প্রেম আমার-৬৫+৬৬

0
6039

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৬৫♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
আমার ঠিক সামনে কোমড় চেপে ধরে মুখে জোড়পূর্বক হাসি ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অগ্নি ভাইয়া-রুশো ভাইয়া।
তাদের ভাবখানা কিছুটা এরকম যেনো কোমড় ফাটবে তবুও মুখ ফুটবে না।

তখন নীবিড় ভাইয়া চলে যাবার পর বেশ কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে উনি ঠিক কোনদিন দিয়ে যাবেন তা দেখতেই ছুট লাগাই আমি। যেহেতু আমার ঘরের জানালা দিয়ে বাড়ির পেছন দিকে যাওয়া যায় সেই হিসেবেই আমি তৎক্ষণাৎ ঘর থেকে বেড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ির পেছন সাইডে চলে আসি। আর এসেই আমার দু ভাইকে কোমড় চেপে ধরে এক পা এক পা করে হেটে আসতে দেখেই থেমে যাই আমি। ভাইয়ারাও তাই, আমায় এভাবে এই সময় এই জায়গায় একদমই আশা করে নি তারা। দুজন দুজনের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অতঃপর দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে তারা আমার দিকে। কিন্তু আমার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ তাতে জমা একরাশ সন্দেহ। নিজেরদের বাড়িতে কেউ এভাবে চোরের মতো ঢুকলে তাতে নিশ্চয় কোনো না কোনো ঘাপলা রয়েছে এটা বাস্তব। সেই ভেবেই চোখের দৃষ্টি আরোও খানিকটা সরু করলাম আমি। ভ্রু নাচিয়ে ভাইয়াদের জিজ্ঞেস করলাম,

—- কি! কোথায় থেকে আসা হচ্ছে ভাইয়ারা?

আমার প্রশ্নে একটা শুকনো ঢোক গিললো দুজনেই। রুশো ভাইয়া এক হাতে অগ্নি ভাইয়াকে ধরে রেখেই দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,

—- আরে ছুটকি, তু..তু..তুই এখানে কি করছিস, এখনোও তো পুরোপুরি রেডিই হোস নি!

রুশো ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে এবার আমার বিগ পয়েন্টে আঘাত করে বসলো অগ্নি ভাইয়া। বেঁকে যাওয়া কোমড় টাকেই চেপে ধরে মুখ তুলে তাকিয়ে বিচক্ষণ চোখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অামায় দেখে নিয়ে ভাইয়া বললো,

—- একি রে, তোর গালে হলুদ! এখনোও তো প্রোগ্রাম শুরুই হয় নি তাতেই হলুদ লাগালো কে তোকে?

এবার পড়লাম আমি চরম বিপাকে, না জানি নীবিড় ভাইয়াকে ভাইয়ারা দেখেছে কি না। যদি না দেখে থাকে তবে আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু যদি দেখে থাকে? কি বলবো আমি এখন?
আমায় চুপ থাকতে দেখে ভাইয়ারা একে অপরের দিকে দুষ্টু হাসি হেসে তাকালো। রুশো ভাইয়া দাঁত বের করে লম্বা একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

—- একচুয়ালি কি হয়েছে জানিস তো ছুটকি! ব্রো যেই কাজে এসেছিলো আমরাও ঠিক একই কাজে বেড়িয়ে ছিলাম। বাট ভাগ্য দেখ! আমরা দেয়াল টপকে ফেরার পথে আর ব্রো যাওয়ার পথে, তিন জনই একি জায়গায় ধুপুস!

রুশো ভাইয়ার কথার প্রতিউত্তরে আমার ঠিক কি বলা উচিত বা কি ধরণের রিয়াকশন দেওয়া উচিৎ জানা নেই আমার। লজ্জার সাথে পেট ফাটা হাসির সংমিশ্রণ ঘটিত এক উদ্ভুৎ বিক্রিয়া সাধিত হচ্ছে আমার অন্তরে। জানি না উৎপাদ হিসেবে ঠিক কি ফলাফল আসবে যার দরুন নির্বিকার আমি। যেহেতু হেসে উড়িয়ে দেবার মত পরিস্থিতি আমার নেই সেহেতু ঠোঁট চেপে ধরে হাসি কন্ট্রোল করে জিজ্ঞেস করলাম,

—- তা উনি কি চলে গিয়েছেন?

বিনিময়ে অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া স্বস্তির হাসি হাসলো, মাথা নাড়ি সম্মতি জানাইয়ে ধীর পায়ে চললো তারা আমার পিছু পিছু। তিন ভাই বোনই অবশেষে নিজেদের বাসায়ই চোরের বেশে প্রবেশ করলাম অগত্যাই।
.
🌼
.
পুরো বাড়ি জুড়ে হলুদের তোরজোড় চলছে। সবার খুশি যেনো আর ধরে না। হলুদেই এতো মানুষ এসেছে তবে বিয়েতে ঠিক কতো জন মানুষ আসবে ভাবতেই চোখে সরষে ফুল দেখতে শুরু করে দিয়েছি আমি।
এদিকে রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়াকে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে মুভ লাইগিয়ে দিয়ে তাদের কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে বলায় তারা একটু বিশ্রাম করছে। যদিও আমি বাদে বাড়ির লোকেরা কেউই জানে না বিয়ের আগে দুই ছেলেই কোমড় ভেঙে ফেলেছে। জানলে নিশ্চয়ই এলাহি কান্ড বাঁধিয়ে ফেলতো সকলে মিলে।

কিছুক্ষণ আগে আমি রেডি হয়েছি কিনা তা স্বচক্ষে দেখবার সুবাদে ঘরে এসেছিলো খালামুনি। আর ঘরে এসে আমাদের তিন ভাই-বোনেরই গালে হলুদ দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যান তিনি। অবশ্য ভ্যাবাচেকা না খাবার মতো কান্ড তো আর আমরা ঘটাইনি। সেহেতু টাস্কি খাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। খালামুনি আমাদের গায়ে হলুদ ছোঁয়ানোর পূর্বের হলুদের অস্তিত্ব দেখতে পেয়ে কপাল কুঁচকায়, অবাক হয়ে আমাদের জিজ্ঞেস করে,

—- কিরে তোদের গালে হলুদ এলো কোথায় থেকে?

খালামুনির প্রশ্নের জবাব স্বরূপ আমি বা অগ্নি ভাইয়া কিছু বলবো তার আগেই রুশো ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে জবাব দেয়,

—- আর বলো না আম্মু, ছুটকি আর ব্রোর নাকি হলুদ হলুদ খেলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই আর কি তিন ভাই-বোন মিলে একটু হলুদ হলুদ খেলছিলাম। হেহে!

