আকাশ এখন মেঘলা পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
321

আকাশ_এখন_মেঘলা
মোর্শেদা হোসেন রুবি
৫ম ও শেষ পর্ব ||

খুব চট করে আজকাল কিছুই ভালো লাগেনা গহনার। কাউকেই না। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাবুছড়া স্কুল থেকে বদলী হয়ে এ পর্যন্ত মোট তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে যোগদান করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রাজশাহীতেই থিতু হয়েছে। ঢাকায় বদলীর ব্যপারে বাড়ির বাকিরা তোড়জোড় করলেও গহনার মন ঢাকায় টেকেনি। কেন যেন ঢাকার নাম শুনলেই গা জ্বলতো গহনার। অনেক পরে বুঝতে পেরেছে ঢাকা মানেই পরিচিত পরিবেশ। ঢাকা মানেই দুলি আর আমান মিকদাদ। কথাটা কাউকে বলতে পারেনি কখনও। শুনলে সবাই পাগল ভাবতো। গহনা নিজেও জানত না যে এতো ছোট্ট একটা সাক্ষাৎকার কারো জীবনে এতো শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু সাক্ষাৎকারটাই নয়, আমান মিকদাদের ফোনে বলা কথাটা আজও কানে বাজে গহনার। আই নিড টু টক টু ইউ গহনা। এরপর আর লোকটা কিছু বলার সুযোগ পায়নি। গহনা তাকে ব্ল্যাকলিস্টেড করে রেখেছিল। আমানও আর ছেলেমানুষী করেনি। চাইলেই অন্য নম্বর থেকে যোগাযোগ করতে পারতো। কিন্তু করেনি। এটা ওকে মানায়ও না। কিন্তু সেই স্বল্পসময়ের সাক্ষাৎটুকু গহনাকে আজীবনের জন্য স্মৃতিবিদূরতায় ভোগার ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছে। যতই দিন যাচ্ছে মেজাজটা খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে গহনার। এই অভিযোগ স্বয়ং ওর বড়বোন রেহানার। তার ধারণা বিয়ে না হলে মেয়েরা এমন শর্টটেম্পারড হয়ে যায়। গহনার একা থাকা বন্ধ করতে হবে। বড়বোনের এসব কথা শুনে ম্লান হাসে গহনা। আর অবধারিতভাবে আমানের চেহারাটা মুখের সামনে ভেসে ওঠে। প্রচন্ড রাগ হয় গহনার। কেন একটা মানুষ কাউকে এতোখানি দখল করে রাখবে। পুরোনো স্মৃতি ভুলতে নিজের ওপর কাজের চাপ বাড়িয়ে নেয়। জন্মস্থান ঢাকা হয়ে ওঠে ছুটিছাটায় বেড়ানোর জায়গা। আজকাল গহনার দিন কাটে রাজশাহীতেই। সেখানকার একটা হাই স্কুলের কলেজ শাখার নতুন শিক্ষিকা হয়ে।

গত কয়েকদিন হয় ঢাকায় এসেছে গহনা। কলেজে পরীক্ষা শেষের বন্ধ চলছে। রেহানার জোর ইচ্ছা এই পরিসরেই গহনাকে বাঁধতে হবে। সেভাবেই উদ্যোগ নিয়েছে সে। গহনা ঢাকায় আসার পরপরই ছোটখাট এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পাত্রপক্ষের সাথে দেখাসাক্ষাৎ পর্ব অনুষ্ঠিত হলো। গহনা তাকে দেখলো। সেও দেখলো গহনাকে। ভদ্রলোক নিজেও একটা কলেজে পড়ান। কথাবার্তা চমৎকার। প্রাথমিক আলাপ পরিচয় শেষে স্থির হলো বাৎসরিক পরীক্ষার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে সবকিছু হবে। গহনার আঁইগুঁই এবার আর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারলো না। গহনাকে সম্মত হতেই হলো। তবে কলেজে এখনই কিছু জানানো হলোনা। গহনা ঠিক করেছে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পর পর এটা নিয়ে আলাপ করবে। এতো আগে লোক জানাজানি করার কোন মানে নেই।

