নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-৩০

0
514

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -৩০ (১৮+ এলার্ট)
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(প্রাপ্ত বয়স্ক দের জন্য আজকের পর্ব)

সকালের স্নিগ্ধ আলোড়নে চারিদিকে হিমেল বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যে রাতে বৃষ্টি হওয়ায় এখন চারিদিকে ফোঁটা ফোঁটা শিশির গুলো চমৎকার রূপ নিয়েছে। আর সেই চমৎকার প্রকৃতির সাথে ফুল গুলোও মেতে আছে তাদের সাথে রূপ বাড়াতে। আহা কি সুন্দর সেই প্রকৃতির কাঁচা গন্ধ। আর সেসবের মোলায়েম গন্ধ আস্তে আস্তে মেঘার নাসান্দ্রে প্রবেশ করে। কিন্তু তার সাথে কোনো পুরুষালি গায়ের পারফিউমের তীব্র গন্ধও নাসান্দ্রে বারি খাচ্ছে বারং বার। এতো সব কিছুর মধ্যে কিছুতেই আর ঘুমিয়ে থাকতে পারলো না। টুপ করে চোখ টা খুলে ফেলে। এরপর সামনে তাকাতেই দেখে কারো বস্ত্র হীন বুকে নাক বাজিয়ে শুয়ে আছে। এরপর মাথা তুলে দেখে ব্যাক্তি টির মুখ দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই ব্যাক্তি যে আগে থেকেই তার দিকে তাকিয়ে ছিলো তা দেখেই দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। এরপর সেই ব্যাক্তি থেকে উঠার চেষ্টা করতে লাগলে পেটে অজস্র ব্যাথা অনুভব করলো। তাই সাথে সাথে আহ্ করে উঠলো।

“সমস্যা কি তোমার? আস্তে উঠা যায়না? আমার থেকে শুধু পালানোর ফন্দি? দেখি কোথায় লেগেছে?”

বলেই আদ্রিয়ান যখন চাদর উঠিয়ে দেখতে নিবে তখন মেঘা লজ্জায় চাদর টা সরাতে দিলো না। এতে আদ্রিয়ান কানের কাছে গিয়ে লো ভয়েসে

“গত কাল রাতেই কিন্তু সব লজ্জা দেখে নিয়েছি। এখন এতো লজ্জা পেয়ে কি হবে? নাকি তুমি চাইছো আবার তোমার লজ্জা গুলো খুঁটে খুঁটে ভাঙ্গায়?”

আদ্রিয়ান এর এরূপ কথা শুনে মেঘার তো জান যাই যাই অবস্থা। কি অসভ্য লোকটা। কালকের পাগলামি গুলো কি কম ছিল যে এখন আবার। এসব ভেবেই আরো বেশি লজ্জা পেতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো কালকের ঘটনা

গতকাল রাতে –

আদ্রিয়ান যখন মেঘাকে দেখতে ব্যাস্ত তখন মেঘার ঘুম টা হালকা হলো। এরপর পিট পিত করে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান মোহনীয় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর সেই দৃষ্টির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। তাড়াতাড়ি শুয়া থেকে উঠে আদ্রিয়ান এর সম্মুখে বসলো। ততক্ষনে আদ্রিয়ানো খেয়াল করলো মেঘা জেগে গেছে। মেঘাকে বউ রূপে খুবই মোহণীয় লাগছে। আর ঘুম ঘুম ভাবটা এখনও কাটেনি তার, যার জন্য বাচ্চা বাচ্চা টাইপের লাগছে। আর কাজলও হালকা লেপটানো। বেশিক্ষণ এসব খেয়াল না রেখে মেঘাকে বললো শাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে অজু করে আসতে। মেঘাও আদ্রিয়ান এর কথা মত অজু করে আসলো। আদ্রিয়ানও অন্য বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর –

