#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২৩
সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়ে হারিয়েছে তার মতো অভাগা পৃথিবীতে আর একটাও নেই। রতন রাকার সঙ্গে জিদ দেখিয়ে চাচির বোনের মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়েছে। বর্তমান দেশের আইন খুব একটা জোরদার না। যে যতই হম্বিতম্বি করুক দিনশেষে খারাপ মানুষের জিত হয়। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু কখনও ছেড়ে দেননা। একমাত্র ভরসা তিনিই। সময় হলে ঠিক শাস্তি দিয়ে দিবেন। রতন কাবিনের টাকা আর খোরপোষ বাবদ পনেরো লক্ষ টাকা আর রাকার কাছে গচ্ছিত দশ ভরি গহনা ওকে দিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দিলো। ডিভোর্সের দিন রাকা প্রচুর কান্নাকাটি করেছিলো। বাচ্চারা যেহেতু অনেক ছোট সেহেতু তারা মায়ের কাছে থাকবে। তাছাড়া রতন খুব একটা আগ্রহ দেখালোনা বাচ্চাদের নিতে আসার জন্য। রতনের হবু বউয়ের নাম ফুলমালা। ওর মরহুমা দাদিজান অদর করে নাতনীর নামরকণ করেছিলেন। কিন্তু বড় হয়ে মেয়েটা বন্ধুদের সামনে লজ্জায় পড়তে না হয় তাই নিজের নাম পরিবর্তন করে ফুল বলে দাবি করে। ফুল ওকে বুদ্ধি দিয়েছে বাচ্চা রাকার নিকট থাকলে ভালো হবে। রাকা হাড়ে হাড়ে টের পাবে রতনের মূল্য। বাচ্চা নিয়ে কে ওর দায়িত্ব নিবে? ভাইয়েরা বিয়ে করলে তখন এমনিতেও বাড়ির অতিরিক্ত বোঝা হয়ে উঠবে। রতনের চাচি লোকজন ধরে ডিভোর্সের ব্যবস্থা করেছেন। এর মধ্যে রাসেল রতনের উপরে আ*ক্রম*ণ করেছিলো। বেচারা দুইদিন হাসপাতালে ছিল। রাসেল অনেক ভাবনা চিন্তা করে বোনকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। নয়তো কেস কোর্টে চলতেয় থাকবে। কতকাল চলবে ঠিক নেই। অহেতুক সময় নষ্ট করার মানে হয়না। রতনের নামের অর্ধেক সম্পত্তি রাকার বাচ্চাদের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। ওদের ভবিষ্যতে চিন্তা করে। এই সময় রাকার পাশে হাছিব পুরোপুরি সময় দিয়েছে। রাকা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তবে খুব তাড়াতাড়ি নিবে। ওদের পাসপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। হয়তো মাস খানিকটা লাগবে সব ঠিকঠাক হতে। রতন সেটা জানেনা। রাকার মুখের উপরে জবাব দিতে আগামী সপ্তাহে বিয়ের দিন ঠিক করেছে। চাচির আশকারা পেয়ে গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করেছে। সবটা হয়েছে কয়েকদিনের মধ্যে। শ্রাবণ রাসেলকে সাহায্য করেছে রতনের সম্পত্তি লিখে নেওয়ার ব্যাপারে। রতন এই জন্য শ্রাবণের উপরে ক্ষেপে আছে। ওর ধারণা শ্রাবণ আর আলো ওর সংসার ভেঙেছে। একে ওকে দোষারোপ করছে। অথচ নিজের কথা ভাবছে না। রাকা বাচ্চাদের নিয়ে পড়াতে বসে আকাশ পাতাল ভাবছিলো তখনই হাছিব ভেতরে আসলো। ছেলেটার বয়স ত্রিশ তবে দেখতে ভীষণ সুন্দর। রাকার বুক ধড়ফড় করে ওকে দেখলে। হাছিব স্বভাব অনুযায়ী মিষ্টি হেসে বলল,
> কি খবর পড়াশোনা কেমন চলছে?
রাকা চমকে উঠে পিছিয়ে বসলো। বাচ্চারা হাছিবকে ভীষণ পছন্দ করে। ওকে দেখে চেয়ার ছেড়ে দৌঁড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো। রাকা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
> আপনাকে বলেছিলাম না ওদেরকে অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখাবেন না? বাচ্চারা পড়তে বসেছে। দয়াকরে বিরক্ত করবেন না।
হাছিব ওর কথা গায়ে মাখলোনা। ওদেরকে নিয়ে সোজাসুজি বিছানায় গিয়ে বসলো। তিনজন মূহুর্ত্তের মধ্যে লুটপাট করে বালিশ কাঁথা এলোমেলো করে ফেললো।হাছিব হাসিমুখে উত্তর দিলো,
> তুমি গোমড়া মুখে আছো তেমন থাকোনা, আমাদের কেনো নিষেধ করছো? আমরা অষ্ট্রেলিয়া গিয়ে পড়াশোনা শুরু করবো। আগামী এক মাস আমাদের ছুটি। জমিয়ে খাওয়া দাওয়া আর ঘুরাঘুরি করবো। বাচ্চারা ঠিক বলেছি না?
