#এক_আকাশ_অভিমান
#মার্জিয়া_জাহান_চাঁদনী
#পর্ব : ১২
কলেজে পা রাখতেই একটা মেয়ে এসে ঝাপটে ধরলো তরী কে। তাল সামলাতে না পেরে টাস করে ঘাসের ওপর পরে যায় মেয়ে দুটো।
” আরে নদী কি করছিস? ছাড়!!”
” না ছাড়বো না। আগে বল এত দেরি করে কেনো এলি?
সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।আজ প্রথম দিন কলেজের আর আজই তুই লেট করলি?”
তরী নিজের উপর থেকে নদী কে উঠিয়ে হাত পা ঝেড়ে বললো
” আমি ঠিক টাইমেই এসেছি। তুই একটু তাড়াতাড়িই এসেছিস গাঁ*ধী।”
নদী মাথা চুলকে বললো
” ওই একটু এক্সাইটমেন্ট আরকি। প্রথম দিন তো এক্সপিরিয়েন্স টেস্ট করছিলাম!”
” এক্সাইটমেন্ট এর জন্য দেরি হয় জানতাম। আর তুই তাড়াতাড়ি চলে এসেছিস। আচ্ছা চল ক্লাসে যাই।”
” হুম চল।”
তরী আর নদী ক্লাসে চলে গেলো। এতক্ষণ তাদের পুরো দৃশ্য দুইতালা থেকে পর্যবেক্ষণ করছিল শ্রাবণ।ওদের ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে যেতে দেখে বুঝলো ওরা নতুন।
শ্রাবণ ও নিজের ক্লাসে চলে গেল।
পরের দিন গাছতলায় বসে ফাইনাল ইয়ারের সিনিয়র দের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল শ্রাবণ।
হটাৎ একটা মেয়েকে দেখে হৃদস্পন্দন থমকে গেছে। বুকে হাত দিয়ে দেখলো কয়েকটা হার্ট বিট মিস করে গেছে। আরে এটা তো সেই মেয়েটা!!
ধীরো পায়ে এগিয়ে আসছে তরী। কাধে বেগ আর হাতের বইটা দুহাতে বুকে জড়িয়ে গাছতলার দিকে এগিয়ে গেলো।
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের আর শেষ বর্ষের ছেলেরা বসে আড্ডা দিচ্ছে। একটু সংকুচ হলো তরীর। তবুও কিছুটা দুর থেকেই ডাক দিল
” ভাইয়া!”
শ্রাবণ তরীর কাছে ছিল। তাই ভেবেছে মেয়েটা হয়তো তাকেই ভাইয়া বলে ডেকেছে। মনে মনে বললো
” ইসস রে! এই মেয়ে তো দেখি ভাইয়া ডেকে আমার ফিলিংসের চল্লিশা করে দিয়েছে। কেনো রে মাইয়া ভাইয়াই কেনো ডাকতে হবে তোদের।”
শ্রাবণের ভাবনার মাঝেই রুহুল উঠে তরীর কাছে গিয়ে বললো
” হ্যা বলো তরী। হটাৎ এখানে এলে যে? কোনো দরকার ? ক্লাস শেষ তোমার ? বাড়ি যাবে ? দাড়াও বাইক বের করছি।”
” না ভাইয়া।মায়ের শরীল খারাপ করেছে। সেই কখন থেকে তোহা তোমাকে কল দিচ্ছে তুমি ফোন ধরছো না।তাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে।”
তরীর কথায় পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো ৪০ টা মিসড কল।আর মোবাইল টা সাইলেন্ট করা।
রুহুল তড়িঘড়ি করে বাইক বের করে তরীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
তরী যেতেই শ্রাবণ মনে মনে ভাবলো
” যাক বাবা আমাকে ভাইয়া বলে ডাকে নি। বাঁচা গেলো। আর এটা কি রুহুল ভাইয়ের বোন নাকি?