মেঘা একদম গোসল করেই বের হয়েছে। রুমে এসে দেখে আদ্রিয়ান আগে থেকেই বসে অপেক্ষা করছে তার জন্য। আদ্রিয়ান পাঞ্জাবি বদলিয়ে টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরে বসে আছে। আদ্রিয়ানও হয়তো গোসল করে এসেছে। চুল গুলো হালকা কপালে লেপটানো। খুবই স্নিগ্ধ লাগছে তার অর্ধাঙ্গ কে। আদ্রিয়ান হাতের জিনিস গুলো থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেঘার দিকে নজর দিলো। তার খুব পছন্দের শাড়ি পড়েছে মেঘা। এস কালারের মধ্যে হালকা সিল্ক মিশ্রিত জর্জেটের শাড়ি। তার মধ্যে মাথায় টাওয়েল পেছানো। হয়তো গোসল করেছে। কপালে ফোঁটা ফোঁটা পানি এখনও লেগে আছে। কৃত্রিম সাজ টা নেই। মেঘা হালকা মেক আপ করেছিল। আর চুল গুলোও হিজাব দিয়ে বাধা ছিল। তাই এসব তুলতে তার তেমন কষ্ট হয়নি। আদ্রিয়ান হাতের জিনিস গুলো রেখে মেঘার কাছে গেলো। এরপর নামাজের কথা বলে দুজনেই নতুন জীবনের সূচনা করতে আল্লাহ এর কাছে প্রার্থনা করল। যাতে তাদের জীবনে কোনো ধরনের অশান্তি না আসে। এরপর নামাজ পড়া শেষ হলে দুইজনই জায় নামাজ ঘুচিয়ে নিলো। মেঘা আদ্রিয়ান এর টা নিয়ে নিলো। এরপর দুইজনের জিনিস গুলো আলমারিতে গুছিয়ে রাখলো। এরপর মেঘা যখন পিছনে ফিরবে তখন দেখে আদ্রিয়ান তার পিছনেই আছে যার জন্য হালকা ধাক্কা খেলো। আদ্রিয়ান সেসবের তোয়াক্কা না করে মেঘাকে নিয়ে গিয়ে বেডে বসালো। এরপর মাথা থেকে ওড়না ধারা হিজাব বাঁধা টা খুলে নিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিলো। মেঘার চুল গুলো অনেকটায় বড়ো যার চুল গুলো বেডে ছড়িয়ে গেলো। এখনও প্রায় অনেকটায় ভিজা। এই মেয়ে যদি চুল ভিজায় তাহলে আর সেই চুল সহজে শুকায়ও না। সার্ভেন্ট কে দিয়ে এই মেয়ের চুল শুকাইতে হতো। নাহলে ঠান্ডা লেগে যেতো। মেঘার আব্বু এই বিষয়ে আদ্রিয়ান কে আগেই বলে রেখেছিলো। যার আদ্রিয়ান আগে থেকে একজন সার্ভেন্ট রেখেছিল মেঘার চুলের যত্ন করার। কিন্তু মেঘাকে জিনিসটি বুঝতে দেইনি। কারণ সার্ভেন্ট টিকে আগে থেকেই বলা হয়েছিল যে মেঘার চুল গুলো তার খুব পছন্দের তাই সেই সার্ভেন্টই মেঘার চুলের সব যত্ন নিবে। এমনটাই মেঘাকে বলা হয়েছিল। যার জন্য মেঘাও হাসি মুখে তা মেনে নেই। কারণ মেঘা নিজের চুল নিজে কখনোই যত্ন করতে পারতো না। সব সময় তার আব্বুই যত্ন করতো।

আদ্রিয়ান টাওয়েল নিয়ে মেঘার চুল গুলো মুছে দিচ্ছে। মেঘা যখন এসব দেখলো তখন সাথে সাথে সরে গিয়ে

“আমাকে দিন আমি মুছে নিচ্ছি ”

মেঘার এরূপ কথা শুনে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বেঙ্গ করে বললো

