💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 23
রিয়াদঃ( দিনগুলো চাওয়ার থেকেও ভালো যাচ্ছিলো,,,,বন্ধুত্ব কখন ভালোবাসায় রুপ নিয়েছে আমরা বুঝতেই পারিনি,,,,কিন্তু কেউ কখনো প্রকাশ করিনি,,, কিন্তু একদিন,,,,,)
,,,,,
সিয়াঃ রিয়াদ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,,,
রিয়াদঃ মজা করছো তুমি,,,
সিয়াঃ এটা আমার কাছে মজা করার বিষয় নয় রিয়াদ,,,
রিয়াদঃ বিয়ে কবে,,,,??
সিয়াঃ এই মাসের ১২ তারিখ,,,,
রিয়াদঃ congratulation,,,,wish you a happy life,,,
সিয়াঃ Thanks,,,,
রিয়াদঃ আমার একটা কাজ আছে,,, আমি আসছি,,,
সিয়াঃ ঠিক আছে,,,,
(রিয়াদ চলে গেলো আর সিয়া রিয়াদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,,,)
সিয়াঃ হয়তো শুধু আমিই তোমাকে ভালোবেসেছিলাম,,,, তুমি বাসোনি,,,, আমারই বুঝতে ভুল হয়েছে,,, কিন্তু আমি যে তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি,,,
রিয়াদঃ ওর বিয়ের কথা শুনে এতো কষ্ট কেন হচ্ছে,,?? দম বন্ধ হয়ে আসছে,,,,,
পাঁচদিন পর
রিয়াদঃ (আজ পাঁচদিন হলো সিয়া পার্কে আসছে না,,, কলও ধরছে না,,,, আমি মনে হচ্ছে এবার দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো,,,খাওয়া,,, ঘুম সব বাদ দিয়ে দিনরাত সিয়াকে কল দিয়ে যাচ্ছি,,, কিন্তু তার কোন খবর নেই,,, ছন্নছাড়া হয়ে বাড়ি গেলাম,,,)
মাঃ রিয়াদ,,, কোথায় গিয়েছিলে তুমি,,,?? আর তোমার এই অবস্থা কেন,,,??
(রিয়াদের মা সোফায় বসে ছিলো,, রিয়াদ ধীরে ধীরে ওর মায়ের কাছে গিয়ে পা জড়িয়ে ফ্লোরে বসে কোলে মাথা রাখলো,,,)
মাঃ কী হয়েছে আমার বাবাটার,,,?? তুমি না মাকে সব বলো,,,(মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে,,)
রিয়াদঃ মা আমি সিয়াকে ভালোবাসি,,,,, (ডুকরে কেঁদে ওঠে) ওকে ছাড়া বাঁচবো না আমি,,
মাঃ সিয়া কে,,,(অবাক হয়ে,,)
রিয়াদঃ(প্রথম থেকে সব মাকে খোলে বললাম,,,)
মাঃ তুমি রুম যাও আমি দেখছি,,,,
,,,,,,,
রিয়াদঃ(এরপর মা কথা বলেছিলো সিয়ার বাবার সাথে,,, সিয়ার বাবাও রাজি হয়ে যায়,,,, বিয়ের সময়ও সিয়া জানতো না ওর বিয়ে আমার সাথে হচ্ছে,,, সারপ্রাইজ দিবো বলে কাউকে জানাতে দেইনি,,, কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো,,, অন্যকারো সাথে বিয়ে হচ্ছে ভেবে সিয়া ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেয়,,,কিন্তু একজন দেখে ফেলে আর হাসপাতালে নিয়ে যায় তাড়াতাড়ি,,,, আমাদের বিয়েও হাসপাতালেই হয়,,, কিন্তু বিয়ের পর সাতদিন সিয়ার সাথে আমি কথা বলিনি,,, পরে সারপ্রাইজ দিয়ে প্রথম ভালোবাসি ও বলেছিলো আমাকে,,,, দিনগুলো এখনো আমার চোখে ভাসে,,,)
জ্যোতিঃ May i come in sir,,,??
