Divorce Part-24

0
6288

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 24

পিয়নঃ ম্যাডাম অন্তরা আপাকে একা যেতে বলেছে,,,

অন্তরাঃ ঠিক আছে,,,, আপনি যান আমি আসছি,,,,,

হৃদয়ঃ অন্তরা,,,,,,

অন্তরাঃ(উনার দিকে একবার তাকিয়ে দুতলায় যেতে শুরু করলাম,,,, সিঁড়িতে কিছু মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,, আমার দিকে উপহাসের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে,,,)

,,,,,,,, ছেলেকে তো হাত করেছো এবার ছেলের মাকে হাত করতে পারবে তো,,,,??

,,,,,,,,,আরে ধূর,,, হৃদয়কে,, কী দেখিয়ে পাগল করেছে এই ভালো জানে,,,, নাহলে এর মতো ডিভোর্সি,,, বন্ধ্যা মেয়ের পিছনে কেন ঘুরছে,,?? সেখানে ভার্সিটির যেকোনো মেয়ে তার জন্য পাগল,,,

,,,,,,, হৃদয়ের মা কিন্তু হৃদয়ের মতো পাগল নয়,,, কোন মাই তার অবিবাহিত ছেলের জন্য এমন ডিভোর্সি,,,, বন্ধ্যা মেয়েকে মেনে নিবে না,,,,,

,,,,,,,,দেখ গিয়ে ভার্সিটি থেকেই বের করে দেয় কিনা,,,

,,,,,,,দেখা যাক,,,, আমরাও ফ্রিতে মুভি দেখি,,,, পুরাতন মুভিতে একটা ডায়লগ ছিলো না,,,?? বামুন হয়ে চাঁদ ধরতে চাইলে যা হয়,,,

অন্তরাঃ(এদের কথা বুকে বিঁধছে তীরের মতো,,, যে কাজ আমরা করি তার জন্য কথা শুনলে মেনে নেওয়া যায়,,,, কিন্তু বিনা দোষে এসব সয্য করা অনেক কঠিন,,, তাও মুখ বুজে সয্য করে নিলাম,,, ম্যামের রুমের সামনে এসে চোখ মুছে নিলাম,,,) May i come in ma’am,,,??

হৃদয়ের মাঃ Yes,,,,,

অন্তরাঃ আসসালামু আলাইকুম,,,,,

মাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,,, বসো,,,

অন্তরাঃ(একটা চেয়ার টেনে সামনে বসলাম,,,)

সিয়ামঃ মা,,,,,,,তুমি পতা,,, আমার থাতে খেলো না,,

মাঃ সিয়ামকে নিয়ে বাইরে যাও রুপা,,,,

রুপাঃ আচ্ছা,,,,,

(সিয়াম অন্তরাকে ছেড়ে যাবে না,,,রুপা সিয়ামকে জোর করে বাইরে নিয়ে গেলো,,)

মাঃ কেমন আছো অন্তরা,,,??

অন্তরাঃ আলহামদুলিল্লাহ,,,,, (ভিষণ ভয় করছে,,, যা ইচ্ছে বলে অপমান করুক,,, শুধু ভার্সিটি থেকে যেন বের করে না দেয়,,,, এখান থেকে বের করে দিলে,,, কোথাও মুখ দেখাতে পারবো না,,,, গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে,,,)

মাঃ কী ভাবছো এতো,,,??

অন্তরাঃ জী,,,, কিছু না ম্যাম,,,

মাঃ দেখো অন্তরা আমি এখানে তোমাকে তোমার প্রিন্সিপাল হিসাবে নয়,,,, হৃদয়ের মা হিসাবে ডেকেছি আমি,,, কিছু কথা জানার ছিলো,,,

অন্তরাঃ জী,,, ম্যাম বলুন,,,

মাঃ হৃদয়কে তুমি ভালোবাসো,,,?? তোমার নিজের মৃত সন্তানের কসম করে বলো,,,, মিথ্যে বলবে না,,,,

অন্তরাঃ(এ কোন বিপদে ফেললেন উনি আমাকে,,, নিজের মৃত সন্তানের কসম করে মিথ্যা বলতে পারবো না আমি,,, আর সত্যি বললে যদি ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়,,,??)

মাঃ কী হলো চুপ করে আছো কেন,,,?? উত্তর দাও,,,

অন্তরাঃ জ,,,,জী,,,,

মাঃ ভালোবাসো,,,,,,??

