#বোনু
#Part_06
#Writer_NOVA
ঈশানের রাগ এখন নাকের ডোগায় আছে।তবে রাগলে চলবে না।মেয়েটা ওকে শেষ পর্যন্ত রেপিস্টের সাথে তুলনা করলো।যেই ঈশান মির্জার দিকে চোখ তুলে কেউ তাকাতে ভয় পায়।যে কিনা কোন মেয়ের থেকে দশ হাত দূরে থাকে। সেখানে এই মেয়ে বলে কি না ওর সর্বনাশ করবে।
ঈশানঃ দেখুন আপনি আমায় ভুল বুঝছেন। আমি সেরকম ছেলে নই।
নুহাঃ সব ছেলেরাই এসব কথা বলে।পরে তাদের আসল রূপ ধরা পরে।
ঈশানঃ প্লিজ এমন করবেন না।এভাবেই অনেক বৃষ্টিতে ভিজেছি।আরো বেশি ভিজলে নির্ঘাত জ্বর এসে পরবে।আপনি আমায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারেন।
নুহা একটু ভেবে রাজি হয়ে গেল।ঈশান টেক্সিতে উঠতেই ড্রাইভার স্টার্ট দিলো।ড্রাইভার সিটে থাকা সেই ছোকরাটা ও নুহা চোখে চোখে কিছু একটা ইশারা করে খুশি হলো।যেটা ঈশানের চোখ আড়াল করলো না।কিছু সময় পর টেক্সি একটা নির্জন জায়গায় থামলো।ঈশান অবাক হয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো —
ঈশানঃ এখানে থামলেন কেন?
নুহা ছোট একটা চাকু বের করে ঈশানের গলায় ধরলো।
নুহাঃ যা আছে সব বের কর।বেশি কথা বলবি তো জানে মেরে দিবো।
ড্রাইভার ও নুহা দুজনেই ছোট খাটো চোর ও ছিনতাইকারী বলা যায়। চিকনা চাকনা ছোকরাটার নাম হলো রুস্তম আলী। নামের সাথে বডিটা বড্ড বেমানান।দেখলে হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাওয়ার মতো বডি।আর তিনি তার এই শরীরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তার শরীরে নাকি অনেক শক্তি। চাইলে সে দুজনকে মাথায় তুলে আছাড় মেরে ফেলে দিতে পারে,বড় বড় কুস্তিবিদকে সে একাই হারাতে পারে।একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা যাকে বলে আর কি।রুস্তম আলি কাউকে মাথায় তুলবে তো দূরে থাক। কারো একহাতও ধরে থাকতে পারে না।রুস্তম কে যে কেউ কাঁধে তুলে পানিতে ফেলে দিতে পারবে।এতটা চিকন গঠনের মানুষ সে।মাঝে মাঝে চুরি করতে গিয়ে প্রচুর মারও খায়।আজ যে ওদের কপালে কি আছে সেটা আল্লাহ মালুম।
নুহাঃ কি রে কি বললাম শুনতে পাস নি।যা আছে সব বের কর।
ঈশানঃ বের করছি।
নুহাঃ একদম চালাকি করবি না।তাহলে গলায় পোঁচ মেরে দিবো।
রুস্তমঃ পার্টনার, শালা কে দিবো নাকি দু এক ঘা।তুই তো জানিস আমার কত শক্তি।
নুহাঃ চুপ কর তুই। তোর কি শক্তি আমার জানা আছে। একটা মুরগী ধরে রাখতে পারিস না আর তুই মারবি এমন জিরাফের মতো ছেলেটাকে।যা ভাগ এখান থেকে।যা করার আমিই করবো।আগেরবার তোর জন্য কি কেলানিটা খেয়েছি সেটা কি ভুল গেছি আমি।একটুর জন্য জীবন নিয়ে ফিরে এসেছি।
(ঈশানের দিকে তাকিয়ে) কি রে বের করিস না?
ঈশান পকেট থেকে গান বের করে হাঁটুর ওপর রাখলো।গান দেখে নুহার ও রুস্তম আলীর হাত কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল।
নুহাঃ সরি বস।ভুল হয়ে গেছে। আর কখনও এমন কাজ করবো না।(ভয়ে ভয়ে)
ঈশানঃ কি জানি বলছিলে?