রিয়াদঃ come,,,,
জ্যোতিঃ এই ফাইলটাতে আপনার একটা সিগনেচার লাগবে,,,(মাথা নিচু করে ফাইল এগিয়ে দিলাম,,)
রিয়াদঃ সরি,,,,
জ্যোতিঃ(উনার কথা শুনে উনার দিকে তাকালাম,,,)
রিয়াদঃ সরি,,,,, আসলে তখন এমনই ভালো লাগছিলো না,,, আর আমাকে প্রশ্ন করা আমার পছন্দ না,,,,
জ্যোতিঃ আমি কিছু মনে করিনি
রিয়াদঃ Thanks,,,,,
,,,,
★পরেরদিন★
অন্তরাঃ মা আসছি,,,,
মাঃ আজ তো শুক্রবার,,,, দুজনে কোথায় যাচ্ছিল,,??
অন্তরাঃ (একবার জ্যোতির দিকে তাকালাম,,,) ভাড়া বাসা খুঁজতে,,,
মাঃ জ্যোতি,,,, তুমি একবার তোমার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে দেখো,,,,
অন্তরাঃ বাসা শুধু ওর জন্য নয়,,,,, আমার জন্যও দেখতে যাচ্ছি,,,, আমি ঠিক করেছি জব করবো আর জ্যোতির সাথেই থাকবো,,,
মাঃ কী বলছিস এসব তুই,,,?? পাগল হয়ে গেছিস,,,
অন্তরাঃ না মা,,,, পাগল হয়নি,,,, আর কতদিন তোমাদের ওপর বোঝা হয়ে থাকবো,,,, আর এখন আবার বিয়ে আমি করতে পারবো না,,,
মাঃ ঠিক আছে,,,,, বিয়ে করতে চাস না,,,, করতে হবে না,,, কিন্তু এটা কেমন পাগলামি,,,,
অন্তরাঃ কোনো পাগলামি না,,,?? এটাই ঠিক হবে সবার জন্য,,,।
মাঃ তুই পাগল হয়ে গেছিস,,,, সমাজের মানুষ কী বলবে,,,, বাবা,,ভাই দুজন মিলে একটা মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারলো না,,, এ কেমন বাবা-মা আর কেমন ভাই,,,,
অন্তরাঃ সমাজ সমাজ সমাজ,,,,, এই সমাজ ছাড়া আর কিছু ভাবো তোমরা,,,, এটা করলে মানুষ কী বলবে,,?? ওটা করলে মানুষ কী বলবে,,, এর বাইরে তোমাদের মাথায় কিছু আসে,,,,আর রইলো বাবা আর ভাইয়ের কথা,,,,, একটা মেয়ে তার বাবার কাছে ততক্ষণ রাজকন্যা থাকে যতক্ষণ তার বিয়ের বয়স না হয়,,,, আর ঠিক ততক্ষণই একটা ভাইয়ের আদরের বোন থাকে,,,, যখন একটা মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে যায় তখন সেই মেয়ে তার বাবা আর ভাইয়ের কাছে একটা দ্বায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়,,,, যতদিন না কোন ভালো ছেলের হাতে তোলে দিতে পারছে তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়,,,,,। আর যখন একটা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর বাবা,,,ভাইয়ের কাছে ফেরত আসতে হয় তখন সে শুধুমাত্র একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়,,,, শুধুমাত্র বোঝা,,,, আর আমি কারো বোঝা হতে চাই না,,,(কথাগুলো বলতেই দুচোখ পানিতে ভরে ওঠলো)
আরাভঃ কী হয়েছে এখানে,,,,,,?? এত চেঁচামেচি কেন এখানে,,,??
(আরাভ আর মিমি দুজনেই বের হয়ে আসলো রুম থেকে,,)
মাঃ দেখ বাবা অন্তরা কী বলছে এসব,,,,
আরাভঃ কী বলছে,,??
মাঃ ও নাকি জ্যোতির সাথে কোন ভাড়া বাসায় থাকবে,,,, আর নিজের খরচ চালাতে কোথাও চাকরি খোঁজে নিবে,,
মিমিঃ সত্যি,,,,(খুশিতে চকচক করে,,,)
আরাভঃ মিমি,,,,(জোরে ধমক দিয়ে,,,)
(মিমি মাথা নিচু করে ফেললো আরাভের রক্ত লাল চোখ দেখে,,)
আরাভঃ অন্তরা,,,,(অবাক হয়ে,,,) এসব কী শুনছি আমি,,,??
অন্তরাঃ,,,,,,,,
আরাভঃ কথা বলছিস না কেন অন্তরা,,,??
