#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-১৫|
রীতি আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে রওনা দিলো।তখনই ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দ পেলো।এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ওয়াশরুমের দরজা থেকে ফিরে এলো।এই সকাল সকাল কে ফোন দিলো?আর কি খবর দিতে?
রীতি ফোন হাতে নিয়ে স্কিনে ভেসে উঠা নাম দেখে চোখ বড়বড় করে নেয়।
তারপর বিছানায় বসে দ্রুত ফোন রিসিভ করে বললো,
—-“আপনি এতোদিন পর কোথায় থেকে উদয় হলেন?আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?”
ঘুম জড়িত কন্ঠে অপর পাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠস্বর বললো,
—-“কেনো আমায় কি মিস করছিলে?”
রীতি চোখ নাক কুচকে বললো,
—-“আপনাকে মিস করলে আর নাম্বার চেঞ্জ করতাম না।আলতু ফালতু কথা না বলে বলুন নাম্বার কে দিয়েছে?”
—-“সে পেয়েছি।এর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।তাই তো তোমাকে ফোন করতে দেরী হলো।”
রীতি বিরবির করে বললো,
—-“কি জ্বালা নাম্বার চেঞ্জ করেও শান্তি নেই।”
মাদকতায় পূর্ণ কন্ঠস্বর বললো,
—-“না নেই।তুমি সেদিনই শান্তি পাবে যেদিন আমার কাছে ধরা দেবে।কবে দেবে ধরা?”
রীতি ঘাবড়ে গেলো কথাগুলো শুনে।না জানি কে,কি ঝামেলা শুরু করে নতুন করে।এমনিতেই লাইফ প্রব্লেমে জর্জরিত।
—-“কে বলুন তো আপনি?”
ঘন নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-“তোমার কল্প পুরুষ।”
রীতি বিস্ময় নিয়ে বললো,
—-“কল্প পুরুষ! কিন্তু আমার কল্পনায় তো আপনি নেই।তবে কল্প পুরুষ কি করে হতে পারেন?”
—–“কেউ কি নেই তোমার কল্পনায়?”
এই প্রশ্নটা শোনার পর রীতির চোখের সামনে হটাৎ করে সাদিবের মুখ ভেসে উঠলো।রীতি সাদিবের ভাবনায় ডুব দিলো।
ও পাশ থেকে সাড়া না পেয়ে বললো,
—-“কি গো কোথায় হারিয়ে গেলে?কার হৃদয়ে বিচরণ করছো?নাকি কেউ তোমার হৃদয়ে বিচরণ করছে?”
রীতি থমকে গেলো।এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললো,
—-“ফোন রাখুন।আর বিরক্ত করবেন না।ইভটিজিং মামলা দিয়ে দেবো।তারপর জেলে বসে কল্পনা করবেন।”
রীতি ফোন কেটে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
সাদিব একমনে গাছে পানি দিচ্ছে।আজকাল গাছের যত্ন নেওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।লাইফের একটা পার্ট হয়ে গেছে।মন ভালো করার অন্যতম টনিক হিসেবে কাজ করছে।
সাদিব কাজের ফাকে বারবার রীতির বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে।রীতিকে দেখার জন্য।
“আজকাল তোমাকে এত দেখতে ইচ্ছে করে কেনো?মনে হয় সারাক্ষণ দেখতেই থাকি।এতো দেখেও মন ভরেনা।তুমি আমার এমনই একজন যাকে আজীবন দেখলেও ভরবেনা এ মন।”
সাদিব গুনগুন করে গান গাওয়ার পর নিজের মনেই হেসে ফেললো।
“কি গান কি বানিয়ে দিলাম।”
রীতি পানির মগ হাতে বারান্দায় এসে দাড়ালো।প্রতিদিনকার অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে বাগানের দিকে উকি দিলো।সাদিব কাজ করছে।
রীতি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-“ইনি তো এখানে।আই উইশ কলের পার্সোন যদি সাদিব হতো! না জানি আল্লাহর কোন বান্দা আমার পেছনে পড়েছে।”
রীতি এসব ভেবে মনে একরাশ দুঃখ নিয়ে টবে পানি দিচ্ছে।
.
ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র ৫দিন বাকি।রীতি গায়ে কাধা দিয়ে বইয়ের দিকে ঝুকে পড়ায় ব্যস্ত।
পাশে রাখা মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো স্নিগ্ধসুরে।
রীতি ফোনের স্কিনে বেস্টি রাইসার নাম দেখতে পেলো।
রীতি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কাদো কাদো হয়ে রাইসা বললো,
—-“রীতি সর্বনাশ হয়ে গেছে।”
রীতি সর্বনাশের কথা শুনে হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসে।
—-“সর্বনাশ!কার সর্বনাশ?কিসের সর্বনাশ?”
—-“আমার! আমার বই হারিয়ে গেছে।”
রীতি স্বস্থির নিশ্বাস ছেড়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—-“তাতে কি কিনে নে।আমাকে বিরক্ত করছিস কেনো?”
রাইসা গলার স্বর কড়া করে বললো,
—-“তুই কেমন বান্ধবী রে?আমি একটা প্রব্লেমে আছি আর তুই দায়সারা ভাব দেখাচ্ছিস?তুই কি মনে করেছিস আমার বই কেনার টাকা নেই?বই এখানে পাওয়া যাচ্ছেনা।আমি খুজে এসেছি।এখন ইয়ার শেষের দিকে।বাংলাবাজার যেতে হবে।তুই যাবি প্লিজ আমার সাথে।যাওয়ার মতো কাউকে পাচ্ছিনা।”
—-“আচ্ছা ঠিক আছে যাবো।পরীক্ষা সামনে আর এখন আমাকে তোর সাথে ঘুরে বেড়াতে হবে।আগামীকাল সকাল ১০টায়।রাখছি।”
রাইসা নিশ্চিন্ত হয়ে বললো,
—-“আচ্ছা ডান।টাটা।”
.
সকাল ১০টা।শীতের দিন হলেও ১০টায় মিষ্টি রোদ কিছুটা কড়া রোদে পরিণত হয়েছে।রীতি ওড়নার শেষ মাথাটা দু’হাতে দুই কোনা ধরে রেখেছে সূর্যের দিকে।যেনো রোদ থেকে মুখটা বেচে যায়।
গেটের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বারবার ডানে-বামে তাকাচ্ছে।মূলত দাড়িয়ে দাড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে।
গেটের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে রীতি পেছনে ঘুরে।সাদিব বাইক নিয়ে বের হচ্ছে।
রীতি সাদিবকে দেখা মাত্রই ঘুরে সামনের দিকে তাকায়।সাদিব রীতিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বাইক নিয়ে ওর কাছে এসে মাথায় হেলমেট পড়তে পড়তে বললো,
—-“তুমি চাইলে লিফট দিতে পারি।”
রীতি সাদিবের দিকে ঘুরে সৌজন্যতার হাসি দিয়ে বললো,
—-“ধন্যবাদ।কিন্তু আমি আপনার কাছ থেকে লিফট নিতে পারবোনা।আশা করি কারণটা বুঝতে পারছেন।”
সাদিব হেলমেট খোলে স্নিগ্ধ হেসে বললো,
—-“আমি জানি তুমি যাবেনা।কেনো যাবেনা সেটাও জানি।তবুও বললাম।ভদ্রতা আর কি।আমি সামনে রিকশা পেলে পাঠিয়ে দেবো।”
রীতি নরম গলায় বললো,
—-“জ্বি ধন্যবাদ।”
সাদিবের ফোন বেজে উঠলো।সাদিব দাড়ানো অবস্থায় ফোন রিসিভ করলো।রীতি আবারো রিকশা খোজায় মনযোগ দিলো।
সাদিব ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন বললো,
—-“ভাইয়া আপনার বোন ওই ছেলের সাথে একটা বাড়িতে ঢুকছে।”
হুট করেই সাদিবের কপালের রগ ফুটে উঠলো রাগে।সাথে কিছুটা চিন্তার রেখাও।
সাদিব কঠিন গলায় বললো,
—-“বাড়ির ঠিকানা বলুন।”
রীতি সাদিবের কঠিন কন্ঠস্বর শুনে সাদিবের দিকে ঘুরে তাকালো।সাদিবকে দেখে মনে হচ্ছে রাগে ওর রক্ত টগবগ করছে।
ফোনের ওপাশের লোকটা বললো,
—–“বাড়ির ঠিকানা -*****-।”
সাদিব বাইকে উঠে বসতে বসতে বললো,
—-“আপনি প্লিজ নজর রাখুন আমি এখুনি আসছি।দেখবেন আমার বোনের যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।”
সাদিব ফোন পকেটে রেখেই যাওয়ার জন্য বাইক স্টার্ট দিবে তখন রীতি বিচলিত হয়ে বললো,
—-“সাবিহার কি হয়েছে?”
