#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#পর্ব_৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
নূর কিছু বলার আগেই পেছন থেকে ইভা বলে উঠলো” ফায়াজ স্যার আপনি এখানে…?”
নূর কয়েক পা দূরে সরে গেলো ফায়াজের কাছ থেকে।
ফায়াজ নূরের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে ইভার দিকে তাকালো।
ইভাঃ স্যার আপনি…!?
ফায়াজঃ বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে তোমাদের কাছে হয়তো ছাতা নেই। চাইলে আমার সাথে আসতে পারো।
ইভাঃ আসলে স্যার তার প্রয়োজন নেই। ধন্যবাদ স্যার আপনা কে।
ফায়াজঃ বাহিরে অনেক বৃষ্টি মনে হয় এখন থামবে না সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।
ইভা আড় চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে আবার হেঁসে বলে উঠলো,’ আসলে স্যার আমার ভাইয়া আসছে। আমাকে এই মাত্র কল দিয়ে বললো এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে আমাদের সমস্যা হবে না।
ফায়াজ মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাহলে আমি আসি। ‘
ফায়াজ চলে যেতেই ইভা সন্দিহান চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ব্যাপার কি বল তো..?
নূর আমতা আমতা করে বললো,’ কি.. কিসের ব্যাপার!
ইভাঃ তুই কি আগে থেকে ফায়াজ স্যার কে চিনিস নাকি..?
নূরঃ এমনটা কেনো মনে হলো..?
ইভাঃ স্যার ক্লাসে ও তোর দিকে তাকিয়ে ছিলো আবার নিজ থেকে হেল্প করতে আসলো।
নূরঃ তুই একটু বেশি বুঝিস ইভা। স্যার আমার আগের ভার্সিটির টিচার ছিলেন আমাকে এখানে দেখে হয়তো অবাক হয়েছেন তাই তাকিয়ে ছিলো।
ইভাঃ কিইইই!
নূরঃ জ্বি।
ইভাঃ তোদের মধ্যে তেমন কিছু নেই তো..?
নূরঃ কেমন কিছু..?স্যারের বউ আছে।
ইভাঃ হি হি হি মজা করলাম ওই দেখ ভাইয়া চলে আসছে।
রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে হাতে দুইটা ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসলো৷
ইভা রুদ্রের হাত থেকে একটা ছাতা নিয়ে গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো।
নূরঃ ইভা আমাকে নিয়ে যা। এই একটা ছাতা দিয়ে আমরা কিভাবে যাবো..?
ইভাঃ ভাই আর তুই এই ছাতা দিয়ে চলে আয়।
নূরঃ কখনো না।
ইভাঃ তাহলে দাঁড়িয়ে থাক।
নূরঃ তাহলে আমি ভিজে চলে আসছি।
ইভাঃ ভাই দিলে চলে আয়।
নূরঃ বেয়াদব মাইয়া।
ইভাঃ ছোটো থেকেই।
রুদ্র নিরব দর্শকের মতো ওদের ঝগড়া দেখলো।
রুদ্রঃ ছাতার নিচে চলে আসো।
নূরঃ আমি আপনার সাথে এক ছাতায় যাবো না৷
রুদ্রঃ কেনো সমস্যা কি..?
নূর কিছু না বলে বাহিরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
রুদ্র নূরের হাত ধরে বলে উঠলো,’ তুমি আমাকে চাও আমি সবার সামনে তোমাকে কোলে নিয়ে নেই।
নূরঃ কোলে কেনো নিবেন আজব।
রুদ্রঃ তারা তারি চলে আসো নূর।
নূরঃ আপনারা ভাই বোন দুইটাই এক।
রুদ্রঃ হুম এবার আসো।
নূর বাঁধ্য হয়ে ছাতার নিচে আসলো।
রুদ্র মুচকি হেঁসে নূরের সাথে হাঁটা ধরলো।
ইভা গাড়ির কাছে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে সামনের গাড়িটার দিকে তাকালো।
হুম এটাই তো ফায়াজ স্যারের গাড়ি। স্যার কি এখনো যায়নি!
