#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#Last_Part
“তিশার মুখে, আহিল কে বিয়ে করতে মানা করায় মীরা অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এটা কি করে সম্ভব! যেই মেয়ে আহিল কে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না, সেই মেয়ে এখন আহিলের নামটা ও শুনতে পছন্দ করছে না। মীরা তিশার মাথায় আবারও হাত রেখে বলে,,,,কি আর করবার এখন যেহেতু তুমি যেতে চাইছোনা। আমিতো আর জোর করতে পারিনা আমার সাথে যাওয়ার জন্য, তাই ভালো থেকো আমি আসছি,,,!
কথাগুলো বলে মীরা আর একমুহূর্ত দেরি করেনি, দ্রুত পায়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে।নিচে এসেই দেখতে পায় আহিল গাড়ির সামনে বসে সিগারেট খাচ্ছে।মীরা গিয়ে আহিল কে বলে,,,,,,
_আজকে রাতেই শেষ করে ফেলতে হবে! তা না হলে বিপদ আরও বাড়বে।এই বলে মীরা গিয়ে গাড়িতে ওঠে, আহিলও ড্রাইবিং সিটে বসে পড়ে। তারপর গাড়ি নিয়ে হসপিটাল থেকে চলে যায়।
____
তিশা অবাক হয় তার মায়ের এই আচরণে। এখানে আসার পরে একবার ও তার শরীর সম্পর্কে জানতে চাইনি, যে সে কেমন আছে!ওল্টো এসেছে তাকে জোর করে আহিলের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য। এই তার ভালোবাসা আমার প্রতি! ছোট থেকে অবোহেলায় অবহেলায় বড়ো হয়েছি। এখনো তার মা তাকো অবোহেলাই করছে। অন্যের ছেলের জন্য নিজের মেয়ের শরীরের কন্ডিশনটাও একবার দেখেনি। মনে এইসব কথা ভেবে তিশার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। তিশাকে কান্না করতে দেখে সায়ান তিশার পাশে বসে তিশাকে জিজ্ঞেস করে,,,,
__কি হয়েছে তিশা,কান্না করছো কেনো! শরীর খারাপ লাগছে! আমি ডক্টর কে ডাল দিবো।
__ডাক্তার ডাকার দরকার নেই, আমি একদম ঠিক আছি।
সায়ান আর তিশার কথার মাঝেই রায়হান বলে ওঠে যে এখনি তিশাকে নিয়ে চলে যাওয়ার কথা। রায়হানের কথায় সায়ানও সম্মতি জানায়।তারপর ডাক্তার এর বিল মিটিয়ে তিশাকে নিয়ে পার্কিং এরিয়াতে আসে তারা।পার্কিং এরিয়াতে এসেই রায়হান নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। হঠাৎ রায়হানের এই আচরণে তিশা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়,সায়ান ও কিছুটা অবাক হয়।রায়হান কান্না ভেজা কন্ঠে তিশাকে বলতে শুরু করে ,,,,,,,
__তোর জন্য আমার অনেক দোয়া রইলো।তুই সবসময় সুখী হো।এতোদিন তুই আমার দায়িত্ব ছিলি, আজকে থেকে সায়ানের। তাই সবসময় সায়ান কে সম্মান করে চলবি। স্বামীর কথার অবাধ্য হবি না,এবং আহিলের সাথে কখনো যোগাযোগের চেষ্টা ও করবি না। ও যদি তোর সাথে যোগাযোগ করবার চেষ্টা ও করে তাহলে তুই ওকে এরিয়ে চলবি।আর নিজের খেয়াল রাখবি,ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবি । যে কোনো পরিস্থিতির জন্য নিজেকে শক্ত করে তৈরি করবি। কাল যদি তোর কাছে কোনো খারাপ খবর যায়, তাহলে তুই ভেঙে পরবি না। আর আমাকে ভুল বুজিস না মা, আমি যতোই খারাপ হয়না কেনো তোর ক্ষতি কখনোই চাইবো না৷
রায়হানের কথায় সায়ান কিছুটা অবাক হয়,কালকে আবার কি খবর আসবে। আর তিশার আব্বু এইভাবে কান্না করছে কেনো!সায়ান এসব চিন্তার মাঝেই তিশাও কান্না করতে করতে তার বাবাকে বলছে,,,,,
