#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব: ১০
জন্ম মৃ*ত্যুর খেলা প্রতিটা প্রাণীর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। মানুষ শতচেষ্টা করলেও মৃ*ত্যুর থেকে বাঁচতে পারেনা। আলোর বাবা লতিফ সাহেব দীর্ঘদিন জটিল রোগে ভুগছিলেন। বড় মেয়ের মৃ*ত্যু সঙ্গে সংসারিক নানারকম ঝামেলায় উনি হার্ট এ্যাটাকে করেন।ভোরে উঠে নামাজ পড়ে কাজে জান অথচ আজ উঠতে পারেননি। বীণা ভেবেছিল শরীর খারাপ হয়তো কাজে যাবেনা তাই নিজের মতো কাজকর্ম করে বেলা করে স্বামীকে ডাকতে গিয়ে চমকে উঠেন। শরীর ঠান্ডা আর সাড়াশব্দ না পেয়ে ছেলেকে ডাকেন। লোকটা ঘুমের মধ্যে মা*রা গেছে। কেউ বুঝতে পারেনি। বীণা বেগম স্বামীর মৃ*ত্যুতে ভেঙে পড়েছেন। পনেরো বছর বয়সে এই লোকটার ঘরে এসেছিলেন। তারপর দীর্ঘ চল্লিশ বছরের সংসার। বিয়ের পর দশ বছর পার হলেও বাচ্চা হতো না। কতজন কতকিছু বলেছে শুধুমাত্র স্বামীর সাপোর্ট পেয়ে কখনও দুঃখ উনাকে ছুঁতে পারেনি। শেষ বয়সে এসে স্বামী সন্তান হারানোর দুঃখ উনি সহ্য করতে পারছেন না। আলো খবর শুনে শশুর শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছে। শ্রাবণ কাজের জন্য বাইরে ছিল ও আসতে লেট করেছে। দা*ফনের সব দায়িত্ব নিজে পালন করছে। রাহিন ওকে সাহায্য করছে। ফায়জু সব সময় বাবার উপরে নির্ভর করে এলোমেলো চলাফেরা করেছে। আজ বাবাকে হারিয়ে বুঝতে পারছে কতটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যদি সময় থাকতে সংসারের হাল ধরতে পারতো তাহলে এই বয়সে এসে বাবাকে অতিরিক্ত টেনশন করে অকালে ম*রতে হতো না। মানুষ বলে চোর চলে গেলে বুদ্ধি বাড়ে ওর তেমন অবস্থা। লতিফ সাহেবের তিন ভাই দুই বোন। অন্যদের তুলনায় উনি বেশ গরীব। বাকীদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ সচল। বিশেষ কোনো এক কারণে লতিফ সাহেবের সঙ্গে উনাদের সম্পর্ক তেমন ভালো না। আমাদের সমাজে নানারকম মানুষের বসবাস। রক্তের সম্পর্ক অনেক সময় বেইমানি করে। সম্পর্কের চাইতে টাকা পয়সার মূল্য বেশি ধরা হয়। লতিফ সাহেব গরিব মানুষ, ভাইয়েরা এই কারণে উনাকে এড়িয়ে চলতেন পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করতেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সকলে এসে উপস্থিত হয়েছেন। শ্রাবণ কাউকে না চিনলেও ওর চ্যানেলের সুবাদে অনেকে ওকে চিনে । কয়েকজন সহায়তা করছে। লা*শ নিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী কন্যা আর বোনদের ডাকা হয়েছে শেষবারের মতো দেখার জন্য। অন্তিম যাত্রা। আসার সময় আনন্দ অনুষ্ঠান হলেও যাওয়ার সময় সেটা হয়না। কতশত প্রিয়জন রেখে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিতে হয়। আলো বাবার জন্য প্রচুর কান্নাকাটি করেছে বর্তমানে নির্বাক। আবারও বাবার মুখটা দেখে ঢুকরে উঠলো। ওকে লিমা বেগম ধরে রেখেছেন। ইকবাল মাহমুদ গোরস্থান ময়দানে আছেন। শ্রাবণ একবার আলোর দিকে চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। মেয়েটার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে। এলোমেলো চুল, ময়লা পোশাক তবুও বেশ শুভ্র পবিত্র লাগছে। শ্রাবণ এগিয়ে এসে মায়ের কানে কাছে ফিসফিস করে বলল,
> ইশা কোথায়?
লিমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলেন,
> তুলির কাছে। মেয়েটা চিৎকার চেচামেচি শুনে ভয় পাচ্ছে। দা*ফন শেষ হলে ফিরতে হবে। এখানে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
> চিন্তা করোনা আমি দেখছি।
শ্রাবণ দ্বিতীয়বার আলোকে দেখে ফিরে গেলো। ফায়জু শ্রাবণের সঙ্গে খাটিয়া কাঁধে নিয়ে ফুপিয়ে উঠলো। এই মানুষটার কাধে ভর দিয়ে সারাজীবন শান্তিতে চলাফেরা করেছে সেই মানুষটাকে আজ আজীবনের জন্য রেখে আসতে হবে। বাবা নামের ছাতাটা আজ হারিয়ে গেলো। মানুষের জীবনে কখনও কখনও সুখ আর দুঃখ এক সঙ্গে এসে হানা দেয়। প্রিয় মানুষের বিরহে অনেক খারাপ মানুষ সঠিক পথে চলে আসে। ফায়জু এক মেয়ের চক্করে পড়ে উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠেছিলো। মেয়েটার বাবা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মেয়ে ওকে সর্বদা প্রলোভন দেখিয়েছে তুমি বিসিএস দাও বাবা তোমাকে মেনে নিবে। তাছাড়া মেয়েটার সঙ্গে চলাফেরা করতে গিয়ে নিজের বর্তমান অবস্থা ভুলে গিয়েছিল। যেখানে ওর বাবা পায়ে হেঁটে সারা শহর ঘুরেছে সেখানে ও দামি দামি জুতা ছাড়া পায়ে পরেনি। ছেলে বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হবে, বংশের বাতি হবে,শেষ জীবনের লাঠি হবে,একটা ছেলের কাছে মানুষের কত প্রত্যাশা। এই আশায় লতিফ সাহেব মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফায়জুর লেখাপড়া শিখিয়েছেন। অথচ তার ইনকামের একটা দানাও পেটে নিয়ে বিদায় নিতে পারলোনা। এর মধ্যে মিরাক্কেল একটা ঘটেছে। বাবার অনুরোধে ফায়জু পুলিশের এসআই পদের লিখিত পরীক্ষায় পাশের পর ভাইভা দিয়েছিল। ফায়জু আশা করেনি টিকবে। ইমেইল এসেছে। ওর এক বন্ধু রেজাল্ট নিয়েছে। শোকের মধ্যে এমন খরব শুনে শোক যেনো আরও কিছুটা বেড়ে গেলো। ঝামেলা ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে দাফন সম্পূর্ণ করে সকলে বাড়িতে ফিরে আসলো। আত্মীয় স্বজন বিদায় নিলেও লতিফ সাহেবের ভাইবোনেরা থেকে গেলেন। অথচ নীরার মৃ*ত্যুর সময় ওরা কেউ ছিল না। বীণার ভাই এসেছে। তবে বিশেষ কথাবার্তা বলছেন না। আলোকে চেয়েছিলেন সেই কষ্ট উনার মনে ক্ষণেক্ষণে নাড়া দিচ্ছে। ফায়জুর বড় ফুপি সুফিয়া বেগম আলোর মায়ের কাছে কান্নাভেজা কণ্ঠে বললেন,
> ভাবি এতোদিন তোমাদের খোঁজখবর না রেখে ভুল করেছি সেই ভুল আমি আর করবো না। তুমি একটুও চিন্তা করোনা। যখন যা প্রয়োজন হবে আমাকে বলবে। বলছিলাম কি ফায়জু বাবার বিয়ের বয়স হয়েছে। এখন চাকরি হলো। আমার মেয়ে নুরির সঙ্গে ওর বিয়েটা দিলে ভালো হবে না? আমিও তোমার দেখাশোনা করতে পারবো। সম্পর্কটা ভালো থাকবে।
আলো পাশে ছিল এহেন প্রস্তাব শুনে জ্বলে উঠলো। ভাইয়ের জন্য এতো দরদ এতোদিন কোথায় ছিল? আলো চোখ মুছে প্রতিবাদ করলো,
