গোধূলি বেলায় প্রেম পর্ব-১৬

0
4011

#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-১৬|

সাদিব রীতির কথা পাত্তা না দিয়ে সাবিহাকে টেনে তুলে দাড় কড়িয়ে গাল চেপে ধরলো।সাবিহা সাদিবের দিকে তাকাতে পারছেনা ভয়ে।সাদিবের চোখ লাল বর্ণ হয়ে আছে।চোখে মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠেছে।সাবিহা অন্য দিকে চেয়ে কাপতে শুরু করে।
সাদিব চেচিয়ে বললো,
—-“তুই এইরকম কাজ কি করে করলি?আমাদের পরিবারের কথা,সম্মানের কথা একবার ভাবলি না?এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে?তোকে আমার বোন বলতেও লজ্জা করছে।”

সাবিহা চোখের পানি ফেলার সাথে কেপে কেপে উঠছে।মাঝেমধ্যে ফুপাচ্ছো।এই মুহুর্তে সাদিবকে ওর খুব ভয়ংকর লাগছে।

সাদিব সাবিহার গাল আরো জোরে চেপে ধরে।সাদিব সাবিহার উপর নিজের সমস্ত রাগ ঢেলে দিচ্ছে।সাবিহা ব্যথায় কুকড়ে যাচ্ছে।কিন্তু হাত বাড়িয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে না।
রীতিও সাদিবের দিকে তাকিয়ে ভয় পাচ্ছে।এই সাদিবের সাথে রীতি পরিচিত নয়।সাদিবকে কখনো এতটা রাগতে দেখেনি।
রীতি সাদিবের থেকে সাবিহাকে ছাড়িয়ে নেয়।সাবিহা ভয় পেয়ে রীতিকে আকড়ে ধরে নিজের মুখ লুকালো।সাবিহা রীতিকে খামচে ধরে রেখেছে।যেনো রীতিই ওর একমাত্র ভরসা।সাবিহা রীতিকে ধরে ফুপিয়ে কাদছে।রীতিও সাবিহাকে দু’হাতে জড়িয়ে নিলো।পিঠে হাত বুলিয়ে আশ্বস্ত করছে সাবিহাকে।
যেনো বলছে ভয় পেওনা আমি আছি।
সাদিব তখনও রাগে ফুসছে।

রীতি সাদিবের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি দেয়।
সাদিব রীতির থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতেই রিজভীর দিকে চোখ যায়।রিজভী মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে ব্যথায় গোঙ্গানি দিচ্ছে।
সাদিব রিজভীকে জোরে একটা লাথি মারে।লাথি খেয়ে রিজভী অদ্ভুত স্বরে চিতকার করে।

তারপর সাদিব হনহন করে হেটে চলে গেলো।
রীতি সাবিহাকে নিজের থেকে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু সাবিহা ছাড়ছেনা।মেয়েটা প্রচন্ড মাত্রায় ভয় পেয়ে গেছে।
রীতি সাবিহাকে আশ্বস্ত করে বললো,
—-“সাবিহা তোমার ভাই বাইরে দাড়িয়ে আছে।এখানে নেই।আমাদের যেতে হবে।চলো এখান থেকে।”

সাবিহা রীতিকে আলতো ভাবে ছাড়লেও পুরোপুরি ছাড়লোনা।রীতি সাবিহাকে নিয়ে বাইরে যেতেই দেখে সাদিব একটা সিএনজি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রীতি সাবিহাকে সিএনজিতে বসায়।রীতি সাবিহার দিকে ভালো করে নজর দিতেই দেখে ওর কপাল কাটা।সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে।সাদিব চড় মারায় সাবিহা ছিটকে পড়ে গিয়েছিলো তখন কপাল কেটে যায়।
রীতি সাদিবের দিকে তাকায় কিছু বলার জন্য।কিন্তু সাদিব যেভাবে রেগে আছে তাতে রীতি সাদিবকে কিছু বলার অবস্থায় নেই।রীতি ব্যাগ থেকে নিজের রুমাল বের করে সাবিহার কপালে চেপে ধরে।বাড়িতে নিয়ে যা করার করতে হবে।আপাতত রুমাল চেপে ধরলো।সাবিহা আগের মতো রীতিকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।

রীতি সিএনজি থেকে নেমে সাবিহাকে ধরে নামায়।দিয়া সেখানে আগেই অপেক্ষা করছিলো।রীতি দিয়াকে মেসেজ করে সবটা বলে রেখেছে।দিয়া ওদের দেখে তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলো।সাবিহাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে নিজেদের ফ্ল্যাটে।সাবিহাকে যদি এখুনি বাড়িতে নেওয়া হয় তবে সাবিহার আতংকিত চেহারা আর কপালে কাটা দেখে সাবিহার মা বিচলিত হয়ে যাবে আর নানান প্রশ্ন করবে।কিন্তু সাবিহা আর সাদিব এতোসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অবস্থায় নেই।শুধু শুধু টেনশন বাড়বে।