বাপ রে সিনিয়র এর বোন। কৌশলে পঠাতে হবে।”
ক্লাস শেষ করে বের হতে গিয়ে একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেলো নদী।হাতের বইটা নিচে পড়ে গেল।
শ্রাবণ বইটা উঠিয়ে নদীর হাতে দিয়ে বললো
” সরি মিস। আমি খেয়াল করি নি। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
এগেইন সরি।”
বলেই শ্রাবণ দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।শ্রাবণের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নদী।
” ছেলে টা কত্ত কিউট ! আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেছি। এই ছেলেকেই আমি চাই। ”
এর পর থেকে শ্রাবণ বিভিন্ন বাহানায় তরীর সাথে কথা বলতো, আর নদী শ্রাবণের সাথে।মাঝে মাঝে তিন জন গাছতলায় বসে আড্ডা দিতো। কেউ কিছু বললে সিনিয়র এর বোন তাই এক্সট্রা কেয়ার করছি এই বলে শ্রাবণ কাটিয়ে দিতো।
তরীকে এক নজর দেখার জন্য রোজ কলেজে আসতো শ্রাবণ। কলেজ অফ হলে ছুটে যেত উত্তরের মাঠে তরীর বাড়ির কাছে।কখনো বট তলায় দাঁড়িয়ে থাকতো তরীর কোচিং শেষ হলে একনজর দেখার আশায়।
ধীরে ধীরে তরী ও শ্রাবণের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। তরীর কিশোরী মনে শ্রাবণের জন্য অনুভূতির সৃষ্টি হয়। মনের আঙ্গিনায় রঙিন প্রজাপতি উড়ছে।
শ্রাবণ তরী একে অপরকে ভালবাসে সেটা দুজন বুঝতে পারে কিন্তু কখনো বলা হয় নি।
এই দিকে নদী ও বুঝতে পেরেছে শ্রাবণ তরীকে ভালোবাসে নদী কে না।
ঈর্ষা জন্মালো নদীর মনে। তরীর প্রতি রাগ ও হলো। তরী কি বুঝতে পারে নি শ্রাবণকে নদী ভালোবাসে?
নিজের ভালোবাসা কে পেতে যা খুশি করতে রাজি নদী। প্রয়োজনে বন্ধুত্ব ছিন্ন করবে।
এভাবেই চলছিল ত্রিকোণ প্রেমের অধ্যায়।
হটাৎ একদিন কলেজে গিয়ে ফাঁকা রুমে কিছু একটা দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় তরী।
শ্রাবন কে নদী জড়িয়ে ধরে আছে। এই দৃশ্য দেখে পায়ের তলার মাটি সরে গেছে তরীর। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো শামীম দাড়িয়ে আছে।
এই দৃশ্য শামীম ও দেখেছে। চোখে অশ্রু নিয়ে শামীম কে বলেছিল এই কথা যেনো কেউ জানতে না পারে। শামীম ও কথা দিয়েছিল।
ভালোবাসার মানুষ আর প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর প্রতি
#এক_আকাশ_অভিমান নিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেছিলো কলেজ থেকে। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে ভুল রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছে তরী। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। এক হাতে মুছে নিচ্ছে। বেহায়া জল আবারও গড়িয়ে পড়ছে।
ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিল অনিক।রাস্তায় একটা জরুরী কল আসায় গাড়িটা সাইড করে ফোনে কথা বলছিল। এমন সময় চোখ গেলো শুভ্র রঙের পোশাক পরা এক রমণী এগিয়ে আসছে এই দিকে। বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে লম্বা চুলগুলো উড়ছে। সাথে তাল মিলিয়েছে শুভ্র রঙের উড়না।
চোখের জলে কাজল লেপ্টে গেছে। মুখে বিরাজ করছে এক অজানা মায়া।কি নাম দিবে এই পরীর?
মায়া পরি? উহু! মায়াবতী।
কিন্তু মেয়েটার চোখে জল কেনো। কেউ কি যত্ন করে মেয়েটার মন ভে*ঙে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে?
বুকের ভিতর অজানা ব্যাথা অনুভব করলো অনিক।
ওই কাজল রাঙা চোখে জল মানায় না।
হটাৎ খেয়াল হলো তরী ভুল রাস্তায় চলে এসেছে। কিন্তু এই জায়গা টা চিনতে পারছে না। কাউকে জিজ্ঞেস করবে ভেবে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো তার দিকেই এক পুরুষ তাকিয়ে আছে। এগিয়ে গেলো সেই পুরুষের দিকে।
মেয়েটি কে এগিয়ে আসতে দেখে অনিকের বুকের ভেতর ধুক বুক করছে। অনুভূতিরা যেনো আনন্দের মিছিল শুরু করেছে।
” আসসালামু আলাইকুম। এটা কোন জায়গা বলতে পারবেন ?”