ইতুর বয়স তিন বছর। বেচারীর কথা ঘুরে না। তুতলে যায়। যেটুকু বলে সকলে হেসে লুটোপুটি খেয়ে গড়িয়ে পড়ে। রাকা চোখ রাঙিয়ে বলল,
> আপনি আসকারা দিবেন না। আমি চাইছি না আমার বাচ্চারা ওদের বাবার মতো হোক। ছোট থেকে বাস্তবতা বুঝতে শিখুক। জীবন সহজ না।
হাছিব সিরিয়াস হয়ে উঠলো। ছলছল চোখে বলল,
> আমি ওদেরকে নিজের বাচ্চা ভাবতে শুরু করেছি। এই বাচ্চাদের জন্যই তোমার বাবা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। আমি কাউকে আমার জীবনের সঙ্গে জড়াতে পারিনি। দয়াকরে ওদের থেকে আমাকে দূরে রেখোনা। তুমি আজীবন সময় নাও। আমার মৃত্যুর আগের দিন আমাকে মেনে নিও তবুও ওদের থেকে আমাকে দূর যেতে বলোনা। আমার যে আল্লাহ ওই সুখটুকু থেকে বঞ্চিত করেছিলেন কিন্তু এখন পূণ্য করে দিয়েছেন। আমি চাওয়ার থেকেও অতিরিক্ত পেয়েছি। তোমাকে পাবো ওটা আমার কল্পনাতীত ছিল। আমার থেকে সামান্যতম আঘাত পেলে আমাকে দ্বিগুণ ফেরত দিতে পিছপা হতে হবে না। এতো এতো ভালোবাসা দিব তুমি একদিন ঠিক আমার হতে বাধ্য হবে দেখে নিও।
হাছিব এলোমেলো বকছে। রাকা মাথা নিচু করে কেঁদে ফেললো। কি জানি হয়েছে। একটু আবেগপূর্ণ কথাবার্তা শুনলে চোখ ছাপিয়ে অশ্রু নামে। আহ্লাদটা হয়তো বেড়েছে নাকি এতোদিন পর চোখের পানির মূল্যায়ন করার মানুষ হয়েছে তাই?রাকা কথায় বলতে পারলোনা। হাছিব ওর মুখের দিকে চেয়ে হাসলো। মাথা চুকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বলল,
> তুমি দেখতে ভীষণ সুন্দর। তোমাদের স্কুলের পাশের যে বিল্ডিংটা আছে ওর দোতালায় আমি বাচ্চাদের প্রাইভেটে পড়াতাম। তুমি ব্যাগ কাঁধে হেটে যেতে আমি তন্ময় হয়ে দেখতাম। সুখ সুখ অনুভব হতো। কতবার ভেবেছি সামনে গিয়ে কথা বলবো কিন্তু বলতে পারিনি। বাচ্চা মানুষ ভয়ে আবার কেঁদে না ফেলে তখন আবার সমস্যা। কিন্তু যখন তোমার বিয়ের কথা শুনলাম আমিতো অবাক। এইটুকু বাচ্চার নাকি বিয়ে। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ কোথায় কলেজে ভর্তি হবে। জীবনের মানে বুঝতে শিখবে সেই বয়সে সংসার। আমি বাধ্য হয়ে তোমার বাবার নিকট প্রস্তাব পাঠিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসলাম। বাংলাদেশে থাকার কোনো ইচ্ছে ছিল না। চলে গেলাম। কিন্তু দেখো আমার কপালে তুমি ঠিকই ছিলে। আমাকে একটু ভরসা করো প্রমিজ করছি তোমার যত যন্ত্রণা আছে আমি ঠিক ভুলিয়ে দিবো। ভালোবাসতে কোনো কার্পণ্য করবো না। বাচ্চাদের সত্যিকারের বাবা হয়ে পুরো পৃথিবীকে দেখিয়ে দিবো শুধুমাত্র জন্ম দিলে বাবা হওয়া যায় না।
রাকা চোখ মুছলো। এতগুলো কথা শুনেও মনটা নরম হলোনা। বরং ঠেস দিয়ে বলল,
> আপনি দেখতে সুদর্শন। আমার মতো দুই বাচ্চার মাকে বিয়ে করে কেনো ঠকতে যাবেন? লোকজন হাসাহাসি করবে। পরে আপনি আফসোস করবেন। তারচেয়ে বরং আমাকে আমার ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিন। আমি ঠিক ওদেরকে নিয়ে বেঁচে থাকবো।
> পাগল হয়েছো তুমি? সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করবো? মানুষে কতকিছু বলে পরের কথায় আমাদের জীবন কি চলবে? না খেয়ে থাকলে পরে কি আমাদের খাবার দিয়ে যাবে? ওসব আজাড়ে সমাজের চিন্তা বাদ দাও। আমি তোমাদেরকে ছাড়ছি না। আর শুনো যেখানে আমরা যাচ্ছি ওখানে তোমাকে কথা শোনানোর মতো কেউ নেই। তুমি ইচ্ছামত বাঁচবে। বাকীটা জীবন আমরা ভীষণ ভীষণ ভালো থাকবো। তুমি আমার সঙ্গে থাকলে পৃথিবীর কাউকে আমি পরোয়া করিনা। তুমি আমার শক্তি হয়ে উঠতে চাও না?