অন্তরাঃ দয়া করে আমাকে মাফ করে দিন,,,, আমি উনার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবো,,, কখনো উনার সামনেও আসবো না,,,, আমি এসব উনাকে কিছু বলিনি,,,, আপনি উনার বিয়ের ব্যবস্থা করুন,,,, তাহলে আমাকে তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে,,,, আপনি চাইলে উনি কানাডা যাওয়ার আগে আমি বাড়ি থেকেই বের হবো না,,,, তবু ভার্সিটি থেকে বের করে দিবেন না আমাকে,,,, সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না,,,, গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না আমার,,,,, প্লিজ মাফ করে দিন আমাকে,,,(হাত জোর করে কান্না করতে করতে বললাম কথাগুলো,,)

মাঃ(অবাক হয়ে দেখছি,,, কী বলছে এসব,,,?? এসব ওর মাথায় কে ঢুকিয়েছে,,,??) কী বলছো এসব,,,?? তোমাকে ভার্সিটি থেকে কেন বের করবো,,?? কে বলেছে এসব তোমায়,,??

অন্তরাঃ দয়া করে বের করে দিবেন না আমায়,,,?? এমন-ই অনেক কথা শুনতে হয় আমাকে,,,, এখন ভার্সিটি থেকে বের করে দিলে নতুন করে দাগ লাগবে আমার চরিত্রে,,,,, আর যাই হোক চরিত্রহীনা হয়ে বাঁচতে পারবো না আমি,,,(হেঁচকি তুলে কেঁদে,,,)

মাঃ তুমি শান্ত হও,,,, আমি এমন কিছুই করবো না,,, ঠিক আছে তুমি এখন যাও,,,,

অন্তরাঃ জ,,,জী,,,, আসসালামু আলাইকুম,,,

মাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,,

অন্তরাঃ(এখনো ভয়ে হাত-পা কাপছে আমার,,,, যদি বের করে দিতো,,,, তাহলে কী করতাম আমি,,?? না না আজ থেকে হৃদয়ের সামনেও যাবো না আমি,,,, আর একবার কানাডা চলে গেলে হয়তো ভুলেই যাবে অন্তরা নামে কেউ ছিলো,,,,)

,,,,,,,,,,,,

(রিয়াদের সাথে কাজ করে জ্যোতি অনেকটাই সাহস জুগিয়ে নিয়েছে নিজের মধ্যে,,,, এখন এতো ভয় পায় না রিয়াদকে,,,আর তনয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে জ্যোতির,,,,, একসাথেই সময় কাটে বেশি,,,, ডেস্কে বসে রিয়াদের কথা ভাবছিলো জ্যোতি,,,,)

তনয়ঃ জ্যোতি,,,,,,,

জ্যোতিঃ,,,,,,,,,,,।

তনয়ঃ জ্যোতি,,,,,,,(কানের কাছে চিল্লাইয়া,,,)

জ্যোতিঃ জ,,,,,জী জ,,,জী স্যার,,,,, কী হয়েছে,,,??

তনয়ঃ আমারতো কিছু হয়নি,,,, তোমার কী হয়েছে,,,?? কী ভাবছিলে এতো মনোযোগ দিয়ে,,,,??

জ্যোতিঃ কিছু না,,, এমনই,,,,

তনয়ঃ এমনই এমনই কেউ এতো গভীর ভাবনায় ডুবে থাকে না,,,, যখন কেউ নিজের কাছের মানুষের কথা ভাবে,,,, তখনই এতটা অমনোযোগী হয়,,,

জ্যোতিঃ ঠিকই বলেছেন,,,, (বিরবির করে,,,,)

তনয়ঃ কার কথা ভাবছিলে,,,??

জ্যোতিঃ কই কারো কথা না তো,,,,

(কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো তনয়,,,দুজনের ঠোঁটের কোণেই হাসি,,,, দুজন যদি দুজনের হাসির কারণ জানতো তাহলে হয়তো কারো মুখেই এই হাঁসি থাকতো না,,,,)

তনয়ঃ আজকে আমার সাথে ডিনারে যেতে হবে,,,

জ্যোতিঃ (এটা কীভাবে সম্ভব,,,?? বাবাতো রাতে বের হতে দেবে না কখনোই,,,, স্যারকে কীভাবে বুঝাই সেটা,,,) স্যার আমার পক্ষে সম্ভব নয়,,,??