রুশো ভাইয়ার জবাবের বিনিময়ে খালামুনি চোখ বড়বড় করে ফেলে। আমাদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোড় পূর্বক দাঁত কেলিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাই আমরা। অতঃপর খালামুনি হাসতে হাসতে বলে,

—- তোরা কি আজীবনেও বড় হবি না?

সাথেসাথেই আমরা তিন জনই খুব সুন্দর করে নিজেদের ঝকমকে দাঁত গুলো বের করে দিয়ে বলে উঠি,

—- বুড়ো হয়ে দাঁত পড়ে গেলেও না।

খালামুনি আমাদের কথায় হু হা করে হেসে ফেলে। আরোও ১০ মিনিট সময় দিয়ে, ঠিক সেই ১০ মিনিট পরই আমাদের স্টেজে গিয়ে বসতে হবে বলে কড়া গলায় আদেশ দিয়ে যায়। আমরাও বাধ্য সন্তানের মতোই চোখের পলক ফেলে খালামুনির আদেশ ধার্য ধরেই সম্মতি জানাই।
.

—- ভাইয়ারা তোমাদের হলো? এখন তো চলো, সবাই অপেক্ষা করছে!

বিনিময়ে ভাইয়ারা একে অপরের দিকে এক পলক চেয়ে ঠোঁট উল্টালো। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগোতে নিলেই আমি হাতের ইশারায় থামতে বললাম তাদের। দৌড়ে গিয়ে হেয়ার ব্রাশটা নিয়ে এসে এক এক করে দুজনেরই চুলগুলো খুবই যত্নসহকারে ব্রাশ করে দিলাম আমি।
অগ্নি ভাইয়া-রুশো ভাইয়া মুচকি হেসে ছলছল চোখে আমার দিকে তাকাতেই আমারও চোখে জলেরা এসে জমাট বাধতে শুরু করলো। ঠোঁট উল্টে আমি জিজ্ঞাস করলাম,

—- তোমদের চোখে জল কেনো ভাইয়া?

আমার প্রশ্নে চটজলদি চোখ মুছে নিয়ে আমায় ঝাপটে ধরলো দুজনেই। পরম স্নেহে আবদ্ধ হয়ে ভাইয়াদের আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমিও। বিয়ের পূর্বে বিয়ে নিয়ে উত্তেজনার শেষ না থাকলেও শেষ সময় এসে বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়োয় সকলেরই। মেয়েদের যে যেতেই হয়, আজ হোক কাল হোক একদিন না একদিন শ্বশুর বাড়িতে কদম ফেলতেই হয়। সেই থেকেই শুরু হয় দূরত্ব তবে সেটা শুধুই আপেক্ষিক। আর রইলো ভালোবাসার দূরত্ব? সেতো কমার বদলে আরোও মাত্রাতিরিক্ত গভীরতায় ছেঁয়ে যায়। হাহাকার হয়ে পড়ে রয়ে হৃদয়ের ছোট্ট কুঠুরিটায়।
.
🌼
.
অবশেষে শেষ হলো গায়ে হলুদ ছোঁয়ানোর প্রতিযোগিতা। এখন মনে হতে পারে অনুষ্ঠানের বদলে গায়ে হলুদকে প্রতিযোগিতার সাথে তুলনা করছি কেনো? তবে বলবো একবার অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়ার দিকে চোখ বুলিয়ে নিতে। হলুদের চাদরে ঢাকা পরে তারা বর্তমানে হলুদিয়া ভূত বৈ কিছুই না। ভাজ্ঞিস মাঝখান থেকে বেঁচে গিয়েছি আমি। তবে হলুদের থেকে বেঁচে গেলেও মিষ্টি আর ফলের থেকে বাঁচতে পারিনি আমি। অনুষ্ঠানে যতো জন মহিলারা এসেছে সবারই আবদার আমার গায়ে হলুদ ছোঁয়ানোর। বেশ তো! হলুদই তো ছোঁয়াবে, তাতে আর এমন কি? তাই দুবার না ভেবেই খুশি মনে মিষ্টি হাসি আমি। কিন্তু এই মিষ্টি হাসিই যে আমার পেটে মিষ্টির গোডাউন তৈরি করে ফেলবে তা জানা ছিলো না আমার।

আম্মু-খালামুনির পর আমায় যতো জন মহিলারা মিলে হলুদ ছুঁইয়েছে তারা সকলেই সাথে করে একটা করে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছে আমায়। ছোট ছোট মিষ্টি হলেই কি হবে? তাদের মিষ্টতা তো আর কম নয়! যার দরুন টানা ১০ পিস মিষ্টি গিলে নেওয়ার পর উল্টি সিস্টেম অন হয়ে যায় আমার। এমন করুন অবস্থায় একমাত্র আম্মুই পারে মহিলাদের বোঝাতে, সেই হিসেবেই করুন চোখে আকুতি করি আমি আম্মুর কাছে। আম্মু মেয়ের এমন করুন পরিস্থিতি দেখে কষ্ট পাওয়ার বদলে ফিক করে হেসে ফেলে, অতঃপর মহিলাদের বুঝিয়ে বলে যাতে শুধু হলুদই ছোঁয়ায়, এসব মিষ্টি কিংবা ফল না খাওয়ায়, নয়তো তার মেয়ে বিয়ের আগেই ঠাস করে ফুটে গিয়ে আকাশে উড়ে যাবে।

সবই যেখানে ঠিক চলছিলো সেখানে বিপত্তি ঘটায় রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া। তাদের একে অপরের অভিযোগ তাদের নাকি বেশি করে হলুদ মাখানো হচ্ছে যেখানে অপর পক্ষকে কম। কিন্তু এই দুই বান্দরকে কে বোঝাবে যে হলুদ কেউ দাড়ি-পাল্লায় মেপে ছোঁয়ায় না। যার দরুন সকলের ছোঁয়ানো হয়ে গেলে দুজনেই হলুদের বাটি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ইচ্ছেমতো একে অপরকে হলুদে চুবিয়ে তবে শান্ত হয় তারা। তাদের কোমড় ভাঙা অবস্থায় হলুদ নিয়ে কুস্তি করা দেখে হাসিতে ফেটে পড়ে সবাই। তবুও কেউই তাদের থামাতে পারে নি। অবশেষে কুস্তি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে হলুদিয়া ভূত হিসেবে পরিচয় পেলো দুজনেই।

.

রাত ৮ টা বেজে ১৫ মিনিট……….