রাকা কি বলবে বুঝতে পারছে না। টেবিলের উপরে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো। খুব করে যখন লোকটাকে চেয়েছিলো তখন পেলো না। অথচ আজ এই কঠিন সময়ে লোকটাকে কাছে পেতে মন সাড়া দিচ্ছে না। বারবার মনে হচ্ছে ওকে ঠকানো হচ্ছে। বাবার উপরে রাগ হচ্ছে। আজকাল এই বাড়িতে হাছিবের কদর বেড়েছে। কিন্তু এটা আগে কেনো হয়নি? মানুষ মাত্র ভীষন স্বার্থপর।
******************
জীবন আপন গতিতে চলছে। হাসপাতাল থেকে ফিরে শ্রাবণ বিশেষ কাজে শহরের বাইরে আছে গত কয়েকদিন হচ্ছে। ইশার শরীর ভালো। আলো প্রতিদিন ক্লাস করছে। পড়াশোনাতে ফাঁকিবাজি লিমা ভেগে সহ্য করেন না। ক্লাস শেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে বের হতেই রবিন তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে গেলো। লুবনা আর ইরিনা আলোর সঙ্গে আছে। সিয়াম আজ অন্য ডিপার্টমেন্টে গিয়ে বসে আছে। কোন এক মেয়েকে দেখে পছন্দ হয়েছে তার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে ছুঁটেছে।লুবনা বিড়বিড় করছে,
> ওর চরিত্রের দোষ আছে আগে থেকে জানতাম এখন পুরোপুরি বিশ্বাস হচ্ছে। লুচ্চা বেডা। আশেপাশে মেয়ের অভাব। বাংলা ডিপার্টমেন্ট গিয়ে বসে আছে।
ওকে বকতে দেখে আলো বিরক্ত হলো। ধমক দিয়ে বলল,
> থামবি? অহেতুক দোষারোপ করিস কেনো? পরে বোঝানো যাবে। বাড়িতে ফিরতে হবে। গার্লফ্রেন্ড নেই বলে কতকিছু বলে ওকে পঁচানোর চেষ্টা করি। আজ আবার সমস্যা হচ্ছে।
লুবনা মুখটা কাচুমাচু করে ফেললো। ভেবেছিল আলোর ওকে সঙ্গ দিবে কিন্তু তেমন কিছু হলোনা। আলো ওদের থেকে বিদায় নিয়ে গেটের কাছাকাছি আসতেয় একজন অচেনা ছেলে এসে ওর সম্মুখে দাঁড়িয়ে পড়লো। আলো সাইডে সরতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। ছেলেটার মুখে মাস্ক। হাতটা পেছনের দিকে লুকিয়ে রাখা। আলো বিরক্ত হয়ে বলল,
> কি প্রয়োজন আপনার?রাস্তা ছাড়ুন।
ছেলেটা পুরুষালী গম্ভীর আওয়াজে বলল,
> মিসেস শ্রাবণ মাহমুদ আপনাকে এই মূহুর্তে আমার সঙ্গে যেতে হবে। হাতে পঞ্চাশ মিনিট সময় আছে। অহেতুক সময় নষ্ট করবেন না।
আলো অবাক হলো। আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
> কে আপনি? আপনার সঙ্গে যাব মানে কি?