ইভা গাড়ির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে ফায়াজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূর আর রুদ্রের দিকে।
ইভা নূরের দিকে তাকিয়ে আবার ফায়াজের দিকে তাকালো।
~স্যার কি নূরকে পছন্দ করে! থুর কি সব ভাবছি। হয়তো অনেক দিন পর দেখার কারনে তাকিয়ে আছে।
সারা রাস্তা আর কেউ কোনো কথা বলেনি৷
রুদ্র বাসায় এসে নিজের রুমে চলে গেলো।
নূর ইভা ফ্রেশ হয়ে এসে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।
বৃষ্টির দিন মানেই ঘুম।
কিছু সময়ে মধ্যে ইভা ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু ঘুম নেই নূরের চোখে।
ফায়াজ স্যার এখানে কেনো..? উনি কিভাবে জানে আম্মু আর নেই..?! কেমন যেনো সব কিছু এলোমেলো লাগছে।
যার কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য শহর ছেড়ে দিলাম সে এখন আবারও আমার চোখের সামনে। নিশ্চয়ই বউ সাথে নিয়ে এসেছে।
উফফ আর ভাববো না এই লোককে নিয়ে আমি।
রুদ্র ফ্রেশ হয়ে কাউকে কল দিলো।
~ হ্যালো..
রুদ্রঃ এই লোকের সব ডিটেইলস আমি চাই।
~ঠিক আছে।
রুদ্রঃ ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি। সন্ধ্যার মধ্যেই যেনো চলে আসে।
~ আচ্ছা ভাই আপনে চিন্তা করবেন না।
ফায়াজ বাসায় গিয়ে ফুলের টপ ছুঁড়ে ফেললো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। সাথে সাথে আয়না ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
নিজের রাগ কন্ট্রোল করার জন্য দুই হাতে মাথা চেপে বসে পড়লো।
রুদ্র আর নূরকে একসাথে একি ছাতার নিচে দেখে খুব রাগ হচ্ছে তার।
কেনো! কেনো তার জিনিস অন্য কেউ নজর দিবে। এই কয়দিন পাগলের মতো খুঁজে বের করেছে সে নূরকে।
কোথায়, কোথায় না খুঁজেছে অবশেষে হসপিটাল থেকে সব জেনে তারপর নূরের কাছে আসার একটা চান্স পেয়েছি।
এবার আর দেরি নয়। দুই একদিনের মধ্যেই বিয়ের প্রপোজ করবে সে নূরকে। আর যাই হোক সে কিছুতেই নূরকে হারাতে চায় না।
নূর কি ভেবেছে ফায়াজ কিছুই জানে না! ফায়াজ সেই প্রথম দিন ওকে ধরে ফেলে ছিলো কিন্তু ইচ্ছে করে ধরা দেয়নি। নূরের এমন পাগলামো দূর থেকে দেখে গেছে। প্রতি রাতে নূরের ফোনের অপেক্ষায় থাকতো কথা হতো না কিন্তু একজন আরেক জনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতো। রাত পেরিয়ে সকাল হতো কিন্তু ফোন কাটা হতো না কতো সুন্দর ছিলে সময়টা। প্রতি দিন নূর ফয়াজকে ফলো করতো ফায়াজ আড় চোখে দেখেও না দেখার মতো থাকতো। কয়েক দিন পর পর ভালোবাসায় মিশ্রিত হাজারো শব্দের চিঠি সাথে লাল গোলাপ। এখন এইগুলো খুব মিস করে ফায়াজ।
যে করেই হোক সে নূরকে চায়। নূরের জন্য প্রয়োজন হলে মাইসা কে সে ডিভোর্স দিবে।
এমনি তেও মাইসার সাথে তার না হয় দেখা আর না হয় কথা। শুধু কাগজ-কলমে বউ। বাস্তবে এখনো মাইসার হাত ও স্পর্শ করেনি ফায়াজ।
রাতে রুদ্র কে ডেকে নিলো আনোয়ার চৌধুরী নিজের রুমে।
রুদ্রঃ আসবে দাদাভাই..
আনোয়ার চৌধুরীঃ আসো।
রুদ্র গিয়ে আনোয়ার চৌধুরীর পাশে বসলো।
আনোয়ার চৌধুরীঃ রুদ্র আমি চাচ্ছি তুমি বিয়ে করো। আমি তোমার সংসার বউ দেখে যেতে চাই।
রুদ্র ওর দাদুর হাত শক্ত করে ধরে বলে উঠলো,’ আপনি যা ভালো মনে করেন তবে…
আনোয়ার চৌধুরীঃ তবে..
