#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ১০
লিখাঃসামিয়া খান
ধবধবে সাদা অত্যন্ত নরম তুলতুলে কোনোকিছু মায়ার শরীরের সাথে বার বার স্পর্শ করছে।ঘুমমিশ্রিত চোখে মায়া এতটুকুই ঠাহর করতে পারলো।ধীরে ধীরে চোখ খুলে মায়া দেখতে পেলো একজোড়া নীল চোখ এবং পুরো সাদা পশমে আবৃত একটা ছোট্ট দেহের অধিকারী বিড়াল।যার নীল বর্ণের অতি উৎসুক চোখ দ্বারা মায়ার দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে।
ধপ করে উঠে বসলো মায়া।তার উঠা দেখে বিড়াল কিছুটা ভয় পেয়ে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড়ে সোফায় বসে থাকা দিহান এর কোলে উঠলো।
“ইশ! মায়া বিলাই নিজের সহজাতকে কী এভাবে ভয় দেখাতে হয়?”
দিহানের কথাটা মায়ার কর্ণকুহর হলোনা।সে হতবিহ্বল হয়ে দিহান আর বিড়ালটার দিকে তাঁকিয়ে আছে।মায়ার অবস্থা বুঝতে পেরে নীল চোখের বিড়ালের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে দিহান বিছানার কাছে আসলো।মায়ার দিকে একটু ঝুঁকে দিহান তার ললাটে একটা উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বলল,
“শুভ বিকাল।কেমন ঘুম হলো?”
“এটা বিড়াল?”
“নাহ বাঘ।এখন তোমাকে হালুম দিবে।”
“ঢং বাদ দেন।এটা আপনার বিড়াল?”
“ইয়েস।মিট মাই বেবী জিকজ্যাক।”
“আপনার বেবী মানে?বিড়াল আপনার বাবু কেমনে হয়?”
“হাইরে পাগল মেয়ে।প্রত্যেকটা পোষা প্রাণী তার পালক এর কাছে সন্তান সমতুল্য হয়।”
“আমারো একটা বিড়াল ছিলো।অনেক ছোট থাকতে।তখন বয়স দশ ছিলো।”
“তাই।তাহলে জিকজ্যাকের সাথে তোমার মিলবে ভালো।”
“কিন্তু আমি যে বিড়াল ভয় পাই।কারণ ছোট বেলায় বিড়াল আমাকে তিনবার কামড় দিয়েছিলো।সেজন্য বিড়ালটাকে রাস্তায় রেখে এসেছিলো বাবা।তারপর থেকে বাড়ীতে আর কোনোদিন বাবা বিড়াল আসতে দেয়নি।”
কথাগুলো বলার সময় এক আলাদা ঔজ্জ্বল্যতা প্রকাশ পেয়েছিলো মায়ার মুখে।সেদিকে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে দিহান প্রশ্ন করলো,
“তোমার বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই নাহ মায়ামতি?”
নিস্পৃহ গলায় মায়া উত্তর দিলো,
“ভালোবাসতো এখন বাসেনা।”
“ওকে যাও এখন গোসল দেও।আমি গিজার অন করে দিয়ে এসেছি।আজকে বৃষ্টি হয়েছে তাই বেশ ঠান্ডা। আর তোমার গায়ে বেশ জ্বর।”
“হুম।”
“আর শুনো মায়ামতি।ওয়াড্রোবে দেখো একটা অফ হোয়াইট কালার এর শাড়ী আছে।ওই শাড়ীটা পড়বে।”
“আচ্ছা এই বিলাই কামড়ায় না?”