“আমাকে দিন আমি মুছে নিচ্ছি। হ্যা আগে তো তুমিই মুছতে। বাচ্চা বাচ্চার মত থাকো। এতো পাকনামি করতে কে বলেছে”

আদ্রিয়ান এর এরূপ বেঙ্গার্থক কথা শুনে মেঘার তো চোখ কপালে। কি বলে এই লোক? আমি বাচ্চা,,, মেঘা উঠা থেকে সরিয়ে সামনে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে কোমরে হাত দিয়ে এক হাত উচু করে শাসিয়ে

“কি বললেন আমি বাচ্চা? আমি বাচ্চা হলে আপনি তো বুইড়া! আর বাচ্চা হলে বিয়ে করেছেন কেনো? আপনার মত বুড়ি দেখেই বিয়ে করতেন!”

জোরে জোরে এসব বলেই মেঘা হাঁপাতে লাগলো। আর হঠাৎ মেঘার এরূপ কাণ্ডে আদ্রিয়ান এর পেট ফেটে হাসি আসছিল। যায় হোক বউ টা তার ঝগড়া করতেও জানে। আরেকটু খেপালে মন্দ হয়না।

“কি বললে আমি বুইড়া? আরে আমার পিছনে মেয়েদের লাইন লেগে যাই। কারো প্রেমিক হওয়ার জন্য, কারো জামাই হওয়ার জন্য, আর কারো কত কি! নিতান্তই আমি ভদ্র ছেলে তাই ওইসবে চোখ যাইনি। এখন মনে হচ্ছে ওইগুলো কে সাই দিলেই ভালো হতো। আজকে এই বাচ্চার কথা গুলো শুনতে হতো না।”

আদ্রিয়ান এর কথা শুনে মেঘার আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার কাজ হলো।

“আপনি ওই মেয়েদের সাই দিবেন?”

“হ্যা,, সাই দেবো না কেনো? নিজের বউ যখন বুইড়া বলে তখন তো আমার মত বুড়ি দেখেই মেয়েদের পিছনে ছুটতে হবে। বউ এর আদেশ বলে কথা। মানতে তো হবে।”

আদ্রিয়ান ইনোসেন্ট ফেস করে বললো। এরপর মেঘার পরবর্তী পদক্ষেপ দেখার জন্য প্রস্তুতি নিলো।

“ঠিক আছে। যান আপনি আপনার মত পছন্দের মেয়ের কাছে। ধুর থাকবোই না এখানে। কেনো যে আব্বুর কথাই রাজি হলাম আপনাকে বিয়ে করার। এখন আমার কপাল পুড়ছে। জামাই টা পুরো লুচু।”

এসব বলতে বলতে মেঘা পিছন দিকে হাটা দিল। আদ্রিয়ান এর এখন পেট ফেটে হাসিটা আর আটকাতে পারলো না। হাহাহাহা করে হেসে দিলো। আদ্রিয়ান এর হাসির শব্দ শুনে মেঘা পিছন দিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ান এর হাসি দেখতে লাগলো। বুঝতে পারলো না এখানে হাসির কি হলো। আবার ফিরে আসলো মেঘা আদ্রিয়ান এর কাছে

“এই এই আপনি এইরকম অসভ্যের মত হাসছেন কেনো?”

“আসলেই তুমি একটা পিচ্ছি। আমার পিচ্ছি বউ। আর আমার কোনো বুইড়া বউ এর দরকার নেই। এটাকে দিয়েই চলবে। এতো কষ্ট করে এটাকে আমার নিকটে আনলাম। তিন মাস ধরে ধৈর্য্য ধরে কাছে এনেও দূরে সরিয়ে রাখলাম। সব কি এমনি এমনি? উহু এই পিচ্ছি বউটা আমার কাছে সব কিছুর থেকে অনেক দামি। নিজের প্রাণ থেকেও বেশি। তোমার মধ্যেই তো আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাই। আর যার প্রাণ এই পিচ্চির মধ্যে তার কে কিভাবে যেতে দেই। বেঁধে রাখবো একদম। আর আমার থেকে দূরে যেতে চাইলে তোমাকেও শেষ করবো আর আমি নিজেও শেষ হয়ে যাবো। কিন্তু কখনো তোমাকে আমার কাছ থেকে যেতে দেবো না। আমার #নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি তুমি। আমার হৃদস্পন্দন তুমি। আমার স্নিগ্ধ পরী।”

