বাঁধনহীন সেই বাঁধন অকারণ পর্ব-০৩

0
623

#বাঁধনহীন_সেই_বাঁধন_অকারণ|৩|
#শার্লিন_হাসান

পরের দিন সকাল বেলা রুদ্রর সাথে মেঘের দেখা হয় নাস্তার টেবিলে। তাকে এক কথায় ছায়ামানব ও বলা যায়। এই যে খাবার টেবিলে বসেছে কেউ বুঝতে ও পারবে না এখানে জারিফ আনান চৌধুরী রুদ্র বসে আছে। মেঘ চুপচাপ পরোটা খাচ্ছে। মাঝে-মাঝে রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে। সে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে এসেছে। তাদের অন্য ভাই বোনদের থেকে রুদ্র সম্পূর্ণ আলাদা।
মেঘ নাস্তার টেবিলে থাকতে, থাকতে রুদ্র উঠে রাখির কাছে গেলো। রাখি কিচেন থেকে সবে এসেছিলো।

‘সাবধাণে থাকবে। কিছু লাগবে রাখি?’

‘কিছু লাগবে না ভাইয়া। তুমি ও সাবধানে যাবে।’

রুদ্র মাথা নাড়িয়ে বাইরে চলে গেলো। গাড়ী রাখার স্টোর রুম থেকে গার্ডেনে গাড়ী বের করেছে ড্রাইভার। রুদ্র আজকে তাকে না করে দিয়েছে যেতে। রুদ্র আজকে একা যাবে। রুদ্রের কথায় ড্রাইভার মোতাহের ‘আচ্ছা’ বলেছে। আরিয়ান চৌধুরী এবং আফিয়ান চৌধুরী অফিস যাবে। সেই তগিদে তাদের গাড়ীটা বের করলো মোতাহের। আরিশ তার বাবা -চাচাদের কোম্পানিতে একটা পদে চাকরী করে। অর্ণব ও সেম। শুধু ভিন্ন ক্যাটাগরিতে আছে রুদ্র।

নাস্তা খেয়ে আরোহীর রুমে গেলো মেঘ। মেয়েটা আজকে কলেজ যাবে না। মেঘের সাথে সময় কাটাবে। বিকেলের দিকে মেঘরা চলে যাবে। মেঘ খাটে বসে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে শুরু করলো,

‘তোমাদের পরিবারের সবাই তো দেখি একই জব ধরে রেখেছে। তারা তাদের বিজন্যাস নিয়ে বিজি। বাট স্যার একটু ভিন্ন ক্যাটাগরিতে গিয়েছে?’

মেঘর কথার জবাবে আরোহী বললো,
‘ভাইয়ার শখ! আর আলিশা আপুর ও এসব বিজন্যাস পছন্দ না।’

‘আলিশা আপুকে দেখেছো তুমি আরেহী?’

‘হ্যাঁ! একবার দেখেছিলাম রাখি আপুর ফোনে। তবে আমার কাছে কোন পিক নেই।’

‘স্যারের উডবিকে দেখার জন্য মনটা খচখচ করছে। আলিশা আপু কত ভাগ.. না মানে ভালো আরকী।’

প্রসঙ্গ পাল্টে নিলো মেঘ।

আরোহী শুধু মাথা নাড়ালো। অত:পর মেঘকে নিয়ে ছাঁদের দিকে রওনা দিলো। মেঘ আরোহীর পেছন,পেছন ছাঁদে গেলো। ভালো লাগছে ছাঁদ টা। এক পাশে হরেক রকমের ফুল গাছ। মেঘ নয়নতারা ফুল ছিঁড়ে কানের পিঠে গুজলো। তবে তার কাছে তাদের ছাঁদ টা বেশী ভালো লাগে।
দু’জনে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে নিচে চলে গেলো।

ফাইজা চৌধুরী তার মেঝো বউমার সাথে বসে কথা বলছে। মূলত তারা রুদ্রকে নিয়েই কথা বলছে।

‘নিজে পছন্দ করে ছেলেকে বিয়ে করালাম। শুধু,শুধু অপরাধী হলাম! সম্পর্ক খারাপ হলো। বিশ্বাস উঠে গেলো। ডিভোর্স দিলে একটা কথা ছিলো! মাঝখানে আমার নাতি-নাতনি টার ম*রন দশা।

ফাইজা চৌধুরীর কথার জবাবে অন্তি বললো,
‘রুদ্র আলিশার বিয়েটা হলে এই বাড়ীতে থাকতে বলবেন মা। আমাদের মাঝে থাকবে ভালো লাগবে। ছেলেটা যেমন গম্ভীর! এখন অব্দি মুখ ফুটে আলিশার কথা কারোর কাছে বলেনি। আর বউটা ও একা থাকতে,থাকতে গম্ভীর হয়ে যাবে।’

তাদের কথার ব্যঘাত ঘটলো যখন মেঘ আরোহীর সাথে সেখানে উপস্থিত হলো। আবছা কিছু শুনেছে মেঘ! তবে আলিশা নামটা ভালো করে শুনেছে মেঘ । আলিশা,রুদ্র এদের নিয়ে তার উদ্বেগের এর মাত্রা পুরো আকাশ ছোঁয়া!

