#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৬
লাঞ্চ সে*রে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো আরশিরা। রাহুল তুলিকা কে নিজের বাইকে করে নিয়ে গেছে। আবির আর মোহনার বাড়ি রেস্টুরেন্ট থেকে কাছে হওয়ায় ওরা হেঁটে যেতে পারবে বলে হেঁটেই গেছে। আহি গাড়ি ছাড়া এক কদম ও চলে না। ও নিজের গাড়িতে করে গেছে। মুন আর আরশির বাড়ি রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু টা দূরে। কিন্তু রিকশা খুঁজে পাচ্ছে না মুন আর আরশি। ভীষণ বি*র*ক্ত লাগছে আরশির। কতক্ষন হলো দাঁড়িয়ে আছে অথচ রিকশার কোনো খোঁজ নেই।
অনেকক্ষন পরে একটা রিকশা পেতেই মুন কে রিকশায় উঠিয়ে দিলো আরশি। তাদের দুইজনের বাসা দুই দিকে। আর মুনের বাবা মেয়ে কে স্বাধীনতা দিলেও তা লি*মি*টের মধ্যে দিয়েছেন। এমনিতেই অনেক লে*ট হয়ে গেছে। তাই মুন কেই রিকশায় উঠিয়ে দিলো আরশি। মুন অনেকবার বলেছিলো আরশি কে যেতে। কিন্তু আরশি মানে নি। সে দে*রি*তে বাড়ি গেলেও কিছু হবে না। তবে মুনের স*ম*স্যা হতে পারে।
আরশি মুন কে উঠিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো আরেকটা রিকশা পাওয়ার। এদিক ওদিক চোখ ফেরাতেই দেখলো মু*খো*শধারী আবরার রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছে। আবরার বাম ডান কিছু খেয়াল না করে নিজের গাড়ির দিকে চলে গেলো। আরশি আবরার কেই দেখছিলো কিন্তু হঠাৎ আবরারের দিকে একটা দ্রুতগামী ট্রাক কে এগিয়ে আসতে দেখে আঁ*ত*কে উঠলো আরশি। এক মিনিট ও দেরি না করে দৌড় দিলো আবরারের গাড়ির দিকে। আবরার আরশির কাছ থেকে বেশ দূরেই ছিলো। আরশি বেশ কয়েকবার ডাক দিলেও সে শুনতে পেলো না।
——
দামি অ্যাপেলের মোবাইল টা রাস্তায় পড়ে আছে আবরারের। ভে*ঙে চু*র*চু*র হয়ে গেছে। তার ব্র্যান্ডেড গাড়ি টা ট্রাকের ধা*ক্কা*য় এক দিকে মু*চ*ড়ে গেছে। মাঝ রাস্তায় এ*ব*ড়ো*থে*ব*ড়ো হয়ে পড়ে আছে। হাত পা ঝে*ড়ে উঠে দাঁড়ালো আরশি। হাতে পায়ে বেশ অনেক জায়গায় পড়ে যাওয়ার কারণে কে*টে গেছে। একটুর জন্য আজ বেঁচে গেছে আবরার। সে প্রায় গাড়িতে বসতেই নিয়েছিল, এমন সময় তাকে টা*ন দিয়ে সরিয়ে নেয় আরশি। ফোন পড়ে যায় আবরারের হাত থেকে। আর সাথে সাথে ট্রাক টা ধা*ক্কা দেয় আবরারের গাড়ি। টা*ন দেয়ার কারণে টা*ল সামলাতে না পেরে দুইজনই পড়ে গিয়েছিলো।
আরশি হাত ঝে*ড়ে আবরারের দিকে এগিয়ে দেয় উঠার জন্য। আবরার এখনো একটা ঘো*রে*র মাঝে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতে কিছু টা সময় লাগে তার। আজ তার প্রাণ টা প্রায় গিয়েছিলো। চোখের সামনে কোনো মেয়েলি হাত দেখে চোখ তুলে তাকায় আবরার। দেখে আরশি অ*শ্রু*শি*ক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে হাত টা বাড়িয়ে রেখেছে। আবরার তাকিয়ে থাকে আরশির অ*শ্রু*শি*ক্ত চোখের দিকে। আরশি তো ভ*য় পেয়ে, ব্য*থা পেয়ে কাঁ*দা*র মতো মেয়ে না। তাহলে কেনো তার চোখে পানি? আরশির চোখে পানি দেখে মনের মাঝে অ*স্থি*রতা কাজ করে আবরারের। আরশির হাত না ধরেই দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। অ*স্থি*র হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
— তুমি ঠিক আছো? কোথাও ব্য*থা পেয়েছো তাই না? কোথায় ব্য*থা পেয়েছো দেখি?