“বিলাই না মায়া বিড়াল।ভ্যাক্সিন করা আছে।আর এটা আয়শার বিড়াল ছিলো।তাই অনেক শান্ত।”
“আপনার স্ত্রীর সম্পর্কে বলবেন বলেছিলেন।”
“বলবো তো।আগে গোসল দেও।সেই যে সকাল দশটায় ঘুমিয়েছো।কুইক কুইক শাওয়ার দিয়ে নেও।খেতে হবে।”
শাওয়ার অন করার সাথে সাথে একঝাঁক পানি মায়ার শরীরে ঝমঝমিয়ে পড়লো।শিউরে উঠলো মায়া।শরীরের আঘাত গুলো এখনো অনেকটা বেশী।বেশ কষ্ট মায়া গোসল করা শুরু করলো।এ পৃথিবীর সবথেকে ভালো চিন্তা করার জায়গা হয়তোবা ওয়াশরুম।এজন্য মায়া নানা আকাশ পাতাল ভেবে চলেছে।সর্বপ্রথম তার মাথায় এসেছে যখন আরিয়ান এগুলো জানবে তখন কী হবে? তার আর দিহান এর সম্পর্ক সমাজ কতোটুকু মেনে নিবে?এবং আদৌ কী সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে কীনা।এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।এখানে আসার আগে মায়া এগুলো নিয়ে ভাবেনি।তখন অনেকটা ঝোঁকের বশে এসে পড়েছে।কিন্তু এখন এসব চিন্তা করে মাথা ভো ভো করছে মায়ার।
ভেজা চুল সাথে অফ হোয়াইট শাড়ী বেশ লাগছে মায়াকে।মায়াকে নিজের পাশে বসিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে দিচ্ছে দিহান।আর তার পায়ের কাছে জিকজ্যাক ঘুরঘুর করছে,
“এই বিড়ালটা আপনার খুব ভক্ত তাই না?”
“ওর বয়স একবছর।সেই ছোট থাকতে আয়শার কাছে থাকতো সবসময়।আয়শা মারা যাওয়ার পর আমার কাছে থাকে।”
“সে মারা গেলো কীভাবে?”
“ওকে বিষ দেওয়া হয়েছিলো দুধের সাথে মিশিয়ে।”
দিহানের কথায় অবাক হয়ে মায়া তার দিকে ঘুরে বসলো।
“কে বিষ দিয়েছিলো?”
“তুমি এখনো ছোট তাই এগুলো শুনতে হবেনা।”
“আমার বয়স জানেন কতো যে ছোট বলছেন?”
“জানি তো তুমি জিকজ্যাক এর সমান।”
“কচু।”
“এখন চুপচাপ বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
“আচ্ছা শুনেন।”
“জ্বী বলেন।”
“আমাকে আপনি সমাজের কাছে কী বলে পরিচয় করিয়ে দিবেন?”
“গুড কোয়েশ্চেন।তোমার উপর যেহেতু সব অধিকার আছে আমার।আমি চাইলেই তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা মায়া।তোমার ক্ষতি এতে।”
“কেনো আপনার বাবু আছে?”
“আছে কিন্তু এখনো নিষেক হয়নি।কী আজব প্রশ্ন।আমার বাবু থাকলে মিডিয়াতে নিউস হতো নাহ?”
“আপনার বিয়ের খবরও তো নিউস হয়েছিলো না।”
“কারণ বিয়ের দিনই আয়শা মারা গিয়েছিলো।”
,
,
,
আজকে সারাদিন বেশ খাটুনি গিয়েছে সুবাহার।প্রায় সাতটা আইটেম নিজের হাতে রান্না করেছে।শ্বশুর বাড়ীতে এটা তার প্রথম রান্না।যদিও সকলের হাসি মুখের কাছে এগুলো কিছুনা।
রুমে ঢুকে সুবাহ দেখতে পেলো আরিয়ান বিছানার শুয়ে আছে।তাকে রুমে আসতে দেখে উঠে বসলো।
“এদিকে আসো তো সুবাহ।”
কোনো দ্বীরুক্তি প্রকাশ না করে সুবাহ এগিয়ে গেলো।
“জ্বী বলেন।”
“বসো পাশে।”
আরিয়ানের পাশে সুবাহ বেশ দূরত্ব নিয়ে বসলো।ওর দিকে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে থেকে নিজের টি শার্টের সামনের কিছু বোতাম আলগা করলো।
“সকালে বলেছিলে আমি অক্ষম তাই না?ওটার শাস্তি পাবে এখন।”
কথাটা বলে আরিয়ান দরজার দিকে এগিয়ে চললো। আর এদিকে কাঁঠ হয়ে সুবাহ বিছানায় বসে রইলো।সে ভেবেছিলো আরিয়ান দরজা লাগাতে যাচ্ছে কিন্তু আরিয়ান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
প্রায় পনের মিনিট পরে হাতে করে একটা ট্রে নিয়ে আরিয়ান রুমে প্রবেশ করলো।উৎসুক চোখে সুবাহ তার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
সুবাহ এর সামনে ট্রে নিয়ে গিয়ে রাখলো আরিয়ান।সুবাহ দেখতে পেলো ট্রে তে এক মগ গ্রীন টি এবং বেশ বড় সাইজের টার্কি মুরগীর ডিম।
“এগুলো দিয়ে কী হবে আরিয়ান?”