ছুটি শেষ হবার দুদিন আগে কাকতালীয় ভাবে দুলির সাথে দেখা হয়ে গেলো গহনার। রেহানার সাথে কেনাকাটা করতে বেরিয়েছিলো সে। দুলিকে দেখার পর প্রথমটায় থতমত খেয়ে গিয়েছিল। মনে ভয় ছিলো, দুলি হয়তো আজও এড়িয়ে যাবে। কিন্তু উল্টোটাই ঘটলো। দুলির হাসিমাখা মুখ আর সাথের ছোট্ট কচিমুখটাই বলে দিলো এই দুলি সেই দুলি নয় যে আমানকে হারানোর ভয়ে পুরোনো বান্ধবীকে অগ্রাহ্য করেছিল। দেখা হলে ন্যুনতম সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেও যার আপত্তি ছিল। এই দুলি অন্য কেউ। অনেক পরিবর্তিত। দেখেই বোঝা যায় দুলির জীবন এখন এই ছোট্টমুখটার আবর্তে বাঁধা।

বাচ্চাটার মাথায় হাত রেখে গহনা মুখ ফসকে বলেই ফেললো, ‘ মাশাআল্লাহ। সো কিউট। ও কিন্তু একদম ওর বাবার মতো হয়নি রে দুলি।’
” কী বলিস, অভিকে তো সবাই বলে ও নাকি বাপকা বেটা। বাপের ডুপ্লিকেট সে।”
” তাই ? আমার কিন্তু ওকে একেবারেই আমান ভাই এর মতো লাগছেনা।” এ পর্যন্ত বলতেই দাঁতে জিভ কাটলো দুলি। গহনা বুঝতে পারলো সে ভুল করেছে। দুলি লজ্জিত স্বরে কোনরকমে বললো, ” আমান ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়নি রে। উনি সম্মত ছিলেন না।”
” সেকি ? “গহনা বিভ্রান্ত।
” হম। আমার তখন স্পষ্ট ধারণা ছিলো উনি তোকে বিয়ে করার জন্যই এমন করেছেন। সেই কষ্টে তোকে প্রানপণে এড়িয়ে গেছি। তোকে দেখলেই গা জ্বালা করতো আমার। মনে হতো আমি এই কালো মেয়েটার কাছে হেরে গেছি। রাগে ভুঁইয়াতে পর্যন্ত আর যাইনি। অবশ্য আমার এমনিতেও আর ল’ পড়া হয়নি। সময় কোথায় বল। পরের সপ্তাহেই বিয়ে হয়ে যায় আমার। সাবের ভাইয়ার চাচাতো শ্যালকের সাথে। ওরা ভাইয়ার এনগেজমেন্টে আমাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলে। বিয়ের পরের বছরই অভি পেটে চলে এলো। তখন আমার দুনিয়ায় শুধু আমার বাচ্চা। অবশ্য অনেক পরে একদিন সাবের ভাইয়ের কাছে শুনলাম আমান ভাই নাকি তখনও বিয়ে করেননি। এদিকে তুইও চাকরী নিয়ে ঢাকার বাইরে চলে গেছিস। সবমিলিয়ে খুব খারাপ লেগেছিলো জানিস। আসলে অল্পবয়সের আবেগ আমাদের বাস্তববুদ্ধি নষ্ট করে দেয়। এখন সেসব ভাবলে ভীষণ অবাক লাগে।

বুকের বোঝা বাড়ল। হৃৎপিণ্ডটা এতোদিন সুক্ষ একটা ব্যথাবোধ নিয়ে বাঁচতে শিখে গিয়েছিল। আজ হঠাৎ করেই ভারী একটা পেন্ডুলাম হয়ে হৃদয় ধরে এমাথা ওমাথা দুলতে লাগলো। আর আমানের স্মরণে প্রতিটি নিঃশ্বাসে একবার করে ঢং শব্দে ঘন্টা বাজাতে লাগলো। মনের অস্থিরতা কাটাতে ছুটি শেষ হবার দুদিন আগেই রাজশাহী চলে এলো গহনা। ঢাকার পরিচিত পরিবেশে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ওর। সিদ্ধান্ত নিলো এবার আর দেরি করবেনা। রেহানা আপার প্রফেসর পাত্রটিকে বিয়ে করে নিজেকে রেহাই দেবে। এতো পেরেশানি আর সহ্য হয়না। দুলির মতো একটা ছোট্ট অভি চাই ওরও। তাহলেই যদি অতীত ভুলতে পারে।

====

স্কুলের দ্বিতীয় পিরিয়ডে এসে বড়বোন রেহানার ফোন পেলো গহনা। ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিণে বড়বোনের নামটা দেখেই নিঃশ্বাস ফেলল। গত একসপ্তাহ ধরে বড়আপা রাজশাহীতে আছেন। ওর জীবনটা ভাজাভাজা করতে বদ্ধপরিকর হয়ে। রেহানা আপা এমনই। যখন কোন কিছু নিয়ে মাতেন তখন তাকে ঐ কাজ থেকে সরায় তেমন সাধ্য কারো থাকেনা। তিনি আজকাল গহনার বিয়ে নিয়ে পড়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত ঢাকার সেই প্রফেসর ভদ্রলোক মাঝপথে হাওয়া হয়ে গেছেন। পরে রেহানার কাছেই শুনেছে ভদ্রলোকের নারীঘটিত কিছু কেলেঙ্কারির কথা। রেহানা ওকে না জিজ্ঞেস করেই মানা করে দিয়েছেন।