> ভাইয়া এখন বিয়ে করবে না ফুফু আম্মা। আমাদের পছন্দসই মেয়ে দেখা আছে। তুমি অন্যকথা বলো।
ভদ্রমহিলা বিরক্ত হলেন। বড়দের মধ্যে ছোটদের কথা বলা বেয়াদবি। তাছাড়া আলোকে উনার বিশেষ পছন্দ না। পথের ঝামেলা ঘরে তোলা মেয়ে। উনি ভ্রু কুচকে বললেন,
> বড়দের মধ্যে কথা বলো কেনো? সব জায়গাতে ঝামেলা না পাকালে হয়না? আমার ভাই তোমাদের দুই বোনের জন্য অকালে প্রাণ দিলেন। তোমরা বোন দুটোই এক রকম। একটা নিজের পছন্দে বিয়ে করলো অথচ সংসার করতে পারলোনা। নিজে ম*রলো ঠিকই একটা জঞ্জাল রেখে গেলো। আর তোমার কাহিনী কি আর বলবো। এইটুকু বাচ্চা মেয়ে তার ক্ষমতা দেখে অবাক। আমার ভাইয়ের চিন্তা যদি করতে তাহলে আজ আর এই দিন দেখতে হতো না।
মহিলা বেশ কিছু তিক্ত কথা বলে দম নিলেন। মনে হলো কতদিনের রাগ ঝাল সুযোগ পেয়ে মিটিয়ে নিয়ে শান্তি পেলেন। শ্রাবণ ভদ্রমহিলার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো। কথাগুলো শুনে ওর শান্ত মেজাজ অশান্ত হয়ে উঠলো। চুপচাপ সামনে এসে বলল,
> আলো এই মহিলাকেতো ঠিক চিনতে পারলাম না। বিয়ে সময় দেখিনি। তোমাদের কাছের কেউ?
আলো মিনমিন করে বলল,
> আমার ফুফুআম্মা।
শ্রাবণ ওষ্ঠ কামড়ে বলল,
> যখন আপনার ভাই কষ্ট ছিলেন তখন খোঁজ করতে পারলেন না আজ কি লা*শ দেখে জীবিত করতে এসেছেন? যেই ফায়জু চাকরি পেয়েছে অমনি মেয়েকে ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিতে এসেছেন না? মানে লোভে চোখ চকচক করছে। আপনার মতো মহিলাদের পায়ে না আমার কোটিকোটি সালাম। ইশার দায়িত্ব আমি নিয়েছি। আপনার সাহস কিভাবে হয় আমার মেয়েকে জ*ঞ্জাল বলার? ভাই মা*রা গেছে কোথায় দুঃখ পাবেন পরিতাপ করবেন তানা এসেছেন সুযোগ করতে? সুবিধাবাদি মহিলা।
শ্রাবণ ধমক দিয়ে উঠলো। শুনে আলোসহ প্রায় সকলে চমকে উঠেছে। লিমা বেগম দৌঁড়ে এসে ছেলেকে ধরলেন। উনি বুঝিয়ে বললেন,
> বাবা এমন করেনা। লোকজন আছে শুনলে খারাপ বলবে। নতুন জামাই তুমি, বদনাম হয়ে যাবে।
শ্রাবণ শুনলোনা। আরও চেচিয়ে উঠলো,
> বদনামের ভয় আমি করিনা। তুমি ওই মহিলা কথা শুনেছো? কতটা নিচু মন, ছিঃ।
সুফিয়া বেগম লজ্জায় অপমানে কেঁদে ফেললেন। এভাবে অপমানিত হবেন জানতেন না। শ্রাবণ কারো সঙ্গে আপোষ করেনা। নিজের কাছে খারাপ লাগলে প্রতিবাদ করতে ছাড়েনা। মাঝে মাঝে কিছু বিষয় যে এড়িয়ে চলতে হয় এই বুঝ ওর মধ্যে নেই। আলো উঠে আসলো। বোঝানোর জন্য বলল,
> প্লিজ ঝামেলা করবেন না। বাড়িতে লোকজন আছে। খারাপ বলবে। আপনি বরং বাইরে গিয়ে বসুন।
শ্রাবণ তীক্ষ্ণ চোখে আলোকে দেখে নিয়ে চাপা কণ্ঠে বলল,
> এখুনি রেডি হবে,আমরা ফিরবো। জাষ্ট পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করবো।