সুবাহার কোনো কথার জবাব না দিয়ে আরিয়ান ডিম ফাঁটিয়ে কফিতে মিশাতে লাগলো।মিশানো শেষ হলে তা সুবাহার দিকে এগিয়ে দিলো।
“এটা খাও।”
“ছিঃ এটা আপনিই খেয়ে নেন।একে তো গ্রীন টি আবার ডিম।ইয়াক দেখেই তো বমি পাচ্ছে।”
“এটা তোমার আমাকে অক্ষম বলার শাস্তি সুবাহ।এখন যদি না খাও তাহলে আমি বাড়ীতে সাপ নিয়ে আসবো।”
“প্লিজ আরিয়ান আমি সাপ ভয় পাই।”
“তাহলে খাও।”
“আপনি আমাকে মটেও অবলা ভাববেন না।আমার সহ্যের সীমা শেষ হলে কিন্তু আমি ছাড়িনা।”
“বক বক কম করো এখন খাও।”
“এটার ফল ভোগ করতে হবে আপনার।”
কথাটা বলে আরিয়ানের হাত থেকে সুবাহ মগটা নিয়ে খুব কষ্ট ওই ডিম মিশ্রিত চা পান করতে লাগলো।পুরো শেষ হয়ে যাওয়ার পর আরিয়ান এর দিকে মগ ফিরিয়ে দিলো।মগ হাতে নিয়ে আরিয়ান বলল,
“এখন তো বুঝলে আমি কী?নেক্সট টাইম এগুলো বলতে দশবার ভেবে নিবে।”
বেশ কিছুক্ষণ আরিয়ানের দিকে শান্ত চোখে তাঁকিয়ে নিজের গলার ভিতর দুটো আঙুল ঢুকিয়ে দিলো সে।ফলাফল স্বরুপ গলগল করে বমি করে দিলো।এবং তা পুরো আরিয়ানের উপর।
পুরো বিষয়টা যে সুবাহার ইচ্ছাকৃত ছিলো তা বেশ বুঝতে পারলো আরিয়ান।এদিকে তার অবস্থা দেখে ভুবন ভুলানো হাসি হাসছে সুবাহ।
“আমি আগেই বলেছিলাম ফল ভালো হবেনা।এখন বুঝেন।”
“এর শোধ নিবো সুবাহ।মনে রেখো।”
রাগে গজরাতে গজরাতে আরিয়ান এই ঠান্ডা মাখা বৃষ্টির রাতে গোসল করতে চলে গেলো।
চলবে,,,
#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ১১
লিখাঃসামিয়া খান
মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে দিহান।আর মায়া পরম শান্তিতে ঘুম দিচ্ছে।দিহানের একপাশে মায়া আর একপাশে জিকজ্যাক।জিকজ্যাক এখনো ঘুমায়নি কিন্তু দিহানের পাশে শুয়ে আছে।তার দৃষ্টি দিহানকে টপকে পাশে মায়ার উপর।মায়াকে সবসময় বিস্ময়ভরে দেখে জিকজ্যাক।এটা কেনো করে তা বুঝতে পারেনা দিহান।হুট করে দিহান এর ফোন বেজে উঠলো।ফোনের স্ক্রিনে বড় করে লিখা “মা”। স্বাবধানে মায়ার পাশ থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে দাড়ালো দিহান।কল রিসিভ করে ফোনটা কানে রাখলো।
” আসসালামু আলাইকুম মা।কেমন আছো?”