ইদানীং কোন ইঞ্জিনিয়ার পাত্র পেয়ে তাকে নিয়ে খুব দহরম মহরম শুরু হয়েছে রেহানার। গহনার ধারণা এবার আপা ওকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন। তিনি ফোনে বলেছেনও সেকথা।
‘ তোদের দুজনের দুজনকে পছন্দ হলে পত্রপাঠ কলেমা পড়িয়ে দেব। এই ছেলের খোঁজ নিয়েছি আমি। খুবই ভালো পরিবার এরা।’
গহনাকে নিশ্চিন্ত হবার ভান করে বলতে হয়েছে, তাহলে তো ভালোই।

ফোনটা রিসিভ করে কানে ঠেকানো মাত্রই রেহানার উত্তেজিত কণ্ঠ শুনতে পেলো গহনা।
” কী রে, গহনা ? তুই কখন আসবি ? অলরেডি দেড়টা বাজে। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তিনটার দিকে রেস্টুরেন্টে থাকবে বলেছে। ঠিক করে বলতো, তুই ছুটি নিতে পেরেছিস কিনা ? না পারলে বল, আমি নিজে আসব। তোর প্রিন্সিপ্যালের সাথে কথা বলব।’
‘ সেসবের কোন দরকার নেই আপা। আমি যথাসময়েই চলে আসবো। ভাইস প্রিন্সিপ্যাল আপার সাথে আমার কথা হয়েছে। ‘
” দেখিস, কথা যেন ঠিক থাকে।”
” থাকবে ইনশাআল্লাহ। ইয়ে আপা, একটা কথা।’
‘ বল্।’
” তোমার ইঞ্জিনিয়ার সাহেব কী আমার বায়োডাটা দেখেছে ? মানে আমার বয়স নিয়ে তার কোন আপত্তি নেই তো ? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে উনি আমাকে বাই ফেস দেখে রাজি হয়ে গেছেন। বয়সের খোঁজ নেননি।’
” মোটেও না। তাছাড়া তার এতো আপত্তির কী থাকতে পারে ! তোর এসএসসির সাল তো সে জানেই। সে নিজে কী কচি ছোকরা নাকি যে তোর বয়স নিয়ে নাক সিঁটকাতে হবে। এখনকার পেশাজীবি মেয়েরা এমনিতেই লেট ম্যারেজ করে। ত্রিশ পঁয়ত্রিশ কোন ব্যপার না।”
” আচ্ছা রাখি। বাড়ি এসে কথা বলবো।”
” এই শোন্, রোদে ঘুরঘুর করবি না। একেবারে স্কুলের গেট থেকেই রিক্সা নিবি। রোদ পড়লে চেহারা কালচে হয়ে যাবে।”
” আমি তো কালোই, আবার কালচে হবে কী ! ”
” কে বলেছে তুই কালো। এটাকে কালো বলে নাকি। তোর গায়ের রং তো উজ্জ্বল শ্যামলা। আমার ননদ কেকার চেয়েও তুই ব্রাইট। কেকার মতো কালি ধুমসির বিয়ে হয়ে গেলো আর তুই…!’
” আপা , আমি ছাড়ছি। ” বলে ফোন কেটে দিয়ে কাজে মনোযোগ দিলো গহনা। রেহানা আপার ধারাই অমন। কথা বলতে ধরলে আর থামাথামি নেই। বলতেই চলে যায়। গহনার হাতে এখনও কয়েকটা খাতা আছে। এগুলো দেখা শেষ করেই বেরিয়ে পড়বে গহনা। ছুটি আগেই নিয়ে রাখা হয়েছে। কাজেই খাতাগুলো দেখতে দেরি হলে ওরই ক্ষতি। এমনিতেই বার্ষিক পরীক্ষার পরপর স্কুলে একটা ছুটির আমেজ চলে এসেছে। ছোটক্লাসগুলো ইতোমধ্যে ছুটিতে চলে গেছে। কলেজ শাখার ক্লাসগুলোর প্রাকটিকাল চলছে। এরই মধ্যে যতটা পারা যায় নিচের ক্লাসের খাতাগুলো দেখে রাখা।