অন্তরাঃ এটাই ঠিক হবে ভাইয়া,,,?? আর কোন ঝামেলা হবে না,,, অশান্তি হবে না,,,,
আরাভঃ তুই কী নিজের ভাইকে এতটাই অপদার্থ মনে করিস,,,, যে নিজের কলিজার টুকরো বোনের জন্য দুবেলা ডালভাত জোগাড় করতে পারবো না,,
অন্তরাঃ এসব কী বলছিস ভাইয়া,,,??
আরাভঃ সেদিন তোর জীবন নষ্ট হওয়া থেকে আটকাতে পারিনি বলে এখনো রেগে আছিস আমার ওপর,,,,
অন্তরাঃ না ভাইয়া,,,, সেসব কিছু না,, দেখ রোজ রোজ আমাকে নিয়ে কিছু না কিছু অশান্তি হচ্ছে,,, এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোন পথ নেই,,,
আরাভঃ সেদিন আমার করার কিছু ছিলো না,,, তাও যতটা পেরেছি চেষ্টা করেছি,,,, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আটকাতে পারিনি,,,, কিন্তু এখন আর সেই দূর্বল আরাভ নই আমি,,,, নিজের বোনের দ্বায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে,,,, আর এই বাড়িতে আমার বোনকে নিয়ে কারো সমস্যা হলে দরজা খোলা আছে বের হয়ে যেতে পারে,,, আমি তেমন ছেলে নই বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরবো,,,, এই বাড়িতে থাকতে হলে আমার কথায় চলতে হবে,,,(মিমির দিকে তাকিয়ে,,,)
অন্তরাঃ ভাইয়া এসব তুই কাকে বলছিস বুঝতে পারছি,,,, কিন্তু ভাবি আমাকে কিছু বলেনি,,,,
আরাভঃ বলার যাতে সাহস না করে তাই আগেই সতর্ক করে দিলাম,,,, তুই এখন রুমে যা,,,, এ নিয়ে আমি আর কথা শুনতে চাই না,,,, যেদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবি,,,, সেদিন আমি নিজে দিয়ে আসবে সেখানে যেতে চাইবি,,,, আর এই বাড়িতে অন্তরার বিয়ে নিয়ে আর একটা কথাও যেন আমি না শুনি,,,,
অন্তরাঃ কিন্তু,,,,,
আরাভঃ রুমে যা,,,,,
জ্যোতিঃ(আজ মনে হচ্ছে কেন আমার একটা বড় ভাই নেই,,,, যদি থাকতো তাহলে হয়তো সেও এভাবে আমার পাশে দাঁড়াতো,,, কিন্তু সবার ভাগ্য অন্তরার মতো হয় না,,,, সবার কপালে অন্তরার মতো ভাই জোটে না,,, একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লাম,,)
মাঃ আমি জানি এইসব কিছুর জন্য আমি দায়ী,,,, মাফ করে দে না আমাকে অন্তরা,,, আমিও তো কম কষ্ট পাচ্ছি না,,,,
অন্তরার বাবাঃ মানুষটা প্রতিরাতে ডুকরে কাঁদে,,, তোর এই অবস্থার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে,,,, শাস্তি সেও কম পাচ্ছে না রে মা,,,, মাফ করে দে এই অপরাধী বাবা-মাকে,,,
অন্তরাঃ এসব কী বলছো তোমরা,,,?? এখানে কারো কোন দোষ নেই,, আল্লাহ ভাগ্যে যা লিখে রাখে তাই হয়,,,,
আরাভঃ তাহলে আর এসব পাগলামি চিন্তা মাথায় আনবি না কখনো,,,
জ্যোতিঃ কিন্তু ভাইয়া আমার জন্য তো জেতে হবে,,,।
আরাভঃ তারও দরকার হবে না,,,, আমি কাকাকে বুঝিয়ে বলেছি,,,
জ্যোতির বাবাঃ জ্যোতি,,,,,,,
জ্যোতিঃ বাবা,,,,(অবাক হয়ে,,,)
বাবাঃ বন্ধুর বাড়ি আর কতদিন থাকবি,,,,,?? বাড়ি চল,,,
জ্যোতিঃ বাবা তুমি আমাকে মাফ করেছো,,,??