“ওয়া-আলাইকুম-আসসালাম।আমি ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করার জন্য ফোন করিনি দিহান।”
বেশ কাঠখোট্টা ভাবে জবাব দিলো আফিয়া।তার মা যে ভীষণ রাগ করে আছে তা উপোলব্ধি করতে পেরে মৃদু হাসলো দিহান।
“কী হয়েছে মা।রেগে আছে কেনো?”
“রেগে থাকার মতো কী কোনো কাজ করোনি।”
“মনে তো হয়না।”
“তুমি যে মেয়েটাকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে এসেছো তার কী সম্পূর্ন নিরাপত্তা দিতে পারবে?নাকী ওর পরিণতিও আয়শার মতো হবে।”
“মা যে পর্যন্ত আমার স্ত্রী না হবে সে পর্যন্ত মায়া সম্পূর্ণ নিরাপদ।”
“তোমার বাবা তোমার ভালো করতে গিয়ে আরো খারাপ করে দিয়েছে।যদি সে উইলে না উল্লেখ করতো যে তার পরে তার সব সম্পত্তি তার পুত্রবধূর নামে হবে তাহলে হয়ত আয়শাকে মৃত্যুবরণ করতে হতো না।”
“মৃত্যু এমন একটা ভবিতব্য জিনিস যা সবার জীবনে ঘটবে।আয়শার মৃত্যু ওভাবেই ছিলো।”
“তার জন্য কী আমরা দায়ী ছিলাম না বাবু?শুধুমাত্র তোকে বিয়ে করার কারণে মেয়েটাকে বিয়ের দিন বিষ পান করে মৃত্যুবরণ করতে হলো।তুমিও জানো আর আমিও জানি এর পিছনে তোমার কাকার হাত মানে মাসুদের হাত আছে।”
“মা তুমি কেনো তাকে কখনো আমার বাবা বলো না?”
“কারণ তোমার বাবার আপন ভাই হলেও তার থেকে অনেক পার্থক্য।তোমার বাবার মতো কেও হতে পারবেনা।কিন্তু মানুষটা রাজনীতি করতে করতে নিজের জীবন শেষ করে দিলো।”
“তুমি মায়ার খবর কীভাবে জানলে মা?”
“ওটা তোমার না জানলেও চলবে।যদি মেয়েটার গায়ে একটা আচড় আসে তো তোমার কপালে ঝাড়ু আছে মনে রেখো।”
“ঠিক আছে মা।কিন্তু ওকে কী বলে পরিচয় দিবো আমি সবার সামনে?”
“ওকে নিজের প্রেমিকা বলতে পারবে?ভালোবাসো ওকে?”
“হয়তো মা।”
“ভালোবাসার মধ্যে হয়তো এই শব্দটার কোনো জায়গা নেই।তুমি যদি ওকে ভিতর থেকে ফিল করো তাহলে প্রেমিকা বলে পরিচয় দিবে।এবং ওকে বাড়ী থেকে বের কম হতে দিবে।”
“মনে রাখবো।সুবাহ,দিহার খবর কী?”
“ওরা ভালো আছে।”
“মা একটা কথা ছিলো।আমি তো ভবিষ্যতে কোনো না কোনোদিন মায়াকে বিয়ে করতে চাবো তখন?”
“তখন সৃষ্টিকর্তা এক পথ বের করে দিবে।আপাতত আগে মায়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করো এবং ভালো থেকো।”
কান থেকে ফোন নামিয়ে দিহান একবার মায়ার দিকে তাঁকালো।মায়া ঘুমাচ্ছে আর পাশে তার শরীর ঘেসে জিকজ্যাক শুয়ে আছে।একটু হেসে জিকজ্যাককে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে স্টাডি রুমে ঢুকলো।স্টাডি রুমের বৃহৎ জায়গা জুড়ে দিহানের বাবা আনিসুল আহসান এর ছবি।কয়েক বছর আগে দেশে নামকরা নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলো।সততা ও নিষ্ঠাবান মিলিয়ে এক অন্যরকম মানুষ ছিলো।অথচ প্রিয় মানুষের যেমন অভাব ছিলো না তেমন শত্রুরও।সার্ভেন্টকে ডেকে জিকজ্যাককে দিয়ে দিলো দিহান।বেশ কিছুক্ষণ বাবার ছবির দিকে তাঁকিয়ে বুঝতে পারলো কেও পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
“কী ব্যাপার মায়ামতি তুমি না ঘুমিয়ে গিয়েছিলে।”
“আমার একা ঘুমাতে ভয় হয়।আমাকে রেখে এসেছেন কেনো?”
