ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব-১১

0
483

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#পর্ব_১১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নূর আর ইভা দাঁড়িয়ে আছে শাড়ি হাতে নিয়ে।
রুদ্র নূরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে।

ইভাঃ নূর দেখতো এটা আমাকে কেমন লাগবে..?
নূর শাড়িটা হাতে নিয়ে দেখলো,’ হুম তোকে খুব সুন্দর লাগবে।
ইভাঃ ইসস আরেকটু কেনো লম্বা হলাম না।
নূরঃ খাটো মেয়েদের শাড়ি পড়লে আরও বেশি সুন্দর লাগে ইভা।
ইভাঃ শাড়ি পড়ে যদি ভাবির বাড়ির ছেলেদের হুঁশ না উড়িয়েছি আমার নাম ও ইভা না।
নূরঃ হিহিহি আচ্ছা দেখা যাবে।

বাহ্ নূর তোমাকে তো এই শাড়িতে বেশ মানাবে।

পরিচিত কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকালো নূর।

অভিক ভাইয়া…
অভিকঃ যাক চিনতে পেরেছো।
নূরঃ কেমন আছেন ভাইয়া..?
অভিকঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো…?
নূরঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
অভিকঃ শহরে আসলে কবে..?
নূরঃ আজকেই আসলাম ভাইয়া রুদ্র ভাইয়ার বিয়ে তাই কেনাকাটা করতে।
অভিক আড়চোখে ইভার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ওহ্ আচ্ছা ভালো তো। তুমি কেমন আছো.?
ইভা একটা শাড়ি নেড়েচেড়ে দেখছিলো।
ইভাঃ জ্বি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
ভাইয়া বলার সাথে সাথে অভিক এর মুখকা চুপসে গেলো।

অভিকঃ তা কি দেখছো..?
ইভাঃ শাড়ি কিন্তু একটাও আমার সাথে ভালো মানাচ্ছে না।
অভিকঃ তোমার হাতেরটা কিন্তু বেশ।
ইভা একবার হাতের শাড়িটার দিকে তাকিয়ে আবার অভিক এর দিকে তাকালো।
অভিকঃ আমি আসি নূর একটু তারা আছে। আবার দেখা হবে নিজের খেয়াল রেখো।
নূরঃ সাবধানে থাকবেন ভাইয়া। আল্লাহ হাফেজ।

অভিক চলে যেতেই নীলা মন খারাপ করে এসে দাঁড়ালো।
নূরঃ তোমার আবার কি হয়েছে..?
নীলাঃ আমি একটা কাঁচা হলুদের শাড়ি পছন্দ করে ছিলাম কিন্তু রুদ্র ভাই ওটা অন্য কারো জন্য নিয়ে গেছে।
নূরঃ আচ্ছা ঠিক আছে হয়তো উনার বউএর জন্য নিয়ে গেছেন তুমি আমার সাথে এসো।

নীলা ইভার হাতের শাড়িটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এই ইভা আপু তোমার হাতের শাড়িটা কিন্তু খুব সুন্দর। আমাকে এটা দাও।
ইভা হাতের শাড়ির দিকে তাকিয়ে নীলা কে বলে উঠলো, ‘ আসলে নীলা এটা তোকে একদম সুন্দর লাগবে না। তুই নূরকে বল তোকে খুব সুন্দর শাড়ি পছন্দ করে দেবে।

নীলা কে শাড়ি পছন্দ করে দিলো নূর।

সবার কেনাকাটা শেষ হলে রেস্টুরেন্টে গেলো খাবার খেতে।

বাড়িতে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে সবার।

নূর বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে গোসল করে নিলো।

ইভা সটান হয়ে শুয়ে পরলো বিছানায়।

কাল গায়ে হলুদ। নূর নিজের জন্য কিছুই কিনেনি। ইভা নূর এর জন্য ওর শাড়ির মতো একটা শাড়ি কিনেছে এতোটুকুই।

রাতে নূরের ঘুম না হওয়াই ইভা কে নিয়ে ছাঁদে চলে আসলো।

ইভা কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে৷

নূর ইভার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
সামনে তাকিয়ে দেখে রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে।
নূরঃ কখন আসলেন..?
রুদ্রঃ যখন তুমি ইভা কে দেখতে ব্যস্থ।
নূর আর কিছু বললো না।