দিয়া সাবিহাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।দিয়ার মা-বাবা দুজনেই চাকরিজীবী হওয়ায় অফিসে আছে তাই দিয়ার বাড়িতে এ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবেনা।কেননা প্রশ্ন করার কেউ নেই।
দিয়া সাবিহার কপালে স্যাভলন দিয়ে পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।

সাদিব এক হাত দেয়ালে রেখে চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালের দিকে ঘুরে।
রীতি পেছনে থেকে সাদিবের ভাব বুঝার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।তারপর এক পর্যায়ে বললো,
—-“আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

সাদিব রীতির দিকে ঘুরে।রীতি সাবিহার দিকে একবার চেয়ে সাদিবকে বললো,
—-“আপনি কি শুরু করেছেন?আপনি কি জানতেন না এসব?তবুও এমন আচরণ কেনো করছেন?”

সাদিব উল্টো বিস্ময় নিয়ে বললো,
—-“রীতি তুমি সব স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে নিচ্ছো?”

—–“আমি স্বাভাবিক ভাবে কিছুই নিচ্ছিনা।ওর সিচুয়েশনটা আমি আপনার চেয়ে ভালো ফিল করতে পারছি।”

—–“ও আমার বোন,,আমার বোন(সাদিব অন্যদিকে ঘুরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো ঘুরে বললো)আমার বোন একটা ছেলের সাথে একটা ফাকা বাড়িতে গিয়েছে।এই শিক্ষা পেয়েছে পরিবার থেকে? আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।আজ আমরা না গেলে কি হতো বুঝতে পারছো?এসব ভেবেই আমার শ্বাস আটকে আসছে।”

রীতি শীতল কণ্ঠে বললো,
—-“এসবের আড়ালে অন্য ঘটনাও থাকতে পারে।হয়তো সেটা আমরা জানিনা।আর সাবিহা সেটা বলার অবস্থায় নেই।আপনাকে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে।একে ওর এই মানসিক অবস্থা আর তাতে আপনাকে ভয় পাচ্ছে।সবটা কিভাবে সামাল দিবেন ভেবেছেন কিছু?”

সাদিব চুপ করে আছে।সাদিবকে চুপ থাকতে দেখে রীতি বললো,
—-“দেখুন সাবিহা অনেক বড় একটা ভুল করেছে।কি হতো,কি হতে পারতো এসব না ভেবে এখন কি হয়েছে আর এখন কি করতে হবে সেটা ভাবা উচিত।যেটা হওয়ার হয়ে গেছে।আল্লাহর অসীম রহমত সাবিহা ঠিক আছে।ওর কোনো ক্ষতি হয়নি।রিজভীকেও ভালোভাবে চিনে নিয়েছে সাবিহা।এখন সাবিহাকে নরমাল করতে হবে।ভালোবেসে ধোকা খেয়েছে,এমন একটা সিচুয়েশনের স্বীকার হয়েছে।ওর মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছেন?এই অবস্থায় যদি আপনারাও দূরে ঠেলে দিন তবে কি করবে ও?একদম একা হয়ে যাবে।একা কিছুই সামলাতে পারবেনা।ডিপ্রেশনে চলে গিয়ে যদি কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে?তখন নিজেকে মাফ করতে পারবেন?ভাই আপনি ওর।একজন ভাই বাবার পরে তার বোনের সবচেয়ে বড় সহায়।বোনের সহায় হোন।আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান আশা করি বুঝতে পারবেন।”

সাদিব মাথা নাড়িয়ে বললো,
—-“হুম।আসলে মাথা কাজ করছিলো না।”

তারপর সাবিহার দিকে তাকালো।সাদিব গুটি গুটি পায়ে সাবিহার কাছে যেতেই সাবিহা আবারো ভয় পেয়ে গেলো।

সাদিব সাবিহার পাশে বসে সাবিহার কাধে হাত রেখে বললো,
—-“আমি তোকে কিছু বলবোনা।আর মারবোনা।ভয় পাস না।আ’ম সরি।তোর গায়ে হাত তোলার জন্য।ভুল হয়ে গেছে।আর মারবোনা।ক্ষমা করে দে।”

সাবিহা সাদিবের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালো।
সাদিব সাবিহাকে বললো,
—-“লক্ষী বোন আমার,চল বাড়িতে চল।”

যাওয়ার সময় রীতি বলে দিলো যাতে সাবিহাকে এক মুহুর্তের জন্য একা না ছাড়ে।ওর বিশেষ খেয়াল রাখে।আর বাড়িতে এসব নিয়ে আলোচনা না করে।

রীতি বাড়িতে ঢুকতেই রাইসার ফোন।রীতির হুট করে মনে পড়লো রাইসার সাথে বই কিনতে যাচ্ছিলো।রীতি জিভে কামড় দিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে চিতকারের শব্দ আসতে শুরু করে।রীতির কানে তালা লেগে যাওয়ার উপক্রম।রীতি ফোনটা কিছুটা দূরে সরিয়ে নিলো।
রাইসা ঠান্ডা হওয়ার পরেই রীতি বললো,
—–“একটা ভয়ানক সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম তাই আসতে পারিনি।”

ভয়ানক শব্দটা শুনে রাইসা কৌতুহলী হয়ে বললো,
—–“কি ঘটনা?”