হাতের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে গহনা। শুধু নম্বরগুলো টেবুলেশন শিটে তোলা বাকি। এমন সময় ফিরোজা আপাকে রুমে ঢুকতে দেখে সতর্ক হবার প্রয়োজন বোধ করলো সে। মহিলাকে দেখেই ওর ঢিলেঢালা ভাবটা গায়েব হয়ে গেলো। নম্বর তোলার কাজটা তাড়াতাড়ি করতে হবে। এমনিতেই এই মহিলাকে পছন্দ নয় গহনার। চেহারা দেখলেই মনে হয় চোখেমুখে ষড়যন্ত্রের চিহ্ন সেঁটে আছে। ভদ্রমহিলা অবশ্য বলেন গহনাকে দেখলেই নাকি তার কষ্ট হয়। গহনার এখনও বিয়ে হচ্ছেনা কেন এই চিন্তাতে তার প্রেসার নাকি সবসময় হাই থাকে। গহনাও চায়না মহিলা তাকে নিয়ে ভেবে পটল তুলুক তাই নিজেই সবসময় সরে থাকে। পারতপক্ষে তার মুখোমুখি হয়না।

গহনা ভদ্রমহিলকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নিবিষ্টমনে নাম্বারগুলো শিটে বসিয়ে নিচ্ছিলো। ভালো করেই জানে এখানে একটু ভুল হলে রেজাল্ট শিটে ভুল নম্বর উঠে যাবে। কাজেই একদম তাড়াহুড়ো করা যাবেনা। কাজ করতে করতেই গহনার মনে হলো ফিরোজা আপা ওর দিকেই তাকিয়ে আছেন। পাত্তা দিলোনা গহনা। তাতে অবশ্য ফিরোজা আপাকে এড়ানো সম্ভব নয়। তিনি হেসে প্রশ্ন করলেন, ‘ গহনা ম্যাডাম কী আজ ছুটি নিয়েছিলেন নাকি ? ‘ ফিরোজা ম্যাডামের প্রশ্নে তাকালো গহনা। বলা যায় তাকাতে বাধ্য হলো। ‘নিয়েছিলেন নাকি’ শব্দ দুটো ওকে সতর্ক করে তুলেছে। এটা তো পাসটেন্স হবার কথা না। এটা এখনও প্রেজেন্ট পারফেক্ট টেন্সে আছে। গহনাকে চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকাতে দেখে হাসলেন ফিরোজা।
” ইয়ে, প্রিন্সিপাল ম্যাম আপনার খোঁজ করছিলেন একটু আগে। খুব নাকি জরুরি।”
” ম্যাডাম খোঁজ করেছেন ? কেন বলুন তো ? ” না চাইতেও ওর মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো কথাগুলো। মনে মনে এতোক্ষণ অনেক কিছু ভেবে ফেলেছিলো। ফিরোজা ম্যাডাম কোন ফেবার চাইতে এলেই তাকে কী কী বলে পাশ কাটাতে হবে তারই একটা মহড়া। কিন্তু প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের নাম উচ্চারিত হবার পর কৈফিয়তের যাবতীয় ফিরিস্তি পেটের ভেতরেই টুকরো টুকরো হয়ে হজম হয়ে গেলো।
” আজকে সবার ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে জানেন তো। স্বাভাবিক ভাবেই আপনিও এর আওতামুক্ত নন। আপনাকে তো কলেজ শাখায় নিয়োগ করা হচ্ছে শুনলাম।”
” জি, তা তো ঠিক আছে কিন্তু একেবারে হঠাৎ ছুটি বাতিল কীভাবে হলো বুঝলাম না। আমার তো জরুরি কাজ আছে। ” বিড়বিড় করে বলার চেষ্টা করলো গহনা। ফিরোজা মাথা নাড়লেন। মন্ত্রনালয় থেকে বড়কর্তা আসবেন। ঝটিকা সফর। শোনা যাচ্ছে, তাঁর এই ভ্রমনের উপর আমাদের কলেজ শাখার ডোনেশন থেকে শুরু করে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অনেক কিছু নির্ভর করছে। প্রিন্সিপ্যাল ম্যাম এই নতুন কলেজ নিয়ে কত দৌড়ঝাঁপ করেছেন তা তো সবাই জানি। উনিই সবচেয়ে বেশি অস্থির। একটু আগেই শুনলাম বুয়াদের ক্লাসগুলো ঝাড়া মোছা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর্জেন্ট মিটিং ডাকা হয়েছে কলেজ শাখার টিচারদের। আপনি গিয়ে ম্যাডামের সাথে আগে দেখা করে আসুন। তাহলেই সব বুঝতে পারবেন।”

