শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-১১

0
2908

?শুধু তোমায় ঘিরে?

#মেঘা আফরোজ…..?
#পর্ব-১১…..?

?

তিশার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি রাতে ওরা ফিরতে পারেনি একটু আগেই ওকে নিয়ে এসেছে আয়ান ভাইয়া। কাল বৃষ্টিতে ভিজে সারারাত ভেজা কাপরে থাকায় তিশার জ্বর এসে গেছে। ডাক্তার এসে দেখে গিয়েছে আর কিছু মেডিসিন দিয়ে গিয়েছে। তিশা চোখ বুজে শুয়ে আছে। আয়ান ভাইয়ার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। উনি তিশার দিকেই চেয়ে বসে আছে। তাসিন আয়ান ভাইয়াকে বললো
..আয়ান তুই রুমে যা রেস্ট নে তোকেও ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
..তিশা সুস্থ হয়ে যাবে তো তাসিন?
..হুম ও ঠিক হয়ে উঠবে ভাবিস না।

১১টার দিকে তিশার জ্বরটা একটু কমেছে আমি ওর পাশেই ছিলাম। তিশা উঠে বসলো।
..তিশা এখন কেমন লাগছে তোর?
..ঠিক আছি মেঘা শুধু মাথায় পেইন হচ্ছে।
..আচ্ছা কাল তুই জঙ্গলে কিভাবে গেলি বলতো?
..তখন তো কিছুটা বাতাস উঠেছিলো আমার ওড়নাটা হঠাৎ সামলাতে না পেরে উড়ে পাশের জঙ্গলের মধ্য গিয়ে পড়েছিলো। আমি ওটাই আনতে গিয়েছিলাম। সামনে খুব সুন্দর একটা পাখি দেখতে পেয়ে ওটাই ধরতে গিয়ে কখন যে জঙ্গলের ভেতরে চলে গিয়েছিলাম বুঝতে পারিনি।

তখনি রুমে তাসিন আর আয়ান ভাইয়া ঢুকলো। আয়ান ভাইয়া কিছুটা রেগে বললো
..মেঘ আমি যে ওকে পিচ্চি বলেছিলাম ভুল তো কিছু বলিনি। এতো বড় হয়ে গিয়েছে সে নাকি নিজের ওড়নাটা সামলাতে পারে না আর কি বললো যেনো! ও হ্যা পাখি ধরতে গিয়েছিলো পাখি কি ওর হাতে এসে ধরা দিতো? স্টুপিট একটা।
..আহ আয়ান এভাবে কেনো বলছিস ভুল তো হতেই পারে।
..ভুল হবে কেনো শুনি ও জানে ওকে না পেয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো।
তিশা এতোক্ষণ মাথা নিচু করে বসে ছিলো আয়ান ভাইয়ার কথা শুনে চোখ তুলে তাকালো উনার দিকে।

তাসিন আমাকে চোখের ইশারায় বললো বাইরে যেতে।
..তিশা তুই একটু বস আমি এক্ষুনি আসছি।
তিশা আমার হাত চেপে ধরলো আমি একটু হেসে বললাম
..একটু কাজ আছে একটু পরেই আসছি।
আমি উঠে বাইরে যেতে নিলে তাসিন বললো
..আয়ান আমারো একটা কাজ আছে তুই তিশার কাছে থাক। মেঘা দাড়াও আমিও যাবো।

আমি আর তাসিন বেড়িয়ে আসলাম বাইরে এসে তাসিন আমাকে বললো
..মেঘা আয়ান কিন্তু তিশাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে পাগলের মতো করছিলো কাল ওকে না পেয়ে। তাই তো তোমাকে বেড়িয়ে আসতে বললাম ওরা একটু একা সময় কাটাক।
..হুম আমিও বুঝতে পেরেছি তাইতো আপনি ইশারা করতেই বেড়িয়ে আসলাম।

.?

আয়ান ভাইয়া তিশার সামনে বেডের এক পাশে বসে আছে তিশা কোনো কথা বলছে না চুপচাপ বসে আছে নিচে তাকিয়ে।
..কি ব্যাপার তিশা আমাকে আজ বকলে না যে পিচ্চি বললাম তোমাকে। বাদর হনুমান বলবে না এসব? অবশ্য বললে আমি কিছু মনে করবো না। এই হনুমানটার বুকেই তো কাল সারারাত লেপ্টে ছিলে। খুব ভালোলাগছিলো বুঝি আমার বুকে থাকতে? বাকা হেসে বললো।
তিশা করুন দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
..সাহায্য করে এখন খোটা দিচ্ছেন আমাকে?
..উহু খোটা কেনো দিবো। তুমি চাইলে এখনো আমার বুকে আসতে পারো। কি আসবে??
তিশা একটু রেগে বললো
..আপনি একটা অসভ্য।
..আমি অসভ্য!! হায় আল্লাহ এ পিচ্চিটা বলে কি? এইযে পিচ্চি কাল রাতে তুমি আর আমি জঙ্গলে একা ছিলাম বুঝলে আর তুমি আমার খুব কাছে ছিলে। আমি শুধু তোমাকে আগলে রেখেছিলাম। অসভ্য হলে তো….নাহ থাক বলবো না কিছু।
..সরি ভাইয়া আমি ঠিক ওভাবে বলতে চাইনি।