> আপনার ডান দিকে একবার দেখুন।
আলো ডান দিকে চেয়ে চমকে উঠলো। একজন রিকশা চালক দাঁড়িয়ে আছে। অদ্ভুতভাবে লোকটার ময়লা ঘামে ভেজা গামছার আড়ালে পি*স্ত*ল লুকানো আছে। যেটা আলোর দিকে ত্যাক করে রাখা। আলো ভয়ে সিউরে উঠলো। কিন্তু পাশের ছেলেটার কোনো হেলদোল হলোনা। বরং শান্ত কণ্ঠে হুমকি দিলো,
> চুপচাপ উঠে পড়ুন পাশের সাদা রঙের গাড়িতে। চিৎকার চেচামেচি করলে আফসোস এখানে আমাদের মিশন খতম করতে হবে। চারদিকে আমাদের অসংখ্য লোক আছে। দ্রুত উঠুন। হাতে সময় কম।
লোকটা চাপা কণ্ঠে ধমক দিচ্ছে। পোশাক দেখে ভদ্রলোক মনে হচ্ছে।আলো বাধ্য হলো লোকটার সঙ্গে সামনে যেতে। এভাবে ব্যস্ত রাস্তা থেকে দিন দুপুরে ঠান্ডা মাথায় কাউকে কিড*ন্যাপ করা যায় আলোর জানা ছিল না। এরা ঠিক কারা সেই বিষয়ে ওর বিন্দু পরিমাণ ধারণা নেই। ভয় লাগছে প্রচুর। কি করবে বুঝতে পারছে না। মাথা নিচু করে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটা ওর থেকে ব্যাগ কেড়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে দিলো। তারপর মুখের উপরে রুমাল চেপে ধরলো। আলো অচেতন হয়ে পড়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। বুঝতেও পারলোনা ওকে ঠিক কোথায় নেওয়া হচ্ছে।
*********
বাকী দিনের মতো সঠিক সময়ে বাড়িতে ফিরে এসেছে আলো। আসার পর থেকে মেয়েটা কেমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে। ইশাকে কাছে নিচ্ছে না। লিমা বেগম কিছু মনে করলেন না। বাচ্চা মেয়ে সারাদিন বাইরে থেকে এসেছে ক্লান্ত তাই ছেড়ে দিলেন। কিন্তু সমস্যা হলো রাতে যখন আলো ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চাইলো ইশা কিছুতেই ওর নিকট গেলো না। চিৎকার চেচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুললো। লিমা বেগম বাধ্য হয়ে ওকে নিয়ে গেলেন। আলো নিরুত্তাপ হয়ে সবটা দেখলো। কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া করছে না। শ্রাবণ বাড়িতে ফিরলো মাঝরাতে। যখন সবাই গভীর ঘুমে অচেতন। শ্রাবণ ঘরে ফিরে লিমা বেগমের সঙ্গে দেখা করে ইশাকে আদর করে রুমে প্রবেশ করলো। দুজন সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী অথচ দূরুত্ব অনেক। শ্রাবণ রুমের লাইন অন করে থমকে গেলো। আলো নাইটি পরে এলোমেলো পোশাকে ঘুমিয়ে আছে। শ্রাবণ অবাক হলো। আলো এসব কখনও পরেনা। ভাবলো মেয়েটার মধ্যে এমন পরিবর্তন কবে থেকে হলো? শ্রাবণ কাছাকাছি এসে ডাকলো,
> আলো শুনছো?
ডাক শুনে আলো হুটকরে চোখ খুঁলে শ্রাবণকে দেখে ঘাবড়ে গেলো। হুড়মুড় করে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে ঢোক গিলে বলল,
> তুমি হঠাৎ? ভয়ে ঘাবড়ে গেছি।
শ্রাবণ বিস্মৃত হয়ে বলল,
> তুমি ঠিক আছো?
> একদম ঠিক আছি,কিন্তু কেনো? তুমি কখন ফিরলে? ফ্রেস হয়ে এসো। খেয়েছো কিছু?
শ্রাবণ আজ শুধু চমক পাচ্ছে। আলো ওকে তুমি করে বলছে। নিজ থেকে খোঁজখবর নিচ্ছে যেটা আলো মোটেও করেনা। শ্রাবণ চোখ বড়বড় করে বলল,
> তুমি কি কারো সঙ্গে এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়েছো? কেমন সন্দেহ হচ্ছে। চমকে যাচ্ছি আমি। আমার হার্ট এমনিতেও অনেক দুর্বল। ধকল নিতে পারবে না তাই আগে থেকে বলো।
শ্রাবণের রসিকতা শুনে আলো প্রাণহীন হাসলো। । মেয়েটার মুখখানা মলিন হয়ে আছে।হাসিতে কিছু একটা নেই বলে মনে হলো। নাকি কোনো কিছু লুকানোর অপরিহার্য চেষ্টা? আলো হাসি থামিয়ে বলল,
> এক্সচেঞ্জ হলে বুঝি খারাপ হতো?
> অবশ্যই হতো। পৃথিবীতে আলো নামের হাজার মানুষ থাক সমস্যা নেই কিন্তু আমার বউ শুধুমাত্র একজন। ভীষণ ক্লান্ত ঘুমাতে হবে।
শ্রাবণ বিছানায় গিয়ে চোখ বন্ধ করলো। গত দুইরাত ওর ঘুম হয়নি। জেগে ছিলো। প্রচুর কাজ রয়েছে। অফিসের কর্মচারি বৃদ্ধি করতে হবে। তাছাড়া লাইসেন্স পাওয়া এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। সব প্রায় ঠিকঠাক হয়ে গেছে। বিছানায় এসে আধা ঘন্টার মধ্যেই শ্রাবণ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। আলো এখনো ঠাই বসে আছে। ওর দৃষ্টি শ্রাবণের চোখের মুখের দিকে। পুরুষ মানুষ এতো সুদর্শন না হলেও পারতো। মানুষের নজর লেগে যায় যে। সে ভালো অথবা খারাপ। আলোর ওষ্ঠে রহস্যময় হাসি ফুঁটে উঠলো। বালিশের নিচ রাখা চু*রিটা আলগোছে হাতের মুঠোয় তুলে নিলো। সেটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে ভাবলো,এখন যদি এই ধারালো চু*রিটা ঘুমন্ত যুবকের হৃদয়ের ঠিক মাঝ বরাবর বসিয়ে দেওয়া হয় তাহলে কেমন হবে?