কাপা কাপা কণ্ঠস্বর শুনে অনিকের হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হলো।
” ওয়ালাইকুম আসসালাম! এটা রহমত পুর।”
” রায় পুর এর রাস্তা টা কোন দিকে?”
” ডান দিকে গেলেই পাবেন। আপনি কি এই এলাকায় নতুন ?”
” জি না । রায় পুরেই আমার বাড়ি।এই দিকে ভুল করে চলে এসেছি। আগে কখনো এই দিকে আসি নি তাই চিনতে অসুবিধা হচ্ছিলো।”
” কিছু মনে না করলে আপনার বাবার নাম টা কি জানতে পারি? না মানে ওই দিকে আমাদের আত্মীয় আছেন।”
” আলীম মোল্লা। আর আপনাকে ধন্যবাদ। আসি।”
তরী চলে গেলো। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে তরীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল অনিক।
” তুমি আলীম চাচার মেয়ে।যাক বেশি কষ্ট করতে হবে না তোমার জন্য। আগে জানতে হবে কি কারণে তোমার চোখে জল।”
সেদিনের পর থেকে শ্রাবণ কিংবা নদী কারো সাথেই যোগাযোগ করে নি তরী।কলেজেও পা রাখে নি।
শ্রাবণ অনেক চেষ্টা করেও পারে নি। তরী এড়িয়ে গেছে সব সময়। একদিন কোচিংয়ে গিয়েছিল। সেদিনও নদীর সাথে শ্রাবণ কে দেখেছে।
পড়ার টেবিলে বসে নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত ডাইরি টে কিছু লিখছিল তরী।তখন রুমে প্রবেশ করেন শারমিন বেগম।
চায়ের কাপ টা টেবিলে রেখে তরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
” কি করছিস তরী? নে চা টা খেয়ে নে। দেখতো তোর পছন্দ মতো হয়েছে কি না।আমি অত কড়া লিকারের চা পারি না তাও আজ একটু চেষ্টা করলাম।”
তরী অবাক হলো। মা তো এত ভালো ব্যাবহার করেন না কখনো। মায়ের আদর পেয়ে তরীর চোখে অশ্রু ভীর করলো।
শারমিন বেগম তরীর পাশে বসে বললেন
” আমি তোর মা। তোর ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। সেটা তুই মানিস?”
তরী চুপ করে মাথা নাড়ালো। যার অর্থ ” হ্যাঁ “।
শারমিন বেগম খুশি হয়ে বললেন।
” আমি তোর বিয়ে ঠিক করেছি। কাল পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে।”
” আমি এখন বিয়ে করতে চাই না মা ।”
” আমি তোর সাথে ভালো ব্যবহার করি, মায়ের মতই আদর স্নেহ করি সেটা চাস তুই?”
” হ্যা মা আমি চাই তোহার মতো আমাকেও ভালোবেসে কাছে টেনে নাও। আমাকে স্নেহ করো শাসন করো।”
” তাহলে বিয়ের জন্য তৈরি হ। কাল পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে পছন্দ হলে আকদ করে রেখে যাবে।”
তরী কিছু না বলে চুপ করে রইলো। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরছে। সবার প্রতি অভিমান জমা হলো। বুক টা ফেটে যাচ্ছে। শুনেছি কাউকে বললে নাকি মন হালকা হয়। কিন্তু কাকে বলবে তরী। আপন মানুষ টা যে প্রতারণা করলো। বোনের মতো বান্ধবী ও বেইমানি করলো। তরী যদি আগে জানতো শ্রাবণ তাকে নয় নদী কে ভালোবাসে। তাহলে কোনো দিন ও তাদের মাঝখানে যেত না।…..
#চলবে ইনশা আল্লাহ……..!!
#এক_আকাশ_অভিমান
#মার্জিয়া_জাহান_চাঁদনী
#পর্ব :১৩
” আপনি কি এই বিয়েতে রাজি?”
প্রশ্নটা শুনে চোখ তোলে তাকালো মানুষটার দিকে।
আরে এটা সেদিনের সেই পুরুষ!! এখানে কি করছেন?