দীর্ঘশ্বাসটা সশব্দেই ফেলল গহনা। রেহানা আপা জানতে পারলে ছোটখাট স্ট্রোক করে বসবে। বেচারি কত ধানাইপানাই করে তার আইবুড়ো বোনটার জন্য কোত্থেকে এক আধাবুড়ো শিক্ষিত পাত্র যোগাড় করেছিল। আজকের আলাপে দুজনের নতুন ভবিষ্যত তৈরী হতে পারতো। কিন্তু গহনাকে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিন্তা বাদ দিয়ে এখন কলেজ শাখার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিন্তা করতে হচ্ছে। টেবুলেশন শিট গুছিয়ে প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের রুমে এসেই শুনলো নিয়তির অমোঘ আদেশটি। বড়কর্তা আসছেন। তারজন্য লাল গালিচা পেতে অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করতে হবে। নিজের ব্যপারে কোন কৈফিয়ত দেবার সুযোগই পেলোনা গহনা। উল্টো বোনকে ফোন করে বিকেলের মিটিংটা স্থগিত করতে হলো। রেহানা প্রথমটায় বাকরুদ্ধ হলেও শেষ পর্যন্ত মন্তব্য করতে পিছপা হলো না।

” তোর কপালে কী আছে কে জানে। যতভাবেই তোকে বিয়ের দিকে টানি ততভাবেই তুই ফস্কে যাস। একটা না একটা কাহিনী খাড়া করিস। বয়স কত হলো খেয়াল আছে? ”
” আমার কোন উপায় নেই আপা। স্যার হুট করে আসায় সব এলোমেলো হয়ে গেছে। তুমি তো জানো আমাদের প্রতিষ্ঠান আরো ব্যপক ভাবে তার কর্মপরিধি বাড়াতে যাচ্ছে। আমি না থাকলে এদিকটা এলোমেলো হয়ে যাবে।”
” কলেজের আর কী এলোমেলো হবে, সব তো তোরই এলোমেলো হয়ে গেলো, এটাই এখন আফসোস। তোর উপযুক্ত পাত্র তো আর চাইলেই পাওয়া যায়না। আচ্ছা আমি দেখি, শফিকের সাথে কথা বলে নতুন শিডিউল ফেলতে পারি কিনা ।”

ফোন ছেড়ে দেবার পর যথাসম্ভব তৈরী হয়ে নিলো গহনা। কলেজ শাখার বাকি শিক্ষিকারাও সবাই নিজেদের গুছিয়ে নিলেন। যথাসময়ে বড়কর্তা এলেন। তার সাথে আরো দুজন কর্মকর্তা ছিলেন। তারা তিনজনই ঘুরে ঘুরে দেখলেন কলেজটা। সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। সবশেষে তাঁরা প্রিন্সিপ্যালের রুমে এলেন। তাঁদের জন্য বিশেষ আতিথেয়তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এখানে। চা নাস্তার ফাঁকে ফাঁকে স্কুলের ছোটখাটো সমস্যা নিয়েও কথা কথা হলো। বিদায় নেবার আগে উপস্থিত শিক্ষিকাদের দলটির সামনে দাঁড়িয়ে ছোটখাটো বক্তব্য রাখলেন ভদ্রলোক। গহনা তখনও মনে মনে খাবি খাচ্ছিলো। আমান মিকাদাদকে এখানে আশা করেনি সে। একদম না। তাকে দেখে দারুণ বিস্মিত হয়েছে সে অথচ ভদ্রলোকের চেহারায় পূর্বপরিচিতের কোন লক্ষণ নেই। তার মানে কী গহনাকে চিনতে পারেননি তিনি ? নাকি চিনেও না চেনার ভান করেছেন ? অবশ্য গহনা নিজেও দুর থেকে ভদ্রলোককে যখন দেখেছিলো তখন চট করে চিনতে পারেনি। এখন কাছে থেকে দেখে মনে হলো গলার কাছের সেই পুরোনো কুন্ডলীটা নামেনি, ওটা এখনও দলাপাকিয়ে যথাস্থানেই আছে। ভদ্রলোকের সাথে এতোদিন পর এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবেনি সে। আরও অবাক হলো যখন বুকের ভেতর হঠাৎ করে কষ্ট নামক নতুন একটা অনুভূতির সন্ধান পেল। এ কষ্টের স্বরূপ জানেনা গহনা। দুলির বলা কথাগুলো মনে পড়ল। ভদ্রলোক বিয়ে করেননি। কেন করেননি বিয়ে ? ওর জন্য ? ধুর ছাই। যতসব উদ্ভট চিন্তা। এখন কী এসব ভাবার অবকাশ আছে ? তাছাড়া দুলি যে সময়ের কথা বলেছে সেটা তো আরো কয়েক বছর আগেকার কথা এতোদিনে তিনি নিশ্চয়ই বিয়েশাদী করে বাপও বনে গেছেন। যদিও দুর্বল মনটা তার সবটা জানতে চাওয়ার আশায় লালায়িত হয়েই রইল।

