#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#পর্ব_১২
লেখিকা#Sabihatul_Sabha
আনোয়ার চৌধুরীর রুমে বসে আছে নূর।
আনোয়ার চৌধুরীঃ নূর নানুভাই আমি জানি এটা আমি ঠিক করিনি আগে তোমাকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু আমি তো ভুল কিছু করিনি তোমার ভালোর জন্যই করেছি।
নূরঃ এটা কেমন ভালো..? আপনি হঠাৎ করে কারো সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে নিতে পারেন না। আমার আম্মু আব্বু নেই বলে এমন না আমি একদম এতিম হয়ে গেছি আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারবো না। আমি এখানে থাকি নিজের পড়াশোনার টাকা, খাওয়া দাওয়ার যতো খরচ সব নিজে দিয়ে থাকি। এখনো আমার নিজের জন্য আমি আছি।
আনোয়ার চৌধুরীঃ এটা তোমার সিদ্ধান্ত ছিলো৷ তুমি নিজের ভরনপোষণ নিজের কাঁধে নিবে। আর একবার ভেবে দেখো রুদ্র খারাপ ছেলে নয়৷ এতো দিনেও কি রুদ্র কে তুমি চিনতে পারোনি!
নূরঃ এখানে খারাপ আর ভালোর কথা আসছে না। আমি রুদ্র ভাইকে কখনো ওই নজরে দেখিনি।
আনোয়ার চৌধুরীঃ আজ থেকে দেখা শুরু করো।
নূরঃ এটা কেমন কথা!!
রুদ্র দরজা ঠেলে ভেতর ডুকে আনোয়ার চৌধুরী কে বের করে দিলো।
নূর রেগে বলে উঠলো, ‘ এটা কেমন আচরণ রুদ্র ভাই। আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। ‘
রুদ্রঃ গ্রামের সবার সামনে দাদাভাই আমার হবু বউ হিসেবে তোমাকে চয়েস করেছে তুমি চাইলেও আমাকে বিয়ে করতে হবে না চাইলেও।
নূরঃ আমি তো নানাভাই কে বলিনি আমাকে ইশারা করতে।
রুদ্রঃ গ্রামে আমাদের অনেক সম্মান। আজ তোমার একটা ভুল সিদ্ধান্তে আমরা মানুষের চোখে কতোটা নিচু হয়ে যাবো ভাবতে পারছো নূর দাদাভাই এর কথা ভেবে রাজি হয়ে যাও।
নূরঃ উনি তো আমার কথা ভাবেনি আমি কেনো ভাবতে যাবো..!
রুদ্রঃ নূর তোমার কপাল কতো ভালো যে চৌধুরী বাড়ির বউ হওয়ার সুযোগ পেয়েছো অন্য কেউ হলে এক কথায় বিয়ের আসরে বসে পড়তো।
নূরঃ আপনি ভুল করছেন রুদ্র অন্য কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন। আমি নূর অন্য কেউ নই যে আপনাকে বিয়ে করতে নাচতে নাচতে রেডি হয়ে যাবো।
রুদ্রঃ আমার মধ্যে সমস্যা কোথায়..?
নূরঃ আপনি সব টাই সমস্যা..
রুদ্রঃ এখন কি রাজি হবে না..?
নূরঃ প্রশ্নই আসে না।
রুদ্রঃ বেশ….
রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই ইভা নূরের কাছে আসলো।
ইভাঃ নূর ভাই কি বললো..?
নূরঃ কি আর বলবে সবাই আমাকে কি পেয়েছে..! আমার কাউকে লাগবে না আমি নিজেই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি আজকে রাতেই শহরে চলে যাবো।
ইভাঃ পাগলামো করিস না নূর। গ্রামের লোকজন কানাঘুষা করছে।
সালমা বেগম আয়েশা বেগম নূরের কাছে আসলেন।
সালমা বেগমঃ নূর মা এদিকে আয়।
নূরঃপ্লিজ মামি তুমি আমাকে বলতে এসো না। আমি এখন বিয়ে করার মতো পরিস্থিতিতে নেই।
আয়েশা বেগমঃ জন্ম, বিয়ে, মৃত্যু আল্লাহর হাতে নূর। আমাদের সম্মান এখন তোমার হাতে। আমি তোমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখি৷ ছেলের বউ নয় তুমি আমার একটা মেয়ে হয়ে আসো৷ আমার ছেলে খুব ভালো মনের মানুষ।
নূরঃ ছোটো মামি আপনিও..?