“তাহলে দুর্বা বাড়ীতে যায় তখন কীভাবে থাকতে?এদিকে আসো।”
কথাটা বলে দিহান হাত বাড়িয়ে দিলো।মায়া দিহানের হাত ধরে তার আরেকটু কাছে এগিয়ে আসলো।
“যখন দুর্বা থাকতো নাহ তখন আমি সারারাত তার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতাম।”
“কার সাথে?”
“তার সাথে।”
“আরে বোকা মেয়ে তার সাথে মানে কার সাথে।তোমার প্রেমিকের সাথে। ”
“প্রাক্তন এখন।”
মায়ার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো দিহান।বুকের সাথে পিঠ লাগিয়ে কাঁধে থুতনি লাগালো।
“হুম প্রাক্তন।আর আমি তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যত।”
কথাটা বলে হুট করে একটা কিছু দিহানের মাথায় খেলে গেলো।উত্তেজিত হয়ে মায়াকে নিজের দিকে ঘুরালো দিহান।
“এই মায়ামতি আমাকে বিয়ে করবে এখন এবং এসময়।ইসলাম মতে।”
দিহানের কথায় বেশ অবাক হলো মায়া।সে এটা ভাবেনি দিহান তাকে বিয়ে করতে চাবে।
“কিন্তু কন্ট্রাকে তো বিয়ের কথা ছিলো না।”
“কন্ট্রাককে তুমি গুল্লি মারো।এটা তো আগে ভাবিনি যে পর্যন্ত ম্যারেজ সার্টিফিকেট না হবে সে পর্যন্ত সরকারী মতে বিয়েও হবেনা।আর তাতে তোমার জানও ক্ষয় হবেনা।ইশ কতো বুদ্ধিমান আমি।”
কথাটা বলে আর এক মিনিটও দাড়ালো না দিহান।মায়াকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখে দৌড়ে স্টাডি রুম থেকে বের হলো মাহসিনকে ডাকতে ডাকতে।আর মায়া হতভম্ব হয়ে সেখানে দাড়িয়ে রইলো।
,
,
,
,
,
,
আরিয়ানকে আকড়ে ধরে বেশ আরামে ঘুমাচ্ছে সুবাহ।বেশ কয়েকবার ছাড়ালেও সরাতে পারেনি।আর এদিকে তার ফোন একনাগাড়ে বেজে চলেছে।চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখে রাত একটা বাজে।
শুয়াবস্থায় ফোন কানে নিলো আরিয়ান।
“হ্যালো।”
“স্যার আমি মায়া ম্যাডামের বিল্ডিং এর সিকিউরিটি গার্ড বলছি।”
“হুম বলো।এতো রাতে কল কেনো করেছো।সব ঠিক আছে তো।”
“স্যার একটা খবর আছে।”
“কী?”
“মায়া ম্যাডাম দুরাত ধরে ফ্ল্যাটে ফিরেনা।”
মূহুর্তেই ঘুম চলে গেলো আরিয়ান এর।তড়িঘড়ি করে সে বলল,
“ফিরে না মানে?কই থাকে কী করে?”
