তোমাতে আমাতে পর্ব-১৪

0
1702

#তোমাতে _আমাতে
লেখা আশিকা জামান
পার্ট ১৪

ইমনটা সেদিন খুব খুশি হয়েছিলো ইনফ্যাক্ট সবাই খুব খুশি হয়েছিল। ইমন আমাকে ড্রইংরুমে সবার সামনে জড়িয়ে ধরেছিলো। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছিলো কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছিলাম না। কিন্তু ভালোও লাগতেছিলো এটা ভেবে যে ইমন আমাকে ওইভাবে না গাইড করলে হয়তবা ডি ইউ তে চান্সই পেতাম না। ও আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে, স্বপ্নের পথে দু হাত মেলে হাটতে শিখিয়েছে, স্বপ্নকে আপন করতে শিখিয়েছে, স্বপ্নের জন্য বাচতে শিখিয়েছে। যখন ও আমাকে ছেড়ে দিলো সবার চোখে অদ্ভুত পুলক আমি দেখেছিলাম। লজ্জায় আমি ওখান থেকে সরে আসি। একটুপর ইমন ও আসে।
ওকে দেখেই আমি বলে উঠলাম,
— এই তুমি কি?
— ক্যালাস, কাণ্ডজ্ঞানহীন, ছিটিয়াল,স্ক্রু ঢিলা আরো কিছু।
— হ্যা তুমি সবগুলোই।
— নাহ কষ্ট লাগলো..
আরে বাবা তোমাকেইতো একটু জড়িয়ে ধরেছি অন্য কাউকেতো না। এইজন্য এত রিএক্ট করতে হবে।
— না আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। ওদের সামনে যাবো কি করে?
— আচ্ছা না যেতে পারলে আমাকে বলো কোলে করে নিয়ে যাবো।
— নো চান্স।
— ওকে অফারটা এখনি শেষ। এরপর ইচ্ছে করলেও কিন্তু পাবে না।
— এই তুমি যাবা। তোমারতো লাইব্রেরিতে যাওয়ার কথা। যাও যাও।
— হুম যাচ্ছি বাট এইভাবে না ধাক্কালেও পারতে।
আমি ওর দিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকালাম।
— এই যাচ্ছি আমি। ভালো থেকো।
— তুমি আজকে আর আসবেনা।
— আপাতত না।

ইমন চলে যাওয়ার পর থেকে খালি একা একা মনে হতে লাগলো। বিষন্নতা সব সময় ছুঁয়ে থাকতো। এর মধ্যে আমি মা বাবার সাথে ভাইয়ার আর ইশিতা আপুর এ্যাফেয়ার এর কথাটা বলি। বাবা প্রথমে গাইগুই করলেও পরে রাজী হয়ে যায়। তখন সবাই মিলে ডিসিশন নেই আগামী সপ্তাহে সবাই মিলে ইশিতা আপুদের বাসায় যাবো। মা আর বাবা ইশিতা আপুর বাসায় কথা বলে ব্যাপারটা অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে আসে।
ব্যাপারটা আমার শ্বশুরবাড়িতেও জানানো হয়। ওনারাও মত দেন।
তার দুইদিনপর আমার শাশুড়ি আর শ্বশুড় হুট করে এসে বলে আমাকে উনারা একেবারে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু বাবা কিছুতেই রাজী হচ্ছিলো না। হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারণ কি এটাই ভেবেই পাচ্ছিলাম না।
এই বিষয়টা নিয়ে বাবা খুবি আপসেট হয়ে গেল।
তারপর মা আর ভাইয়া বাবাকে অনেক বুঝিয়ে রাজী করায়। এইসব এর জন্য ভাইয়ার বিয়ের কথাবার্তা একটু পিছিয়ে যায়।
তারপর আমার আর ইমনের অনেক বড় করে রিসেপশন হয়। ওদের ফ্যামিলির আত্নীয় স্বজনের অনেকেই আমাদের আগের বিয়ের ব্যাপারটা জানতো না।
আমার সেদিন খুব খারাপ লাগছিলো মা বাবা ভাইয়ার জন্য। এতদিন নিজের বাসায় থাকার জন্য বিয়ে কি জিনিস সেটা ফিল করতে পারি নি। কিন্তু আজকে বুঝতে পারছি কতটা পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। কিছুতেই কান্না আটকে রাখতে পারছিলাম না। তারপরো ভালো থাকার নাটক ইমনের হাত ধরে ওদের বাসায় আসতে হলো।
ইমনের কাজিনরা আমাকে ইমনের ঘরে দিয়ে গেল। আজকেও এই ঘরটা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সুক্ষ্ম অভিমান চিনচিন করে মাথা চারা দিয়ে উঠতে লাগলো।
কি দরকার ছিল এই ফুলেল সাজের?
যে ফুল তার মালীর ছোঁয়া পায়না তার কি দরকার ছিল ফোটার? হাসতে ইচ্ছে হচ্ছে! আদি তুই শুধু পরিহাসের পাত্রীই হয়ে রইলি। তুই কোনদিনো ইমনের মনের গহীনে যেতে পারবি না।? ওর মনের গহীনে সেই ছোট্ট ঘরের মালকিন তুই নস অন্য কেউ?
না বলে চিৎকার করতে চেয়েও পারলাম না। মাথায় পেইন হচ্ছে খুব। উফ্.

