#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_০৮
হসপিটালে এসে ফিহা রিসিভশন থেকে জেনে নিলো কাব্য কত নাম্বার রুমে আছে।জানা মাত্রই ফিহা দ্রুত কাব্যর কেবিনে যায়।কেবিনের ভেতর ঢুকতেই দেখে প্রিন্সিপাল স্যার,ফিরোজ সহ আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা সেখানে উপস্থিত।ফিহাকে দেখে ফিরোজের আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ফিরোজ আড় চোখে একবার ফিহাকে দেখে, প্রিন্সিপালের সাথে কোনো ব্যাপারে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে । ফিহা ,তিহা আর মোহনা কেবিনের এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ায়।ফিহা বেডের উপর কাব্যকে দেখে ;তার হাত পা আর মাথায় বেন্ডেজ করা। ফিহার খুব কষ্ট হচ্ছে কাব্যকে এই অবস্থায় দেখে। ফিহা মনে মনে ভাবছে,,
”একটু আগেও তো কত সুস্থ ছিল ।আর এখন হাত পা বেন্ডেজ করা।কে ওর সাথে এমন করেছে? যদি একবার পেতাম তারে তাহলে ওই খারাপ লোকটাকে কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলতাম।কতটা নির্দয় হলে কেউ কাউকে এভাবে মারে।আল্লাহ তুমি ওই লোকটার বিচার করো”
কথা গুলো ভেবে ফিহা কাব্যের কিছুটা সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।তখনি পাশ থেকে একজন শিক্ষিকা ফিহাকে এসে বলে ,,,
”তোমরা নিশ্চয় ভার্সিটি থেকে এসেছো?”
ফিহা মাথা নাড়িয়ে হুম বলে।
মেডাম বলে ,,,
”ওহ আচ্ছা। কাব্য এখন আগের থেকে সুস্থ আছে।ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়ায় ও ঘুমাচ্ছে।এখন ওর জ্ঞান ফিরবে না তোমাদের সাথে কথাও বলতে পারবে না ।আর তোমরাই বা কতক্ষন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে বলো?তোমাদের ও তো ক্লাস আছে তাই না।তাই এখন আমরা ভার্সিটিতে ফিরছি তোমরাও চলো পরে যখন কাব্যর জ্ঞান ফিরবে তখন আবার এসে দেখে যেয়ো।
ফিহা মেডামের দিকে একবার তাকিয়ে আবার কাব্যর দিকে তাকিয়ে বলে ,,
ম্যাম আমি এখন যাবো না।আমি কিছুক্ষন এখানে কাব্য ভাইয়ার কাছে থাকতে চাইছি। কাব্য ভাইয়া আমার পরিচিত। জ্ঞান ফিরে আমাকে দেখলে খুশি হবে। তাই ম্যাম আমি এখানেই থাকবো যতক্ষণ না ওর জ্ঞান ফিরছে। তিহা আর মোহনা বরং আপনাদের সাথে চলে যাক।
ফিহার কথা শুনে তিহা আর মোহনা তৎক্ষণাৎ বলে উঠে ,,
না ম্যাম আমরাও ফিহার সাথে থাকবো । ফিহাকে একা রেখে আমরা ভার্সিটিতে ফিরে যাবো না ”
মেডাম একবার ফিহারর দিকে তাকায় তো একবার তিহা মোহনার দিকে তাকায় ।তারপর প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” স্যার মেয়েগুলো এখানে থাকতে চাইছে। ”
প্রিন্সিপাল স্যার কিছু একটা ভেবে বলে ,,
” সমস্যা নেয় থাকুক ।আর কাব্যও চোখ খুলে ওদের দেখেলে কিছুটা আশ্বস্ত হবে। ”
প্রিন্সিপালের স্যারের কথায় মেডাম বলে,,
” ঠিক আছে স্যার।আর মেয়েরা চুপচাপ এই রুমেই বসে থাকবে এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করবে না।বুঝতে পেরেছো? ”
তিন জন একসাথে বলে ,,
” জ্বি ম্যাম। ”
তারপর সেখান থেকে সব স্যার ম্যাম চলে যায়।শুধু দু জন বাদে এক কাব্যর বড় ভাই আরেকজন হলো ফিরোজ । ফিরোজ কাব্যর বড় ভাইকে কি যেন বলছিলো সেদিকে ফিহার খেয়াল নেয় । ফিহা এক দৃষ্টিতে কাব্যকে দেখছে।ছেলেটার জন্য ফিহার ভীষণ মায়া হচ্ছে।বড় একটা ভাই ছাড়া কাব্যর এই পৃথিবীতে আর কেউ নেয়।প্রানোচ্ছল একটা ছেলে সারাক্ষন সবাইকে মাতিয়ে রাখে। অথচো ওর কোনো বন্ধু এখন পাশে নাই। ফিহার খুব খারাপ লাগছিলো কারণ এই ছেলেটা তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন ফিহাকে যাবতীয় হেল্প করেছিলো। একবারতো তার বাবাকে বড় একটা সড়ক দুঘর্টনা থেকে বাচিয়েছিলো। সম্পর্ক টা ভাইবোন পর্যায়ের নিছিলো একটা সময় ফিহা। কিন্তু কাব্য প্রস্তাব দেওয়াতে সম্পর্ক টা নষ্ট হয়ে যায়। তবে ফিহা কাব্যকে ভাই হিসেবে খুব ভালোবাসে। সে কখনো কাব্যর কোনো ক্ষতি চাইনি।আজ কাব্যকে এই অবস্থায় দেখে কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। ফিহা বুঝতে পারলো তার চোখের কোনায় পানি জমেছে।সে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে সেটা মুছে কাব্যর ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে,,
” ভাইয়া আপনি কি পুলিশ কমপ্লেইন করেছেন ?”