শ্রাবণ বেরিয়ে গেলো। আলো অসহায় চোখে শাশুড়ির দিকে চেয়ে আছে। সদ্য বাবাকে হারিয়েছে। মা ভাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবে আরও কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্টে শাশুড়ির কাছে গিয়ে বলল,
> আমি যেতে পারবোনা মা। আপনি উনাকে বলুন আমি কিছুদিন মায়ের কাছে থাকতে চাই। মাকে ছেড়ে থাকতে আমার কষ্ট হবে। কয়েকদিন পর মা কিছুটা শান্ত হলে আমি ফিরবো।
লিমা বেগম বুঝতে পারলেন আলোর সমস্যা। তাই আর ঝামেলা করলেন না। শ্রাবণের কাছে গিয়ে বলতেই ঝামেলা যা হওয়ার হয়ে গেলো। শ্রাবণ একটা সেকেন্ড পযর্ন্ত অপেক্ষা করলোনা। রাহিনকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। মানুষের ভালো যেচে করতে যেতে হয়না। এখানে আলোর বিপদ আছে। কখন কি হয়ে যায় অথচ মেয়েটা ওকে বুঝলো না। শ্রাবণের রাগ চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাছাড়া ওকে ঢাকায় যেতে হবে। আলোকে নিজের মতো ছেড়ে দিলো।
********
সপ্তাহ পেরিয়ে মাস হতে চলেছে শ্রাবণের খোঁজ নেই। আলোর সঙ্গে ওর কথা হয়না। জায়জু ট্রেনিং এর জন্য চলে গেছে। নির্জন বাড়িতে একা থাকবে বিধায় বীণার ভাই ওকে নিয়ে গেছে। আলো ইশাকে নিয়ে শশুর বাড়িতে ফিরেছে। কিন্তু যার জন্য এখানে আসা তার কোনো খবর নেই। এর মধ্যে আলোর রেজাল্ট দিয়েছে। মোটামুটি খারাপ না বরং ভালো হয়েছে। আলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখানকার সরকারি কলেজে ভর্তি হবে। এডমিশন দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পড়াশুনা হয়নি। পরপর ঝামেলায় জড়িয়ে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। রেবা হ*ত্যা মামলার আসামি পালাতক। ঝড় আসার আগে যেমন সবটা শান্ত হয়ে উঠে তেমনই অবস্থা । আলোর খুব একটা বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়না। মাকে কাছে আনতে চেয়েছিল কিন্তু বীণা আসেনি। শ্রাবণ বাড়ির সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে ভিডিও কলে ইশাকে দেখেছে শুধুমাত্র আলোকে ছাড়া। আলোর ভীষণ অভিমান হয়েছে। চুপচাপ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল হঠাৎ বাসার সামনে শ্রাবণের গাড়ি দেখে চমকে উঠলো। একমাস পর লোকটাকে দেখবে ভেবে দ্রুত নিচে নেমে আসলো। পরপর কয়েকজন ভেতরে প্রবেশ করলো। শেষে শ্রাবণ আসলো। ভদ্রলোক একা আসেনি সঙ্গে এক মেয়েকে নিয়ে এসেছে। আলো হতাশ হলো। শ্রাবণ এসে লিমা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ইশাকে কোলে নিয়ে বলল,
> মা এভাবে দূরে দূরে থাকলে আমার মেয়ে আমাকে চিনবে তো? পরে দেখা যাবে মেয়ে আমাকে বাবা হিসেবে মানতে পারছে না। ভাবছি এবার গেলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যাব,কেমন হবে?