আর হয়তো ১০ কি ১৫ মিনিটের মাথায় নীবিড় ভাইয়ারা পৌঁছোবেন আমাদের বাসায়। রাত্রিরা বেশ কিছুক্ষণ আগেই এসে পড়েছে। আজকের হলুদের কাহিনি শুনে রাত্রির সে কি হাসি!
রুশো ভাইয়া কি করে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে এসেছে সেই গল্প ধরেই পাড় করে দিয়েছে পুরো ৩০ টা মিনিট।
এদিকে রিমির আনন্দের সীমা নেই। পুরো বাড়ি জুড়ে দাপিয়ে বেড়োচ্ছে সে। অথচ গতকাল কতো বড় একটা কান্ড ঘটালো তার বিন্দুমাত্রও রেশ নেই তার ছোট্ট মস্তিষ্কটায়। ভাজ্ঞিস মদ খেয়ে সব ভুলে গিয়েছে নয়তো ভাইয়াদের সামনে ভুলক্রমেও পড়তো না সে।

আমাদের গল্পের মাঝেই গাড়ির হর্ণ কানে ভেসে আসতেই বসা থেকে উঠে পড়ে ভাইয়ারা। একসাথেই দ্রুত পায়ে ছুট লাগালো তারা সদর দরজা বরাবর। সাথে হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো আম্মু আর খালামুনিও। অবশেষে নীবিড় ভাইয়ারা চলে এসেছেন। নিচ থেকে ভাইয়াদের সম্মিলিত হাসির ঝংকারে তা স্পষ্ট।
নীবিড় ভাইয়ার কন্ঠ কানে পৌঁছোতেই মুচকি হাসলাম আমি। হলুদের সময় হাতে পড়ে নেওয়া মেহেন্দির দিকে তাকাতেই সর্বপ্রথম “নীবিড়” লেখাটা চোখে ভাসলো আমার। অল্প সময় রেখেই এতো গাঢ় রং দেখে বিস্মিত হলো রাত্রি। আমার হাতটা নিজের কোলের ওপর বিছিয়ে মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগলো সে মেহেন্দির মন মাতানো রঙের মাঝে অন্ধিসন্ধির সাথে নীবিড় ভাইয়ার জ্বলজ্বল করতে থাকা নামটা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হাতটা দেখে নিয়ে মুখ কালো করলো রাত্রি। নিজের মেহেন্দি পরা হাতটা আমার সামনে ধরে ঠোঁট উল্টে সে বলে উঠলো,

—- তোর ডিজাইনটা কতো সুন্দর হয়েছে রে! আর আমারটা দেখ, পার্লারের পঁচা মেয়েটা কি বিশ্রী করেই না পড়িয়ে দিয়েছে আমায়! দেখ, মনে হয় যেনো অ্যামাজনের জংগল বানিয়ে দিয়েছে।

রাত্রির কথায় হু হা করে হেসে ফেললাম আমি। আমায় হাসতে দেখে ঠোঁট উল্টানোর পরিধিটা আরোও খানিকটা বাড়িয়ে সে বললো,

—- দেখেছিস, তুইও হাসছিস! এই পঁচা মেহেন্দির ডিজাইন দেখেই যে কেউই হাসবে।

আমি আরো কিচ্ছুক্ষণ হেসে নিয়ে জোড়ে শ্বাস ফেললাম। ওর গালে দুবার চাপড় মেরে বলে উঠলাম,

—- ওরে পেত্নি! আমি তোর মেহেন্দির ডিজাইন দেখে হাসি নি। হেসেছি তোর কথা শুনে। হুহ! আরোও মেহেন্দি পড় পার্লারের মাইয়ার হাতে। এমনই হইবো!

বিনিময়ে চোখ বড়বড় করে ফেললো রাত্রি। অবাক চোখে তাকিয়ে সে বলে উঠলো,

—- মানে! তুই পার্লারের মেয়েদের থেকে পড়িয়ে নিস নি? তবে কার কাছে পড়িয়ে নিয়েছিস?

রাত্রির এমন বোকাবোকা প্রশ্নে হাসলাম আমি, উঠে দাঁড়িয়ে ওর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে উঠলাম,

—- নিজের হাত থাকতে মানুষের হাত দিয়ে পড়িয়ে নেবো কোন দুঃখে?

বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে হাটা ধরলাম ড্রয়ই রুমের উদ্দেশ্যে। আমার পেছন পেছন “বলিস কি? একাই পড়েছিস? আরে কই যাস, দাঁড়া আমিও আসছি!” বলেই ছুট লাগালো রাত্রিও।
.

ড্রয়িং রুমে পৌছোতেই সর্বপ্রথম নীবিড় ভাইয়ার গলায় যেই বাক্যটি কানে পৌছোলো সেটি হলো,

—- কিরে তোরা কি হলুদের ছোঁয়ানোর পর পানি দিয়ে গোসল করেছিস নাকি? পানি ছোঁয়ানোর পর হলুদে ডুবকি লাগিয়ে গোসল করেছিস?

বিনিময়ে একে অপরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অগ্নি ভাইয়া-রুশো ভাইয়া। দুজনই দুজনকে চোখের ইশারায় অভিযোগ ছুড়ে মেরে দোষী সাব্যস্ত করায় ব্যস্ত। এদিকে নীবিড় ভাইয়ার প্রশ্নের পরই বাড়ি কাঁপিয়ে হু হা করে হেসে উঠলাম সকলেই। নীবিড় ভাইয়া হাসতে হাসতে ভাইয়াদের কাধে দু হাত রেখে বলে উঠলেন,

—- চল শালারা, ঘরে গিয়ে তোদের সাইজ করছি।

বলেই সিঁড়ি বেয়ে ভাইয়াদের সাথে করে নিয়ে উপরে উঠতে লাগলেন উনি। ভাইয়াদের উপরে আসতে দেখে সিঁড়ির সাইডে চেপে এলাম আমি। উনি যেতে যেতেই এক পলক আমার দিয়ে তাকিয়ে নিজের ঘন পল্লব বিশিষ্ট বাম চোখটা টিপ মেরে সোজা বুকের বা পাশে গুলিয়ে চালিয়ে চলে গেলেন আমার। সাথেসাথেই ধক করে উঠলো আমার অসহায় হৃদপিন্ডটা, আবারও এক দফা ক্রাশ খেয়ে ডান হাতে বুক চেপে ধরে আনমনেই বলে উঠলাম,

—- পাগল হয়ে যাবো আমি পাগল হয়ে যাবো….!
.
🍁
.
রাত দুটো বেজে ২ টো ১৬ মিনিট,

বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছি আমি। তবুও ঘুমের ছিটেফোঁটাও চোখে ধরা দিচ্ছে না আজ আমার। ঘুমের বাপ না হোক নানু-দাদু বা তাদের আত্মাই আসুক, তাও চলবে। কিন্তু ঘুমের কোনো বংশধরই যে আমার ধারের কাছেও এসে ঘেঁষছে না। অথচ এদিকে নিত্য আপু আর রাত্রি সারাদিনের ধকল শেষে কি সুন্দর চুপটি করে ঘুমিয়ে রয়েছে। আর এদিকে আমি, না আম্মুর ভাষ্যমতে গরু চুরি করছি আর না মুরগী। তবুও মধ্যরাতে চোখ মেলে চেয়ে রয়েছি আমি। শুধু মস্তিষ্কে একটাই কথা চরকার মতো ঘুরপাক খাচ্ছে যে কাল আমার নয় আমাদের বিয়ে। কি অদ্ভুত ভাবে ৬ টা মানুষেরই একইদিনে বিয়ে। ব্যাপারটায় এতোটাই এক্সাইটেড আমি যে ঘুম তো দূরে থাক চোখটাই বন্ধ করে শুয়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে আমার।

বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে আবারও পাশ ফিরে শুবো ঠিক সেই মুহূর্তেই ফোনে মেসেজের টিউন বেজে উঠায় হকচকিয়ে উঠে বসলাম আমি। বেড টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিতেই চোখের সামনে বড়বড় অক্ষরে ভেসে উঠলো “সাদা বিলাই” send a message! স্ক্রিনে সাদা বিলাই নামটা দেখতেই ঠোঁট চেপে ধরে ফিক করে হেসে উঠলাম আমি। লক খুলে মেসেজ ওপেন করতেই চোখ বড়বড় হয়ে এলো আমার।

“ছাদে এসো অনন্যা!” মেসেজটি দেখেই খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। আমি যে জেগে রয়েছি এটা উনি জানলেন কিভাবে আর এতো রাতে ছাদেই বা ডাকলেন কেনো আমায়? আমার ভাবনার মাঝেই আবারও মেসেজ আসলো উনার নম্বর থেকে। সেখানে লেখা, ” এতো ভাবলে অল্প বয়সেই চুল পেকে যাবে, জলদি আসো আমি ছাদে অপেক্ষা করছি। কাম ফাস্ট!”
এবার আগের থেকেও চোখ বড়বড় হয়ে এলো আমার। আপাতত নিজের ভাবনাগুলো কে সাইডে রেখে খাট থেকে নেমে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে নিঃশব্দে দরজা চাপিয়ে দিলাম আমি। এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নিয়ে হাটা ধরলাম ছাদের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ না করুক কারো চোখের সামনে যেনো ধরা না পড়ি, নয়তো ইজ্জতের ফালুদা ছেড়ে কাস্টার্ড হয়ে যাবে আমার।

.

ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন নীবিড় ভাইয়া। চাঁদের আলোয় উনার স্নিগ্ধ মুখখানা দেখে আবারও বুকের বাম পাশটা চিনচিন করে উঠলো আমার। আমায় পা-মাথা অবদি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে ঠোঁটের দুষ্টু হাসির রেখা আরো দীর্ঘ করলেন উনি। বা হাতের বৃদ্ধা আঙুল বাদে বাকি চারটে আঙুল দুবার ভাঁজ করে ইশারায় নিজের কাছে ডাকলেন আমায়। আমি উনার মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতেই এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলাম উনার নিকটে। দূরত্ব আর মাত্র ১ হাত থাকাকালীন হাত বাড়িয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে হেঁচকা টান মেরে নিজের বুকের ওপর ফেললেন উনি আমায়। আমি ভয়ে উনার শার্টের হাতা খাঁমচে ধরতেই বাঁকা হাসলেন উনি। আমায় সোজা করে দাঁড় করিয়ে হাতটা নিজের সামনে ধরে বলে উঠলেন,

—- নামটা তুমি লিখেছো?

বিনিময়ে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানিয়ে মৃদু স্বরে আমি বললাম,

—- পুরো মেহেন্দি টা আমিই লাগিয়েছি।

উনি ছোট্ট করে “ইম্প্রেসিভ!” বলেই নিজের হাতটা আমার হাতের উপরে রাখলেন। উনার হাতে মেহেদী দিয়ে নিজের নাম লেখা দেখে চমকে উঠলাম আমি। বড়বড় চোখ করে অবাক হয়ে বলে উঠলাম,

—- আমি তো জানি শুধু মেয়েরাই বিয়ের আগে মেহেদি পরে আর তাতে তার হবু বরের নাম লেখে। কিন্তু ছেলেরাও লেখে বুঝি?

বিনিময়ে হাল্কাস্বরে হাসলেন উনি। আমার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,

—- কোথায় লেখা আছে শুধু মেয়েরাই তাদের জীবনসঙ্গীর নাম হাতে লিখতে পারবে, আর ছেলেরা নয়? প্রচলিত প্রথা দেখে বুঝি ভালোবাসা হয়?
.
চলবে……………..💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৬৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
বিয়ের আসর জমজমাট, চারিদিকে হইচই ভাব। আর এদিকে আজ হাজারো মানুষের ভীড়ে যেনো তুচ্ছ পিঁপড়ে সমতূল্য আমি। সাথে গায়ে এতো ভারী-ভারী গহনা। শাড়িটা যদিও ঠিকঠাক তবে গহনার ভারে আমি হতবাক! মনে হচ্ছে এই যেন ধুপুস করে শাড়ির কুঁচি ধরে হাটতে হাটতে হুমড়ি খেয়ে পড়বো বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে। অথচ নিত্য আপু আর রাত্রিকে দেখো। কতোটা ইজিলি নিজেদের সামলে নিয়েছে। একে এতো ভারী পোষাক তার ওপর ভারী মেক আপ সব মিলিয়েই কতোটা কমফোর্টেবল ওরা। আর এদিকে ভারী মেক আপ না করিয়েও উল্টাউল্টি অবস্থা আমার।

আজ আবারও যখন পার্লারের মেয়েরা আমাদের সাজাতে এসেছিলো তখনও আমি দরজা আটকে ধরে চোখ দিয়ে ছুড়ি চালানো শুরু করে দিয়েছিলাম তাদের ছোট্ট ছোট্ট কলিজার ওপর। কিন্তু সেই ছুড়ির আঘাতে যতোক্ষণে না তারা মাঠ ছেড়ে ভেগে যাবে তার আগেই রাত্রি আমায় সরিয়ে দিয়ে মিষ্টি করে হেসে দিয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসায় তাদের। এতো সব কিছুর মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি একা নই আমার সাজুনি বেস্টুও রয়েছে, এমনিতেই যতো সাজগোজ করে বিয়ের দিন ঠিক কি পরিমাণ আটা মাখবে তা ভাবতেই শিউরে উঠি আমি। আজ রুশো ভাইয়া তার এটম বোম্বকে চিনতে পারবে কিনা এই নিয়েও বড্ড চিন্তা শুরু হয় আমার।