(গান দিয়ে কপালে স্লাইড করতে করতে)
নুহাঃ আমি কিছু বলি নাই তো।ঐ রুস্তইমা বসের কাছে মাফ চা।ভুল হয়ে গেছে বস।আমরা মানুষ চিনতে ভুল করছি।এই যে আমি আপনার পা ধরতাছি মাফ করে দেন।
রুস্তমঃ হো বস আমরা ভুল কইরা ফেলছি।আর জীবনেও হাইজেক করমু না।এবারের মতো ছাইরা দেন।
ঈশান মনে মনে হাসছে। কিন্তু সেটা ওদের বুঝতে দিচ্ছে না। বুঝতে দিলেই যদি উল্টো-পাল্টা কিছু করে বসে।কে জানে কোন গ্যাং এর লোকও তো হতে পারে।মি. মির্জাদের তো শত্রুর অভাব নেই।
নুহা ঈশানের পা জরিয়ে ধরলো। ঈশানের ব্যাপারটা খারাপ লাগলেও মুখে রাগী ভাব করে বললো।
ঈশানঃ তোদের দুজনকে এখানেই সুট করে তারপরে যাবো।কেউ জানবেও না কে করেছে।
নুহাঃ সরি বস। পিলিজ এমন কইরেন না।
ঈশানঃ মাফ করতে পারি তবে একটা শর্তে।
রুস্তমঃ কি শর্ত বস?
ঈশানঃ তোরা এই লাইনে কেন এসেছিস তা আমাকে বলতে হবে।তাহলে তোরা মাফ।নয়তো এখানেই শুট করে দিবো।
নুহাঃ সবাই তো এমন সময় বাজে সুযোগ নিতে চায় আর আপনি আমাদের অতীত জানতে চাইছেন।সত্যি আপনি অন্য দশজনের মতো না।
রুস্তমঃ অন্য কেউ হইলে আমগো পুলিশের কাছে দিতো আর আপনি আমগো খারাপ হওনের কাহিনী জানতে চাইছেন।
ঈশানঃ এতো ভনিতা না করে বল কেন করছিস এসব?
🍁🍁🍁
পরেরদিন সকালে…….
ভোরের আকাশটা ভীষণ ভালো লাগে জিবরানের।কিন্তু ব্যস্ততার কারণে দেখা হয় না।কয়েক দিন ধরে মনটা ভালো নয়।উষার ব্যাপারটায় খুব বেশি আপসেট। ছাদে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে ফ্রেশ নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আর পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করছে।বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ডুব দিলো তিন মাস আগে।যেদিন জিবরান উষাকে প্রোপজ করতে চেয়ে ছিলো কিন্তু পারেনি।
২ মাস আগে……
উষা কখন থেকে কফি হাউসে বসে আছে। জিবরান আসতে বলেছে তাই।আসতে বলে এখন নিজেরি কোন খবর নেই।
উষাঃ আচ্ছা এই মানুষটার কি আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছু আছে? ৩৩ মিনিট ধরে বসে আছি। আর মহাশয়ের কোন খবর নেই। একটা কাজও ঠিকমত করতে পারে না।বিরক্ত লাগছে আমার।ভাইয়ুরা যদি আসতে না বলতো তাহলে এই মানুষের সাথে আমি দেখা করতে আসি।যার কিনা সময়ের ব্যাপারে কোন হুশ নেই। (বির বির করে)
জিবরানঃ কি বিরবির করছেন রাজকুমারী?
পেছন থেকে একটু জোরেই কথাটা বললো জিবরান।উষা পেছন ঘুরে মুখটা বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
উষাঃ হঠাৎ আমাকে জরুরি তলব কেন ভাইয়া?