—-“ওকে রিজভী একটা বাড়িতে নিয়ে গেছে।আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।”
বাড়িতে নিয়ে গেছে এটা শুনে রীতির পিলে চমকে উঠে।অজানা আতংকে কুকড়ে যাচ্ছে।সাবিহার জন্য ভয় হচ্ছে।রীতি কাপা কাপা গলায় বললো,
—-“আমিও যাবো।”
সাদিব রীতির দিকে একবার চেয়ে কোনো কিছু না ভেবেই বললো,
—-“তাড়াতাড়ি উঠে বসো।”
রীতি কোনো কিছু না ভেবেই সাদিবের বাইকের পেছনে বসে ওর কাধে হাত রাখে।
বিপদের সময় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা।তখন লোকলজ্জার ভয়,অপবাদের ভয় থাকেনা।কে কি বলবে এসব নিয়ে কেয়ার করার সময় রীতির নেই।এখন সাবিহা ওর এক নাম্বার উদ্দেশ্য।রিজভী ওকে কেনো ওর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে আর সাবিহা কেনো যাচ্ছে?কোনো অঘটন ঘটে যাবে না তো?
নানার চিন্তা ভাবনা উকি দিচ্ছে মাথায়।বারবার মনে কু ডাকছে।সাদিব ফুল স্পিডে বাইক চালাচ্ছে।
সাদিব সাবিহার জন্য একজন বডিগার্ড রাখে।যে কিনা সাবিহাকে দূর থেকে সেফটি দিবে।সাবিহা কোথায় যাচ্ছে,কি করছে সব কিছুর খেয়াল রাখবে।আর সাদিব বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে রিজভীর ব্যাপারে খোজ নিচ্ছে।সাবিহা এসবের কিছুই জানে না।
আর অপর দিকে রিজভী সাবিহাকে বলেছে ওর মা তার ছেলের হবু বউকে দেখতে চায়।সাবিহা যেনো একদিন ওদের বাড়িতে যায়।তাহলে মায়ের সাথেও কথা, দেখা হবে আর শ্বশুর বাড়িও দেখা হলো।সাবিহা প্রথমে আমতা আমতা করলেও রিজভী পরে সাবিহাকে ম্যানেজ করে নেয়।কাউকে নিজের বশে আনার ক্ষমতা রিজভীর খুব ভালো আছে।এছাড়া সাবিহা খুবই বোকা ধরনের মেয়ে।যে কারণে সাবিহা রাজি হয়ে যায় রিজভীর কথায়।
.