তাহলে কি এনার সাথেই মা বিয়ে ঠিক করেছেন? অবাক হলো তরী।
” আপনি এখানে ? ”
মুচকি হাসলো অনিক। তার পর তরীর দিকে তাকিয়ে বললো
” হুম আমি!! পাত্রী দেখতে এসেছি।”
তরী কিছু না বলে চুপ করে রইলো।অনিক আবার জিজ্ঞেস করলো
” আপনি কি সেচ্ছায় এই বিয়েতে রাজি?”
তরী কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো ” জি আমি রাজি।”
” দেখুন মিস, আপনার ইচ্চার বিরুদ্ধে যদি কিছু হয় আমাকে বলতে পারেন। আমি নিজ দায়িত্বে বিয়েটা ভেঙে দিবো, আপনার গায়ে আঁচ আসতে দিবো না।মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু বলবেন না প্লিজ।”
” আমাকে কেউ জোর করে নি। আমি নিজের ইচ্ছায় মত দিয়েছি।”
” জীবনে কেউ আছে আপনার ? আপনি বুঝতে পারছেন তো আমি কি বলছি।”
অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো তরী। শ্রাবণের মুখ টা চোখের সামনে ভেসে ওঠেছে। ভিতরটা বিষাদে ছেয়ে গেছে নিমিষেই। চোখটা বন্ধ করতেই শ্রাবণ নদীর জড়িয়ে ধরার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সাথে সাথেই চোখটা খুলে অনিকের দিকে তাকালো একপলক।
” ছিল কেউ একজন। এখন আর নেই। তবে চিন্তা করবেন না সে আমার অতীত, আমার বর্তমান ভবিষ্যতে তার প্রভাব পড়বে না।”
” তাহলে চোখটা মুছুন। আপনার মুখ থেকে এই কথাটাই শুনতে চেয়েছিলাম। আর যেনো আপনার চোখে অশ্রু না দেখি। এখন থেকে হাসবেন, আমার জন্য হাসবেন। আমি নিজ দায়িত্বে আপনার মুখে হাসি ফোটাব। আপনার ভালো বন্ধু হয়ে উঠবো।সুখে দুঃখে পাশে থাকবো। সুখে না রাখতে পারি অন্তত দুঃখে রাখব না কথা দিলাম। এখন চলুন সবাই আমাদের অপেক্ষা করছে।”
বসার ঘরে গেলো অনিক তরী। রাবেয়া বেগম তরীকে নিজের পাশে বসিয়ে এক জোড়া স্বর্ণের বালা হাতে পরিয়ে দিলেন।
” মাশা আল্লাহ!! আমার ছেলের পছন্দের তারিফ করতে হয়। এই রকম মেয়েই তো খুঁজছিলাম আমি।
আলহামদু লিল্লাহ আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আকদ টা আজই সেরে ফেলতে চাই যদি আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকে।”
শারমিন বেগম জানালেন তাদের আপত্তি নেই।
অবশেষে তরী অনিকের আকদ সম্পন্ন হলো। ৩ দিন পর এসে তরীকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।
যাওয়ার সময় অনিক বলে গেলো ” নিজের খেয়াল রাখবেন। আসছি।”
শ্রাবণের পরীক্ষা। হল পড়েছে ঢাকায়।
তাই ঢাকায় চলে গেছে পরীক্ষার কিছু দিনের জন্য।
এই দিকে বড় ভাইয়ের বিয়ে সে আসতে পারবে না এটা নিয়ে আফসোসের অন্ত নেই।
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত দিন চলে এসেছে। প্রস্তুতি চলছে দুই বাড়িতেই।
তরীর বিয়ে আজ খবর টা কানে আসা মাত্রই অবাক হলো শামীম। আজ শামীমের পরীক্ষা নেই শ্রাবণের সাবজেক্ট ভিন্ন হওয়ায় তার পরীক্ষা পড়েছে আজ।
দ্রুত কল লাগলো শ্রাবণের নাম্বারে কিন্তু শ্রাবণের ফোন বন্ধ। হয়তো পরীক্ষার হলে তাই ফোন বন্ধ।শামীম অনবরত চেষ্টা চালিয়ে গেলো কিন্তু ফলাফল শূন্য।