__আব্বু আপনি এইভাবে কান্না করছেন কেনো! আর এইসব কি বলছেন, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
__সময় হলে ঠিকই বুঝবে।। এখন শুধু এতোটুকুই তোমার জানার দরকার ছিলো। বলেই রায়হান তিশাকে ছেড়ে সায়ানের হাত হাতের মুঠোয় নিয়ে, সায়ান কে বলতে থাকে,,,, সায়ান বাবা আমি ছাড়া আমার মেয়ের এই পৃথিবীতে আর কেও নেই। হ্যা কিছুদিন আগে হয়তো ছিলো, কিন্তু এখন আর নেই।তাই আমার মেয়ের হাত আমি তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। এখন ও তোমার সহধর্মিণী, তাই ওর সুখ /দুঃখ সবকিছুর অংশীদার তুমি৷ আমার মেয়েটা ছোটো থেকে বাবার আদর পায়নি, পায়নি মায়ের আদর। আমাদের জন্য আমার মেয়ে কষ্টে বড়ো হয়েছে। তাই আমি চাইনা আমার মেয়ের বাকি জীবনটাও কষ্টে যাক।যদি কালকের পড়ে আমি তোমাদের মাঝে থাকতাম তাহলে তোমাকে বলতাম যে, যদি কখনো আমার মেয়ের প্রতি তোমার ভালোবাসা কমে যায় তাহলে তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে যেও। কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব না, তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে আমার মেয়েকে একা করে দিও না , সবসময় ওর পাশে থেকো।আমার বা ওর মার করা ভুলের শাস্তি ওকে দিও না। ও খুব ভালো একটা মেয়ে, নিজের মেয়ে বলে বলছি না। ওর মতো একটা মেয়ে আমি সত্যিই খুব গর্বিত।তাই ওর কোনো অযত্ন করো না, সবসময় ওকে দেখে রেখো।আর তোমার দুইজনে ভালো থেকো, তোমাদের একটা সুখী পরিবার হোক।
কথা গুলো বলে রায়হান তিশাকে ভালো থাকিস মা বলে আর একমুহূর্ত দেরি না করেই চলে যায়। সায়ন আর তিশা পিছোন থেকে অনেকবার তাকে ডাক দিয়েছে, কিন্তু সে একবার ও পিছনে ফিরে তাকায়নি।
সায়ান আর তিশা অনেকটা অবাক হয়, এতো বার ডাকার পড়েও তার বাবার কোনো সারা নেই। আর তার এইসব কথার মানে কি ছিলো!কালকে আর থাকবে না, হঠাৎ এই আচরণের কারন!তিশা আর সায়ান ও ওখানে আর একমুহূর্ত দেরি না করে তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
রায়হান হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে ডিরেক্ট গিয়ে আজকে রাত ১২টার জন্য টিকেট কেটে আসে।আজকে রাত ১২টায় সে ইতালিতে বেক করবে,তারপর ইতালি থেকে লন্ডন।তারপর আর তাকে পায় কে আসার পথে ক্লোরফম ও কিনে নিয়ে আসে।আজকে রাতেই তোমার খেলা শেষ করবো, আর সাথে তোমার চামচিকার। শুধু অপেক্ষা করো তুমার মৃত্যু তোমার কাছে আসছে
।এইসব কথা ভাবতে ভাবতে রায়হান বাসায় প্রবেশ করে। বাসায় প্রবেশ করতেই রায়হানের মুখে পৈশাচিক হাসি।বাসা পুরো পুরি অন্ধকার, একফুটো আলো নেই বাসায়। এখন প্রায় রাএ ৭.৩০ তাও বাসা অন্ধকার।