আদ্রিয়ান এর এরূপ কথা শুনে মেঘার চোখে অশ্রু চলে আসলো। এরপর আদ্রিয়ান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিয়ান বলিষ্ঠ হওয়ায় ঠিক করে ধরতেও পারছে না।তবুও এমন ভাবেই ধরেছে যে হাত থেকে ছুটে গেলেই আদ্রিয়ান কে হারিয়ে ফেলবে। আর মেঘার এরূপ আচরণে আদ্রিয়ান এর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অবশেষে তার প্রেয়সী তার কাছে এসেছে।

“এতো কেনো ভালোবাসেন আমায়? আমি তো সব মেয়ের মতোই সাধারণ। কিন্তু আপনার ব্যাক্ত আলাপে আমাকে সাধারণ থেকেও অসাধারণ করে তুলেছে। নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে যে আপনাকে আমি নিজের করে পেয়েছি। আমিও যে আপনাকে নিজের সবটা দিয়েই আসক্তি হয়েছি আদ্র। #নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি তে যে আমিও খুব জটিল ভাবে আপনার সাথে মিশে গেছি আদ্র।”

অবশেষে সেই ক্ষন আসলো। মেঘার মুখ থেকে সেই বাক্য গুলো বের হলো যেই বাক্য গুলো শুনার জন্য এতো গুলো দিন অপেক্ষা করেছে। আজকে তার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। পেরেছে সে তার আসক্তি কে নিজের প্রতি আসক্ত করতে। আদ্রিয়ান মেঘাকে সেই অবস্থাতেই কুলে উঠিয়ে আদ্রিয়ান রুমের সাথে অ্যাটাচ করে মিনি ট্যারেচে গেলো। ঐখানে সুন্দর করে ফুল দিয়ে ডেকোরেট করা দোলনা ছিলো। মেঘাকে কুলে করে নিয়ে ঐখানে গিয়ে বসলো। রাতের আকাশে চাঁদ উঠলেও মেঘেরা আনাগুনা করছে স্তম্ভে স্তম্ভে। হয়তো একটু পর বৃষ্টি আসবে। ঠান্ডা বাতাসে দুই মানব মানবীর শরীরে শীতল হাওয়া লেগে গেলো। মেঘার হঠাৎ করে এরূপ আবহাওয়ায় শীত লাগছে। তাই একটু কেপে উঠলো।

“আজ বৃষ্টিতে ভিজলে কেমন হবে স্নিগ্ধ পরী? আজকে আবহাওয়াটা দেখেছো। একদম আমার পছন্দের। চাঁদ, মেঘ, ঠান্ডা হাওয়া সবই মিলেমিশে একাকার। আর এই মিশ্রিত রূপেই আমার বুকে এসে এই যে তুমিও তোমার অব্যাক্ত অনুভূতি ব্যক্ত করেছো। তাতে আমিও এই প্রকৃতির মিশ্রিত অনুভূতির সাথেও একাকার হচ্ছি। তুমি কি শুনতে পারছো এই অস্বাভাবিক স্পন্দনের গতি গুলো স্নিগ্ধ পরী?”