লিমা বেগম অমায়িক হাসলেন। ভাশুরের ছেলেমেয়েরা এসেছে। শ্রাবণ নিয়ে এসেছে। গ্রাম থেকে শহরের দুরুত্ব অনেক। পড়াশোনার জন্য এখানে থাকবে ভেবে ঢাকা থেকে সোজা ওদের ওখানে গিয়েছিল। চাচাতো বোন লিজা সকলের ভীষণ আদরের। ও আলোর সমবয়সী। এক সঙ্গে থাকতে পারবে। শ্রাবণ কথা শেষ করে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। আলোকে দেখেও দেখলোনা। অন্যদের সঙ্গে লিমা বেগম আলোকে আলাপ করিয়ে দিলেন। আলো কথাবার্তা বলে কক্ষে ফিরে দেখলো শ্রাবণ রুমে নেই। ওয়াশ রুম হতে পানির আওয়াজ আসছে। সেদিক চেয়ে অপেক্ষা করলো। বেশ কিছুক্ষণ পরে শ্রাবণ বাইরে বের হলো। আলো সোজাসুজি ওর সম্মুখে গিয়ে মামা নিচু করে বলল,
> সরি আমি সেদিন মায়ের জন্য থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম। আপনাকে না বলা আমার উচিত হয়নি। প্লিজ ক্ষমা করে দিন।
শ্রাবণ পাশ কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চিরুনি করতে করতে উত্তর দিলো,
> সরি কেনো বলছো? তোমার ইচ্ছা হয়েছে থেকেছো। এখানে আমার কি বলার আছে?
শ্রাবণের খাপছাড়া কথা শুনে আলোর চোখ ছলছল করে উঠলো। কষ্ট পাচ্ছে ভীষণ। তাই কিছু এগিয়ে এসে শ্রাবণের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
> বললামতো সরি। আপনি রাগ করে আমার সঙ্গে কথা বলছেন না আমি বুঝতে পারছি। প্লিজ রেগে থাকবেন না।
শ্রাবণের কপালে ভাজ পড়লো। পাশ ফিরে ভ্রু কুচকে বলল,
> বুঝতে পারছো তাহলে কথা বলতে এসেছো কেনো? আমার দায় পড়েনি যে বারবার তোমাকে উদ্ধার করতে যাব। আমি বুদ্ধিহীন,আবেগী তোমার মতো মেয়েদের অপছন্দ করি। প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করো। তোমাকে দেখলে আমার ভীষণ রাগ হয়। সহ্য করতে পারিনা। নির্বোধ মহিলা।
শ্রাবণে তিরস্কারপূর্ণ কথা শুনে আলোর চোখে ফেটে পানি বেরিয়ে আসলো। নাক টেনে ফুপিয়ে বলল,
> আমিতো ইচ্ছা করে এমন করিনি। বাবাকে হারিয়ে মা কেমন অসহায় হয়ে পড়েছিল। মেয়ে হয়ে কিভাবে পারতাম মাকে ফেলে চলে আসতে? বাবাকে যে হারিয়েছে সেই বুঝে বাবা হারানোর যন্ত্রণা। আপনি কি বুঝবেন?
আলোর ইঙ্গিত শুনে শ্রাবণ দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
> আমার বোঝার দরকার নেই। আমার ঘর দখল করেছো ভালো কথা আমার মন দখল করতে তুমি চেষ্টাও করোনা। তোমার দম আমার জানা হয়ে গেছে। তোমাকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। যথেষ্ট চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি ব্যার্থ।
আলো ফুপিয়ে উঠলো। চোখের পানি গাল বেয়ে বুকের উপরে আছড়ে পড়ছে। নাক লাল হয়ে উঠেছে। শ্রাবণ সেদিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলোনা। আলোর উপরে ভীষণ রাগ জমা হয়ে আছে। ইচ্ছা করে কিছু তিক্ত কথা শুনিয়ে দিয়ে এখন কেমন খারাপ লাগছে। তাই দ্রুত রুম ছাড়লো। আলো সেদিকে চেয়ে আরও ভেঙে পড়লো। প্রতিজ্ঞা করলো শ্রাবণ নামের এই একরোখা পুরুষটাকে ভেঙে গুড়িয়ে সোজা পথে আনবে নয়তো ওর নাম আলো না। নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ঘোরা মানুষ আলোরও পছন্দ না।
চলবে