বাবাঃ তুই আমাদের একমাত্র সন্তান,,,, তোর ওপর কয়দিন রাগ করে থাকবো,,,,, তুই যদি আগেই বলে দিতি বিয়ে করবি না তাহলে এতটা রাগতামই না,,,, এভাবে বিয়ের আগের দিন বিয়ে ভাঙায় কতটা অপমানিত হতে হয়েছে তুইও জানিস,,,, তোর নামেও মানুষ বাজে কথা বলছিলো,,, বাবা হয়ে কীভাবে সয্য করবো সেসব,,,, তাই রেগে গিয়েছিলাম,,,,
জ্যোতিঃ মাফ করে দাও,,,, আর এমন ভুল হবে না,,,,
বাবাঃ এবার যখন বলবি বাবা আমি বিয়ে করবো তখনই বিয়ের ব্যবস্থা করবো,,,,
জ্যোতিঃ বাবা,,,,,,
বাবাঃ চলো এখন,,,, তোমার জিনিসপত্র নিয়ে এসো,,,
জ্যোতিঃ এখনই আসছি,,,,
(দিনগুলো এভাবেই কাটতে লাগলো,,,যতদিন যাচ্ছে হৃদয়ের পাগলামি বাড়ছে,,, অন্তরা মিমির ব্যবহার সয্য করছে বাবা-মা আর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে,,,, আপনজনের ভালোবাসা থাকলে মিমির মতো একজনের অবহেলা অনায়াসে সয্য করা যায়,,,, জ্যোতি বাড়ি ফিরে গেলেও জব ছাড়েনি,,,, জ্যোতির বিয়ের কথা আর বলে না তার বাবা-মা,, জ্যোতি রিয়াদের প্রতি দিনদিন আরো বেশী দূর্বল হয়ে পরছে,,,, আর অন্যদিকে জ্যোতিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে অন্যকেউ,,,জ্যোতি আবার মাঝে মাঝে ভার্সিটিও যায়,,, সেই সুযোগ রিয়াদই দিয়েছে তাকে,,,,,,,, অন্যদিকে আরিয়ানের প্রত্যেকটা দিন নরক করে তুলছে নিলা,,, দেখতে দেখতে হৃদয়েরও কানাডা যাওয়ার সময় হয়ে এলো,,, কিন্তু অন্তরাকে সে এখনো রাজি করাতে পারেনি,,,)
হৃদয়ঃ অন্তরা দাঁড়াও,,,,,
অন্তরাঃ কেন,,,,??
হৃদয়ঃ কথা আছে তাই,,,??
অন্তরাঃ এতোদিনে আপনার কথা যেহেতু শেষ হয়নি আর হবেও না কোনদিন,,,,
হৃদয়ঃ তোমাকে আমি দাঁড়াতে বলেছি,,,
অন্তরাঃ আপনাকে আমি যেতে বলেছি,,,,
হৃদয়ঃ তুমি কী আমার ভালোবাসা কোনোদিনও বুঝতে পারবে না,,,,
অন্তরাঃ(আমিও যে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি,,,, কিন্তু যতবার চাই আপনার কাছে যেতে ততবারই মনে পরে যায় আমি আপনাকে বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করছি,,,, যার অধিকার আমার নেই,,,, কী করবো বলেন,,,?? সমাজের থেকেও এই কারণটা বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের মাঝে,,,
যে দেয়াল কখনো ভাঙা সম্ভব নয়,,, আপনি আমার থেকে দূরে চলে যান,,, এটাই ভালো হবে,,,,)
হৃদয়ঃ আর মাত্র কয়েকটা দিন,,,, আমি কানাডা চলে যাচ্ছি,,,,
অন্তরাঃ অভিনন্দন,,,, যার জন্য যাচ্ছেন তা সফল হোক,,,,
হৃদয়ঃ অন্তরা,,,,,,,,,
(কথা বলতে বলতে ভার্সিটির ভিতরে চলে এসেছি,,,, হৃদয়ও আমার পেছনে আসছে আর কথা বলছে,,, সবাই যেন ফ্রিতে মুভি দেখছে,,,)
পিয়নঃ প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আপনাকে যেতে বলেছেন,,,
অন্তরাঃ আমাকে,,,,,
পিয়নঃ জী,,,,
হৃদয়ঃ ( মা অন্তরাকে কেন ডাকছে,,,??) চলো আমিও যাচ্ছি,,,,
পিয়নঃ ম্যাডাম অন্তরা আপাকে একা যেতে বলেছে,,,
চলবে,,,