আবরার আরশির হাত টা ধরে উ*ল্টে*পা*ল্টে দেখতে থাকে। হাতের বেশ কয়েক জায়গায় কে*টে গেছে দেখে আরও অ*স্থি*র*তা ঘিরে ধরে আবরার কে। কয়েক ফোঁটা পানি টপটপ করে পড়ে আরশির চোখ থেকে। সে আস্তে করে আবরারের থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
— এই চোখের পানি শরীরে ব্য*থা পাওয়ার কারণে নয় এমপি সাহেব। ভ*য়ং*ক*র এক স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে আজকের ঘটনা। এমন একটা ঘটনা যে আমার জীবনের সাথেও জড়িয়ে আছে। নিজের চোখে এভাবে, ঠিক এভাবেই নিজের সবচেয়ে ভালোবাসার, কাছের মানুষটা কে হা*রি*য়ে যেতে দেখেছি। আর আজ আবার এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হলাম।
আরশির মুখে ভালোবাসার, কাছের মানুষের কথা শুনে ঠিক ভালো লাগলো না আবরারের। ভাবতে লাগলো আরশি কার কথা বলেছে। আরশি নিজেকে স্বাভাবিক করে আবরারের উদ্দেশ্যে আবার বললো,
— আপনার এভাবে গা*র্ড ছাড়া বের হওয়া ঠিক হয় নি এমপি সাহেব। এটা কোনো এ*ক্সি*ডে*ন্ট ছিলো না, আপনাকে মা*র্ডা*র করার চেষ্টা করা হয়েছে। হয়তো আপনার শ*ত্রু*রা টে*র পেয়েছে আপনি একা বেড়িয়েছেন।
আবরার বিশ্বাস করলো আরশির কথা। কিন্তু ভাবার বিষয় একটাই তার শ*ত্রু*রা জানলো কিভাবে সে একা বেরিয়েছে? সে তো প্রতি মাসেই একবার এভাবে একা বের হয়। কেউ তো টে*র পায় না। আর আজকেও যে সে একা বেরিয়েছে তা শুধু মাত্র একজন ব্যক্তিই জানে। তার বাবা মা কেউই জানে না। তার বাবা জানলে কখনোই তাকে একা বের হতে দিতো না। তাই তো জানায় নি। কিছু একটার হিসাব মিলাতে লাগলো আবরার।
আশেপাশে অলরেডি ভি*ড় জ*মে গেছে দেখে আরশি ব্যাগ থেকে নিজের ফোন বের করে আবরারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
— আপনার গা*র্ডদের ফোন করে এখানে আসতে বলুন জ*ল*দি। দেখুন ভি*ড় জ*মে যাচ্ছে। যেকোনো সময় পু*লি*শ ও চলে আসবে।
আবরার আরশির ফোন হাতে নিয়ে নিজের হেড গা*র্ড কে কল করে ঠিকানা বললো আর জ*ল*দি আসতে বললো। তার এখান থেকে বের হওয়াটা জরুরী। আর এখন একা যাওয়াও ঠিক হবে না। কিছুক্ষনের মাঝে রেস্টুরেন্ট এর সামনে গা*র্ডদের গাড়ি দিয়ে ভ*রে গেলো। গা*র্ড রা সবাই কে সাইড করে আবরারের সামনে এসে উপস্থিত হলো। সবাই অবাক হয়ে দেখতে লাগলো এতো গা*র্ড ভি*ড় করায়। বুঝতে পারলো স্পেশাল কেউ উপস্থিত আছে এখানে।