রুদ্রঃ তোমাকে কিছু দেওয়ার ছিলো।
নূরঃ কি..?
রুদ্রঃ হাত বাড়াও..
নূর হাত বাড়িয়ে দিলো।
রুদ্র সুন্দর এক জোড়া বালা নূরের হাতে পড়িয়ে দিলো।
নূরঃ এইগুলো তো খুব সুন্দর। আর দামী ও মনে হচ্ছে..!
রুদ্রঃ এতো কিছু তোমার ভাবতে হবে না পড়ে থাকো সুন্দর লাগছে।
নূর হাত থেকে বালা গুলো খোলে রুদ্রের হাতে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই গুলো আপনার বউকে দিলে অনেক খুশি হবে৷ সব কিছু সবার জন্য না।
রুদ্রঃ তাকেই তো দিচ্ছি। আর ঠিক বলেছো সব কিছু সবার জন্য না। এই বালা অন্য কারো জন্য না।
নূরঃ মানে….!?
রুদ্র বালা গুলো পকেটে রেখে আকাশের দিকে তাকালো।
নূরঃআজকের চাঁদ টা অন্য রাতের তুলনায় বড় তাই না।
রুদ্রঃ হুম।
নূর রুদ্রের মুখের দিকে তাকালো। রুদ্র মুখ গম্ভীর করে আছে। হয়তো নূরের এমন ব্যাবহারে কষ্ট পেয়েছে।

নূরঃ আপনার ছাঁদের ফুল গুলো খুব সুন্দর।
রুদ্রঃ সাথে তুমিও।
নূরঃ আমাকে ফুলের সাথে তুলনা করছেন! ফুলের সাথে মানুষের তুলনা হয়না।
রুদ্রঃ তুমি ফুলের থেকেও বেশি স্নিগ্ধ, সুন্দর।

নূর অবাক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো।

রুদ্রঃ আকাশের চাঁদের চেয়েও মায়াবতী, ফুলের চেয়েও স্নিগ্ধ সুন্দর তুমি। সমুদ্রের চেয়েও গভীর তোমার চোখের চাহনি আমি বার বার ডুবে যায় সেই চোখের মায়ায়। এভাবে শাড়ি পড়ে খোলা চুলে, কাজল কালো মায়াবী চোখে, জোছনা রাতে আমার দিকে তাকাবে না, ভুল কিছু হয়ে গেলে পড়ে আমায় দোষ দিতে পারবে না।
নূর স্তব্ধ হয়ে গেছে রুদ্রের এমন কথা শুনে, নিজের পড়ে থাকা শুভ্র রঙের শাড়িটার দিকে তাকালো। বুকের ভেতর ধুকধুকানি ক্রমশ বেড়েই চলছে। এক অজানা অনুভূতির সাথে নতুন করে পরিচিত হচ্ছে নূর।

রুদ্র নূরের মুখের সামনে থেকে এক হাতে চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো।
রুদ্রঃ ভুলে যাও অতীত মেনে নাও বর্তমান কে। আগামী যা হবে মনে করবে তোমার ভালোর জন্যই হচ্ছে। চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস নয় চোখ খোলেই কাউকে বিশ্বাস করে আঁকড়ে ধরো হাত৷ যে তোমার নয় তাকে ভুলে যাও। সত্যি কারের ভালোবাসা খুঁজে নাও।
নূরঃ কোথায় পাবো!!??
রুদ্রঃ চোখ খুলে দেখো তোমার আশেপাশেই আছে৷
নূরঃ দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসতে চাই না।
রুদ্রঃ কখন হয়ে যাবে নিজেও জানবে না। ভালোবাসা বলে কয়ে আসে না।
নূরঃ এমনটা কখনো না হোক।
রুদ্রঃ হবে খুব জলদি হবে।
নূর রুদ্রের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।
রুদ্র মুচকি হেসে বলে উঠলো,’ চোখ লুকালেও মন লুকাতে পারবে না। ‘
নূরঃ আমি দুইটাই সামলে রাখতে পারি।
রুদ্রঃ সময় বলে দেবে৷ তবে কাল তোমার জন্য এক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
নূরঃ অপেক্ষায় রইলাম।

রুদ্র ছাঁদ থেকে নেমে যেতেই নূর গিয়ে ইভার পাশে দেয়ালে পিঠ ঠেকে বসে পরলো। কাল কিসের সারপ্রাইজ..!!??

_____

হলুদ সন্ধ্যা,,,

সবাই হলুদ লেহেঙ্গা পড়ে সেজেগুজে নিচে আসলো।

ইভা,নূর, নীলা সবাই লেহেঙ্গা পড়েছে। ভেবেছিলো শাড়ি পরবে কিন্তু আনোয়ার চৌধুরী বাড়ির মেয়েদের লেহেঙ্গা পড়তে বললেন৷

মেয়েদের জন্য লেহেঙ্গা আর ছেলেদের পাঞ্জাবি।

কুলসুম আক্তার মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছেন। ভেবেছিলেন রুদ্রের বিয়ে হয়তো নীলার সাথে হবে কিন্তু এখন দেখছেন আনোয়ার চৌধুরী অন্য কাউকে রুদ্রের জন্য পছন্দ করেছেন৷

সবাই অপেক্ষায় আছে বউ দেখার জন্য।

আনোয়ার চৌধুরী রুদ্র কে ডেকে নিজের পাশে বসালেন।

হানিফ চৌধুরীঃ আব্বা আমার মনে হয় এখন সবাই কে সত্যি টা আমাদের বলে দেওয়া উচিত।
আনোয়ার চৌধুরীঃ হুম একটু অপেক্ষা কর।