রীতি বলতে গিয়েও থেমে গেলো।এক বাড়ির ঘটনা তাদের আড়ালে অন্য কাউকে না বলাই শ্রেয়।তাই বিষয়টি এড়িয়ে গেলো।

সাদিব সাবিহাকে নিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে যাচ্ছে।ডোর বেল বাজাতেই সাবিদের মা দরজা খোলে দিলো।
সাবিহা মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে।গালে শুকনো পানির দাগ স্পষ্ট।চোখের পাপড়িগুলো আধ-ভেজা।কপালে ব্যান্ডেজ।সাবিহার মা দরজা খোলে সাবিহার এমন চেহেরা দেখে ভয় পেয়ে গেলেন।কপালের ব্যান্ডেজটা তার ভয় আরো বাড়িয়ে দিলো।
সাবিহা মায়ের দিকে একবার চেয়ে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে নিলো।
সাবিহার মা সাবিহাকে ভেতরে না ঢুকতে দিয়েই আতংকিত ও চিন্তিত ভংগীতে বললো,
—-“কি হয়েছে তোর?কপাল কাটলো কি করে?”

সাবিহা কিছু না বলে আড়চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো।সাবিহার মা সাবিহার দৃষ্টি অনুসরণ করে সাদিবকে জিজ্ঞেস করলো,
—-“এই তোদের কি এক্সিডেন্ট হয়েছে?”

সাদিব মায়ের কথায় উত্তর দিলো,
—-“আগে ভেতরে আসি।তারপর বলছি।”

সাদিবের মা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে বললো,
—-“আমার টেনশন হচ্ছে তো।সাবিহার কপালে ব্যান্ডেজ।ওর চেহেরাটাও কেমন লাগছে।”

সাদিব মাকে চিন্তিত দেখে বললো,
—-“মা সাবিহা আমার বাইক থেকে পড়ে গিয়েছিলো তাই কপালে একটু কেটে গেছে।বেশী না সামান্য।আর ওর চেহেরা এমন লাগছে কারণ ও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো তাই।ওর রেস্ট প্রয়োজন।
সাবিহা যা(সাবিহার দিকে চেয়ে)রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”

সাবিহা মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো।

সাদিব মায়ের দিকে চেয়ে বললো,
—-“মা টেনশন করোনা।ব্যান্ডেজ করিয়ে এনেছি।একটু পর গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসবো ঠিক হয়ে যাবে।জানো তো ও কতটা ভীতু।ওকে খেতে দেও।”

সাদিব মনে মনে বলছে,
—-“ক্ষমা করো মা আমায়।আমি তোমাকে এখন সত্যিটা বলতে পারছিনা।এখন সাবিহার সব কিছু থেকে বেড়িয়ে আসাটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট।”

সাবিহা ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দাঁড়িয়ে দু-চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
হটাৎ করেই ওর হাসিখুশি রঙিন জীবনটা কালো মেঘে ঢেকে গেলো।দু’হাতে মুখ চেপে কাদছে।
“আমি এতবড় ভুল কি করে করলাম?আমি ওর মতো একটা ছেলেকে ভালোবাসলাম?রিজভী তুমি আমার সাথে এটা কি করে করলে? নিখুত ভালোবাসার অভিনয়টা কি করে করলে?আমার ইমোশন,স্বপ্ন নিয়ে এভাবে খেললে?আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে সব।”

.

সাবিহা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে।কারো সাথে কথা বলে না।ঘর থেকে বের হয়না,খায়না ঠিকমতো।একা একা নিজের রুমেই বসে থাকে।মাঝে মাঝে ডুকরে কেঁদে উঠে।
দিয়া রীতির বাসায় গিয়ে রীতিকে বললো,
—-“আপু সাদিব ভাই আমাদের দুজনকে যেতে বলেছে।বাসায় কেউ নেই।আর উনার কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।সাবিহাকে একা রেখে যেতে সাহস পাচ্ছেনা।তাই আমাকে ফোন করে বললো আমরা যেনো একটু যাই।কিছু সময়ের জন্য সাবিহার সাথে সময় কাটাই।”