রাত্রি আর নিত্য আপুকে মেয়েগুলো সাজিয়ে দিয়ে অতঃপর তারা সাজাতে আসে আমায়। আমিও নিজের ভাইয়ার ভাষ্যমতে কোদল আই মিন নখগুলো সাইজ করে নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখি আগে থেকেই। উদ্দেশ্য ঠিক যখনই তারা আমায় সাজানোর জন্য গায়ে হাত দিবে ঠিক সেই মুহুর্তেই বেড়ালের মতো খামচে ছিলকা তুলে দেবো তাদের। কিন্তু তা আগে থেকেই নিত্য আপু আর রাত্রি আন্দাজ করে দুজনেউ দু হাত চেপে ধরে আমার। রাত্রি আমার ডান হাত চেপে ধরে জেদি গলায় বলে উঠে,

—- আজ যা হয়ে যাক না কেনো তোকে সাজতেই হবে। আজ তোকে না সাজিয়ে বিয়ের আসরে বসতেই দেবো না আমি।

রাত্রির মতো নিত্য আপুও আমার বা হাত চেপে ধরে তবে জেদি গলার বদলে অনুরোধের কন্ঠে বলে উঠে,

—- অনন্যা, বিয়ে তো মানুষের একবারই হয়, আর এইদিন টাতে মেয়েদের সাজতেই হয়। প্লিজ আর না করো না লক্ষীটি!

তবুও মনে গলে নি আমার। আমি হাত-পা ছোটাছুটি করতে করতেই একপ্রকার ঝড় তুলে দেই ঘরের মধ্যে। এদিকে মেকআপ করানোর জন্য আগত মেয়েগুলোও আমায় রিকুয়েস্ট করতে করতে কান ঝালাপালা করে ফেলে তবুও ফলাফল ওয়াজ আ বিগ জিরো।

ঘরে যখন ঝড় থেকে শুরু করে ভূমিকম্প শুরু হবার উপক্রম এমন সময় দরজায় কড়াঘাত করে কেউ। আম্মু অথবা খালামুনি এসেছে ভেবে চোখের ইশারায় পার্লারের একটা মেয়েকে দরজা খুলতে ইশারা করে রাত্রি। মেয়েটা সম্মতি জানিয়ে দরজা খুলে দেওয়া মাত্রই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়েন নীবিড় ভাইয়া। সবাই মিলে আমাকে ধরে টানাটানি করতে দেখায় ভ্রু কুঁচকে আসে উনার। রাগি গলায় উনি ধমকে উঠে বলেন,

—- কি হচ্ছে টা কি এখানে? ওকে ধরে সবাই টানাটানি করছো কেনো?

নীবিড় ভাইয়ার ধমক খেয়ে নিত্য আপু, রাত্রি আর অপর মেয়েটি আমায় ছেড়ে দিয়ে খানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আমি মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটিয়ে পর মুহূর্তে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে উঠি,

—- দেখুন না, সবাই আমার মতো একটা নিরীহ বাচ্চাটাকে জোড় করে ভারী মেকআপ করিয়ে দিতে চাইছে, আচ্ছা আমি কি সাজতে পারিনা? পারি তো, কিন্তু ওরা কেউই আমার কথা শুনছে না। জোড় করে হলেও আমায় ময়দা দিয়ে ভূত বানিয়ে দিতে চাইছে ওরা। ওসব আমার ফেইসে স্যুট করে না, প্লিজ ওদের বোঝান।

আমার কথার মাঝেই রাত্রি ঠোঁট উল্টে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে,

—- ওসব আটা নয় অনন্যা, ইটস কল মেইক আপ!

ওমনি আমি মুখটা আগের থেকেও বেশি কাঁদো কাঁদো বানিয়ে বলে উঠি,

—- আরে উচ্ছন্নে যাক তোর মেকআপ! আমি ওসব মাখবো না মানে মাখবো না….!

আমার কথাগুলো যে ইনোর ৬ সেকেন্ডে এসিডিটি ভাগাও মিশনের থেকেও ফাস্ট কাজ করবে তা কল্পনাও করি নি আমি। আমায় অবাক করে দিয়ে নীবিড় ভাইয়া সরু চোখে নিত্য আপু আর রাত্রির দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠেন,

—- নিত্য, এসব কি? তোরা সেজেছিস সুন্দর লাগছে ঠিক আছে। বাট ওর যখন ফেইসে স্যুট করে না তখন জোড় করছিস কেনো? আমার বউ এমনিতেই সুন্দর ওকে কোনো মেক আপ করিয়ে দিতে হবে না। সিম্পল সাজ নিজেই সাজুক তাতেই খুন হয়ে যাবো আমি। ফার্দার আমার বউকে যেনো জোড় করা নাহয়!

বলেই দরজা চাপিয়ে দিয়ে বড়বড় পায়ে বেড়িয়ে যান উনি। উনি যেতেই ঘরে এতোক্ষণ যাবৎ চলমান ভূমিকম্প থেমে গিয়ে তৈরি হয় একরাশ নিস্তব্ধতা। মাঝখান থেকে দাঁত কেলিয়ে দুষ্টু মিষ্টি হাসি আমি।
.
🌹
.
চুপিচুপি রুশো ভাইয়া জুতোজোড়া হাতে নিয়ে লুকোনোর মতো সেইফ জায়গা খুঁজছি আমি। প্রায় ১৫ মিনিট ধরেই সেই অনুসন্ধান করতে করতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে আমার অথচ লুকোনোর মতো একটা ভালো জায়গাও খুঁজে পাচ্ছি না আমি।

কাঁধ ঝুঁকিয়ে প্যান্ডেলের আশেপাশে ঘুরঘুর করছি এমন সময় ধাক্কা খেলাম আস্ত একটা পিলারের সাথে। জুতোজোড়া চট করে পেছনে লুকিয়ে চোখ তুলে তাকাতেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নীবিড় ভাইয়াকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে আবিষ্কার করলাম আমি। বিপাকে পড়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে তৎক্ষণাৎ ধমকে উঠার আগেই নিজের হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলাম উনার। আমার কর্মকান্ডে হতবাক হয়ে বড়বড় চোখ করে তাকাতেই উনার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আশেপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে বলে উঠলাম,

—- চেঁচাবেন না প্লিজ। খুবই ইইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ করছি।

স্টেজের পেছন পাশে ঠিক কোন ধরণের কাজ নববধূর থাকতে পারে এই নিয়ে চরম কনফিউশনে পড়ে ভ্রু কুঁচকালেন উনি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে উনি প্রশ্ন করলেন,

—- এই সাইডে তোমার আবার কি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া, বিয়ের কনে কে এখানে চোরের মতো উলুকভুলুক করতে দেখলে লোকে কি বলবে?

