এক আকাশ অভিমান পর্ব-১১

0
105

#এক_আকাশ_অভিমান
#মার্জিয়া_জাহান_চাঁদনী
#পর্ব : ১১

সম্পর্ক একটা অদৃশ্য সুতার মতো!!
কখনো সেই সুতার জোরে সম্পর্ক টিকে থাকে, আবার ঠান পড়লেই সুতা ছিঁড়ে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
সম্পর্কের সুতা শক্ত করে আগলে রাখতে হয়, বিশ্বাস দিয়ে মজবুত করে নিতে হয়।
বিশ্বাস না থাকলে সুতা কেনো শিকল দিয়েও ঘর বেধে রাখা যায় না।।

শ্রাবণ তরীর সম্পর্ক লোক সমাজে টিকে আছে। মনের বিচ্ছেদ তো অনেক আগেই হয়ে গেছে। সেই খবর মন ছাড়া কেউ জানে না।

সময় থেমে থাকে না কারো জন্য। ভালো মন্দ নিয়েই গড়িয়ে চলে আপন গতিতে।
সাথে নিয়ে যায় কারো সুখ , কারো সপ্ন , কারো সংসার। আবার কাউকে দিয়েও যায় সুখী করে।।

আজ ৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে শ্রাবণ তরীর বিয়ের।
অথচ তাদের সম্পর্ক সেই আগের মতোই। কোনো উন্নতি হয় নি তাদের। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন এখনও তরীকে খুঁচিয়ে বেড়ায়।

” সুখেই তো আছে ব্যাশ। আগের স্বামীডা অকালে প্রাণ হারাইলো আর মাইয়াডা দিব্যি বিয়া কইরা সুখেই আছে। আর আমাগো শ্রাবণরেও বলিহার একটা আবিয়াইত্তা পোলা ওইয়া এক্কান বিয়াইত্তা মাইয়ারে বিয়া করছে। তাও বড় ভাইয়ের বউরে।
তা মাইয়া ডা কি পোয়াতি নাকি?
বাচ্চা কাচ্ছা ওইবো কবে?”

গ্রামের মানুষের মুখে এসব শুনে সয়ে গেছে তরীর।
এখন আর কিছু গায়ে লাগে না। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন অভ্যস্ত।

শ্রাবণ এখন সিদ্বান্তহীনোতায় ভুগছে। কি করা উচিৎ তার?
তরী কে মেনে নিবে নাকি নদী কে ছেড়ে দিবে।
তাহলে যে নদীর প্রতি অন্যায় করা হবে!!
৪ টা বছর সেই মানুষ টা পাশে থেকেছে,, অপেক্ষা করেছে।
এই দিকে তরী বিবাহিতা স্ত্রী। সেটা অমান্য করার সাহস তার নেই।

চাঁদ সবে হাঁটতে শিখেছে!! আদো আদো ভাষায় কথা বলে। যদিও কথা স্পষ্ট নয়। হাঁটলে হাজারটা হুচুট খায়।
মায়া ভরা কণ্ঠে মাম্মা বলে, দাদ্দা বলে, দাদ্দি বলে। রিনি কেও ” ফু “বলে ডাকে। শামীম কে ” তা” বলে ডাকেশুধু শ্রাবণকেই কিছু ডাকে না। সেটা দেখে বড্ডো আফসোস হয় তার। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ইচ্চা হয় চাঁদ তাকেও বাবা বলে ডাকবে।
অনুতাপ হয় কেনো সে এই মেয়েটা কে একটু সময় দিলো না? কেনো তার বাবা হয়ে উঠতে পারলো না?
তরীর উপর রাগ থেকে বাচ্চাটার দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে।
রাগ হলো শ্রাবণের। অবশ্যই সেটাও তরীর উপর।
কেনো সে মেয়ে কে শিখালো না শ্রাবণ কে বাবা ডাকতে? এটা অন্যায় করেছে তরী। উহু! শুধু অন্যায় নয় ষ*ড়*য”ন্ত্র করেছে করেছে তরী।
নিয়ত করলো আজ থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে। চাঁদকে সময় দিবে।

দক্ষিণের মাঠে খোলা আকাশের নিচে বসে আছে তরী। পাশেই দাড়িয়ে আছে নদী। মাঠের কাছ গেষে বয়ে গেছে এক খরস্রোতা নদী। সচ্ছ তার জল।সেই জলের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে তরী।
তরীর নিরবতা দেখে রাগে সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠলো নদীর।
মেয়েটা এত শান্ত কি করে থাকতে পারে ভেবে পায় না নদী।
অধৈর্য হয়ে নদী বললো

” শ্রাবণের জীবন থেকে কবে সরে যাবি তুই? কবে মুক্তি দিচ্ছিস তাকে?”