********

সাইন্স ল্যাবে একটা বিক্রিয়ার ক্লাস করাচ্ছে রুদ্র। তবে তার বিরক্ত লাগছে! মেয়েগুলো কেমন গায়ে পড়া টাইপ। সাথে কয়েকজন তো আছে বসে,বসে তাকিয়ে আছে। তবুও কিছু বলছে না রুদ্র। কোন রকম ক্লাস শেষে করে ল্যাব থেকে বেড়িয়ে, কম্পিউটার ল্যাবে ঢুকে পড়লো রুদ্র। এই পিরিয়ডে তার কোন ক্লাস নেই। এখানের জায়গাটা ফাঁকা। কয়েকজন তাদের কাজ করছে। রুদ্র একটা চেয়ার দখল করে বসলো। তখন আলিশার মেসেজ আসলো,

‘ফ্রি আছো?’

রুদ্র মুচকি হাসলো। মেয়েটা তার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে। আর একাংশ তার বোন! নিজের মায়ের জন্য ও পরম শ্রদ্ধা ভক্তি আজ ও কাজ করে। সাথে ভালবাসা ও! নিজেকে সেভাবে তৈরী করেছে রুদ্র। তার তর্ক করতে হয়না কারোর সাথে! তার নিরবতাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। রুদ্র ডিরেক্ট কল দিলো আলিশাকে। সাথে,সাথে রিসিভ হতে জানান দিলো মেয়েটা তার কলের অপেক্ষায় ছিলো। ফোন কানে দিতে আলিশা বললো,

‘সন্ধ্যায় দেখা করতে পারবে?’

‘আচ্ছা! কোথায় আসবো?’

‘ক্যাফেতে আসিও! তোমায় নিয়ে রাতের শহর ঘুরবো রুদ্র।’

‘আচ্ছা! দেখা হবে। আমি ব্যস্ত!’

‘আচ্ছা!’

পুরো নাম আলিশা নূর! বাবা মায়ের একমাত্র কন্যা। আলিশা একটু অলস টাইপ। মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে সে। সবার আগে রুদ্রর ভয়েসটা শোনলো। ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গেলো আলিশা। আজকে রুদ্রর জন্য নিজ হাতে কিছু রান্না করবে ভেবে রেখেছে। সে অনুযায়ী জিনিসপত্র দেখছে। আলিশাকে এভাবে কিচেনে তদারকি করতে দেখে তাদের বাড়ীতে কাজকর্ম করে পিয়াসা বললেন,

‘রুদ্রর সাথে দেখা করতে যাবে নাকী নূর?’

‘ঠিক ধরেছো আম্মা! সন্ধ্যার দিকে যাবো।’

‘তোমার বাবা মায়ের থেকে পারমিশন নিয়েছো তো?’

‘বলবো প্রিতীর সাথে দেখা করবো। ঘুরবো!’

‘হুম! আর কতদিন? প্রিতীর জন্য তো বেঁচে যাও সবসময়। রুদ্র যেহেতু জব করে! আর কতদিন ছেলেটা এভাবে থাকবে? এবার বিয়েটা করে ছেলেটাকে একটু চঞ্চল বানাও। রুদ্র ছেলেটা গম্ভীর হলে ও বেশ ভালো। তুমি লাকি নূর।’

‘সবাই বলে আম্মা! কিন্তু কেনো আমি লাকি সেটা আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারলো না। শুধু এইটুকু যে রুদ্রকে আমি ভালবাসী ও আমাকে ভালবাসে।’

‘সেটা সময় হলে বুঝে যাবে। তা কী রান্না করে নিয়ে যাবে ওর জন্য?’

‘আই হেভ নো আইডিয়া! আজকে কী নেবো ঠিক করতে পারছি না।’

‘রুদ্রের পছন্দের কিছু নিও?’

‘ও তো বিরিয়ানি পছন্দ করে।’

‘তাহলে ওইটাই নিও!’