ফিহার প্রশ্নে কাব্যর ভাই প্রান্ত আর ফিরোজ দুজনেই ফিহার দিকে তাকায়। তারপর প্রান্ত বলে,,
” হুম পুলিশ কমপ্লেইন করা হয়েছে ।উনারা বলেছেন কাব্যর জ্ঞান ফিরলে ওর থেকে স্টেটমেন্ট নিয়ে তদন্ত করবে। ”
প্রান্তর কথায় ফিহা ছোট্ট করে বলে ,,
”ওহ”
( ★ )
কেবিনের ভেতরের পরিবেশটা নীরব। ফিহা তিহা আর মোহনা বেডের পাশে রাখা একটা সোফায় বসে আছে।তিন জনই চুপচাপ। প্রান্তকে ডাক্তার কিছু ওষুধ আনতে পাঠিয়েছে।তবে এই শান্ত পরিবেশে মাঝেও ফিহার বেশ বিরক্ত লাগছে আর ফিহার বিরক্ত লাগার কারণটা হলো তার ঠিক সামনে একটা চেয়ারে ফিরোজ বসে আছে। ফিহা বুঝতেই পারছে না যে এই ধলা বিলাইয়ের এখানে কি কাজ?সব টিচাররা চলে গিয়েছে তো উনি এখানে বসে আছেন কেন? ফিহা বেশ বিরক্ত নিয়ে ব্রু কুঁচকে ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বলে শান্তি নাই এই ধলাবিলাইকে আমার ভাই হতে হলো। এতদিন ভার্সিটি আর এখন সবজায়গায় ধলাবিলাইয়ের উপস্থিতি সহ্য হচ্ছেনা আর। প্রতিদিন তার গাড়িতে করে ভার্সিটিতে আসতেও কেমন লাগে। কিন্তু ফিরোজ আরামসে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে তার ফোন গুতাচ্ছে।কেউ যে তার উপর ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে সেদিকে তার খেয়াল নেয়।কিছুক্ষন বসে থেকে ফিরোজ কাকে একটা কল দিয়ে ফোনটা কানে লাগিয়ে বাইরে চলে যায়। ফিরোজ বাইরে যেতেই তিহা বলে উঠে ,,
” দোস্ত আমার না কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে ।বলছিলাম যে একটা কফি হলে ভালো হতো না? ”
তিহার র কথায় ফিহা ব্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে বলে,,
” যেখানে যাবি সেখানেই খাওয়ার চিন্তা করতে হবে তাই না ?”
তিহা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে ,,,
” একটু তো কফিই খেতে চেয়েছিলাম”
ফিহা বিরক্তি নিয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,
” ঠিক আছে বস তোরা ।আমি কফি নিয়ে আসছি ”
ফিহা উঠে দাঁড়াতেই মোহনা বলে উঠলো,,
”দোস্ত চল আমিও যাই তোর সাথে”
” না তুই এখানে থাক আমি একাই যেতে পারবো ।আর কেবিনের বাইরেই দেখলাম একটা কফি মেশিন আছে সেখান থেকেই কফি নিয়ে আসব। ”
কথাটা বলে ফিহা বাইরে চলে যায়।বাইরে যেতেই দেখে ফিরোজ উল্টো পাশে ঘুরে কার সাথে যেনো কথা বলছে।ফিহা কিছু না ভেবে কফি মেশিন থেকে তিন কাপ কফি নেয় ।কফি নিয়ে যেয় না ফিরে আসতে যাবে তখনি ফিরোজের একটা কথা শুনে সেখানেই থমকে যায়। ফিরোজ ফোনে কাকে যেন বলছে,,,
” এই তোদেরকে কি আমি মারতে বলেছিলাম। বলেছি জাস্ট একটু ভয় দেখাবি আর তোরা কি করেছিস ছেলেটাকে মেরে এক্কেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা করে ফেলেছিস।”
ওপাশ থেকে বলে ,
” সরি স্যার। আমরা বুঝতে পারিনি ”
ফিরোজ রেগে গিয়ে বলে,,
” ইডিউটের দল।একটা কাজও তোদের দিয়ে হয় না ।আমি একজন স্যার হয়ে আমার স্টুডেন্টের এমন অবস্থা কখনো চাইবো না।আমি জাস্ট চেয়েছিলাম তোরা শুধু ওকে একটু ভয় দেখাবি যাতে ও দ্বিতীয়বার আর এমন কাজ না করে। তা না করে তোরা ছেলেটাকে এত মেরেছিস যে এখন বেচারা আধ মরা হয়ে হসপিটালে পরে আছে ।আর সব চেয়ে বড় কথা হলো পুলিশ কেইস হয়েছে ।এখন কি করবি শুনি?”