সাবিহা রিজভীর সাথে রিজভীর ফ্ল্যাটের সামনে দাড়িয়ে আছে।সাবিহা বারবার নিজের ঘোমটা ঠিক করে নিচ্ছে।কেমন ভয় ভয় লাগছে।কিছুক্ষণ পর নিজের হবু শ্বাশুড়ি মায়ের সঙ্গে দেখা হবে।উনি কি বলবেন এসব ভেবেই হাত-পা জমে যাচ্ছে।
সাবিহা অবাক হয় যখন দেখে রিজভী পকেট থেকে চাবি বের করছে।
সাবিহা বিস্ময় নিয়ে বললো,
—-“রিজভী তুমি চাবি বের করছো কেনো?ভেতরে কেউ নেই?বাইরে থেকে তখনই দরজা খোলে যখন ভেতরে কেউ থাকে না।”
রিজভী সাবিহার দিকে ঘুরে বললো,
—-“আরে বোকা মেয়ে আম্মুকে সারপ্রাইজ দেবো।ভেতরে ঢুকে আম্মুর সামনে গিয়ে তোমাকে নিয়ে দাড়াবো। তাকে চমকে দেবো।দেখো কতটা অবাক হয়।তাছাড়া আম্মুকে বলিনি তুমি আসছো সারপ্রাইজ দেবো তাই।”
সাবিহা কিছুটা কনফিউশন নিয়ে শুকনো মুখে বললো,
—-“ওহ আচ্ছা।”
রিজভী দরজা খোলে সাবিহাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে।ভেতরে পা রাখতেই সাবিহার বুক ঢিপঢিপ করছে।কেমন জানি অসুস্থ লাগছে।ওর কেনো জানি ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে না।
রিজভী সাবিহাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসালো।সাবিহা বারবার এদিক সেদিক উকি দিচ্ছে।রিজভী ব্যাপারটা বুঝে বললো,
—-“আম্মুকে খোজছো?আমি তাকে ডেকে আনছি।”
সাবিহা শুকনো হেসে মাথা নাড়ালো।রিজভী একটা রুমে ঢুকলো।সাবিহা নখ খুটছে আর এদিক সেদিক দেখছে।পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে আছে।মনে হচ্ছে এখানে কেউ নেই।সাবিহার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।সাবিহার দৃষ্টি টেবিলের উপরে রাখা পানিভর্তি জগের দিকে।
রিজভী তখনই সাবিহার সামনে এসে দাড়ালো।
—-“সাবু আম্মু বাসায় নেই।”
রিজভীর কথা শুনে চমকে যায় সাবিহা।সাবিহা বসা থেকে উঠে দাড়ায়।
ভ্রু যুগল কুচকে বললো,
—-“বাড়িতে নেই মানে?”
—-“জানি না,বাড়িতে নেই।হয়তো কোথাও গিয়েছে।দাড়াও ফোন করে দেখি।”
পুরো বাড়িতে রিজভী আর সাবিহা একা এটা ভেবেই সাবিহার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
রিজভী ফোন করে কি যেনো বলছে।সাবিহা সেদিকে তাকিয়ে আছে।রিজভী যে ওকে বোকা বানাচ্ছে সেটা সাবিহার অজানা।রিজভী কাউকে ফোন করে নি।শুধু অভিনয় করছে।অভিনয় পর্ব শেষ করে বললো,
—-“সাবু আম্মু মার্কেটে গেছে।চলে আসবে।তুমি বসো।আমি তোমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি।”
রিজভী রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই সাবিহা দ্রুত বললো,
—-“রিজভী আমি কফি খাবোনা।আসলে আমি কফি খাইনা।”
সাবিহা কফি খায় না এটা শুনে রিজভীর মেজাজ চটে যায়।কিন্তু রাগটা দমিয়ে সাবিহার দিকে হাসিমুখে ঘুরে বললো,
—-“তাহলে তোমার জন্য জুস নিয়ে আসি।”
—-“না দরকার নেই।আমি কিছু খাবোনা।আমি পানি খাবো।”