আয়ান ভাইয়া মুচকি হেসে তিশার দিকে একটু এগিয়ে বসলো, তিশার ডান হাতটি নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিচু স্বরে বললো
..কাল তোমাকে না পেলে আমি নিজেকে কি করে সামলাতাম বলতে পারো?
তিশা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো এর মানে ও উনার কথা বুঝতে পারেনি।
আয়ান ভাইয়া একটু চুপ থেকে তিশার হাতটি নিজের বুকের বা পাশে রেখে বললো।
..দেখো তিশা আমি ঘুরানো পেচানো তেমন পছন্দ করি না তাই সরাসরি বলি…..ভালোবাসি তোমাকে। সেই প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। হয়তো বলবে দু তিন দিনের দেখায় কি করে ভালোবাসলে?
আমি বলবো ভালোবাসা সেতো পুরোই মনের ব্যাপার। এ মন কখন কিভাবে ভালোবাসবে সে নিজেও জানে না। আমার বুকের বা পাশে যে তোমার নামটি লিখে নিয়েছি তিশা। বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। কাল তোমাকে যখন খুজে পাচ্ছিলাম না তখন আরো বেশি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। জানোতো তোমার ওড়নাটা পড়া পেয়ে আমার আত্তাটা কেপে উঠেছিলো,পরে যখন তোমাকে দেখতে পেলাম তখন মনে হয়েছিলো আমি আমার পৃথিবীটাকে খুজে পেয়েছি।

. ?

তিশা একদৃষ্টিতে আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে শুনছিলো সব। তিশা হয়তো ভাবতেও পারেনি আয়ান ভাইয়া ওকে ভালোবাসবে আর এভাবে প্রপোজ করবে।
হা করে চেয়ে আছে এখনো।
আয়ান ভাইয়া মুচকি হেসে তিশার গালে হাত রেখে বললো
..এই যে পিচ্চি কি দেখছো হা করে মুখের মধ্য মশা ঢুকে যাবে তো।
উনার কথায় তিশার হুস হলো কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে নিলো। তারপর আস্তে করে বললো
..আমি মটেও পিচ্চি নই পিচ্চি বলবেন না আমাকে।
..তাহলে কি বলে ডাকবো তোমাকে বলোতো?
..আমার নাম আছে সেটাই বলে ডাকবেন।
..উমমম সে পরে ভেবে দেখবো। এখন বলো আমার ভালোবাসার ফলাফলটা কি??
..আপনার ভালোবাসার ফলাফলটা শুন্য। নিচে তাকিয়ে একটু হেসে বললো।
..কি বললে শুন্য! দেখি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আবার বলোতো।
..পারবোনা।
আয়ান ভাইয়া মনটা একটু খারাপ করে বললো
..ঠিকআছে এই শুন্য ফলাফলটাই অনেক আমার জন্য। আমি অপেক্ষা করে থাকবো ভেবে দেখো তুমি।
কথাটি বলেই আয়ান ভাইয়া তিশার হাত ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন।
আর তিশা ছলছল চোখে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো…..বাদর হনুমান কি এমনি এমনি বলি। উনি এটুকু বুঝতে পারলো না আমি এতো ধৈয্য ধরে মন দিয়ে কেনো উনার কথা গুলো শুনলাম। হাদারাম একটা আমি শুন্য বলেছি ওমনি উনি বুঝে নিলো। শুন্যের পিছনে যে অন্য কিছু থাকতে পারে এটা বুঝলো না!

তিশা কথাগুলো একটু জোরেই বলছে আয়ন ভাইয়া দরজার বাইরে দাড়িয়ে কথাগুলো শুনে মুচকি হেসে মনে মনে বললো
..আমি জানি পিচ্চি শুন্যের পিছনে কি আছে তোমার চোখেই যে আমি তা দেখেছি। আমি চাই তুমি নিজের মুখে বলবে তুমিও আমাকে ভালোবাসো।

. ?

দেখতে দেখতে ৬ দিন কেটে গেলো আমরা এখানে এসেছি ভালোই কেটেছে সবার। আগামি কালই আমরা ঢাকাতে ফিরে যাবো। তাই আজ রাতেই সবাই যার যার জিনিস পত্র গুছিয়ে নিচ্ছি।
আমি একাই রুমে ছিলাম তখন হঠাৎই তাসিন এসে পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
..কি করছেন ছাড়ুন কেউ চলে আসবে তো!
..আসুক তুমি আমার কে তা তো কারো অজানা নয়।
..আমাদের বিয়েটা কিন্তু হয়নি এখনো। এভাবে কেউ দেখলে কি ভাববে হুম?
..যার যা ইচ্ছে ভাবুক। কাল তো চলে যাচ্ছি এ কয় দিনের মতো তো আর তোমাকে কাছে পাবো না বিয়ের হওয়া অবদি। বলেই আমার গালে টুপ করে চুমু খেলো।

