প্রিয় অসুখ পর্ব ১০

0
450

প্রিয় অসুখ
পর্ব ১০
মিশু মনি
.
১২
শীতুলের জন্য অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে শ্রবণা। হঠাৎ একসাথে কফি খেতে চাইলো, শ্রবণার পক্ষে না করার সাধ্য ছিলো না। কিন্তু অপেক্ষা করতে বলে এখনও শীতুলের দেখা নেই। ধৈর্য ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো শ্রবণা। দূর থেকে শীতুলকে দেখা যাচ্ছে। একটা ছেলের সাথে হাসতে হাসতে এদিকে আসছে। হাতে একগাদা কাগজ আর একটা ছোট্ট বালতি। দেখে মনে হচ্ছে কোনো বিজ্ঞাপনের পোস্টার লাগাতে যাচ্ছে। কিন্তু শীতুল এ কাজ কেন করবে সেটাই ভেবে পেলো না শ্রবণা। কৌতুহল নিয়ে তাকিয়েই রইলো।

কাছাকাছি আসার পর শীতুল প্রসন্ন হাসি দিয়ে বললো, ‘অনেক্ষণ অপেক্ষা করালাম তাই না? সরি।’

শীতুলের প্রসন্ন হাসি দেখেই শ্রবণার সমস্ত রাগ, অভিমান উবে গেছে। হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘ইটস ওকে। এগুলো কি হাতে?’
– ‘পোস্টার। এগুলো লাগাতেই এত দেরি হয়ে গেলো।’
– ‘কিসের পোস্টার?’
– ‘আর বোলো না। আমার প্রেমিকা হারিয়ে গেছে তো, তাকে খোঁজার জন্য হারানো বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছি।’

শ্রবণার বিশ্বাস হতে চাইলো না। কথাটা শুনে বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। এটা নিশ্চয় মজা করে বলেছে। কিন্তু মজা করে বলুক আর যেভাবেই বলুক, কথাটা শ্রবণার খারাপ লাগার মতই।

শীতুল বললো, ‘দেখবে নাকি একটা? তুমি কয়েকটা পোস্টার নিয়ে যাও, এলাকায় লাগিয়ে দিও।’
– ‘টিউশনির জন্য?’
– ‘আরে বললাম তো হারানো বিজ্ঞপ্তি। দাঁড়াও দেখাচ্ছি।’

শ্রবণা কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে রইলো। পোস্টারটায় কি ছাপানো আছে সেটা দেখার জন্য তর সইছে না৷ শীতুল হঠাৎ পাশের জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, ‘শ্রবণা, এ হচ্ছে আয়াশ। আমার জানের দোস্ত। ফাজলামো করে বললে মায়ের পেটের দোস্ত।’

শ্রবণা ও শীতুল হেসে উঠলো। হাসি থামার পর আয়াশ শ্রবণার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘হ্যালো।’

শ্রবণা হেসে বললো, ‘হাই। আপনার সাথে তো আমার কথা হয়েছিলো। কিন্তু আমি তো…’
– ‘ডোণ্ট ওরি ম্যাম, আমি শীতুলকে কিচ্ছু জানাই নি।’

শীতুল অবাক হয়ে বললো, ‘কি জানাস নি? বল তো ব্যাপারটা কি?’

আয়াশ শ্রবণাকে বললো, ‘সে কি আপনি শীতুলকে এখনও জানাননি?’
– ‘বাদ দিন না প্লিজ।’

শীতুল একবার অবাক হয়ে শ্রবণার দিকে তাকালো, আরেকবার আয়াশের দিকে। চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে বললো, ‘কি লুকাচ্ছো আমার থেকে?’