হাসলো তরী। নদীর পানিতে একটা ডিল ছুড়ে বললো
শরীয়ত মোতাবেক সে আমার স্বামী। আইন অনুযায়ী সে আমার স্বামী। আমার মেয়ের জন্ম নিবন্ধনে বাবার জায়গায় তার নাম।চাইলেও আমি মুছে ফেলতে পারবো না সেটা।বিয়ে যখন হয়েই গেছে আর আমার মেয়ের লিগ্যাল বাবা সে তাই তাকে ছাড়ার কোনো দরকার আমি মনে করি না।অন্তত আমার মেয়ের জন্য তো একদমই ছাড়বো না।”

তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো নদী।রাগে নিজের জামা খামচে ধরলো। তবুও প্রকাশ না করে করে বললো

” তুই না বলেছিলি শ্রাবণ কে বিয়ে করতে চাস না। তার পর বললি ছেড়ে দিবি। এখন বলছিস ছাড়তে পারবি না?তুই শ্রাবণকে মেনে নিয়েছিস তাই তো?তোদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে?”

” না। একদমই না। শ্রাবণ কে আমি এখনও মানতে পারি নি আর সে আমাকে মানতে পেরেছে। তাকে আমি স্বামী হিসাবে না মানলেও সমাজে সেই আমার স্বামী। আমার মেয়ের বাবা। আমার মেয়ের জন্য হলেও শ্রাবণকে ছাড়ার প্রয়োজন মনে করি না।তাছাড়া এখানে আমার সম্মানের প্রশ্ন আছে , দুই দিন পর পর বিয়ে করবো একজন মারা যাবে আরেকজন কে ছেড়ে দিবো সেটা হতে পারে না।এমনিতেই মানুষ আমার গায়ে কাদা ছুঁড়ছে এর পর তো গোবর ছুড়বে।
তবে তোর জন্য আমার বড্ডো আফসোস হচ্ছে নদী। যার জন্য এত কিছু করলি এত অন্যায় করলি আমাদের বন্ধুত্ব ছিন্ন করলি আজ তাকেই বেধে রাখতে পারলি না। ইসস রে মায়া হয় তোর জন্য আমার।
পেয়েও হারিয়ে ফেললি তুই।তোর একদমই উচিত হয় নি শ্রাবন কে বিয়ে করতে দেওয়া। তোর তাকে বেধে রাখা উচিত ছিল। যদিও আমিও বেধে রাখতে পারি নি। তাহলে সে প্রথম থেকেই আমার হতো। আচ্ছা তুই চেষ্টা কর দেখ শ্রাবণের সাথে কথা বলে সে কি বলে। আজ আসি আমার মেয়ে টা কান্না করছে।”

” বেধে রাখতে পারলে তুমিও হতে আমারই , শুধু আমারই …গান গাইতে গাইতে স্থান ত্যাগ করলো তরী।

তরীর গান যেনো নদীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
ধপ করে সেখানেই বসে পড়লো নদী।
চুল গুলো খামচে ধরে বললো

” আগুন আর ঘি কে একসাথে থাকতে দেওয়া একদমই উচিত হয় নি আমার।।”