‘আচ্ছা। তাহলে তুমি মাংশ নামিয়ে রেখো আমি বিকেলে রান্না করবো।’
কথাটা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো আলিশা। আজকে ভার্সিটি যায়নি! আগামী কাল থেকে যাবে। রুদ্রর সাথে পরিচয়টা হয় একটা বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে। সেই তিনবছর আগের ঘটনা। আলিশা এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। বিয়ের সময় দেখা হয়েছিলো ঠিকই তবে রুদ্রর সাথে পরিচয় হয়নি। শুধু নামটাই জেনেছিলো আলিশা। অনেক কষ্টে ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করে। তখন সবে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলো আলিশা। তার কয়েকমাস পর ভার্সিটিতে পা রাখে। তখন তাদের টুকটাক কথা হতো মেসেন্জারে। ইন্টারেস্টিং বিষয়, রুদ্র যেই ভার্সিটিতে মাস্টার্স পড়ছিলো সেটাতে আলিশা এডমিশন নেয়। এভাবে গড়াতে,গড়াতে তাদের সম্পর্কের তিন বছর হলো। না চাইতে রুদ্রকে একটু বেশী ভালবাসে আলিশা। এসব কথা ভাবতে ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটলো আলিশার। আবার কিছু একটা ভেবে ডাইনিংয়ে গেলো। কফির মগ এনে রেখেছিলো পিয়াসা। চেয়ারে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর রুদ্র কে নিয়ে ভাবনায় মগ্ন হচ্ছে আলিশা।

********

মেঘ রেডি হচ্ছে তারা চলে যাবে একটু পরে! মেহেরাব রেডি হয়েছে রাখি একটু লেট করছে। রুদ্র এখনো ফিরেনি তবে সময় হয়ে এসেছে। ভাইয়ের সাথে দেখা করে যাবে রাখি। মেঘ ও ধীরে সুস্থে রেডি হচ্ছে। কেনো জানি রুদ্রকে দেখার জন্য মনটা ব্যকুল হয়ে আছে। গত দুইমাসে বন্ধ ছাড়া একদিন ও কলেজ মিস দেয়নি মেঘ। আগে ওতোটা মনোযোগী ছিলো না। আর না রেগুলার। এখন রেগুলার হয়ে গেছে মেঘ! বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। এই বাড়ীর পেছনের দিক বললে ভুল হবে কিছুটা কোণার দিকে পড়েছে।

আরিশ আরোহীর রুমে প্রবেশ করলো। আরোহী বসে,বসে ফোনে স্ক্রোল করছিলো। আরিশকে আসতে ফোন রেখে জিজ্ঞেস করলো,

‘আজকে তাড়াতাড়ি চলে এলে যে?কিছু বলবে আরিশ ভাই?’

‘এমনিতে সুন্দরী বেয়াইন থাকতে অফিসের কাজে মন বসে নাকী? তাকে দেখার জন্য মন দৌড়াচ্ছিলো তাই চলে আসলাম।’

‘কেসটা কী আরিশ ভাই?’

‘মেঘ কোথায় রে আরোহী?’

‘বেলকনিত! আর তুমি আজকে চলে আসলে যে? বিকেলে না আসার কথা ছিলো?’

‘টায়ার্ড ছিলাম বেশী। তাই চলে এসেছি!’

‘ওহ্!’

তখন রুমে প্রবেশ করলো মেঘ। আরিশ মেঘকে দেখে খানিক হাসলো। হেঁসে বললো,

‘চলে যাবে?’

‘হুম! কেনো থেকে যেতাম নাকী মিস্টার চৌধুরী?’

‘থাকতে চাইলে রাখতে পারি।’

‘থাকতে চাই না। রাখার ও দরকার নেই।’

‘জোর করে তো কিছু করা যায় না। আপসে না চাইলে।’

‘গেলাম মিস্টার চৌধুরী।’
কথাটা বলে আরোহীর থেকে ও বিদায় নিয়েছে মেঘ। করিডোরে আসতে মেহরাবের দেখা পেলো মেঘ।

‘ডাকতে যাচ্ছিলাম। চল! রুদ্র ও চলে এসেছে।’

‘স্যার আমাদের সাথে যাবে নাকী আবার?’

‘না! স্যার নিজের ফ্লাটে চলে যাবে।’

‘ওহ….’