শ্রবণা আয়াশকে ইশারায় বারণ করে দিলো। আয়াশের সাথে কথা বলার সময় শ্রবণা বলেছিলো শীতুলকে ও ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু আয়াশকে বলেছিলো কথাটা যেন শীতুলকে না জানায়। এটা নিজ মুখেই জানাতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার আগেই জানতে পারে যে শীতুল অন্য কাউকে ভালোবাসে। এ কারণে শ্রবণা নিজের মনের কথা চেপে গেছে। এখন আয়াশকেও বিষয়টা ভুলে যেতে বলছে। অবশ্য আয়াশ নিজেও এটাই চাইছিলো মনে মনে।

আয়াশ শীতুলকে বললো, ‘আরে তেমন কিছু না। আমাকে নক করে তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চেয়েছিলো এই আরকি।’

শীতুল হেসে বললো, ‘ও আচ্ছা। ফ্রেন্ডশিপ তো এমনিতেই হয়ে গেছে। তাই না শ্রবণা?’

শ্রবণার বুকের ভেতরটা ফেটে চৌচির হয়ে গেলো। আয়াশ দুম করে ফ্রেন্ডশিপের কথাটা বলে ফেললো। অবশ্য এই সময়ে কিছু একটা বলে বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়াও দরকার ছিলো। এই মুহুর্তে চোখের জল আটকানোর জন্য মনেপ্রাণে চেষ্টা করছে শ্রবণা। মনে হচ্ছে চোখের জল আটকে রাখার মত কষ্ট আর কিছুতেই নেই।

শীতুল বললো, ‘তো মিস শ্রবণা, কফি আপনি খাওয়াবেন না আমি?’

শ্রবণা প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বললো, ‘কফি তো ওয়েটার এনে দেবে, যার যার হাত দিয়ে তুলে খেতে হবে। লোকজনের সামনে তুলে খাওয়ানোটা কেমন হয়ে যায় না? হা হা হা।’

তিনজনেই হেসে উঠলো। হাসির ছলে বিষয়টা এড়িয়ে গেলো। শ্রবণা অন্যদিকে তাকিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। পরিস্থিতি এত নিষ্ঠুর হয় কি করে!

কফিশের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে শীতুল শ্রবণাকে বললো, ‘আজকে অনেক গরম পড়েছে তাই না?’
– ‘হ্যাঁ। এই গরমে কফি খাবেন?’
– ‘নো টেনশন, কোল্ড কফি খাওয়াবো। হা হা হা।’
– – ‘আপনি সবসময় হাসেন না কেন বলুন তো? হাসলে আপনাকে দেখতে অনেক ভালো লাগে।’
– ‘অন্য সময় কি দেখতে খারাপ লাগে? হা হা হা।’

শীতুল আজ কারণে অকারণে হো হো করে হাসছে। ওর হাসি দেখে মনটা ফুরফুরে হয়ে যাচ্ছে ঠিকই আবার অচেনা একটা ব্যথা বুকে বেজেই চলেছে। শ্রবণা পোস্টারের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমাকে একটা দিন না দেখি। কিসের পোস্টার সেটা দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করছে।’

শীতুল হেসে বললো, ‘আকুউপাকুউ? তাহলে তো দেখানো যাবে না। আরো কিছুক্ষণ আকুপাকু করুক।’

শ্রবণা ক্ষেপে বললো, ‘আপনি কিন্তু অনেক দুষ্টু।’
– ‘এটা সবাই বলে। তুমি অন্যকিছু বলো।’

আয়াশ এতক্ষণ চুপচাপ ছিলো। শ্রবণার কথার ধরণ, গলার স্বর সবকিছু মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো। মেয়েটা একেবারে হৃদয়ে দাগ কাটছে। একাকী বসে আলাদা করে কথা বলার প্রবল ইচ্ছে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। শীতুলের হাতে একটা চিমটি দিয়ে বিষয়টার ইংগিত দিলো আয়াশ। শীতুল আয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘দোস্ত, শ্রবণাকে শ্রদ্ধা কাপুরের মত লাগে না?’