কিছু একটা ভেবে কল দিলো শ্রাবণের ফোনে।


চাঁদ ওর দাদীর কাছে ঘুমুচ্ছে।তরী বিছানা ঠিক করছে।
শরীর টা বড্ডো ক্লান্ত লাগছে। ইদানিং মাথার যন্ত্রণা বেড়েছে।অল্পতেই ক্লান্তি চলে আসে।অথচ আগে কত কাজ একা হাতে সামলে নিতো কখনো এত ক্লান্তি আসে নি। সকালে রান্না করে স্কুলে যাওয়া।এসে আবার রান্না। কাজ করে পড়তে বসা। সৎ মায়ের সংসার ছিল। জন্মের পর মা মারা গেলেন দেখা শুনা করার জন্য বাবা আরেকটা বিয়ে করেন। প্রথম দিকে ভালোই ব্যাবহার করেন শারমিন বেগম। একটা মেয়ে সন্তান হবার পর ভালোবাসা একটু কমে গেছিলো। শারমিন বেগমের আগের পক্ষের একটা ছেলে কে নিয়েই বিয়ে করেছিলেন তিনি।
কিছু বছর পর বাবা ও মারা যান। তখন থেকেই শারমিন বেগমের ব্যাবহার পাল্টে গেছিলো। অবশ্য ছোট বোন তোহা কখনো খারাপ ব্যাবহার করে নি একজন বড় বোনের মতোই সম্মান করতো। ভাই রুহুল খারাপ ব্যাবহার না করলেও কখনো বোন বলে কাছে টেনে নেয় নি। চুপ চাপ থাকতো সব সময়। মাঝে মধ্যে এটা সেটা এনে দিতো দুই বোন কে। মাঝে মাঝে মায়ের অগোচরে তোহা বাসন মেজে রাখতো। ঘর ঝাড়ু দিয়ে রাখতো। তরীর জন্য ভালো মন্দ খাবার তুলে রাখতো।
তরীর বাবা আলীম সাহেব আন্দাজ করেছিলেন তিনি না থাকলে তরীর উপর হয়তো দুঃখের বর্ষণ হতে পারে। সে জন্য নিজের যা কিছু ছিল তার সিংহ ভাগ তরীর নামে বাকি টা রুহুল আর তোহার নামে করে দিয়েছেন।
এই নিয়ে অবশ্য শারমিন বেগমের রাগের অন্ত ছিল না কিন্তু রুহুল বা তোহা কোনো প্রতিক্রিয়া করে নি।

হতাশার নিঃশ্বাস ফেললো তরী।বাবার কথা মনে হতেই চোখের কোন জল জমা হলো।
পৃথিবী তে বাবা আর ভাই ছাড়া কোনো পুরুষ নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসে না। স্বামী হচ্ছে ভাগ্যের ব্যাপার। যার ভাগ্য সহায় আছে সেই হয়তো বিশ্বাস যোগ্য জীবনসঙ্গী পায়। আর যার ভাগ্য খারাপ সে আর পেলো কই।

চোখের জল মুছে নিলো তরী। সেই সময় শ্রাবণের আগমন ঘটে। টাস করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে তরীকে নিজের দিকে ঘুরায়।
গাল চেপে ধরে বলে
” ভেবেছিলাম তোমার সাথে আর কোনো খারাপ ব্যাবহার করবো না আর গায়ে হাত তুলবো না। কিন্তু তুমি তো সেটা চাও না তাই না?
খুব শখ না আমার বউয়ের অধিকার পাওয়ার? আমাকে স্বামী হিসাবে কাছে পাওয়ার? ঠিক আছে আজ তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিবো। আমিও আমার অধিকার টা বুঝে নিবো। তার জন্য কি কি করতে হবে টা তো ভালো করেই জানো তুমি।”

তরীর বুঝতে বাকি রইলো না নদী শ্রাবণকে কিছু বলেছে। মনে মনে ভয় হলো তরীর। শ্রাবণ উল্টা পাল্টা কিছু করবে না তো?
তরীর ভয়কেই সত্যি প্রমাণিত করে শ্রাবণ বিছানায় ফেললো তরীকে।নিজের অধিকার টা বুঝে নিলো।
তরী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও পারে নি।
শ্রাবণ রাগে হিংস্র হয়ে উঠেছিল।

কনকনে শীতের মধ্যে টানা ২ ঘণ্টা গোসল করলো তরী। পানির ফোঁটা গুলোও যেনো শ্রাবণের ছোঁয়া মুছে দিতে পারছে না। ঝর্না ছেড়ে তার নিচে বসে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।

” কি নাম দিব এই সম্পর্কের? জোর করে বললেও ভুল হবে। শ্রাবণের অধিকার কাছে তাই সে সেটা বুঝে নিয়েছে। তবুও কেনো তরীর এত কষ্ট হচ্ছে। ভালোবেসে হলে হয়তো মেনে নিতে পারতো। কিন্তু এই ভাবে না হলেও পারতো…..!!