আদ্রিয়ান এর এরূপ কথা শুনে মুখ তুলে তাকালো। এরপর আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে আবার আকাশের ওই হালকা মেঘে ঢেকে যাওয়া চাঁদ টা কে দেখলো। সত্যি আজ প্রকৃতি টা খুব মোহনীয়। এরপর আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালো। হঠাৎ করেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি শুরু হলো। আস্তে আস্তে তার প্রকোপ বাড়াতে লাগলো। আর সেই বৃষ্টির প্রকোপে দুই মানব মানবী ভিজতে লাগলো। আদ্রিয়ান দেখলো মেঘার শরীর অলরেডী ভিজে গেছে। কারণ সে একটা জর্জেটের শাড়ি পড়েছিল। যা এখন শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। এসব দেখে আদ্রিয়ান একটা ঢুক গিললো। এরপর মেঘার দিকে হাত বাড়িয়ে কপালে পরে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। এরপর লো ভয়েসে

“আজ যদি নিষিদ্ধ কিছু করি তাহলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে স্নিগ্ধ পরী?”

আদ্রিয়ান এর এরূপ কথাতে মেঘার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। আদ্রিয়ান কে ধরা হাত গুলো আরো শক্ত করে ধরলো মেঘা। মাথা নিচু করে থাকলো মেঘা। কিছুই বললো না। মেঘাকে কোনো কিছু বলতে না দেখে আদ্রিয়ান আর কিছু বলে না।

“ডোন্ট ওরি জান। তোমার অনুমতি ব্যতীত কখনোই তোমাকে নিষিদ্ধ ইচ্ছে গুলো প্রকাশ করবো না।”

বলেই যখন আদ্রিয়ান মেঘাকে নিয়ে উঠতে চাইলো তখন মেঘা আদ্রিয়ান এর বুক খামচে ধরলো। আদ্রিয়ান কে কুলে থাকা অবস্থাতেই জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিয়ান মেঘার পজিটিভ সাইন দেখে কানের কাছে বললো

“পিচ্ছি বউ এবার তোমার কি হবে? ধরা তো দিয়ে দিলে। এখন আমার পাগলামি গুলো সামলানোর দায়িত্বভার তোমার জান।”

এরূপ কথা বলেই আদ্রিয়ান মেঘাকে কুলে নিয়ে বেডে গেলো। এরপর মেঘার কপালে এক কিস করে তার অব্যাক্ত অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে বাড়াতে লাগলো। আর তার সাথে বাড়তে লাগলো দুই মানব মানবীর স্পর্শকাতুরে কিছু সুখময় ধ্বনি। যা দেওয়ালের মধ্যেই বারি খেতে লাগলো। প্রকৃতিও তাদের সুখময় অনুভূতির মাঝেই সাক্ষী হয়ে থাকলো।

#চলবে_কি?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#বোনাস_পর্ব
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

আজ মেঘা – আদ্রিয়ান এর রিসিপশন। বাড়িটি কে খুব সুন্দর করে রাজকীয় ভাবে সাজানো হয়েছে। যেহেতু বিয়েটা তেমন ধুমধাম করে হয়নি তাই রিসিপশন টা বড়ো করে হচ্ছে। এতে অবশ্য আদ্রিয়ান দ্বিমত পুষণ করেছিল। অনুষ্ঠান ঘরোয়া ভাবে করতে চেয়েছিল। কিন্তু দাদীমা আর মেঘার আব্বু বড়ো করেই অনুষ্ঠান করতে চাইলো। কারণ তাদেরও ইচ্ছে আছে। আদ্রিয়ান ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলেনি। মেঘাও এতে অনেক খুশি হয়েছে। আর মেঘার মুখে হাসি ফোটাতে এই সামান্য অনুষ্ঠান করাই যায়। কিন্তু এতে যে তাদের লাইফ সংকটে যাবে। নিদ্র ওইদিন আদ্রিয়ান এর বন্ধী কারাগার থেকে পালিয়েছে। আর তার সাথে খুঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে যে শুধু মাত্র নিদ্র নয় এর পিছনে বড়ো মাস্টার মাইন্ড আছে। যে নারী পাচারের মেইন লিডার। আদ্রিয়ান বিভিন্ন জায়গায় লোক লাগিয়ে রেখেছে। হয়তো কালপ্রিট কে দুই একদিনের মধ্যেই ধরে ফেলবে। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে আদ্রিয়ান এর অনুষ্ঠান। যাতে প্রায় হাজার খানিক মানুষ কে ইনভাইট করা হয়েছে। বেশির ভাগই আদ্রিয়ান এর ক্লায়েন্ট। সাথে মন্ত্রী, নেতা, গণ্য মান্য ব্যাক্তিরাও আছে। তাই সবার সেফটির ব্যাপার টাও তাকে দেখতে হচ্ছে। সব কিছুই খুব নিখুঁত ভাবেই হ্যান্ডেল করছে আদ্রিয়ান।