চলবে
#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
২৩ পর্বের শেষাংশ
স্ত্রীর ছু*রিকাঘা*তে স্বামীর মৃ*ত্যু। বাংলাদেশের জনপ্রিয় “দেশের মাটি” চ্যানেলের পরিচালক এবং মালিক শ্রাবণ মাহমুদ ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীর হাতে মৃ*ত্যু বরণ করেছেন। আগামীকাল নিশ্চয় এই সংবাদ সারা দেশের সবগুলো টিভি চ্যানেল আর খবরের কাগজে একযোগে সম্প্রচার করা হবে? আলো হাতের ছু*রিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। মৃদু আলোতে সেটা ঝিকমিক করছে। আলো একটু একটু করে শ্রাবণের কাছাকাছি এসে থামলো। মুখটা ওর খুব নিকটবর্তী এনে হাতের ছু*রিটা যেই ওর বুকের কাছে ধরলো অমনি শ্রাবণ চোখ খুঁলে চাইলো। বিরক্ত হয়ে বলল,
> কি সমস্যা? না ঘুমিয়ে ছু*রি নিয়ে এভাবে ফাজলামি করছো কেনো? চুপচাপ ঘুমাও। সারাদিন ঘুম হয়নি আমার। কতবার করে বললাম।
আলো ভয়ে তাড়াতাড়ি করে ছু*রিটা পেছনে লুকিয়ে ফেললো। মিনমিন করে বলল,
>কিসের ছু*রি? আমার ঘুম আসছে না। তুমি এতোক্ষন ঘুমিয়ে ছিলে না? উঠলে কেনো? ঘুমাও আমি বসে আছি।
আলো বেশ চনচল হয়ে উঠলো।শ্রাবণ উঠে বসলো। শার্টের বোতাম লাগিয়ে বলল,
> কেনো আমি জেগে উঠাতে তোমার কি কোনো অসুবিধা হলো? আজ হঠাৎ তুমি তুমি করে বলছো। আমার ঘুমন্তাবস্থার সুযোগে কাছাকাছি আসছো,কি ব্যাপার বলোতো? অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ জানোতো?
শ্রাবণের প্রশ্ন শুনে আলো ভয়ে মুখটা কাচুমাচু করে ঢোক গিললো। দ্রুত গতিতে মাথা নাড়িয়ে বলল,
> কি যা তা বলছেন? আমি জাষ্ট মজা করে তুমি করে বলেছি। আজ বন্ধুরা বলেছিলো আপনাকে তুমি করে বলতে। আমি শুধু ওই জন্যই বলেছি। ডেয়ার ছিল তাছাড়া কিছু না। অযথা আমাকে সন্দেহ করছেন।
শ্রাবণ পাশের ফোনটা হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে কিছু একটা চেক করে বলল,
> যেতে হবে আমাকে। তুমি ঘুমিয়ে যাও। শ্রাবণ অযথা তোমাকে সন্দেহ কেনো করবে? চিন্তা করোনা আমি সকালে ফিরবো। রাহিনকে একটা বিষয়ে বলতে ভুলে গেছি।
আলো বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। কপালের চামড়াতে ভাড় পড়লো। চাপা কণ্ঠে বলল,
> এতো রাতে?
শ্রাবণ বলার অপেক্ষা করলোনা। তাড়াতাড়ি কক্ষ ত্যাগ করলো। আলো চরম অবাক। একজন মানুষ হুট করে ঘুম থেকে উঠে এভাবে চলে যেতে পারে নাকি? এটা কাকতলীয় নাকি শ্রাবণ ইচ্ছে করে এমন করলো? সন্দেহ করার উপায়ন্তর নেই। আলো হতাশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
****
রাহিন চেয়ারে ঝিঁমিয়ে ঝিমিয়ে পড়ে যাচ্ছে। শ্রাবণ ফ্লর জুড়ে অস্থিরচিত্তে হাঁটাহাটি করছে। হুট করে হাতের ফোনটা পকেটে রেখে ধমক দিলো,
> তোকে ঘুমানোর জন্য ডেকেছি? শা*লা আমার বউ বদল হয়ে গেছে আর তুই ঝিমিয়ে যাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি চল। কলেজের সামনের দোকানে সিসি ক্যামেরা আছেনা? চেক করতে হবে।
রাহিন চোখ মুছে উঠে বসলো। কেঁপে যাওয়া কণ্ঠে বলল,
> কি বলিস দোস্ত? সামান্য সন্দেহ থেকে তোর মনে হচ্ছে ভাবি এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছে? আল্লাহ! তুই এমন খেপাটে কেনো বলবি? ভাই বউ তোর একার নেই দুনিয়ায়। কার প্রয়োজন তোর বউ নিয়ে কাড়াকাড়ি করবে? জন্মে শুনিনি ভাই বউ এক্সচেঞ্জ হয়।
