#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে _ ০৩
শুনছিস ফিহা শাফখাত ভাই নাকি ফিরোজ স্যারের ভাই। আজকে তোর অনুপস্থিতিতে জানতে পারলাম। শাফখাত ভাই ফিরোজ স্যারকে ভাই বলে সম্বন্ধোন করেছে।
কিভাবে মোহনা, শাফখাত ভাই আজকে ভার্সিটিতে আসছিলো। তো কিসের জন্য আসলো তিহা। তোদের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে? নাকি আবার মনোমালিন্য হয়েছে?
আরে ফিহা ওকে প্রশ্ন করা বাদ দে? বেচারির সতীন টা নাকি ফেসবুকে শাফখাত ভাইয়ের কাঁধ ধরে পিক তুলে আপলোড দিয়েছে? ক্যাপশনে লিখেছে মাই লাভ। এরজন্য আবারো এদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। পুরনো কাসুন্দিতে ঘি ঢালছে যাকে বাংলা কথায় বলে?
ফিহা দাঁতে দাঁত চেপে হেসে দেয় মোহনার কথা শুনে। এরপরে মুখ ভেঙিয়ে বলে ভাগ্যিস আমি ছিলাম না এসব ঝামেলায়। আর তোকেও বলি তিহা ভাইয়ার বয়স ২৫ + সে ১৬ বছরের মেয়ের সাথে প্রেম করবে। এসব কিভাবে বলিস। তোর এই বিষয়টা আমিয়ো নিতে পারিনা।
তোর ভালোবাসার মানুষের কাঁধে হাত দিয়ে সুন্দর করে ফটো তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে যদি কেউ বলে মাই লাভ। তখন তুই কি করতি। আমাকে এভাবে বলতে পারতিস?
সেসব বাদ দে, এখন তুই বল তোকে শাফখাত ভাই জানায় নাই কেনো ফিরোজ স্যার শাফখাত ভাইয়ের সম্পর্কে ভাই হয়! এই ভার্সিটির লেকচারার, যে সব সময় বড়আব্বুর পরিচয় নিয়ে গর্ব করে। সে এই বিষয়টা গোপন রাখলো কেনো?
আমাকে এসব জিজ্ঞেস করিস নাতো ক্যান্টিনে যাবো চা খাবো। আমার মাথা ধরেছে প্র’চু’র।
তিহার পানসে মুখ দেখে হেসে দেয় ফিহা আর মোহনা। এরপরে ক্যান্টিনে টাকলাওয়ালার মামার কাছে চা অর্ডার করে তিনটা। গরম চায়ের কাপে এক চুমুক দেয় ফিহা। হঠাৎ ফিহার ফোনে কল আসে। ফিহা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে? ফোনের স্ক্রিনে দেখতে পায় তার আম্মা কল করেছে। ফিহা ফোন ধরে হ্যালো বলে।
ফিহা তুই কোথায়। ভার্সিটি থেকে এক্ষুণি চলে আয়। আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে। কাঁদো কাঁদো স্বরে ফাতেমা কথাটি বলে।
আম্মা কিছু হয়েছে? কোথায় যেতে হবে আমাদের? তোমার জ্বর বেড়েছে নাকি। ডক্টরের কাছো যাবো।
ফোনে এতকিছু বলা সম্ভব নয় ফিহা দ্রুত বাড়িতে আয়। ফাতেমা ফোনটি কেটে দেয়। ফিহা অদ্ভুত চাহনি দেয় তিহা ও মোহনার উপর। তিহা বলে আন্টির কল ছিলো? বাড়িতে যেতে বললো কিছু হয়েছে নাকি বাড়িতে। তাতো জানিনা রে তিহা দ্রুত বাড়িতে ফিরতে বললো। আমায় যেতো হবে বাকি ক্লাস গুলো আজ আর করা যাবেনা।
এই ফিহা ওই দেখ ফিরোজ স্যার গাড়ি নিয়ে বের হইছে? ওনি সম্ভবত বাড়িতে যাচ্ছে। ফিহা বলে আমি তা দেখে কি করবো? আমাকেও যেতে হবে একটা রিকশা দেখ তো।
ফিরোজ গাড়ি থেকে নেমে ফিহার কাছে এসে বলে চলো বাড়িতে যেতে হবে আমাদের। ফিরোজের এরুপ কথায় বিস্মিত হয়ে যায় ফিহা। পাশে থাকা মোহনা ও তিহা অবাক হয়ে যায়। ফিহা বলে আমি বাড়িতে যাবো আপনাকে কে বলেছে। আমি রিকশা করে বাড়িতে ফিরবো। আমার বাড়িতে জরুরি কোনো সমস্যা হয়েছো সম্ভবত। ফিরোজ ফিহার এমন কথায় রেগে যায়। দাঁতে দাত চেপে বলে অবাধ্য মেয়ে গাড়িতে উঠো। আমাদের যেতে হবে। ফিহা ফিরোজ স্যারের এমন কথায় তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে, অদ্ভুত তো স্যার আপনাকে কেউ বলেছে আমি আপনার গাড়িতে করে বাড়ি ফিরবো। ফিরোজ কিছু না বলে ফিহার ডানহাত ধরে টেনেটুনে গাড়িতে তুলে। ফিহা অনেক জবরদস্তি করেও ফিরোজের সঙ্গে পেরে উঠেনা। ভার্সিটির সব ছেলে মেয়ে এই দৃশ্য দেখে। অনেক মেয়ে বলাবলি শুরু করে। আমাদের কপাল পুড়লো তবে, এই মেয়ে ফিরোজ স্যারের মন কেড়ে নিলো। ফিরোজ গাড়িতে উঠে স্টার্ট দেয়। সেকেন্ডের মধ্যে গাড়ি সবার চোখের আড়াল হয়ে যায়।
তিহা মোহনাকে বলে বিষয়টা কি হলো কিছুই তো বুঝলাম নারে?