রায়হান পকেট থেকে মুঠোফোনটি বের করে ফ্লাশ লাইটটা চালো করতে নিবে এমন সময় পুরো বাসা আলোকিত হয়ে উঠে। একটা গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে আসে,, আরে আসো, আসো,,,তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।আফ্টারঅল তোমার সাথে আমার ২৫ বছর আগের কিছু লেনদেন যে বাকি আছে, সেটা শোধবোধ করতে হবে না। কথা গুলো শুনে, রায়হান পিছনের দিকে তাকানোর আগেই। পিছন থেকে সজোরে তার মাথায় ফুলের টব দিয়ে বাড়ি মারে কেও।সাথে সাথে রায়হান একটা মৃদু চিৎকার করে, মাথায় হাত দিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ে। ফুলের টবের বারিটা অনেকটা জুড়ে পরায়,মাথা ফেটে মাথার ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে।তার সামনে দু’টো পা এসে থেমেছে, রায়হান চোখ পিটপিট করে ওপরের দিকে তাকায়।তাকাতেই দেখে মীরা হাতে রুমাল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রায়হানের মাথায় ফেটে যাওয়া যায়গায় রুমাল ঠেকাতে নিলে রায়হান একহাত দিয়ে মীরার হাত সরিয়ে দেয়। হাত সরাতেই মীরা কান্নামাখা সুরে বলতে শুরু করে,,,,,
__খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না! ইশ্ কতোটুকু কেটে গেছে। ব্যাথা করছে তাই না রায়হান! পঁচিশ বছর আগে আমারো ঠিক এমন করেই ব্যাথা করছিলো।তখন তুমি আমার মজা ওরাচ্ছিলে, একটি বার ও আমার কাছে এসে সাহায্য করোনি।আজকে তোমাকে ও আমি সেই কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারবো। তারপর তোমার আদরের মেয়ে তিশা আর তার স্বামী সায়ান কে।
মীরার মুখে তিশা আর সায়ানকে
__তোর মতো নষ্টা মহিলাকে যদি সাহায্য করারই হতো, তাহলে কি আর মারার চেষ্টা করতাম। কিন্ত, আফসোস তুই বেঁচে গেলি!কিন্তু আজকে আর তুই বাঁচতে পারবি না আমার হাত থেকে। আজ থেকে পচিশ বছর আগে তোকে মারার কারনটা নিশ্চয়ই ভুলে যাসনি! আমার চাচাতো ভাই রোশানের সাথে পরকীয়া করে আমারই চোখের সামনে আমার মেয়ে দিশাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলি। কিন্তু আফসোস তুই আমার মেয়ে দিশার কোনো ক্ষতিই করতে পারলি না। উল্টো নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলি।যখন তোকে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দিছিলাম, তখন তোর নাগর রোশান না হয় তোকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু আজকে তোকে কে বাঁচাবে!একবার তুই ভেবে দেখেছিস।
__ হা,,,,হা,,,তুমি মারবে আমাকে।যা আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগেই করতে পারো নাই, এখন কি করে করবে। এটা তোমার পক্ষে সম্ভব হবে না রায়হান। কিন্তু আমার মনে আজও একটা প্রশ্ন, তুমি আমাকে কেনো মেরে ফেলতে চেয়েছিলে।
__তোর মতো বেহায়া মহিলাকে কেনো মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম এটা তুই খুব ভালো করেই জানিস।