“তা তো জানিনা স্যার।ফিরে না সেই খবরটুকু আপনাকে দিলাম।”
“ঠিক আছে ফোন রাখো।আমি দেখছি।”
ফোন রাখার পরে বেশ অস্বস্থি হচ্ছে আরিয়ানের।সুবাহকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে মায়াকে অনবরত কল করে চলেছে।অথচ মায়ার ফোন ওয়েটিং।টেনশনে বুকে পেইন হচ্ছে আরিয়ানের।মেয়েটা কোথায় গেলো কে জানে।যদি কোনো ক্ষতি হয় তো আরিয়ান মরে যাবে। আরিয়ানের সামনে ভেসে উঠলো কালকের ছবি।মেয়েটাকে বেশীই মেরেছে। অথচ এখন সে কী করবে তা নিজেও জানেনা।মায়া যেখানে থাকতো ওই ফ্ল্যাটটা আরিয়ানই ঠিক করে দিয়েছিলো যাতে মায়ার থাকাতে কোনো সমস্যা না হয়।কিন্তু এখন খুব চিন্তা হচ্ছে।ফ্রাস্টেশনে আরিয়ান নিজের হাতে থাকা মোবাইল মেঝেতে একটা আছাড় মারলো।
,
,
,
মায়া অবাক চোখে আশেপাশের পরিবেশ দেখে চলেছে।তার পাশে দুর্বা বসে আছে এবং সামনে দিহানের বোন দিহা।অনেকটা ঘোর এর মধ্যেই একটু আগে মায়া দিহানের জন্য তিন কবুল বলেছে।প্রথমে তার বাবা-মায়ের কথা আরিয়ান এর কথা মনে হলেও দুর্বা তাকে এ বিষয়ে বুঝিয়েছে।এবং আশ্চর্যভাবে মায়া প্রায় ছয় মাস পড়ে তার ভাই সবুজ এর সাথে কথা বলেছে।এবং সবুজ তার ওয়ালিয়া হয়ে এই বিয়েতে মত দিয়েছে।মায়া যেনো মাঝরাতে এগুলো স্বপ্ন দেখছে।হঠাৎ দিহার কথায় তার ধ্যান ভাঙলো।
“মায়া তোমাকে আমি চিনি।আর তুমি এক বিষয়ে অবগত না।”
“কোন বিষয়?”
“আমার বড় বোন মানে সুবাহ আপুর সাথে আরিয়ান এর বিয়ে হয়েছে।”
মায়া ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।এটা সে কোনোমতে আশা করেনি।
“আপু তাহলে দিহান আমাকে বিয়ে করলো কেনো?”
“দিহান ভাই বা আরিয়ান ভাই কেও এ বিষয়ে জানেনা।তুমিও কখনো এ বিষয়ে দিহান ভাইকে জানাবেনা।আর তোমার সোশ্যাল মিডিয়াতে আরিয়ান এর সব নিশান মিটিয়ে দিও।”
“আমি বুঝতে পারছিনা আপু।”
“তোমার কিছু বুঝতে হবেনা।আমার ভাইটা অনেক ভালো বুঝলে।বোন দেখে বলছিনা।তুমি কয়দিন থাকলেই বুঝতে পারবে।চলো তোমাকে রুমে দিয়ে আসি।”
রুমে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো।দুর্বা আর দিহা মিলে হালকা সাজে সাজিয়ে দিয়েছে তাকে।লাল টুকটুকে রং এর শাড়ী পড়ানো হয়েছে।দরজা বন্ধ করে মায়ার দিকে এগিয়ে আসলো দিহান।
“কেমন ফিলিংস মায়ামতি?”
“আপনি যে সাইকো তার প্রমাণ দিলেন।এত রাতে বিয়ে না করলে চলছিলো না?”
“না তো।বুঝো না অভিনেতা মানুষ সবকিছু ড্রামাটিক না করলে চলে?”
“দুর্বা আর দিহা আপুকে কে নিয়ে এসেছে?”
“মাহসিন নিয়ে এসেছে।এসব কথা বাদ দেও আগে আমার বিলাই বউকে মন ভরে দেখেনি।”
“ছি।আপনি এখনো আমাকে বিলাই ডাকলেন।”
“নাহ বিলাই বউ।”
কথাটা বলে দিহান মায়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো দিহান।ফুঁ দিয়ে তার কপালের চুল সরালো।তারপর বলল,
“দেখো কোনো প্রকার ঢং করতে পারবো না আমি।আমার তো তোমাকে টাচ করার ফুল লাইসেন্স আছে।তা নষ্ট করতে পারবো না।”
“আপনি প্রচুর ঠোঁট কাঁটা মানুষ।”
“তা বলতে।বউয়ের কাছে সব জামাই ঠোঁট কাঁটা হয়।বুঝলে মি.দিহান আহসান।”
মায়ার হুট করে খুব ভালোলাগা শুরু করলো।যা সে কল্পনাও করেনি তা বাস্তবে হচ্ছে।আচ্ছা এটা কী স্বপ্ন নাকী ক্ষণিকের সুখ?
চলবে,,,