আয়াশ সুযোগ পেয়ে বললো, ‘শ্রদ্ধা কাপুর কেন হবে? শ্রবণা নিজেই নিজের তুলনা। ওর সাথে কাউকে তুলনা করা মানায় না।’

শ্রবণার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো শীতুল। শেষ কথাটা বলার সময় গলার স্বরটা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বদলে গেছে। শ্রবণা চমকে উঠে আয়াশের দিকে তাকালো। তারপর মাথা নামিয়ে ফেললো সংকোচে।

শীতুল ওদেরকে বসিয়ে রেখে কফি’র অর্ডার দিতে চলে গেলো। অর্ডারের অজুহাতে কিছুক্ষণ ওদেরকে একা কথা বলতে দেয়ার সুযোগ এই আর কি। কিন্তু শ্রবণা আয়াশের সামনে বসেও এদিক সেদিক তাকাচ্ছে । ওর তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো আনমনে শুধু শীতুলকেই খুঁজে চলেছে। শীতুলকে দেখার জন্য, কণ্ঠস্বরটা শোনার জন্য শ্রবণার উথাল পাথাল লাগে। এটা অন্যরকম একটা অস্থিরতা যা কাউকে কক্ষনও বলে বোঝানো সম্ভব না।

আয়াশ আগে কথা বলা শুরু করলো, ‘আচ্ছা মিস শ্রবণা, এখানে কোথায় থাকেন আপনি?’

শ্রবণা আয়াশের কথার উত্তরে হেসে বললো, ‘এখানে কিভাবে থাকবো? এটা তো কফিশপ।’
– ‘এখানে বলতে ঢাকায় কোথায় আছেন?’
– ‘কলাবাগানে। আপনি আবার শীতুলের মায়ের মত বলবেন না যেন কলাবাগানে কলা পাহারা দেই।’
– ‘হা হা হা। শীতুলের মায়ের সাথে দেখা হয়েছিলো?’
– ‘আন্টির মত মজার মানুষ আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। এখনো ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের মত আচরণ। অথচ ভার্সিটিতে আমার এমন কোনো ফ্রেন্ড ছিলো না।’
– ‘পড়াশোনা চলছে?’
– ‘হ্যাঁ। জার্নালিসমে এবার ফাইনালে।’
– ‘বাহ! শক্তিশালী মেয়ে বলতে হবে।’
– ‘সব মেয়েই শক্তিশালী। কারোটা প্রকাশ্য, কারোটা বা লেখায় প্রকাশ পায়।’
– ‘সাংবাদিকতার নেশায় কেন ধরলো আপনাকে?’
– ‘আম্মু চাইতেন আমি জার্নালিস্ট বা নিউজ রিপোর্টার হই।’
– ‘গ্রেট। আপনার আম্মুকে দেখার সাধ জাগছে।’
– ‘আম্মু নেই, তিন বছর আগে মারা গেছেন।’

আয়াশ অপ্রস্তুত হয়ে বললো, ‘সরি।’
– ‘আরে ব্যাপার না। আপনার বন্ধু কোথায় গেলো?’
– ‘কি জানি। ওর মাথায় এখন শুধু ওই মেয়েই ঘুরছে। আল্লাহ ই জানে কি আছে কপালে। শেষে না পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়।’
– ‘আপনার বন্ধুর মত একটা ছেলেকে রিজেক্ট করেছে কোন মেয়ে?’
– ‘হা হা। সেই মেয়ের কথা শুনলে তুমি হাসতে হাসতে মরে যাবা।’
– ‘কেন?’

আয়াশ শ্রবণার চোখের দিকে তাকালো। এই প্রশ্নের উত্তর শ্রবণাকে দিতে চায় না ও। কারণ শীতুল একটা ছায়ার পিছনে ছুটছে সেটা শুনলে শ্রবণা শীতুলকে নিজের করে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। কিন্তু এই শ্রবণাকে যে আয়াশের চাই-ই চাই। কি স্নিগ্ধ একটা মুখ, নিবিড় আঁখিপল্লব। দেখলেই মুখটা দুহাতে ধরতে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকি।

শ্রবণা কৌতুহলী চোখে তাকিয়েই আছে। আয়াশ ব্যাপারটাকে আড়াল করার জন্য বললো, ‘আসলে মেয়েটা শীতুলকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে।’
– ‘বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’
– ‘থাক না। আর তুমি শীতুলকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস কোরো না। ও এসব শুনলে আঘাত পায়। তবে আমার মনেহয় এবার মেয়েটাকে ও পাবেই।’