গহনা নিজেকে বোঝাল,উনি অবিবাহিত হলেই বা কী। মনে রেখ, লোকটা তোমাকে একদিন ফোন দিয়েছিল। তুমি নিজেই তাকে এড়িয়ে গিয়ে অপমান করেছ। আজ সে তোমাকে অপরিচিতের দৃষ্টিতে দেখছে। মানে সহজ। তোমার সাথে রিইউনিয়ন এর কোন ইচ্ছেই তার নেই। থাকার কথাও নয়। লোকটার বয়স বেড়েছে। ছেলেমানুষী করবেননা এটাই স্বাভাবিক। ওরকম দুচারটা হৃদয়ঘটিত দুর্ঘটনা সবার জীবনেই কমবেশি থাকে। সেটাকে নিয়ে কেউ প্রেমগ্রন্থ রচনা করেনা তোমার মতো। পুরোটা সময় জুড়ে নিজের সাথে যুদ্ধ করে একসময় বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাসের সাথে অতিথিকে বিদায় জানাতে হলো গহনার।

বাড়ি ফিরে শুনলো আগামী শুক্রবারে মিটিং ফিক্স হয়েছে। শফিক শুক্রবারে বসতে রাজি হয়েছে। তার নাকি কিসব কথা আছে গহনার সাথে। বোনের এসব ক্যানক্যানে বর্ণনা শোনার মানসিকতা গহনার ছিলনা কিন্তু তারপরেও শুনতে হচ্ছে। জীবনটা হঠাৎ করেই দুর্বিষহ বোঝা হয়ে গহনার ঘাড়ে চেপে বসেছে। কবে এই বোঝা নামবে কে জানে।

পরদিন স্কুলে গিয়ে জানতে পারলো কলেজের শিক্ষিকাদের জন্য একটা ডরমিটরির প্রস্তাব পাশ হয়েছে আজকের মিটিং এ। অফিস থেকে শিক্ষিকাদের লিস্ট চাওয়া হয়েছে। সংবাদটা গহনার চেতনাকে অসাঢ় করে রাখলো সারাদিন। বাড়ি ফিরেও অস্থিরতা কমলো না। রেহানা আপারও মুখ ভার। তিনি জানালেন কালই তিনি ঢাকা চলে যাবেন। গহনা ভয়ে ভয়ে শফিকের কথা জানতে চাইলে এড়িয়ে গেল রেহানা।

গহনা তাকে চেপে ধরলে জানাল, শফিকের মায়ের ইচ্ছা নয় বদলির চাকরি করা মেয়ে বিয়ে করায়। তার ছেলের জীবনে এভাবে শান্তি আসবে না। তারা শর্ত রেখেছেন হয় তোকে চাকরি ছাড়তে হবে আর নয়তো ঢাকায় স্থায়ী হতে হবে।
গহনা কোন জবাব দিলো না কেবল মুখ নামিয়ে ম্লান হাসলো। রেহানা বিরক্ত।
” হাসছিস কেন ? এভাবেই উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে জীবনটা পার করবি ? শোন্, মেয়েরা হচ্ছে শেকড়ের মতো। এদের মধ্যে যারা কেবলই ঘুরে বেড়ায় তাদের শেকড় জন্মাতে পারেনা বলে একটা সময় তারা আগাছা হয়েই রয়ে যায়। আল্লাহতা’লা মেয়েদের সংসার গড়ার দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। একটা ছেলে কখনও পরিবার রচনা করতে পারেনা। ঐ যোগ্যতা শুধু মেয়েদেরই আছে। আর একটা ভালো পরিবারই সুস্থ সমাজের বুনিয়াদ। আশা করি এর বেশি তোকে বলতে হবেনা। আমি কাল ঢাকা যাচ্ছি। জানিনা আবার কবে একটা মনমতো ছেলে পাবো। যেগুলো পাই সেগুলো বেশিরভাগই তোর চাকরীর পয়সায় গায়ে বাতাস দিয়ে বেড়ানোর মতলবে বিয়ে করতে চায়। ওয়ার্থলেস একেকটা। ”
‘ তাহলে আমাকেও তোমার সাথে ঢাকা নিয়ে চলো আপা। ‘ মৃদু স্বরে বললো গহনা।
” তুই ঢাকায় যাবি? ” রেহানার চোখ ছানাবড়া।
” হ্যাঁ।” গহনার সংক্ষিপ্ত উত্তর।
” ছুটি পাবি? ”
” না পেলে চাকরি ছেড়ে দেবো। কিন্তু এই স্কুলে আর চাকরি করতে পারবো না।”
” তোর হয়েছে টা কী বলতো ? ” গহনার কাঁধে হাত রাখলেন রেহানা। দু চোখে বর্ষা নামলো গহনার। কোনমতে মাথা নাড়লো সে।
” জানি না আপা, আমি সত্যিই জানিনা।”
” নিশ্চয়ই তুই জানিস। কী হয়েছে বল আমাকে।”
গহনা কিছু বলতে পারলোনা তবে মাতৃসম বড়বোনের কাঁধে মুখ রেখে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো গহনা। একজন তথাকথিত সফল নারীর একাকীত্বের ভার বইতে না পারার কান্না। বোনকে এভাবে কাঁদতে দেখে অস্থির হয়ে পড়লেন রেহানা। সবশুনে তিনি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে আমানের মায়ের সাথে কথা বলতে চাইলেন। গহনা রাজি হলোনা। যাকে সে নিজেই একদিন অবহেলাভরে সরিয়ে দিয়েছে আজ কোন মনে তাকে নিজের চলার পথে ডাকবে। তাছাড়া ভদ্রলোকের বয়স হয়েছে। বিবাহিত হবার সম্ভাবনাই বেশি। রেহানা আর কথা বাড়ালেন না। পরদিনই গহনাকে নিয়ে ঢাকায় চলে এলেন।