আনোয়ার চৌধুরী এই বাড়ির বড় মেয়ে সীমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ সীমা দাদুভাই এদিকে আসো। ‘

সবাই সীমার দিকে তাকালো। হানিফ চৌধুরীর বড় মেয়ে সীমা। স্বামী দেশের বাহিরে থাকে দুই ছেলে এক মেয়ে এই তার সুখের সংসার শশুর শাশুড়ী খুব ভালো মানুষ।

সীমা হাসি মুখে গিয়ে দাঁড়ালো দাদাভাই এর পাশে।

আনোয়ার চৌধুরী সীমার হাতে কাঁচা হলুদের একটা শাড়ি তুলে দিলো সাথে জুয়েলারি যা যা লাগে সব দিলো।

তারপর ডকলো সীমার ছোটো সাথী কে।সাথে ডাকলো মাহি,ইভা,নীলা কে ও সবাই গিয়ে দাড়ালো।

আনোয়ার চৌধুরীঃ তোমরা বোনরা সবাই মিলে আজ রুদ্রের বউকে নিজ হাতে হলুদের সাজে সাজাবে।

সাথে সাথে নীলার চোখ থেকে টপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো জল।
ইভা নীলার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক চোখে।
নীলা সাথে সাথে চোখের জল মুছে নিলো। মুচকি হাসি দিয়ে তাকালো সবার দিকে।

সীমাঃ উফফ দাদু এখন তো বলো বউ কোথায়..?

আনোয়ার চৌধুরী সালমা বেগম, কুলসুম আক্তার,আয়েশা বেগম কে ডেকে নিজের আরেক পাশে এনে দাঁড় করিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি বিশ্বাস করি আমার পছন্দ কে তোমরা কেউ আপত্তি জানাবে না।
সালমা বেগমঃ অবশ্যই আব্বা। আপনি কখনো ভুল কিছু করবেন না এটা আমরা জানি।

আনোয়ার চৌধুরী খুশি হলেন ছেলের বউদের কথা শুনে।

আনোয়ার চৌধুরী রুদ্র কে ইশারা করলো।
রুদ্র মুচকি হেঁসে নূরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
নূর ভ্রু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকাতেই রুদ্র শক্ত করে নূরের হাত আঁকড়ে ধরলো।

নূরের বুক কেঁপে উঠলো। মনে হচ্ছে সব দুঃস্বপ্ন, সব ভুল। অবিশ্বাস চোখে তাকালো রুদ্রের দিকে নূর।

নূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,’ আপনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসেন..!
রুদ্রঃ অন্য কাউকে কখনো বলিনি বলেছি কোনো একজন কে ভালোবাসি।
নূরঃ সে তো আমি নই তাই না..?
রুদ্রঃ অন্য কেউ হলে তোমার হাত আঁকড়ে ধরতাম না!
নূরঃ কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না!
রুদ্রঃ তাতে আমার ভালোবাসা এক বিন্দু ও কমবে না।
নূরঃ আমি কেনো..?
রুদ্রঃ এর কোনো উত্তর নেই।

কুলসুম আক্তার আগুন চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।

নীলা মুচকি হাসি দিয়ে তাকালো রুদ্রের দিকে। ভেতর পুড়ছে কিন্তু তা বাহিরে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।

নূরঃ আমি ভেবেছিলাম আপনার পছন্দ অন্য কেউ হবে। আমাকে পছন্দ করার কারন টা কি জানতে পারি..?
রুদ্রঃ কারন বলতে গেলে তোমাকে পছন্দ না হওয়ার হাজারটা কারন এর মাঝে একটা কারন আমি ভালো লাগার করে নিয়েছি।

আনোয়ার চৌধুরী রুদ্র আর নূরকে কাছে ডাকলেন।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।সবাই খুব খুশি শুধু কুলসুম আক্তার এর মুখে হাসি নেই।

নূর জোর পূর্বক মুখে হাসি ঝুলিয়ে আনোয়ার চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
আনোয়ার চৌধুরীঃ নূর আমার প্রয়োজন ছিলো আগে তোমাকে জানানোর।
নূর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ প্রয়োজন ছিলো! কিন্তু প্রয়োজন মনে করেন নি। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে এখানে বলবো নাকি রুমে। ‘

সালমা বেগম নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ নূর মা চল আগে হলুদ সন্ধ্যা শেষ হোক। তারপর না হয়।
নূরঃ প্লিজ মামি!!
আনোয়ার চৌধুরী বাড়ি ভর্তি মানুষের দিকে একবার তাকালেন তার পর নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ রুমে চলো ‘….

চলবে….

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

পরবর্তী পর্ব গুলোর প্রতিদিন আপলোড করা হবে। আমাদের৷ সাথেই থাকুন।