মেঘাকে আজ নেবি ব্লু কালারের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে। সাথে সুন্দর একটি হিজাব দিয়ে হালকা সাজ দেওয়া হয়েছে। খুবই সুন্দর লাগছে তাকে। মেঘার সাজ হয়ে গেলে সে বসে বসে আদ্রিয়ান এর ফোন নিয়ে গেম খেলতে থাকে। আদ্রিয়ান তার ফোন টা মেঘাকে দিয়ে যায়। মেঘাই বোর হচ্ছিলো দেখে তার ফোনটা দিয়ে যায়। দরজা ঠেলে তন্বী এসে মেঘার পাশে বসে তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে

“কিরে জানু? জামাই পেয়েতো আমাকেই ভুলে গেলি? এতই পর করে দিলি আমাই?”

দুঃখী দুঃখী ফেস করে তন্বী বললো। তন্বীর কথাই আদ্রিয়ান এর ফোন পাশে রেখে তন্বীর দিকে তাকালো। এরপর হালকা হেসে তন্বীকে জড়িয়ে ধরে

“কি বলছিস এসব? আমি এরকম না সেটা তুই জানিস। আর তোর সাথে কেনো যোগাযোগ করতে পারিনি তা তোর জিজু কে জিজ্ঞেস করিস। সে কি আমাকে বাইরে যেতে দিছে? নাকি কোনো মোবাইল দিছে। শুধু জেল খানাই রাখছে। কোনো স্বাধীনতায় তখন দেইনি। তো বল কিভাবে যোগাযোগ করবো আমি তোর সাথে?”

“ওরে বাবা এতো লম্বা কাহিনী? যায় বল জিজু কিন্তু তোকে খুব চোখে হারায়। দেখলি না কতবার যে তোকে দেখে গেছে হিসাব ছাড়া। ইশ আমিও যদি এরকম একটা জামাই পাইতাম তাহলে জীবনে আর কি লাগে বল?”

“কেনো রে আমাদের আসাফ ভাইয়া কি কম নাকি?”

হঠাৎ মেঘার এরূপ কথা শুনে তন্বী ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। কোন কথা থেকে কোন কথাই
যাচ্ছে।

“এখানে ওনার কথা কেনো আসছে?”

“বেবি তুমি কি আমাকে এতই অবুঝ মনে করো? আমি কি বুঝিনা? এই দুদিন ধরে তোমাদের কার্যকলাপ দেখেছি। কিভাবে চোখে চোখে কথা ইশারা হচ্ছিলো। হুমম”

