#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭
আজ রবিবার। ব্যস্ত নগরীতে রিকশায় চড়ে নিজের গন্তব্যে যাচ্ছে চিত্রা নামক রমনী।আজকে ক্লাস নেই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আজ নিশীথ নামক পুরুষটির সাথে দেখা করবে সাজিয়া তাই সঙ্গে তার ও যেতে হচ্ছে। সাজিয়া তাকে ছাড়া যাবে না।তার ও যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো।নিশীথ কেমন তা জানতে হবে।ভার্সিটির অপর পাশে রিকশা ওয়ালা নামিয়ে দিলো তাকে ভাড়া মিটিয়ে রাস্তা পার হবে তখন দেখলো একটা বাচ্চা ছেলেকে মারছে কিছু লোক মিলে।চিত্রা দ্রুত পায়ে সেখানে গেলো।সবার কথা শুনে বুঝলো ছেলেটি চুরি করছিলো।ধরা পরেছে তখন।চিত্রা কোনো মতে লোকদের হাত থেকে বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে বেঞ্চে বসালো।বাচ্চা ছেলেটি হাঁপাচ্ছে।
অনেকই মেরেছে।নাক দিয়ে র*ক্ত পরছে। বাচ্চাটিকে দেখে মায়া হলো চিত্রার।ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছে দিলো। পানি খাওয়ালো।ছেলেটি শান্ত হতে জিজ্ঞেস করলো,,
“চুরি কেনো করছো?”
ছেলেটি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।হতভম্ব হলো চিত্রা। হঠাৎ কি হলো ছেলেটির এমন ভাবে কাঁদছে কেনো?ছেলেটি কান্না থামানোর চেষ্টা করলে।এরপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,,
“আমার আম্মা অনেক অসুস্থ আপা। ঔষধ লাগবে।টাকা নাই পকেটে একটিও।আমার অসুস্থ আম্মা ঘরে কাতরাচ্ছে, কেমনে সহ্য করমু আপা।তাই উপায় না পাইয়ে চুরি করতে নামছি”
চিত্রার খারাপ লাগলো।এতোটুকু ছেলে সে কিনা মায়ের জন্য চুরি নামক নোংরা কাজও করতে রাজি।চিত্রা ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,
“এমন আর করো না। দেখলে তো চু’রি করলে মানুষ কীভাবে নির্দয়ের মতো মারে। এটি ভালো কাজ না।তোমার বাবা কোথায়?”
“আমার আব্বা নেই আপা।আমি জানি আপা কি করমু বলেন, সৎ পথে টাকা রোজগার করতে চাইছি তাও সম্ভব হয়নি।ফুল বিক্রি করে চায়ের দোকানে কাজ করে কিন্তু দিন শেষে ওই বড়লোকদের লা’থি খেতে হয়।”
চিত্রা ঘরির দিকে তাকালো।সাজিয়া অপেক্ষা করছে। ক্লাস ও শুরু হবে।ব্যাগ হাতড়িয়ে দেখলো বারোশো টাকা আছে।সেখান থেকে ছেলেটিকে এক হাজার টাকা দিয়ে বলল,,
“এই টাকাটা নিয়ে আগে মায়ের ওষুধ কিনবে।তারপর খাবার কিনবে বুঝেছো!আর চুরি করবে না। সৎ পথে কিছু একটা করে খাবে।আসি দেরি হচ্ছে আমার”
ছেলেটি ছলছল চোখে তাকিয়ে চিত্রাকে বলে,,,“ধন্যবাদ আপা আপনারে”
চিত্রা মৃদু হেসে ভার্সিটিতে ঢুকে পরলো।আষাঢ় রিকশায় করে যাচ্ছিলো কলেজের উদ্দেশ্যে।ঘটনাটি দেখলো সে।আনমনে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।মেয়েটি নিজেকে যতোটা শক্ত দেখায় তার থেকেও অধিক নরম তার মন। মনমানসিকতাও ভীষণ ভালো। চিত্রা এবং সাজিয়া ক্লাস করে বের হয়।পাশের রেস্টুরেন্টে বসবে তারা।সাজিয়া অস্থিরতায় হাত চেপে ধরছে চিত্রার।চিত্রা এটা ওটা বলে শান্ত করছে।দু’জনের মাঝে বিস্তর পার্থক্য তবুও তারা প্রিয় বান্ধবী। স্বভাব মিল নেই বললেই চলে।রিকশায় চড়ে যাচ্ছে দু’জন। সাজিয়া ঘেমে গিয়েছে।দুপুরের খাবার খাবে এখানে তারা।বাজে হয়তো দেড়টা।
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটালো চিত্রা।ধীর পায়ে হেঁটে সামনে এগোলো। সাজিয়াকে কাল ফোন দিয়ে নিশীথ দেখা করতে বলেছে।গতকালই ফোন কথা হয়েছে ফোনে।সাজিয়া না ও করতে পারিনি। নিশীথকে দেখে সাজিয়া এবং চিত্রা তার দিকে এগিয়ে যায়।নিশীথকে চিনে চিত্রা। দেখেছে এলাকায় কয়েকবার। এর থেকে বেশি কিছু জানে না।নিশীথ সামনে তাকিয়ে সাজিয়ার সাথে চিত্রাকে দেখে থতমত খেয়ে যায়।সাজিয়া এবং চিত্রা এসে বসে পরে।নিশীথ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।
“মিস্টার নিশীথ কি হয়েছে আপনার?”