মেহেরাবের পেছন,পেছন মেঘ নিচে গেলো। সেখানে রাখির দুই কাকীমা, দাদী,রুদ্র, আরোহী সাথে আরিশ ও আছে। ফাইজা চৌধুরী রাখিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন।

‘সাবধানে থাকবি। আর যখন মন চাইবে মেহরাবকে বলবি দিয়ে যাবে। মা এখানে নেই, বাবা নেই বলে যে তোকে আমরা পর করে দিয়েছি ভুলে ও ভাববি না।যখন মন চাইবে চলে আসবি।’

ফাইজা চৌধুরীর কথার জবাবে রাখি বললো,
‘আচ্ছা আসবো।’

‘রুদ্র না গেলে হয় না? আমাদের সাথে থাকতে তোমার কী সমস্যা?’

ফাইজা চৌধুরীর কথায় রুদ্র বললো,

‘সমস্যা নেই দাদীন। আমি মাঝে-মধ্যে আসবো দেখা করে যাবো।’

রুদ্রের কথায় সবাই হতাশ হলো। তারপর ও বিদায় জানালো। রুদ্র রাখিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো।
‘বোন যখন মন চাইবে আমার ওইখানে চলে যাবে। মন খারাপ থাকলে আমায় জানাবে। কিছু প্রয়োজন হলে কাউকে বলতে না পারলে আমাকে অবশ্যই বলবে।
মেহরাব আমার বোনকে দেখে রাখবি। সবই তো জানিস আশা করি আমি হতাশ হবো না।’
তখন মেহরাব বললো,
‘আমার স্ত্রী! আমার অর্ধাঙ্গিনী ওকে ভালো রাখার দায়িত্বটা ও আমার। দোয়া রাখিস বন্ধু। আর খুব তাড়াতাড়ি যাতে বিয়ের দাওয়াত পাই।’

মেহেরাবের কথায় মুচকি হাসলো রুদ্র। মাঝখানে দাঁড়িয়ে মেঘ সব শোনছে। এই মূহুর্তে কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। রুদ্র একবারের জন্য ও তার দিকে তাকায়নি।
‘বাবাহ্! কী লয়েল! এমন একজন আমার ও দরকার। সত্যি আলিশা আপু কত ভাগ্যবতী।’
আফসোস করছে মেঘ! অত:পর তারা রুদ্রকে বিদায় দিয়ে চলে আসলো।

******

আলিশা রান্না করে হটবক্সে বিরিয়ানি নিলো। বাকী গুলো টেবিলের উপর ঢেকে রেখেছে তার বাবা-মায়ের জন্য। রেডি হয়ে আছরের শেষ সময় বের হয়েছে সে। যাতে ক্যাফেতে পৌঁছাতে পারে মাগরিবের একটু আগে। বাসায় প্রিতীর কথা বলে এসেছে। অথচ প্রিতী ঢাকায় নেই কুমিল্লা গিয়েছে তার গ্রামের বাড়ীতে। রিকশা করে রওনা দিলো আলিশা। রুদ্রকে মেসেজ দিয়ে রেখেছে সে।

বাড়ী থেকে সোজা ক্যাফের দিকে রওনা দিয়েছে রুদ্র। রিকশা থেকে নামার পর একটা পিচ্চিকে দেখলো। হাতে বেলী ফুলের মালা সাথে গোলাপ ফুল ও আছে। আলিশার জন্য দু’টো মালা,দু’টো গোলাপ নিয়েছে রুদ্র। একটা দোকান থেকে দু’টো কিটক্যাট নিয়েছে। এই ছোট্ট গিফ্ট তার মায়াবিনীর জন্য। একসাথে ফুল,চকলেট গুলো হাতে নিলে রুদ্র। ছোট্ট জিনিস গুলো এতো কিউট লাগছে। ভাবতে মুচকি হাসলো রুদ্র। অত:পর ক্যাফের দিকে হাঁটা ধরলো।

আলিশা এসেছে পাঁচ মিনিট হবে। তার পেছন দিয়ে রুদ্র ও এসেছে। রুদ্র বসতে দু’টো কফি আসলো। আলিশা এসেই অর্ডার দিয়েছে। আলিশার জন্য আনা ছোট্ট কিউট গিফ্ট আলিশাকে দিলো রুদ্র।
মুচকি হেসে রুদ্রর থেকে ফুল, মালা নিলো আলিশা। তার কাছে জিনিস গুলো এতো কিউট লেগেছে।
দু’জনে কথা বলে কফি খেয়ে উঠে বাইরে এসেছে। রুদ্রর এক হাত ধরে হাঁটছে আলিশা। আরেকহাতে ফুলের মালা সাথে ফুল নিয়েছে। রাতের শহর! চাঁদের আলো সাথে মৃদু বাতাস। ভীষণ উপভোগ করছে আলিশা।

#চলবে