আয়েশা বেগম মুচকি হেঁসে বললো,’ আমি আজ রুদ্রের না তোমার মা হয়ে বলছি। আমার এই ছোটো ইচ্ছে টা তুমি রাখো।
নূর কনফিউশান এ পড়ে গেছে এখন সে কি করবে..? কোনটা করলে ভালো হবে..? কিভাবে না করবে। না করলে গ্রামের লোকজন ছিঃ ছিঃ করা শুরু করবে। চৌধুরী বাড়ির বদনাম হবে।
আনোয়ার চৌধুরী চিন্তিত হয়ে বসে আছে।
লোকজন ইতি মধ্যে নানা কথা বলছেন কিন্তু উনার বিশ্বাস নূর আসবে।
দরজা খোলে রুম থেকে নূরকে বের হতে দেখে সবাই তাকালো।
নূর সোজা সীমার কাছে গিয়ে মুচকি হেসে বললো,’ হলুদ সাজে সাজাবে না আমাকে..??!
সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
আনোয়ার চৌধুরী একটা শান্তির শ্বাস ফেললেন। অনেকটা চিন্তা দূর হলো। অন্তত নূরের জন্য সঠিক মানুষ উনি খুঁজে দিয়ে যেতে পারলেন এবার মা-রা গেলেও শান্তি পাবেন।
দূর থেকে নীলা নূরের দিকে তাকিয়ে হাসলো আর বিরবির করে বললো,’ রুদ্র ভাই আপনি থাকবেন আমার মনে আর অন্য কারো ভাগ্যে…আমি এতোটা কাছে থেকেও কখনো আমার ভালোবাসার কথা আপনাকে বলতে পারলাম না। সব সময় ভেবেছি আপনি তো আমারি আর বলতে হবে কেনো! আমি এই চৌধুরী বাড়ির বউ হওয়ার লোভ করিনি কখনো আমি আপনার বউ হওয়ার লোভ করেছি। আজ মনে হচ্ছে কেউ বুকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এত যন্ত্রণা হচ্ছে। দুই হাতে চোখ মুছে হাঁটা ধরলো নিজের রুমের দিকে নীলা।
এতো কাছে থেকেও বলা হলো না ভালোবাসি।
নূরকে নিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো সবাই।
হলুদ অনুষ্ঠান খুব সুন্দর ভাবে শেষ হলো৷
অনুষ্ঠান শেষ হতেই নূর রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রুমে রুদ্র বসে আছে।
নূরঃ আপনি এখানে..?
রুদ্রঃ কিছু একটা দেওয়ার ছিলো।
নূরঃ আমি আপনার থেকে কিছু নিবো না।
রুদ্রঃ কেনো..?
নূরঃ আপনি তো জানতেন আমার আর আপনার বিয়ের কথা তাই না..?
রুদ্র ঘার ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে গেলো।
নূরঃ আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন ছিলো।
রুদ্রঃ তোমার সমস্যা কি আমি নাকি এই বিয়ে..??
নূরঃ দুইটাই। আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন না তাহলে বিয়ে কেনো করছেন..?
রুদ্রঃ আমার আচরণ কি এমন টা মনে হয় যে আমি তোমাকে পছন্দ করি না..?
নূরঃ পছন্দ করেন সেটা ও তো মনে হয় না।
রুদ্রঃ তুমি সেই নজরে কখনো আমার দিকে তাকাও নি তাই তোমার চোখে পড়েনি। আমার প্রথম ভালোলাগা ভালোবাসা হলে তুমি দ্বিতীয় কেউ নেই আর আসবেও না।
নূরঃ কিন্তু আমি অন্য কাউকে….
রুদ্রঃ সমস্যা নেই তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসতেই পারো। আমাকে না হয় বিয়ের পরেই ভালোবেসে নিও। আর আমি তোমার প্রথম ভালোবাসা হতে পারিনি শেষ ভালোবাসা হতে চাই। জীবনের শেষ মূহুর্তে আমি তোমার হাত শক্ত করে ধরে মর’তে চাই।
নূর কিছু না বলে চুপচাপ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
রুদ্রঃ চকলেট এনে ছিলাম..