গা*র্ড রা আবরার কে নিয়ে যেতে চাইলে কয়েক পা গিয়ে থেমে গেলো আবরার। গভীর দৃষ্টিতে তাকালো আরশির দিকে। হাত পায়ের কে*টে যাওয়া জায়গা থেকে অল্প অল্প র*ক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু একদম স্বাভাবিক ভাবে স*টা*ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরশি। আবরার এবার আরশির স্বচ্ছ আঁখি জোড়ার দিকে গভীর দৃষ্টি তা*ক করলো। সে চোখে স্পষ্ট বে*দ*না লু*কি*য়ে আছে। কিন্তু আরশি তা প্রকাশ করছে না। নিজেকে শ*ক্ত, ক*ঠি*ন রূপে প্রদর্শন করছে।
আবরার একবার ভাবলো আরশি কে তার সাথে গাড়িতে উঠতে বলবে না। কারণ এর ফলে আরশি তার শ*ত্রু*দের আ*ক্র*ম*ণের শি*কা*র হতে পারে। কিন্তু পরোক্ষনেই ভাবলো আরশি তাকে বাঁচিয়ে অলরেডি তার শ*ত্রু*দের নজরে চলে এসেছে। যা হওয়ার হবে, দেখে নিবে সে এমনটা ভেবে আবরার আবার পা বাড়ালো আরশির দিকে। আবরার কে নিজের দিকে আসতে দেখে ভ্রু কুঁ*চ*কে তাকালো আরশি। আবরার আরশির কাছাকাছি এসে বললো,
— গাড়িতে ওঠো যাও। তুমি এই মুহূর্তে আমার সাথে যাবে। তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দিবো আমি চলো।
আরশি নাক মুখ কুঁ*চ*কে বললো,
— আমি কেন আপনার গাড়িতে যাবো? অ*সম্ভব। আমি আপনার মতো দু*র্ব*ল না বুঝেছেন।
দু*র্ব*ল বলায় মে*জা*জ খা*রা*প হলো আবরারের। কিন্তু নিজেকে শান্ত করে মাস্ক এর আ*ড়া*লে বাঁ*কা হাসলো আবরার। আরশির আরেকটু কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— নিজে থেকে ভালোয় ভালোয় গাড়িতে উঠবে নাকি এতো মানুষের মাঝে কোলে তু*লে নিয়ে যাবো? কোনটা চাও বলো? এমপির কোলে উঠলে হ*ট টপিকে প*রি*ণ*ত হবে তুমি। এখন অবশ্যই চাইবে না আমি এতো মানুষের সামনে তোমাকে কোলে নেই? কোলে তু*লতে আবার আমার ভালোই লাগবে। সময় এক মিনিট। জ*ল*দি ভাবো।
আরশি বাঁ*কা চোখে তাকালো আবরারের দিকে। এক পা ও নড়লো না। এক মিনিট শেষ হতেই আবরার আ*গা*লো আরশি কে কোলে নেয়ার জন্য। আরশি এক লা*ফ দিয়ে সরে গিয়ে বললো,
— উঠছি উঠছি। লু*চ্চা এমপি। আপনি কেমন এমপি বলেন তো ভ*রা রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা নি*ষ্পা*প মেয়ের সাথে লু*চু*মি করছেন?
আবরার ক*ড়া চোখে তাকিয়ে আবার আরশির দিকে আ*গা*তেই সে দৌড়ে গাড়িতে উঠে গেলো। আরশির কা*ণ্ডে মাস্কের আ*ড়া*লে হাসলো আবরার। তারপর সেও গাড়িতে উঠে গেলো।
চলবে?
#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৭
— কিরে কাজ হয়েছে তো? ওই আবরার শা*লা কে ট*প*কা*তে পেরেছিস তো তাই না? হা হা হা আমার পথের একটা কাঁ*টা সরলো তবে?