নিশীথ নড়েচড়ে বসলো।আষাঢ় আসলো না কেনো এখনো তা নিয়ে চিন্তিত। সে বেশ লাজুক স্বভাবের। তার জন্যই আষাঢ়কে আসতে বলেছে।চিত্রার কথায় ভড়কে গিয়েছে বেচারা। চিত্রার সঙ্গে কি সম্পর্ক সাজিয়ার বুঝে উঠতে পারলো না। তখনই মিষ্টি কন্ঠে কেউ শুধালো,,
“নিশীথ সাহেব ও আমার বান্ধবী।আসলে একা আসতে অস্বস্তি হচ্ছে তাই ওকে নিয়ে এসেছি।আপনি কিছু মনে করবেন না”
জোরপূর্বক হেসে নিশীথ বললো,,,“না না আমি কিছু মনে করিনি।”
নিশীথ নিজেকে নিজেই বলছে শেষমেশ সে কিনা চিত্রার বান্ধবীর কাছে গিয়ে পরলো।চিত্রা বিরক্ত হয়ে বলে,,
“দু সেকেন্ড পরপর আপনি কোথায় হারিয়ে যাচ্ছেন বলুন তো।”
“দুঃখিত। আসলে আমি নিজেও একটু অস্বস্তিতে ভুগছি তাই আরকি।আপনারা কি খাবেন বলুন”
“ আমি স্পষ্টভাসী একজন মেয়ে। যা বলার তা সরাসরি বলতে পছন্দ করি আমি।হয়তো চিনেন ও আমাকে আপনাদের এলাকাতেই থাকি।আপনাকে কিছু কথা বলবো।”
“জি জি বলুন”
“দেখুন আপনি হয়তো জানেন সাজিয়ার মা নেই।বাবা থেকেও নেই। এতিম মেয়ে মামার কাছে বড় হয়েছে। বুঝতেই পারছেন কীভাবে বড় হয়েছে।মেয়েটার সুখ বলতে জীবনে কোনো শব্দ নেই। প্রিয়জন বলতে আমিই আছি। আমি কখনেই নিজের বোনের ক্ষতি চাই না। সে আমার বান্ধবী হলেও বোনের থেকে কোনো অংশে কম নয়।বড্ড ভালোবাসি তাকে। সে আমার খুব কাছের কেউ। আমি ছেলেদের খুব একটা বিশ্বাস করি না। তবে আপনায় আমার খারাপ মানুষ মনে হয়নি।কিছুদিনের মধ্যে আপনারা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। তাকে আগলে রাখার চেষ্টা করবেন,ভালোবাসবেন আশা করি। আপনাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি আপনি খুব পছন্দ করেছেন সাজিয়াকে। আপনার মাও বেশ ভালো মনের মানুষ। নিশ্চয়ই সাজিকে নিজের মেয়ের মতো রাখবে আমি যতটুকু শুনেছি। বিশ্বাস করুন যদি আমি কখনো জানতে পারি সাজিয়া কষ্টে আছে সেদিন আপনার এমন হাল করবো যে কোনো নারীর দিকে তাকাতেও ভয় হবে”
চিত্রা থামলো। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেছে সে। নিশীথ মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তারা চিত্রাকে যতটা রুক্ষ স্বভাবের ভাবতো সে তেমন নয়।নিশীথ মুগ্ধ হলো চিত্রার কথাতে।পিছনে যে কেউ একজন এসে দাঁড়িয়ে কেউই টের পায়নি।আষাঢ় দাঁড়িয়ে শুনছিলো চিত্রার বলা প্রতিটি কথা।সে কিছুক্ষণ আগেই এসেছে এখানে।আষাঢ় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চিত্রা নামক রমনীর দিকে।নিশীথের চোখ পরলো আষাঢ়ের দিকে।ও আষাঢ়কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।এরপর বলে,,
“কিরে কখন আসলি?বোস দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”
নিশীথকে কারো সাথে কথা বলতে দেখে পেছনে ফিরে তাকালো দু’জন। চিত্রা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। এই লোকটার সাথেই কেনো তার অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা হয়।[লেখিকা ইশা আহমেদ ]সাজিয়া বেশ অবাক হলো।আষাঢ় নিশীথের পাশে চেয়ার টেনে বসলো। চিত্রা তাকায়নি তার দিকে আর।নিশীথ বলল,,
“ও আমার বন্ধু আষাঢ় মাহমুদ
আষাঢ় সাজিয়াকে দেখে মৃদু হেসে শুধালো, “আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন ভাবি?”
