চন্দ্রপ্রভা রজনী পর্ব-০৯

0
231

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ৯
লিখাঃসামিয়া খান

সকালে প্রাতর্ভ্রমণ শেষে বাসায় ফিরেছে আরিয়ান।সকাল সকাল তার মেজাজটা খুব ভালো থাকে।কারণ সকালে সবচেয়ে পবিত্র এবং শুদ্ধতম হাওয়া প্রবাহিত হয়।তাছাড়া কালকে রাতে সে বেশ সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখেছে।একটা ছোট্ট বাবু তার সাথে খেলা করার জন্য আকুলিবিকুলি করছে।অজান্তেই হেসে ফেললো আরিয়ান।মায়ার সাথে এই সন্তান নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা না করেছেই সে।মায়া সবসময় বাবুর জন্য এটা করবে আর বাবুর জন্য ওটা করবে বলতো।এভাবে ছবি তুলবে তো ওভাবে।অথচ আরিয়ান অন্য চিন্তা করতো।ইতিমধ্যে আরিয়ান নিজের ভবিষ্যতের ভাবী প্রজন্মের ভবিষ্যত সিকিওর করে ফেলেছে।

কালকে মায়াকে একটু বেশীই মেরেছে আরিয়ান।তা সে জানে।অথচ ভালোবাসার সাথে শাসনও প্রয়োজন।এতটুকু শাসন না করলে চলবেনা।কারণ মায়া যেকাজ করেছে তাতে যতোটুকু করেছে তা কম।

রুমে ঢুকে আরিয়ান দেখতে পেলো সুবাহ এখনো ঘুমাচ্ছে।ঘুমানোর সময় এই মেয়ের কোনোকিছু ঠিক থাকেনা।গায়ের শাড়ী তো প্রতিদিন খাটের নিচে পাওয়া যায় সকালে।সারারাত আরিয়ানের উপর দিয়ে হাত পা দিয়ে রাখে।এ নিয়ে কিছু বলেও লাভ হয়নি আরিয়ানের।হেতু যে লাউ সেই কদুই থেকে যায়।হাঁত থেকে রিস্ট ওয়াচ খুলে তা টেবিলের উপর রাখলো আরিয়ান।বেডের কাছে এসে সুবাহকে ডাক দিতেই এক ডাকে উঠে গেলো সে।সুবাহ আবার এদিক দিয়ে ভালো আছে যে ওকে বেশী ডাকতে হয়না।নিজেকে টানতে টানতে কোনোভাবে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে চললো সুবাহ।

“আসবো ভাই?”

“কী ব্যাপার রিশা ম্যাডাম?এত সকাল সকাল আজকে ভাইয়ের রুমে।”

রুমে প্রবেশ করে রিশা কিছু না বলে আরিয়ানের হাত ধরে তাকে বারান্দায় নিয়ে আসলো।

“ভাই তুমি কী এখনো মায়ার আশা করো?”

“মায়াকে নিয়ে তোর সাথে কিছু বলতে চাইনা আমি।”

“ভাই তুমি কালকে মায়ার বাসায় গিয়েছিলে নাকী?”

“হুম কেনো।”

“দেখো ভাই তুমি বিবাহিত।তোমার বউ আছে।আর তুমি নিজে মায়াকে ছেড়ে ভাবীকে বিয়ে করেছো।তাহলে এখন মায়ার কাছে যাও কেনো?”

“ওটা তোর না জানলেও চলবে।এবং তোর নায়ককে বলে দিবি ওর থেকে দূরে থাকতে।তা নয় আমি যে কী করবো তা নিজেও জানিনা।”

“তুমি কিছু করো না করো কিন্তু দিহান যদি এগুলো জানতে পারে তাহলে তোমাকে আস্ত রাখবেনা।”

“দিহানের টাকায় চলিনা আমি।”

“দিহানের টাকায় না চললেও দিহানের বোনের স্বামী তুমি।”

“তুই যা এখান থেকে রিশা।”

“ভাই সবকিছু পেতে চাও যদি তাহলে কিছুই পাওয়া হবেনা শেষে।কথাটা মনে রেখো।”

আরিয়ান হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছে আর বিছানায় মুখ খরগোশের মতো করে বসে আছে সুবাহ।

“ওভাবে বসে না থেকে রেডী হও।”

“রেডী হবো কেনো?”

“ভার্সিটিতে যাবে না নাকী।”

“নাহ কয়দিন এর অফ নিয়েছি।

“হুম গুড ভালো করেছো।মায়ের আশেপাশে থাকবে সবসময়।”

“ঠিক আছে।আপনাকে একটা কথা বলা ছিলো।”

“বলতে পারো।”

বিছানা থেকে নেমে সুবাহ গিয়ে আরিয়ানের সামনে দাঁড়ালো।তার বুকে মাথা রেখে বলতে শুরু করলো,

“কালকে মা তার রুমে ডেকেছিলো।সে আমাদের সন্তান চায়।আমাকে একটা বাবু দিবেন?”