আমার মন বলছে গতকাল স্যারকে চুমু দিয়েছে বলে স্যার এর প্রতিশোধ নিতে চাইছে নাতো?
দেখ এরকম কিছু হলে তো ভূল হবে। কারন ওইটা ডেয়ার ছিলো। আর ফিরোজ স্যারকে তো ওইরকম লোক মনে হয়না। এর উপর আজকে জানলাম ফিরোজ স্যার নাকি শাফখাতের ভাই। আমার বিষয়টা খ’ট’কা লাগছে। নাকি ফিরোজ স্যার ফিহার প্রেমে পড়লো। সবাই যেইটা বলাবলি করছে।
আমি কিছু বুঝতেছি না। আমরাও বাধা দিলাম না স্যারকে। স্যার আবার ফিহার কোনো ক্ষতি করবে না।
আমাদের থানায় ইর্নফোর্ম করা উচিত কি মোহনা?
আরে না। বিষয়টা এরকম নাও হতে পারে। ফিরোজ স্যারকে তো একবছর থেকে দেখছি। ওনি এইরকম লোক না।
( ★ )
দেখেন স্যার ক্যাম্পাসের সব ছেলে মেয়ের সামনে আমার হাত টেনে এভাবে গাড়িতে তুললেন কেনো? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? দেখেন স্যার আপনাকে বলছি গতকাল চু’মু দেওয়ার বিষয়টা ডেয়ার ছিলো। আমাকে ক্ষমা করেন স্যার, এই ভূল জীবনেও করবো না। প্লিজ স্যার আমাকে নামিয়ে দেন। আমি আপনার সঙ্গে এখন কোথাও যেতে পারবো না। আমার বাড়িতে সমস্যা, আমার আম্মা ফোন করেছিলো আমাকে বাড়িতে যেতে বললো।
ফিরোজ লাল চোখ করে বলে, তুমি এতো কথা বলো কেনো? চুপচাপ থাকতে পারোনা। আমি তোমাকে সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি। যেখানে তোমার যাওয়ার কথা ছিলো। গাড়িতে এইভাবে গলা ফাটিয়ে কথা বললে মানুষ ভাববে আমি তোমাকে কিডন্যাপ করছি।
ফিহা ফিরোজের কথা শুনে হাত পা গুটিয়ে ফেলে। মনে মনে বলে এই ব্যা’ডার মনে কি চলছে তাহলে? আমাকে কি সত্যিই কি’ডন্যাপ করতেছে। নাকি গতকালের পানিশমেন্ট দিতে চাইছে। এরপরে বলে অদ্ভুত তো স্যার। একটা মেয়ের অনুমতি ছাড়া তাকে গাড়িতে তুলেন কিভাবে? আমাকে এবার নামিয়ে না দিলে চিৎকার করা শুরু করবো। সবাই আপনাকে কিডন্যাপার ভাববে তাহলে। আপনি কি এমন কিছু ঘটাতে চান এখন। যদি নিজের সম্মান নিয়ে বাঁচতে চান তাহলে আমাকে নেমে দেন?