#চলবে ইনশা আল্লাহ..!!

#এক_আকাশ_অভিমান
#মার্জিয়া_জাহান_চাঁদনী
#বোনাস_পর্ব

সকাল থেকে শ্রাবণকে এড়িয়ে চলছে তরী। শ্রাবণের দিকে তাকাতেও ঘৃনা হচ্ছে। আগে যতটুকু সম্মান করতো আজ সেটা ঘৃণায় পরিণত হয়েছে।

শ্রাবণ বিষয়টা বুঝতে পেরেছে। নিজের কাজের জন্য নিজেই অনুতপ্ত। এরকমটা সে চায় নি। রাগের বসে মস্ত বড় ভুল করে বসেছে। তরীকে সম্মান না করলেও অসম্মান করার কথা ভাবতেও পারে না।একটু সময় নেওয়া উচিত ছিল। নদীর কথা শুনে এই পদক্ষেপ টা নেওয়া উচিত হয় নি।

শ্রাবণের ভাবনার মাঝেই তরী রুমে আসলো। হাতে মেয়ের জন্য খাবারের বাটি। বিছানায় বসে চাঁদ কে খাওয়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু চাঁদ কিছুতেই খাবে না।
তরী অনেক করে বলার পরেও চাঁদ এই খাবার খাবে না সে চকলেট খাবে।। রাগ হলো তরীর মেয়েকে শাসিয়ে বললো

” মেজাজ খারাপ করো না চাঁদ। চুপ চাপ খেয়ে নাও নাহলে মার দিবো। অনেক জালাচ্ছ তুমি। ”

মায়ের বকা খেয়ে ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিলো। সোফায় বসে সবটা দেখলো শ্রাবণ। বুঝতে পারলো শ্রাবণের উপরের রাগ মেয়ের ওপর দেখাচ্ছে।
উঠে গিয়ে চাঁদকে কোলে নিলো। চাঁদ ছল ছল দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ কোলে নেওয়াতে অবুঝ বাচ্চাটাও হয়তো অবাক হয়েছে।
চাঁদ কে নিয়ে সোফায় বসিয়ে একটা চকলেট এনে দিলো। তার পর একটু করে চাঁদকে খাইয়ে দিল।
খাওয়া শেষ হতেই রাবেয়া বেগম এসে চাঁদ কে নিয়ে গেলেন।

তরী ও রুম ত্যাগ করতে চাইলে শ্রাবণ আটকে দেয়।
তরীর সামনে গিয়ে বলে

” কাল রাতে আমার মাথা ঠিক ছিল না তরী। আমার এইরকম টা করা উচিত হয় নি। রাগের মাথায় ভুল করে বসেছি। অনুমতি ব্যাথিত তোমাকে ছোঁয়া আমার উচিত হয় নি।”

তরী মুচকি হাসলো।

” আপনার অধিকার আছে আমাকে ছোঁয়ার। আপনি আপনার অধিকার টা বুঝে নিয়েছেন। তাতে আমি বাধা দিতে চেয়ে ভুল করেছি। আপনি পুরুষ মানুষ, নারীর মন বুঝার ক্ষমতা সব পুরুষের নেই।
আপনি সেই সব পুরুষের কাতারে পড়েন যারা মনে করে পুরুষের ইচ্ছাই সব। নারীর আবার কিসের অধিকার। নারীর অনুমতি ব্যাথিত ছোঁয়া কে কি বলে জানেন ?
রে*প বলে। বাংলায় ধ*র্ষ*ণ।
আর বিয়ের পর হলে ম্যারিটাল রে*প।
সমস্যা নেই আপনি নিজের অধিকার ফলিয়েছেন। আর আমি হয়েছি রে*পে*র শিকার। কত মেয়েই তো হয় তাই না? আমিও না হয় তাদের মধ্যে একজন হলাম।
বৈবাহিক সম্পর্কে এসব কমন ব্যাপার। তবে আমাদের সম্পর্ক টা তো আর পাঁচটা স্বাভাবিক ভাবে নেই।যদি হতো আমি সেচ্ছায় আপনার কাছে সমর্পণ করতাম।”