মেঘার এরূপ কথাই আর চুপ থাকতে পারলো না তন্বী। এরপর বললো কিভাবে তাদের সম্পর্ক সম্ভব হয়েছে। আসাফ কিভাবে তার জীবনের গুরত্ব পূর্ণ ব্যাক্তি হয়ে উঠলো। সব কিছুই। এভাবেই অনেকটা সময় অতিবাহিত হলো। এরপর মেঘাকে নিতে দাদীমা আসে। এরপর দুইজন মিলে মেঘাকে নিয়ে যায়। ওদের সাথে চার জন মহিলা গার্ডও ছিলো। আদ্রিয়ান কিছু ক্লায়েন্ট দের সাথে কথা বলছিল। হঠাৎ করে সবাইকে সিঁড়ি দিয়ে তাকাতে দেখে সেও সেই দিকে খেয়াল করলো। আর দৃষ্টি পড়তেই আর দৃষ্টি টা সরানো সম্ভব হলো না। সাথে কয়েক টা হার্ট বিট হয়তো মিস করেছে। মেঘা আস্তে আস্তে দাদীমা আর তন্বীর সাথে কথা বলতে বলতে হালকা হাসি মুখে নিচে নামতে লাগলো। এরপর যখন নামছিল তখন তার চোখ আশেপাশে যাই। কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি টিকে খুজার চেষ্টা করে। কিছুক্ষনের মধ্যেই সেই ব্যাক্তিটি কে প্রদর্শন হয়। আদ্রিয়ান মেঘার সাথে ম্যাচিং করেই আজকের ড্রেস আপ করেছে। চুল গুলো সুন্দর করে সেট করা। মুখে হালকা চাপ দাড়ি। মুখে মায়াবিক হাসি। এক কথায় পুরো রাজকুমার লাগছে। তার রাজকুমার। এতো সুন্দর হতে কে বলেছে এই রাজকুমার টাকে? এখন যদি তার রাজকুমার কে শাকচুন্নি গুলো নিয়ে যায়? তখন তার কি হবে? না না শাকচুন্নি নিতে আসলে তাদের হাত পা ভেঙ্গে দিবে। দরকার হলে রাজকুমার কে কম্বলের ভেতর ঢুকিয়ে রাখবে। তবুও তার রাজকুমারকে কাও কে দেবে না। এরূপ কথা ভাবতে ভাবতে যখন নিচের সিঁড়িতে নামতে গেলো তখন লেহেঙ্গার পারের সাথে পা লেগে পরে যেতে নিলে কেউ এসে তাড়াতাড়ি তাকে কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলে। মেঘাও এরূপ কাণ্ডে ঘাবড়িয়ে যাই। আজকে যদি পরে যেতো তাহলে তো তার মন সন্মান টা যেতো।

“আমার স্নিগ্ধ পরীর সন্মান মানে আমার সন্মান। তার সম্মানে আঘাত আনা মানে আমার সম্মানেও আঘাত লাগা। তাই বেঁচে থাকতে কখনো নিজের সম্মানে আঘাত লাগতে দেবো না জান।”

হঠাৎ আদ্রিয়ান এর কথায় মেঘা চোখ তুলে দেখে যে আদ্রিয়ান তাকে ধরে রেখেছে। আদ্রিয়ান মেঘাকে ঠিক করে দাড় করাই। মেঘা আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। সবার সামনে কি কাণ্ডটাই না ঘটলো।

“উহু,,, এই লজ্জা শুধু আমার জন্য। বাইরের কাও কে এই লজ্জা দেখানোর অধিকার আমি তোমাকে দেইনি মেঘু।”

এসব কথা বলেই আদ্রিয়ান হাত বাড়িয়ে দিল। মেঘাও মুচকি হেসে আদ্রিয়ান এর হাতে হাত রাখলো। এরপর দুইজনই হেঁটে মেইন স্টেজে যেতে লাগলো। আর সবাই ফুল দিয়ে তাদের যাত্রাপথ গুলো ফুলের বর্ষণ সৃষ্টি করলো। মেঘার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। এতো সুখ সুখ লাগছে যে কি আর বলবে। এরপর মেঘা ও আদ্রিয়ান স্টেজে উঠে বসলো। সবাই একে একে ওদের কে শুভেচ্ছা দিতে লাগলো। এভাবেই আনন্দ উল্লাসে অনুষ্ঠান শেষ হলো।

#চলবে_কি?