তনয়ঃ (ওর কথা শুনে মুখটা মলিন হয়ে গেলো,,) কেন জ্যোতি,,,কী সমস্যা,,,??

জ্যোতিঃ বাবা রাতের বেলা কখনোই বের হতে দিবে না আমাকে,,,

তনয়ঃ ওহ্ এই ব্যাপার,,,, ঠিক আছে লান্স করবো তাহলে একসাথে,,,,।

জ্যোতিঃ কিন্তু অফিস,,,,,, আর রিয়াদ স্যার ছাড়বে না তো,,,,

তনয়ঃ সেটা আমি দেখে নিবো,,,,,

জ্যোতিঃ ঠিক আছে,,,,
,,,,,

তনয়ঃ May i come in,,,,,sir,,,

রিয়াদঃ No,,,,,

তনয়ঃ But why,,,(রুমে ঢুকে,,)

রিয়াদঃ কারণ এখানে আপনার কোন স্যার নেই,,, তুই সবার সামনে স্যার বলতে চেয়েছিস মেনে নিয়েছি,,, কিন্তু একা কখনো স্যার বললে,,,,,

তনয়ঃ ওকে সরি সরি,,,,

রিয়াদঃ it’s ok,,,, দাঁড়িয়ে আছিস কেন,,?? চেয়ার টেবিল কী সাজিয়ে রাখার জন্য,,,,

তনয়ঃ আরে বাবা,,, বসছি তো,,,, একটা হেল্প লাগতো,,,,

রিয়াদঃ কী হেল্প,,,??

তনয়ঃ লান্স টাইমে ছুটি লাগবে একটু,,,,

রিয়াদঃ এটা আমাকে বলার কী আছে,,,?? শুধু রিসিপশনে কাজ আছে বলে চলে গেলেই হতো,,,

তনয়ঃ তোর অনুমতি ছাড়া কীভাবে যাবো,,,??

রিয়াদঃ এবার মার খাবি,,,,

তনয়ঃ আচ্ছা সে নাহয় পরে মারিস,,, এখন জ্যোতিকেও ছাড়তে হবে আমার সাথে,,,

রিয়াদঃ ওকে দিয়ে কী কাজ,,,??

তনয়ঃ এসে বলবো,,,,,

রিয়াদঃ ওকে,,,,, আল্লাহ হাফেজ,,,

তনয়ঃ আল্লাহ হাফেজ,,,,
,,,,,

জ্যোতিঃ(কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন উনি,,,,?? কখন থেকে গাড়িতে বসে আছি,,,) স্যার ঢাকা শহরে রেস্টুরেন্টের অভাব শুরু হয়েছে জানা ছিলো না,,,

তনয়ঃ অভাব হবে কেন,,,?? কত রেস্টুরেন্ট দেখছো না,,,(অবাক হয়ে,,)

জ্যোতিঃ তাহলে আমরা সেখানে না গিয়ে এভাবে ঘুরছি কেন,,??

তনয়ঃ আরে তোমার কী ঘুরতে ভালো লাগছে না,,,?? আর আজ তো অফিস ব্যাক করতে হবে না তাহলে,,,

জ্যোতিঃ ওকে তাহলে আপনি ঘুরতে থাকুন,,,, আমাকে নামিয়ে দিন আমার ক্ষিদে পেয়েছে,,,

তনয়ঃ পাগলী একটা,,,(মুচকি হেঁসে,,) আর পাঁচ মিনিট লাগবে,,,

জ্যোতিঃ ধূর,,,

তনয়ঃ (সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য,,, একটুতো সময় লাগবেই,, জ্যোতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম,,, আর ও গাল ফুলিয়ে আছে,,) আচ্ছা নামো,,, চলে এসেছি,,,।

জ্যোতিঃ(গাড়ি থেকে নেমে এসেছি,,,,) আল্লাহ এতোবড় রেস্টুরেন্ট,, স্যার আমি এখানে যাবো না,,,

তনয়ঃ কেন,,,??

জ্যোতিঃ কখনো এতবড় রেস্টুরেন্টে যায়নি,,, ভয় করছে,,,

তনয়ঃ ধূর চলো তো,,(হাত ধরে,,)

জ্যোতিঃ (হঠাৎ স্যার আমার হাত ধরায় চমকে উঠলাম,,,, হাতের দিকে তাকালাম,,)

তনয়ঃ(ওর হাত ধরে আমিও চমকে উঠলাম,,, এটা কী করলাম,,?? এখন কী মনে করবে ও আমাকে,,তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দিলাম,,) সরি সরি,,, চলো,,

জ্যোতিঃ (স্যার ভেতরে গেলে আমিও পেছন পেছন গেলাম,, স্যার ম্যানেজার টাইপের কারো সাথে কথা বলছে,,)

তনয়ঃ সব রেডি,,, যা বলেছিলাম,,,??