পরের সপ্তাহটা নির্বিঘ্নেই কাটলো। রেহানা আবার পুরোদমে গহনার জন্য পাত্র খুঁজছেন। এবার গহনা তাকে কথা দিয়েছে সে আর আগবাড়িয়ে কোন কথা বলবেনা। রেহানা আপা যেমন চান তেমনই হবে। নিজের সাথে লড়াইতে ক্লান্ত গহনা।

পরদিন শুক্রবার। গহনার জন্য নির্ধারিত পাত্র আসার আরেকটা মাহেন্দ্রক্ষণ। সব ঠিক থাকলে আজই আকদ পড়ানো হয়ে যাবে। ভদ্রলোক নাকি গহনাকে ছবি দেখেই পছন্দ করে ফেলেছেন। তার সাথে কথা বলে রেহানারও তাকে মনে ধরেছে। কাজেই এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবেনা। সান্ধ্য আয়োজনে তোড়জোড় চলল। রেহানা আপার কথামতো হালকা সাজে তৈরী হতে হলো গহনাকে। ভদ্রলোক তার মাকে নিয়ে বিকেলেই আসবেন। গহনার সাথে কথাবার্তা বলবেন। তারপর যা হবার হবে।

যথাসময়ে অতিথিরা এলেন। গহনা তাদের সামনে গেলো না। রেহানা আপা তার বর শওকত ভাই সব সামলে নিলেন। একপর্যায়ে ভদ্রলোক গহনার সাথে কথা বলতে চাইলেন। রেহানা তাকে ভেতরে নিয়ে এলেন। গহনা সালাম দিতে গিয়ে হার্টবিট মিস হলো। আমান মিকদাদ। প্রথমে ধারণা হলো এসব তার অতি ভাবনার ফল। পুরোটাই হ্যালুসিনেশন। রেহানা আপার মুখের মিটিমিটি হাসি আর পরিচয় পর্ব শেষে ভদ্রলোককে চিনে নিতে বেগ পেতে হলোনা গহনার। অভ্যার্থনা জানিয়ে তাকে বসাতে হলো।