আমি থাকা সত্যেও আমারই চাচাতো ভাই রোশানের সাথে পরকীয়া শুরু করেছিলি।যখনই আমি কাজের সূএে ঢাকা আসতাম তুই তোর নাগর রোশানের সাথে ফূর্তি করে বেরাতি।নাগর এর সাথে পালিয়ে বিয়ে করবার জন্য আমার মেয়ে দিশাকে ও তুই মারার চেষ্টা করেছিলি।রোশানের সাথে মিলে যেই প্ল্যান করেছিলি, সবটাই আমার নিজের কানে শুনেছি।আমার মেয়ে দিশাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে সারা বাড়ি এসে খুজঁছিস। যাতে আমাকে বলতে পারিস যে ও পানিতে পড়ে মারা গেছে। কিন্তু তুই তো আর জানতি না যে তোর এই নোংরা খেলা আমি আগেই জেনে গেছি।যদি আর একটু দেরি করে পুকুর পাড়ে যেতাম! তাহলে আমার আদরের দিশা কে হারিয়ে ফেলতাম চিরতরের জন্য । দিশা দুধের বাচ্চা তোর ওর জন্য একফোঁটা মায়া হয়নি,তো আমার কেনো তোকে মারতে মায়া হবে!তাই ওইদিন ই তোকে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিলাম।But,,,আফসোস রোশান ওই সময় তোকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো।
__কথায় আছে না, রাখে আল্লাহ মারে কে! তাই আমাকেও তুমি মারতে পারোনি। কিন্তু আমি তোমাকে ঠিকই মারবো। এই পঁচিশ বছর ধরে তোমাকে দিয়ে আমার লাভ হতো, তুমি আমাকে সকল মেয়ের ব্যবস্থা করে দিতে তোমার গ্যাং এর মাধ্যমে। তাই আমি তোমার থেকে লাভের আশায় আমাকে মারার প্রতিশোদ ও নেই -নি,কিন্তু এখন তুমি আমার লসের কারন হয়ে দাড়িয়েছো।তাই তোমাকে আমার আর বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ডিল ছিলো এইটা, প্রায় একশো কোটি টাকার ডিল তোমার জন্য নষ্ট হয়ে গেলো।আর তোমাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবো তা কি করে সম্ভব।
__তোর মতো মহিলা আমি পৃথিবীতে কমই দেখেছি, যে কি না নিজের স্বার্থের জন্য মেয়ে কেও বিক্রি করে দিতে পারে।
__কিসের মেয়ে! আমি এই মেয়েকে মানি না। ওর শরীরে তোমার রক্ত বয়ছে।যদি ছোট বেলায় জানতে পারতাম, তাহলে ওকে তখনই মেরে ফেলতাম। ভেবেছিলাম তিশা আমার আর রোশানের সন্তান। কিন্তু এতোদিন আমি ভুল ছিলাম, ও রোশানের সন্তান নয়। ওইদিন তোমার আর তিশার ডিএনএ টেস্ট এর রিপোর্ট পেপারটা না দেখলে জানতেই পারতাম না। যদি আগে জানতে পারতাম তাহলে আরও আগেই তিশাকে পাচার করে দিতাম।
__তোর মতো মায়ের মুখে আমি থুতু ফেলি। নিজের মেয়েকে মারার কথস বলছিস একবার ও তোর বুক কাপছে না। আবার তাকে নাকি আগে জানলে পাচার করে দিতে। আমিতো অবাক হচ্ছি তুই এতোটাও নিচে নামতে পারিস। তুই তো সাধারণ ঘরের একটা
মেয়ে ছিলি, তাহলে কেনো তুই বদলে গেলি।পরকীয়া পর্যন্ত ঠিক ছিলো কিন্তু তুই ও কি না শেষ নারী পাচারের সাথে জড়িত হলি।যেই তুই আমাকে নারী পাচারের পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলি।আর সেই তুই কি না এখন আমার ও বস্।ব্যপারটা কিরকম গুলাটে লাগছে না! তুই আমার স্যার এর কি হোস যে ওনি মারা যাওয়ার আগে, তোর নামে সবকিছু করে দিয়ে গেছে!