ম্যানেজারঃ জী স্যার,,,, সব রেডি,,,

তনয়ঃ জ্যোতি চলো,,,,

জ্যোতিঃ (স্যার সিড়ি বেয়ে উপরে যেতে লাগলো,,,, রেস্টুরেন্টটা তিনতলা,,,, কিন্তু অনেক বড়,,, আর জাগয়াটাও অনেক সুন্দর,,,, একটু নিরিবিলি,,,, মানুষ আছে অনেক কিন্তু সাউন্ড একদম কম,,, মনে হচ্ছে সবাই নিরবতা পালন করছে,,, যার যার মতো খাচ্ছে আর গল্প করছে,,, কিন্তু একজনের কথা সামনের জন শুনছে কিনা আমার সন্দেহ আছে,,,)

তনয়ঃ কী হলো চলো,,,??

জ্যোতিঃ হ্যা আসছি,,,(স্যার তিনতলার একটা দরজা ঢেলে ভিতরে গেলেন,,, বাইরে থেকে কিছু দেখা যাচ্ছে না,,, আমিও ঢুকলাম কিন্তু ভেতরে অন্ধকার,,, কিছুই দেখা যাচ্ছে না,,, এখন প্রচন্ড ভয় করছে আমার,,) স্যার,,,, স্যার,,,, কই আপনি,,, আমার ভয় করছে,,, প্লিজ সামনে আসেন,,,, লাইট অন করেন,,,

(হঠাৎ সামনে আলো জ্বলে উঠলো,,,, জ্যোতি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,,,, অফিসের প্রথমদিন রিয়াদ ওর সাথে বাজে ব্যবহার করার পর ডেস্কে বসে কাঁদছিলো সেই ছবি ভেসে ওঠেছে সামনে,,, সাথে লেখা প্রথম দেখা তোমাকে,,,, এরপর অফিসে বিভিন্ন দিনের বিভিন্ন ছবি ভেসে ওঠছে জ্যোতির,,,, আর হা করে তা দেখছে জ্যোতি,,, হঠাৎ আবার সব অন্ধকার,,, জ্যোতি যেন মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে কী হচ্ছে এসব,,,,, এবার রুমের সব লাইট জ্বলে উঠলো,,,, পুরো রুমটা সাজানো,,,, নানা রকম ফুল আর বেলুন দিয়ে,,, আর জ্যোতির সামনে ডায়মন্ড রিং নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে তনয়)

জ্যোতিঃ স্যার এসব কী,,,,??

তনয়ঃ আগে আমি বলি,,,, তারপর তুমি বলো,,,,, তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম ডেস্কে বসে কাঁদছো,,, নাক টেনে টেনে কাঁদছো,,,, চোখ,,, নাক,,,, গাল পুরো টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে,,,, দেখে মনে হয়েছিলো এর থেকে সুন্দরী মেয়ে আমি আমার জীবনে দেখিনি,,, ভালোবাসা কী জানি না,,,?? তবে যতক্ষণ তোমার সাথে থাকি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মনে হয়,,, এই সুখটা আমি সারাজীবন চাই জ্যোতি,,,, সারাজীবন,,,, জানো খুব ছোটবেলায় বাবা-মা দুজনেই মারা গেছে,,, বড় হয়েছি দাদু কাছে,,,, সাতবছর আগে সেও মারা গেছে,,,, তারপর থেকে একদম একা,,,, বিয়ে করতে বলার কেউ ছিলো না,,, বন্ধুরা বলতো তা পাত্তা দিতাম না,,, কখনো কাউকে ভালো লাগেনি তাই বিয়ে করতে ইচ্ছেও হয়নি,,,, একা লাগতো তাই রিয়াদের অফিসে জয়েন করি,,,, আর তোমাকে দেখে নতুন করে জীবন সাজাতে ইচ্ছে করছে,,,, এই জীবনটা সাজানো দায়িত্ব নিবে জ্যোতি,,,??
I really love you,,,, Will you marry me Jyoti,,,??

চলবে,,,,,