ফিহা এতো কথা বলো নাতো ড্রাইভিং করতে সমস্যা হয়। আমাকে তো গত ১ বছর থেকে ভার্সিটিতে দেখছো। আমাকে কি তোমার খারাপ মনে হয়। গতবছর ১ বছর থেকে তোমাদের ভার্সিটির লেকচারার হিসাবে আছি। এখনো কি আমাকে চিনতে তোমার অসুবিধে হয়। তোমার যেখানে যাওয়ার কথা সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি।
মানে? এইদিকের রাস্তায় তো আমার বাড়িনা। তাহলে এই রাস্তা দিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। দেখেন স্যার আজকে কোনো ভূল ছাড়াই আমাকে ক্লাসরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাস করাইছেন। এটা কি কম অপমান। আপনাকে চুমু দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।নেহাত একটা পচা ডেয়ার ছিলো। ক্যান যে পূরণ করতে গেলাম। চুমু দিয়ে তো নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলাম। আপনাকে দেখে সবাই ক্রাস খেতে পারে আমি নই। ধলাবিলাই এর দিকে মোটেও নজর যায়না।
ফিরোজ গাড়ির ব্রেক ধরে গাড়ি থামিয়ে চিৎকার করে বলে আমি ধলাবিলাই তাইনা। পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন দেয়। হ্যালো চাচ্চু তোমার মেয়ে তো আমার সঙ্গে যেতে চাইছে না। রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেলাম। বাবা ফিরোজ তুমি ওকে ফোনটা দাও? এই নেও তোমার মেয়ের সঙ্গে কথা বলো?
হ্যালো বাবা তুমি কোথায়। আমাকে না আমাদের ভার্সিটির লেকচারার ফিরোজ স্যার গাড়িতে তুলে নিছে। কিডন্যাপ করছে আমাকে। তুমি থানায় যেয়ে একটা জিটি করো।
ফিহা আমি যা বলছি শুনো একবার। তুমি গাড়িতে কোনো ঝামেলা করিয়ো না। আমি তোমাকে ফিরোজের সঙ্গে আসতে বলেছি। ও তোমাকে কিডন্যাপ করে নাই। তোমাকে তোমার দাদুর বাসায় নিয়ে আসছে। তোমার আম্মাকে শাফখাত আনতেছে।
দাদুবাড়ি মানে? তোমরা না বলেছিলে আমার দাদা দাদি নেই ওরা মারা গেছে। তাহলে কোন দাদু বাড়ির কথা বলছো?
ফিহা এতকিছু বলার সময় নেই। ফিরোজের সঙ্গে আসো। আল্লাহ হাফেজ।
” কি হলো ফিহা চাচ্চু যা বলেছে শুনছো তো। ”
” স্যার আমি কালা নই। দুই কানে স্পষ্ট শুনতে পাই। কিন্তু কিছুই বুঝলাম না। আমিতো জানতাম আমার আত্নীয় বলতে কেউ নেই। সবাই মারা গিয়েছে। হঠাৎ কোন দাদু বাড়ি যাওয়ার কথা বললো? ”
” কেউ মারা যায় নাই ফিহা। ওখানে গেলেই সবটা বুঝতে পারবে। এখন সিল্টবেল্ট টা বাঁধো। আমরা যাই। ”
ফিহার মাথায় অনেক প্রশ্ন রীতিমতো ঘোরাঘুরি করছে। মনে মনে বললো আজ এসব কি হচ্ছে আমার সঙ্গে? ২০ বছর বয়সে এসে জানতে পারছি আমার দাদু জীবিত। এসবের মানে কি? এই ফিরোজ স্যার বা বাবাকে চিনে কি করে? আমার দাদু বেঁচে থাকলে তাদের বাড়ি চিনে বা কি করে। আবার বাবাকে চাচ্চু বলছে এসবের মানে কি? নাকি ফিরোজ স্যার আমাদের কোনো আত্নীয় স্বজন। সবগুলে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ফিহার।
ফিহা মনে মনে বলে নানার বাড়ি পাকিস্তানে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার নানাভাই এর বাবা পাকিস্তানে চলে যায়। সেই সূত্রে তার মায়ের জন্ম পাকিস্তানে। কিন্তু বাবা পাকিস্তানে ব্যবসায়িক কাজে যেয়ে আমার মায়ের প্রেমে পড়েছিলো। নানাভাইয়ের সম্মতি নিয়ে আম্মাকে বিয়ে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। বাবা বলেছিলো তার কোনো ভাই নাই। আমার জন্মের আগে নাকি দাদা দাদি কলেরায় মারা গেছে? তাহলে আজকে এসব কি হচ্ছে হঠাৎ করে।
” ফিহা ফিরোজের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে স্যার আমি আমাকে প্রশ্ন করতে পারি! ”
” কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না আমি। আমি এই মূহুর্তে ক্লাস নেওয়ার অবস্থায় নাই। দাদু বাড়িতে গেলেই সব জানতে পারবা। ”
চলবে,,,,
®️ রিয়া_জান্নাত