প্রিয় আসক্তি পর্ব-০৮

0
300

#প্রিয়_আসক্তি 🔥
তিতলী
পর্ব,,,,৮
❤️❤️❤️❤️❤️❤️

সকাল ৯:৩০ মিনিট

হসপিটালের করিডর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো রিয়া। প্রিয়তার বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে মেয়েটা আজ। প্রিয়তার কন্ডিশন বেটার তাই সে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। কাল রাতেই প্রিয়তার গুলি লাগার কথা শুনে হসপিটালে এসেছিলো সে। লিফট দিয়ে নিচে এসে বের হতে যাবে তখনই “ধাম” করে কিছুর সাথে ধাক্কা লাগলো কপালে। রিয়া চোখ মুখ কুঁচকে বিরক্ত হয়ে বললো,,,

:-কোন হালায় লিফটের দরজার সামনে দেয়াল খাড়া করে দিলো রে,,,উফফ আমার কিউট নাক টায় গেলো,,,

বলেই সামনের দিকে তাকিয়ে বেকুব বনে গেলো রিয়া। বুকে দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাঁজ করে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে। ডক্টর আবিরকে যেহেতু রাতে দেখেছিলো তাই চিনতে সমস্যা হলো না রিয়ার।
তবুও রাগি কন্ঠে বলে,,,

:-এই যে বাজে ডাক্তার লিফটে ওঠার আগে দেখবেন না ভেতরে কেউ আছে কিনা। কেউ বের হচ্ছে কিনা!!!
দিলেন তো ধাক্কা দিয়ে আমার কিউট নাকটা বোঁচা করে।

আবির যেনো বোকা বনে গেলো রিয়ার কথা শুনে,,, মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,

:-আপনি লিফট থেকে নামার আগে দেখবেন না যে কেউ সামনে আছে কিনা। না দেখে এমন ভাবে নামছিলেন যেনো আপনি এ্যামবুলেন্স। নিজ গতিতে চলবেন আর বাকিরা আপনাকে সাইড দিতে দিতে যাবে। আর হ্যা কি যেনো বলছিলেন!! আমি আপনার কিউট নাক ধাক্কা দিয়ে বোঁচা করে দিয়েছি??? ফর কাইন্ড ইনফরমেশন আপনার আপনার নাক এমনিতেই বোঁচা। আর না কিউট। দেখলেই মনে হয় কেই থাবড়া দিয়ে ধ্যাবড়া করে দিয়েছে!!!

:-কিহ এতো বড় অপমান!! আসলেই আপনি একটা বাজে ডাক্তার,ফাজিল একটা অসভ্য লোক। মেয়েদের কিভাবে সম্মান করতে হয় জানেন না!!

:-ওহ হ্যালো মিস. আপনার ব্যাবহার আগে ঠিক করেন। বড়দের কিভাবে সম্মান করতে হয় জানেন না?? বেয়াদব কোথাকার!!
বলেই লিফটের বাটন প্রেস করে হাওয়া হয়ে গেল আবির। রিয়া বেকুবের মতো কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে রাগে ফুঁসফুঁস করতে করতে চলে গেলো।

_______

হসপিটালে প্রিয়তার কেবিনে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে বিভোর। প্রিয়তাকে এক সেকেন্ড চোখের আড়াল করে অফিসে যেতে নারাজ সে। বাকিদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে সে। পিয়ুস বিভাকে কলেজে দিয়ে অফিসে যাবে। প্রিয়তার মা বাবা সকালে একবার এসে দেখে গেছে। বিভোরের দায়িত্ব জ্ঞান সম্পর্কে তাদের ভরসা আছে তাই আর আপত্তি না করে বাড়ি গেছেন। বিভোরের বাবা মাও দুপুরে আসবেন বলেছেন।
প্রিয়তা মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়েছে। আর বিভোর তার সামনেই সোফায় বসে কাজ করছে। আর কিছুক্ষণ পর পর প্রিয়তার দিকে তাকাচ্ছে।
এমন সময় আবির রাউন্ডে আসে। প্রিয়তার রুমে ঢুকে বিভোরকে দেখে বলে,,

:- তুই আছিস দোস্ত!! কি অবস্থা প্রিয়তার??

:-এইতো সকালে মেডিসিন দেয়ার পর ঘুমিয়েছে। চেকআপ করবি? ডাকবো?