বুঝলাম ডিটেইলস না শুনলে উনি কিছুই বুঝবেন না, তাই ঠোঁট উল্টে পেছন থেকে ভাইয়ার জুতোজোড়া বের করে দেখিয়ে বলে উঠলাম,

—- আরে সোজা হিসেব, রুশো ভাইয়ার জুতো লুকিয়ে রাখতে এসেছিলাম স্রেফ!

আমার উত্তরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোখ বড়বড় করে মুখ হা করে ফেললেন উনি। নিজের কপালে নিজেই হাত দিয়ে চাপড় মেরে বলে উঠলেন,

—- আরে রুশো তো তোমার ভাই, ওর জুতো চুরি করে কি করবে?

বিনিময়ে ঠোঁট উল্টানোর পরিধি আগের থেকেও খানিকটা বৃদ্ধি করে মিনমিন করে বললাম,

—- আমার কি দোষ বেস্টুর জামাই, যদি হয় আমার ভাই?

এবার আগের থেকেও দ্রুত বেগে কপাল চাপড়াতে লাগলেন উনি। জুতোজোড়া আমার হাত থেকে নিয়ে প্যান্ডেলের ওপরে ফেলে দিয়ে বলে উঠলেন,

—- জিন্দেগীতেও কেউ খুঁজে পাবে না। চলো এখন….! তোমায় খোঁজার জন্য এখনও রেডি হওয়া হয়নি আমার।

বলেই হাত ধরে টেনে লুকিয়ে লুকিয়ে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলেন আমায়। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো মুখ কালো করে পেছন পেছন যেতে লাগলাম উনার।
.
🍂
.
রেগেমেগে বোম্ব হয়ে বরের পোষাক পড়ে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে অগ্নি ভাইয়া, নীবিড় ভাইয়া সাথে রুশো ভাইয়া। তিনজনের চোখেমুখেই চরম হতাশা! শেরওয়ানী সাথে পায়জামা, চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করিয়ে কিলার লুক নিয়ে তিন জনই দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের খালি পা দেখে যে কেউই ফিক করে হেসে ফেলতে বাধ্য।
এদিকে ভয়ে ভয়ে সরু চোখে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি নিত্য আপু, রাত্রি সাথে আমি। এখন আমার মনে প্রশ্ন জাগছে যে রুশো ভাইয়ার জুতো আমি লুকোলেও অগ্নি ভাইয়ার আর নীবিড় ভাইয়ার জুতো গেলো কই? আমি তো অগ্নি ভাইয়ার টা লুকোই নি। আর নীবিড় ভাইয়ার জুতো লুকোনোর তো কোনো প্রশ্ন আসে না। যেচে কেউ নিজের জামাইয়ের জুতো লুকোয় নাকি?

বেশকিছুক্ষণ যাবৎ একে অপরের দিকে সন্দেহ ভরা চক্ষু নিয়ে চেয়ে থেকে নীরবতার পর্দা ভেদ করে অগ্নি ভাইয়া গম্ভীর গলায় নীবিড় ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

—- আমার জুতো কই? আমি শিওর তুই ই লুকিয়েছিস।

বিনিময়ে জোড় গলায় নীবিড় ভাইয়া জবাব দিলেন,

—- চুপ কর শালা, তোর জুতো আমি লুকিয়ে কি করবো?

নীবিড় ভাইয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই রুশো ভাইয়া ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,

—- আরে তোমাদের জুতো হারিয়ে যেতেই পারে বাট আমার মতো একটা ভোলাভালা বাচ্চার জুতো চুরি করলো কে?

বিনিময়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম আমি। কেউই কারো দোষ স্বীকার না করায় অবশেষে আবারও নিস্তব্ধতা ছেঁয়ে গেলো সকলের মধ্যে। নিত্য আপু বুঝলো এভাবে সময় অপচয় ছাড়া আর কোনো ফলাফলই পাওয়া যাবে না, তাই হাত উঠিয়ে আপু বললো,

—- কে কার জুতো নিয়েছে জানি না তবে অগ্নি, ভাইয়ার জুতো লুকিয়ে রেখেছে এটা আমি দেখেছি। বাকিটা তোমরা বুঝে নাও। আমার দায়িত্ব শেষ!

বলেই আরাম করে শাড়ির আঁচল ঠিক করে বসলো নিত্য আপু। অগ্নি ভাইয়াকে এভাবে সবার সামনে মাঠে মেরে দেওয়ার চরম রকমের হতাশা ছেঁয়ে গেলো ভাইয়ার অন্তরে। নীবিড় ভাইয়া চোখ ছোট ছোট করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,

—- ভালোয় ভালোয় জুতো দিয়ে দে অগ্নি, নয়তো তোর হানিমুনের টিকিট কেনা মাত্রই কুচি কুচি করে কেটে ফেলবো অামি।

নীবিড় ভাইয়ার বিপরীতে অগ্নি ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই নিত্য আপু চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

—– ভাইয়ায়ায়া….!

নীবিড় ভাইয়া জিহ্বে কামড় দিয়ে ধরে বললেন,

—– উপপসস সরি তুই যে এটার বউ এক মুহুর্তের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম। ওকে দেন অন্য কিছু করবো!
অগ্নি, এখন ভালো শালার মতো দিয়ে দে। তোর হানিমুনের টিকিট আমি কেটে দেবো নে।

নীবিড় ভাইয়ার এবারের কথাটা বেশ পছন্দ হলো অগ্নি ভাইয়ার, প্রথমে হেসে ফেললেও আবারও ঘন কালো মেঘ এসে বাসা বাধলো ভাইয়ার মুখে। মুখ কালো করে গম্ভীর গলায় ভাইয়া বললো,

—- আচ্ছা দিবো কিন্তু আমার জুতো তুই যদি নাই নিয়ে থাকিস তবে নিয়েছে কে?

পেছন থেকে দাঁত কেলিয়ে রুশো ভাইয়া হাত উঠিয়ে বলে উঠলো,

—- এইযে ব্রো এদিকে এদিকে। এমন মহান কাজ আমি ছাড়া আর কে করতে পারে বলো?

বিনিময়ে অগ্নি ভাইয়া ষাঁড়ের মতো হুংকার ছেড়ে রুশো ভাইয়ার পিঠে কিল বসাতে নিলেই এক লাফে নীবিড় ভাইয়ার কোলে উঠে পড়লো রুশো ভাইয়া। নীবিড় ভাইয়াকে আষ্টেপৃষ্টে চেপে ধরে রুশো ভাইয়া বললো,

—- আরে ব্রো এখানে পেটানোর কি আছে? তুমিও যা করেছো আমিও তাই করেছি। ইকুয়াল ইকুয়াল! এখন কেউ তো বলো এই নান্না সা মুন্না সা বাচ্চেকা জুতা কিসনে লিয়া?

