ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব-১৩

0
618

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#পর্ব_১৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

বউ সেজে বিছানার মাঝে বসে আছে নূর।

খুব ধুমধাম করে রুদ্র আর নূরের বিয়ে হয়েছে আজকে।

নূরের কেমন যেনো ভয় হচ্ছে। এমন টা কখনো হয়নি কেমন নার্ভাস লাগছে। অজানা অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরেছে আজ।এমন অদ্ভুত অনুভূতির সাথে সে আগে কখনো পরিচিত হয়নি এটা ওর জন্য একদম নতুন।

রাত ১১টায় রুদ্র দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো।

রুদ্র রুমে আসতেই নূর একটু নড়েচড়ে বসলো। মনের ভেতর কেমন যেনো অজানা এক অনুভূতি হচ্ছে ভয়ও হচ্ছে । সে শাড়ির আঁচল শক্ত করে ধরে বসলো।

রুদ্র রুমে প্রবেশ করেই দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলো।

দরজা লাগানোর শব্দ শুনেই নূরের সারা শরীরে চিকন ঘাম দিলো। মাথাটা কেমন ঘুরছে। আর ঘুরবে না কেনো সারাক্ষণ মাথার ভেতর আজব আজব চিন্তা ঘুরপাক খেলে মাথা ঘুরবে না তো কি করবে!

রুদ্র নূরের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো। তারপর গলা খাকানি দিয়ে বুঝালো সে রুমে এসেছে।
কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না নূর আগের মতোই বসে আছে৷

রুদ্র কিছুটা বিরক্ত হলো।
রুদ্রঃ এভাবে সং সেজে বসে আছো কেনো..?
নূর তাও মুখে কিছু বললো না। সীমা আপু বলেছে বর নিজে নাকি ঘুমটা উঠাবে। তারপর… তারপর ভাবতেই গাল গুলো অসম্ভব লাল হয়ে গেলো।
রুদ্রঃ আজব তো এই গরমের মধ্যে তুমি এমন ভারি লেহেঙ্গা পড়ে ঘুমটা দিয়ে বসে আছো গরম করছে না..? ঘুমটা সরিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। এই বাড়ি তোমার কাছে নতুন নয়। আমি তো ভেবেছি তুমি হয়তো ঘুমিয়ে পরেছো।
নূর রেগে বলে উঠলো,’ আমি ঘুমটা সরাতে পারবো না। আপনি সরান।
রুদ্রঃ আমি কেনো সরাবো..?
নূরঃ এতো বেশি কথা কেনো বলেন! ঘুমটা সরান আমাকে দেখে টাকা দেন। তারপর আমি আবার আপনাকে সালাম করবো তারপর আপনি আবার আমাকে টাকা দিবেন। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়বো আপনি আবার আমাকে গিফট দিবেন। তারপর কাল কে সকালে….

~এই এই থামো। এই সব কি..? এতো টাকা কেনো দেবো..?! কথার লাস্টে বার বার টাকা কেনো যুগ করছো..?

~ আরে ভাই আমি জানি আপনি কিপটে কিন্তু অন্তত আজকে কিপ্টামি ছেড়ে দেন। এইগুলো আমি আপনার কাছ থেকে পাবো।
রুদ্র বুকে হাত দিয়ে দাঁড়ালো।
রুদ্রঃ আচ্ছা! কিন্তু কেনো পাবে..?
নূরঃ হুম। কারন আমি আপনার বউ। এবার ঘুমটা তুলেন।

রুদ্র এগিয়ে গেলো নূরের কাছে। খাটের মাঝে বসে নূরের ঘুমটা সরিয়ে দিলো।

নূর হাত বাড়ালো রুদ্রের দিকে।

রুদ্র পকেট থেকে টাকা বের করে নূরকে দিলো।

নূরঃ মাত্র পাঁচ হাজার।
রুদ্রঃ অনেক কম হয়ে গেছে কি..?
নূরঃ না না সমস্যা নেই, একটু পর তো আবার নিবো।
রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে শুষ্কু ডুক নিলো। এমনিতেই আজ সে ফকির আর বাকি টা যে নূর করবে তা সে ভালো করেই বুঝে গেছে।

নূর উঠে রুদ্রকে সালাম করতে গেলে রুদ্র থামিয়ে দিলো।
রুদ্রঃ সালাম করার প্রয়োজন নেই।
নূরঃ ঠিক আছে টাকা দেন।
রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক মুচকি হাসলো।
নূরঃ আপনার এই হাসিতে আমি গলছি না।

নূর ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজে দাঁড়ালো। রুদ্রও দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নিলো।

আমার গিফট কোথায়..?

রুদ্র নূরের হাতটি যত্ন করে ধরে নূরকে নিজের কাছে নিলো।
পকেট থেকে কিছু একটা বের করে যত্ন করে নূরকে পড়িয়া দিলো।

রুদ্রঃ এই নাও তোমার গিফট।
নূর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র কে এই বালা গুলো ফিরিয়ে দিয়ে সে অনেক আপসোস করে ছিলো বালা গুলোর জন্য । আজ সেই বালা আবার পেয়ে খুশিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।

রুদ্রঃ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।
নূরঃ হুম।

মাঝ খানে কোলবালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো নূর।

রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি খুশি তো ফুপিমণি…?! ‘

সকালে দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো নূরের।

ঘুম থেকে উঠে কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো। যেভাবে রুম ফুল দিয়ে সাজানো ছিলো ঠিক সেই ভাবেই আছে। রুদ্র কোথায়…?

