। তাও আমার মাথা খেও না বু’ড়ি বয়সে।’
সবাই মিটিমিটি হাসলো তাদের বু’ড়ো বয়সে এমন ঝগড়া দেখে। মালার মন খারাপ কিছু টা কমলেও প্রিহানের ওভাবে বেরিয়ে যাওয়া টা তাকে ভাবাচ্ছে।
সবার খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে চলে গেলো। আর মালা চুপচাপ বসে রইলো প্রিহানের আসার অপেক্ষায়।
প্রিহান বাড়ি আসলো রাত বারোটাই৷ এসেই দেখলো ডাইনিং টেবিলে মাথা দিয়েই মালা ঘুমিয়ে গেছে। তখন ওই বিষয়টা নিয়ে মালার সঙ্গে খুব বা’জে বিহেভ করে ফেলেছে। তার একটু খারাপ লাগলেও সেটা উড়িয়ে দিলো। কারণ তখন সে না বকলে মালা শান্ত হতো না। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাকলো,
‘মালা, এই মালা উঠো! রুমে গিয়ে ঘুমাবে।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ কে? কে?’
‘আমি, আমি। বলছিলাম যে রুমে না ঘুমিয়ে এখানে কেন ঘুমাচ্ছো?’
‘ওহ আপনি? আমি আরও ভাবলাম কে না কে। খেতে বসুন। আমি খাবার দিচ্ছি!’
‘আমি খাবো না। ফুপুদের বাসায় গেছিলাম না খাইয়ে ছাড়েননি তিনি!’
মালার ভেতর টা চুরমার করে ভে’ঙে গেলো মুহুর্তেই। চোখে জল এসে ভীড় করলেও চোখ ঝাপটে নিজেকে সামলে নিলো। ছোট করে বললো,
‘ওহ আচ্ছা!’
‘হ্যাঁ! আমি জাকিয়া কে স্যরি বলেছি তোমার হয়ে। ও আসলে তুমি একবার স্যরি বলে দিও!’
‘আচ্ছা! চলুন ঘরে যায়।’
‘তুমি খেয়েছো?’
‘ হ্যাঁ খেয়েছি!’ কোনো রকমে বলে মালা।
রোজকার মতো মালা স্বাভাবিক ভাবে প্রিহানের হাত ঘড়ি, কোট সব কিছু খুলে দিলো মালা। প্রিহান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মালা ঘুমিয়ে গেছে। সে আর তাকে ঘাটাতে চাইলো না। সে জানে তার কথায় মালা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু তার কিছু করার নেই। সে মালাকে পেছন থেকে মালাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো।
এদিকে মালা ঘুমানোর ভান করে ঘাপটি মেরে ছিলো। প্রিহান শুধু তার হিংসা টাই দেখতে পেলো? তার প্রতি পজেসিভনেস টা একবারও চোখে পরলো না৷ অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি পরলো। হ্যাঁ সে জানে আজকের বিষয় টা অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে কিন্তু তাই বলে জাকিয়াকে মানাতে এই রাতেই ছুটে চলে গেছিলো প্রিহান? এই বিষয় টা সে মানতে পারছিলো না কিছুতেই। মালার বুকের ভেতর টা হুহু করে উঠলো৷ না চাইতেও ভেতর টা কেমন শুন্য শুন্য অনুভব হলো তার। এটা কেমন অনুভূতি? সে তো প্রিহান কে ভালোবাসে না তবে এসব কেন হচ্ছে? তার কেন রা’গ, হিং’সে হচ্ছিলো যখন জাকিয়া প্রিহানের হাত টা জাপটে ধরেছিলো? প্রিহান তার স্বামী বলেই? নাকি সে সত্যিই একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করেছে প্রিহান কে?
#চলবে