হাসির শব্দ পেয়ে তাসিন আমাকে ছেড়ে দিলো আমিও একটি সরে দাড়ালাম। রোহান ভাইয়া হেসে চলেছে,ইসস কি লজ্জাতে পড়তে হলো এই বজ্জাত বাদরটার জন্য। রোহান ভাইয়া তাসিনকে বললো
..শালা রোম্যান্স করবি তো দরজাটা লক করে নিতে পারিসনি।
তাসিন মাথা চুলকে বললো
..তুই ও তো পারতি এই সময়ে এখানে না আসতে।
তিশা রুমে এসে বললো
..রোহান ভাইয়া রিশা আপু আপনাকে বাগানে যেতে বলেছে।
এবার তাসিন রোহান ভাইয়ার পেটে গুতো মেড়ে বললো
..যা তোকে ডাকছে,চিন্তা করিস না তোদেরকে ডিস্টার্ব করতে যাবো না। আমি আবার এমন নয় তাইনা মেঘা। দাঁত কেলিয়ে বললো।
উনার এমন হাসি দেখে ইচ্ছে করছে দাঁত গুলো হাতুড়ি দিয়ে মেরে ভেঙে দেই।
রোহান ভাইয়া বেড়িয়ে যেতেই তাসিনকেও টেনে বের করে দিয়ে দরজা লক করে দিলাম।

.?

আমি আর তিশা সব গুছাচ্ছিলাম খেয়াল করলাম তিশা কেমন যেনো চুপচাপ কথা বলছে না।
..তিশা কি হয়েছে তোর?
..কই আমার আবার কি হবে!
..আমার কাছে কিছু লুকাবি না বল কি হয়েছে মন খারাপ কেনো??
..মেঘা তেমন কিছু না এমনিতেই। জোরপূর্বক হেসে।
দরজায় কেউ কড়া নাড়ছিলো তাসিন ভেবে আমি দরজাটা না খুলে তিশাকে বললাম খুলতে। তিশা দরজাটা খুলে দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।
..তিশা কে এসেছে রে?
তিশা কিছু না বলেই সরে আসলো আর আয়ান ভাইয়া হেসে রুমে ঢুকলো।
আমি আড় চোখে তিশার দিকে তাকিয়ে বললাম
..ভাইয়া তুমি কি তিশাকে আবারো কিছু বলেছো?
..নাতো কি বলবো! কেনো কি হয়েছে পিচ্চিটার?
..জানি না মন খারাপ করে আছে কিছু বলছেও না।
আয়ান ভাইয়া কি বুঝলো কে জানে। মুচকি হাসি দিয়ে বললো
..মেঘ যার যেভাবে ইচ্ছে থাকতে দে তো। আর শোন বাসের আট টা টিকেট কেটে নিয়ে এসেছি কাল সকাল ৯ টায় বের হতে হবে।
..খুব ভালো করেছো ভাইয়া। শোনো ভাইয়া বাসে উঠে জানালার কাছে বসার জন্য তাসিনের সাথে ঝগড়া শুরু করো না যেনো। তোমাদের দুভাইয়ের নাকি এ অভ্যাস আছে মামি বলেছে আমাকে।
..তোর তাসিনের কাছে আমি বসবো নাকি ওর পাশে তুই বসবি। আমি তো অন্য……। তিশার দিকে তাকিয়ে।

আমি আর কিছু জানতে চাইলাম না ভাইয়া যে তিশার পাশে বসার কথা ভেবে রেখেছে আমি বেশ বুঝতে পারছি। তিশার দিকে তাকিয়ে আমি একটু অবাক হলাম!! তিশা মিটমিট করে হাসছে, এবার বুঝলাম ওর মন খারাপের কারন। তিশার পাশে গিয়ে আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম।
..ভাইয়া তুমিও যাবে শুনে হয়তো কেউ খুশি হয়েছে বুঝলে আশেপাশে একটু খেয়াল করে দেখো কারো মুখের কালো মেঘটা সরে গিয়েছে।
..ফলাফল তো শুন্য রে মেঘ আশেপাশে তাকিয়ে কি আর হবে বল!
তিশা ওর হাতে থাকা কাপড়গুলো আমার ওপর ছুড়ে দিয়ে আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বের হয়ে গেলো।
আয়ান ভাইয়া হাসতে হাসতে বললো
..মেঘ মন খারাপের কারনটা বুঝতে পেরেছিস?
..হুমম বুঝলাম। শেষমেশ আমার মতো আমার বেস্টিটাও আর একটা বাদরের ফাদে পা দিলো।
আয়ান ভাইয়া আমার দিকে তেরে আসছে আর বলছে
..কি বললি তুই??
..ক কই কিছু বলিনি তো। বলেই একছুটে বেড়িয়ে আসলাম রুম থেকে।

?

#চলবে. . . ?