— আদি মাথায় দুই হাত দিয়ে বসে আছো কেন?
পেইন হচ্ছে? আর ইউ ওকে।
— আমি ঠিক আছি।
— তেমনটা লাগছেনা। তুমি কি আপসেট?।বাবা মার কথা মনে পড়ছে?
আমি কোন কথা বলছিলাম না।
ইমন বসা থেকে উঠে পড়লো।
— দেখ আমি একটু অন্যরকম। অন্য সবার মত সবকিছু আমার ইজিলি হয়না। আমার সব কিছুর সাথে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। আমি আমার অনুভুতিগুলো হয়তবা তোমাকে বুঝাতে পারিনা। তার জন্য হয়তবা তুমি কষ্ট পাও। আমি বুঝতে পারি। পারিনা যে এরকম না। কিন্তু কোন এক কারণে আমি সব কিছু চেয়েও শেষ মুহুর্তে পারিনা…।
আমি ধপ করে উঠে পড়লাম।
ও চমকে আমার দিকে তাকালো।
আমি ব্যাগ থেকে শাড়ী বের করতে লাগলাম। ও এসে আমার হাত ধরে ফেললো।
— হাত ছাড় কাজটা করতে দাও।
— আমিতো তোমার সাথে কথা বলছিলাম।
নির্লিপ্ত গলায় বললাম,
— তো?
ও আমার হাত ছেড়ে দিলো।
আমি শাড়ী, ব্লাউজ, পেটিকোট বের করে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললাম।

— শুনো বরাবরের মত হেয়ালি আমার ভালো লাগেনা। এই মূহূর্তে তোমার হেয়ালিপনা সহ্য করার মত অবস্থায় আমি নাই।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসতেই দরজার সাথে হোচট খেলাম। অন্যমনষ্ক থাকায় হোচোটটা খেলাম।
বৃদ্ধা আংগুলের দিকে চোখ পরতেই দেখি ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে। সামনের দিকে তাকাতেই দেখি ইমন এতক্ষনে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। আর আমার দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি ব্যাথায় ডান পাটা উপরে তুলতে লাগলাম। কোন কিছু বুঝার আগেই আমি নিজেকে ইমনের কোলে আবিষ্কার করলাম। আমি পুলকিত দৃষ্টিতে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এই মূহূর্তে পা ছিলে যাওয়ার অনুভুতিটা বড্ডো ঠুনকো। আমি আমার দুই হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম।
— কিগো বিছানায় নামবা না। নাকি আরো কোলে থাকার শখ হয়েছে।
কিন্তু আমার কিছু করার নাই আগে তোমার পায়ের ব্যাবস্থাটা করি তারপর…
বলতে বলতেই ফেলে দেয়ার মত করে বিছানায় নামিয়ে দিলো।
ড্রয়ার থেকে ফ্রাস্ট ট্রীট বক্স বের আমার পায়ের ব্লিডিংট পরিষ্কার করে আলতো হাতে ব্যান্ডেজ করতে লাগলো।
আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
মিঃ ইমন আজকে থেকে আপনি আমার চোখের সামনেই থাকবেন। আর আপনাকে একটিবার দেখার জন্য আমার আর অপেক্ষা করে থাকতে হবেনা। অপেক্ষার পালা শেষ।
— এই যে ম্যাম শেষ। এইবার আমার ভিজিট টা দ্যান।
— মানে?
— সিম্পল বিনা ভিজিটে আমি পেশেন্ট দেখিনা। কিছুতো দিতে হবে। পাতিয়াছি হাত খালি হাতেতো ফিরে যাবোনা..
ইমন আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো..
আমি মুচকি হাসি দিয়ে ওর হাতে একটা চিমটি কাটলাম।
— আউচ
করে হাত সরিয়ে নিলো ও।
— শ্যাষম্যাষ চিমটি। যাক দিছোতো দিছোই তোমার এই উপহার আমার সমস্ত কোষে কোষে প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে পৌছে আজীবনের জন্য সেট হয়ে গিয়েছে। মানুষটা যতদিন বাচবে ততদিন এই চিমটিনাভুতির কথা ভুলবেনা।
কিন্তু এইটাতে আমি মোটেও সন্তুষ্ট হয়নি। অন্য কিছু করো।
— আশ্চর্য কি করবো আমি।
আর তোমাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমার বয়েই গেছে।