নীবিড় ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে কোল থেকে নামিয়ে আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে উঠলেন,

—- ওইযে তোমার আদরের ছুটকি! জুতো চুরি করে এনে লুকোনোর জায়গা খুঁজছিলো, আমি জাস্ট জায়গা দেখিয়ে দিয়েছি দ্যটস ইট।

রুশো ভাইয়া ঠোঁট বাঁকা করে চোখ বড় বড় করে অবাক কন্ঠে বলে উঠলো,

—- ছুটকি……!

বিনিময়ে আমি চোখ বন্ধ করে দাঁত কেলিয়ে হাসলাম। মিনমিন করে বললাম,

—- আমিই বা কি করবো বলো, বেস্টুর জামাইয়ের জুতো চুরি না করলে মুখের কথার দাম থাকতো বুঝি?
.
🍁
.
ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে অদ্ভুত হলেও তিনজনের জুতোই স্টেজের পেছনে প্যান্ডেলের ওপরে পাওয়া গিয়েছে, যেটা একটা কো ইন্সিডেন্ট হলেও চমকে দিয়েছে সকলকেই। এতে করে এটা আবারও স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, ভাইয়ারা তিনজনই রুশো ভাইয়ার ভাষ্যমতে একই গোয়ালের গরু।

কাজী সাহেব আমাদের সকলকে ডেকে পাঠিয়েছেন মাত্রই। প্রথমে আমরা অর্থাৎ মেয়েদের গিয়ে স্টেজে বসতে বলেছেন। কথা আছে আমরা বসতেই উপর থেকে একটা অর্ধভেদ্য বিশাল পর্দা ফেলে দেওয়া হবে। আর আমাদের ঠিক অপোজিটে সিরিয়ালি মুখোমুখি হয়ে বসবেন ভাইয়ারা। সেই হিসেবেই আগে আমাদের নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেবার জন্য আম্মু-খালামুনি, রাত্রির আম্মু উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। সাথে বসা থেকে শাড়ির কুচিগুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমরাও। নিত্য আপু-রাত্রি খুব সহজেই নিজেদের সামলে নিয়ে এগোতে লাগলো শুধু থেমে রইলাম আমি। বাম পায়ে বড্ড ব্যাথা করছে আমার। সিঁড়ি থেকে নামার সময় এসব ভার সামাতে না পেরে হোঁচট খেয়েছি আমি। যদিও পড়ে যাই নি। যথারীতি নিজেকে সামলে নিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে পড়েছি, সবার ব্যস্ত থাকায় কেউ আমার দিকে সেভাবে লক্ষ্য না করায় বড্ড বাঁচা বেঁচে গিয়েছি তখন। তবে ততোটা ব্যাথা না পেলেও সময়ের সাথে সাথে যেনো ব্যথার অনুভূতিটা ক্রমশই তীব্র হয়ে আসছে আমার।

আমায় এগোনোর বদলে থেমে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকালো আম্মু। চিন্তিত হয়ে আম্মু জিজ্ঞেস করলো,

—- কিরে অনন্যা, কাজী সাহেব ডাকছেন তো। এগোচ্ছিস না কেনো? কোনো সমস্যা?

বিনিময়ে ঠোঁট উল্টে করুন চোখে তাকালাম আমি আম্মুর মুখপানে। মাথা ডানে-বামে নাড়িয়ে বোঝালাম যে কোনো সমস্যা নেই। জোড়ে একটা শ্বাস টেনে পা উঠিয়ে এক ধাপ ফেলবো তার আগেই কেউ আমায় চটজলদি কোলে উঠিয়ে হাটা ধরলো স্টেজের উদ্দেশ্যে। আমার সাথে সাথে এমন আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়ে স্পটে উপস্থিত প্রতিটি সদস্যও। আমি ভয়ে আঁতকে উঠে তার গলা জড়িয়ে ধরে আড়চোখে আশেপাশে তাকাতে নিলেই ভ্রু কুঁচকে ধমকে উঠলেন নীবিড় ভাইয়া,

—- পায়ে ব্যথা বলতে কি হয়? মুখে কি সুপার গ্লু মেরে রেখেছো? স্টুপিড!

বলেই আবারও হাটায় মনোযোগ দিলেন উনি। সকলের সামনে এভাবে আমায় পাজাকোলে করে নিয়ে যেতে দেখে থমকে যায় সকলেই। কাজী সাহেব বিয়ের পাত্র-পাত্রীকে এভাবে বিয়ের আসরে আসতে দেখেই জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে উঠলেন,

—- নাউজুবিল্লাহ! বিয়ের আগেই পাত্র পাত্রীকে কোলে করে নিয়ে আসছে!

কাজী সাহেবের কথায় চরম বিরক্ত হয়ে পড়েন নীবিড় ভাইয়া। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে বললেন,

—- নিজের বিয়ে করা বউকে কোলে উঠিয়েছি এতে নাউজুবিল্লাহ এর কি দেখলেন? নাউজুবিল্লাহ না বলে বলুন মাশাল্লাহ!

বলেই কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বসিয়ে দিলেন আমায়। কাজী সাহেব উনার কথার কোনো মানেই বুঝে উঠতে না পেরে মুখ হা করে রইলেন। পাশ থেকে আব্বু গলা খাঁকারি দিয়ে কাজী সাহেবকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বললো,

—- কাজী সাহেব অবাক হবেন না, ওদের আগে বিয়ে হয়েছে তবে সেটা শুধু ইসলামিক রীতি অনুযায়ী, আইনগত ভাবে হয়নি। তাই আবারও সকল রীতি মেনে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কাজী সাহেব জবাব স্বরূপ কিছুই বললেন না, মাথা নাড়িয়ে বোঝার ভান করলেন স্রেফ। তিনি একবার নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আবারও বেকুব সেজে আমার মুখপানে তাকাতেই ঠোঁট উল্টালাম আমি। বিনিময়ে উনি গলা খাঁকারি দিয়ে বাকিদের ডেকে পাঠালানে তৎক্ষণাৎ।

.