আমান তখনও অপাঙ্গে গহনাকেই দেখছে। যেন মিলিয়ে নিচ্ছে। আর গহনা ! তার শরীর এখন ভরা বর্ষার দুকূল ছাপানো খরস্রোতা নদী। যার কুলুধ্বনি পরিস্কার টের পাচ্ছে গহনা। কোন ভাষায় সম্মতিজ্ঞাপন করেছে সে নিজেও বলতে পারবেনা। ঘোর কাটতে পুরো পাঁচটা মিনিট সময় লাগলো। ঘোর কাটার পরও ভাষা হারিয়ে বসে রইলো গহনা।
” কেমন আছেন গহনা ? ” আমান নিজেই শুরু করলেন।
” এই তো।”
” এটা তো কোন উত্তর হলোনা। আমি জানতে চাচ্ছি কী পেলেন এসব করে। সেদিন আমি একবার দেখা করতে চেয়েছিলাম। অনুরোধটা রাখেননি। তা নাহয় গেলো। রাখতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু আপনার নিজের এ অবস্থা কেন। ডিভোর্সি বা বিধবা নন জেনে আকাশ থেকে পড়েছি। এতোদিন বিয়ে না করে কার কী উপকার করলেন একটু শুনি ? ”
” দেখুন, বিয়েশাদি তো আল্লাহর হাতে তাই না?” আরক্ত ভঙ্গিতে বললো গহনা। আমানকে সন্তুষ্ট মনে হলোনা এই উত্তরে।
” শুধু বিয়েশাদি কেন, সবই তো আল্লাহর হাতে। কিন্তু সেজন্য বান্দাকে হাত পা নাড়তে হবে তো। হাত পা তুলে বসে থাকলে তো আর হাড়ির চাল ভাত হয়ে যাবে না।”
” আপনার কথা বলুন, আপনি এভাবে আছেন কেন ! আমি তো ভেবেছি…!” থেমে গেলো গহনা।
” কী ভেবেছেন ? দাদা নানা হয়ে গেছি? ”
” না, অতটা না।” না চাইতেও ফিক করে হেসে ফেললো গহনা। আমান গম্ভীর হলো। সেদিন স্কুলে আপনাকে দেখে প্রথমে কষ্ট তারপর রাগ হয়েছিল। কেন এমন করলেন জানিনা। এসব সিনেমাটিক স্যাক্রিফাইস করার বুদ্ধি কোথায় পান আপনারা ? দুলি তো বসে নেই। সে এখন দুই বাচ্চার মা। সে ভালো আছে। আর আপনি ? নিজেও ভালো থাকলেন না আমাকেও ভালো থাকতে দিলেন না। আপনার তো শাস্তি হওয়া উচিত। ”
‘ ইতোমধ্যেই তা যথেষ্ট হয়ে গেছে আমান।’ গহনা মুখ নামালো। ওর চোখে পানি। আমান মনে মনে অস্থির হলেও নির্বিকারত্ব ধরে রাখলো বাহ্যিক অবয়বে।

একটু পর রেহানা নিজেই জানালে ইসমাত আন্টির ইচ্ছা বিয়েটা আজই হয়ে যাক। গহনা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলো। আমান নিজেও মাথা নাড়লো, ” সেটাই ভালো। আপনার বোনকে আমার বিশ্বাস নেই। আবার কোন রাজকার্য উদ্ধারে নেমে পড়বেন কে জানে।”
গহনার চেহারার লালিমা দেখা দিলো সেকথায়।
রাত আটটার মধ্যেই বিয়ে পড়ানো হয়ে গেল। ইসমাত জাহান গহনাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন নিজের অপারগতার কথা। তার ছেলেটা মনে মনে ভেঙেচুরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলো, অথচ সব জেনেও তিনি মা হয়ে কিছু করতে পারছিলেন না। সেজন্যে মনে মনে গহনার উপর রেগেও ছিলেন তিনি। কিন্তু গতকালই আমান তাকে সব বুঝিয়ে বলেছে। শোনার পর গহনার সাথে দেখা করার জন্য মনে মনে উদগ্রীব ছিলেন । আজ তিনি সত্যিই দারুণ খুশি।

নবদম্পতিকে তাদের মতো আলাদা ছেড়ে দেয়া হলো। গহনার মনে হতে লাগলো এ জীবনে অনেক চাওয়াই মাটিচাপা পড়ে গেছে অধরাকে ধরার নেশায়। যা পেয়ে সে স্বয়ংসম্পূর্ণা হতে পারতো তার অনেকটাই হেলায় হারিয়েছে ৷ রেহানা আপার প্রতি কৃতজ্ঞতায় নুয়ে এলো অন্তর ৷ তার জন্যেই আজ এতোকিছু ৷ নইলে আজ সকালেও গহনা জানতো না আজকের সন্ধ্যাটা তার জীবনের একটি স্মরণীয় সন্ধ্যা হতে যাচ্ছে।

যার চৌকাঠ পেরোলেই সে সন্ধান পাবে একটি সুরভিত রাতের। যে রাতের গর্ভে ধারণ করে এক একটি উজ্জ্বল দিন।
আমানের বুকের খাঁচায় স্বেচ্ছাবন্দী হয়ে গহনা জানতে পারলো কিছু বন্দীত্বে স্বাধীনতার অসহ্য সুখ মিশে থাকে। এতোদিন প্রচুর আয় করেও গহনা জানতো না সে আসলে কতটা অভাবি ছিলো এতোদিন। যখন জানলো তখন মেঘে মেঘে বেলা অনেকটাই পড়ে এসেছে।

~সমাপ্ত~