শ্রাবণ বিরক্ত হলো। রাহিনের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
> সামান্য মনে হচ্ছে? আমি আলোর কাছাকাছি যায়নি ঠিক তবে ওর শরীরের প্রতিটা অঙ্গ আমার চেনা। ওর হাসির ধরন ওর শরীরের গন্ধ সবটা আয়ত্তে আমার। আমার ঘরে যে আছে কিছুতে আলো হতে পারেনা। কণ্ঠ যতই আলোর মতো করার চেষ্টা করুক পারছে না। কি*ড*ন্যাপার জানেনা ঠিক আলোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন। তাই আপনি আর তুমি গুলিয়ে ফেলেছে।রাহিন আমাকে আলো পযর্ন্ত পৌঁছনোর জন্য যা কিছু করতে হয় করবো।
রাহিন এবার সিরিয়াস হলো। মাথা নাড়িয়ে বলল,
> ঘরে যে আছে ও যদি কিছু বুঝতে পারে?এখন গভীর রাত। এই সময় দোকান বন্ধ থাকে। সকালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া কণ্ঠ পরিবর্তন হতে ঠান্ডাজনিত সমস্যা হতে পারে। মনে হয় বন্ধুদের সঙ্গে ও আইসক্রীম খেয়েছে। শোন অযথা সন্দেহ করা হচ্ছে।
> আজ যখন কক্ষে প্রবেশ করি ওই মেয়েটাকে আমি এলোমেলো পোশাকে পেয়েছি। নাইটি পরে ঘুমিয়েছে যেখানে আলো আমার সম্মুখে আজ অবধি ওড়না ছাড়া আসেনি। রাতে ঘুমানোর সময় আলোর মাথায় ওড়না থাকে। আমি রুমে ঢুকে থতমত খেয়ে গেছি। ঘুম কবে পালিয়ে গিয়েছিলো। জাষ্ট দেখতে চাইছিলাম ও কি করে। তারপর দেখি বালিশের নিচ থেকে ছু*রি বের করেছে। দেখার জন্য আর একটুও অপেক্ষা করলে আগামীকাল আমার খবর বাংলাদেশের প্রতিটা চ্যানেলে প্রকাশ হতো। এদিকে আমার খু*নের দ্বায়ভার আলোর উপরে চাপিয়ে এই মেয়ে ঠিক পালিয়ে যেতো। পুলিশ ইনভেস্টিগেশনে আলোর নাম উঠে আসতো। এক ঢিলে দুই পাখি মারা বুঝতে পারছিসতো ? শোন যেই আলোকে কি*ডন্যা*প করেছে ওরা আলোর ক্ষতি করতে পারেনি। আমাদের খুব তাড়াতাড়ি ওর নিকটে পৌঁছনো প্রয়োজন। রাহিন প্রশ্ন করবি না যেটুকু বলেছি কর আর জাষ্ট আমাকে ফলো কর।
শ্রাবণ কথা বলতে বলতে নিচে নেমে আসলো। পরপর বিষয়গুলো মাথার মধ্যে সাজানো হয়ে গেছে। অপরাধী খুব সুন্দর পরিকল্পনা করে এগিয়েছে। ওকে হ*ত্যা করে অনায়াসে আলোকে ফাঁসানোর কৌশল। শ্রাবণ গাড়িতে গিয়ে উঠলো। রাহিন কলেজের সামনের সিসি ক্যামেরা হ্যাক করার জন্য অমিকে টেক্সট করলো। আমি এগুলোতে বেশ পারদর্শী। অমি অফিসে বসে নিজের মতো কাজ করছে। ওদের গাড়ি এসে কলেজের সম্মুখে থামলো। নির্জন রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলছে। ফজরের সময় হতে বেশিক্ষণ দেরি নেই। শ্রাবণ গেটের সম্মুখ থেকে প্রতিটা কদম রাস্তা ভালো করে দেখছে। রাহিন বিরক্ত হলো। এভাবে কি আলোর দেখা মিলবে? শ্রাবণ হুটকরে একটা চকচকে বস্তু নিজের হাতের মুঠো তুলে নিলো। মাইক্র ক্যামেরার খোলসযুক্ত অংশ। শ্রাবণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিলো। চোখ বন্ধ করে বলল,
> আলোর কাছে ক্যামেরা আছে। কিন্তু ওকে কোথায় নিয়েছে সেটা কিভাবে জানবো? রাহিন মাথা খারাপ হচ্ছে। কু*ত্তা*র বা*চ্চাদের ধরতে পারলে জন্মের মতো কি*ডন্যা*পের স্বাদ মিটিয়ে দিবো। শুধুমাত্র একবার পেয়ে যায়।
শ্রাবণ মুখে শক্ত হচ্ছে কিন্তু মন বেশ দুর্বল। মেয়েটা অচেনা লোকদের নিকট আছে। ওর সঙ্গে খারাপ কিছু হলে জীবনেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। হঠাৎ রাহিন চিৎকার করে উঠলো,
>পেয়েছি ফুটেজ।