রীতি সাদিবদের ফ্ল্যাটে কখনো যায়নি তাই ইতস্তত লাগছে।তবুও রীতি যাওয়াটা প্রয়োজনীয় মনে করছে।
রীতি মায়ের কাছে অনুমতি নিতে গেলে তিনি এক বাটি পায়েস ধরিয়ে দেয় সাবিহার জন্য।পুরো বিল্ডিংয়ের সবাই জানে সাবিহা বাইক থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছে।রীতি মায়ের জোরাজুরিতে পায়েস নিয়েই দিয়ার সাথে সাদিবদের ফ্ল্যাটে গেলো।

ডোর বেল বাজতেই সাদিব দরজা খোলে দেয়।রীতি আর দিয়া দাঁড়িয়ে আছে।রীতির হাতে পায়েস ভর্তি বাটি।সাদিব দুজনকে ভেতরে নিয়ে আসে।রীতি পুরো ফ্ল্যাটে চোখ বুলায়।ফ্ল্যাটটা অন্য ফ্ল্যাটের চেয়ে দ্বিগুণ বড়।হবারই কথা।সাদিব রীতির চোখের সামনে চুটকি বাজায়।রীতির হুশ ফিরতেই ফ্যালফ্যাল করে সাদিবের দিকে চেয়ে আছে।

সাদিব ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
—-“কি খোজো?”

রীতি আমতা আমতা করে বললো,
—-“ইয়ে মানে কিছুনা।আসলে পায়েসটা কোথায় রাখবো?”

সাদিব মুচকি হেসে বললো,
—-“এত বড় বাড়িতে পায়েস রাখার জায়গা পাচ্ছো না?”

রীতি লজ্জা পেয়ে গেলো সাদিবের কথা শুনে।রীতি ডাইনিং টেবিলের উপরে পায়েসের বাটি রাখে।
সাদিব ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-“সাবিহা যেনো না জানে আমি তোমাদের ডেকেছি।আমার বিশেষ একটা কাজ আছে।খুব দেরী হবেনা।কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো।তোমরা একটু ওকে টাইম দেও।ওকে একটু বুঝাও।আমি অনেক চেষ্টা করেছি।তোমরা একটু ট্রাই করো।দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে।”

রীতি বললো,
—-“আমি কথা বলবো আপনি চিন্তা করবেন না।মানুষ যখন ডিপ্রেশনে ভুগে তখন একটা ভরসার হাত চায়।যে হাত ধরে উঠে দাড়াতে পারবে।সাবিহারও তেমনি একটা ভরসার হাত একান্ত প্রয়োজন।কাউকে না কাউকে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।তবেই সাবিহা এসবের মধ্য থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে।”

রীতি আর দিয়া সাবিহার সাথে কথা বলতে চলে গেলো।
সাবিহা রীতিকে দেখে কেদে দিলো।তারপর আচমকা রীতির পা জড়িয়ে হাওমাও করে কাদতে লাগলো।
—-“আমাকে ক্ষমা করো আপু।আমি তোমার কথা শুনিনি।তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।তোমার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছি।তবুও তুমি আমাকে বাচাতে চলে গেছো।আপু আমি অনেক খারাপ,অনেক খারাপ আপু।আমার সাথে এটাই হওয়ার ছিলো।আমাকে মাফ করে দেও।”

রীতি সাবিহাকে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে দাড় করালো।
তারপর বললো,
—-“কি করছো সাবিহা?তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই।রাগ থাকলে আমি কি ওখানে যেতাম?আগেই বলেছি তোমাকে আমি আমার ছোট বোন মনে করি।সব ভুলে যাও।তোমার করা ভুল থেকে শিক্ষা নেও।”

সাবিহা কাদতে কাদতে বললো,
—–“কি অপরাধ ছিলো আমার?আমি ওকে ভালোবেসেছি সেটাই আমার বড় অপরাধ?”

রীতি সাবিহাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-“উহু।ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয়।ভালোবেসে কেউ অপরাধ করে না।অপরাধ অতিরিক্ত জিনিসে।অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না বরং ভয়ংকর।বিশ্বাস আর ভালোবাসায় যখন “অতি” শব্দটা যোগ হয় তখন জীবনে বিধ্বস্ত নেমে আসে।ভালোবাসায় বিশ্বাসের প্রয়োজন হলেও তোমার ভুল ছিলো রিজভীকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করা।ওসব ভুলে যাও দুঃস্বপ্ন মনে করে।যদিও এতটা সহজ না তবে তোমাকে চেষ্টা করতে হবে।চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেও।তুমি অবশ্যই পারবে।এমন একটা মানুষের জন্য নিজের জীবন অন্ধকারে কেনো ঠেলে দিবে?নিজের জীবনটা আলোয় আলোয় ভরিয়ে দেও,রঙিন রঙিন স্বপ্ন দেখো।আর পরিশেষে ভালো থাকো।”

চলবে….