কথা টা বলেই বি*দ*ঘু*টে হাসি দিতে লাগলো ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি টি। লোকটার ভ*য়ং*ক*র হাসিতে আ*ত্মা কেঁ*পে উঠলো ট্রাক ড্রাইভারের। থ*র*থ*র করে কাঁ*পতে লাগলো ড্রাইভার। সে ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে বলবে আবরার কে সে মা*র*তে পারে নি। এটা জানালে সে আর বাঁচতে পারবে না হয়তো। কিন্তু না জানিয়েও যে লাভ নেই। ট্রাক ড্রাইভার বুঝতে পারলো তার মৃ*ত্যু হয়তো সন্নিকটে।
ড্রাইভারের কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে হাসি থামিয়ে ভ*য়*ঙ্ক*র এক হু*ঙ্কা*র ছাড়লো ফোনের অপর প্রান্তে থাকা লোকটা। চি*ৎ*কার করে বললো,
— কথা বলছিস না কেন হ্যা? তুই কি ওই আবরার শা*লা কে মা*র*তে পারিস নি? কথা বলিস না কেন?
ড্রাইভার লোকটা একটা ঢো*ক গি*লে তো*ত*লাতে তো*ত*লাতে বললো,
— ব..ব বস আ…আসলে আসলে
অচেনা লোকটা গ*র্জে উঠে বললো,
— বললললল কি হয়েছে? জলদি বল নাহলে এমন ভ*য়া*নক মৃ*ত্যু দিবো যে চিন্তাও করতে পারবিনা।
ড্রাইভার কাঁ*পতে কাঁ*পতে বললো,
— আসলে বস এমপি কে মা*র*তে পারি নাই। আমি প্রায় ট্রাক দিয়ে চা*পা*ই দিয়ে দিচ্ছিলাম এমন সময় একটা মেয়ে তাকে সরিয়ে নিয়েছে। আমি কোনোরকমে ট্রাক নিয়ে পা*লি*য়েছি। বস আমাকে ক্ষ*মা করে দেন। এতে আমার কোনো দো*ষ নাই, সব দো*ষ ওই মাইয়ার। আমারে আরেকটা সুযোগ দেন বস। আমি যেভাবে পারি এমপি কে শেষ করবো। আমি…
ড্রাইভার কথা শেষ করার আগেই নিজের মোবাইল ছু*ড়ে মা*রলো অচেনা লোকটা। মোবাইল দেয়ালে স্ব*জো*রে বা*রি খেয়ে চু*র*চু*র হয়ে গেলো। লোকটা দাঁ*ত ক*ট*ম*ট করে বললো,
— আমার এতদিনের সাধনা যেনো ন*ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই বাপ, বেটাকে আমি কিছুতেই শেষ করতে পারছিনা। কেন? কেন? যখনই কোনোভাবে এদের শেষ করতে যাই, তখনই কোনো না কোনো ভাবে এরা বেঁচে যায়। এর বাপ কে মা*রা৬র সাধ্যও তো আমার এখন নাই। শা*লা ক*ড়া সি*কি*উ*রিটির মধ্যে থাকে আর নিজের ছেলেকেও রাখে। আজকে পেলাম একটা ভালো সুযোগ তাও কাজে লাগাতে পারলাম না। নাহ যেভাবেই হোক আমি আমার স্বা*র্থ হাসিল করেই ছাড়বো। আমার এতদিনের পরিশ্রম বি*ফলে যেতে দিবো না। দিবো না, দিবো না।
কথাগুলো বলেই লোকটা পা*গ*লে*র মতো আচরণ করতে লাগলো। কিছুক্ষন পরে আবার স্বাভাবিক হয়ে শ*য়*তানি হাসি দিলো সে। হয়তো আবার কোনো ঝ*ড় উঠাতে চলেছে সে আবরারের জীবনে।
———–
গাড়িতে গাল ফু*লি*য়ে বসে আছে আরশি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। হুট করে হাতে টা*ন পড়ায় চোখ বড় বড় করে আবরারের দিকে তাকালো সে। দেখলো আবরার একটা তুলা তে ওষুধ লাগিয়ে নিয়েছে। হয়তো তার হাতে লাগাবে। আরশি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আবরার আরও জো*রে চে*পে ধরলো ওর হাত। আরশি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