:-আরে না না!! ডাকতে হবে না। এরকম কেসে ঘুমানো একটা পজেটিভ সাইন। শুধু ক্ষত জায়গাটা ডেসিং করতে হবে। আমি নার্সকে বলে দিচ্ছি।
আবির কেবিন থেকে বের হতে গিয়ে কি ভেবে আবার ফিরে আসে। তারপর বিভোরকে বলে,,,

:- আ,, দোস্ত বলছি প্রিয়তার একটা ফ্রেন্ড আছে না কাল রাতে এসেছিল!! মেয়েটার নাম কিরে??

বিভোর হালকা ভ্রু কুচকে বললো,,

:-কার কথা বলছিস রিয়া???

:-ও রিয়া!! হবে হয়তো।

:- হ্যাঁ কাল তো ওর ফ্রেন্ড বলতে রিয়াই এসেছিল। কেন বলতো দোস্ত!!

:-নাথিং!! জাস্ট এমনিতেই !!

বিভোর কিছুটা দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বলে,,,

:- নাথিং নাকি সামথিং সামথিং দোস্ত!

আবির মুচকি হেসে বলে,,

:-আরে নারে দোস্ত! ভীষণ বাঁচাল মেয়েটা।। তবে হ্যাঁ কিউটও বটে!!

:-ওওওওও,,,কিউট না???

আবির হাসতে হাসতে বেরিয়ে যাই কেবিন থেকে।

_________

দুপুরে সবাই আবার হসপিটালে আসে। প্রিয়তার কেবিনে বসে বিভিন্ন রকমের গল্প করতে থাকে। নার্স এসে প্রিয়তাকে মেডিসিন দিয়ে, ইনজেকশন দিয়ে হাতে ডেসিং করে বোরোতে নেই!! ঠিক সেই সময় রিয়া কেবিনে ডুকতে নেয়। নার্সের ট্রলির সাথে ধাক্কা লেগে যায়। হাতের কব্জিতে লেগে অনেকটা ছিলে যায় হাতে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। এটা দেখে প্রিয়তা “রিয়া” বলে আঁতকে ওঠে। প্রিয়তাকে উদ্বিগ্ন হতে দেখে বিভোর এগিয়ে এসে বলে,,

:-কি যে করিস রিয়া। দেখে তো আসবি। দেখতো কতটা ছিলে গোলো।

রোসনি আহমেদ এগিয়ে এসে বলেন,,

:-আহা। দেখে আসবি তো রিয়া। আব্বু যা তো ওর হাতে ফ্রাস্টেট করে নিয়ে আয়।

_______

আবিরের সামনে বসে রাগে গজগজ করছে রিয়া। আবির রিয়ার হাতে তুলায় স্যাভলন লাগিয়ে ডেসিং করে দিচ্ছে।
বিভোর রিয়াকে তখন আবিরের কেবিনে নিয়ে এসেছিলো।
রিয়ার হাতে ডেসিং করতে হবে বলে বেরিয়ে যায়।

কিভাবে এটা হলো সেটা জানতে চাইলে রিয়া সবকিছু খুলে বলে। তখন থেকে রিয়াকে কথা শোনাচ্ছে আবির।

:-তা মিস রিয়া না টিয়া হুয়াট এভার!! আমি তো ভাবছিলাম আপনি শুধু বাঁচাল আর বোঁচা। এখন দেখছি আপনি বান্দরনীও।

:-কি বললেন আপনি?? আমি বান্দরনী?? আপনি কি তাহলে?? বাজে ডাক্তার একটা।

রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে আবির। রিয়াকে রাগিয়ে বেশ মজা পাচ্ছে আবির। দুষ্টুমি করে বলে,,

:-আচ্ছা আমি বাজে ডাক্তার তাই না!! তাহলে বাজে ডাক্তারের মতোই ট্রিটমেন্ট করি!!
বলেই স্যাভলন লাগানো তুলা রিয়ার ক্ষত জায়গায় জোরে চেপে ধরে,,,

:-আআআআআ,,, অসভ্য লোক।

:- আগে বাজে ডাক্তার আর এখন অসভ্য?? তাহলে এবার অসভ্যর মতো কাজটাও করি!!
বলেই চেয়ার থেকে উঠে রিয়ার দিকে ঝুঁকতে থাকে। আবিরকে ঝুঁকতে দেখে ঘাবড়ে যায় রিয়া।
চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। আবির কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হেসে উঠে,, বলে

:-রিয়া টিয়া আপনি দেখি বাঁচাল, বোঁচা,বান্দরনী সাথে ভিতুও।
বলে হাসতে হাসতে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।
আর রিয়া আবিরের কথায় টাস্কি খেয়ে ওর যাওয়ার পথের দিকে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে!!!