সাজিয়া ভাবি বলায় এজটু অস্বস্থি হলো। তবে আষাঢ়ের কথায় হেসে বলল,,,,“ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাইয়া।জি ভালো আছি আপনি?”
“আমিও ভালো আছি। তো কেমন লাগলো আমার বন্ধুকে?”
সাজিয়া অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। নিশীথের সামনে কিভাবে সে এর উত্তর দিবে। যদিও নিশীথকে তার ভালো লেগেছে। হুট করে চিত্রা বলে উঠে,,,
“আমি বাড়িতে যাচ্ছি।আমার দেরি হয়ে গিয়েছে অলরেডি। আপনি সাজিয়াকে বাড়িতে পৌঁছে দিবেন। এতোটুকু জ্ঞান হয়তো আছে আপনার। আসি”
“চিত্রা আপনি থাকুন। সাজিয়ার আমাদের সাথে একা থাকলে অস্বস্তি হতে পারে!”
চিত্রা সাজিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।তবে এখানে থাকতেও ভালো লাগছে না। তার কারণ হয়তো আষাঢ়।তবে থেকে গেলো না সাজিয়ার কারণে। নিশীথ খাবার অর্ডার দিলো।খাবার আসলে চিত্রা নিজের মতো খেলেও সাজিয়া খেতে পারেনি।নিশীথ বিষয়টি খেয়াল করলেও সবার সামনে বলতে পারেনি।চিত্রা সাজিয়াকে কয়েকবার বললেও সাজিয়া খেতে পারেনি।বিদায় বেলায় নিশীথ সাজিয়াকে রিকশায় উঠিয়ে দিলো। সে যেতে পারতো তবে অস্তিত্ব হবে ভেবে যায়নি।চিত্রা নিজেও একটি রিকশায় চড়ে চলে গেলো।আষাঢ় এবং নিশীথ হাঁটছে পাশাপাশি এখন বাসায় যাবে না তারা।
“সাজিয়াকে কেমন লেগেছে তোর”
“মেয়েটা হয়তো একটু লাজুক। ভালো মনে হয়েছে আমার।ওকে আমি এর আগে চিত্রাদের বাড়িতে দেখেছি”
নিশীথ আফসোস করে বলে,, “শেষমেষ কি না চিত্রার বান্ধবীই আমার বউ হবে”
“হ্যাঁ ভালোই হয়েছে। তাকে কিছু বললেই চিত্রা এসে তোর ফর্সা গালগুলো লাল করে দিবে”
“অভিশাপ দিলাম তোরে তোর বউ যেনো চিত্রা হয়। কথায় কথায় বলবে আষাঢ় এটা করো না ওটা করো না। না হলে বকা তো ফ্রি। আর মেয়ে ফাইট ও পারে।দেখবো আষাঢ় আমাদের কাছে আসছে নিজের নাক ফাটিয়ে।”
নিশীথ হো হো করে হেসে উঠলো কথাগুলো বলে।আষাঢ় আনমনে বিড়বিড় করে বলল,,
“আমি তো এটাই চাই।চিত্রা আমার বউ হোক।আমার প্রান নাশিনী, আমার হৃদহরনী হোক।তাকে ছুঁয়ে দেখার অধিকার হোক আমার। তোর অভিশাপ যেনো সত্য হয়!”
“কিছু বললি আষাঢ়”
আষাঢ় মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে কিছু বলেনি। সে তো একমনে চিত্রার কথাই ভেবে যাচ্ছে। নিশীথ বকবক করলো কিছুক্ষণ। বিয়েটা সামনের শুক্রবার। আষাঢ় একটা বিষয়ে খুব খুশি চিত্রা তার আশপাশে তো থাকবে নিশীথের বিয়েতে। যদিও কথা বলা তো দূরে থাক তাকাবেও না। তাতে কি চোখের তৃষ্ণা তো মিটাতে পারবে সে । এটাই যথেষ্ট। রিকশায় চড়ে আষাঢ় মনে মনে আওড়ালো,,
“আমি আপনার প্রতি দূর্বল হয়ে পরছি চিত্রা। এই যে আপনার আশেপাশে থাকার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে থাকে। এক পলক দেখার জন্য অস্থির হয়ে পরি।কেনো এমন হয় বলুন তো!কিভাবে মুক্তি পাবো এ সব থেকে”
#চলবে