— হুম বয়েই গেছে। কারণ তুমি আমার বিয়ে করা বউ। বুঝছো আমি যা খুশি আবদার করতে পারি।
ওর চোখে মুখে অদ্ভুত দুষ্টুমি খেলা করছে।
আমার হাতে একটা হ্যাচকা টান দিয়ে আমাকে ওর বুকের কাছে নিয়ে যায়। আমি চমকে ওর দিকে তাকাই। এক হাত দিয়ে আমার একহাত স্পর্শ করে আরেকহাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে। উত্তেজনায় আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলো।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমি ওকে বললাম,
— কবিতা শুনবে। আমার নিজের লিখা।
— ওকে বলো।

“গ্রীষ্মের এলোমেলো বাতাস
বয়ে যাবে এভাবেই
গা ভাসাবোনা …….
.
.
ঘন কালো বর্ষায়
রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ
শুধুই শুনে যাব
ভিজবনা …..
.
.
ভোরবেলার মুক্তর মত শিশিরগুলো
উদাস চোখে দেখব
পা ভেজাবনা ……
.
.
চাঁদনি রাতে ঝড়ে পড়া
জোৎস্নার দিকে
চেয়ে রইব নির্বাক চোখে
গায়ে মাখবোনা ……
.
.
বসন্তের আনন্দে নেচে ওঠা
রঙিন ফুলগুলো
এভাবেই ঝড়ে যাবে
সুবাসও নেবো না…….
.
.
তুমিহীনা কোনো কিছুই
আর উপভোগ করবনা
ভালোবাসবো দুর থেকেই
যেমনটা বাসি তোমায়…..”
কবিতা আবৃত্তি করতে করতে আমি ফিল করলাম ইমন আমার শাড়ি কিছুটা সরিয়ে পেটে স্পর্শ করতে লাগলো। আস্তে আস্তে হাতটা নাভীর দিকে যাচ্ছিলো। ওর স্পর্শে কাপুনিটা বেড়ে গেল। আমি জমে গেলাম। আমি আমার একহাত দিয়ে ওর হাত ধরে ফেললাম। কিছুক্ষন পেটের উপর দুইজনের হাতের ধস্তাধস্তি হলো। একটুপর একটুপর ওর হাতের স্পর্শে আমি কেপে কেপে উঠতে লাগলাম। ও আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমার উপর সম্পূর্ন ভার ছেড়ে দিলো। ওর সত্তর কেজি ওজনের বিশাল দেহের নিচে পড়ে আমার পঞ্চান্ন কেজি ওজনের ছোট খাটো দেহটা ছটফট করতে লাগলো। দুজনের বুকের ধুকপুকুনি দুজনেই স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। ইমন আধো আধো গলায় বলতে লাগলো,
— লাল শাড়ীতে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমার মাথা খারাপ করে দেয়ার জন্য তোমার এই সাজই যথেষ্ট।
আবেশে আমার চোখটা বুজে আসছিলো।
মাথাটা উচু করে ও উঠে এলো।
আমার দুই হাতের আংগুলে ওর দুই হাত রাখলো।
দুজনের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। অন্যরকম এক ঘোরের মাঝে দুজনেই হারিয়ে যেতে লাগলাম। কোনকিছু হারার আগেই ইমন আমার মাঝে ডুবে গেল।
(চলবে)