রায়হানের কথা শুনে মীরা মুখে সয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। রায়হানের কিছুটা সামনে গিয়ে, বলতে শুরু করে,,,
__তোর স্যার আমার স্বামী ছিলো।তাকে আমার রূপের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিলাম।তাকে বিয়ে করবার একটাই কারন ছিলো, সেটা হলি তুই। তোর থেকে আমার প্রতিশোধ নেওয়ার ছিলো। তাই তাকে বিয়ে করে,তার সব সম্পত্তি আমার নিজের নামে করে নেই।তারপর তার এই নারী পাচারের বিজনেস, ও আমার নামে করবার জন্য তাকে ঘুমের মাঝে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি।তার কোনো ওয়ারিশ ছিলো না তাই সবকিছুর রানী হয়ে গেলাম আমি।কিন্তু তার মধ্যে আবার রোশান এসে বাধা হয়ে দাড়ায়, তারপর তার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে, নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করি।
__তুই কতোটা নিচু তা তোকে না দেখলে আমি জানতেই পারতাম না। আমিতো ভেবেছিলাম তুই রোশান কে বিয়ে করে নিয়েছিলি। কিন্তু এখানে তো তুই আমার ভাবনার থেকে একদম এগিয়ে, আমার বস কে-ই বিয়ে করে নিয়েছিলি।এইসব কিছু তো ঠিক ছিলো, কিন্তু আহিলের মা কে কেনো মারলি?
রায়হানের কথা শুনে মীরা কিছুটা চমকে উঠে, তা-ও নিজেকে ধাতস্ত করে, রায়হানকে বলে,,,,,
__কি আম!আমি-তো মায়া কে নয়, মহুয়া কে মেরেছিলাম। তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী, যাকে অনেক ভালোবাসতে তুমি।
মীরার মুখে, মহুয়া কে মারার কথা শুনে রায়হান কিছুটা অবাক হয়। মহুয়া কে তো আমি মেরেছিলাম, ও কেনো বলছে যে ও মহুয়া কে মেরেছে!
__তুই মহুয়া কে মেরেছিস মানে! মহুয়া তো ছাঁদ থেকে পড়ে মারা গেছে তুই ওকে কি করে মেরেছিস! আমার সাথে ফাজলামি করছিস তুই!
__ফাজলামি করবো আমি! তা-ও তোমার সাথে! হাসালে, আমিই মেরেছি তোর স্ত্রী মহুয়া কে। ওইদিন মহুয়া ছাঁদ থেকে পড়ার পরে-ও বেঁচে ছিলো,হাত আর পায়ে একটু চুট পেয়েছিলো।কিন্তু আমি গিয়ে ওর মুখের মধ্যে, স্টেবিং করি, আর আহিল ওর গলা চেপে শ্বাস আটকে মেরে ফেলি।আর তুই,বোকা ভেবেছিলি, যে মহুয়ার মৃত্যুর জন্য তুই নিজেই দায়ী।
রায়হানের যেনো নিজের কান কেই বিশ্বাস হচ্ছে না। মীরা এতোটা নিচে নামতে পারে, সাধারণ সহজ সরল একটা মেয়ে যে এতোবড়ো খুনি হয়ে যাবে! অবিশ্বাস্য.।
__এই জন্যেই আমার মেয়ে তিশাকে নিজের ক্রাইম পার্টনারের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলি।কিন্তু তোর ওই ক্রাইম পাটনার এখন কই! তাকে তো দেখছি না এখানে।
রায়হানের কথায় মীরা হাসতে হাসতে বলতে শুরু করে,,,,
__আমার ক্রাইম পার্টনার নিজের বিশ্বাস ঘাতকতার ফল ভোগ করছে। আমার সাথে পল্টি নিছিলো তাই বেধে ফেলে রাখছি তিশার রুমে। তোর সাথে সাথে তোর ভাতিজা কে ও আজকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলবো।
আহিল কে বেধে ফেলা রাখার কথায়, রায়হান খানিকটা অবাক হয়। কিছুখন আগে যেই ছেলের সাথে, নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছিলো।এখন সেই ছেলে কেই মেরে ফেলার কথা বলছে! স্ট্রেইন্জ।