সাবিহা জগ থেকে পানি নিয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো দ্রুত।রিজভী সাবিহার পানি খাওয়া দেখে নিজেকে মনে মনে গালি দিলো।কেনো নরমাল পানি রেখেছিলো।পানিতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিলেই তো ওর উদ্দেশ্য হাসিল হতে কোনো সমস্যা হতোনা।
সাবিহা পানি খেয়ে সোফা থেকে ব্যাগ তুলে নিয়ে বললো,
—-“রিজভী আমি বাড়িতে যাবো।আমি অন্যদিন আসবো আন্টির সাথে দেখা করতে।”
রিজভী সাবিহার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
—-“সাবু কি বলছো তুমি?বাড়িতে এসে বলছো চলে যাবে?আম্মু চলে আসবে।এতোক্ষণ আমরা গল্প করি।নিজেদের মতো সময় কাটাই।বসো।”
রিজভী এক প্রকার জোর করেই সাবিহাকে বসিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ পর রিজভী সাবিহাকে বললো,
—-“চলো তোমাকে আমার বেডরুম দেখাই।”
সাবিহা আমতা আমতা করে বললো,
—-“ঠিক আছে পরে দেখবো।আগে আন্টি আসুক কথা বলি।”
রিজভী অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো,
—-“তুমি আমার বেডরুমে যাচ্ছো সেটা কি আম্মু জানবে নাকি।চলো তো।তোমাকে অনেক কিছু দেখানোর আছে।”
রিজভী সাবিহার হাত ধরে টানতে টানতে নিজের বেডরুমে নিয়ে গেলো।সাবিহা অগত্যা যেতে বাধ্য হলো।
রিজভী নিজের রুমে নিয়ে সাবিহার হাত ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।সাবিহা ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে।সাবিহা দরজা দিয়ে রুমের বাইরের দিকে চেয়ে আছে।হটাৎ কারো স্পর্শে চমকে উঠে।রিজভী ওর পিছনে দাড়িয়ে আছে।ওর গরম নিশ্বাস ওর ঘাড়ে পড়ছে।রিজভী দুহাত বাড়িয়ে সাবিহাকে পেছনে থেকে ভালোভাবে জড়িয়ে নিলো।সাবিহা রিজভীর হটাৎ এহেন আচরণে চমকে যাওয়ার পাশাপাশি ভয় পেয়ে যায়।ওর বুক কেপে উঠে।সে কাপুনি সারা শরীরে বয়ে যাচ্ছে।চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।ভয়ে সাবিহা জমে যাচ্ছে।মুখ দিয়ে কথা সরছেনা।রিজভী ওর কাধে ঠোঁট ছুয়াতেই সাবিহা শক্তি সঞ্চার করে রিজভীকে জোরে ধাক্কা দেয়।রিজভী ধাক্কা সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে গিয়ে আহত বাঘের মতো গর্জন করে উঠে।সাবিহা রিজভীর দিকে ঘুরে তাকায়।সাবিহা রিজভীর দিকে তাকাতেই ওর পরান পাখি উড়ে যায়।
রিজভী চোখ মুখ শক্ত করে ওর দিকে চেয়ে আছে।
রিজভী উঠে এসে সাবিহার হাত চেপে ধরে বললো,
—-“তোর এতো বড় সাহস আমাকে ধাক্কা দিস?”
সাবিহা ভয়ে ঢোক গিলে বললো,
—-“রিজভী আমাকে ছাড়ো।তুমি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো কেনো?তুমি আমাকে এভাবে টাচ করছো কেনো?”
রিজভী দাতে দাত চেপে বললো,
—-“তো??আমি তোর বয়ফ্রেন্ড।বয়ফ্রেন্ডের সাথে রুমডেট করতে আসা নতুন নাকি?হাজারো ছেলেমেয়েরা প্রেমের দুয়েক মাসেই রুমডেটে যায়।সমস্যা কি?বিয়েতো আমাকেই করবে।”
সাবিহা রিজভীর কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে।
সাবিহা অবাক হয়ে বললো,
—-“তুমি আমাকে রুমডেট করতে নিয়ে এসেছো?”
—-“যদি এনে থাকি।অন্যায় হয়েছে খুব?”