শ্রাবণ আগ্রহী হয়ে ফোনটা নিজের কাছে টেনে নিলো। দুপুরের পরের ভিডিও চলছে। কর্মব্যস্ত রাস্তা হলেও কলেজের সম্মুখে পরীক্ষা ব্যতিত কোনো জ্যাম লাগেনা।কিন্তু আলো কি*ড*ন্যাপের কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ দশ বারোজন রিকশা চালক এসে উপস্থিত হলো। কয়েকটাতে লোক ছিল। ডান দিকের বুক স্টলের সামনে সাদা রঙের মাইক্র দাঁড়িয়ে আছে। আলো গুটিগুটি পায়ে গেট থেকে বেরিয়ে আসলো ঠিক তখন গাড়ি থেকে সাদা রঙের শার্ট পরিহিত এক যুবক বেরিয়ে আসলো। তারপর আলো নিকটে এসে কিছু একটা ফিসফিস করে বললো। আলোর মুখে ভয়ের ছাপ বোঝা যাচ্ছে। লোকটা ভয়তো ভয় দেখাচ্ছে। শ্রাবণ লোকটার পা হতে মাথা অবধি স্ক্যান করে ভ্রু কুচকে ফেললো। কপালে ভাজ পড়লো চিন্তার। এই ছেলেটাকে সোনিয়ার গায়ে হলুদের দিন ও দেখেছিলো। সেম উচ্চতা সেম শার্ট। এতো মিল কাকতলীয়ভাবে হতে পারে বলে মনে হচ্ছে না। শ্রাবণ হাতের ফোনটা শক্ত করে চেপে ধরলো। মাথা গরম হচ্ছে। গালিগালাজ করতে ইচ্ছা করছে। ওকে এভাবে রাগ করতে দেখে রাহিন এগিয়ে আসলো,
> শোন আমাদের এখুনি পুলিশের কাছে যেতে হবে। বুঝতে পারছি না ভাই তুই কিভাবে এটা বুঝতে পারলি? আমি হলে অসমাপ্ত কাজটা সমাপ্ত পযর্ন্ত করে ফেলতাম ফলাফল হিসেবে এতোক্ষন মর্গে থাকতাম। ভাগ্য ভালো বিয়ে করিনি তাই বউ এক্সচেঞ্জ হয়না।
কঠিন সময়ে এমন রসিকতা শুনে শ্রাবণ মহা বিরক্ত। ধমক দিলো,
> তুই জীবনেও ভালো হবি না তাইনা? অমিকে বল আইটি স্টোরের সিসি ক্যামেরা হ্যাক করতে। গাড়িটা ঠিক রাস্তার ওপাশে ছিল। গাড়ির নাম্বার জানতে হবে। দ্রুতো চল।
শ্রাবণ আবারও গাড়ির দিকে ছুটলো। এখনো অনেক কাজ বাকী। একবার নাম্বারটা পেলে গাড়ির মালিক খুঁজে পাওয়া হাতের ময়লা। কিন্তু কি*ডন্যা*পার কি বুদ্ধিহীন ভাবে গাড়িতে কোনো নাম্বার বা সংখ্যা রেখেছে?
************
নির্জন গ্যারেজ, কয়েকটা নষ্ট ভাঙাচুরা গাড়ি পড়ে আছে কক্ষে। তার একপাশে চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে আলো। পুরোপুরি জ্ঞান না থাকলেও অচেতন না। কিছুক্ষণ আগে সজাগ হয়ে মাথা পুরোপুরি আউলে গেছে। ক্রমাগত সারাদিনের ঘটনা একে একে মস্তিষ্কে আঘাত করলো। আলো চোখ খুঁলে আবারও বন্ধ করে নিলো। শরীরে একফোঁটা বল নেই। নিজেকে হালকা লাগছে। আলো পূণরায় মাথা উঁচু করলো। পাশের কক্ষ হতে গুণগুণ করে কেউ সুর তুলে কাঁদছে। একজন নাকি দুইজন? না না দুজন না অনেকে লোক আছে। ওরা কাঁদছে কিন্তু কেনো? ভাবতে ভাবতে তীব্র আলোকরশ্মি এসে ওর চোখে লাগলো। আলো চোখ বন্ধ করে ফেললো। ক্যাচক্যাচ আওয়াজে দরজা খুঁলে গেলো,সঙ্গে একপা দুপা করে একটা সাদা জুতা ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। আলো জুতা থেকে নজর ঘুরিয়ে লোকটার মুখের দিকে চেয়ে চমকে উঠলো। এই লোকটাকে ও দেখেছিলো।
” আষাঢ় মাসের শেষ, গত সপ্তাহ থেকে সারাদেশে নিন্মচাপ শুরু হয়েছে। কখনও ভারি বর্ষণ আবার কখনও ফিসফিস করে বৃষ্টি হচ্ছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও মানুষ জীবাকার তাগিদে ঠিকই ছুঁটে চলেছে। কেউ আর ঘর বন্ধী নেই। দিনমজুর থেকে শুরু করে সামাজের উঁচু নিচু সকলে কর্মব্যস্ত। বর্ষা হচ্ছে প্রকৃতির দান তাকে আটকানোর সাধ্য কারো না থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থা মানুষ ঠিক খুঁজে নিয়েছে। আলো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। স্থানীয় বাজারের পাশের একটা বিল্ডিং ওদের কোচিং করানোর জন্য কয়েকজন শিক্ষক