নূর বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গেলো।

রুদ্র বারান্দায় চেয়ারে বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
নূর রুদ্রের কাছে গিয়ে ওকে ডাকলো।
নূরঃ রুদ্র এই রুদ্র উঠেন।

নূরের ডাকে পিটপিট চোখ খুলে তাকালো।
নূরঃ দরজা খুলবো আপনি এখানে কেউ দেখলে খারাপ দেখায় না।

রুদ্র বসা থেকে উঠতে গিয়ে “আহ্” করে ঘারে হাত দিয়ে বসে পড়লো৷
নূরঃ কি হয়েছে..?
রুদ্রঃ কিছু না। সারারাত বসে ঘুমানোর জন্য একটু ঘারটা ব্যথা করছে।
নূরঃ এখানে ঘুমানোর কি প্রয়োজন ছিলো। রুমে তো জায়গা ছিলো।
রুদ্র নূরের দিকে এক নজর তাকিয়ে কিছু না বলে ঘারে হাত দিয়ে রুমে চলে গেলো।
নূর মনে মনে বলে উঠলো” কি আজব এই লোকের আবার কি হলো..? এমন আজব ব্যাবহার কেনো করছে! আমি এই বা উনার কথা কেনো ভাবছি?

রুদ্র ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।

নূর বিছানা থেকে ফুল নামিয়ে সব পরিস্কার করলো।

ইভা নূরের রুমে এসে মুচকি মুচকি হাসছে।
নূর ইভার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’ শয়তানের মতো হাসিতেছিস কেনো..?’
ইভাঃ আমার এতো কিউট লাজুক হাসি তোর কাছে শয়তানের মতো লাগলো..?
নূরঃ বিয়ে আমার হইছে লজ্জা তুই কেন পাইতেছোস..?
ইভাঃ আহা কিছু বুঝো না!

নূরঃ বের হ রুম থেকে আমি রেডি হবো৷
ইভাঃ শাড়ি পড়তে পারস..?
নূরঃ না…
ইভাঃ আমি পারি…
নূরঃ তাহলে তো হয়েই গেলো।

নূরকে নিয়ে ইভা নিচে গেলো।

সালমা বেগম নূরকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে নূরের কাছে আসলো।
সালমা বেগমঃ বাহ্ কি মিষ্টি লাগছে শাড়িতে।
নূর লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
ইভাঃ দেখতে হবে না ফ্রেন্ড টা কার।
আনোয়ার চৌধুরীঃ আসো নানুভাই বসো।
কুলসুম আক্তার নূরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো।

বাকিরা নিজেদের মতো খাবার খাচ্ছে।
নীলা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপু ওপস ভাবি ভাইয়ার পাশের চেয়ারে বসো।’

নূরের আজ সব কিছুতেই লজ্জা লাগছে কেমন যেনো ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা বেড়েই চলছে।

রুদ্র কোনা চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। এই মেয়ে তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। দেখা যাবে হসপিটালে ডাক্তার হওয়ার বদলে প্রথম পেসেন্ট সে নিজে হয়ে যাবে।

আনোয়ার চৌধুরী নূরের দিকে তাকিয়ে একটা বক্স বাড়িয়ে দিলেন।
আনোয়ার চৌধুরীঃ এটা তোমার গিফট। এখানে নয় নিজের রুমে গিয়ে খুলে দেখো।
নূর মাথা নেড়ে আচ্ছা বুঝালো।
নীলা আড় চোখে বার বার রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে।
ইভা বিষয়টা খেয়াল করে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।

ইভা নিজের রুমে আসতেই হাতের ফোনটা বেজে উঠলো।
ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হলো। অভিক ওকে কেনো ফোন দিয়েছে..?

কাল রুদ্রের বিয়েতে অভিক এসেছিলো। রুদ্র নিজে ওকে দাওয়াত দিয়েছে।

ইভার সাথে খুব ভালো ভাব জমেছে অভিক এর। যাওয়ার সময় অভিক কোনো এক বাহানায় ইভার নাম্বার নিয়ে গেছে।

ইভাঃ হ্যালো..
অভিকঃ কেমন আছো..?
ইভাঃ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন..?
অভিকঃ আমিও ভালো আছি।

এভাবে টুকটাক অনেক কথা হলো। অভিক ফ্রেন্ডশিপ করে নিলো ইভার সাথে।

নূর রুমে এসে দেখে রুদ্র মোবাইলে কারসাথে যেনো কথা বলছে।

নূর বক্সটা যত্ন করে রাখলো।

রুদ্র কথা বলতে বলতে পেছন ফিরে নূরকে দেখে থমকে গেলো।

নূর আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথা আঁচড়াচ্ছেন।

নূর ভ্রু কুঁচকে আয়না থেকে চোখ সরিয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো।
নূরঃ কি হয়েছে..? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো..?
রুদ্র চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি আজকের পর আর শাড়ি পড়বে না। যা সামলাতে পারো না তা পড়ার প্রয়োজন নেই। ‘
নূরঃ কেনো আমার শাড়ি আপনার কি সমস্যা করেছে..?
রুদ্রঃ নিজেই ভালো করে আয়নায় দেখে নাও। বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
নূর আয়নায় নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে আরেক বার পেছনে তাকালো না রুদ্র নেই। ইসস চুল আঁচড়ানো জন্য হাত উপরে তুলতেই শাড়িও হাতের সাথে সরে যাচ্ছে যার ফলে বেস খানেকটা পেট দেখা যাচ্ছে ছিঃ রুদ্র ভাইয়ের সামনে যাবো কিভাবে। আল্লাহ লুকানোর জায়গা দাও আমি এই মুখ লুকিয়ে ফেলি।

সারাদিন নূরের রুমেই কেটেছে সব মেহমান এক এক করে চলে গেছে।

রাতে রুদ্র রুমে আসতেই নূর কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।