শ্রবণার মেজাজ বিগড়ে গেলো। মনের ভেতরে কি যে এলোপাথাড়ি বইতে আরম্ভ করেছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, ‘পোস্টার গুলো কিসের? আমার দেখতে ইচ্ছে করছে।’
– ‘কি করবা দেখে। ওগুলা ওর পাগলামি। মেয়েটাকে পাবার জন্য আর কত পাগলামি যে করবে।’

শ্রবণার মনটা এবার এতটাই খারাপ হলো যে চাইলেও আর হাসিমুখে বসে থাকতে পারলো না। মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। কফিশপের কাঁচের দেয়ালের উপর বিশাল মানিপ্লান্টের চারা ঝুলছে। চারার পিছনের শিকড় গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো শ্রবণা। গাছ হয়ে জন্মালেও বোধহয় ভালো হতো। এই একাকীত্ব আর ভালো লাগে না। জীবনে বেদনা, যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছু নেই। একমাত্র মায়ের ভালোবাসায় বড় হয়ে ওঠা, সেই মা ও তিন বছর আগে চলে গেছে । বাবা এই বয়সে আবার বিয়ে করেছে। সেই মায়ের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেও লাভ হয় না। মা শ্রবণাকে নিজের মেয়ের মত ভাবতেই পারেন না। সবসময় একটা পর পর ভাব ধরে কথা বলেন। শ্রবণার জীবনে কখনো কোনো বন্ধু ছিলো না, বান্ধবী ছিলো না, কাছের কোনো আত্মীয় ছিলো না। মনে মনে কল্পনায় কেবল একজনকেই বন্ধু ভেবে ভালোবেসেছে, প্রেমিকের মত আগলে রেখেছে, স্বপ্ন বুনে নতুন করে বাঁচার আশা দেখেছে। কেবল একটা ডায়েরি ছিলো, আর ছিলো কিছু স্বপ্ন। এখন ডায়েরি নেই, কল্পনার মানুষটাও নেই। মানুষটা কল্পনা থেকে বাস্তবে এসে দাঁড়িয়েছে কিন্তু এই মানুষটাও অন্য কারো। ডায়েরিতে কত স্বপ্ন, কত ভালোবাসা যে মিশে আছে সে শুধু শ্রবণাই জানে। ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছু থাকলে সেটা দিয়েই আগলে রেখেছিলো প্রিয় অসুখ টাকে। সেই অসুখটাও বেঈমানী করলো। এত বছর স্বপ্ন দেখিয়ে আজ বাস্তবে এসে ধরা দিয়েও আপন হলো না। আর কত? এই একাকীত্ব কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে?

শীতুলের হাতের স্পর্শে সম্বিৎ ফিরে পেলো শ্রবণা। চোখেমুখে বিস্ময় ও প্রশ্ন নিয়ে শীতুলের দিকে তাকিয়ে রইলো। শীতুল জিজ্ঞেস করলো, ‘এভাবে আনমনা হয়ে কি ভাবছিলে? কি দেখছিলে ওদিকে?’

শ্রবণা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,, ‘না কিছু না।’
– ‘হঠাৎ মুড অফ হয়ে গেলো যে?’
– ‘মুড সুয়িংয়ের বদভ্যাস আছে।’
– ‘ওহ আচ্ছা। কফি অনেক্ষণ আগে চলে এসেছে, খাইয়ে দিতে হবে নাকি? হা হা হা।’

শীতুলের হাসি দেখে স্তম্ভিত শ্রবণা আরো স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। এত সাবলীল ভাবে কি করে কেউ হাসে? সহজ, স্বাভাবিক একটা হাসি অথচ নির্মল আর সুন্দর। শীতুলের হাসি দেখলে বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। এই মানুষটা শ্রবণার নয়, এটা ভাবতেও কষ্ট হয়- ভীষণ কষ্ট।

শীতুল কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো, ‘তোমার গিটার অনেক ভালো লাগে তাই না?’
– ‘হুম।’
– ‘আজ সন্ধ্যার পর বন্ধুবান্ধবরা মিলে একটা আড্ডা হবে। সাথে গান বাজনাও, তুমি চাইলে জয়েন করতে পারো।’

শ্রবণা কিছু বললো না। শীতুল আবারো বললো, ‘আসলে তোমার অনেক ভালো লাগবে। আমরা সপ্তাহে একদিন সংসদ ভবনের সামনে বসে গান গাই। সাথে ফুচকা চটপটি আর পেয়ারা মাখানো। দারুণ মজা হয়। আসবে?’