_____

বেলা ৩:৪৫

অনেকক্ষণ ধরে পিয়ুসের জন্য অপেক্ষা করছে বিভা। কলেজে আজকে এক্সট্রা একটা ক্লাস ছিল। সেটা শেষ করে আসতে একটু দেরি হয়েছে বিভার। বিভা এদিক-ওদিক তাকিয়ে পিয়ুষের গাড়ি খুঁজতে থাকে। মনে মনে ভাবে এতক্ষণ তো চলে আসার কথা এখনো আসছে না কেনো।

তারও প্রায় ৫ মিনিট পর পিউসের গাড়ি এসে দাঁড়াই বিহার সামনে।
পিয়ুষ গাড়ির দরজা খুলে বিভাকে বসতে বলে। বিভা গাড়িতে উঠে বসতেই জানালা খুলে দেয় পিয়ুস। বিভা এসির হওয়ার সহ্য করতে পারে না।
বিভা পিয়ুসের পাশে বসতেই পিয়ূস এক হাতে বিভা কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।তারপর আদুরে গলায় বলে,,

:- সরি একটু দেরি হয়ে গেলো !তোমাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না?? খুব টায়ার্ড লাগছে??

:-মাথা নাড়াই বিভা। যার অর্থ হ্যাঁ!!

পিয়ুস গাড়ির কেবিনেট থেকে একটি পানির বোতল আর একটা বিস্কিট এর প্যাকেট হাতে দিয়ে বলে ,,,

:-বাসায় পৌঁছতে ততক্ষণে এগুলো খাও ভালো লাগবে।

বিভা কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,,

:- বাসায় যাবো মানে !!হসপিটালে নিয়ে চলুন।

পিউস চোখ রাঙিয়ে বলে,,

:- একদম না!! এখন বাসায় যাবে । শাওয়ার নিবে খাওয়া-দাওয়া করবে তারপর হসপিটালে নিয়ে যাবো ।

বিভাও মনে মনে ভাবে কথাটা যুক্তিযুক্ত। তার শাওয়ার নেয়ার প্রয়োজন। তাই আর আপত্তি না করে চুপচাপ বিস্কুট খেতে থাকে!!

_______

সন্ধ্যা ৭:২০

বিভোর প্রিয়তার পাশে বসে ফ্রুট কেটে কেটে দিচ্ছে প্রিয়তার হাতে। প্রিয়তা মুখ লোটকে চুপচাপ সেটা গিলছে। খাবে না বলে বিভোরের কাছে আগেই ঝাড়ি খেয়েছে সে।

প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে বিভোর নরম গলায় বলে,,

:- এরকম করছিস কেনো জান? এগুলো না খেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হবি কি করে?তোকে এভাবে দেখতে কি আমার ভালো লেগছে বল??
নাকি সারা জীবন হসপিটালে থাকার প্ল্যান করেছিস?? এরকম কোন প্ল্যান থাকলে বল। হসপিটালেই বিয়ে বাসর বাচ্চা কাচ্চা সব সেরে ফেলি।

প্রিয়তা কিছু না বলে ভেংচি কাটে। এই দুদিনে বিভোর কেমন নির্লজ্জ হয়ে উঠেছে।মুখে কিছুই আটকাচ্ছে না।

বিভোর হালকা হেসে প্রিয়তার গাল টেনে দেয়।
আবার ফল কাটাই মনোযোগ দেয়।

প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বিভোরের দিকে।ভাবে, একটা মানুষ একজনকে এতটা ভালো কি করে বাসতে পারে!! বিভরকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না প্রিয়তা। ভালোবাসা কি এই মানুষটাই তো শিখিয়েছে তাকে।
নিচু হয়ে ফল কাটলেও বিভোর দিব্যি বুঝতে পারছে প্রিয়তা তার দিকে তাকিয়ে আছে। বিভোর হালকা কেশে বলে,,

:-তোর কি মনে হচ্ছে না প্রিয় আজ দুদিন একটু বেশিই নজর দিচ্ছিস আমার দিকে তুই!!
বিভরের কথায় বেকুব বনে যাই প্রিয়তা।

To be continue,,,,,,