এইসব চিন্তার মাঝেই মীরা রায়হানের বুকের ওপর ছুরি চালিয়ে দেয়। আগেই মাথা ফেটে রক্ত পড়ছিলো,এখন ছুরির আগাতে আরও জখম হয়ে গেছে,জখমকৃত যায়গা দিয়ে রক্ত বেরিয়ে পুরো ফ্লোর বরে যাচ্ছে। তা-ও রায়হান নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে মীরাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ছুরিটা এখনো রায়হানের বুকেই বিঁধে, আছে। ধাক্কার চুটে মীরা গিয়ে, টি টেবিলের সাথে বাড়ি হায়।এই সুযোগে রায়হান পকেট থেকে ক্লোরোফম, বেড় করে, মীরার মুখে মারে।ক্লোরোফম মারার কারনে,মীরার শরীর ডলছে। এখনোই হয়তো জ্ঞান হারাবে! এদিকে রায়হান নিজের বুকে বিঁধে থাকা ছুরিটা এক টান দিয়ে খুলে ফেলে,ছুরি খুলার সাথে সাথেই আরও বেশি করে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়।
নিজের শরীরে তোয়াক্কা না করে, মীরার পেটের মধ্যে স্টেবিং শুরু করে।রায়হানের থামার কোনো নাম নেই, সে স্টেবিং করেই চলেছে,,,,, পুরো ফ্লোর মীরা আর রায়হানের রক্তে বরে গেছে।অতিরিক্ত মাএায় স্টেবিং এর কারনে, মীরার মুখ দিয়ে ও রক্ত বের হওয়া শুরু হয়,আস্তে আস্তে মীরার শরীর ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। রায়হানের মুখে পৈশাচিক হাসি,, সে নিজে নিজেই হাসতে হাসতে বলে,,,,শা*লি আমাকে আর আমার মেয়েকে মারতে এসেছিলো,,,,, এখন নিজেই মরে পড়ে আছে।পঁচিশ বছর আগেও আমি খলনায়ক ছিলাম এখনো আছি, আর সব সময় #আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক থাকবো,,,, কথাটা বলতে বলতে রায়হানের দেহ টাও ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে।রায়হান আর মীরার মরন খেলা এতোখন কেও আড়ালে লুকিয়ে দেখছিলো। তাদের এই অবস্থা দেখে তার মুখে পৈশাচিক হাসি,,, সে হাসতে হাসতে মীরা আর রায়হানের নিস্তেজ শরীরের সামনে এসে দাঁড়ায়। মুখ থেকে একটা ‘চ’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে, তার হাতে থাকা বোতল থেকে কেরোসিন তেল তাদের শরীরের ওপর ডালে,এবং বাড়ির বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে,,, ডেলে দেয়। তারপর পকেট থেকে লাইটার বের করে, আগুন জ্বালিয়ে দেয় পুরো বাড়ীতে।আগুন জ্বালিয়ে সে নিরাপদ দূরত্বে চলে আসে। দূরত্বে দাড়িয়ে ওদের পুরে যাওয়ার দৃশ্য দেখে,,,,,। কিছু সময়ের মধ্যে তিনটি মানুষ আর সাথে পুরো বাড়ি পুরে ছায় হয়ে যায়। এই বাড়ি পুরার সাথে সাথে পুরে ছায় হয়ে গিয়েছে তিনটি মানুষ রূপি জানোয়ার। যাদের পাপের শাস্তি তারা পেয়ে গিয়েছে, তাদের ভাগ্যে বোধহয় এটাই ছিলো!
___
কেটে গেছে প্রায় সাত বছর, তিশা আর সায়ানের সম্পর্কে এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো।তাদের সুখের সংসার, পাঁচ বছরের একটা মেয়ে ও আছে। তাকে এইবছর স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে।তাকে সবসময় সায়ান স্কুলে নিয়ে যায়, আজকে তার শরীর খারাপ থাকায় ড্রাইবার কে দিয়ে স্কুলে পাঠায় তার মেয়ে তিয়ানাকে।রাস্তায় ঘটে এক বিপত্তি,, কেও মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ড্রাইবারের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তিয়ানা কে কিডন্যাপ করে,,,,,,
(সমাপ্ত)
#রিচেক করা হয়নি