কাজী সাহেব এক মনে কিসব বুলি আওড়ে চলেছেন, যতোদূর সম্ভব দোয়া পাঠ করছেন। আমরা খুবই শান্তশিষ্ট হয়ে আধহাত ঘোমটা টেনে চুপটি করে রয়েছি উনার সেই একটি মাত্র বাক্য শুনবার অপেক্ষায়। আর সেই ছোট্ট একটা বাক্যটাই বেধে ফেলতে পারে দুটো জীবন, দুটো মন, দুটো আত্মা। বাড়ির বড় বউ হিসেবে সর্বপ্রথম বাক্যটি শুনবার ভাগ্য হলো নিত্য আপু। কাজী সাহেব দেনমোহরের পরিমাণ সাথে অগ্নি ভাইয়ার বিস্তারিত তথ্য ছোট্ট করে কয়েক লাইনে বলে নিয়ে মিষ্টি করে হাসলেন। “বলো মা কবুল” বাক্যটি উচ্চারণ করার সাথেসাথে নিত্য আপুর গালে ফুটে উঠলো গোলাপি আভা। আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের মাঝে পর্দা ফেলানোর জন্য অগ্নি ভাইয়ার লজ্জামাখা মুখটা দৃশ্যমান হলো না আমার চোখে। ঘোমটার আড়ালে নিত্য আপুর অর্ধেক মুখ দেখা যাওয়ায় তার লজ্জার ভাব স্পষ্ট।

একে একে ক্রমান্বয়ে তিনবার কবুল বলিয়ে নেওয়ার পর অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপু থুক্কু ভাবী আবদ্ধ হলো বিবাহের পবিত্র বন্ধনে।
এবার পালা এলো আমার আর নীবিড় ভাইয়ার। কাজী সাহেব আমাদের বিয়ে পড়ানোর সময় আবারও গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলেন। নিজেকে সামলিয়ে তিনি শুরু করলেন বিয়ে সম্পন্নের কার্যাদি।

মাঝখানে পর্দা থাকলেও ওপর পাশে যে নীবিড় ভাইয়া দিব্যি আমার লজ্জা পাওয়া নিয়ে নিঃশব্দে খিল্লি উড়িয়ে যাচ্ছেন এটা স্পষ্ট। এইকদিনে উনাকে বেশ চিনেছি আমি। কখন ঠিক কোন ধরণের রিয়াকশন দেন তা আগে থেকেই বুঝতে পারি এখন।

আমার ভাবনার জাল বোনা অর্ধপূর্ণ রেখেই মাঝখান থেকে ব্যাঘাত ঘটিয়ে কাজি সাহেব বলে উঠলেন,

—- তুমি কি এই বিয়েতে রাজি? রাজি থাকলে বলো “আলহামদুলিল্লাহ আমি কবুল করছি।”

বুঝলাম না আমার বেলায় এতো ক্রিটিকাল প্রসেস অন করলেন কেনো এই পেট মোটা ভূরি ওয়ালা দাড়ি বিশিষ্ট কাজী সাহেব। ভেবেছিলাম বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মিনমিন করে বলবো “কবুল”। শব্দটি শ্রবণগোচর না হওয়ায় আবারও আমায় যখন বলা হবে ” কি হলো মা, জোড়ে বলো! তুমি কি কবুল করছো?”
তখন আবারও সকলে টেনশনে ফেলে দিয়ে চুপ করে রইবো আমি সাথে এই সাদা বিলাইকে চিন্তায় ফেলে ঘাম ছুটিয়ে নিয়ে একটু টাইড দেবো। কিন্তু আমার সব আশায় জল ঢেলে দিলেন এই কাজী। বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে “আলহামদুলিল্লাহ আমি কবুল করছি”
বলতেই দীর্ঘ হাসির রেশ টেনে নীবিড় ভাইয়াকে কবুল বলতে বললেন উনি।

নিত্য আপুকে তিনবার অথচ আমায় মাত্র একবার কবুল বলিয়ে নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করিয়ে ফেলায় হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। আরে ১ বার বলে অর্ধেক বিয়ে করবো নাকি আমি? আমি তো ফুল বিয়েই করতে চেয়েছি, সাথে দ্বিতীয় বার বলার সময় একটু ভঙ্গি!
কিন্তু একি করলেন এই পেট মোটা কাজী! নিশ্চয়ই কোনো না কোনো শত্রুতা রয়েছে ব্যাটার আমার সাথে। ইচ্ছেতো করছে চেঁচিয়ে মার্কেট ফাটিয়ে ফেলি। কিন্তু এই মুহুর্তে ৩ বার কবুল বলতে না দেওয়ার অভিযোগে চেঁচালে নিজের মান সম্মান খাওয়া ছাড়া আর তেমন কিছুই হবে না যার দরুন মুখে চাবি বিহীন তালা লাগিয়ে থম মেরে রইলাম আমি।

নীবিড় ভাইয়াকে কবুল বলতে বলা হলে খুব সাবলীল ভাবেই মুচকি হেসে কবুল বলে ফেললেন উনি। স্বাভাবিক থেকেই আমায় অস্বাভাবিক যন্ত্রণা দেবার নতুন পন্থা বোধহয় উনার এই মুচকি হাসির নীরবতা।

.
অবশেষে পালা এলো দুই বিয়ে পাগলদের বিয়ের আশা পূরণের। রুশো ভাইয়া আর রাত্রির যেনো এক্সাইটমেন্ট আর ধরে না। রুশো ভাইয়ার এক্সাইটমেন্টে যা বোঝা যাচ্ছে তাতে কবুল বলতে বলা মাত্রই এক নিঃশ্বাসে তিনবার কবুল বলে ফেলবে ভাইয়া। তবে এতোক্ষণ ধরে নিজের দমিয়ে রাখা অদম্য ইচ্ছে প্রকাশের পূর্বেই রাত্রি কে প্রথমে কবুল বলতে বললেন কাজী সাহেব। যার দরুন ঠোঁট উল্টে মুখ কালো করলো রুশো ভাইয়া। চুপ করে থেকেই প্রহর গুনতে লাগলো সে কবুল বলার অপেক্ষায়।

রাত্রি এতোক্ষণ ধরে লজ্জা লজ্জা ভান ধরে ঘোমটা দিয়ে রাখায় ধরেই নিয়েছিলাম লজ্জায় লালে লাল হয়ে মিষ্টি করে কবুল বলবে সে। তবে আমায় সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে রাত্রি ঘোমটা তুলে ফরফর করে একসাথে তিন বার কবুল বলে ফেললো। সবার মুখে চরম অবাকের ভাব ফুটে উঠলেও মাঝখান থেকে অবাকের সাথে বিষম খাওয়া শুরু করে দিলো রুশো ভাইয়া। খালামুনি তৎক্ষণাৎ পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে শান্ত হলো সে। কাজি সাহেব রাত্রির এমন সুপার ফাস্ট মোশনে কবুল বলায় বিস্মিত হলেও গলা খাঁকারি দিয়ে ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়ে রুশো ভাইয়া কবুল বলতে বললেন। রুশো ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জোড়ে শ্বাস টেনে বলে উঠলো,

—- কাবিল, থুক্কু কবিল, উপপস সরি আই মিন কবুল….!

রুশো ভাইয়ার নিজের কর্মকান্ডে ভড়কে গিয়ে কবুল শব্দটাও ঠিক মতো উচ্চারণ করতে না পারায় ফিক করে হেসে ফেললো রাত্রি। সাথে হাসির ঝংকার ছন্দিত হতে লাগলো পুরো বিয়ের আসর জুড়েই।
.
.
.
.
চলবে………….💕