মিলে ভাড়া নিয়েছে। কিছুটা দূরে ওদের কলেজ। সকাল ছয়টা বেজে পাঁচ মিনিট। সকালের আবহাওয়া ঠিক ছিল। পর্ব আকাশে রক্তিম সূর্যের উদয় হলো কিন্তু তবে সেটা বেশিক্ষণের জন্য না। আলো বাসা থেকে বাজারের কাছাকাছি এসে পৌঁছনোর আগে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে মেঘ ডেকে উঠলো। লোকজন কেউ নেই। দোকানপাট বন্ধ থাকে এই সময়। ঝুম বৃষ্টি নামলো প্রান্তর জুড়ে। আলো পিচঢালা রাস্তায় পা টিপে টিপে হাটতে হাটতে পুরাতন স্কুল ঘর ছাড়িয়ে আসার সময় হঠাৎ ওকে পাশ কাটিয়ে একটা সাদা রঙের মাইক্রবাস হুশ করে চলে গেলো। থামলো শহিদ মীনারের পাশে। কয়েকজন দ্রুতবেগে নেমে আসলো। পাঁচজন চেনা পরিচিত মুখ। একজন অগন্তুকের মুখে মাস্কের জন্য ও ঠিক চিনতে পারলোনা। মৃ*ত অবলা পশুর ন্যায় ওরা রেবার লা*শটা ধরাধরি করে টেনে হিচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে মিনারের আঁড়ালে ফেলে দিয়ে আবারও গাড়িতে উঠে পড়লো। আলো একটা গাছের আঁড়ালে ছিলো বিধায় কেউ ওকে দেখতে পেলোনা। ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকে।কয়েক মূহুর্ত্তের মধ্যে আলো নামের অতি সাধারণ মেয়েটা হয়ে গেলো রেবা নামের প্রাণচঞ্চল কলেজ ছাত্রী হ*ত্যা মাললার প্রধান সাক্ষী। যার একটা সাক্ষীতে ছয়টা মানুষের আড়ালে থাকা জা*নো*য়ারের প্রাণ ঝরে পড়বে। সেই থেকে শুরু আলোর যুদ্ধ। ওখানে ছয়জনকে দেখেছিলো। একজন অগন্তুকের মুখ দেখতে পারেনি বিধায় অজানা রয়েছে সেই মুখ। যার নামে কোনো শুনানি হয়নি। আলো কথাগুলো ভেবে চোখ বন্ধ করে ফেললো। বড় ভুলটা ও ঠিক করে ফেলেছে। কিভাবে করলো এটা? ইতিমধ্যে লোকটা আলোর মুখের সমানে এসে থামলো। চকচক করে জ্বলতে থাকা চোখে প্রতিশোধের নেশা নাকি অন্য কিছু? আলোর শরীর কাঁপছে। কোনোরকমে ফিসফিস করে বলল,
> কে আপনি? কি চাইছেন আমার থেকে?
লোকটা খলখল শব্দে হেসে উঠলো। মনে হলো জোক বলা হয়েছে। তারপর কয়েক সেকেন্ড পর লোকটা থামলো। হাতের মুঠোয় থাকা ধারা*লো খ*ঞ্জ*র তুলে আলোর ঠোঁট বরাবর চেপে ধরে পুরুষালী গম্ভীর আওয়াজ সুরে সুরে গাইলো,
” আলো আমার আলো ওগো,
আলো ভুবন ভরা।আলো নয়ন ধোওয়া আমার
আলো হৃদয় হরা।”
লোকটার এলোমেলো গান শুনে আলোর বুকের মধ্যে ধুকপুক শুরু হলো। এই লোকটা চমৎকারভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে ক্রা*ইম করার ক্ষমতা রাখে। মানুষিক রোগীদের ক্ষেত্রে যেমন হয়। আলো হাতের বাঁধন ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু হচ্ছে না। লোকটা গাইতে গাইতে ছু।*রি ফেলে পকেট থেকে ইন*জেক*শন বের করলো। টেবিলের উপরে হে*রো*ইন ই*য়া*বা আর কিছু শক্তিশালী ড্রা*গস। যেগুলো মানব শরীরে প্রবেশ করলে নার্ভ দুর্বল করে। নেশা হয় সঙ্গে মানুষিক চেতনা হারিয়ে সে অন্য জগতে বিচরণ করে। হুটকরে অতিরিক্ত ড্রা*গ*স গ্রহণে মানুষের মৃ*ত্যু পযর্ন্ত হয়। আলো ভয়ে ঢোক গিললো। খুব করে চাইলো এটা ওর শরীরে প্রবেশের পূর্বে যেনো শ্রাবণ ওকে খুঁজে বের করে। কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। বরং হাতের কব্জি টেনে লোকটা ওর ধমনীতে বি*ষা*ক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করে সরে আসলো। জ্ঞান হারানোর পূর্বে আলোর কর্ণগোচর হলো,
” আলো আমার আলো ওগো,
আলো ভুবন ভরা।আলো নয়ন ধোওয়া আমার
আলো হৃদয় হরা।”
চলবে