জিবরানঃ এই কে ভাইয়া?আমাকে একদম ভাইয়া ডাকবে না।আমি তোমার ভাইয়া নই।(রেগে)
উষাঃ কেন ভাইয়া?(মিটমিট করে হেসে)
জিবরানঃ আমার বোন আছে তাই অন্য কাউকে বোন বানানোর দরকার নেই। বউ নেই। তাই এখন বউ বানানোর চেষ্টায় আছি।(রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে)
উষাঃ ওহ্ সরি ভাইয়া🤭।
উষার মুখে ভাইয়া শুনে জিবরান লুচির মতো ফুলছে।সেটা বুঝতে পেরে উষা মনে মনে ভীষণ খুশি হচ্ছে। আর ওকে রাগানোর জন্য এক লাইনে অনেকবার ভাইয়া ডাকছে।উষা জানে জিবরান ওকে পছন্দ করে কিন্তু মুখে বলতে পারে না।
উষাঃ তা ভাইয়া কি খাবেন? ভাইয়া কোল্ড কফি অর্ডার করবো নাকি চকলেট কফি। ভাইয়া আপনার বাসার সবাই কেমন আছে? ভাইয়া লাচ্ছি খাবেন? এখানকার লাচ্ছি না অনেক মজাদার ভাইয়া।
জিবরান রাগে কপালের রগ ফুটে উঠেছে। কথায় কথায় ভাইয়া বলছে।মানা করায় আরো বেশি বিপদে পরলো।তখন তো একবার করে বলছিলো ভাইয়া।আর এখন প্রতি লাইনে ভাইয়া ডাকটা শুনে কতটা রাগ উঠছে তা বলে বুঝাতে পারবে না।
জিবরানঃ এই মেয়ে কি কিছু বুঝে না।ওর মুখে ভাইয়া ডাক শুনলে যে আমার বুকের বা পাশটা যে পুরে যায়।আর বার বার ভাইয়া ভাইয়া বলে আমার মাথা গরম করে দিলো।ও কি সত্যি বুঝে না, নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে।আজ ভেবেছিলাম ওকে প্রপোজ করবো।ধূর,মুডটাই খারাপ হয়ে গেলো। (মনে মনে)
উষাঃ কি ভাবছেন ভাইয়া?
জিবরানঃ কে ভাইয়া? কিসের ভাইয়া?তোমার কি ভাইয়ের আকাল পরছে? চারটা ভাই থাকতে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকো কেন? ভাইয়া বলে ডাকতে মুখে বাঁধে না।আমি তোমার কোন জন্মের ভাই? আরেকবার ভাইয়া ডাকলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।(কপট রাগ দেখিয়ে)
উষাঃ সরি ভাইয়া 😔।
জিবরানঃ আবারও ভাইয়া।
উষাঃ 😜
জিবরান রেগে টেবিলে একটা জোরে থাপ্পড় মারলো।উষা ভয়ে কেঁপে উঠলো। সামনে থাকা চেয়ারটা সজোরে ধাক্কা মেরে কফি হাউস থেকে বের হয়ে গেলো। উষার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ো গেছে।
উষাঃআজ অনেক রাগানো হয়েছে মহাশয়কে?যতদিন পর্যন্ত নিজের মুখে স্বীকার না করবে তুমি আমায় ভালবাসো ততদিন আমি নিজ থেকে ধরা দিচ্ছি না।তুমি কি ভেবেছো তোমার এই পাগলামি গুলো আমি বুঝি না।আরে বুঝি বুঝি সবি বুঝি।ছোট বেলায় খেয়েছি সুজি, একটু হলেও কিছু বুঝি।তবে তোমার আগে আমি নিজেকে ধরা কখনি দিবো না।
মুচকি হেসে উষাও বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
বড় বোন জিনিয়ার ডাকে ভাবনা করা ফিরে এলো জিবরান।জিনিয়ার হাতে দুইটা কফির মগ। জিনিয়া পড়াশোনা শেষ। গায়ের রং চাপা ফর্সা।চেহারার গঠনটা মায়াবী।কারো জন্য এখনো অপেক্ষা করছে। যার কারণে বিয়েটা করা হয়নি।ছোট ভাই বিদেশ থাকলে প্রায় বিজনেস জিনিয়াকেই সামলাতে হয়।বয়স ২৭ এর কোঠায়।
জিনিয়াঃ ভাই, কি করছিস?