এইদিকে তরীর বিয়ে শেষ। বিদায় নিলো নতুন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। অশ্রু ভর্তি চোখ নিয়ে পারি জমালো নতুন ঠিকানায়।
পরীক্ষা শেষ করে হাসি মুখে বের হলো শ্রাবণ।
” যাক পরীক্ষা শেষ। কালই ফিরে আসছি তরী।তোমার কাছে ফিরছি। আর অভিমান করে দূরে থাকতে দিবো না। নিজের অনুভূতির কথা তোমাকে জানাবো। আপন করে নিবো তোমায়। আসছি আমি।”
হোস্টেলে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে শ্রাবণ। ফোন অন করার কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।রাতে ঘুমানোর আগে মনে পড়লো ফোন অফ করা। সাথে সাথে অন করল।তখনই শামীমের কল এলো।রিসিভ করতেই শামীমের উত্তেজিত কন্ঠ কানে এলো
” তুই ফোন বন্ধ করে রেখেছিস কেনো সারাদিন থেকে।এখন তোর সময় হয়েছে ফোন অন করার? অন না করলেও হতো। ”
” এই ভাবে কথা বলছিস কেনো তুই? কিছু হয়েছে নাকি? ”
” কিছু হওয়ার বাকি নেই আর। তরীর বিয়ে হয়ে গেছে আজ। সারা দিন থেকে তোকে ট্রাই করেছি কিন্তু তোর ফোন বন্ধ। আমি বিয়ে আটকানোর জন্য গিয়ে ছিলাম তখন জানতে পাড়ি ওর বিয়ে ৩ দিন আগেই হয়ে গেছে আজ শুধু তুলে নিয়ে গেছে।”
শ্রাবণের হাত থেকে ফোন টা পড়ে খন্ড বিখণ্ড হয়ে গেছে। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেছে। শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ব্যাগ টা নিয়ে ছুটে চললো স্ট্যান্ডের দিকে।
তরীর বিয়ে হয়ে গেছে খবরটা শুনা মাত্রই বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠলো নদীর মুখশ্রী তে।
” যাক আপদ নিজেই ধুর হয়েছে। আমার কষ্ট করার প্রয়োজন হয় নি। এক ডোজেই কাজ হয়ে গেছে।এইবার শুধু শ্রাবণের মনে আমার জায়গা করে নেওয়া বাকি।”
শ্রাবণের পৌঁছাতে সকাল হয়ে গেছে। বাড়ি না ফিরে ছুটে গেলো তরীর বাড়ির দিকে। সেখানে গিয়ে আশাহত হলো। রুহুল শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে বলল
” আমি কিছুটা হলেও জানি তোমাদের ব্যাপারে। তুমি ভালো ছেলে তাই আমি বাধা প্রধান করি নি। ভাই হয়েও বোনকে শাসন করি নি। যখন জানতে পারলাম তোমাদের মধ্যকার সব সম্পর্ক শেষ তোমার জন্য আমার বোন কষ্ট পেয়েছে তখন থেকেই তোমার প্রতি আমার রাগ জন্ম নিয়েছে। সেসব বাদ দাও। তরী এখন বিবাহিত। তার নতুন জীবন শুরু হয়েছে। আশা করি তুমি কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করবে না। আমার বোন টা সুখে থাকুক এটাই চাই। এক ভাই তোমার কাছে অনুরোধ করছে দয়া করে আমার বোনের জীবনের নতুন করে ঝামেলার সৃষ্টি করো না।”
ক্ষত বিক্ষত হৃদয় নিয়ে ফিরে এলো শ্রাবণ। বাড়িতে এসে দেখলো বাড়িটা চারদিকে সাজানো। শ্রাবণের মনে পড়লো কালতো অনিক ভাইয়ের বিয়ে ছিল। আজ বৌভাতের অনুষ্ঠান। শ্রাবণের কিছু ভালো লাগছে না। বাড়ি ফিরে নিজের কক্ষে চলে গেলো।
তাহেরা বেগম ছেলেকে ফিরতে দেখে খুশি হয়ে ছেলে সাথে কথা বলতে গেলেন । ছেলের বিধ্বস্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে অন্তর কেপে উঠলো।
” কি হইছে বাপজান? তোর মুখের এই অবস্থা কেন?”