ওপাশের লোকটা ভীত কণ্ঠে বলে,,
”স্যার আমাদের এইবারের মতো বাঁচিয়ে দিন প্লিজ।আর ওই ছেলেটাকে আমরা ভয়ই দেখাচ্ছিলাম। কিন্তু ওইতো ক্ষেপে গিয়ে উল্টো আমাদেরই মারতে শুরু করে। তাই না পেরে আমারাও ওকে মেরেছি।স্যার ভুল হয়ে গেছে আমাদের।প্লিজ আমাদের পুলিশের থেকে বাঁচান। প্লিজ স্যার!”
ফিরোজ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে ,,,
” আচ্ছা দেখছি কি করা যায়।”
কথাটা বলে ফিরোজ কল কেটে পেছনে ফিরে ফিহাকে দেখে পুরো ভুত দেখার মতো চমকে উঠে। ফিরোজ ভীত কন্ঠে বলে,,
” ফিহা তু তু তুমি এখানে ?”
ফিহা ফিরোজের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ওর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে,,
” কেন করলেন এমন? কি করেছিলো কাব্য যে আপনি ওর এই অবস্থা করেছেন?”
ফিহার কথায় ফিরোজ বুঝতে পারে যে ফিহাএতক্ষন ফিরোজের সব কোথায় শুনেছে। ফিরোজ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে ,,,
” ফিহা তুমি আমাকে ভুল বুঝছো ।আমি কাব্যকে আঘাত করতে বলেনি। আসলে আমি শুধু বলেছিলাম। কাব্যকে একটু ভয় দেখাতে কিন্তু ওরা না পেরে কাব্যকে আঘাত করে বসে! ”
ফিরোজের কথা শুনে ফিহা ধীর পায়ে ফিরোজের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে ,,,
” ভয়ই বা কেন দেখাতে চেয়েছিলেন?কি করেছিল ও যার জন্য আপনার ওকে ভয় দেখাতে হবে।আর আপনার ভয় দেখানোর চক্করে পরে ছেলেটার আজ এই অবস্থা।কেন করেছেন এমন?কি ক্ষতি করেছে কাব্য আপনার?বলুন কেন?কেন? ”
লাস্টের কথা গুলো ফিহা কিছুটা চিৎকার করেই বলে।তবে ফিহার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না ফিরোজ ।কি বলবে ও? ফিহাকে তো আর সত্যিটা বলতে পারবে না।বলতে পারবে না যে আজ সকালে কাব্য ফিহাকে প্রেম প্রস্তাব দেওয়াতে ফিরোজের খুব রাগ হয়েছিলো। সাথে অজানা কষ্ট গুলো ও মনে এসে ভিড়ছিলো।ফিরোজ যে চায় না ফিহাকে অন্য কেউ আই লাভ ইউ বলুক ।কেন বলবে ফিরোজের প্রেয়সীকে আই লাভ ইউ। এই অধিকার শুধু ফিরোজের আছে। ফিরোজ তার প্রেয়সীকে আই লাভ ইউ বলবে। আমার প্রেয়সীকে গোলাপ দেওয়ার অধিকার শুধু আমার। আর কারো নেই, কারো না।কথা গুলো ভেবে ফিরোজ চোখ মুখ শক্ত করে ফিহার দিকে তাকিয়ে বলে ,,,
” কাব্য অন্যায় করেছিল।তাই কাব্যকে আমি ভয় দেখতে চেয়েছিলাম যাতে করে সে দ্বিতীয় বার আর একই অন্যায় না করে!”
ফিরোজের কথায় ফিহা রেগে গিয়ে বলে ,,
” কি অন্যায় করেছিল কাব্য ?”
ফিহার প্রশ্নে ফিরোজ দায়সাড়া ভাব নিয়ে বলে ,,
” সেটা জানার সময় এখনো তোমার হয়নি ।যখন সময় হবে তখনি জানতে পারবে। ”
কথাটা বলে ফিরোজ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়।আর ফিহা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ,,,
” আমি আপনাকে ছাড়বো না ফিরোজ খান। কাজিন হোন তো কি হয়েছে। আপনার যে একটা জঘন্য রুপ আসে তা প্রকাশ করার দরকার । আমি পুলিশের কাছে সব কিছু বলবো যা আমি এতক্ষন শুনেছি।কাব্যের এই অবস্থার জন্য শুধু মাত্র আপনি দায়ী ।আপনাকেও এর শাস্তি ভোগ করতে হবে। ”
চলবে..
®️ রিয়া জান্নাত