তরী চলে গেলো।
তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাথার চুল খামচে ধরলো শ্রাবণ। নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে। তরীর বলা প্রতিটা কথা সত্য। তাহলে সে সত্যি কা*পু*রু*ষ।
শামীম তাহলে ঠিকই বলেছিল।


সেদিনের পর কেটে গেছে বেশ কিছু দিন। শ্রাবণ তরীর সম্পর্ক আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে।তরী আগের তুলনায় আরো বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। শ্রাবণ ও নিজের চাকরি নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করে। নদীর সাথেও তেমন যোগাযোগ নেই।

শ্রাবণের বাড়িতে সপরিবারে উপস্তিত হয়েছে শামীম।
উদ্দেশ্য হলো রিনি শামীমের বিবাহের দিন ধার্য করা।
সকাল থেকেই মেহমান অ্যাপায়ণের তোড়জোড় চলছে।তরী সকালে এই বাড়িতে এসে রান্নার কাজে লেগে পড়েছে।তাহেরা বেগম বাইরের দিক সামলাচ্ছেন।

যোহরের নামজের পর পরই উপস্তিত হলেন শামীমের পরিবার। শামীমের মা বাবা ছোট ভাই অয়ন, মাইশা।
শামীম রিনির সম্পর্কের কথা শ্রাবণ জানার পর বলেছিল পরিবার নিয়ে আসতে। শামীম তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেতে পরিবারকে রাজি করিয়ে নিয়ে এসেছে। রমিজুল সাহেব ও সিরাজুল সাহেব আপত্তি জানান নি। শামীম ছেলে ভালো। পরিবার ভালো।
ভালো চাকরি করে। মেয়েকে সুখী রাখার জন্য আর কি চাই।

তরী আর মাইশা মিলে রিনিকে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে বসার ঘরে।
কড়া খয়েরী রঙের শাড়ি, সাথে হালকা সাজ। শ্যাম কন্যাকে কোনো পরীর থেকে কম মনে হচ্ছে না।
শামীম হা করে থাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে।
” শাড়িতে নারী ” কথাটি চিরন্তর সত্য।

শামীমের মা রিনির হাতে স্বর্ণের বালা পরিয়ে দিয়েছেন।
আর শামীমের বাবা হাতে গুঁজে দিয়েছেন সালামি।

দুই পরিবার আলোচনা করে বিয়ের তারিখ ঠিক করেছেন ফাল্গুনের শুরুতে। হাতে গুনা ঠিক একমাস আছে সময়।
অতিথিরা খাবার পর্ব শেষ করে বিদায় নিয়েছেন।


বিকাল বেলা ছাদে গেলো তরী।
বেশ কিছু দিন হলো গোধূলি বিকেলটা উপভোগ করা হয় নি। আজ এসেছে একান্তে কিছু সময় কাটাতে।
শীতের পাতা ঝরা গাছ গুলোকে কেমন নির্জীব মনে হচ্ছে। গাছগুলো অপেক্ষায় আছে কখন বসন্ত আসবে আর নতুন পাতায় ভরে যাবে গাছ।

তরীর জীবনটাও পাতা ঝরা গাছ গুলোর মতো হয়েছে
অপেক্ষায় আছে কবে নতুন পাতার জন্ম হবে।

” আমার জীবন ঝরা পাতার মতো হয়ে গেছে, এখন আর কোনো কিছু নিয়ে সতেজতা বোধ করি না।অনুভূতি গুলো শুকনা পাতার মতো হয়ে গেছে।
আর শুকনা পাতার ঝরে যাওয়াই ভালো।
তবেই না সতেজ পাতার জন্ম নেওয়ার জায়গা হবে।
কিন্তু তত দিনে যদি হারিয়ে যাই?
কেনো এতো ভয় হচ্ছে আমার?
কেনো মনে হচ্ছে আমি থাকবো না আর এই আলোর ভিড়ে?”
নাহ অপেক্ষায় আছি।আমার জীবনেও আলো আসবে
আমার মেয়ের হাত ধরে আমি সতেজ হবো।

তরীর অপেক্ষার অবসান কি কোনোদিন হবে?
নাকি অন্ধকারে তলিয়ে যাবে চিরতরে?

#চলবে ইনশা আল্লাহ…!