” কিছু না মা। ক্লান্ত আমি। ঘুমাবো একটু।”
তাহেরা বেগম কিছু না বলে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। শ্রাবণ ঘুমিয়ে গেলো অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই।
বিকেল বেলা ঘুম ভাঙলো শ্রাবণের। চোখ খুলে দেখলো অনিক দাড়িয়ে আছে।
” কিরে বিদ্যাসাগর মহাশয়। পরীক্ষা ছিল বলে না হয় বিয়েতে আসিস নি। বাড়িতে থেকেও রিসিপশনে আসলি না? আমি তো জানতামই না তুই সকালে বাড়ি ফিরেছিস। আর কাল থেকে ফোন বন্ধ কেনো তোর?”
” সরি ভাই! টায়ার্ড ছিলাম তাই ঘুমিয়ে পড়েছি।”
” হইছে চল তোর ভাবি কে দেখবি। ভাবির থেকে সালামি আদায় করা লাগবে না নাকি? রিনি তো সব নিয়ে নিলো।”
” পরে যাবো ভাই। আগে ফ্রেশ হয়ে নেই।”
” না এক্ষনি চল।”
অনিক টেনে নিয়ে গেল শ্রাবণ কে।
আলমারিতে জিনিস পত্র গুছিয়ে রাখছিল তরী।
ঠিক সেই সময় পিছন থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে থমকে গেছে।
” আসসালামু আলাইকুম ভাবী।”
পিছন ফিরে তাকাতেই শ্রাবণকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো, শ্রাবণের অবস্থা টা ঠিক তেমন। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ভাইয়ের স্ত্রী রূপে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। চোখ টা জ্বলে উঠলো, বুকের ভিতর হাহাকারে ভরে গেছে। মনে হচ্ছে হৃদয় টাকে কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে।
” ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
অনিক বলল
” দেখে নাও তরী।এটা আমার একমাত্র ভাই শ্রাবণ। তোমার দেওর।”
তরী অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে।
ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে শ্রাবণ মাথা ব্যাথার বাহানা দেখিয়ে চলে আসে।
নিজের কক্ষে এসে জিনিস পত্র ভাঙচুর করে শ্রাবণ।
তাহেরা বেগম কক্ষের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ছেলের এই কাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে গেলেন।ছেলের কাছে গিয়ে দেখলেন শ্রাবণের চোখ মুখ ফুলে আছে। গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। শান্ত হয়ে মেঝেতে বসে আছে। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আদুরে বিশ্বস্ত ছুঁয়া পেতেই মাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো শ্রাবণ।
” সে আমাকে ঠকিয়েছে মা। আমার ঘর অন্ধকার করে অন্যের ঘরের প্রদীপ সে। কেনো এমন করলো সে?
ও মা তুমি এনে দাও না তাকে। আমি আর রাগ করবো না। কারো সাথে কথা বলবো না শুধু একটা বার এনে দাও।”
ছেলের এই অবস্থা দেখে তাহেরা বেগমের রূহ কেপে উঠলো।
” আমি যে করেই হোক তাকে এনে দিবো। বল কে সেই মেয়ে ।”
” পারবে না মা। সে যে তোমারই আরেক ছেলের বউ।”
” তরী ?”
সেই থেকেই তাহেরা বেগম তরীকে সহ্য করতে পারেন না। তার ভাষ্যমতে তরীর জন্য শ্রাবণ নরক যন্ত্রণা সহ্য করেছে।
আর শ্রাবণের একাকীত্বের সুযোগ টা নদী নিয়ে নিজের জায়গা তৈরি করেছে।
_____________
গুটি গুটি পায়ে মায়ের পা জড়িয়ে ধরলো চাঁদ। মেয়ের স্পর্শ পেয়ে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো তরী।
এতক্ষণ বারান্দায় দাড়িয়ে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে ব্যাস্ত ছিল।
মেয়েকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো
” কি হয়েছে আমার চাঁদ মাম্মার?”
চাঁদ নিজের পেটে হাত দিয়ে বুঝলো তার খিদে পেয়েছে।
তরী ও হেসে মেয়েকে খাওয়াতে নিয়ে গেলো।
” জীবন সুন্দর যদি বেচেঁ থাকার একটা নির্দিষ্ট কারণ থাকে।”
#চলবে ইনশা আল্লাহ……!