নূরঃ আমি চকলেট খাই না।
রুদ্রঃ ওহ আচ্ছা। আমি তো জানিনা তুমি কি পছন্দ করো আর কি না করো। যদি বলতে।
নূরঃ আপনার আমার বিষয় কিছু জানার প্রয়োজন নেই। আমি শুধু সমাজের কথা ভেবে রাজি হয়েছি।
রুদ্রঃ যেভাবেই রাজি হও বউ তো আমার হবে তাই না।
নূরঃ তো…!?
রুদ্রঃ এক সাথে থাকতে গেলে আগে এক জন আরেক জনের সম্পর্কে সবটা যেনে নেওয়া ভালো। তাহলে পটাতে সুবিধা হবে।
নূরঃ আপনি আমাকে পটাতে চাচ্ছেন…!
রুদ্রঃ এখন না বিয়ের পর।
নূরঃ আমাকে পটাবেন তাও আবার আমার থেকে সব কিছু জেনে! বাহ..
রুদ্রঃ তোমাকে তোমার থেকে যদি কেউ ভালো জানে তাহলে আমি তার থেকে জেনে নিতাম কিন্তু তোমার থেকে ভালো তোমাকে কেউ জানেনা তাই তোমার কাছ থেকে জানতে আসলাম৷
নূরঃ আপনাকে ডাক্তার কে বানিয়েছে..?
রুদ্রঃ আমি নিজের যোগ্যতায় হয়েছি।
নূরঃ আচ্ছা এখন আসেন আমি ক্লান্ত ঘুমাবো।
রুদ্রঃ বললে ভালো হতো লাইফে প্রথম তো তাই।
নূরঃ আরও কাউকে পটানোর ইচ্ছে আছে নাকি..!
রুদ্রঃ ছিঃ একদম না। আমি তো প্রতি দিন বউকে পটাতে চাইবো৷
নূর মুখ ঘুরিয়ে হেঁসে উঠলো। এই বেটার মাথায় বউ এর ভুত ভর করেছে।
রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো…!
নূর সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোটো ছোটো করে বলে উঠলো, ‘ একদম না… আমি কেনো লজ্জা পাবো!
রুদ্র নূরের কিছুটা কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ তোমার লজ্জা পাওয়া দরকার ছিলো নূর লজ্জা নারীদের ভূষণ। তোমাকে লজ্জা পেলে নিশ্চয়ই ভীষণ কিউট লাগবে। আদুরে লগবে, মায়াবী লাগবে।
নূরঃ আপনি কি আমার সাথে ফ্লার্ট করছেন..?
রুদ্র সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,’ হবু বউ এর সাথে ফ্লার্ট করার খুব ইচ্ছে ছিলো তাই একটু ট্রাই করলাম। ‘
নূরঃ শেষ হয়েছে করা..?
রুদ্রঃ আমি তো এখনো শুরু করিনি তবে আজকের জন্য এখানেই এনাফ। কাল কের জন্য প্রস্তুত থাকো..
নূরঃ বের হন রুম থেকে।
রুদ্রঃ আজকের রাতটা ভালো কাটুক তোমার।
নূরঃ আপনি সামনে না থাকলে প্রতিটা মুহূর্ত আমার ভালো কাটে।
রুদ্রঃ এটা তো মুখে বলছো দেখা গেলো আমি রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মিস করা শুরু করলে।
নূরঃ এমনটা কখনো হবে না।
রুদ্রঃ হবে হবে খুব তারাতারি হবে।
নূর রুদ্র কে রুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলো।
নূরঃ পাগল লোক তাকে নাকি আমি মিস করবো! আমার আর কোনো কাজ নেই তকে মিস করতে যাবো।
বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো নূর। সাথে সাথে রুদ্রের দুষ্ট হেঁসে তাকানো, ওর দিকে তাকিয়ে চোখ মারা সব চোখের সামনে বেসে উঠলো৷
নূর বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো। এই ছেলেতো দেখি এখনি ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। চোখ খোলা থাকলেও সামনে থাকছে আবার বন্ধ করলেও মস্তিষ্কে, স্বপ্নে চলে আসছে।
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।