প্রত্যেকটা মেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে চায়।সুবাহাও তার ব্যতিক্রম নয়।আরিয়ানের বড্ড খারাপ লাগে মেয়েটার জন্য।অথচ সে নিরুপায়।মায়াকে ভালো রাখতে চাইলে সুবাহকে কষ্ট দিতে হবে।সুবাহার মাথাটা বুক থেকে উঠিয়ে তার মুখটা আজলায় তুলে নিলো আরিয়ান।

“এসবের সময় এখনো হয়নি সুবাহ।সময় হলে একাই হবে।বিয়ে হওয়ার পর একটা স্টেজের আগে বেবী নিতে হয়না।”

“কেনো আপনি অক্ষম নাকী বাবু দিতে?”

দুম করে সুবাহার এই কথায় একবার চোখ বন্ধ করলো আরিয়ান।এই মেয়ের সাথে কথা বলা বৃথা।তার পুরুষত্বের উপর প্রশ্ন তুলবে তা জানা ছিলো না আরিয়ানের।সুবাহার দুই কানের লতি নিজের দুই হাত দিয়ে ধরে আরিয়ান বলল,

“এই ফল খুব শীঘ্রই পাবে সুবাহ।”

“ঘোড়ার ডিম কচু পাবো।”
,
,
,

বিশাল ওয়াড্রোব এর সামনে দাড়িয়ে আছে মায়া।পুরো রুম জুড়ে বিভিন্ন তাক রাখা।এসব তাকে আবার বিভিন্ন পোশাকে সাজানো।ওয়েস্টার্ন থেকে শুরু করে কালচারাল।সব রকমের পোশাক আছে।এবং অতি আশ্চর্যভাবে ড্রেসগুলোর মাপ মায়ার শরীরের মাপের সাথে মিলে যায়।নানা চিন্তা ভাবনার মধ্যে হঠাৎ দিহানের ডাকে চমক ভাঙলো মায়ার।

“মায়ামতি!তুমি ওখান থেকে একটা খোলামেলা নর্মাল ড্রেস পড়ে আসো এবং তাড়াতাড়ি।কারণ কাল থেকে কিছু খাওনি।”

“জ্বী স্যার।”

একটা কলাপাতা রঙের ঢিলেঢালা থ্রি পিচ পড়েছে মায়া।দিহান একবার ওর দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে তাকে পাশে বসতে নির্দেশ দিলো।

“মায়ামতি বুঝলে এতদিন একা একা খেতে হতো।মাহসিনও বিজি থাকে আমার থেকে।ফলস্বরুপ আমার সবসময় একা খেতে হতো।এখন তুমি এসেছো।যাই হোক না কেনো একসাথে খাবো আমরা সবসময় মনে থাকবে।”

দিহানের কথায় মাথা হেলিয়ে সস্মতি প্রকাশ করলো মায়া।দিহানের এই এক বিষয় খুব খারাপ লাগে কথায় কথায় জ্বী হুজুরি করা।কেনো এখানে তো মায়া বলতেও পারতো আমার খুদা লাগলে আমি খেয়ে নিবো।তা না করে দিহান যা বলছে তাতে সস্মতি প্রকাশ করছে।

“দেখো মায়া তুমি নারী।এত সহজে কেনো মানুষের কথা শুনো?আমি যা বলবো তোমার তাই করতে হবে?”

“হুম আপনিই তো বলেছিলেন।”

“আমি বলেছিলাম তাই বলে কি তোমার ব্যক্তিত্ববোধ নেই?আমি যদি এখন তোমাকে ফিজিক্যাল হতে বলি তো তাই হবে?”

“ছি আবার অশ্লিল কথা শুরু।”

“এইযে আমি বলি কী গাধায় বুঝে কী।”

“জেন্ডার মিস্টেক আমি আমি গাধা হতে পারবো না।”

“তুমি ছোট মস্তিষ্কের বিলাই তা ভুলে গিয়েছিলাম।এখন চুপচাপ খাও।”

ব্রেকফাস্ট করার সময় ধমক দিয়ে দিহান মায়াকে তিনটা হাঁসের ডিম আর এক গ্লাস দুধ খাইয়েছে।তার উপর ভেজিটেবল স্যালাড।এগুলো দেখে মায়ার রাগ হলো। কোথায় ভালো মন্দ খাওয়াবে তা নয় যতোপ্রকার সিদ্ধ জিনিস খাওয়াচ্ছে।

“এই স্যার আপনার কী টাকার অভাব যে আপনি কীসব ঘাস খেতে দিচ্ছেন আমাকে।”

“এত বকবকানি করবেনা।খেয়ে এখন চুপচাপ ঘুম দিবা।কারণ তোমার ঘুমের প্রয়োজন।”

“হুহ ঢং।”

মায়ার মুখ ঢং শব্দ শুনে বেশ গম্ভির হয়ে গেলো দিহান।

“হুহ ঢং,এই শব্দটা তোমার মতো আরেকজন বলতো।”

“কে সে?”

মায়ার মুখ হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বেশ স্বাভাবিকভাবে দিহান বলল,

“আমার স্ত্রী আয়শা।যে এখন মৃত।”

চলবে,,