রুদ্রঃ মেয়েটা আমার পছন্দের হবে।
আনোয়ার চৌধুরীঃ তুমি নিজে সংসার করবে পছন্দ আমার হলে হবে না। তুমি যাকে পছন্দ করবে তার সাথেই আমরা রাজি।
রুদ্র মাথা নেড়ে কিছু একটা বলে আনোয়ার চৌধুরী রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এখন তো মন চাচ্ছে নাগিন ডান্স দিতে খুশিতে।
নীলার ডাকে ঘুম ভেঙে যায় ইভার। পাশে তাকিয়ে দেখে নূর নেই।
নীলাঃ এই ইভা আপু শুনো…?
ইভাঃ তোর সমস্যা কি..? ঘুমিয়ে আছি চোখে দেখোস না!
নীলাঃ কই তুমি তো আমার সাথে কথা বলছো।
ইভাঃ গাঁধি এর আগে তো ঘুমিয়ে ছিলাম তাই না..?
নীলাঃ আর কতো ঘুমাইবা।
ইভা আড়মোড় ভেঙে উঠে বসলো।
ইভাঃ এবার বল এমন কি কথা যে আমাকে ঘুম থেকে তুলতে হলো।
সাথে সাথে নীলামুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
নীলাঃ আপু আমার তো বিয়ে ঠিক হয়েছে…!
ইভাঃ এই কথা বলার জন্য ঘুম থেকে তুলছস বেয়াদব মাইয়া।
নীলা গাল ফুলিয়ে বসে বলে উঠলো,’ তাহলে এটা তুমি আমার আগেই জানো৷ সবাই জানে শুধু আমি পড়ে শুনলাম।
ইভাঃ দেখ নীলা মাথা নষ্ট করিস না। রুম থেকে এখন বের হ। আর কিছু তো লজ্জা কর বড় বোন বিয়ের বাকি এখনি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বিয়ে বিয়ে করছিস।
নীলাঃ আম্মু তো আব্বুর সাথে বললো।
ইভাঃ কি বলছে..?
নীলাঃ আজ রাতে ফাইনাল কথা বলতে।
ইভাঃ কার সাথে।
নীলাঃ দাদাভাই এর সাথে।
ইভা কিছু বলার আগেই মোবাইল রিংটোন বেজে উঠলো।
ইভা পাশে তাকিয়ে দেখে নূরের মোবাইল বাজছে। প্রথম ধরবেনা ধরবেনা করেও ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো।
~হ্যালো..
ইভাঃ হ্যালো..
~ কাল রেডি থেকো একদম বউ করে নিয়ে যেতে আসবো।
ইভার হাত থেকে মোবাইল নিচে পড়ে গেলো।
লোকটা কে ছিলো..? আর নূরের তো কোনো বয়ফ্রেন্ড ও নাই। নাকি নূর মিথ্যা বলেছে!
নূর রুমে আসতেই ইভা নূরের দিকে তাকালো।
নূরঃ কখন উঠলি..?
ইভাঃ একটু আগে।
নূরঃ মামি নিচে ডাকছে।
ইভা নূরের দিকে মোবাইলটা বাড়িয়ে দিলো।
নূর চুল বাঁধতে বাঁধতে ইভা কে জিজ্ঞেস করলো,’ হুম। ‘
নূরঃ কে..?
ইভাঃ তুই দেখে নে..
নূরঃ আচ্ছা কি বলেছে..?
ইভাঃ কিছু না।
___________
নূর আর রুদ্র হাতে কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদে।
রুদ্রঃ নূর তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো..?
নূর উত্তর না দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো।
নূরঃ কেনো..?
রুদ্রঃ না এমনি জানতে ইচ্ছে হলো।
নূর আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,’ আপনি বেসেছেন..?
রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠলো “হুম, খুব গভীর ভাবে প্রেমে পড়েছি কিন্তু বলা হয়নি কখনো..’
নূরঃ বলে দেওয়া উচিত না হলে পড়ে আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
রুদ্র মনে মনে হেঁসে বললো ” হুম বলবো কাল কে আমার প্রিয় মানুষটির জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। আমি অন্যদের মতো বিয়ের আগে প্রেম, ভালোবাসা করতে চাই না। আমার প্রিয় মানুষটি পবিত্র তাই তার জন্য পবিত্র ভালোবাসা অপেক্ষা করছে। আমি তার গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগাতে চাই না। আমি চাই সে সব সময় গোলাপ মতো পবিত্র থাকুক।
নূর আনমনে বলে উঠলো, ‘ চাঁদের গায়ে ও দাগ থাকে..
রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ কিন্তু আমার চাঁদের গায়ে কোনো দাগ নেই।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।