জিবরানঃ কিছু না রে আপু।
জিনিয়াঃ তুই উষাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি। আমি বুঝতে পারছি।
জিবরানঃ ভাগ তো এখান থেকে আমার ভালো লাগছে না।
জিনিয়াঃ আমি তো যাবোই।তোকে যা বলতে এসেছিলাম।আমি ও মাম্মি মির্জা বাড়ি যাবো উষাকে দেখতে।হসপিটালে তো দেখতে যেতে পারিনি।আমার জ্বর ছিলো, মাম্মি অসুস্থ ছিলো। যার কারণে দেখতে যাওয়া হয়নি।এখন যদি দেখতে না যাই ব্যাপারটা তো ভালো দেখায় না।
জিবরানঃ যা তুই মানা করছে কে?
জিনিয়াঃ তুই কি যাবি?
জিবরানঃ আমার ঐ বাড়িতে গেলে ভালো লাগে না। কার জন্য যাবো?যার জন্য যাবো সেই আমাকে চিনে না।(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
জিনিয়াঃ ভাই তুই কাঁদছিস?
জিবরানঃ না,কাঁদবো কেন?(অন্য দিকে ঘুরে)
জিনিয়া ভাইকে জরিয়ে ধরলো। জিবরান এতখনে নিজেকে সামলাতে পারলেও এখন আর সামলাতে পারলো না।বোনকে জরিয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আজ চোখের বাঁধ মানছে না।সব পানি বোধহয় শেষ হয়ে যাবে।
🍁🍁🍁
মির্জা কুঠির………
অর্ণব বোনের বেডের পাশের সোফায় বসে ল্যাপটপে মগ্ন হয়ে আছে। সব ভাইদের জোর করে কাজে পাঠিয়ে দিয়েছে। নিজে একা বোনকে পাহারা দিচ্ছে।আজকাল অফিসের সব ভেজাল অরূপ সামলায়।অরূপ থাকায় অর্ণব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছে।অরূপের মতো এমন ছেলে পাওয়া আজকাল ভাগ্যর ব্যাপার।চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায়।ল্যাপটপে বসে অফিসের কিছু কাজ কমপ্লিট করছে।পাশের বেডে উষা গুটিসুটি মেরে ছোট বাচ্চার মতো শুয়ে আছে। ঘুমন্ত মুখটা অনেক মায়াবী দেখাচ্ছে। হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ,মুখটা শুকনো,চোখের নিচে কালি পড়েছে। আগের উষার সাথে এখনকার উষার চেহারা আকাশ, পাতাল পার্থক্য।অর্ণব উঠে বোনের কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।তারপর চুলে হাত বুলিয়ে ব্লাংকেট টা গায়ে জরিয়ে দিলো।
এক সার্ভেন্টকে ডাক দিয়ে কফি চাইলো।তারপর আবার সোফায় বস কাজে মনযোগ দিলো।কিছু খন পর কফি হাতে কেউ রুমে ঢুকলো।
—–কফি।
অর্ণব ল্যাপটপের থেকে মুখ না তুলেই হাত বাড়িয়ে মগটা নিলো।ল্যাপটপে কাজ করতে করতে কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো।
অর্ণবঃ থ্যাংকস।
মগে আবারও চুমুক দিয়ে মুখটা বাঁকিয়ে চোখটা এদিক সেদিক করে কিছু একটা ভাবলো।আজ কফির স্বাদটা অন্যরকম।খুব পরিচিত লাগছে স্বাদটা।অনেক পরিচিত, অনেক চিরোচেনা।
অর্ণবঃকফি কে বানিয়েছে আজ? স্বাদটা অনেক পরিচিত।মনে হচ্ছে আমার অনেক প্রিয় মানুষের হাতের তৈরি।
—- কার হাতের বানানো মনে হচ্ছে?
অর্ণব মুখ তুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এতোদিন পর ভালবাসার মানুষটার সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি।মুখটা এখনো হা করেই আছে।ওর মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে নয়তো কল্পনা।
—এভাবে হা করে কি দেখছো?
অর্ণবঃ তু তু তুমি এখানে???
#চলবে