— স*ম*স্যা কি? আপনার গাড়িতে উঠে গেছি বলে আমাকে দু*র্ব*ল ভাবার মতো ভু*ল করবেন না। আমি শুধুমাত্র প্রেস, মিডিয়ার কাছে যাতে আমার নাম না পৌঁছে তাই উঠে গেছি। আমি একজন সাধারণ নাগরিক আর সাধারণ ই থাকতে চাই। কোনো হ*ট টপিকে পরিণত হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।
আবরার আরশির হাত টে*নে নিজের কাছে নিয়ে বললো,
— তুমি এতো তে*ড়া কেন মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? আমি কি তোমার কোনো ক্ষ*তি করছি? জাস্ট ওষুধ ই তো লাগাচ্ছি। চুপচাপ বসে থাকো আমি যতক্ষণ ওষুধ লাগাই। একদম তে*ড়া*মো করবে না। নাহলে ওই সময় যে লু*চু*র উপাধি দিলে তা কিন্তু সত্যি করবো।
শেষের কথাটা আরশির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো আবরার। আবরার কে এতো কাছে দেখে একটা শু*ক*নো ঢো*ক গি*ল*লো আরশি। একরাশ অ*স্বস্তি ঘিরে ধরলো তাকে। এই প্রথম কোনো পুরুষ তার এতোটা কাছে আসলো। তার উপর গাড়ির সামনের সিটে ড্রাইভার আর আবরারের হেড গা*র্ড আছে। না চাইতেও লজ্জা পেলো আরশি। আরশি কে লজ্জায় হাঁ*স*ফাঁ*স করতে দেখে দূরে সরে গেলো আবরার। হাতের কাঁ*টা জায়গাগুলোতে যত্ন সহকারে ওষুধ লাগাতে লাগলো। কাঁ*টা জায়গায় ওষুধ লাগতেই ম*রি*চ লাগার মতো জ্ব*লে উঠলো। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে সেই জ্ব*ল*ন স*হ্য করতে লাগলো আরশি। আবরার আরশির দিকে তাকাতেই দেখলো ওর চোখে পানি ট*ল*ম*ল করছে, মুখ শ*ক্ত করে বসে আছে। আবরার বুঝলো জ্ব*লা*র কারণে এই অবস্থা আরশির। কিন্তু এই মেয়ে নিজের অনুভূতি চে*পে রাখার চেষ্টা কেনো করে বুঝে পায় না আবরার।
আবরার এবার ওষুধ লাগানোর সাথে সাথে হাতে ফুঁ দিচ্ছে যাতে জ্ব*লন কম হয়। জ্ব*লন কিছুটা কম হওয়ায় হাতের দিকে তাকালো আরশি। দেখলো আবরার খুব যত্ন করে আরশির হাতে ফুঁ দিয়ে দিয়ে ওষুধ লাগাচ্ছে। যাতে তার সামান্য ব্য*থা*টাও না লাগে। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আরশির। আজ কতগুলো বছর পরে কেউ তাকে এতো যত্ন করছে। আবরার তাকানোর আগেই দ্রুত চোখের পানি মু*ছে ফেললো আরশি।
আবরার হাতের কাজ শেষ করে পা ধরতেই ছি*ট*কে সরে গেলো আরশি। গাড়ির ডোরের সাথে সে*টে গিয়ে চি*ল্লি*য়ে বললো,
— আশ্চর্য! কি করছেন আপনি? পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?
হঠাৎ আরশির এমন ব্যবহারে বো*কা বনে গেলো আবরার। গম্ভীর মুখে বললো,
— তোমার পায়ের কাঁ*টা জায়গায় অয়েন্টমেন্ট লাগাতে চাচ্ছি। আর কি করলাম? এভাবে সরে যাওয়ার কি হলো?