শ্রবণা এবারো কিছু বললো না। শীতুল মাথা ঝাঁকিয়ে আরেকবার কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো, ‘আয়াশের সাথে তো পরিচয় হলোই। আমার আরো কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। তুমি আসতে চাইলে আমি আড়ং থেকে তোমাকে রিসিভ করতে পারি।’

শ্রবণা হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘কেউ রিসিভ করলে চাইলে আমার আসতে আপত্তি নেই। তবে আমাকে পাত্তা না দেয়া ভাব দেখালে এটাই শেষ আসা।’

শীতুল হো হো করে হেসে বললো, ‘পাত্তা না দেয়ার প্রশ্ন আসছে কেন হে? আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি? কারো বিরুদ্ধে কিছু বলেছি? তারপরও একজন বলবে আমি ভালা না।’

শ্রবণা এবারো না হেসে পারলো না। ওর মুখে হাসি দেখে শীতুল গর্বিত হওয়ার ভঙ্গিতে আয়াশকে বললো, ‘অবশেষে রাজকন্যার মুখের হাসি ফিরিয়ে এনেছি রাজাশাইম এবার আমায় পুরষ্কৃত করুন।’

আয়াশ মানিব্যাগ থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে শীতুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘বেঁচে থাক বাবা। এভাবে আজীবন রাজকন্যার মুখে হাসি ফোটাও তবে আমারটার না।’

শীতুল হো হো করে হেসে উঠলো। শ্রবণা শেষ কথাটা বুঝতে না পেরে বললো, ‘মানে?’

আয়াশ তড়িঘড়ি করে বললো, ‘না মানে আমার পকেট না খসায় যেন সেটাই বললাম। হা হা হা।’

শ্রবণা এই চালাকিটা কিছুতেই বুঝতে পারলো না। আর বুঝবেই বা কি করে। মগজে শীতুল ছাড়া আর কিচ্ছু ঘোরে না। সেখানে শীতুলের অচেনা এক বন্ধু দূর থেকে শ্রবণাকে ভালোবেসে যায় সেটা শ্রবণার জানার কথা নয়।

কফি শেষ করে বাইরে এসে শীতুল রিক্সা ডেকে শ্রবণাকে তুলে দিলো। বিদায় দিয়ে বললো, ‘সাবধানে এসো হে বন্ধু। সন্ধ্যায় দেখা হবে। আড়ংয়ের সামনে ঠিক সাতটায় ওয়েট করবো।’
– ‘আচ্ছা ঠিকাছে। আসি তাহলে।’
– ‘মন ভালো হয়েছে?’

শ্রবণা হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘হুম। এত সুন্দর একটা সময় উপহার দেয়ার জন্য থ্যাংকস।’
– ‘সন্ধ্যায় আরো ভালো সময় উপহার দিলে শুধু থ্যাংকস দিবে?’
– ‘না। বলুন আর কি চান?’
– ‘এই পোস্টারগুলো এলাকায় লাগিয়ে দিও। হা হা হা।’

শ্রবণা ক্ষেপে রিকসাওয়ালাকে বললো, ‘মামা আপনি যান। আর আপনার পোস্টার সম্পর্কে আমার কোনো আগ্রহ নেই।’
– ‘চেতছো কেন ওহে বালিকা? আমার প্রেমিকা বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করে আমাকে কৃতার্থ করো।’
– ‘আপনার প্রেমিকা নিয়েও আমার কোনো আগ্রহ নেই।’

রিক্সা দ্রুত চলতে আরম্ভ করেছে। শেষ মুহুর্তে শ্রবণার এরূপ রাগের কারণ বুঝতে পারলো না শীতুল। আর শ্রবণাও বুঝতে পারছে না শীতুলের প্রেমিকার কথা শুনলেই ওর এত রাগ হয় কেন!

চলবে..