সাবিহা চিতকার করে বললো,
—-“অবশ্যই অন্যায়।আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই বলে বিয়ের আগে এসব নোংরা কাজ আমি করতে পারবোনা।কিছুতেই না।আমার হাত ছাড়ো।আমি বাড়িতে যাবো।”
রিজভী নিজেকে ঠান্ডা করে সাবিহাকে বুঝাতে লাগলো।
কিন্তু সাবিহা বুঝতে নারাজ।তাই রিজভী রুড আচরণ শুরু করে।
সাবিহা রিজভীর আচরণ দেখে বললো,
—–“তুমি আমাকে মিথ্যা বলে এনেছো।তুমি আমাকে ভালোবাসোনা।সব মিথ্যা ছিলো।রীতি আপু ঠিক বলেছিলো তুমি যেমন দেখাও তেমন নও।তুমি এসব নোংরামি করার জন্য ভালোবাসার অভিনয় করে আমাকে ফাসিয়েছো।তবে আমার বুঝতে দেরি হয়ে গেছে।”
সাবিহার মুখে রীতির কথা শুনে রিজভী তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে,
—-“হ্যা রীতি ঠিক বলেছিলো।তবে তোমার বুঝতে দেরি হয়ে গেছে।আমি আমার উদ্দেশ্য হাসিল করেই ছাড়বো।”
রিজভী সাবিহার সাথে জোরাজোরি করছে।আর সাবিহা নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।সাবিহা রুম থেকে বেরুনোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।চোখ দিয়ে পানি পড়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারছেনা।মনে হচ্ছে আজ ওর সব শেষ।এতো বছরের লালিত সম্মান,সতিত্ব।এরপর আর কাউকে মুখ দেখাতে পারবেনা।রিজভী আজ হয়তো ওকে ধর্ষিতার ট্যাগ লাগিয়ে দিবে।রিজভী জোরাজুরি করে সাবিহার গলা থেকে ওড়না ফেলে দিতে সক্ষম হলো আর ঠিক তখনই ডোর বেল বেজে উঠলো।সাবিহার মনে নিভে যাওয়া আলোটা পিনপিন করে জ্বলে উঠলো।সাবিহা জোরে চিতকার করতে লাগলো সাহায্যের জন্য।আর নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।রিজভীর কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে।কে এসেছে এই সময়।এই ফ্ল্যাটে একা থাকে।আশেপাশের কেউ বুঝে যায়নি তো।সাবিহার চিতকার শুনতে পায় নি তো।রিজভী ভাবছে সাবিহার মুখ হাত-পা বেধে এক জায়গায় লুকিয়ে রেখে দরজা খোলবে।রিজভী সাবিহার মুখ চেপে ধরে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
আর তখনই দরজায় লাথি পড়লো।অনবরত লাথি পড়তে শুরু করলো।রিজভী প্রচন্ড ঘামছে।হটাৎ করে দরজা খোলে গেলো।
সাবিহা সেদিকে তাকিয়ে নিজের ভাই আর রীতিকে দেখতে পেলো।
সাদিব তখনও স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।রীতি সাদিবকে আলতো করে ধাক্কা মারে।আর তাতে সাদিবের হুশ হয়।রিজভী সাদিব আর রীতিকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।ভয়ে সাবিহার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়।
রীতি সাবিহার কাছে দৌড়ে গিয়ে মেঝে থেকে ওড়না তুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দেয়।রীতি সাবিহার হাত মুঠো করে ধরে বললো,
—-“ভয় পেওনা।আমরা এসে গেছি।”
সাদিব রিজভীর কলার চেপে ধরে বললো,
—-“জানোয়ারের বাচ্চা তোকে সেদিন ছেড়ে দিয়ে ভুল করেছি।তোর এতো বড় সাহস তুই আমার বোনের সাথে…!”
সাদিব রিজভীকে মারতে শুরু করলো।হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই দিয়ে মারছে।পুরো ঘর এলোমেলো করে ফেলছে।
সাবিহা বারবার কেপে কেপে উঠছে কান্নার মাঝে।
রিজভী মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
সাদিব রিজভীকে মারতে মারতে নিজেই ক্লান্ত হয়ে গেছে।সাদিবের চোখ পড়লো সাবিহার দিকে।
সাদিব সাবিহাকে টেনে সামনে এনে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চড় মেরে দিলো।সাবিহা খাটের কোনায় পড়ে গেলো।
রীতি সাদিবের এমন কান্ডে হা হয়ে রইলো।
রীতি সাদিবের উপর ক্ষেপে গিয়ে চেচিয়ে বললো,
—-“মাথা আপনার গেছে কি করছেন আপনি?দেখছেন তো মেয়েটা কতটা ভয় পেয়ে আছে।”
সাবিহা ওভাবেই নিজের গাল ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।
চলবে…….