আরশি দ্রুত বাঁ*ধা দিয়ে বললো,
— আর লাগবে না। যা করেছেন তার জন্য থ্যাংকস। বাকিটা আমি করে নিতে পারবো।
আবরার এক ভ্রু উঁচু করে বললো,
— তা তো মানছি না। আমিই করবো আর না করতে দিলে…
কথাটা শেষ করে আবরার আবার আরশির কাছে আসতে নিলেই আরশি চোখ মুখ শ*ক্ত করে বললো,
— করুন করুন, যা করার করুন কিন্তু দূরে থাকুন আমার থেকে। আপনার মতো লু*চু লোক আমি জীবনেও দেখি নি। তাও আবার সে নাকি এমপি হুঁহ।
আবরার আলতো হাসলো। আরশির পা টা আলতো করে তু*লে নিজের উরুর উপর রাখলো। তারপর ওষুধ লাগিয়ে নিচে নামিয়ে দিলো। আরশির মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে মনে মনে আবরার কে ইচ্ছা মতো ঝা*ড়*ছে। আরশির চিন্তার মাঝেই আবরার আরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— আর কতো ব*কা দিসে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? তোমার এতো এতো ব*কা খেয়ে মনে হচ্ছে দুইদিনেও আর ক্ষু*ধা লাগবে না।
আরশি হ*ক*চ*কিয়ে উঠলো আবরারের কথায়। নিজেকে সামলে নিয়ে আবরারের হাতে নিজের ধা*রা*লো নখ দিয়ে জো*রে একটা চি*ম*টি কে*টে দিলো। আবরার আ*উ*চ করে নিজের হাত চে*পে ধরে দূরে সরে গেলো। ব্য*থা*য় নাক মুখ কুঁ*চ*কে ফেললো সে। রা*গী রা*গী কণ্ঠে বললো,
— এই জন্য মানুষের উপকার করতে নেই।
আরশি মুখ বা*কি*য়ে বললো,
— আপনাকে কে বলেছে আমার উপকার করতে হ্যা? এই যে আমার নখ দেখতে পাচ্ছেন এমপি সাহেব? আর একবার কাছে আসলে এই নখ দিয়ে আপনার হাতের মাং*স তু*লে নিবো।
আরশির নখ দেখে মুখ বি*কৃ*ত করলো আবরার। বললো,
— ছে*হঃ এটা কি কোনো মানুষের নখ নাকি পে*ত্নী*র নখ? আজ আমি সিওর হয়ে গেলাম তুমি মানুষ না একটা পে*ত্নী। শেওড়া গাছের পে*ত্নী; যে নিজের হাত, পা, নখ ঝু*লি*য়ে বসে থাকে। ভাবা যায় আমার পাশে একটা জ্ব*ল*জ্জ্যা*ন্ত পে*ত্নী বসে আছে।
দাঁ*ত ক*ট*ম*ট করে আবরারের দিকে তাকালো আরশি। তার নখ খুব বেশি না তবে সাইজের তুলনায় কিছুটা বড়। আর দেখতে সুন্দর দেখায় বলে সে চামড়ার সাথে লাগিয়ে কা*টে না। তাই বলে তার এতটুকু, এতো সুন্দর কিউট সুইট নখগুলোকে পে*ত্নীর নখের সঙ্গে তুলনা? আবরার আরশি কে এভাবে তাকাতে দেখে বললো,
— মাই গড এখন তো দেখি পিওর পে*ত্নীর মতো লুক ও দিচ্ছ।
আরশি আবরারের উপর থেকে চোখ সরিয়ে ঠিক করলো আর একটা কথাও বলবে না এই অ*সভ্য লোকের সাথে। আরশি কে চুপ হয়ে যেতে দেখে বাঁ*কা হাসলো আবরার।
কিছুক্ষন পরে আরশি এদিক ওদিক চোখ ফি*রা*তে গিয়ে ওর চোখ ঠে*ক*লো আবরারের হাতের উপর। যেই জায়গায় সে চি*ম*টি দিয়েছিলো, সেই জায়গাটা লাল হয়ে ফু*লে উঠেছে। আবরার ধবধবে সাদা হওয়ার কারণে অতিরিক্ত লাল হয়ে আছে জায়গা টা। মনে হচ্ছে টু*প্ করে র*ক্ত বেরিয়ে যাবে। আরশির কেনো যেনো খা*রা*প লাগলো আবরারের হাত টা দেখে। সে মুখ গো*ম*ড়া করে তাকিয়ে রইলো আবরারের হাতের দিকে।
চলবে?